Wednesday 21 September 2022

মার্কিনীরা তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকার মাধ্যমে চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিততে চাইছে

২১শে সেপ্টেম্বর ২০২২
 
সকল বাহিনীর সকল ইউনিটের মাঝে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তথ্য আদানপ্রদান, ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ ও ‘ম্যাশিন লার্নিং’এর মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ এবং বিদ্যুৎগতিতে সেই তথ্য ব্যবহার করে শত্রুকে আক্রমণ করতে পারার মতো নতুন কনসেপ্ট খুবই আকর্ষণীয় বটে, কিন্তু বাহিনীগুলি যখন পুরোনো ধ্যানধারণার মাঝে গড়ে উঠেছে, তখন এর বাস্তবায়ন যারপরনাই কঠিন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, ২০২২এর মার্চে উপ প্রতিরক্ষা সচিব ক্যাথলিন হিকস মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যে ‘জয়েন্ট অল ডোমেইন কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল’ বা ‘জেএডিসিসি’ বা ‘জ্যাডসি২’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করেছেন। ‘জ্যাডসি২’ হলো আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্যের ব্যাপক ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে একটা প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে পুরো মার্কিন সামরিক বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে অটোমেশনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলি ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ এবং ‘ম্যাশিন লার্নিং’ ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করবে এবং নিরাপদ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অতি দ্রুততার সাথে সেগুলি কাজে লাগিয়ে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করবে। মার্কিন জয়েন্ট চীফস অব স্টাফএর চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মাইলি বলছেন যে, ‘জ্যাডসি২’এর মাধ্যমে তথ্যের আদানপ্রদান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে অভূতপূর্ব গতিতে; এবং এর মাধ্যমে শত্রুর যেকোন নির্দিষ্ট হুমকির বিরুদ্ধে সকল সক্ষমতা একত্রে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনীর যেকোন ইউনিট কোন একটা টার্গেট খুঁজে পেলে তার তথ্য সকলের সাথে একটা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শেয়ার করবে। এই তথ্য ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’এর মাধ্যমে অতি দ্রুত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে যে, কোন বাহিনীর কোন ইউনিটের মাধ্যমে সেই টার্গেটকে আক্রমণ করলে সবচাইতে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। সেনাবাহিনীর প্রতিটা সৈন্য, ট্যাংক, হেলিকপ্টার, আর্টিলারি, বা বিমান বাহিনীর প্রতিটা বিমান, ড্রোন, স্যাটেলাইট, রাডার, ইলেকট্রনিক ইন্টেলিজেন্স, অথবা নৌবাহিনীর যেকোন যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, বিমান এই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকবে এবং সকলে একত্রে এখানে তথ্য সরবরাহ করবে। অর্থাৎ এভাবে প্রতি মুহুর্তে হাজারো উৎস থেকে তথ্য আসতে থাকবে এবং ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ এই তথ্যগুলিকে বিশ্লেষণ করতে থাকবে। যেহেতু প্রত্যেক বাহিনীর সকল ইউনিট নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকবে, তাই যে ইউনিট কোন বিশেষ তথ্য ব্যবহারের জন্যে সবচাইতে উপযুক্ত থাকবে, তাকেই নির্দেশ প্রদান করা হবে। প্রায় সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনালেও মার্কিন বাহিনী ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতায়ে চীন এবং রাশিয়াকে হারাতে এই প্রকল্পই বাস্তবায়ন করতে চাইছে।

