Friday 17 August 2018

সামরিক কাজে বেসামরিক জাহাজ? - ফকল্যান্ডস থেকে শিক্ষা

১৮ই অগাস্ট ২০১৮
 
১৯৮২ঃ যাত্রীবাহী ক্রুজ লাইনার 'এসএস ক্যানবেরা' ফকল্যান্ড যুদ্ধ শেষ করে দেশে ফেরত এসেছে। জাহাজের উপরে হেলিপ্যাডের উপরে একটা হেলিকপ্টার দেখা যাচ্ছে। বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী জাহাজকে রিকুইজিশন করে ব্রিটিশরা সৈন্য পরিবহণ করেছিল। এই জাহাজগুলি ছাড়া ব্রিটিশদের পক্ষে ফকল্যান্ড যুদ্ধে জেতা সম্ভব ছিল না।


লাক্সারি লাইনারে সৈন্য পরিবহণ

১৯৮২ সালের ২রা এপ্রিল আর্জেন্টিনা ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফকল্যান্ডস দ্বীপপুঞ্জ দখল করে নেয়। ব্রিটিশ সরকার প্রায় সাথে সাথেই ফকল্যান্ডস পুনর্দখল করতে পরিকল্পনা শুরু করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৯ই এপ্রিল এবং ২৭শে এপ্রিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী ফকল্যান্ড যুদ্ধের জন্যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ৫ম ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডকে পাঠানোর অনুরোধ করে। ব্রিটিশ সরকার এই ব্রিগেডকে পাঠাবার অনুমতি দেয় ২রা মে। এই ইউনিটকে সেখানে পাঠাবার সবচাইতে ভালো পদ্ধতি হিসেবে নতুন কোন পরিবহণ জাহাজ রিকুইজিশন করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ৩রা মে ব্রিটিশ সরকার শিপিং কোম্পানি কুনার্ড লাইন-এর মালিকানায় থাকা লাইনার জাহাজ ‘এসএস কুইন এলিজাবেথ ২’-কে রিকুইজিশন করে। মাত্র ১৯ ঘন্টা পরেই জাহাজটার ভূমধ্যসাগর ভ্রমণে যাবার কথা ছিল। ২৯৩ মিটার লম্বা ৬৭ হাজার টনের বিশাল এই জাহাজটা ছিল সমুদ্রের বিলাসবহুল মার্সিডিস গাড়ির মতো! ম্যান কোম্পানির তৈরি ১০,৬২৫ কিলোওয়াটের ৯টা ইঞ্জিন জাহাজটাকে সর্বোচ্চ ৩৪ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলার সক্ষমতা দেয়। তবে এর স্বাভাবিক গতি ছিল ২৮ দশমিক ৫ নটিক্যাল মাইল, যা বেশিরভাগ যুদ্ধজাহাজের চাইতে বেশি বা কমপক্ষে সমতুল্য। ৫ই মে জাহাজটাকে ভসপার থর্নিক্রফট শিপইয়ার্ডে পাঠানো হয় কিছু মডিফিকেশনের জন্যে। জাহাজের উপরে পেছনের সুইমিং পুল এবং সামনের ডেকের উপরে দুইটা হেলিডেক তৈরি করা হয়। জাহাজের মাঝ দিয়ে জ্বালানি পরিবহণের জন্য লম্বা পাইপলাইন বসানো হয়। পাইপলাইনের মাধ্যমে অন্য জাহাজ থেকে তেল নিয়ে ইঞ্জিনরুম পর্যন্ত নেবার ব্যবস্থা করা হয়। জাহাজের পাবলিক লাউঞ্জগুলিকে সেনাদের থাকার ডরমিটরিতে রূপান্তর করা হয়। জাহাজের পুরো দৈর্ঘ্যের প্রায় চার ভাগের এক ভাগকে স্টিল প্লেটিং-এর মাধ্যমে শক্তিশালী করা হয়। এন্টি-ম্যাগনেটিক কয়েল স্থাপনের মাধ্যমে ম্যাগনেটিক মাইন থেকে জাহাজকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়। জাহাজের সাথে জাহাজের ৬৫০ জন ক্রু ফকল্যান্ডে যাবার জন্যে স্বেচ্ছায় নাম লেখায়। মাত্র এক সপ্তাহের মডিফিকেশনের কাজ করার পর ১২ই মে ৫ম ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের ৩,২০০ সৈন্যকে নিয়ে এই জাহাজ রওয়ানা হয়। যখন জাহাজ রওয়ানা হয়, তখন জাহাজের তিনটা বয়লারের মাঝে মাত্র একটা কাজ করছিল। বাকি দুইটাকে যাত্রাপথে মেরামত করে নেয়া হয়। যাত্রাপথে জাহাজটার রাডার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং জাহাজের কোন বাতি যেন বাইরে থেকে দেখা না যায়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে কেউ জাহাজটাকে খুঁজে না পায়। মডার্ন কোন ন্যাভিগেশন এইড ছাড়াই জাহাজটা দক্ষিণ আটলান্টিকে পৌঁছায়।
 
 
লাক্সারি ক্রুজ লাইনার 'কুইন এলিজাবেথ-২'-এর ডেকের উপরে সৈন্যরা ব্যায়াম করছে। পিছনে হেলিপ্যাডের উপরে দুইটা হেলিকপ্টার দেখা যাচ্ছে। ব্রিটিশ সেনারা কল্পনায়ও ভাবেনি যে এরকম লাক্সারি জাহাজে চেপে তারা কখনও যুদ্ধ করতে যাবে। জাহাজের ক্রুরাও ভাবেনি যে তারা কখনও সেনা পরিবহণ করবে।


