Friday 16 September 2022

চীনের ‘এ২এডি’ কৌশল কতটা শক্তিশালী?

১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২২
 
পারমাণবিক অস্ত্র নয়, বরং প্রচলিত বিস্ফোরক ব্যবহার করার কারণেই চীনাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হুমকি হিসেবে ঠেকেছে। কারণ এতে ইন্দোপ্যাসিফিক, তথা গোটা বিশ্বের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ঢিলে হয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেবে। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে না নিশ্চিত জেনেই দুই পক্ষ এই অস্ত্রের খেলায় এগুচ্ছে। একারণেই ইন্দোপ্যাসিফিকে যুদ্ধের সম্ভাবনা অনেক বেশি

চীনের ‘এন্টি একসেস, এরিয়া ডিনাইয়াল’ বা ‘এ২এডি’ কৌশল হলো ভূমি, সমুদ্র এবং আকাশ থেকে বহু ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধুদের সামরিক শক্তিকে চীনের আশেপাশের অঞ্চলে ঢুকতে অথবা অবস্থান করতে বাধা দেয়া। চীন তার ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে নতুন নতুন প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত করছে; যেগুলি এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির সক্ষমতাকে অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং একইসাথে চীনাদের ‘এ২এডি’ কৌশলকে আরও শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করাচ্ছে। চীনাদের এই সক্ষমতা চীনের কাছাকাছি সাগরগুলিতে মার্কিন সামরিক শক্তির ভিত্তি নৌবাহিনীর বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ এবং ভূমিতে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী বিমান ঘাঁটিগুলিকে হুমকির মাঝে ফেলে দিয়েছে। এছাড়াও চীনাদের হাতে স্বল্প সংখ্যক পারমাণবিক আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তবে চীনাদের ডেভেলপ করা প্রচলিত বিস্ফোরক সজ্জিত ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পারমাণবিক যুদ্ধ ছাড়া ব্যবহার করার জন্যে ডেভেলপ করা হচ্ছে; যা কিনা ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলে যুদ্ধের সম্ভাবনা বিশ্লেষণের জন্যে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের ক্ষেপণাস্ত্রের বহর

চীনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে মোটামুটিভাবে সাত ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমতঃ রয়েছে স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র; যেগুলির পাল্লা মোটামুটিভাবে ৩’শ কিঃমিঃ থেকে ১ হাজার কিঃমিঃএর মাঝে। দ্বিতীয়তঃ রয়েছে মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র; যেগুলির পাল্লা ২ হাজার কিঃমিঃএর মতো। তৃতীয় ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র হলো ‘ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ’ বা মাধ্যমিক পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলির পাল্লা মোটামুটিভাবে ৪ হাজার কিঃমিঃ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিঃমিঃ পর্যন্ত। এগুলি মূলতঃ পারমাণবিক যুদ্ধের জন্যে তৈরি করা হলেও প্রচলিত যুদ্ধেও এগুলির ব্যবহার অসম্ভব নয়। চতুর্থতঃ রয়েছে আন্ত মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা ‘আইসিবিএম’। এগুলির পাল্লা মোটামুটিভাবে ৭ হাজার কিঃমিঃ থেকে ১৫ হাজার কিঃমিঃ পর্যন্ত। আর এগুলি মূলতঃ পারমাণবিক ডিটারেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর সাথে পঞ্চম ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র হলো সাবমেরিন থেকে ছোঁড়া ‘আইসিবিএম’, যেগুলিকে বলা হয় ‘এসএলবিএম’। এগুলির কাজও ‘আইসিবিএম’এর মতোই; শুধুমাত্র সাবমেরিক থেকে ছোঁড়ার কারণে এগুলি কোথা থেকে ছোঁড়া হচ্ছে, তা আগে থেকে বোঝা কঠিন। এগুলির পাল্লা প্রায় ৯ হাজার কিঃমিঃএর মতো। ষষ্ঠতঃ রয়েছে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলির রয়েছে জেট ইঞ্জিন; এবং এগুলি বিমানের মতো উড়ে গিয়ে টার্গেটে আঘাত হানে। এগুলির পাল্লা মোটামুটিভাবে ৫০ কিঃমিঃ থেকে শুরু করে ৩ হাজার কিঃমিঃ পর্যন্ত। আর শেষতঃ রয়েছে নতুন প্রকারের অস্ত্র; যার নাম ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল’ বা ‘এইচজিভি’; যা শব্দের গতির প্রায় ৫ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত গতিতে চলতে সক্ষম। এটা মূলতঃ একটা মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র; আকাশে অনেক উচ্চতায় যাবার পর এর সাথে জুড়ে থাকা ‘এইচজিভি’ আলাদা হয়ে গিয়ে টার্গেটে অতি দ্রুততার সাথে আঘাত করে। এগুলির পাল্লা আড়াই হাজার কিঃমিঃ পর্যন্ত হতে পারে।

