Sunday 25 September 2022

বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্ত উত্তেজনার ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব

২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২২

সেপ্টেম্বর ২০২২। বাংলাদেশের আকাশসীমানায় মিয়ানমারের হেলিকপ্টার। বাংলাদেশে অনেকে বলছেন যে, মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার দিক থেকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সড়িয়ে নিয়ে বাংলাদেশের দিকে দিতে চাইছে। তারা চাইছে বাংলাদেশ সামরিক দিক দিয়ে প্রত্যুত্তর দিক। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মিয়ানমারের এই ফাঁদে পা দেয়নি। একইসাথে মিয়ানমার চাইছে যে, বাংলাদেশে যে শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছে তাদের ফেরত যাওয়াটা যেন আরও দেরি করানো যায়।


সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের আরকান বা রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশের উপর নিয়মিতভাবে গোলাবারুদ নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এতে কমপক্ষে একজন নিহত সহ আরও অনেকে হতাহত হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের মাঝে মিয়ানমারের সামরিক বিমান বারংবার বাংলাদেশের আকাশসীমানা লংঘন করেছে। এই ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চার সপ্তাহে মোট চারবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মোয়িকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় অনেকেই বিকল্প খোঁজার পরামর্শ দিচ্ছেন। এই পরামর্শগুলির মূল কারণ হলো এর আগে মিয়ানমার কখনোই তাদের কথা রাখেনি। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে পালিয়া আসা ১১ লক্ষাধিক মুসলিম শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার শুধু কালক্ষেপণই করেছে। যদিও রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীই সেখানকার মুসলিম জনগণের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল, তথাপি ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের ওয়াশিংটন-ঘেঁষা গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সু কি প্রায় নির্লজ্জ্বভাবেই মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বণ করেছিলেন। অর্থাৎ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং গণতান্ত্রিক নেতারা কেউই মুসলিম শরণার্থীদের নিতে রাজি হয়নি। এসব কারণে বাংলাদেশ সরকারও মিয়ানমারের সামরিক সরকার এবং গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি অভিন্ন অনুভূতি দেখিয়েছে; যা কিনা পশ্চিমারা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধ ছিল।

বাংলাদেশ সরকার বারংবার বলেছে যে, তারা মিয়ানমারের সাথে কোন সংঘর্ষ চায় না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন যে, মিয়ানমারের ভেতরে সংঘর্ষ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার; সেখানে তারা কিভাবে তাদের সমস্যার সমাধান করবে, তা তারাই ঠিক করুক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন ‘আল জাজিরা’কে বলছেন যে, মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার দিক থেকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সড়িয়ে নিয়ে বাংলাদেশের দিকে দিতে চাইছে। তারা চাইছে বাংলাদেশ সামরিক দিক দিয়ে প্রত্যুত্তর দিক। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মিয়ানমারের এই ফাঁদে পা দেয়নি। তিনি বলেন যে, একইসাথে মিয়ানমার চাইছে যে, বাংলাদেশে যে শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছে তাদের ফেরত যাওয়াটা যেন আরও দেরি করানো যায়। বাংলাদেশি থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পীস এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ’এর সিনিয়র ফেলো শাফকাত মুনির ‘আল জাজিরা’কে বলছেন যে, বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এই মুহুর্তে সামরিক সমাধান কাম্য নয়। ২১শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএ মোমেন বলেন যে, মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধে যাবার কোন ইচ্ছাই বাংলাদেশের নেই; আর বাংলাদেশ চাইছে ব্যাপারটা কূটনৈতিকভাবেই সমাধান হয়ে যাক। তবে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান অবস্থানের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে অনেকেই ভিন্ন সমাধান আশা করছেন।

মিয়ানমারের সাথে নীতির কি পরিবর্তন দরকার?