সামরিক কাজে বেসামরিক জাহাজ

যে নিয়মের মাধ্যমে এই বেসামরিক জাহাজগুলি ব্রিটিশ সরকার রিকুইজিশন বা চার্টার করেছিল, তা পরিচিত ছিল ‘শিপ টেকেন আপ ফ্রম ট্রেড’ বা স্টাফট নামে, যা ১৯৮২ সালের ৪ঠা মে (ফকল্যান্ড দখলের দুই দিন পর) ইস্যু করা হয়। ‘স্টাফট’এর বদৌলতে ব্রিটিশ সরকার যেকোন জাহাজ রিকুইজিশন করতে পারবে। এর আগে ১৯৫৬ সালে সুয়েজ যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা বেসরকারি জাহাজ কাজে লাগিয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার নিয়ম করেছিল যে, শুধুমাত্র ব্রিটিশ ফ্ল্যাগের জাহাজই রিকুইজিশন করা হবে এবং ব্রিটিশ ক্রুরাই এসব জাহাজ চালাবে। ‘কুনার্ড কাউন্টেস’-কে রিকুইজিশন করা হয়েছিল ফকল্যান্ড যুদ্ধের পরে – ১৯৮২ সালের অক্টোবরে – ৬ মাসের জন্যে। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ থেকে আসেনশন দ্বীপ পর্যন্ত সৈন্যদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয় এই জাহাজে। কারণ ফকল্যন্ডের পোর্ট স্ট্যানলি বিমান বন্দরকে তখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। কয়েক মাসের ব্যবধানে ব্রিটিশ সরকার ৩৩ জন মালিকের কাছ থেকে ৫৪টা জাহাজ রিকুইজিশন করেছিল। এই জাহাজগুলিকে এমন হতে হয়েছিল, যাতে করে তারা বহুদূরের সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে পারে এবং খারাপ আবহাওয়ায় সমস্যা না হয়। দক্ষিণ আটলান্টিকের খারাপ আবহাওয়ার আবার বেশ খ্যাতি রয়েছে। এই ৫৪টা জাহাজে ১ লক্ষ টন মালামাল, ৪ লক্ষ ১০ হাজার টন জ্বালানি তেল, ৯ হাজার সৈন্য এবং ৯৫টা বিমান বহন করা হয়েছিল। ব্রিটিশ রয়াল নেভির জাহাজগুলিতে যা বহণ করা সম্ভব ছিল, তা ফকল্যন্ড মিশনের জন্যে যথেষ্ট ছিল না। লম্বা মিশনে খারাপ আবহাওয়ায় সৈন্য এবং রসদ পরিবহণের জন্যে যাত্রীবাহী ওশান লাইনার জাহাজগুলিকেই বেশি উপযুক্ত মনে হয়েছিল ব্রিটিশদের। ‘কুইন এলজাবেথ-২’ জাহাজটা যতক্ষণে দক্ষিন আটলান্টিকে পৌঁছেছিল, ততদিনে যুদ্ধ বেশ কিছুদূর এগিয়ে গিয়েছে। ব্রিটিশ সেনারা ইতোমধ্যেই ফকল্যান্ডে নেমেছে। ‘কুইন এলিজাবেথ-২’ ফকল্যান্ডের উপকূলে সৈন্য নামায়নি; নামিয়েছিল ফকল্যান্ডের কাছাকাছি সাউথ জর্জিয়া দ্বীপে, যা কিনা সেবছরের ২৫শে এপ্রিল ব্রিটিশরা দখল করে নিয়েছিল। সেখান থেকে অন্য জাহাজে করে ফকল্যান্ডে নামানো হয় সৈন্যদের। ‘কুইন এলিজাবেথ’এর মতো আরও কিছু জাহাজ রিকুইজিশন করা হয়েছিল।


ক্রুজ লাইনার 'এসএস ক্যানবেরা'র ডেকের উপর থেকে সেনাবাহিনীর মর্টার উড়িয়ে নিচ্ছে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর সী-কিং হেলিকপ্টার। ডেকের উপরে কনটেইনারে অনেক অস্ত্র এবং রসদ বহণ করা হয়েছিল। ব্রিটিশদের নৌ, বিমান, সেনা, ম্যারিন ও বেসামরিক সকলে একত্রে কাজ করেছিল ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময়।
  

জাহাজ থেকে জাহাজে সৈন্য ট্রান্সফার

ভূমধ্যসাগর থেকে ফেরা যাত্রীবাহী জাহাজ এসএস ক্যানবেরা (৪৫ হাজার টন) ৬ই এপ্রিল ব্রিটেনে এসে পৌঁছায়। এই জাহাজের ৪০০ ক্রু ছিল এশিয়ান, যাদেরকে জাহাজ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন একজন রয়াল নেভাল রিজার্ভের অফিসার। জাহাজের উপরে হেলিকপ্টার ওঠা-নামার জন্যে হেলিডেক বসানো হয়। ৯ই এপ্রিল ৪০তম ও ৪২তম কমান্ডো, রয়াল মেরিন এবং ৩য় প্যারা ব্যাটালিয়নকে নিয়ে জাহাজটা দক্ষিণ আটলান্টিকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। সেখানে ব্রিটিশ অধীনে থাকা এসেনশন দ্বীপে দুই সপ্তাহ মহড়া দেয়া হয় এবং ফকল্যান্ডে সৈন্য নামাবার জন্যে জাহাজটাকে রেডি করা হয়। ২১শে মে ফকল্যান্ডের উপকূলে গিয়ে ২ হাজার সৈন্যকে নামিয়ে দেয় জাহাজটা। এরপর জাহাজটা আড়াই হাজার মাইল দূরের সাউথ জর্জিয়া দ্বীপে গিয়ে ‘কুইন এলিজাবেথ-২’ জাহাজ থেকে নামিয়ে দেয়া সৈন্যদের তুলে নেয়। ক্যানবেরার সাথে ‘নরল্যান্ড’ এবং ‘আরএফএ স্ট্রমনেস’ বাকি সেনাদের পরিবহণ করে। এই সেনাদেরকে ক্যানবেরা এবং বাকি জাহাজগুলি আবারও ফকল্যান্ডে নামিয়ে দেয় ২রা জুন। ল্যান্ডিং ক্রাফট, জাহাজের নিজস্ব বোট এবং ১০০টা হেলিকপ্টার লিফটের মাধ্যমে এই সেনাদের সেখানে নামানো হয়। সৈন্য নামাবার সময় ক্যানবেরার আশেপাশের রয়াল নেভির যুদ্ধজাহাজগুলিকে আর্জেন্টাইন যুদ্ধবিমানগুলি হামলা করেছে, কিন্তু ক্যানবেরায় বোমা পড়েনি একটাও। আর্জেন্টাইনরা ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার-ফ্রিগেটগুলিকে হামলা করতেই বেশি আগ্রহী ছিল; সাপ্লাই বা ট্রুপ-ক্যারিয়ারগুলিকে নয়। ব্রিটিশরা নিশ্চিত ছিল যে, ক্যানবেরায় বোমা পড়লেও সাড়ে ৩৫ ফুট ড্রাফটের এই জাহাজ ফকল্যান্ডের উপকূলের অগভীর পানিতে ডুববে না। যুদ্ধের শেষে ১৫ই জুন ৪,০০০-এরও বেশি আর্জেন্টাইন যুদ্ধবন্দীদের পরিবহণ করে জাহাজটা। এই কাজ শেষে রয়াল মেরিন সেনাদের ১১ই জুন আবারও দেশে ফেরত নিয়ে আসে।
  