স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র


মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ বা ‘সিএসআইএস’ চীনা ক্ষেপণাস্ত্রগুলির একটা বিশদ বর্ণনা দিয়েছে। স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলি চীনের কাছাকাছি টার্গেটগুলির জন্যে ডেভেলপ করা হয়েছে। এই টার্গেটের মূলে রয়েছে তাইওয়ান এবং চীনের আশেপাশের দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতে মার্কিন ঘাঁটিগুলি। প্রায় আড়াই’শ লঞ্চারের এই বাহিনীর কাছে রয়েছে আনুমানিক সাড়ে ৭’শ থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র। ‘ডং ফেং-১১’ বা ‘ডিএফ-১১’, ‘ডিএফ-১২’, ‘ডিএফ-১৫’ এবং ‘ডিএফ-১৬’ ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি এই ভূমিকা নেবে।

প্রায় ৪ টন ওজনের ‘ডিএফ-১১’ সার্ভিসে এসেছে ১৯৯২ সালে। গাড়ির উপর থেকে ছোঁড়া সম্ভব এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৩’শ কিঃমিঃ এবং ওয়ারহেড ৫’শ থেকে ৮’শ কেজি পর্যন্ত। গাড়ির উপর বহণ করা যায় বলে এগুলি খুব দ্রুত জায়গা পরিবর্তন করতে এবং নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে সক্ষম। অপরদিকে ৪’শ ২০ কিঃমিঃ পর্যন্ত পাল্লার ‘ডিএফ-১২’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ৪’শ ৮০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহণ করতে সক্ষম। ২০১৩ সালে সার্ভিসে আসা ক্ষেপণাস্ত্রগুলির ওজন প্রায় ৪ টন এবং এগুলি গাড়ির উপরে বহণ করা যায়। চীনারা এগুলি কাতারের কাছেও বিক্রি করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি টার্গেটের ৩০ মিটার থেকে ৫০ মিটারের মাঝে আঘাত হানতে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়।

‘ডিএফ-১৫’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা প্রায় ৯’শ কিঃমিঃ পর্যন্ত। ১৯৯০ সালে সার্ভিসে আসা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির ওজন ৬ টনের বেশি এবং গাড়ির উপরে বহণ করা যায়। ‘ডিএফ-১৬’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ৫’শ কেজি থেকে ১ টন পর্যন্ত ওয়ারহেড নিয়ে ১ হাজার কিঃমিঃ পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ২০১১ সালে সার্ভিসে আসা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি গাড়ির উপরে বহণ করা হয়। স্বল্প পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির সবগুলিই প্রায় ৫’শ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহণে সক্ষম। ‘ডিএফ-১৬’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি চীনের গুয়াংডং প্রদেশে মোতায়েন রয়েছে; যেখান থেকে এগুলি তাইওয়ান ও ভিয়েতনামে আঘাত হানতে পারবে। ব্রিটিশ থিংকট্যাংক ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’ বা ‘আইআইএসএস’এর ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, চীনারা তখন পর্যন্ত ডজনখানেক ‘ডিএফ-১৬’ সার্ভিসে এনেছে।

 
মধ্যম পাল্লার 'ডিএফ-২১ডি' হলো সমুদ্রে জাহাজ ধ্বংস করার জন্যে ডেভেলপ করা প্রথম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। টার্গেটের কাছাকাছি এসে দিক পরিবর্তনে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি টার্গেটের মাত্র ২০ মিটারের মাঝে আঘাত হানতে সক্ষম। এর ফলে মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজগুলিও এই ক্ষেপণাস্ত্রের টার্গেটে পরিণত হতে পারে।

মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র

স্বল্প পাল্লার বাইরের টার্গেটে আঘাত হানার জন্যে রয়েছে মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। চীনের মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে একটাই, ‘ডিএফ-২১’। প্রায় ২১’শ কিঃমিঃ পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে পারবে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। আনুমানিক দেড়’শ লঞ্চারের সাথে তাদের রয়েছে কমপক্ষে দেড়’শ থেকে সাড়ে ৪’শ পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র। ১৯৯১ সালে সার্ভিসে আসা প্রায় ১৫ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্র গাড়ির উপর থেকে ছোঁড়া যায়। আর কঠিন জ্বালানি ব্যবহারের ফলে এগুলি যেকোন স্থান থেকে খুব দ্রুততার সাথে তেমন কোন প্রস্তুতি ছাড়াই ছুঁড়ে দেয়া সম্ভব। এগুলির ওয়ারহেডের ওজন প্রায় ৬’শ কেজি। এগুলি টার্গেটের প্রায় ৭’শ মিটারের মাঝে আঘাত করে। অর্থাৎ এগুলি খুব বেশি একটা নিখুঁত নয়। এর অর্থ হলো, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি খুব সম্ভবতঃ পারমাণবিক ওয়ারহেড ছাড়া ব্যবহার করলে ভালো কোন ফলাফল আসবে না। ২০১৬ সালে ‘বুলেটিন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, চীনারা হয়তো ৮০টার মতো পারমাণবিক ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ‘ডিএফ-২১’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে।

তবে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির বিভিন্ন ভার্সন ডেভেলপ করার সাথেসাথে এগুলির সক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে যেতে থাকে। ১৯৯৬ সালে সার্ভিসে আসা ‘ডিএফ-২১এ’ ভ্যারিয়্যান্ট টার্গেটের ৫০ মিটারের মাঝে আঘাত করতে পারে। তবে এটার ওয়ারহেড মূলতঃ পারমাণবিক। এরপর ২০০৬ সালে আসে ‘ডিএফ-২১সি’ ভার্সন; যা ২১’শ কিঃমিঃ দূরের টার্গেটের ৪০ থেকে ৫০ মিটারের মাঝে আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলির ওয়ারহেড মূলতঃ প্রচলিত বিস্ফোরক। অপেক্ষাকৃত ভালো নিশানায় টার্গেটিংই বলে দিচ্ছে যে, চীনারা পারমাণবিক যুদ্ধ ছাড়াও ভূমিতে শত্রুর স্থায়ী টার্গেটের বিরুদ্ধে এগুলি ব্যবহার করার অপশন রেখেছে। ২০১০ সালে ‘ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, কিছু ‘ডিএফ-২১সি’ ক্ষেপণাস্ত্রকে চীনের পশ্চিমাঞ্চলে ভারতের বিপরীতে মোতায়েন করা হয়েছে।

২০০৬ সালে আসে ‘ডিএফ-২১ডি’ ভার্সন; যেগুলি সমুদ্রে জাহাজ ধ্বংস করার জন্যে ডেভেলপ করা প্রথম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। টার্গেটের কাছাকাছি এসে দিক পরিবর্তনে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি টার্গেটের মাত্র ২০ মিটারের মাঝে আঘাত হানতে সক্ষম। এর ফলে মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজগুলিও এই ক্ষেপণাস্ত্রের টার্গেটে পরিণত হতে পারে। ব্রিটিশ সামরিক ম্যাগাজিন ‘আইএইচএস জেন্স’ বলে যে, ২০১৩ সালে মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের মতো একটা টার্গেটের বিরুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হয়।

‘ডিএফ-২১সি’ এবং ‘ডিএফ-২১ডি’এর মাধ্যমেই চীনের ‘এ২এডি’ কৌশলের শুরু। ২০০৬ সাল থেকে সার্ভিসে আসা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি একদিকে যেমন টার্গেটের ৫০ থেকে ২০ মিটারের মাঝে আঘাত হানতে পারে, আরেকদিকে টার্গেটে আঘাত হানার ঠিক আগ মুহুর্তে এগুলি দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম। এই বৈশিষ্ট্যগুলি এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে শুধুমাত্র পারমাণবিক অস্ত্র হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখা থেকে বের করে নিয়ে আসে। এগুলি স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার বাইরে গিয়ে যেমন টার্গেটে আঘাত হানতে পারবে, একইসাথে মার্কিন বিমানবাহী জাহাজের মতো বড় চলমান টার্গেটের উপরেও এগুলি আঘাত হানার সক্ষমতা তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে চীন তার মূল ভূখন্ড থেকে ১ হাজার কিঃমিঃএর বেশি দূরত্বে অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী বা চলমান টার্গেটের উপর মোটামুটি নিখুঁতভাবে আঘাত করার একটা সক্ষমতা অর্জন করেছে।
 
