Wednesday 24 March 2021

পশ্চিমা দুনিয়ায় নারীর অধিকার আদৌ প্রতিষ্ঠিত হবে কি?

২৫শে মার্চ ২০২১
অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে নারীবাদী সংস্থাগুলির প্লাকার্ড। দেশের সর্বোচ্চ অফিসে কাজ করাও যে নারী নির্যাতন বন্ধের জন্যে যথেষ্ট নয়, তা অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের ঘটনাই বলছে। আর ব্রাজিলের ঘটনা দেখিয়ে দেয় নারীকে ‘পণ্য সমতুল্য’ করার সংস্কৃতিকে। পশ্চিমা চিন্তায় নারীর অধিকার কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকেই মূল্যায়িত হয়েছে। নারীর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাই হয়েছে সকল কিছুর মাপকাঠি। আইন তৈরির সংস্থা থেকে শুরু করে ফুটবল ক্লাব পর্যন্ত কেউই নারীর সন্মান এবং নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়নি। একুশ শতকেও তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, পশ্চিমা দুনিয়ায় নারীর প্রকৃত সন্মান আদৌ কোনকালে প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা।


গত ২০শে মার্চ তুরস্ক নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গঠিত ‘কাউন্সিল অব ইউরোপ কনভেনশন’ থেকে বের হয়ে যাবার ঘোষণা দেয়। ‘ইস্তাম্বুল কনভেনশন’ নামে পরিচিত এই চুক্তিতে ২০১১ সালে ৪৫টা দেশ স্বাক্ষর করলেও এখন পর্যন্ত ৩৪টা দেশের পার্লামেন্টে এই চুক্তি আইন হিসেবে পাস হয়েছে; বাকিগুলি আইন পাস করেনি। এসব দেশের মাঝে ব্রিটেন, ইউক্রেন, চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি রয়েছে। ২০১১ সালে তুর্কি পার্লামেন্টে আইন হিসেবে চুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ ২০১২ সালের জুনে স্বাক্ষর করলেও ব্রিটেন এখনও তা করেনি। তুর্কি সরকার বলছে যে, এই আইন পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করাকে উৎসাহিত করা ছাড়াও পারিবারিক সহিংসতা এবং বিবাহবিচ্ছেদ বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও তুরস্কের সমকামি গোষ্ঠিগুলি এই আইনকে ব্যবহার করে সমাজে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করছে বলে তারা অভিযোগ করছেন। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, তুরস্কের পারিবারিক বন্ধনের পুরোনো ঐতিহ্যের মাধ্যমেই নারীর সন্মান নিশ্চিত করা সম্ভব; এর জন্যে বাইরের কাউকে নকল করার দরকার নেই। ‘কাউন্সিল অব ইউরোপ’এর হিউম্যান রাইটস কমিশনার দুনিয়া মিয়াতোভিচ এর প্রত্যুত্তরে বলেন যে, এতে নারীঅধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তুরস্কে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ার এমন এক সময়ে তাদের উচিৎ হবে না কনভেনশন থেকে নাম প্রত্যাহার করা। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে নারীর অধিকার আজকে কতটুকু?

ওশেনিয়া অঞ্চলের উন্নত দেশ অস্ট্রেলয়া থেকে নারী নির্যাতনের খবর আসছে। ২২শে মার্চ অস্ট্রেলিয়ার ‘টেন নেটওয়ার্ক’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা গত দুই বছর ধরে দেশটার পার্লামেন্ট অফিসের ভিতর বিভিন্ন যৌন আচরণ করে সেগুলির ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ করে আসছিলো। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার অংশ হিসেবে পরদিন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ঘোষণা দেন যে, সেই ব্যক্তিদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা ‘ব্লুমবার্গ’মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এই ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগেই পুরো অস্ট্রেলিয়া জুড়ে হাজারো নারী যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। এছাড়াও মরিসন সরকারের এটর্নি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান পোর্টারের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকার এই অভিযোগের তদন্ত করতে অস্বীকৃত জানানোতে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এর উপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের একজন উচ্চপদস্থ উপদেষ্টা ২০১৯ সালে পার্লামেন্ট ভবনের ভিতর ব্রিটানি হিগিন্স নামের একজন জুনিয়র মহিলা উপদেষ্টাকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেসময় পার্লামেন্টে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিন্ডা রেইনল্ডসের অফিসে কাজ করা ব্রিটানি হিগিন্সকে বলা হয় তিনি যেন পুলিশের কাছে অভিযোগ না করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিন্ডা রেইনল্ডস তার অধীনস্ত সেই মহিলা কর্মকর্তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়ে আইনী সমস্যা পড়েন। পরবর্তীতে তিনি অবশ্য হিগিন্সের কাছে ক্ষমা চান এবং তার বিরুদ্ধে আইনী অভিযোগের ব্যাপারটা গোপনে অর্থিকভাবে দফারফা করেন। শুধু তাই নয়, হিগিন্সকে ধর্ষণের পরের বছর সেই একই ব্যক্তি বেসরকারি সেক্টরে কাজ করার সময় আরেকজন মহিলাকে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই মহিলা নিপীড়নকারীর সাথে রাতে ডিনার করে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান; যেখানে সেই ঘটনা ঘটে বলে জানান সেই মহিলা। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলছেন যে, অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের সংস্কৃতিতেই ব্যাপক সমস্যা রয়েছে।