রো-রো ফেরি 'এমভি নরল্যান্ড'-এর পেছনের ভেহিকল র‍্যাম্প দেখা যাচ্ছে। এই র‍্যাম্প ব্রিটিশদের ল্যান্ডিং ক্রাফট থেকে অনেক উঁচু থাকায় জাহাজ থেকে গাড়িগুলি ল্যান্ডিং ক্রাফটে নামানো যাচ্ছিলো না। ব্রিটিশরা একসময় সব বাণিজ্যিক জাহাজ তৈরির সময় ভবিষ্যতে সামরিক ব্যবহারের কথা চিন্তা করতো। কিন্তু আদর্শিক চিন্তার ক্ষয়ের কারণে ব্রিটিশরা ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়েছিল।

সৈন্যের সাথে অস্ত্র এবং রসদ

৫ম ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের ৩,৯৬১ জনের সেনাদলের ৩৫ দিনের অপারেশনের জন্যে দরকার ছিল ১,০৮৪ টন গোলাবারুদ, ১,১৪৭ টন রসদপাতি, ২০১৫টা গাড়ি এবং ১৯টা হেলিকপ্টার। এত্তসব জিনিস নেবার জন্যে তো আরও জাহাজ দরকার। ২৬ হাজার টনের ‘এমভি নরল্যান্ড’ রিকুইজিশন করা হয় ১৭ই এপ্রিল। এটা ছিল একটা রো-রো ফেরি। এতে দ্বিতীয় প্যারা ব্যাটালিয়ন এবং নেভাল এভিয়েশনের ৮০০ জন সেনাকে পরিবহণ করা হয়। জাহাজের ডিজাইন অবশ্য ব্রিটিশদের জন্যে সুবিধার ছিল না। ব্রিটিশরা তাদের লজিস্টিক ল্যান্ডিং শিপ-গুলির সাথে মেক্সিফ্লোট নামের পন্টুনের মতো কিছু ল্যান্ডিং ক্রাফট বহন করেছিল। এগুলির উপর ট্যাঙ্ক, আর্মার্ড ভেহিকল এবং অন্যান্য গাড়ি তুলে দিয়ে উপকূলে নামানো হতো। নরল্যান্ড একটা রো-রো ফেরি হলেও এই জাহাজের ভেহিকল র‍্যাম্প মেক্সিফ্লোটগুলির উচ্চতা পর্যন্ত নামতোই না। অর্থাৎ এই জাহাজে গাড়ি বহন করলে মেক্সিফ্লোটে সেই গাড়ি নামাবার কোন উপায় নেই। কিন্তু ব্রিটিশদের উপায় ছিল না, কারণ সুবিধামত জাহাজ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতি চারটা জাহাজ ইন্সপেকশনের পর একটা মাত্র জাহাজ রিকুইজিশনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল।
  

'আটলান্টিক কনভেয়র' জাহাজের উপরে উড়ছে ব্রিটিশ রয়াল নেভির সী-হ্যারিয়ার বিমান। এই বিমানগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল যুদ্ধে। এই জাহাজটা ১৪টা হ্যারিয়ার বিমান বহন করে মূলতঃ অক্সিলারি বিমানবাহী জাহাজের কাজ করেছিল।


বাণিজ্যিক জাহাজে যুদ্ধবিমান পরিবহণ

‘পিএন্ডও লাইন’এর সাড়ে ৫ হাজার টনের ‘এমএস এল্ক’ রো-রো ফেরি বহন করেছিল ১০০টা গাড়ি, ২ হাজার টন এমুনিশন এবং আরও কয়েক’শ টন রসদপাতি। ৮টা লাইট ট্যাঙ্কও নেয়া হয় এতে। হেলিপ্যাড বসানো হয় যাতে ৩টা সী-কিং হেলিকপ্টার বহন করা যায়। ৪,২০০ টনের ‘এমএস ইউরোপিক ফেরি’ রিকুইজিশন করা হয় ১৯শে এপ্রিল। এতে হেলিপ্যাড যুক্ত করা হয় সেনাবাহিনীর ৪টা হেলিকপ্টার বহন করার জন্যে; সৈন্য, গাড়ি এবং রসদও নেয়া হয় এতে। ১৯,০০০ টনের রো-রো ফেরি ‘এমএস বল্টিক ফেরি’ ৫ম ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের ১০৫ জন সৈন্যের সাথে ১,৮৭৪ টন রসদপাতি নিয়েছিল। এছাড়াও জাহাজটার উপর হেলিপ্যাড বসানো হয় এবং সেনাবাহিনীর তিনটা হেলিকপ্টার বহন করা হয় এতে। এই জাহাজের সিস্টার শিপ ‘এমএস নরডিক ফেরি’কেও রিকুইজিশন করা হয়। ‘কুনার্ড’এর ১৫ হাজার টনের কনটেইনার জাহাজ ‘এসএস আটলান্টিক কনভেয়র’ এবং ‘এসএস আটলান্টিক কজওয়ে’-কে রিকুইজিশন করা হয় ১৪ই এপ্রিল। জাহাজদু’টিতে বেশকিছু পরিবর্তন করে বিমান পরিবহণের জন্যে উপযুক্ত ক্রয়া হয়েছিল। বিমান ছাড়াও অনেক জ্বালানি এবং গোলাবারুদ নেয় জাহাজদু’টি। ‘আটলান্টিক কনভেয়র’ বহণ করছিল নৌবাহিনীর ৬টা ওয়েসেক্স হেলিকপ্টার এবং রয়াল এয়ার ফোর্সের ৫টা চিনুক হেলিকপ্টার। এসেনশন দ্বীপে এসে জাহাজটা নৌবাহিনীর ৮টা এবং বিমান বাহিনীর ৬টা হ্যারিয়ার বিমান নেয়। ফকল্যান্ডের কাছাকাছি এসে হ্যারিয়ার বিমানগুলিকে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর একটা চিনুক হেলিকপ্টার ইতোমধ্যেই এসেনশন দ্বীপে নেমে গিয়েছিল। ২৫শে মে আর্জেন্টাইন নৌবাহিনীর সুপার এটেনডার্ড বিমানের ছোঁড়া এক্সোসেট ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে জাহাজটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আগুনে ৬টা ওয়েসেক্স, ৩টা চিনুক এবং একটা লিঙ্কস (অন্য জাহাজ থেকে আসা) হেলিকপ্টার পুরো অঙ্গার হয়। অপরদিকে আটলান্টিক কনভেয়রের সিস্টার শিপ আটলান্টিক কজওয়ে ১৪ই মে রওয়ানা দিয়ে নৌবাহিনীর ৮টা সী-কিং এবং ২০টা ওয়েসেক্স হেলিকপ্টার বহন করে ২৭শে মে ফকল্যান্ডের কাছাকাছি পৌঁছায়। যুদ্ধের মাঝে এই জাহাজের উপরে ৪,০০০ বার হেলিকপ্টার অবতরণ করে এবং ৫০০ বিমানে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও মিসাইল হামলার শিকার রয়াল ফ্লিট অক্সিলারির লজিস্টিক ল্যান্ডিং শিপ ‘স্যার গালাহ্যাড’ এবং ‘স্যার ট্রিসট্রাম’-এর ১৭০ জন ক্রুকে এই জাহাজ আশ্রয় দেয়। সাড়ে ১১ হাজার টনের কন্টেইনার জাহাজ ‘এমভি কন্টেন্ডার বেজান্ট’ ৯টা ওয়াস্প, ৩টা চিনুক হেলিকপ্টার এবং ৪টা হ্যারিয়ার বিমান নিয়ে যখন ফকল্যান্ড পৌঁছায়, তখন যুদ্ধ শেষ। এই জাহাজটা রয়াল নেভি পরবর্তীতে রেখে দেয় ‘আরএফএ আরগাস’ নামে। ২৮ হাজার টনের কনটেইনার জাহাজ ‘এমভি এস্ট্রোনমার’-এ বেশকিছু পরিবর্তন করা হয় ১৩টা হেলিকপ্টার বহণ করার জন্যে। এই জাহাজটাও যুদ্ধ শেষে পৌঁছায়, এবং এটাকেও রয়াল নেভি সার্ভিসে নিয়ে নেয় ‘আরএফএ রিলায়ান্ট’ নামে। এই জাহাজটাই ১৯৮৪ সালে বৈরুত থেকে ৫,০০০ ব্রিটিশ নাগরিক এবং সৈন্যকে উদ্ধার করে।
 