সিঙ্গাপুরের ‘দ্যা স্ট্রেইটস টাইমস’ পত্রিকার এক লেখায় ‘দ্যা ডেইলি স্টার’এর কলামিস্ট তাসনিম তাইয়েব বলছেন যে, মিয়ানমারের সাথে বর্তমান কূটনীতি যেহেতু সফল হচ্ছে না, তাই নীতির পরিবর্তন জরুরি। তিনি বলেন যে, মিয়ানমার বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র এবং অর্থনৈতিক বিনিয়োগ পাচ্ছে এবং মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কোন নির্ভরশীলতা নেই, যা বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে আলোচনায় ব্যবহার করতে পারে। কাজেই এখন সময় এসেছে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের নীতিকে নতুন করে দেখার। তিনি এই নীতি কেমন হতে পারে তার ব্যাপারে কিছু ধারণা দিয়েছেন। যেমন, ভারত এবং চীনের সাথে একটা ব্যালান্সিং নীতি রক্ষা করে চলার পক্ষপাতি তিনি। একইসাথে তিনি মিয়ানমার থেকে আসা মুসলিম শরণার্থীদেরকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলির উপর নির্ভর করার নীতিতে বিশ্বাসী; যদিও তিনি বলছেন যে, মিয়ানমারে কোন গণতান্ত্রিক সরকার না থাকার ফলে তারা নিজেদের জনগণের কাছে যেমন জবাবদিহিতা করতে বাধ্য নয়, পশ্চিমা দেশগুলির কাছেও জবাবদিহিতা করতে বাধ্য নয়। এছাড়াও তিনি বলছেন যে, মিয়ানমারে জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুর ব্যাপক বিনিয়োগ করছে; যেই দেশগুলি প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কাছের বন্ধু। তিনি শরণার্থী প্রত্যাবর্তনে জাতিসংঘের ব্যর্থতা নিয়েও কথা বলেন। এবং একইসাথে সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ব্যর্থতার ব্যাপারেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে নিজেদের কূটনীতি, জাতিসংঘের ব্যর্থতা এবং পশ্চিমা বন্ধুদের মিয়ানমারে ব্যাপক বিনিয়োগের মাঝে বাংলাদেশ নতুন করে আর কি করতে পারে, তা তিনি তেমন একটা খোলামেলাভাবে বলেননি।

মিয়ানমার সীমান্তে সতর্ক বিজিবি। একদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক চিন্তাভাবনার অংশ হিসেবে অনেকে চাইছেন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরাসরি যোগ দেয়া; বিশেষ করে আকাশসীমানা লংঘনের জের ধরে মিয়ানমারের বিমান ভূপাতিত করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে সরাসরি সংঘাতে যুক্ত হওয়া। এতে একদিকে যেমন বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদী ফাটল দেখা দেবে, তেমনি যুদ্ধ চালিয়ে নিতে বাংলাদেশ পশ্চিমা, বিশেষ করে মার্কিন অস্ত্রের উপরে নির্ভরশীল হবে।

তাসনিম তাইয়েব যা বলেননি, তা সরাসরিই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘হারভার্ড ইউনিভার্সিটি’র ‘জনস হপকিন্স স্কুল অব এডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’এর আনু আনোয়ার। ‘ঢাকা ট্রিবিউন’এর এক লেখায় তিনি অভিযোগ করে বলছেন যে, বাংলাদেশ এতদিন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলেনি যে, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষানীতি কি হবে। তিনি বাংলাদেশের সকলের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রাখার নীতির সমালোচনা করেন। ভারত যেহেতু পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, তাই ভারতকে ব্যালান্স করার জন্যে বাংলাদেশের কাছে ডিটারেন্ট তৈরি করা ছাড়া আর কোন পদ্ধতি আছে কিনা, তা তিনি প্রশ্ন করেন। তবে তিনি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ডিটারেন্ট গড়ার ব্যাপারে মত দেন। তিনি ২০১৫ সালে সিরিয়ার সাথে সীমানায় তুর্কি ফাইটার বিমানের রুশ বোমারু বিমান আকাশ থেকে গুলি করে ভূপাতিত করার উদাহরণ টেনে বলেন যে, বাংলাদেশেরও এধরণের নীতিতে যাওয়া উচিৎ। মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশের সামরিক শক্তির ঘাটতি উল্লেখ করে তিনি প্রতিরক্ষানীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

তাসনিম তাইয়েব এবং আনু আনোয়ারের কথায় যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, অনেকেই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতির পরিবর্তন চাইছেন; বিশেষ করে সকলের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারটা তারা প্রশ্ন করছেন। একইসাথে তারা কেউ কেউ মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতির আহ্বানও জানাচ্ছেন। তবে এই ঘরানার মতামতের বিপরীতেও মতামত রয়েছে।

মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধের ফাঁদ?

অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকা ‘ইন্ডেপেনডেন্ট অস্ট্রেলিয়া’র এক বিশ্লেষণে কামাল উদ্দিন মজুমদার বলছেন যে, বাংলাদেশের উচিৎ কোন সামরিক দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে কূটনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করা। মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি লুইজ নগুয়েনএর বরাত দিয়ে তিনি বলছেন যে, মিয়ানমারের সীমানায় যেহেতু কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না, তাই সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরিভাবে বোঝা বেশ কঠিন। একারণে তিনি দুই দেশকে শান্তি বজায় রাখার পরামর্শ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ বলছেন যে, বাংলাদেশের উচিৎ আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক কর্মকান্ড চালানো। তিনি বিশেষ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই ব্যাপারটা তোলার আহ্বান জানান। একইসাথে তিনি সামরিক-কূটনৈতিক কর্মকান্ড চালাবার পরামর্শ দেন।

প্রফেসর ইমতিয়াজের কথাগুলিই প্রতিফলিত হয়েছে বাংলাদেশের সামরিক-কূটনৈতিক কর্মকান্ডে। ২১শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউদ্দীন আহমেদ ঢাকা সেনানিবাসের এক অনুষ্ঠানে দেয়া এক বক্তব্যে বলেন যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলাবর্ষণ বন্ধ না করে, তাহলে তার বাহিনীর সদস্যরা উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্যে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন যে, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে তিনি মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলাবর্ষণ এবং বাংলাদেশের আকাশসীমানা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

কামাল মজুমদার বলছেন যে, মিয়ানমার হয়তো এমন একটা পরিস্থিতির তৈরি করতে চাইছে, যাতে করে আরাকানে থাকা বাকি মুসলিমরাও বাংলাদেশে চলে আসে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীরাদের আরকানে প্রত্যাবাসনও যেন পুরোপুরিভাবে আটকে যায়। এরকম একটা উদ্দেশ্য নিয়েই মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ শুরু করতে চাইছে। তিনি বলছেন যে, যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্যে একটা ফাঁদ হয়ে দেখা দেবে। বর্তমানে মিয়ানমার নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করতে পারছে, কারণ এতকাল মিয়ানমারকে কেউ শাস্তি দেয়নি।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কক্সবাজারে বিশাল শরণার্থী শিবির। ব্রিটিশ কমনওয়েলথপন্থী চিন্তাভাবনার অংশ হিসেবে অনেকেই যেকোন পদ্ধতিতে কৌশলগত জোট এড়িয়ে চলতে চাইছেন। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করাটা সমীচিন হবে না বলে তারা বলছেন যে, মিয়ানমারে নিজস্ব যেকোন সংঘাতে জড়ানো হবে একটা ভূরাজনৈতিক ফাঁদ। তবে তাদের সমাধানের মাঝে উদ্বাস্তু সমাধানের কোন সুরাহা নেই। তারা শরণার্থীদের ব্যাপারে পশ্চিমাদের সহায়তা চাওয়া এবং দন্তহীন জাতিসংঘের কাছে ধর্না দেয়ার পক্ষপাতি।

হংকং ভিত্তিক পত্রিকা ‘এশিয়া টাইমস’এর এক লেখায় কানাডা কেন্দ্রিক গবেষক তিলোত্তমা রানী চারুলতা বলছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উপর বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির আক্রমণ বৃদ্ধি পাবার সাথেসাথে বাংলাদেশের সীমানার কাছাকাছি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেসময়েই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা নিক্ষেপ এবং আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতে থাকে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরে জানা যায় যে, আরাকানের প্রায় ৫২ শতাংশ এলাকা এখন আরাকান আর্মির হাতে। একারণে সামনের দিনগুলিতে সীমানা লঙ্ঘনের ঘটনা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই সীমানায় বিজিবি এবং কোস্ট গার্ডের সদস্যদের সংখ্যা বাড়িয়েছে। তবে সীমান্তে সেনা মোতায়েন করাটা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ সরকারের ভিন্ন কৌশল অবলম্বনের পক্ষপাতি; যার মাঝে সাধারণ কূটনীতি ছাড়াও সামরিক কূটনীতিকে ব্যবহার করার কথাও বলা হচ্ছে। কারণ এই মহুর্তে বাংলাদেশের সামরিক এবং জাতীয় শক্তি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছে দৃশ্যমান নয় বলেই তারা সীমানা অতিক্রম করার সাহস পাচ্ছে। তবে আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের জড়ানো একেবারেই ঠিক হবে না বলে তিনি বলছেন। কারণ এতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মি, উভয়েরই লাভ হবে।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে ভুললে চলবে না

মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত উত্তেজনা এমন সময়ে চলছে, যখন চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলির উত্তেজনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে রাশিয়ার সাথে চীনের সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, এতে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোপ্যাসিফিকের সকল দেশের উপর চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মাঝে কোন একটা পক্ষকে বেছে নিতে। অর্থাৎ প্রতিটা দেশের উপরেই যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত দিকনির্দেশনা নির্দিষ্ট করার জন্যে চাপ দিচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চীনের পশ্চিম সীমানায় মিয়ানমার অতি গুরুত্বপূর্ণ দাবার গুটি। একদিকে চীন যেমন রাখাইন প্রদেশ থেকে সমুদ্রপথে তেল-গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত মালাক্কা প্রণালিকে বাইপাস করতে চাইছে, তেমনি চীনের পশ্চিম সীমান্তে মার্কিনপন্থী কোন সরকার যেন ক্ষমতা না নেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে চাইছে। সেই হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ঘেঁষা অং সান সু কিএর গণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতা থেকে অপসারণ চীনের জন্যে সুবিধা বয়ে এনেছে। তবে রাখাইনে চীনের তেল-গ্যাসের পাইপলাইন বরাবর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সশস্ত্র কার্যকলাপ এবং এই বিদ্রোহীদের পশ্চিমা শক্তিদের প্রক্সি হয়ে কাজ করার সম্ভাবনা চীনকে বিচলিত রেখেছে। আর একইসাথে এই সংঘাতে আরও শরণার্থী বাংলাদেশের দিকে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হলে বাংলাদেশও চীনের বিরুদ্ধাবস্থান নিতে পশ্চিমাদের চাপের মাঝে পড়তে বাধ্য। স্বাভাবিকভাবেই আরাকান আর্মির আক্রমণ বৃদ্ধির অর্থই হবে বাংলাদেশের উপরে ভূরাজনৈতিক পক্ষাবলম্বনের চাপ সৃষ্টি হওয়া।

একদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক চিন্তাভাবনার অংশ হিসেবে অনেকে চাইছেন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরাসরি যোগ দেয়া; বিশেষ করে আকাশসীমানা লংঘনের জের ধরে মিয়ানমারের বিমান ভূপাতিত করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে সরাসরি সংঘাতে যুক্ত হওয়া। এবং এর ফলাফল হিসেবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শত্রু আরাকান আর্মিকে সামরিক ও লজিস্টিক্যাল সহায়তা দিয়ে পুরোপুরিভাবে যুদ্ধে যোগদান করা। এতে একদিকে যেমন বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদী ফাটল দেখা দেবে, তেমনি যুদ্ধ চালিয়ে নিতে বাংলাদেশ পশ্চিমা, বিশেষ করে মার্কিন অস্ত্রের উপরে নির্ভরশীল হবে। অপরদিকে ব্রিটিশ কমনওয়েলথপন্থী চিন্তাভাবনার অংশ হিসেবে অনেকেই যেকোন পদ্ধতিতে কৌশলগত জোট এড়িয়ে চলতে চাইছেন। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করাটা সমীচিন হবে না বলে তারা বলছেন যে, মিয়ানমারে নিজস্ব যেকোন সংঘাতে জড়ানো হবে একটা ভূরাজনৈতিক ফাঁদ। তবে তাদের সমাধানের মাঝে উদ্বাস্তু সমাধানের কোন সুরাহা নেই। তারা শরণার্থীদের ব্যাপারে পশ্চিমাদের সহায়তা চাওয়া এবং দন্তহীন জাতিসংঘের কাছে ধর্না দেয়ার পক্ষপাতি। অপরদিকে যারা মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধের পক্ষপাতি, তারা ধরেই নিচ্ছেন যে, শরণার্থী সমস্যার কোন সমাধান আর সম্ভব নয়। অর্থাৎ কোন পক্ষই উদ্বাস্তু সমাধানের সুরাহা চাইছে না। উল্টো উভয় পক্ষই শরণার্থীদের বাংলাদেশে রেখে বাংলাদেশের নীতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট।