মাধ্যমিক পাল্লার 'ডিএফ-২৬' ক্ষেপণাস্ত্র। ১২’শ থেকে ১৮’শ কেজির বিশাল একটা প্রচলিত বিস্ফোরকের ওয়ারহেড এগুলিকে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সামরিক ঘাঁটিগুলির উপর হামলা করার সক্ষমতা দিয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে চীন প্রথমবারের মতো গুয়ামে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির উপর হামলা করার সক্ষমতা অর্জন করে।

মাধ্যমিক পাল্লার (ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ) ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র

১৯৮০এর দশকে সার্ভিসে আসা ‘ডিএফ-৪’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি লিকুইড জ্বালানি ব্যবহার করে সাড়ে ৫ হাজার কিঃমিঃ দূরের টার্গেটে হামলা করতে সক্ষম। এগুলির বেশিরভাগই ইতোমধ্যেই রিটায়ার করে ফেলা হয়েছে। প্রায় ৮২ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি চীনের পারমাণবিক ডিটারেন্টের অংশ।

২০১৬ সালে ‘ডিএফ-২৬’ সার্ভিসে আসার সাথেসাথে পারমাণবিক যুদ্ধের বাইরে গিয়ে দূরবর্তী টার্গেটে চীনের আঘাত হানার সক্ষমতাকে আরেকটা নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ৪ হাজার কিঃমিঃ পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ২০ টন ওজনের এবং গাড়ির উপর বহণযোগ্য। আর ১২’শ থেকে ১৮’শ কেজির বিশাল একটা প্রচলিত বিস্ফোরকের ওয়ারহেড এগুলিকে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সামরিক ঘাঁটিগুলির উপর হামলা করার সক্ষমতা দিয়েছে। ‘ইউএস-চায়না ইকনমিক এন্ড সিকিউরিটি রিভিউ কমিশন’এর ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে চীন প্রথমবারের মতো গুয়ামে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির উপর হামলা করার সক্ষমতা অর্জন করলো।

২০২০ সালের অগাস্টে চীনারা ‘ডিএফ-২৬’এর একটা জাহাজ ধ্বংসী ভার্সন ‘ডিএফ-২৬বি’ পরীক্ষা করে। পরীক্ষার সময় ক্ষেপণাস্ত্রটা একটা চলমান টার্গেটকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয় বলে বলা হয়। এখনও পর্যন্ত এটা পরিষ্কার নয় যে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির গাইড্যান্স সিস্টেম কেমন। তবে ধারণা করা হয় যে, এগুলি টার্গেটের ১’শ ৫০ থেকে ৪’শ ৫০ মিটারের মাঝে আঘাত হানতে পারে। তবে ‘ডিএফ-২৬বি’ ভার্সন সম্ভবতঃ টার্গেটে আঘাত হানার আগ মুহুর্তে আলাদা কোন গাইড্যান্স সিস্টেম ব্যবহার করে তার টার্গেট নিশানা ঠিক করে। ২০২০ সাল নাগাদ চীনারা প্রায় ২’শ থেকে সাড়ে ৩’শ মাধ্যমিক পাল্লার লঞ্চার মোতায়েন করেছে বলে ধারণা করা হয়; যার মাঝে ‘ডিএফ-২৬’ রয়েছে। ‘ডিএফ-২৬’ লঞ্চারের সংখ্যা ৮০ থেকে ১০০টা হতে পারে বলে অনুমিত। ২০২০ সাল নাগাদ চীনারা ইউনান, গুয়াংডং, শিনইয়াং এবং শিনজিয়াং প্রদেশে ‘ডিএফ-২৬’ মোতায়েন করেছে।

আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র

আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র বা ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল’ বা ‘আইসিবিএম’ চীনের পারমাণবিক ডিটারেন্ট। ১৯৮১ সালে ‘ডিএফ-৫’ নামে চীনের আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সার্ভিসে আসে। ১’শ ৮৩ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি লিকুইড জ্বালানি ব্যবহার করে এবং ১৩ হাজার কিঃমিঃ দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ২০০৬ সালে সার্ভিসে আসে ‘ডিএফ-৩১’। গাড়ির উপরে পরিবহণযোগ্য ৪২ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি কঠিন জ্বালানি ব্যবহার করে এবং প্রায় ১২ হাজার কিঃমিঃ দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এখনও ডেভেলপমেন্টে রয়েছে ‘ডিএফ-৪১’; যার পাল্লা হবে প্রায় ১৫ হাজার কিঃমিঃ পর্যন্ত। ৮০ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি গাড়ি এবং রেলের মাধ্যমে পরিবহণ করা যাবে।

সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপিত আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র

‘আইসিবিএম’এর মাঝে যেগুলি সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপিত হয়, সেগুলিকে ‘সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল’ বা ‘এসএলবিএম’ বলা হয়। চীনাদের বর্তমান ‘এসএলবিএম’ হলো ‘জেএল-২’। ২০১৫ সালে সার্ভিসে আসা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ৯ হাজার কিঃমিঃ দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। একেকটা ক্ষেপণাস্ত্র একসাথে ৩ থেকে ৮টা পর্যন্ত ওয়ারহেড বহণ করতে সক্ষম। প্রায় ৪২ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বহণ করে চীনাদের ‘চিন-ক্লাস’ সাবমেরিন। চীনা নৌবাহিনীর চারটা ‘চিন-ক্লাস’এর প্রতিটা ১২টা করে ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করতে পারে। ‘জেএল-২’ ক্ষেপণাস্ত্র এর আগের ‘শিয়া-ক্লাস’এর সাবমেরিনে বাহিত পুরোনো ‘জেএল-১’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিস্থাপিত করেছে।

'ওয়াইজে-১৮' ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রকে বিশ্লেষকেরা চীনের ‘এ২এডি’ কৌশলের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখছে। কেউ কেউ এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি মার্কিন ‘ঈজিস’ কমব্যাট সিস্টেম সজ্জিত ডেস্ট্রয়ারগুলিকে হারাবার জন্যে তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছেন।‘ওয়াইজে-১৮সি’ হলো আরেকটা ভার্সন, যা ডেভেলপ করা হচ্ছে ভূমির টার্গেটের জন্যে। তবে এর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এর লঞ্চার হলে বাণিজ্যিক কনটেইনার।

ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র

১৯৯৬ সাল থেকে সার্ভিসে আসা ‘হং নিয়াও’ বা ‘এইচএন’ সিরিজের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলির উদ্দেশ্য ছিল পারমাণবিক ওয়ারহেড বহণে সক্ষম ৩ হাজার কিঃমিঃ পাল্লা পর্যন্ত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করা। ৪’শ কেজি ওয়ারহেড বহণে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি টারবোজেট এবং টারবোফ্যান ইঞ্জিনের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ১২’শ কেজি ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি একাধারে ভূমি, জাহাজ, সাবমেরিন এবং আকাশ থেকে ছোঁড়া সম্ভব। রুশ ‘কেএইচ-৫৫’ এবং মার্কিন ‘টোমাহক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দেখতে এই ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র ‘এইচএন-১’; যা ১৯৯৬ সালে সার্ভিসে আসে। ভূমি থেকে ছোঁড়া ‘এইচএন-১এ’এর পাল্লা ৬’শ কিঃমিঃ; আর ‘বি-৬ডি’ বোমারু বিমান থেকে ছোঁড়া ‘এইচএন-১বি’এর পাল্লা সাড়ে ৬’শ কিঃমিঃ। ‘এইচএন-১বি’ ভার্সন সম্ভবতঃ ২০০২ সালে সার্ভিসে আসে।

‘এইচএন-২’ ক্ষেপণাস্ত্র অনেকটাই ‘টোমাহক’এর রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংএর উপর তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। রুশ ‘কেএইচ-৫৫’ ক্ষেপণাস্ত্রের ‘টিআরডিডি-৫০’ ইঞ্জিনের উপর ভিত্তি করে নিজেরাই ইঞ্জিন তৈরি করে চীনারা। ভূমি এবং জাহাজ থেকে ছোঁড়া ভার্সনের পাল্লা প্রায় ১৮’শ কিঃমিঃ; আর সাবমেরিন থেকে ছোঁড়া ‘এইচএন-২সি’ ভার্সনের পাল্লা ১৪’শ কিঃমিঃ। ২০০২ সালে সার্ভিসে আসা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ১৪’শ কেজি ওজনের এবং টার্গেটের ৫ মিটারের মাঝে আঘাত করতে সক্ষম। ২০১০ সালে মার্কিনীরা ধারণা করে যে সেসময় ২’শ থেকে ৫’শ পারমাণবিক ওয়ারহেড সম্পন্ন ‘এইচএন-২’ ক্ষেপণাস্ত্র চীনের হাতে ছিল।