অয়েল রিগ সাপোর্ট শিপ 'স্টেনা ইন্সপেক্টর'কে রয়াল নেভি ফকল্যান্ড নিয়ে গিয়েছিল রিপেয়ার শিপ হিসেবে। জাহাজটার এতটাই কাজে লেগেছিল যে, ব্রিটিশরা পরবর্তীতে জাহাজটাকে সার্ভিসে নিয়ে নেয় 'আরএফএ ডিলিজেন্স' নামে।

সব জাহাজই কাজে লাগে

ব্রিটিশরা ৩টা যাত্রীবাহী লাইনার, ৮টা রো-রো ফেরি, ৫টা কনটেইনার জাহাজ, ৭টা কার্গো জাহাজ, ১৫টা ট্যাংকার এবং আরও ৮টা সাপোর্ট জাহাজ রিকুইজিশন ও চার্টার করেছিল। এই ৪৬টা বাণিজ্যিক জাহাজের মাঝে অনেকগুলিতেই হেলিপ্যাড বসানো হয়েছিল – সবগুলি যাত্রীবাহী লাইনার, রো-রো ফেরি, কনটেইনার জাহাজ; ৭টা কার্গো জাহাজের মাঝে ৩টা, এবং ৮টা সাপোর্ট শিপের মাঝে ৩টা। ১৫টা বাণিজ্যিক ট্যাঙ্কারের মাঝে ২টাকে সমুদ্রে রিফুয়েলিং-এর জন্যে যন্ত্র বসানো হয়েছিল। আবার অনান্য সকল জাহাজকেও মাঝ সমুদ্রে জ্বালানি গ্রহণ করতে পারার জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছিল। অনেক জাহাজে যাত্রাপথেও মডিফিকেশনের কাজ চলছিল। অন্যদিকে রয়াল নেভির অধীনে মোট ৬৮টা জাহাজ ফকল্যান্ড মিশনে গিয়েছিল - ২টা বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ২টা ডক ল্যান্ডিং শিপ, ৮টা ডেস্ট্রয়ার, ১৫টা ফ্রিগেট, ৩টা প্যাট্রোল ভেসেল, ৬টা সাবমেরিন, ৩টা সার্ভে জাহাজ (ব্যবহৃত হয়েছিল হসপিটাল জাহাজ হিসেবে), ৫টা ফিশিং ট্রলার (ব্যবহৃত হয়েছিল মাইনসুইপার হিসেবে), ১০টা রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার, ৬টা লজিস্টিক ল্যান্ডিং শিপ, ৫টা সাপ্লাই শিপ, ১টা হেলিকপ্টার সাপোর্ট শিপ, ২টা ওশান টাগবোট। ২টা ডেস্ট্রয়ার, ২টা ফ্রিগেট, ১টা লজিস্টিক ল্যান্ডিং জাহাজ, ১টা কনটেইনার জাহাজ, ১টা ইউটিলিটি ল্যান্ডিং ক্রাফট, ২৪টা হেলিকপ্টার ও ১০টা ফাইটার বিমান হারায় ব্রিটিশরা। প্রতিটা জাহাজই সেখানে কাজে লেগেছিল। ডুবে যাওয়া বা আঘাতপ্রাপ্ত জাহাজকে আশেপাশের জাহাজগুলি সহায়তা দিয়েছে; আগুন নিভাতে সহায়তা দিয়েছে; তাদের ক্রুদের পানি থেকে তুলে নিয়েছে। এছাড়াও জাহাজগুলি হেলিকপ্টারগুলিকে রিফুয়েলিং করেছে; ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ ও বিমানগুলিকে রিপেয়ার করতে সহায়তা দিয়েছে; খাবার-দাবার ও রসদ সরবরাহ করেছে; মেডিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছে; সৈন্যদের রেস্টহাউজ হিসেবে কাজ করেছে; কুরিয়ার বা ডেসপ্যাচ ভেসেল হিসেবেও কাজ করেছে।

ফকল্যান্ড যুদ্ধ থেকে এই আলোচনা সাপেক্ষে কিছু শিক্ষনীয় রয়েছে।

- ব্রিটিশ নৌবহরের দুর্বলতা - বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্তিশালী নৌবহর ব্রিটেন ততদিনে হারিয়েছে। ব্রিটিশ রয়াল নেভির জাহাজগুলিতে যতো সৈন্য পরিবহণ করা সম্ভব ছিল, তা দিয়ে ফফল্যান্ডস-এর মতো ছোট দ্বীপও পূনর্দখল করা ছিল কঠিন। তাই বেসামরিক বাণিজ্যিক জাহাজের উপরেই নির্ভর করছে হয়েছিল ব্রিটেনকে।