আটলান্টিকের ওপাড়ে ব্রাজিলের দ্বিতীয় ডিভিশনের ফুটবল ক্লাব ‘সামপাইও করেয়া’র একটা বিজ্ঞাপনকে সরিয়ে নেবার নির্দেশ দিয়েছে দেশটার মারানিয়াও প্রদেশের ভোক্তা অধিকার সংস্থা। ২৪শে মার্চের ‘রয়টার্স’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বিজ্ঞাপনটাতে একজন সংক্ষিপ্ত বসনা নারীর ছবির সাথে ‘ওয়েসিস মোটেল’এর একটা অফারের কথা বলা হয়। এতে বলা হয় যে, ফুটবল ক্লাবের সমর্থকেরা মোটেলে ১২ শতাংশ ডিসকাউন্টে ‘গোল করতে পারেন’ বা নারীসঙ্গ পেতে পারেন। বিজ্ঞাপনটা প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মাঝেই ভোক্তা অধিকার সংস্থা এটাকে সরিয়ে বিকল্প বিজ্ঞাপন প্রকাশের নির্দেশ দেয়। একইসাথে তারা বলে যে, নারীদেরকে ‘পণ্য সমতুল্য’ করার জন্যে তাদেরকে আদালতের সামনে হাজির করে ব্যাখ্যা দিতে বলা হবে। তবে ক্লাবটা ১১ ঘন্টার মাঝে বিজ্ঞাপনটা না সরিয়ে বরং আরেকটা ছবি পোস্ট করে, যেখানে লেখা ছিল যে, ‘একজন মহিলা সেখানেই থাকতে পারেন, যেখানে তিনি থাকতে চান’। প্রকৃতপক্ষে এই দ্বন্দ্ব বিজ্ঞাপনের ভাষা নিয়ে। কারণ একদিকে ‘ওয়েসিস মোটেল’এ নারীসঙ্গ বেচাবিক্রি ব্রাজিলে যেমন অবৈধ নয়, তেমনি স্বল্পবসনা নারীদের ছবি বিজ্ঞাপনে ব্যবহারও নিষেধ নয়। ব্রাজিলে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত কার্নিভাল অনুষ্ঠানে এর চাইতে আরও কম কাপড়ে প্রায় নগ্ন অবস্থায় নারীদের ‘সাম্বা’ নৃত্য করতে দেখা যায় রাজধানী শহরের রাস্তায়; যা উপভোগ করে ছেলে বুড়ো শিশু সকলে; এবং মূলতঃ পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আসা বহু পর্যটক। এই অনুষ্ঠান ব্রাজিলের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব রাখে। ‘সামপাইও করেয়া’র বিজ্ঞাপনে যে নারীর ছবি ব্যবহার করা হয়, তিনি মূলতঃ ২০১৫ সালে ক্লাবের সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। প্রতিযোগিতার নিয়ম হিসেবেই সেই নারীকে স্বল্পবসনা হয়ে ছবি তুলতে হয়েছিল। ক্লাব সেই ছবিকে পুঁজি করেই ব্যবসা চালাচ্ছে। ব্রাজিলে ফুটবল ক্লাব ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার এহেন সুন্দরী প্রতিযোগিতা চলে সারা বছর জুড়ে; যেখানে নারীদেরকে অতিরিক্ত স্বল্পবসনা হয়ে সকলের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়। এর মাধ্যমে নারীরা অর্থ উপার্জন করে এবং সোশাল মিডিয়াতে বহু অনুসারী পায়। অনেক প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা পুরুষদের ম্যাগাজিনে নগ্ন হয়ে মডেলিং করার ‘সুযোগ’ পায়। নারীদের সৌন্দর্যবর্ধনকে কেন্দ্র করে ব্রাজিলে বিশাল অর্থনৈতিক কার্মকান্ডও চলে। এতকিছুর পরেও সেদেশের বিজ্ঞাপনে নারীদেরকে ‘পণ্য সমতুল্য’ করার জন্যে যে ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করার হয়েছে, তা অন্তসারশূণ্যই বটে।

দেশের সর্বোচ্চ অফিসে কাজ করাও যে নারী নির্যাতন বন্ধের জন্যে যথেষ্ট নয়, তা অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের ঘটনাই বলছে। আর ব্রাজিলের ঘটনা দেখিয়ে দেয় নারীকে ‘পণ্য সমতুল্য’ করার সংস্কৃতিকে। পশ্চিমা চিন্তায় নারীর অধিকার কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকেই মূল্যায়িত হয়েছে। নারীর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাই হয়েছে সকল কিছুর মাপকাঠি। আইন তৈরির সংস্থা থেকে শুরু করে ফুটবল ক্লাব পর্যন্ত কেউই নারীর সন্মান এবং নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়নি। একুশ শতকেও তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, পশ্চিমা দুনিয়ায় নারীর প্রকৃত সন্মান আদৌ কোনকালে প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা।

Tuesday 16 March 2021

মধ্য এশিয়াতে কি চাইছে তুরস্ক?

১৬ই মার্চ ২০২১
মধ্য এশিয়ার ‘লাপিস লাজুলি’ করিডোর। উসমানি খিলাফতের সময়ের ইতিহাসের উপর ভর করে গড়ে ওঠা ভূরাজনৈতিক আকাংক্ষা থেকে তুর্কি জনগণকে যখন আলাদা করা কঠিন, তখন মধ্য এশিয়াতে রাশিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রভাব বিস্তার করা হবে আরও বেশি কঠিন। কারণ মধ্য এশিয়ায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তার মানেই রাশিয়া এবং চীনের দুশ্চিন্তা। আর একইসাথে তা যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়া এবং চীনকে নিয়ন্ত্রণের কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কাজেই মধ্য এশিয়ায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবেই লাভবান হবে। 


তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু গত ৬ই মার্চ থেকে ৯ই মার্চ মধ্য এশিয়ার তিনটা দেশ তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং কিরগিজস্তান ঘুরে এসেছেন। তিনি মধ্য এশিয়ার সবচাইতে জনবহুল দেশ উজবেকিস্তানের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেবার আশা করেন। মধ্য এশিয়া সফরের ব্যাপারে তুর্কি মিডিয়ার সাথে কথা বলতে গিয়ে কাভুসোগলু বলেন যে, তার সফর শুধু ব্যাপক সফলই ছিল না, তা ছিল আন্তরিক ও ফলপ্রসু। তিনি বলেন যে, উজবেকিস্তানের সাথে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি করার কথাবার্তা চলছে। এটা সফল হবার সাথে সাথেই তারা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে কথা শুরু করতে চান। দুই দেশের বাণিজ্য বর্তমানের ২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চান তারা। এছাড়াও গত বছরের অক্টোবরে তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকারের উজবেকিস্তান সফরের সময় দুই দেশের মাঝে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারে একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তুর্কমেনিস্তান তুরস্ককে রাজধানী তুর্কমেনাবাদ থেকে টারকিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেট করতে দিচ্ছে, যদিও সেখান থেকে অন্য দেশের ফ্লাইট অপারেট করে না। এছাড়াও কাস্পিয়ান সাগরে আজেরবাইজান এবং তুর্কমেনিস্তানের সাথে তুরস্ক যৌথভাবে ‘দোস্তলুগ’ তেলখনি নিয়ে কাজ করছে।

সফরকালে কিরগিজস্তানের তুর্কি কিরগিজ মানাস ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত ‘আনতালিয়া ডিপ্লোম্যাসি ফোরাম’এ কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন যে, ২১ শতক হবে এশিয়ার শতক। সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অর্ধেক এখন এশিয়ার। একারণেই তুরস্ক চাইছে এশিয়ার সাথে যুক্ত হতে। তিনি বলেন যে, বহু বছর ধরে ‘তুর্কি দুনিয়া’ আলাদা হয়ে ছিল ‘কৃত্রিম দেয়াল’এর কারণে। এই দেয়াল ভেঙ্গে যাবার পর তুরস্ক এবং ‘তুর্কি দুনিয়া’ একে অপরকে আলিঙ্গন করেছে। তিনি এপ্রসঙ্গে ২০০৯ সালে গঠিত ‘তুরকিক কাউন্সিল’এর সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন। একইসাথে তিনি নাগোর্নো কারাবাখে আজেরবাইজানের যুদ্ধজয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘জেমসটাউন ফাউন্ডেশন’এর এক লেখায় সাবেক মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তা পল গোবল বলেন যে, আজেরবাইজানের যুদ্ধজয়ের পর বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনায় থাকা ‘লাপিস লাজুলি’ করিডোর নতুন জীবন পেয়েছে। এই করিডোর আজেরবাইজান এবং তুর্কমেনিস্তান হয়ে আফগানিস্তানকে তুরস্কের সাথে যুক্ত করবে। একই সূত্রে বাঁধা আফগানিস্তান। ১২ই মার্চ কাভুসোগলু নিশ্চিত করেন যে, এপ্রিল মাসে ইস্তাম্বুলে আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনা হতে চলেছে। এর আগে ৭ই মার্চ আফগানিস্তানের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ‘টিওএলও নিউজ’ বলে যে, মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব এন্থনি ব্লিংকেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির কাছে এক চিঠি দিয়ে জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে আফগান শান্তি আলোচনার ভেন্যু হতে অনুরোধ করেছে। ব্লিংকেনের এই চিঠিই বলে দিচ্ছে যে, আফগানিস্তানে তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের সমন্বয় রয়েছে।

গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে তুরস্কের ‘সেন্টার ফর ডিপ্লোম্যাটিক এফেয়ার্স এন্ড পলিটিক্যাল স্টাডিজ’এর উপদেষ্টা মেসুত হাক্কি কাসিন বলেন যে, তুরস্ক, পাকিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলি অর্থনীতির ভিন্ন ভিন্ন স্তরে রয়েছে। এদের মাঝে কৌশলের সমন্বয় জরুরি। তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন যে, তুরস্কের চিন্তার কেন্দ্র এখনও ইইউ। এক্ষেত্রে পাকিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলি তুরস্কের মাধ্যমে ইইউ পৌঁছাতে পারে। অপরদিকে পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ এবং প্রাক্তন তত্বাবধায়ক অর্থমন্ত্রী সালমান শাহ বলেন যে, তুরস্ক যেমনি ইউরোপে ঢোকার পথ, পাকিস্তানও তেমনি চীন এবং মধ্য এশিয়াতে ঢোকার পথ। তিন আরও বলেন যে, এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র, যখন ‘চায়না পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর’ বা ‘সিপেক’ আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়া হয়ে তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশের সাথে যুক্ত হবে। একইসাথে পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বও আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলির হাতেই থাকা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। এপ্রসঙ্গে তিনি তুরস্ক ও পাকিস্তানের মাঝে অনুষ্ঠিত ‘আতাতুর্ক ২০২১’ যৌথ সামরিক মহড়ার কথা মনে করিয়ে দেন।

তুর্কি পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষক ইউসুফ এরিম মধ্য এশিয়াতে তুরস্কের প্রভাব বিস্তারকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে একটা সুযোগ হিসেবে দেখছেন। ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় তিনি বলছেন যে, তুরস্ককে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হওয়া মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে বেশ হিসেব করেই রুশ প্রভাবকে ব্যালান্স করতে হচ্ছে। রাশিয়া এবং চীনের সাথে বেশ কিছু বিষয়ে তুরস্কের সহযোগিতা থাকার কারণেই মধ্য এশিয়ায় তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে সুযোগ। তিনি মনে করছেন যে, দুই দেশের উচিৎ ‘এস ৪০০’ ক্ষেপণাস্ত্র এবং সিরিয়ার কুর্দি ‘ওয়াইপিজি’ মিলিশিয়ার ইস্যুকে প্রাধান্য না দিয়ে মধ্য এশিয়া বিষয়ে একটা সমন্বিত কৌশলের ব্যাপারে একমত হওয়া। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘দ্যা হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’এর ডিরেক্টর লিউক কোফি তুর্কি মিডিয়া ‘টিআরটি ওয়ার্ল্ড’এর লেখায় ন্যাটো, মধ্য এশিয়া এবং ইউক্রেনে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার রাস্তা খোলা রয়েছে বলে বলেন। ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তারাস কুজিও তুরস্কের সরকারি মিডিয়া ‘আনাদোলু এজেন্সি’র এক লেখায় তুরস্কের সাথে আজেরবাইজানের কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকা উচিৎ বলে মত দেন।

মধ্য এশিয়াতে তুরস্কের জন্যে সবচাইতে বড় সুযোগ তৈরি হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে; যখন ২৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পর উজবেকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইসলাম কারিমভের মৃত্যু হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিইয়োয়েভ ২০১৭ সালের অক্টোবরে তুরস্ক সফরে যান। সাথেসাথে মধ্য এশিয়ায় তুরস্কের দুয়ার খুলে যায়। তবে আদর্শিক দিকনির্দেশনা না থাকার কারণে তুরস্ক, পাকিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলি কৌশলগত দিক থেকে এখনও জাতীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে পারছে না। একারণেই দেশগুলি একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রকে সাথে চাইছে, অন্যদিকে উইঘুর ইস্যুতে কথা বলে চীনের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চাইছে না। উসমানি খিলাফতের সময়ের ইতিহাসের উপর ভর করে গড়ে ওঠা ভূরাজনৈতিক আকাংক্ষা থেকে তুর্কি জনগণকে যখন আলাদা করা কঠিন, তখন মধ্য এশিয়াতে রাশিয়া, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রভাব বিস্তার করা হবে আরও বেশি কঠিন। কারণ মধ্য এশিয়ায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তার মানেই রাশিয়া এবং চীনের দুশ্চিন্তা। আর একইসাথে তা যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়া এবং চীনকে নিয়ন্ত্রণের কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কাজেই মধ্য এশিয়ায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবেই লাভবান হবে।

Friday 12 March 2021

ভারতকে আবারও নিজ ছায়াতলে আনতে চাইছে ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’

১২ই মার্চ ২০২১
চীন এবং রাশিয়ার ভ্যাকসিনের ‘ভীতি’কে ব্যবহার করেই ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাইছে। ঔপনিবেশিক সময় থেকেই ভারত এবং চীনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্রিটেনের কাছে কখনোই কমেনি। একারণেই ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চীন এবং ভারত উভয়কেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। ইইউ থেকে বের হয়ে যাবার সাথেসাথেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ব্রিটেনের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হলেও ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তার বাস্তবায়ন অন্বেষণ করা থেকে তারা যে এক চুলও নড়েনি, তা পরিষ্কার। 


সারা বিশ্বে যখন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও প্রাপ্যতা নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন শক্তিশালী দেশগুলি ভ্যাকসিনকে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির হাতিহার হিসেবে দেখছে। পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকাতে যখন পশ্চিমা দেশগুলি ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে হিমসিম খাচ্ছে, তখন চীন এবং রাশিয়া এই সুযোগে প্রভাব বাড়িয়ে নিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক পশ্চিমা চিন্তাবিদেরা। তবে ব্রিটেনের ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ঠান্ডা যুদ্ধের মতোই রাশিয়া এবং চীনের ভীতিকে জিইয়ে রেখে পশ্চিমারা শক্তিশালী একটা প্রত্যুত্তর দিতে চাইছে। নিজেদের মেডিক্যাল গর্বকে ধরে রাখতে পশ্চিমা দেশগুলিকে দ্রুত কাজ করতে হবে। তবে একইসাথে বলা হচ্ছে যে, ব্রিটেনের উচিৎ তাদের ভ্যাকসিনের সফলতাকে ভূরাজনৈতিক সফলতাতে রূপান্তরিত করা। উদাহরণস্বরূপ বলা হচ্ছে যে, ভারতের সাথে ব্রিটেনের একটা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দুই দেশের বাণিজ্যকে ১’শ ৪০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে পারে, যা বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলারের মতো।