‘এইচএন-৩’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৩ হাজার কিঃমিঃ। সাবমেরিন থেকে ছোঁড়া ‘এইচএন-৩বি’এর পাল্লা ২২’শ কিঃমিঃ। ২০০৭ সালে সার্ভিসে আসা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ১৮’শ কেজি ওজনের এবং টার্গেটের ৫ মিটারের মাঝে আঘাত হানতে সক্ষম।

‘ওয়াইজে-১৮’ জাহাজ ধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভবতঃ রুশ ‘৩এম৫৪ই ক্লাব’ ক্ষেপণাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। তবে এর আগের চীনা জাহাজ ধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলির চাইতে এই ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা অনেক বেশি। প্রায় ১৬’শ কেজি ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রের রয়েছে দেড়’শ থেকে ৩’শ কেজি ওয়ারহেড এবং এর পাল্লা ৫’শ ৪০ কিঃমিঃ পর্যন্ত। সমুদ্র সমতলের অল্প কিছু ওপড় দিয়ে ওড়ার সময় এটা শব্দের গতির নিচ দিয়ে চললেও টার্গেটে আঘাত হানার কিছু আগে এটা শব্দের গতির আড়াই থেকে ৩ গুণ পর্যন্ত দ্রুতি পেয়ে যায়; যা এটাকে গুলি করে ধ্বংস করাকে অনেক কষ্টকর করে ফেলে। ২০১৪ সালে সার্ভিসে আসা এই ক্ষেপণাস্ত্রকে বিশ্লেষকেরা চীনের ‘এ২এডি’ কৌশলের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখছে। কেউ কেউ এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি মার্কিন ‘ঈজিস’ কমব্যাট সিস্টেম সজ্জিত ডেস্ট্রয়ারগুলিকে হারাবার জন্যে তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছেন। মূলতঃ চীনা যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিনগুলি থেকে ছোঁড়ার জন্যেই এই ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করা হয়েছে। ‘ওয়াইজে-১৮বি’ ভার্সন ডেভেলপ করা হয়েছে ভূমির টার্গেট ধ্বংস করতে। ‘ওয়াইজে-১৮সি’ হলো আরেকটা ভার্সন, যা ডেভেলপ করা হচ্ছে ভূমির টার্গেটের জন্যে। তবে এর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এর লঞ্চার হলে বাণিজ্যিক কনটেইনার। রাশিয়া ইতোমধ্যেই কনটেইনারের ভেতর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পরীক্ষা চালিয়েছে।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র 'ডিএফ-১৭'। কেউ ধারণা করছেন যে, ‘ডিএফ-১৭’ হয়তো চীনের জন্যে নতুন আরেকটা জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপের সুযোগ এনে দিয়েছে। ২০১৯ সালে একজন চীনা সামরিক কর্মকর্তা বলেন যে, তারা একটা হাইপারসনিক জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করছে। চীনারা এখনও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সার্ভিসে আনা থেকে কতটা দূরে রয়েছে সেটা না জানা গেলেও চীনা সামরিক প্যারেডে এর অবির্ভাব পশ্চিমা বিশ্লেষকদের অনেককেই চিন্তায় ফেলেছে।

হাইপারসনিক অস্ত্র এবং ‘এ২এডি’র ভবিষ্যৎ

চীনের সর্বশেষ প্রযুক্তি হলো ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল’ বা ‘এইচজিভি’। ‘ডিএফ-১৭’ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রকৃতপক্ষে একটা মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র; যা কিনা একটা ‘এইচজিভি’ বহণ করে আকাশে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে ছেড়ে দেয়। এই উচ্চতা থেকে নেমে আসার সময় ‘এইচজিভি’ হাইপারসনিক গতি অর্জন করে। প্রায় আড়াই হাজার কিঃমিঃ পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির ৫ গুণ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত দ্রুতিতে চলতে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্র চীনারা ডেভেলপ করছে ২০১৪ সাল থেকে। আর এর মূল উদ্দেশ্য হলো বহুদূর থেজে টার্গেটের উপর নিখুঁতভাবে হামলা করা, এবং এত দ্রুত এই কাজটা করা, যাতে ক্ষেপণাস্ত্রটাকে কেউ বাধা দিতে না পারে। যদিও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি এর চাইতেও বেশি গতিতে চলে, তথাপি হাইপারসনিক অস্ত্র তার দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম এবং নিচু দিয়ে ওড়ার কারণে এগুলি কোথা দিয়ে কিভাবে উড়বে, সেটা আগে থেকে বলা মুশকিল।