- ব্রিটিশদের আদর্শিক চিন্তার দুর্বলতা - ব্রিটিশদের আদর্শিক চিন্তার দুর্বলতা আরও বহু আগে থেকেই প্রকাশ পেয়েছিল। ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় সেটা আরও কঠিনভাবে সামনে আসলো। ব্রিটিশ এডমিরালটি সকল জাহাজের ডিজাইন নিয়ন্ত্রণ করতো। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটেন শত-শত বাণিজ্যিক জাহাজকে রিকুইজিশন করে নৌবাহিনীতে নিয়েছিল। সেটা তারা পেরেছিল, কারণ প্রতিটা জাহাজের ডিজাইন করা হতো ভবিষ্যতের যেকোন সামরিক দরকারের কথা চিন্তা করে। কিন্তু ১৯৮২ সালে ব্রিটেন বেসামরিক জাহাজ রিকুইজিশন করতে গিয়ে দেখলো যে, বেশিরভাগ জাহাজই সামরিক ব্যবহারের অনুপযোগী। যেগুলিকে সামরিক কাজের জন্যে নির্বাচিত করা হয়েছিল, সেগুলিরও ছিল ব্যাপক সমস্যা। ফকল্যান্ডে বাণিজ্যিক পরিবহণ জাহাজ থেকে সৈন্য নামাতে গিয়ে তাদের এই সমস্যাগুলি মোকাবিলা করতে হিমসিম খেতে হয়েছিল।
 
রয়াল নেভির সার্ভে শিপ 'এইচএমএস হেরাল্ড' ও এর ২টা সিস্টার শিপ ফকল্যান্ড গিয়েছিল হসপিটাল শিপ হিসেবে। যুদ্ধে যেকোন জাহাজই কাজে লাগানো সম্ভব - এটার ভালো উদাহরণ এটি।


- যুদ্ধের সময়ে যেকোন জাহাজই কাজে লাগে। কিছু জাহাজ ফকল্যান্ডের আশেপাশে প্যাট্রোল এবং ইন্টেলিজেন্স যোগাড়ের জন্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। ৪টা সার্ভে জাহাজকে মডিফাই করে হসপিটাল শিপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। অয়েল প্ল্যাটফর্মের সাপোর্ট জাহাজগুলি অত্যন্ত ভালো ফ্লোটিং ওয়ার্কশপ বা রিপেয়ার শিপ হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। ৫টা বাণিজ্যিক ফিশিং ট্রলারকে রিকুইজিশন করে সোনার বসিয়ে নেয়া হয়েছিল মাইনসুইপিং-এর কাজে।

- বেসামরিক জাহাজ যে সহজেই সামরিক কাজে লাগানো সম্ভব, তা আবারও প্রমাণ হলো ফকল্যান্ডের যুদ্ধের সময়। যাত্রীবাহী লাইনারগুলিকে সহজেই ট্রুপ ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা গেছে। কনটেইনার জাহাজগুলিকে কিছুটা পরিবর্তন করে বিমান পরিবহণ করানো হয়েছে। এমনকি কোন ধরনের মডিফিকেশন ছাড়াও একটা জাহাজ সামরিক কাজে ব্যবহার হতে পারে। যেমন – ফকল্যান্ডের কাছাকাছি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজগুলিকে জ্বালানি ও রসদ সরবরাহ করা; আক্রান্ত বা ডুবন্ত যুদ্ধজাহাজকে অগ্নি নির্বাপণে সহায়তা দেয়া ও সেসব জাহাজের ক্রুদের আশ্রয় দেয়া, ইত্যাদি।

- হেলিকপ্টার অপারেশনের গুরুত্ব - বিমান/হেলিকপ্টার নৌ-অপারেশনের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হলো আবারও। বাণিজ্যিক প্রায় সকল জাহাজকেই মডিফাই করা হয়েছিল ফকল্যান্ডের জন্যে। প্রধান মডিফিকেশন ছিল হেলিপ্যাড বসানো। জাহাজে বহণ করা সৈন্য এবং রসদ জাহাজ থেকে ওঠা-নামানো জন্যে হেলিকপ্টার ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ বাহন। আর ফকল্যান্ডের উপকূলে হেলিকপ্টার অপারেশনের সময় এই জাহাজগুলি ক্রমাগত হেলিকপ্টারগুলিকে জ্বালানি সরবরাহ করেছিল এবং দরকারে মেইনটেন্যান্স/রিপেয়ারের ব্যবস্থা করেছিল।
 


কনটেইনার জাহাজ 'এমভি কন্টেন্ডার বেজান্ট' ১২টা হেলিকপ্টার ও ৪টা হ্যারিয়ার বিমান নিয়ে ফকল্যান্ডে গিয়েছিল। এই জাহাজটা পরবর্তীতে রয়াল নেভি সার্ভিসে নিয়ে নেয় এভিয়েশন সাপোর্ট শিপ হিসেবে, যা এখন 'আরএফএ আরগাস' নামে চলছে।


- অক্সিলারি বিমানবাহী জাহাজ - বাণিজ্যিক কনটেইনার জাহাজগুলিতে বহণ করা হ্যারিয়ার বিমানগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এই জাহাজগুলি অক্সিলারি বিমানবাহী জাহাজের কাজ করেছিল। এই বিমানগুলি জাহাজের হেলিপ্যাড থেকে উড়ে গিয়ে বিমানবাহী জাহাজগুলিতে যোগ দিয়েছিল। যুদ্ধে হারানো হ্যারিয়ারগুলির প্রতিস্থাপক ছিল এগুলি। বিমানবাহী জাহাজ ‘হার্মিস’ সর্বোচ্চ বহন করেছিল রয়াল নেভির ১৬টা সী-হ্যারিয়ার, বিমান বাহিনীর ১০টা হ্যারিয়ার জিআর-৩, আর ১০টা সী-কিং হেলিকপ্টার। ‘ইনভিনসিবল’ বহন করেছিল ১২টা সী-হ্যারিয়ার এবং ১০টা সী-কিং হেলিকপ্টার। ডুবে যাওয়া কনটেইনার জাহাজ ‘আটলান্টিক কনভেয়র’ নিয়ে এসেছিল নৌবাহিনীর ৮টা, আর বিমান বাহিনীর ৬টা হ্যারিয়ার। ডুবে যাবার আগেই বিমানগুলি বিমানবাহী জাহাজে ট্রান্সফার করা হয়েছিল। আর্জেন্টিনার ১২০-এর উপর ফাইটার বিমানের বিরুদ্ধে এগুলিই ছিল ব্রিটিশদের ভরসা। হ্যারিয়ারগুলি ২১টা আর্জেন্টাইন বিমান ভূপাতিত করেছিল।

আরও পড়ুনঃ
আর্জেন্টিনা কি পারবে?

Wednesday 8 August 2018

লাক্সারি ইয়ট, নাকি প্রাইভেট নৌবাহিনী?