অনেকেই আশা করেছিল যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত দ্বন্দ্বের কথা তুলবেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। তিনি বাংলাদেশের মূল সমস্যাটাই তুলে ধরেছেন; যা হলো মিয়ানমারের মুসলিম শরণার্থীদের ফেরত যেতে না পারা এবং তাদের ফেরত যাওয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরির জন্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহিংসতার সৃষ্টি।

যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক 'এএইচ-৬৪ এপাচি' এটাক হেলিকপ্টার। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে চাইছে এবং দু'টা প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্যে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্তু বাংলাদেশে অনেকেই এই চুক্তিগুলির ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে। কারণ এই চুক্তিগুলি স্বাক্ষরের অর্থ হলো বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ের মাঝে চলে যাবে এবং তখন যুক্তরাষ্ট্রের চীন ও রাশিয়া-বিরোধী জোটে অংশ নেয়া ছাড়া বাংলাদেশের সামনে কোন পদ্ধতিই থাকবে না। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতাই তৈরি করে না, সেই দেশের পররাষ্ট্রনীতিকেও নিয়ন্ত্রণ করে।


বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বাণিজ্যের প্রচেষ্টা

গত এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের ৮ম নিরাপত্তা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্র আবারও নতুন করে বাংলাদেশে অস্ত্র রপ্তানির প্রস্তাব নিয়ে আসে এবং একইসাথে দু’টা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্যে বাংলাদেশের উপর যথারীতি চাপ প্রয়োগ করে। নিরাপত্তার দিক দিকে বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব যথেষ্ট। ‘প্রথম আলো’র এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সংলাপের মাঝে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থা ‘র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন’এর উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ, বাংলাদেশের সামরিক সদস্যদের জন্যে মার্কিন প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশের সমুদ্র নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা, বেসামরিক নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা, শরণার্থী ইস্যু, ইত্যাদি বিষয়ে কথা হয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ বা ‘আইপিএস’এ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র তার চাপ অব্যাহত রেখেছে। ‘আইপিএস’কে মূলতঃ চীনকে নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনার একটা অংশ হিসেবে দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ‘জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফর্মেশন এগ্রিমেন্ট’ বা ‘জিসোমিয়া’ এবং ‘একুইজিশন এন্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট’ বা ‘আকসা’ নামের দু’টা চুক্তি বাংলাদেশ দ্রুত স্বাক্ষর করুক। কিন্তু বাংলাদেশে অনেকেই এই চুক্তিগুলির ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে। কারণ এই চুক্তিগুলি স্বাক্ষরের অর্থ হলো বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ের মাঝে চলে যাবে এবং তখন যুক্তরাষ্ট্রের চীন ও রাশিয়া-বিরোধী জোটে অংশ নেয়া ছাড়া বাংলাদেশের সামনে কোন পদ্ধতিই থাকবে না। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতাই তৈরি করে না, সেই দেশের পররাষ্ট্রনীতিকেও নিয়ন্ত্রণ করে। পাকিস্তান এবং তুরস্কের ‘এফ-১৬’ যুদ্ধবিমান ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়েছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা না থাকলে ক্রয়কারী দেশ মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করতে সক্ষম হবে না।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত ‘এএইচ-৬৪ এপাচি’ এটাক হেলিকপ্টার এবং ‘এফ-১৬’ যুদ্ধবিমান বাংলাদেশের কাছে বিক্রির জন্যে ওয়াশিংটনের লবি সচল রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে ‘এমআই-২৮এনই’ হেলিকপ্টার এবং চীন থেকে ‘জে-১০’ যুদ্ধবিমান কিনতে পারে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে এই লবি আরও বেশি সচল হয়। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দু’টা সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর না করার ফলে এই ক্রয় প্রকল্পগুলি বেশিদূর এগোয়নি। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রগুলি চীন এবং রাশিয়ায় তৈরি। এর মাঝে রয়েছে রুশ ‘মিগ-২৯’ ও ‘ইয়াক-১৩০’ যুদ্ধবিমান, চীনা ‘এফ-৭’ যুদ্ধবিমান, ‘এফএম-৯০’ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, নৌবাহিনীর অনেকগুলি ফ্রিগেট, এলপিসি, সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজগুলিতে ব্যবহৃত ‘সি-৮০২’ ও ‘সি-৭০৪’ জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, সেনাবাহিনীর প্রায় সকল ট্যাংক, ‘ডব্লিউএস-২২’ রকেট আর্টিলারি ও আর্টিলারি লোকেটিং রাডার, ইত্যাদি। এর সাথে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হয়েছে তুরস্কে তৈরি ‘টি-৩০০ টাইগার’ রকেট আর্টিলারি, সার্বিয়ার তৈরি ‘নোরা বি-৫২’ আর্টিলারি, জার্মান ‘উরলিকন জিডিএফ০০৯ স্কাইগার্ড’ অটোম্যাটিক এয়ার ডিফেন্স কামান, ইত্যাদি। ইতালি থেকে ক্রয় করা দূরপাল্লার রাডার এবং তুরস্কের সহায়তায় চীনে নির্মিত ‘এফ-৭’ বিমানগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধি আকাশ সক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় কোন অস্ত্রের চালান নেই। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং ইন্দোপ্যাসিফিকে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা নিশ্চিত করছে যে, বাংলাদেশ অতি শীঘ্রই আরও অস্ত্র কেনা এবং প্রযুক্তির দিক থেকে সক্ষমতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবে। নতুন সহযোগী হিসেবে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ন সহায়তা দিলেও সংখ্যার দিক থেকে চীনকে যে কেউ প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হবে না, তা নিশ্চিত।