ব্রিটেনের প্রভাবশালী ‘স্পেকট্যাটর’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ঠান্ডা যুদ্ধ যখন তুঙ্গে ছিল, তখন বিশ্বের প্রায় শ’খানেক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে নাম লেখায়; যারা যুক্তরাষ্ট্র বা সোভিয়েত ইউনিয়ন, কারুর পক্ষেই যাবার পক্ষপাতি ছিল না। তখন উভয় সুপারপাওয়ারই চেষ্টা করেছে এই দেশগুলিকে নিজেদের বলয়ে নিয়ে আসতে; বর্তমানেও সেটাই হচ্ছে। ঠান্ডা যুদ্ধের পর ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতায় চীন এবং রাশিয়াও চাইছে মাঝামাঝি থাকা এই দেশগুলিকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে আসে। চীন এবং রাশিয়ার ভ্যাকসিন কূটনীতি এরই অংশ। অপরদিকে ব্রিটেন আন্তর্জাতিকভাবে ভ্যাকসিনের প্রসার ঘটাতে ভারতকে ব্যবহার করছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ভারতের ‘সেরাম ইন্সটিটিউট’ প্রকৃতপক্ষে ব্রিটেনের অক্সফোর্ডের ডেভেলপ করা ভ্যাকসিনই তৈরি করছে। ব্রিটেন যখন নিজের তৈরি ভ্যাকসিন দিয়ে নিজস্ব জনগণকে রক্ষা করছে, তখন ব্রিটিশ ‘আশীর্বাদে’ ভারত দুনিয়াব্যাপী ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে লেখায় আরও বলা হচ্ছে যে, আসন্ন ‘ডি১০’ শীর্ষ বৈঠকে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে হবে যে, পশ্চিমাদের বন্ধুত্ব চীনের বন্ধুত্বের চাইতেও বেশি দামি।

‘ডি১০’ হলো অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সাতটা দেশ ‘জি৭’এর একটা সম্প্রসারণ। ‘জি৭’এর দেশগুলি হলো যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, কানাডা ও জাপান। এর সাথে ‘ডি১০’এর অধীনে যুক্ত করা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতকে। ব্রিটেন চাইছে ২০২১ সালে ‘জি৭’ শীর্ষ বৈঠককে ‘ডি১০’ বৈঠকে রূপান্তরিত করতে। অনেকেই বলা শুরু করেছেন যে, ‘জি৭’ একটা পুরোনো চিন্তা; তাই এটাকে ‘ডি১০’এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত করা উচিৎ। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ‘ডি১০’এর চিন্তাটা নতুন নয়। ২০০৮ সালে মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’এর এশ জৈন এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন পলিসি প্ল্যানিং ডিরেক্টর ডেভিড গর্ডন ‘ডি১০’এর ব্যাপারে কথা বলা শুরু করেন। তারা বলছিলেন যে, এখন এমন একটা সময়ে এসেছে, যখন পশ্চিমা লিবারাল আদর্শের দেশগুলি নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারছে না। এমতাবস্থায় এই দেশগুলির উচিৎ একত্রে বসে কৌশল নির্ধারণ করা। এশ জৈন বর্তমানে ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’এ ‘ডি১০ স্ট্র্যাটেজি ফোরাম’ দেখাশুনা করছেন; যার উদ্দেশ্য হলো এই দেশগুলির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের একত্রে নিয়ে এসে নীতি বিষয়ক কথাবার্তা চালিয়ে নেয়া।

‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’এর ফেলো এরিক ব্র্যাটেনবার্গ এবং ব্রিটিশ সাংবাদিক বেন জুডাহ বলছেন যে, এখন সময় এসেছে ‘জি৭’কে পিছনে ফেলে ‘ডি১০’কে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তারা বলছেন যে, ‘ডি১০’ কোন চীন বিরোধী সংস্থা নয়। বরং এটা হলো পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি হুমকিস্বরূপ দু’টা বিশেষ সমস্যাকে সমাধানের একটা উপায়। এর মাঝে একটা হলো ‘ফাইভ জি’ বা পঞ্চম জেনারেশনের প্রযুক্তি; আরেকটা হলো অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সাপ্লাই চেইন। এই উভয় সমস্যাই পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলির কেউ একা সমাধান করতে পারবে না। অপরপক্ষে ‘ডি১০’এর মাধ্যমে এই সমস্যাগুলিকে সমাধানে বেশ দ্রুত কাজ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে ট্রান্স আটলান্টিক এবং ট্রান্স প্যাসিফিকের গণতান্ত্রিক দেশগুলিকে একটা কাঠামোর মাঝে এনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলিকে কেন্দ্র করে দ্রুত কর্মমুখী একটা সমাধানে দিকে এগুনোর মাধ্যমে একাধারে যেমন সংস্থাটাকে একটা আলোচনা সভা বানিয়ে ফেলা থেকে বাঁচা যাবে, তেমনি চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র ব্যবস্থা নেয়াকেও কঠিন করে ফেলা যাবে। তারা বলছেন যে, গণতান্ত্রিক দেশগুলির মাঝে সেতু তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের গুরুত্ব যথেষ্ট। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, ১৯৪৯ সালে ন্যাটো তৈরির সময় ব্রিটিশ সামরিক অফিসার হেস্টিংস ইসমে বলেছিলেন যে, ন্যাটোর দরকার রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বাইরে রাখতে, যুক্তরাষ্ট্রকে ভিতরে রাখতে, এবং জার্মানিকে দমিয়ে রাখতে। তেমনি ব্র্যাটেনবার্গ এবং জুডাহ বলছেন যে, ‘ডি১০’এর দরকার রয়েছে চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ভারতে কাছে রাখতে, এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দৃঢ় রাখতে। তাদের কথায়, ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তাটা এখনও একটা কঙ্কাল; লন্ডনের জন্যে ‘ডি১০’ হলো এই কংকালের উপর পেশী যুক্ত করার একটা সোনালী সুযোগ।

চীন এবং রাশিয়ার ভ্যাকসিনের ‘ভীতি’কে ব্যবহার করেই ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাইছে। ঔপনিবেশিক সময় থেকেই ভারত এবং চীনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্রিটেনের কাছে কখনোই কমেনি। একারণেই ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চীন এবং ভারত উভয়কেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। বিশেষ করে ব্রেক্সিটের পর ভারত এবং চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে ব্রিটেন। ‘ফাইভ জি’ প্রযুক্তি এবং সাপ্লাই চেইনকে আলোচনায় এনে ব্রিটেন চীনের বিকল্প তৈরি নয়, বরং চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। অপরপক্ষে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের উৎপাদনে ভারতকে অংশীদার করে এবং ‘ডি১০’ গঠনের মাধ্যমে ভারতকে একটা বড় আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের অংশ করে নিয়ে ব্রিটেন ভারতকে আবারও নিজের ছায়াতলে আনতে চাইছে। একইসাথে ব্রিটেন চাইছে চীনকে নিয়ন্ত্রণের খেলায় যুক্তরাষ্ট্র যেন একচ্ছত্রভাবে সিদ্ধান্ত না নিতে পারে। ইইউ থেকে বের হয়ে যাবার সাথেসাথেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ব্রিটেনের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হলেও ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তার বাস্তবায়ন অন্বেষণ করা থেকে তারা যে এক চুলও নড়েনি, তা পরিষ্কার।

Saturday 6 March 2021

তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভবিষ্যৎ কি?