০৮ অগাস্ট ২০১৮

সমাজের কিছু লোকের হাতে অত্যধিক পরিমাণ সম্পদ চলে যাবার ফলে লাক্সারি ইয়টের মতো জাহাজের আবির্ভাব হয়েছে। এখন এর সাথে যুক্ত হচ্ছে ইয়ট সাপোর্ট ভেসেল। হল্যান্ডের ডামেন শিপইয়ার্ডের তৈরি এমনই এক জাহাজ ৬৭ মিটার লম্বা 'গারচন' (ছবিতে সামনের জাহাজ), যা পিছনের সুপারইয়টকে সহায়তা দেয়াই এর কাজ।  



সম্পদের অসম বন্টনের নেপথ্যে... 

সমাজের কিছু মানুষের হাতে এখন বিপুল পরিমাণ সম্পদ। পুঁজিবাদ সমাজের কিছু লোকের হাতে সকল সম্পদ তুলে দিয়ে বিশ্বব্যাপী চরম দারিদ্র্যের জন্ম দিয়েছে। এই সম্পদশালী লোকগুলি এখন তাদের সম্পদ দিয়ে কি করবে, তা বুঝে উঠতে হিমসিম খাচ্ছে। একটা মানুষ কতোই বা খেতে পারে; কয়টা জামা বা জুতা কিনতে পারে? হ্যাঁ, অনেকগুলি বাড়ির মালিক সে হতে পারে। একসময় সে চাইবে তার বাড়িটিকে আরও বিলাসিতায় ভরে ফেলতে। কিন্তু সেই বিলাসিতার তো কোন শেষ নেই। পাঁচ-তারকা স্ট্যান্ডার্ডের উপরে কোন কিছু থাকলে সেটাও তার দরকার। গাড়ি তো এখন অনেকেরই আছে; তার দরকার সবচাইতে দামি গাড়িটা। সেটাও একসময় তার ইচ্ছাকে খুশি করতে পারবে না। কেউ কেউ প্রাইভেট বিমান কিনেছে। হ্যাঁ, যাতায়াতের সুবিধার জন্যে তো অবশ্যই। তবে এখানে নিজের স্ট্যাটাসটাও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অনেকের কাছেই। নিজের বিজনেস জেটে করে ভ্রমণের সময়ে অতিথিদের মনে দাগ কাটার সকল চেষ্টাই তার থাকে। মান-ইজ্জত বলে তো কথা!

আরও কিছু লোক যাচ্ছে সমুদ্রের মাঝে; জাহাজ কিনছে সে। পাঁচ-তারকা হোটেলকে এবার সে নিয়ে গেছে সমুদ্রের মাঝে। সেই জাহাজে অতিথিদের আপ্যায়ন করে সন্মান কুড়াবার চেষ্টা তার। জাহাজগুলির মাঝেও সবচাইতে ভালো এবং সবচাইতে বড়টা তার চাই; সবচাইতে বেশি বিলাসবহুল। বিলাসিতার আবার শেষ নেই। জাহাজের উপরে হেলিকপ্টার তো স্বাভাবিক ব্যাপার। স্পীডবোটে রাইড; সেইলিং বোট চালনা; মাছ ধরা; জেট-স্কি চালনা; প্যারা গ্লাইডিং; স্কুবা ডাইভিং। এর সাথে যোগ হয়েছে সাবমেরিন! পানির নিচের জগত নিজ চোখে দেখার জন্যে এই সাবমেরিন। কিছু জাহাজে ল্যান্ডিং ক্রাফট বা হভারক্রাফটও থাকছে, যাতে করে গাড়ি বা মোটর সাইকেল নিয়ে জাহাজ থেকে স্থলে অবতরণ করা যায়। কিছু জাহাজে ছোটখাটো ফ্লাইং বোট বহণ করা হচ্ছে। এতসব যানবাহন এবং যন্ত্রপাতির জন্যে যে টেকনিক্যাল জ্ঞান এবং রক্ষণাবেক্ষণ দরকার, তার জন্যে তার জাহাজে স্পেশালিস্ট লোকজন বহণ করতে হচ্ছে। এতকিছু এক জাহাজে ঢোকানো অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। বোট, সাবমেরিন, হেলিকপ্টার – এগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্যে যে জাহাজ সে কিনেছে, সেই জাহাজে যদি সারাদিন যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে ঠুকঠাক খুটখাট শব্দ হতে থাকে, তাহলে সেটাকে বরং ওয়ার্কশপ বলাই ভালো। তদুপরি, এতোসব যন্ত্রপাতি দিয়ে ডেকের উপরটা ভরে ফেললে ডেকের উপরে আরাম করে বসার স্থানটাও তো কমে যাচ্ছে। কেউবা আবার নিজের অফিসটাকেও সাথে নিতে চাচ্ছেন; অফিসের স্টাফসহ। অর্থাৎ তার পুরো জীবনটাকেই জাহাজে চড়িয়ে সে তার সাথে নিতে চাচ্ছে। একের ভিতরে সব চাইতে গেলে অনেক প্রশ্নের উত্তর তাকে দিয়ে আসতে হবে।
  
 
মাইক্রোসফটের কো-ফাউন্ডার পল এলেনের ১২৬ মিটার লম্বা ১০ হাজার টনের এক্সপ্লোরার ইয়ট 'অক্টোপাস'। জাহাজটায় রয়েছে দুইটা হেলিডেক। পিছনের হেলিডেকের সাথে রয়েছে বিরাট এক হ্যাঙ্গার, যার ভেতরে দুইটা হেলিকপ্টার রাখা যায়। হেলিডেকের নিচে রয়েছে ডক, যার ভেতরে কয়েকটা স্পীডবোট এবং ল্যান্ডিং ক্রাফট রাখা যায়। এডভেঞ্চারার গোছের মানুষদের প্রবৃত্তিকে খুশি করতে এধনের ইয়টে কি রাখা হয়নি? 