এই প্রকল্পের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মার্কিন সামরিক বাহিনীর যেকোন অংশের যোগাড় করা তথ্য অপর যেকোন অংশ ব্যবহার করতে পারবে অতি দ্রুততার সাথে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে একটা বাহিনী অপর বাহিনীর সক্ষমতাকে মুহুর্তের মাঝেই ব্যবহার করে ফেলতে পারবে। তবে এই প্রকল্প একদিকে যেমন অত্যন্ত উচ্চাভিলাসী, অপরদিকে এর বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বহুবিধ। গত জুলাই মাসে মার্কিন বিমান বাহিনী এবং মহাকাশ বাহিনীর প্রধান সাইবার উপদেষ্টা ওয়ান্ডা জোন্স-হীথ এক অনুষ্ঠানে বলেন যে, প্রত্যেকটা বাহিনীই ‘জ্যাডসি২’কে আলাদাভাবে বুঝেছে। তিনি বলেন যে, তিনি তিনটা বাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা দেখেছেন। এবং যে ব্যাপারটা তিনি নিশ্চিত হয়েছেন তা হলো, এই পরিকল্পনাগুলি একটা আরেকটার সাথে সমন্বয় করা যাবে না। ‘ডিফেন্স নিউজ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ‘জ্যাডসি২’এর অধীনে মার্কিন সেনাবাহিনী ‘প্রজেক্ট কনভারজেন্স’ নামে এক প্রকল্পের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তারা অন্য বাহিনীর সাথে এ নিয়ে মহড়া দিয়েছে। আর ২০২২ সালে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশগুলিকেও মহড়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। বিমান বাহিনী এগুচ্ছে ‘এডভান্সড ব্যাটল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা ‘এবিএমএস’ প্রকল্প নিয়ে। বিমান বাহিনীর সচিব ফ্রাঙ্ক কেন্ডাল ২০২১ সালে এই প্রকল্পের ব্যাপারে তার সংশয় প্রকাশ করলেও ২০২২ সালে তিনি আরও আশাবাদী হয়েছেন। নৌবাহিনীর প্রকল্প হলো ‘প্রজেক্ট ওভারম্যাচ’; যার ব্যাপারে প্রায় কোনকিছু জানা যায় না। তারা তাদের পরিকল্পনাকে একেবারেই গোপন রেখেছে।

 
মার্কিন সামরিক বাহিনী বহুকাল ধরে ছোট ছোট সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর এখন হঠাত করেই বড় আকারের চ্যালেঞ্জের মাঝে পড়েছে। ‘জ্যাডসি২’এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে তারা ইন্দোপ্যাসিফিকে চীনের সাথে এবং ইউরোপে রাশিয়ার সাথে দ্বন্দ্বে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে থাকবে।

প্রকল্পের বাজেট এবং টাইমলাইন নিয়ে অনিশ্চয়তা

‘জ্যাডসি২’এর ব্যাপারে ওয়ান্ডা জোন্স-হীথএর সমালোচনাটাই প্রথম নয়। মার্কিন কংগ্রেসেও অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন যে, তিনটা বাহিনী সর্বদাই নিজস্ব সংস্কৃতিতে চলেছে এবং এর সংকীর্ণতা থেকে বের হতে পারেনি। এখন সেই একই বাহিনীগুলি তাদের সংস্কৃতির পরিবর্তন না করেই কিভাবে কোন ধরণের সমস্যা ছাড়াই সকল ধরণের তথ্য নিজেদের মাঝে আদানপ্রদান করবে, তা কেউই বুঝতে পারছেন না। বিশেষ করে অনেকগুলি বাহিনী এবং এজেন্সি এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে আলাদা বাজেটে কাজ করছে বলে পুরো পরিকল্পনায় কত খরচ হচ্ছে, বা পুরো প্রকল্প কবে শেষ হবে, এবং এর ফলাফল হিসেবেই বা কি পাওয়া যাবে, তা ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। প্রতিরক্ষা দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারির অধীনে কমান্ড এন্ড কন্ট্রোলের ডিরেক্টর আরসেনিও গুমাহাদ জুলাই মাসে এক অনুষ্ঠানে বলেন যে, মার্কিন সামরিক বাহিনী বহুকাল ধরে ছোট ছোট সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর এখন হঠাত করেই বড় আকারের চ্যালেঞ্জের মাঝে পড়েছে। ‘জ্যাডসি২’এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে তারা ইন্দোপ্যাসিফিকে চীনের সাথে এবং ইউরোপে রাশিয়ার সাথে দ্বন্দ্বে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে থাকবে।