বাংলাদেশের নীতির ব্যাপারে ওয়াশিংটন এবং ব্রিটিশ কমনওয়েলথ লবির আগ্রহ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তবে সমস্যা হলো, এরা কেউই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থানরত মিয়ানমারের ১১ লক্ষের বেশি বাস্তুচ্যুত মুসলিম শরণার্থীর সসন্মানে ফেরত যাবার ব্যাপারে মোটেই আগ্রহী নয়। একদল চাইছে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে চীনের সাথে সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদে নষ্ট করতে। অপর পক্ষ চাইছে শরণার্থী সমস্যাকে জিইয়ে রেখে পশ্চিমাদের উপর নির্ভরশীলতাকে বজায় রাখতে। তবে বাংলাদেশে এখন প্রায় সকলেই বুঝতে পারছেন যে, জাতিসংঘ বা পশ্চিমারা শরণার্থী সমস্যা নিরসনে মোটেই আন্তরিক নয়; তারা কেবলই তাদের স্বার্থ দেখছে। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের মুসলিম শরণার্থীরা পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার শিকার। লিবারাল এই বিশ্বব্যবস্থায় সকলেই মানবাধিকারের কথা বললেও সকলেই মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। অন্ততঃ মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে সামরিক সরকারের অভিযান পশ্চিমে যতটা মিডিয়া কভারেজ পেয়েছে, তার সিকিভাগও পায়নি রাখাইনের মুসলিমদের উপর গণহত্যা। সমস্যাটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং পশ্চিমা দ্বিমুখী বিশ্বব্যবস্থা, যার দুর্বল হবার লক্ষণ এখন সর্বত্র দেখা যাচ্ছে।



সূত্রঃ

‘Mortar fired from Myanmar kills Rohingya youth in Bangladesh’ in Al-Jazeera, 17 September 2022

‘Bangladesh should revisit its Myanmar policy: Daily Star contributor’ by Tasnim Tayeb in The Straits Times, 20 September 2022

‘Govt, army say ready to respond’ in The New Age, 21 September 2022

‘Bangladesh’s fragile national security’ by Anu Anwar, in Dhaka Trubune, 20 September 2022

‘Why Bangladesh shouldn't fall into trap of war with Myanmar’ by Kamal Uddin Mazumder, in Independent Australia, 24 September 2022

‘Myanmar, Bangladesh must solve border tensions peacefully’ by Tilottoma Rani Charulata in Asia Times, 22 September 2022

‘US wants to sell high-tech weapons to Bangladesh’ in Prothom Alo English, 08 April 2022