০৭ই মার্চ ২০২১

প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলি ছাড়াও বড় সমস্যা হলো তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের মূল ক্রেতা এখনও তুর্কি সরকার। নিজস্ব চাহিদা সমস্যায় পতিত হলে পুরো শিল্পই সমস্যায় পড়বে। তবে এক্ষত্রে সবচাইতে ভালো দিক হলো, এই শিল্পের পিছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হলেও রাজনৈতিকভাবে প্রতিরক্ষা শিল্প থাকবে অগ্রাধিকার। কারণ এই প্রতিরক্ষা শিল্পের মাঝেই তুর্কিরা উসমানি খিলাফতের ছায়া দেখতে পায়।

 
তুর্কি প্রতিরক্ষা কোম্পানি ‘আসেলসান’ গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি এক ঘোষণায় বলে যে, গত এক বছরে কোম্পানির আয় ২৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে। এর মাঝে রপ্তানি আয় ছিল সাড়ে ৩’শ ৩১ মিলিয়ন ডলার। প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের সবচাইতে বড় এই কোম্পানি এক বছরে লাভ করেছে ৬’শ ৩০ মিলিয়ন ডলার; যা আগের বছরের চাইতে ৩৩ শতাংশ বেশি। কোম্পানি বলছে যে, করোনাভাইরাসের মহামারি সত্ত্বেও তারা এই আয় করেছে। বিশ্বের মোট ১২টা দেশে ‘আসেলসান’এর ব্যবসা রয়েছে। এর একদিন আগে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হালুক গোরগুন তুর্কি ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে বলেন যে, ২০১৭ সালে ‘আসেলসান’এর আয় ছিল ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এখন পর্যন্ত ৬০টা দেশে রপ্তানি করেছে কোম্পানিটা। আর গত বছর তারা ৪’শ ৫০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি অর্ডার পেয়েছে। গোরগুন বলেন যে, তারা কোম্পানিটাকে গবেষণা ও প্রকৌশল কোম্পানি বলে সংজ্ঞায়িত করেন। বিশ্বের সবচাইতে বড় ১’শ প্রতিরক্ষা কোম্পানির মাঝে থাকা এই কোম্পানিতে প্রায় ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। মহামারির মাঝেই তারা ১৪’শ ৭৯ জনকে নতুন করে রিক্রুট করেছেন। তবে ২০২০ সালে ‘আসেলসান’ পারলেও তুরস্কের পুরো প্রতিরক্ষা শিল্প আয় বাড়াতে পারেনি, যদিও বিগত কয়েক বছরে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প নিয়মিতই আলোচনায় এসেছে। ‘টারকিশ এক্সপোর্টার্স এসেম্বলি’র হিসেবে ২০২০ সালে তুরস্কের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ছিল ২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চাইতে ১৭ শতাংশ কম। ৭’শ ৪৮ মিলিয়ন ডলারে যুক্তরাষ্ট্র ছিল সবচাইতে বড় বাজার।

তুর্কি সরকারি মিডিয়া ‘টিআরটি ওয়ার্ল্ড’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের হুমকির কারণেই তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘আসেলসান’এর পণ্য তালিকার মাঝে রয়েছে যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি, রাডার ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, ইলেক্ট্রো অপটিক্স, এভিওনিক্স, মনুষ্যবিহীন ড্রোন বিমান, স্থল বা সমুদ্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ওয়েপন সিস্টেম, বিমান প্রতিরক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেম, ইত্যাদি। ‘আসেলসান’ ছাড়াও প্রতিরক্ষা শিল্পে তুরস্কে আরও বেশকিছু কোম্পানি ভালো করছে। এর মাঝে রয়েছে বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘টারকিশ এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ’ বা ‘টিএআই’, কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেম তৈরি করা সফটওয়্যার কোম্পানি ‘হাভেলসান’, ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি ‘রকেটসান’, প্রতিরক্ষা গবেষণা কোম্পানি ‘তুবিতাক’, ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বায়কার’, বিমানের ইঞ্জিন তৈরির কোম্পানি ‘তুসাস ইঞ্জিন ইন্ডাস্ট্রিজ’ বা ‘টিইআই’, আর্মার্ড ভেহিকল তৈরি করা প্রতিষ্ঠান ‘এফএনএসএস’, ‘অতোকার’ ও ‘বিএমসি’, যুদ্ধজাহাজ নির্মাতা ‘টারকিশ এসোসিয়েটেড ইন্টারন্যাশনাল শিপইয়ার্ডস’, ‘এসটিএম’, রাডার নির্মাতা ‘আয়েসাস’, ‘মেতেকসান’, ইত্যাদি।

তুরস্কের সামরিক শিল্প গত ১০ বছরে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ বা ‘সিপরি’র হিসেবে ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মাঝে তুরস্ক তার অস্ত্র রপ্তানি ২’শ ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মাঝে তুরস্ক ড্রোন বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, আর্মার্ড ভেহিকল, আর্টিলারি এবং যুদ্ধজাহাজ রপ্তানি করেছে। এর মাঝে পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার এবং আজেরবাইজান ছিল বড় ক্রেতা। তুরস্কের সরবরাহ করা ড্রোন নাগোর্নো কারাবাখের যুদ্ধে আজেরবাইজানের জিততে ব্যাপক সহায়তা করেছে। লিবিয়ার ত্রিপোলির জিএনএ সরকারও সেখানকার গৃহযুদ্ধে তুর্কি ড্রোন ব্যাবহার করে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে ফেলে। এই সফলতাগুলি ইউক্রেনকে অনুপ্রাণিত করেছে তুর্কি ড্রোন কিনতে এবং যৌথভাবে তৈরিতে। এছাড়াও আঞ্চলিকভাবে তুরস্কের সামরিক অভিযানগুলিও দেশটার প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সহায়তা করেছে। সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালনার সময় তুরস্কের সীমানায় ‘হিসার এ’ স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘হিসার ও’ মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে তুরস্ক। এই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটা যৌথভাবে ডেভেলপ করেছে ‘আসেলসান’ ও ‘রকেটসান’।

প্রতিরক্ষা ম্যাগাজিন ‘ডিফেন্স নিউজ’এর সাথে কথা বলতে গিয়ে তুর্কি কর্মকর্তারা বলছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সাথে তুরস্কের সম্পর্কোন্নয়নের কারণে তারা সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে বড় বাজার দেখতে পাচ্ছেন। ২০২০ সালে আমিরাতে রপ্তানি ছিল ২’শ মিলিয়ন ডলার। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করা একজন কর্মকর্তা বলছেন যে, আরব দেশগুলির সাথে সম্পর্কোন্নয়ন হলে সেখানে ১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি খুব কঠিন ব্যাপার নয়। ফেব্রুয়ারি মাসে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ‘আইডিইএক্স ২১’ প্রতিরক্ষা মেলায় ১১টা তুর্কি কোম্পানি অংশ নেয়; যদিও বড় সরকারি কোম্পানিগুলি এখনও অংশ নিতে যায়নি।