মার্কিং থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘দ্যা হাডসন ইন্সটিটিউট’এর সিনিয়র ফেলো ব্রায়ান ক্লার্ক প্রতিরক্ষা বিষয়ক পত্রিকা ‘সিফোরআইএসআরনেট’কে বলছেন যে, এই মুহুর্তে একটা সমস্যা হলো, প্রকল্পের মূল নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বিভিন্ন বাহিনীর হেডকোয়ার্টার্সএর হাতে। বড় কোন মহড়া দিতে হলে আঞ্চলিক যৌথ কমান্ডের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে। যেমন ইন্দোপ্যাসিফিকের চাহিদাগুলি ইন্দোপ্যাসিফিকের কমান্ডারই জানে। কাজেই ইন্দোপ্যাসিফিকে যদি ‘জ্যাডসি২’এর কর্মক্ষমতা নিয়ে মহড়া দেয়া হয়, তাহলে সেটা সেই অঞ্চলের কমান্ডারের হাতেই দিতে হবে। বাহিনীর কমান্ডাররা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু আঞ্চলিক কমান্ডারের হাতে নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে না পারলে স্বল্প মেয়াদে প্রকল্প এগুবে না। এছাড়াও আরেকটা সমস্যা হলো, পেন্টাগনকে বুঝতে হবে যে, এধরণের বড় আকারের মহড়া দিতে হলে বাজেট যেমন বৃদ্ধি করতে হবে, তেমনি পরীক্ষানিরীক্ষার জন্যেও সামরিক বাহিনীর একটা বড় অংশকে ছাড় দিতে হবে। এই মুহুর্তে পেন্টাগনের বাজেটের ১ শতাংশেরও কম পরীক্ষানিরীক্ষার পিছনে ব্যয় করা হয়।

মার্কিন সিনেট ২০২৪ সালের মাঝে ইন্দোপ্যাসিফিকে ‘জ্যাডসি২’এর জন্যে একটা যৌথ হেডকোয়ার্টার্স করার নির্দেশ দিয়েছে এবং অতিরিক্ত ২’শ ৪৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। তবে কথা থেকেই যায় যে, ‘জ্যাডসি২’ অত্যন্ত জটিল একটা প্রকল্প। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ‘সিফোরআইএসআরনেট’কে বলছেন যে, বাহিনীগুলি হয়তো আলাদাভাবে নিজেদের প্রকল্পগুলির সমস্যা দূর করছে। কিন্তু এই প্রকল্পের অনেক কিছুই রয়েছে যেগুলি একত্রে শুরু করতে হবে।

এই নেটওয়ার্ক কোন কারণে অকার্যকর হলে কি হবে?

‘জ্যাডসি২’ ব্যবস্থার জটিলতার সমালোচনা করেছেন অনেকেই। জটিল সমস্যাগুলির সমাধান করার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর সাইবার অফিসার ক্যাপ্টেন ম্যাগি স্মিথ এবং প্রযুক্তি কোম্পানি ‘ম্যানডিয়্যান্ট’এর সিনিয়র ইন্টেলিজেন্স এনালিস্ট জেসন এটওয়েল মার্কিন সামরিক একাডেমি ‘ওয়েস্ট পয়েন্ট’এর ‘মডার্ন ওয়ার ইন্সটিটিউট’এর এক লেখায় প্রশ্ন করছেন যে, যদি কোন কারণে এই নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে যায়, তাহলে এর কোন বিকল্প থাকবে কি? কেউ কি নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে, সাইবার হামলার কারণে এই নেটওয়ার্ক ধ্বসে পড়বে না? ইউক্রেন যুদ্ধের উদাহরণ দেখিয়ে দিচ্ছে যে, একটা ব্যবস্থার উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল থাকলে কি বিপদে পড়তে হতে পারে। যুদ্ধের শুরুতেই স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী হ্যাকিংএর শিকার হয় এবং তাদের ইউনিটগুলি প্রায় পুরোপুরিভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উল্টোদিকে রুশদের যোগাযোগ ব্যবস্থাও মারাত্মক সমস্যায় পড়ে এবং এর ফলে রুশ সেনারা অনিরাপদ সেলফোন ও রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে; যা কিনা ইউক্রেনিয়রা ধরে ফেলে রুশ ইউনিটগুলির অবস্থান নিখুঁতভাবে জেনে যায় এবং সেগুলিকে জ্যামিংও করতে সক্ষম হয়। রুশ সেনারা তাদের যোগাযোগের যন্ত্রগুলি ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এখান থেকে শিক্ষনীয় বিষয় হলো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর সেনাদের আস্থা একবার নষ্ট হয়ে গেলে তা ফেরত আনাটা কঠিন হবে।