কিছু লোক তাদের প্রবৃত্তিকে খুশি করতে অজানাকে খুঁজে বেড়াতে চায়। যেমন - এন্টার্কটিকা ভ্রমণ, পানির নিচে প্রাচীনকালে ডুবে যাওয়া জাহাজ খুঁজে বের করা, দুর্গম অঞ্চলের জীবজন্তু দেখতে যাওয়া, গুপ্তধনের সন্ধান করা, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া, ইত্যাদি। এই ভ্রমণগুলি ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সূর্যস্নানের মতো নয়। যারা এগুলি পছন্দ করে, তাদেরকে এডভেঞ্চারিস্ট বলছে অনেকে। এসব কর্মকান্ডে প্রযুক্তির আধিক্য বেশি এবং যন্ত্রপাতি যথেষ্টই লাগছে সেখানে। কাজেই তাদের জাহাজগুলিতে বহু পদের যন্ত্রপাতি রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঠুকঠাক-খুটখাট শব্দও সয়ে নিচ্ছে সে। তবে যথেষ্টই বিলাশবহুল এগুলি। এধরনের জাহাজগুলিকে ‘এক্সপ্লোরার ইয়ট’ বলা হচ্ছে। তবে যেসব জাহাজে এতসব যন্ত্রপাতি রাখা হচ্ছে না, তাদেরও কিন্তু ইচ্ছের কমতি নেই। তারাও যন্ত্রপাতি চাইছেন তাদের প্রবৃত্তিকে খুশি করতে; তবে খুটখাট শব্দও চাইছেন না। মার্কেটাররাও কম যায় না। তারা এধরনের ক্রেতাদের খুশি করতে আরেক ধরনের জাহাজ তৈরি করার চিন্তা করলো; এর নাম দেয়া হলো ‘ইয়ট সাপোর্ট ভেসেল’। এর কাজ হলো মূল ইয়ট (মাদার ইয়ট)-এর সাথে সাথে যাওয়া এবং যন্ত্রপাতি বহণ, দরকারে অতিরিক্তি ক্রু বা অতিথিদের নেয়া, অফিস স্টাফদের নেয়া, যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ করা, জ্বালানি, অন্যান্য সাপ্লাই ও স্পেয়ার পার্টস বহণ করা, মূল ইয়টের দরকারের জিনিসগুলি বহণ করা, এবং আরও অনান্য লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট দেয়া। তবে এধরনের জাহাজের সবচাইতে বড় কাজ হলো মূল ইয়টের নিরাপত্তা দেয়া।

ডাচ শিপবিল্ডার ডামেনের তৈরি করা ইয়ট সাপোর্ট ভেসেল 'গেম চেঞ্জার'। ৬৯ মিটার লম্বা এই জাহাজের এর হেলিডেকের নিচে রয়েছে হ্যাঙ্গার। আর এর ডেকের উপরে রয়েছে কয়েক ধরনের স্পীডবোট এবং একটা সাবমেরিন। জাহাজের পিছন দিকে রয়েছে ডাইভিং সাপোর্ট রুম, যার সাথে ১২ জন স্কুবা ডাইভারের সরঞ্জামাদি রয়েছে; সাথে রয়েছে ডিকম্প্রেশন চেম্বার। এধরনের জাহাজগুলি কিছু মানুষের হাতে প্রাইভেট নৌবাহিনী দিয়ে দিচ্ছে। 


লাক্সারি ইয়টের নিরাপত্তা

যারা এসব ইয়টের মার্কেটিং করছে, তাদের চিন্তার মাঝে এই নিরাপত্তা ব্যাপারটাই গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। এতো বিত্তশালী এই ব্যাক্তির বিত্তের সাথে সাথে নিজের নিরাপত্তার শঙ্কাও বেড়েছে। তাই বিরাট একটা বিশালবহুল ইয়টকে সমুদ্রে নিয়ে গেলে সেই জাহাজের নিরাপত্তার কথা তাকে আলাদাভাবে চিন্তা করতে হচ্ছে। বিশেষতঃ সমুদ্রে জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হলে তিনি কি করবেন? নিরাপত্তাও এখন কেনাবেচার বিষয়। বিশ্বের বহু প্রান্তে অবসরপ্রাপ্ত সেনারা এখন ভাড়াটে সেনা হিসেবে খাটছেন। এরা এই ‘ইয়ট সাপোর্ট ভেসেল’এ স্থান নিচ্ছেন মূল লাক্সারি ইয়ট বা মাদার ইয়টের নিরাপত্তা দিতে। তারা স্পীডবোট, হেলিকপ্টার, সাবমেরিন, ল্যান্ডিং ক্রাফট, হোভারক্রাফট, ফ্লাইং বোট, ইত্যাদি চালাচ্ছেন এবং সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। জাহাজগুলির ক্রু-ই শুধু নয়, জাহাজের ডিজাইন এবং কন্সট্রাকশনও মিলিটারি গ্রেডের। এসব জাহাজে কি কি দেয়া হচ্ছে, তার একটা ফিরিস্তি দিলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

- কিছু জাহাজে শুধু হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং প্যাডই নয়; হেলিকপ্টার রাখার জন্যে হ্যাঙ্গারও দেয়া হচ্ছে। সেখানে হেলিকপ্টার মেইনটেন্যান্স-এর সুবিধাও থাকছে। আগুস্টা এডব্লিউ-১০৯ বা ইউরোকপ্টার ইসি-১৩৫ হেলিকপ্টার এসব জাহাজে দেখা যাচ্ছে নিয়মিত। বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা বাহিনীও এধরনের হেলিকপ্টার ব্যবহার করে থাকে।

- ছোটবড় বিভিন্ন প্রকারের ৪-৫টা স্পীডবোট এসব জাহাজে থাকছেই। স্পীডবোটগুলির মাঝে মিলিটারি গ্রেডের ইন্টারসেপ্টর বোটও থাকছে, যা কিনা স্পেশাল ফোর্সের সেনারা ব্যবহার করে।

- সাবমেরিন থাকছে অনেক ক্ষেত্রেই। কখনো কখনো মনুষ্যবিহীন সাবমেরিনও থাকছে, যা কিনা অতি-গভীর সমুদ্র থেকে ভিডিও পাঠাতে পারে।

- স্কুভা ডাইভার অপারেশনের জন্যে সকল ব্যবস্থা দেয়া হচ্ছে। ডজনখানেক স্কুবা অপারেট করতে পারার মতো যন্ত্রপাতি দিচ্ছে কেউ কেউ। ডিকম্প্রেশন চেম্বারও দেয়া হচ্ছে ডাইভারদের জন্যে। স্কুবা ডাইভারদের অভিজ্ঞতা শেয়ারের জন্যে বড়সড় রুম দেয়া হচ্ছে ডিজিটাল ডিসপ্লে-সহ, যাতে পানির নিচে ধারণ করা ভিডিও শেয়ার করতে পারে সবাই।

- কিছু ক্ষেত্রে ছোট ফ্লাইং বোট রাখা হচ্ছে এই ইয়ট সাপোর্ট ভেসেলে। এর ডানাগুলি গুটিয়ে ডেকের উপরে স্বল্প জায়গায় রেখে দেয়া যায়।

- গাড়ি বা মোটরসাইকেল রাখা হচ্ছে কিছু জাহাজে। দরকার বিশেষে ল্যান্ডিং ক্রাফট বা হোভারক্রাফটের মাধ্যমে এই যানবাহন উপকূলে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। ক্রাফটগুলি বেশিরভাগ সময়েই জাহাজের ডেকের উপরে বহণ করা হচ্ছে।