এই ক্ষেপণাস্ত্রে খুব সম্ভব ‘ডিএফ-১৬’ ক্ষেপণাস্ত্রের বুস্টার রকেট ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকেই বলছেন যে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানা কয়েক মিটারের মাঝে। আর এটা আকাশে যথেষ্ট পরিমাণে দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম; যা কিনা এটাকে গুলি করে ধ্বংস করা অনেক কঠিন করে ফেলেছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন যে, ‘ডিএফ-১৭’ হয়তো চীনের জন্যে নতুন আরেকটা জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপের সুযোগ এনে দিয়েছে। এটা করা সম্ভব হলে চীনের আশেপাশের সাগরে মার্কিন জাহাজ ঢোকা আরও কঠিন হয়ে যাবে। ২০১৯ সালে একজন চীনা সামরিক কর্মকর্তা বলেন যে, তারা একটা হাইপারসনিক জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করছে। চীনারা এখনও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সার্ভিসে আনা থেকে কতটা দূরে রয়েছে সেটা না জানা গেলেও চীনা সামরিক প্যারেডে এর অবির্ভাব পশ্চিমা বিশ্লেষকদের অনেককেই চিন্তায় ফেলেছে।

চীনারা একদিকে যেমন চাইছে না যে পুরো ইন্দোপ্যাসিফিকে চীন ছাড়া আর কেউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখুক, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও চাইছে না যে সারা দুনিয়ার মতো ইন্দোপ্যাসিফিকেও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কারুর উপর কোন দেশ নির্ভরশীল থাকুক। উভয় পক্ষের জাতীয় স্বার্থ পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রগুলিতে সাংঘর্ষিক অবস্থানে রয়েছে। এই সমুদ্রগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজগুলি এবং মার্কিন সামরিক বিমান ঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই চীনারা তাদের ‘এ২এডি’ কৌশল ডেভেলপ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে গত এক দশকে চীনারা তাদের ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে যথেষ্ট উন্নত করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে; যা কিনা মার্কিনীদের চিন্তাতে ‘এ২এডি’র ব্যাপারে একটা ভীতির সঞ্চার করেছে; যদিও চীনাদের এই সক্ষমতা মার্কিনীদের আস্তিত্বকে কোন অবস্থাতেই হুমকির মাঝে ফেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র জানে যে, চীনের পারমানবিক ডিটারেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্যে কোন হুমকি বহণ করে না। উল্টো, পারমাণবিক অস্ত্র নয়, বরং প্রচলিত বিস্ফোরক ব্যবহার করার কারণেই চীনাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হুমকি হিসেবে ঠেকেছে। কারণ এতে ইন্দোপ্যাসিফিক, তথা গোটা বিশ্বের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ঢিলে হয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেবে। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হবে না নিশ্চিত জেনেই দুই পক্ষ এই অস্ত্রের খেলায় এগুচ্ছে। একারণেই ইন্দোপ্যাসিফিকে যুদ্ধের সম্ভাবনা অনেক বেশি। বিশেষ করে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পলায়ন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধে জড়াবার ফলে ইন্দোপ্যাসিফিকে যুদ্ধের সম্ভাবনা আগের চাইতে শুধু বেড়েই যায়নি, এর সময়ও এগিয়ে এসেছে।