 
মার্কিনীরা ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতায় চীন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয় পেতে ‘জ্যাডসি২’এর মতো এতটাই জটিল এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার বাজেট, এমনকি টাইমলাইন নিয়েও কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। তদুপরি রয়েছে নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, অকার্যকর হয়ে গেলে সম্ভাব্য প্রতিস্থাপক, নিজ সহকর্মীকে বিশ্বাস না করে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’এর সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়ার মতো সিদ্ধান্তগত চ্যালেঞ্জ। সবচাইতে বড় প্রশ্ন হলো, নিজেদের সক্ষমতাকে বাড়াতে গিয়ে উচ্চাভিলাসী ‘জ্যাডসি২’ প্রকল্প মার্কিন বাহিনীর দুর্বলতা হিসেবে পরিচিত হয়ে যাবে না তো?

ক্যাপ্টেন স্মিথ এবং জেসন এটওয়েল আরও বলছেন যে, এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করার সময় কেউ যেমন বেশি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার চেষ্টা করতে পারে, আবার কিছু সিদ্ধান্ত কয়েকটা স্তরের নেতৃত্বের অনুমতির মাঝে আটকে যেতে পারে। এছাড়াও বাহিনীর কর্মকর্তারা নিজেদের অধস্তন কমান্ডারদের উপদেশ উপেক্ষা করে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’এর সিদ্ধান্ত নিতে কতটা প্রস্তুত থাকবে, সেটাও দেখার বিষয় হবে। এছাড়াও সকল ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত যে সঠিক হবে, তার কি নিশ্চয়তা রয়েছে? সাম্প্রতিক সময়ে বহু প্রকারের ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের পরেও অনেক সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে। ‘জ্যাডসি২’ কি নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে, এর ফলাফল আগের চাইতে ভুল কমিয়ে দেবে? আর যুদ্ধক্ষেত্রের প্রচন্ড চাপের মাঝে কমান্ডাররা সর্বোচ্চ হাই-টেক প্রযুক্তির চাইতে কার্যকারিতার উপরেই বেশি নির্ভর করতে চাইতে পারে। সর্বক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ প্রযুক্তি প্রয়োগ করাটাই হয়তো গুরুত্বপূর্ণ নয়। একটা নতুন প্রযুক্তি যত ভালোই মনে হোক না কেন, বুঝতে হবে যে সেটা কোন একটা সময়ে পুরো সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে কিনা।

পুরোনো চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না কেউই

যুক্তরাষ্ট্রের ‘আর্মড ফোর্সেস কমিউনিকেশন্স এন্ড ইলেকট্রনিক্স এসোসিয়েসন’এর নিরাপত্তা বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘সিগনাল’এর এক প্রতিবেদনে ‘জ্যাডসি২’এর সঠিক বাস্তবায়নের সমস্যাগুলির ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। ‘জ্যাডসি২’এর অধীনে বিমান বাহিনীর প্রকল্প হলো ‘এডভান্সড ব্যাটল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বা ‘এবিএমএস’। এই প্রকল্পের পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে ৫০৫তম কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল উইংএর অধীনে, যার অধিনায়ক কর্নেল ফ্রেডারিক কোলম্যান বলছেন যে, বিমান বাহিনীর কাছে ‘কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল’ ব্যাপারটা খুবই কম গুরুত্ব পায়। সকলেই মনে করে যে, এটা এমনি এমনি হয়ে যাবে। সকলেই এর গুরুত্বের কথা বললেও সকলেই মনে করে যে এটা যেকেউই করতে পারবে। ৫০৫তম উইংএর অধীনে ৮০৫তম কমব্যাট ট্রেনিং স্কোয়াড্রনের প্রধান লেঃ কর্নেল জন ওহলান্ড বলছেন যে, এখনও ‘জ্যাডসি২’ একটা কনসেপ্ট মাত্র। বাস্তবায়নের দিক থেকে এটা ‘জ্যাডসি২’ নয়; বরং ‘স্যাডসি২’। এর অর্থ হলো ‘সার্ভিস অল ডোমেইন কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল’; যা বাস্তবিকপক্ষে শুধুমাত্র বিমান বাহিনীর নিজস্ব একটা ব্যবস্থা। এখানে যদি অন্য বাহিনীর কেউ যুক্ত হতে চায়, তাহলে তাদেরকেই ঠিক করতে হবে যে তারা কিভাবে বিমান বাহিনীর সাথে যুক্ত হবে। কর্নেল কোলম্যান বলছেন যে, এই মুহুর্তে বিমান বাহিনী সর্বদাই অন্যান্য বাহিনীর সাথে যৌথভাবে কাজ করছে; তথ্য আদানপ্রদান করছে। তবে ‘জ্যাডসি২’তে যে ব্যাপারটা নতুন, তা হলো অন্য বাহিনীর অস্ত্রের কমান্ডের দায়িত্ব নেয়া। এটা শুধুমাত্র কোন টেকনিক্যাল সমস্যা নয়। এখানে আইন পরিবর্তন করতে হবে; কার দায়িত্ব কতটুকু, সেখানে নতুন করে ভাবতে হবে; যৌথ কমান্ডের পরিকল্পনা নতুন করে করতে হবে। লেঃ কর্নেল ওহলান্ড বলছেন যে, বিমান বাহিনীর মাঝেই বিভিন্ন ইউনিটগুলি একটা আরেকটার সাথে যুক্ত হতে হিমসিম খাচ্ছে; বাকি বাহিনীগুলিতেও একই সমস্যা। এই মুহুর্তে প্রতিটা বাহিনীই তাদের নিজস্ব সমস্যাগুলি সমাধান করার চেষ্টা করছে।

সকল বাহিনীর সকল ইউনিটের মাঝে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তথ্য আদানপ্রদান, ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ ও ‘ম্যাশিন লার্নিং’এর মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ এবং বিদ্যুৎগতিতে সেই তথ্য ব্যবহার করে শত্রুকে আক্রমণ করতে পারার মতো নতুন কনসেপ্ট খুবই আকর্ষণীয় বটে, কিন্তু বাহিনীগুলি যখন পুরোনো ধ্যানধারণার মাঝে গড়ে উঠেছে, তখন এর বাস্তবায়ন যারপরনাই কঠিন। একেকটা বাহিনী যখন নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলিকেই কাটিয়ে উঠতে হিমসিম খাচ্ছে, তখন একটা যৌথ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সকল তথ্য মুহুর্তের মধ্যে আদানপ্রদান করা অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতো। মার্কিনীরা ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতায় চীন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয় পেতে ‘জ্যাডসি২’এর মতো এতটাই জটিল এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার বাজেট, এমনকি টাইমলাইন নিয়েও কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। তদুপরি রয়েছে নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা, অকার্যকর হয়ে গেলে সম্ভাব্য প্রতিস্থাপক, নিজ সহকর্মীকে বিশ্বাস না করে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’এর সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়ার মতো সিদ্ধান্তগত চ্যালেঞ্জ। সবচাইতে বড় প্রশ্ন হলো, নিজেদের সক্ষমতাকে বাড়াতে গিয়ে উচ্চাভিলাসী ‘জ্যাডসি২’ প্রকল্প মার্কিন বাহিনীর দুর্বলতা হিসেবে পরিচিত হয়ে যাবে না তো?



সূত্রঃ

‘DoD Announces Release of JADC2 Implementation Plan’ in US Department of Defense, 17 March 2022

‘They’re ‘all different’: Air Force adviser says services diverge on JADC2’ in Defense News, 28 July 2022

‘Pentagon’s secret JADC2 plan ‘evolving,’ official says, as lawmakers seek audit’ in Defense News, 12 July 2022

‘Senators look past Europe, push Pentagon JADC2 vision for Indo-Pacific’ in C4ISRNet, 17 August 2022

‘A Solution Desperately Seeking Problems: The Many Assumptions of JADC2’ by Maggie Smith and Jason Atwell in Modern War Institute at West Point, 05 March 2022

‘Preventing JADC2 From Becoming 'Sad C2'’ in Signal, AFCEA International, 14 September 2022

No comments:

Post a Comment