- স্পীডবোট, সাবমেরিন, ল্যান্ডিং ক্রাফট, হোভারক্রাফট, ফ্লাইং বোট, ইত্যাদি ডেকের উপর থেকে পানিতে নামাবার জন্যে শক্তিশালী ক্রেন রাখা হচ্ছে ডেকে।

- কিছু জাহাজের পিছন দিকে ডক থাকছে, যেখানে পাম্পের মাধ্যমে পানি পাম্প করে ডুকিয়ে দেয়া যায় আবার বেরও করে দেয়া যায়। বোটগুলি পানিতে নামাতে হলে বা পানি থেকে তোলার দরকার হলে পাম্প করে পানি ঢোকানো হয়। তবে এধরনের ডক থাকে মূলতঃ বড় এক্সপ্লোরার ইয়টগুলিতে।

- জাহাজের ডিজাইন মিলিটারি গ্রেডের। এগুলির গতি ঘন্টায় ২০ নটিক্যাল মাইল থেকে ২৮ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত থাকছে। সবধরনের আবহাওয়ায় এগুলি চলমান রাখা সম্ভব হচ্ছে।

- জাহাজগুলির ইলেকট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি একেবারেই অত্যাধুনিক এবং মিলিটারি গ্রেডের। জাহাজগুলির ব্রিজ যেকোন মিলিটারি জাহাজের ব্রিজের মতোই মনে হবে।

- ৪ হাজার থেকে ৯ হাজার নটিক্যাল মাইল এসব জাহাজের পাল্লা, যা কিনা একে লম্বা সময় সমুদ্রে থাকার পথ খুলে দিয়েছে।

হল্যান্ডের শিপবিল্ডিং কোম্পানি ডামেন সাম্প্রতিককালে মিলিটারি জাহাজ তৈরি করে বেশ নাম করেছে। তাদের কয়েকটা ডিজাইন বহু দেশের কাছে বিক্রি হয়েছে। তাদের প্যাট্রোল বোটগুলি বিভিন্ন কোম্পানির কাছেও বিক্রি হয়েছে, যারা সামুদ্রিক বিভিন্ন স্ট্রাকচারের নিরাপত্তা দিতে সেগুলিকে ব্যবহার করে। সেসব জাহাজের ডিজাইন পরিবর্তন করেই ইয়ট সাপোর্ট ভেসেলের ডিজাইন করা হয়েছে। অর্থাৎ মিলিটারি জাহাজকেই তারা ‘সুগার-কোট’ করে বিক্রি করছে। ডজনখানেক ইয়ট সাপোর্ট ভেসেল ইতোমধ্যেই বিক্রি করেছে ডামেন। অন্যরাও বানাচ্ছে। জাহাজগুলিতে কোন সমস্যা ছাড়াই একটা শক্তিশালী স্পেশাল ফোর্স ইউনিট বহণ করা সম্ভব; তাদের হেলিকপ্টার, স্পীডবোট, ডাইভিং গিয়ার, ইত্যাদিও সাথে রাখা যাবে। খুব বেশি একটা মডিফিকেশন ছাড়াই এতে বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র বহণ করা সম্ভব। ড্রোনও অপারেট করা সম্ভব; যার জন্যে যথেষ্ট স্থান এসব জাহাজের বেশ কয়েকটাতেই রয়েছে।

সুপার ইয়ট 'গোল্ডেন শ্যাডো'। এর পেছনে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটা স্পীডবোট এবং একটা সী-প্লেন। পরিবর্তিত বিশ্বের পরিবর্তিত নিয়মে ইয়ট-মালিকদের হাতে থাকা সম্পদ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার হবার মতো। তাই পুঁজিবাদের এই ক্ষয়িষ্ণু সময়ে পরিবর্তনের হাইওয়েতে এদের রাজনৈতিক সচেতনতা হয়ে দাঁড়াবে বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।


পরিবর্তিত বিশ্বে ইয়টের মালিকদের স্থান 

ধনকুবের ব্যক্তিরা তাদের প্রবৃত্তিকে খুশি করতে গিয়ে যুদ্ধাস্ত্র নির্মাতাদের জন্যে নতুন বাজারের সৃষ্টি করেছে। নিজের একটা প্রাইভেট আর্মি, প্রাইভেট নেভি এবং প্রাইভেট এয়ার ফোর্স তারা চাইতেই পারে। তবে দরকারবিশেষে তাদের এই মিলিটারি প্ল্যাটফর্মগুলি কোথায় কি করবে, সেটাই হবে মূল পরীক্ষা। মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তরের উপদেষ্টা পরিষদ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল-এর এক প্রতিবেদনে (Global Trends 2025: A Transformed World) ২০২৫ সালের মাঝে কি কি দেখা যেতে পারে, তার একটা ভবিষ্যদ্বানী করার চেষ্টা করা হয়েছে –

“A global multipolar system is emerging with the rise of China, India, and others.

The relative power of nonstate actors— businesses, tribes, religious organizations, and even criminal networks—also will increase. ... By 2025 a single “international community” composed of nation-states will no longer exist. Power will be more dispersed with the newer players bringing new rules of the game while risks will increase that the traditional Western alliances will weaken…. The United States will remain the single most powerful country but will be less dominant…. Shrinking economic and military capabilities may force the US into a difficult set of tradeoffs between domestic versus foreign policy priorities.”



মার্কিন চিন্তাবিদেরা যে ব্যাপারটাকে তুলে ধরেছে তা হলো, বিশ্বের একচ্ছত্র ক্ষমতা সুপারপাওয়ার আমেরিকার হাত থেকে ছুটে গিয়ে অনেকের মাঝে ভাগ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য শক্তিরও আবির্ভাব হতে পারে। বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থার হাতে প্রচুর সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে যাওয়ায় এরা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এসব ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে অর্থ ছাড়াও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ পুঞ্জীভূত হবে। নিজেদের প্রাইভেট বাহিনী এবং এদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্র এসকল সম্পদের মাঝে থাকবে। নিজেদের প্রবৃত্তিকে খুশি করতে গিয়ে এরা বৈশ্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হতে পারে। পরিবর্তিত বিশ্বের পরিবর্তিত নিয়মে এদের হাতে থাকা সম্পদ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার হবার মতো। তাই পুঁজিবাদের এই ক্ষয়িষ্ণু সময়ে পরিবর্তনের হাইওয়েতে এদের রাজনৈতিক সচেতনতা হয়ে দাঁড়াবে বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।