তবে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প এখনও সমস্যাসংকুল। যুক্তরাষ্ট্রের উপর তুরস্কের নির্ভরশীলতা দেশটার প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রধান দুর্বলতা। রাশিয়া থেকে ‘এস ৪০০’ বিমান প্রতিরক্ষা কেনার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে ‘এফ ৩৫’ স্টেলথ বিমান প্রকল্প থেকে বের করে দেয়। ‘রয়টার্স’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, তুরস্ক ওয়াশিংটনে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে ‘এফ ৩৫’ প্রকল্পে পুনরায় ঢোকার জন্যে। পাকিস্তানের কাছে ‘টি ১২৯ আতাক’ হেলিকপ্টার রপ্তানিও থেমে রয়েছে ওয়াশিংটনের বাধার কারণে। কারণ হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন তৈরিকারক কোম্পানিতে যুক্তরাষ্ট্রের পার্টনারশিপ রয়েছে। তুরস্ক তাই চেষ্টা করছে নিজস্ব হেলিকপ্টার ইঞ্জিন তৈরি করতে। নিজস্ব ‘আলতায়’ ট্যাঙ্ক তৈরিও আটকে রয়েছে নিজস্ব ইঞ্জিন তৈরি করতে না পারার কারণে। ২০১৮ সালে সিরিয়ার যুদ্ধে যোগ দেয়ার কারণে জার্মানি তুরস্কের কাছে ইঞ্জিন বিক্রি আটকে দিলে তুরস্ক নিজস্ব ইঞ্জিন তৈরিতে মনোযোগী হয়। নিজস্ব ফাইটার বিমান ‘টিএফএক্স’এর ডেভেলপমেন্ট নিয়েও বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তুরস্ককে। বার্তা সংস্থা ‘ব্লুমবার্গ’ বলছে যে, তুরস্ক তার প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলি থেকে বের হতে পাকিস্তানকে পাশে পেতে চাইছে। পাকিস্তানের মাধ্যমে তুরস্ক হয়তো চীনা প্রযুক্তির সহায়তা পেতে পারে; বিশেষ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ফাইটার বিমানের ক্ষেত্রে। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’এর এক লেখায় সাংবাদিক ফেরহাত গুরিনি বলছেন যে, প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলি ছাড়াও বড় সমস্যা হলো তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের মূল ক্রেতা এখনও তুর্কি সরকার। নিজস্ব চাহিদা সমস্যায় পতিত হলে পুরো শিল্পই সমস্যায় পড়বে। তবে এক্ষত্রে সবচাইতে ভালো দিক হলো, এই শিল্পের পিছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হলেও রাজনৈতিকভাবে প্রতিরক্ষা শিল্প থাকবে অগ্রাধিকার। কারণ এই প্রতিরক্ষা শিল্পের মাঝেই তুর্কিরা উসমানি খিলাফতের ছায়া দেখতে পায়।

Tuesday 2 March 2021

ইরাক ও সিরিয়াতে মুখোমুখি হতে চলেছে তুরস্ক ও ইরান

২রা মার্চ ২০২১

সিরিয়া এবং ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্রকে আলাদা করা যাবে না। অর্থাৎ এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অন্য যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক সদস্য ও সরঞ্জামের আনানেয়া চোখে পড়বে; সিনজার ফ্রন্টের যুদ্ধ আলেপ্পো ফ্রন্টকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। এরূপ পরিস্থিতিতে কুর্দিস্তানের ‘কেডিপি’ সরকারের ভূমিকা ছাড়াও ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া আঞ্চলিক খেলোয়াড় ইস্রাইল এবং সৌদি আরবের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ। 


গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আঙ্কারাতে ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ফারাজমানাদকে ডেকে নিয়ে ইরাকের অভ্যন্তরে তুরস্কের সামরিক অপারেশনের ব্যাপারে ইরানের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে। এর একদিন আগে ইরাকে ইরানের রাষ্ট্রদূত ইরাজ মাসজেদি কুর্দি সংবাদ সংস্থা ‘রুদাউ’এর সাথে এক সাক্ষাতে বলেন যে, ইরাকে তুরস্কের সামরিক অপারেশন ইরাকের সার্বভৌমত্বকে আঘাত করছে। তিনি বলেন যে, ইরাকের অভ্যন্তরে তুরস্কের সামরিক অপারেশন বা উপস্থিতিকে ইরান প্রত্যাখ্যান করছে। ইরাকের অভ্যন্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ইরাকের সামরিক বাহিনী এবং কুর্দিস্তানের শক্তিগুলি। তুর্কি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‘আনাদোলু এজেন্সি’ বলছে যে, তুরস্ক বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দি ‘পিকেকে’ গেরিলা সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, যারা ইরাকের স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকিস্বরূপ। তুরস্ক ‘পিকেকে’ সংগঠনকে সন্ত্রাসী বলে থাকে। ফারাজমানাদকে তুর্কি কর্মকর্তারা আরও বলেন যে, ইরানের উচিৎ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তুরস্কের যুদ্ধকে সমর্থন দেয়া; বিরোধিতা করা নয়। ইরাকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ফাতিহ য়িলদিজ এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, ইরানের রাষ্ট্রদূতের হওয়া উচিৎ শেষ ব্যক্তি, যিনি ইরাকের সীমানা মেনে চলার জন্যে তুরস্ককে লেকচার দেবেন। একইসাথে তেহরানে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠিয়ে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলুর বক্তব্যের প্রতিবাদ করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন যে, ইরানের অভ্যন্তরে ‘পিকেকে’র ঘাঁটি রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফাতিহ য়িলদিজের বক্তব্যকেও অযাচিত বলে আখ্যা দেয়। দুই দেশের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বাড়িয়েছে। 