সূত্রঃ

‘Missiles of China’ in CSIS, last updated 12 April 2021 (https://missilethreat.csis.org/country/china/)
‘IHS Jane’s Weapons: Strategic 2015-2016’
‘DF-21 / DF-21A (CSS-5) / DF-21B medium-range road-mobile ballistic missile’ in Army Recognition, 29 September 2018
‘DF-21C Missile Deploys to Central China’ in Federation of American Scientists, 28 September 2010 (https://fas.org/blogs/security/2010/09/df21c/)
‘Military and Security Developments Involving the People’s Republic of China 2010: Annual Report to Congress’ by Office of the Secretary of Defense, 2010
‘China Fields New Intermediate-Range Nuclear Missile’ by Bill Gertz in The Washington Free Beacon, March 3, 2014 (https://freebeacon.com/national-security/china-fields-new-intermediate-range-nuclear-missile/)
‘Panel I: China’s Hypersonic and Maneuverable Re-Entry Vehicle Programs,’ Testimony before Hearing on China’s Advanced Weapons, U.S.-China Economic and Security Review Commission, February 23, 2017
‘China’s Nuclear Forces and Weapons of Mass Destruction’ in Center for Strategic and International Studies, 20 July, 2016
‘Showtime: China Reveals Two ‘Carrier-Killer’ Missiles,’ in The National Interest, 03 September, 2015
‘China’s ‘aircraft-carrier killer’ missile successfully hit target ship in South China Sea, PLA insider claims’ in The South China Morning Post, 04 November 2020
‘China’s rocket force tests ‘carrier killer’ DF-26 ballistic missiles’ in The South China Morning Post, 10 June, 2021
‘Defense Intelligence Ballistic Missile Analysis Committee, Ballistic and Cruise Missile Threat 2020’ by Department of Defense, 2020
‘China’s New DF-26 Missile Shows Up At Base In Eastern China’ in Federation of American Scientists, 21 January 2020
‘Military and Security Developments Involving the People’s Republic of China 2020: Annual Report to Congress’ by Office of the Secretary of Defense, 2020
‘DF-26 TELs sighted at new PLARF training facility’ in IHS Jane’s, 10 January 2019
‘China’s Expanding Ability to Conduct Conventional Missile Strikes on Guam’ in US-China Economic & Security Review Commission, 05 October 2016 (https://www.uscc.gov/research/chinas-expanding-ability-conduct-conventional-missile-strikes-guam)
‘C-602 (HN-1/-2/-3/YJ-62/X-600/DH-10/CJ-10/HN-2000)’ in IHS Jane’s Weapons: Strategic 2015-2016
‘A Potent Vector: Assessing Chinese Cruise Missile Developments’ by Dennis M. Gormley, Andrew S. Erickson, and Jingdong Yuan in National Defense University, October 2014
‘China Eagle 18 missile has four major advantages, the attack area is expanded 600 times’ in Chinese MilitaryNews, 20 September 2019
‘China’s ‘New’ Carrier Killer Subs’ by Franz-Stefan Gad in The Diplomat, 06 April 2015
‘Ship killers: New anti-ship cruise missiles raise the stakes in Northeast Asia’ in Jane’s Navy International, April 2018
‘China’s New YJ-18 Antiship Cruise Missile: Capabilities and Implications for U.S. Forces in the Western Pacific’ by Michael Pilge in U.S.-China Economic and Security Review Commission, 28 October 28 2015
‘Cruise missiles are ‘useful’ sea defense’ by Zhao Lei in China Daily, 10 November 2015
‘China Building Long-Range Cruise Missile Launched From Ship Container’ by Bill Gertz in The Washington Free Beacon, 27 March 2019
‘DF-17 ballistic missile makes debut at National Day parade’ by Yang Sheng and Liu Xuanzun in Global Times, 01 October 2019
‘China Tests New Weapon Capable of Breaching US Missile Defense Systems’ by Franz-Stefan Gady in The Diplomat, 28 April 2016
‘U.S. Navy Sees Chinese HGV As Part Of Wider Threat’ by Bradley Perrett, Bill Sweetman, Michael Fabey in Aviation Week, 27 January, 2014
‘Military and Aerospace Electronics’ in ‘The emerging China hypersonic weapons threat to surface vessels at sea’, 24 April 2019
‘Is China’s DF-100 Missile Good Enough To Kill America’s Navy?’ by Sebastien Roblin in The National Interest, 17 November 2019

2 comments:

  1. অনেক তথ্যবহুল পোস্ট।
    আচ্ছা চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বা ছায়া যুদ্ধ বা হাইব্রিড যুদ্ধ কিভাবে হতে পারে তার একটা কাল্পনিক বর্ণনা বলবেন প্লিজ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি যেহেতু কল্পকাহিনী লিখি না, কাজেই আপনার উত্তর আপনি অন্য কোথাও খুঁজে নিতে পারেন।

      চীনের হাইব্রিড যুদ্ধ নিয়ে নিচের লেখাটা পড়তে পারেন।
      https://koushol.blogspot.com/2021/11/is-china-winning-without-firing-shots.html

      Delete