‘Tensions as Bangladesh accuses Myanmar of firing in its territory’ in Al-Jazeera, 23 September 2022

‘At UNGA, PM Hasina urges immediate end to Russia-Ukraine war’ in Dhaka Tribune, 24 September 2022

‘Boeing bags deal to supply Apache choppers to Bangladesh’ in New Age, 24 January 2020

‘Russia Plays Down Bangladesh Mi-28NE ‘Deal’ in Aviation Week, 07 January 2022

‘Bangladesh to get 8 Mi-28NE helicopters’ in Air Recognition, 27 December 2021

‘Turkey-Bangladesh defense co-op ensures mutual benefits: Analysts’ in The Daily Sabah, 16 January 2022

‘Aung San Suu Kyi defends Myanmar from accusations of genocide, at top UN court’ in UN News, 11 December 2019

6 comments:

  1. The military problem should be solve militarily. The politics and discussions with international and western powers should be use to assists and support the military action against Myanmar. Seemingly Bangladesh has very bad history of doing politics with military matter. Which shows the weakness of nation and lack of geopolitical wisdom.

    ReplyDelete
    Replies
    1. A state is a political entity... And the military is part of that political entity... The Military exists to further the political goals of the state... If anything has to be said, it has to be said that political aims of the state, rather than military's intent... Even when a state lacks military strength, it's usually not the fault of the military, rather that of the politics of that state... And in current world of nation states, international geopolitics is foremost important when talking of a state's political intent and capabilities...

      Delete
  2. পশ্চিমা দ্বিমুখী বিশ্বব্যবস্থা, যার দুর্বল হবার লক্ষণ এখন সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। এটা যদি দূর্বল হয়েও পড়ে, তবে কি শুন্যস্হান পূরনের সক্ষমতা মুসলিম বিশ্বের আদৌ আছে কিনা? আমার তো মনে হয় এটা চীন, রাশিয়া ও ভারতের পক্ষে সম্ভবর হতেও পারে। মুসলিম বিশ্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় হাস্যকর রকম পিছিয়ে আছে। আর পাশ্চাত্য বিশ্ব ও অন্যেরা মুসলিম বিশ্ব অন্তত: প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় যেন তাদের বিপদসীমার বাহিরে চলে না যায় সে ব্যাপারে সদা সতর্ক।

    ReplyDelete
    Replies
    1. রাশিয়া সম্পর্কে খুব বেশি মনে হয় বলতে হবে না; শুধুমাত্র ইউক্রেন যুদ্ধের কাদায় আটকে যাওয়া রুশ সেনাবাহিনীর দিকে তাকালেই চলবে। আর চীন তো প্রতিনিয়ত অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো অপেক্ষাকৃত ছোট শক্তিদের দ্বারাও নিয়মিতভাবে ত্যাক্ত বিরক্ত হচ্ছে। অপরদিকে ভারত তো নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত।

      প্রযুক্তি একটা রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে বটে; কিন্তু তাকে দুনিয়ার শাসনকর্তা বানায় না। ব্রিটিশরা পলাশীর যুদ্ধ কি প্রযুক্তির মাধ্যমে জিতেছিল? ব্রিটিশরা দুনিয়ার শাসক হয়েছিল রাজনৈতিক চিন্তার দিক থেকে অগ্রগামী থাকার কারণে। তারা অন্য যেকারুর চাইতে সুচতুর চিন্তা করতে সক্ষম ছিল। এমনকি বাকি ইউরোপের দেশগুলির চাইতেও তারা এগিয়ে ছিল। তাই তারা বিভিন্ন সময়ে হল্যান্ড, ডেনমার্ক, স্পেন, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, এমনকি ফ্রান্স এবং জার্মানিকেও নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পেরেছিল।

      মূলতঃ একটা রাষ্ট্রের শক্তিশালী হওয়া নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের লক্ষ্য এবং আকাংক্ষার উপর। সারা দুনিয়ার মানুষের দায়িত্ব নেবার মতো সক্ষমতা যার থাকবে না, তার জন্যে দুনিয়ার সুপারপাওয়ার হওয়া সম্ভব নয়। যে শক্তির সেরকম আকাংক্ষা থাকবে, তার সেরকম একটা ব্যবস্থা দেয়ার সক্ষমতাও থাকবে। কারণ এই উভয়েরই একত্রে একটা স্থান থেকে উৎপত্তি। পশ্চিমারাও একসময় এরকমই একটা সেকুরাল রাজনৈতিক চিন্তাকে ধরে সেটার উপর ভিত্তি করেই সারা দুনিয়া শাসন করেছে; এখনও করছে। তাদের শাসনব্যবস্থা যত খারাপই হোক না কেন, এটা একটা ব্যবস্থা। এবং একারণেই এটা এখনও চলছে। সোভিয়েতরা একসময় চেষ্টা করেছিল সমাজতান্ত্রিক একটা বিশ্বব্যবস্থা দিতে। তবে সেটা ব্যর্থ হয় এবং সেটার সমস্যাগুলি নিজেদের ধ্বংসের মাঝ দিয়েই ফুটে ওঠে।

      যাই হোক, নতুন একটা বিশ্বব্যবস্থা যেই দিক না কেন, তার চিন্তাগত উতকর্ষতা না থাকলে দুনিয়ার মানুষ তাকে শাসক হিসেবে মেনে নেবে না।

      Delete
  3. আপনার কাছে একটা সিম্পল প্রশ্ন।
    বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মি কিসের ভিত্তিতে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত? আরাকান আর্মিকে সাপ্লাই দিচ্ছে কে?
    কারণ বাংলাদেশ মায়ানমার জলসীমা স্থলসীমা দুই দেশের বরডার ফোর্স পাহারা দিচ্ছে। তাহলে আরাকান আর্মির হাতে অস্ত্র পউছাচ্ছে কিভাবে? হয় চায়না দিবে নইলে ভারত দিবে নইলে .......
    এছাড়াও আরাকান রাজ্যে ইন্ডিয়ার আধিপত্য বাড়ছে, যেখানে চায়নার বিলিয়ন ডলারের ইইজেড+ গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হচ্ছে। ঐখানে চীনের তেল শোধনাগার তৈরি হবে & চীনের একটস কৌশলগত জ্বালানী সরবরাহের পথ তৈরি হবে। যদি সংকট মুহুর্তে মালাক্কা প্রনালী বন্ধ হয়ে যায়, তবে চীনের মিয়ানমার সংলগ্ন প্রদেশ গুলায় জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে সমস্যা হবে না। আর ইন্ডিয়া মায়ানমার জান্তা সরকারের সাথে একই অঞ্চলে কালাদান প্রোজেক্ট চালাচ্ছে & প্রচুর বিনিয়োগ করছে ঐ অঞ্চলে। ফলে চীনের ঐ অঞ্চলে একক আধিপত্য কমে যাচ্ছে & বঙ্গোপসাগরে কৌশলগত আধিপত্যের হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
    তাহলে আরাকান আর্মি আর মায়ানমার সেনাবাহিনীর ভিতর অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য পর্দার আড়ালে থেকে কার অবদান বেশি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. বর্তমানের শরণার্থী সমস্যা শুরুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সাংবাদিক সন্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, যারা মিয়ানমার পুলিশের উপর হামলা করে অনেককে হত্যা করে পালিয়ে গেলো (কারণ এর পরেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে গণহত্যা চালায়), তাদেরকে আপনারা খুঁজে বের করুন; তাহলেই বুঝে যাবেন যে শরণার্থী সমস্যা কারা তৈরি করতে চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই কথাতে যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, বাংলাদেশের নেতৃত্ব জানে যে, ষড়যন্ত্র করে মিয়ানমারের শরণার্থীদেরকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। আর আপনিও উল্লেখ করেছেন যে, রাখাইনে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে। এর বাইরেও মিয়ানমারে সিঙ্গাপুর এবং জাপানের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে; যারা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশ। সমস্যা এটা নয় যে, আপনি বুঝতে পারছেন না কে করছে। সমস্যা হলো, যখন আপনি দেখছেন যে, এখানে এতগুলি ভূরাজনৈতিক খেলোয়াড়, তখন আপনি কি করবেন?

      রাজনৈতিক সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। আপনি নিচের লেখাটা পড়তে পারেন। এটা প্রায় চার বছর আগে লেখা।
      https://koushol.blogspot.com/2018/11/why-myanmar-should-be-under-bangladesh-influence.html

      Delete