উত্তর ইরাকে তুর্কি সামরিক অভিযান

২০২০এর জুনে তুরস্কের সামরিক বাহিনী উত্তর ইরাকের হাফতানিন এলাকায় ‘পিকেকে’র বিরুদ্ধে ‘ক্ল টাইগার অপারেশন’ চালায়। কয়েক’শ বার বিমান হামলা ছাড়াও সেই এলাকায় স্পেশাল ফোর্স মোতায়েন করেছে তুরস্ক। ‘আল জাজিরা’ বলছে যে, ‘পিকেকে’ তাদের সামরিক কর্মকান্ড শুরু করে ১৯৮৪ সালে। তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ ‘পিকেকে’কে সন্ত্রাসী সংস্থা বলে আখ্যা দেয়। তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে কেন্দ্রীভূত এই সংঘাতে কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছে। উত্তর ইরাকের কুর্দি এলাকায় ক্ষমতায় থাকা ‘ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব কুর্দিস্তান’ বা ‘কেডিপি’ অত্র অঞ্চলে ‘পিকেকে’র উপস্থিতিকে পছন্দ করে না। তবে উত্তর ইরাকের সামরিক ঘাঁটিগুলি থেকে ‘পিকেকে’কে উৎখাত করতেও সক্ষম হয়নি তারা। ইরাকের অভ্যন্তরে তুরস্কের সামরিক অভিযান কয়েক দশক ধরে চলছে। ‘এরাব নিউজ’ বলছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাগদাদ সরকার ইরাকের ভূমি এবং আকাশসীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে তুরস্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। তবে তুরস্ক তার অপারেশন অব্যাহত রেখেছে। গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি ইরাকের দোহুক রাজ্যের গারা পার্বত্য এলাকায় তুর্কি বাহিনী একটা ব্যর্থ অপারেশন চালায়। এই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল বহু বছর ধরে ‘পিকেকে’র হাতে আটককৃত ১৩ জন তুর্কি নাগরিককে উদ্ধার করা। এই ব্যর্থ অপারেশনে সকল বন্দী নিহত হবার পর তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়িপ এরদোগান বলেন যে, ‘পিকেকে’ কোথাও নিরাপদ থাকবে না; সেটা কানদিল হোক, বা সিনজার হোক বা সিরিয়াই হোক। এরদোগানের কথায় ইরানের নেতৃত্ব খুশি হতে পারেনি। কানদিল হলো পূর্ব ইরাকে ইরানের সীমান্তে অবস্থিত পাহাড়ি এলাকা, যেখানে ‘পিকেকে’র মূল ঘাঁটি। আর সিনজার হলো উত্তর ইরাকের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ একটা অঞ্চল, যেখানে নতুন করে তুর্কি সামরিক অভিযান শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।

১৩ই ফেব্রুয়ারি কুর্দি মিডিয়া ‘রুদাউ’ বলে যে, উত্তর ইরাকে ‘পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স’ বা ‘পিএমএফ’ বা ‘হাশদ আল শাবি’ নামের মিলিশিয়া সিরিয়ার সীমানার কাছাকাছি সিনজার এলাকায় তিনটা ব্রিগেড মোতায়েন করেছে। ‘পিএমএফ’এর সামরিক নেতাদের বরাত দিয়ে ‘রুদাউ’ বলে যে, ২১তম, ৩৩তম এবং ১৪তম ব্রিগেড সিনজারের আশেপাশে মোতায়েন করা হয়েছে। এদের সাথে যুক্ত হয়েছে ‘সিনজার রেজিসট্যান্স ইউনিট’ বা ‘ওয়াইবিএস’ নামের একটা ইয়াজিদি গ্রুপের কয়েক’শ সদস্য। সিনজার এলাকাটা ২০১৪ সালের পর থেকে আইসিসএর অধীনে চলে গিয়েছিল। আইসিসের হাত থেকে ইয়াজিদিদের রক্ষা করার ছুতোয় ‘পিকেকে’ সিনজারে তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে। তবে আইসিসের পরাজয়ের পর থেকে এখানে অনেক ধরনের সশস্ত্র গ্রুপ অপারেট করছে। সিনজার অঞ্চলে ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় এখান থেকে চলে যাওয়া অনেক মানুষ এখনও নিজেদের বাড়িঘরে ফেরত আসেনি। ১০ই ফেব্রুয়ারি কুর্দি এলাকার সরকারপ্রধান মাসরুর বারজানি এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, ‘সিনজার এগ্রিমেন্ট’ অনুযায়ী এই এলাকা থেকে অস্ত্রধারী অবৈধ গ্রুপগুলির চলে যাবার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তার সরকার সেই চুক্তির বাস্তবায়নের দাবি করে যাবে। বারজানি মূলতঃ ‘পিকেকে’ এবং ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াগুলির অবস্থান নিয়েই তার অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তুর্কি পত্রিকা ‘ডেইলি সাবাহ’র সাথে কথা বলতে গিয়ে ‘সেন্টার ফর মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজ’এর বিলগায় দুমান বলছেন যে, সিনজার চুক্তিতে ‘বেয়াইনী সশস্ত্র গ্রুপ’ বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। ‘পিকেকে’র ব্যাপারে সকলেই একমত হলেও ইরান সমর্থিত ‘পিএমএফ’ বা ‘হাশদ আল শাবি’ সম্পর্কে সকলের মতামত এক নয়। তবে সিনজার অঞ্চলে ইরাকি সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই তুরস্ক অত্র অঞ্চলে নিজস্ব সামরিক উপস্থিতি রাখতে চাইছে। 



সিনজার যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

‘ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশন’এর ‘লফেয়ার ইন্সটিটিউট’এর এক লেখায় ‘বস্টন ইউনিভার্সিটি’র শামিরান মাকো ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন যে, সিনজার হলো কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা এলাকা। ইরাক থেকে সিরিয়াতে ঢোকার একটা পথ এটা। ইরাকি সরকার এবং কুর্দি আঞ্চলিক সরকার উভয়েই এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। ২০২০ সালের ৯ই অক্টোবর কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের সাথে বাগদাদ সরকারের একটা সমঝোতা হয়। এলাকাটা ইরাকের মাঝে জাতিগতভাবে সবচাইতে বেশি বিভক্ত। ইয়াজিদি, এসিরিয়ান খ্রিস্টান, তুর্কি, কাকাই এবং শাবাক জাতির লোকেরা এখানে বসবাস করে। ইরাকের মোট খনিজ তেলের রিজার্ভের ২০ শতাংশ এই এলাকার কিরকুক, আরবিল এবং মোসুলে রয়েছে, যার পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ব্যারেল হতে পারে। শুধু কিরকুকেই রয়েছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ব্যারেল তেলের রিজার্ভ। বিলগায় দুমান বলছেন যে, অপরদিকে সিরিয়ায় ‘পিকেকে’ সমর্থিত মিলিশিয়া ‘ওয়াইপিজি’কে সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সিনজার অঞ্চল হলো সিরিয়াতে ‘ওয়াইপিজি’কে সহায়তা দেবার লজিস্টিকস কেন্দ্র।

২০১৬ সালে মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘দ্যা ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসি’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ইরাক এবং সিরিয়ার মাঝ দিয়ে ইরান একটা লজিস্টিক্যাল করিডোর তৈরি করছে, যার উদ্দেশ্য হবে ইরানকে স্থলপথে ভূমধ্যসাগরের সাথে যুক্ত করা। পরের বছর ‘রয়টার্স’এর এক প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়। করিডোরটা ইরানের পশ্চিম সীমান্ত থেকে ইরাকের বাকুবাহ হয়ে উত্তর ইরাকের সিনজার হয়ে রাবিয়া সীমান্ত ফাঁড়ি দিয়ে সিরিয়াতে ঢুকেছে। এই করিডোর সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকার এবং লেবাননের হিযবুল্লাহর সাথে ইরানের স্থলপথে যোগাযোগ স্থাপন করবে। আর এই পথকে তৈরি করতে সহায়তা দিচ্ছে ইরাকের ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গ্রপগুলি। আর্টিলারি, রকেট এবং বুলডোজারের মতো ভারি অস্ত্রসস্ত্র বিমানে করে সিরিয়া পর্যন্ত নেয়া যথেষ্ট কঠিন বিধায় এই স্থলপথ তৈরি করা হচ্ছিলো। ২০১১ সালেই ইরান কুর্দিস্তানের মাঝ দিয়ে লজিস্টিক্যাল করিডোর তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ‘কেডিপি’র নেতৃবৃন্দ ইরানের এই প্রকল্পে সম্মতি দেয়নি। ২০১৪ সালে আইসিসের আবির্ভাবের কারণে ইরানের জন্যে নতুন সুযোগ তৈরি হয়। ‘ভয়েস অব আমেরিকা’র গত নভেম্বরের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ২০১৭ সাল থেকে পশ্চিম ইরাকের সাথে সিরিয়ার সীমান্ত শহর আল বুকামাল ইরানের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। এটা এখন ইরানের জন্যে দ্বিতীয় লজিস্টিক্যাল করিডোর। এখানে ইউফ্রেতিস নদীর পূর্ব তীরের দখলে রয়েছে মার্কিন সমর্থিত কুর্দি গ্রুপ ‘ওয়াইপিজি’ বা ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’; আর নদীর পশ্চিম তীরের দখলে রয়েছে সিরিয়ার বাশার বাহিনী এবং ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াগুলি। তবে এই করিডোর ইরাকের সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলের মাঝ দিয়ে যাওয়ায় তা ইরানের জন্যে খুব একটা চিন্তামুক্ত নয়। অপরদিকে সিনজার হয়ে যাওয়া রাস্তাটা কুর্দিস্তানের সরকারের নিয়ন্ত্রিত এলাকার ঠিক বাইরে দিয়ে যায়। বেশ ঘুরতি পথে হলেও সিনজারের রাস্তাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প দিচ্ছে ইরানকে। এই রাস্তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা; প্রধানতঃ ‘পিএমএফ’ বা ‘হাশদ আল শাবি’।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্র্যাসিস’র এক প্রতিবেদনে ইরান থেকে ইরাক ও সিরিয়ার মাঝ দিয়ে যাওয়া স্থল করিডোরকে ইস্রাইলের জন্যে হুমকি হিসেবে দেখানো হয়। একইসাথে এটা আশংকা প্রকাশ করা হয় যে, উত্তর সিরিয়া বা ইরাকে তুর্কি সামরিক অভিযান হলে মার্কিন সমর্থিত ‘এসডিএফ’ বা ‘ওয়াইপিজি’ মিলশিয়ারা সিরিয়ার বাশার সরকার এবং ইরানের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। এজন্যেই সিরিয়া বা ইরাকে ‘পিকেকে’ বা ‘ওয়াইপিজি’র বিরুদ্ধে তুর্কি অভিযানের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়।

সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র

গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি তুরস্ক, ইরান এবং রাশিয়া সিরিয়ার ইদলিবে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সমঝোতায় পৌঁছেছে। ২০২০ সালের মার্চে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মাঝে আস্তানা আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে রাশিয়া এবং তুরস্ক উভয়েই ইদলিবের কাছাকাছি নিজেদের অবস্থানগুলিকে নতুন করে সমন্বয় করছে। ‘মিডলইস্ট মনিটর’ বলছে যে, রাশিয়া ২৪শে ফেব্রুয়ারি কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কৌশলগত শহর সারাকিবের কাছ থেকে সেনা অবস্থান সরিয়ে নিয়েছে। গত বছর অক্টোবরে তুর্কি সেনাবাহিনীও ইদলিবে নিজেদের বেশকিছু সামরিক অবস্থান ছেড়ে দেয়। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যে, এটা ইদলিবে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর আভাস হতে পারে। এছাড়াও লিবিয়া এবং আজেরবাইজানে সামরিক সাফল্যের পর তুরস্ক সিরিয়াতে নতুন করে সামরিক সংঘাতে জড়াতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে উত্তর ইরাকের সংঘাতই বলে দিচ্ছে যে, সিরিয়ার যুদ্ধকে ইরাক থেকে আলাদা করে দেখলে হবে না। কারণ একই আঞ্চলিক খেলোয়াড়েরা সিরিয়া এবং ইরাকে যুদ্ধরত।

তুরস্ক, ইস্রাইল এবং সৌদি আরব সকলেই জো বাইডেনের নতুন মার্কিন প্রশাসনের ইরান নীতি নিয়ে চিন্তিত রয়েছে। তেহরান থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ইরানের স্থল করিডোর এই তিন দেশই ভালো চোখে দেখছে না। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক এবং ইরানের মাঝে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা ঘনীভূত হচ্ছে। বিশেষ করে ককেশাসে নাগোর্নো কারাবাখের যুদ্ধে তুরস্ক আজেরবাইজানের পক্ষ নেয় এবং ইরান সরাসরি ঘোষণা না দিলেও আর্মেনিয়ার পক্ষেই থাকে। এছাড়াও ইরানি নাগরিককে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক ইরানি কূটনীতিককে গ্রেপ্তার করে তুরস্ক। ইরান এই ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করলেও তুরস্কের সরকারি মিডিয়ায় খবরটা ফলাও করে ছাপা হয়। ‘ওয়াইপিজি’র ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের যদি সমঝোতা হয়ও, তথাপি ‘পিকেকে’র ব্যাপারে তুরস্কের নীতির পরিবর্তন হবার সম্ভাবনা কম। উত্তর ইরাকে ‘পিকেকে’র বিরুদ্ধে তুর্কি সামরিক অভিযান শুরু হলে তা যে সিনজারের মাঝ দিয়ে যাওয়া ইরানের স্থল করিডোরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তা নিশ্চিত। এতে সিরিয়ার বাশার সরকারকে সহায়তা দিতে গিয়ে ইরান বাধ্য হবে ইরাকের সুন্নি অঞ্চলের মাঝ দিয়ে যাওয়া করিডোরের উপর নির্ভরশীল হতে। কিন্তু একইসাথে উত্তর সিরিয়াতে ইদলিব বা আলেপ্পোর কাছাকাছি সিরিয় বাহিনীর সাথে তুর্কি বাহিনীর কোন সংঘাত শুরু হলে এই করিডোরগুলি চাপের মাঝে পড়বে। উত্তর সিরিয়া বা ইরাকে তুরস্কের সাথে সংঘাত ‘ওয়াইপিজি’ ও ‘পিকেকে’কে ইরানের কাছাকাছি নিয়ে যাবে। এমতাবস্থায় সিরিয়া এবং ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্রকে আলাদা করা যাবে না। অর্থাৎ এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অন্য যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক সদস্য ও সরঞ্জামের আনানেয়া চোখে পড়বে; সিনজার ফ্রন্টের যুদ্ধ আলেপ্পো ফ্রন্টকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। এরূপ পরিস্থিতিতে কুর্দিস্তানের ‘কেডিপি’ সরকারের ভূমিকা ছাড়াও ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া আঞ্চলিক খেলোয়াড় ইস্রাইল এবং সৌদি আরবের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ।