Tuesday 13 September 2022

নিজেদের ডেভেলপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলি তুরস্ককে গুরুত্বপূর্ণ করছে

১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২২
 
তুরস্কের 'বায়রাকতার আকিনচি' ড্রোন এবং এর বহনযোগ্য অস্ত্রসমুহ। তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র শিল্পের সবচাইতে বড় সাফল্য হলো তাদের ড্রোনগুলিকে “দাঁত” সরবরাহ করা। অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকা রাষ্ট্রগুলি এই ড্রোনগুলির সহায়তায় আকাশ শক্তির মালিক হয়েছে। আর ড্রোনগুলির সবচাইতে বড় শক্তি হলো এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি; যেগুলি টার্গেটের উপর নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম এবং সেই আক্রমণের ভিডিও ছবি তুলে প্রচার করার সুবিধাও দিচ্ছে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। মাত্র এক দশকের মাঝে দেশটার সামরিক শিল্প অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। তুরস্কের উপর পশ্চিমাদের বিভিন্ন রকমের নিষেধাজ্ঞা এবং অবরোধের কারণে তুরস্ক নিজস্ব অস্ত্র ডেভেলপ করতে বাধ্য হয়েছে। একইসাথে এই শিল্পগুলিকে বাণিজ্যিকভাবে টিকিয়ে রাখতে তারা বিভিন্ন সামরিক পণ্যকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করার দিকে ঝুঁকেছে। ন্যাটোর অংশ হবার কারণে এবং দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের জন্যে বিভিন্ন সামরিক উপকরণ তৈরি করতে গিয়ে তুরস্ক নিজস্ব সামরিক প্রযুক্তিকে একটা শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছে। এর ফলে প্রয়োজন চলে আসায় তারা বেশ দ্রুতই বিভিন্ন প্রকারের সামরিক পণ্য ডেভেলপ করে উৎপাদনে যেতে পেরেছে।

তুরস্কের ডেভেলপ করা প্রযুক্তিগুলি বহু প্রকারের হলেও যে জিনিসগুলি তুরস্কের সামরিক শিল্পের প্রতি সমীহ যুগিয়েছে তা হলো এগুলির ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে তুর্কি সামরিক পণ্য ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে; যার মাঝে রয়েছে সিরিয়া, লিবিয়া, আজেরবাইজান এবং ইউক্রেন। প্রতিটা ক্ষেত্রেই তুর্কি পণ্য যুদ্ধের মাঝে বড় অবদান রাখতে পেরেছে শত্রুপক্ষের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারার জন্যে। এই ক্ষয়ক্ষতিগুলি অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে তুর্কিদের ডেভেলপ করা বিভিন্ন প্রকারের ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে। সকলে খেয়াল না করলেও এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি তুর্কিদের প্রতিরক্ষা শিল্পের দুনিয়ার সামনে চলে আসার অন্যতম প্রধান কারণ। প্রায় সকল ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রই তুর্কিরা ডেভেলপ করছে। তাই এই পুরো সেক্টরের সম্যক ধারণা পেতে ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিটা প্রকারের গভীরে গিয়ে পর্যালোচনা প্রয়োজন।

ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র

‘রকেটসান’ হলো তুরস্কের মূল ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। কোম্পানির নিজস্ব মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চারকে ব্যবহার করেই তারা বেশ কয়েকটা ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করেছে। ‘টিআরজি-৩০০’ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটার ব্যারেল ৩’শ মিঃমিঃ এবং পাল্লা ৯০ থেকে ১’শ ২০ কিঃমিঃ পর্যন্ত। ‘ব্লক-২’ ভার্সনের ওজন ৬’শ ৬০ কেজি এবং ওয়ারহেড ১’শ ৮০ কেজি। অপদিকে ‘ব্ল-৩’ ভার্সনের ওজন ৫’শ ৮৫ কেজি এবং এর ওয়ারহেড ১’শ ৫ কেজি। টার্গেটের ১০ মিটারের মধ্যে আঘাত হানার সক্ষমতা এই ক্ষেপণাস্ত্রের রয়েছে। ‘টিআরজি-২৩০’ নামের পরবর্তী ২’শ ৩০ মিঃমিঃ ক্ষেপণাস্ত্রটার ওজন ২’শ ১৫ কেজি। এর পাল্লা ৭০ কিঃমিঃ এবং ওয়ারহেড ৪২ কেজি। প্রায় একই আকৃতির ‘টিআরএলজি-২৩০’ ক্ষেপণাস্ত্রের গাইড্যান্সে লেজার যোগ করা হয়েছে। আরও ছোট আকৃতির ১’শ ২২ মিঃমিঃ ক্ষেপণাস্ত্র হলো ‘টিআরএলজি-১২২’; যার ওজন ৭৬ কেজি এবং পাল্লা ৩০ কিঃমিঃ। লেজার গাইড্যান্সের মাধ্যমে সাড়ে ১৩ কেজি ওয়ারহেডের এই ক্ষেপণাস্ত্র টার্গেটের ২ মিটারের মাঝে আঘাত করতে সক্ষম।

তবে এই সিরিজের সবচাইতে বড় ক্ষেপণাস্ত্রটা হলো ‘খান’; যার পাল্লা ২’শ ৮০ কিঃমিঃ পর্যন্ত। ৬’শ ১০ মিঃমিঃ ব্যারেলের এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন আড়াই টন এবং এর বিশাল ওয়ারহেডের ওজন ৪’শ ৭০ কেজি। পাল্লা বেশি হলেও টার্গেটের মাত্র ১০ মিটারের মাঝে এটা আঘাত হানতে সক্ষম। তুরস্ক ‘খান’ (আরেকটা নাম হলো ‘বরা’) ক্ষেপণাস্ত্র ২০১৭ সালের মে মাসে কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে পরীক্ষা করে। এর মাত্র দুই বছরের মাথায় ২০১৯ সালের মে মাসে উত্তর ইরাকে কুর্দী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এটা ব্যবহার করা হয়।

তুর্কি থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইডিএএম’এর ডিরেক্টর ক্যান কাসাপোগলু ‘আনাদোলু এজেন্সি’র এক লেখায় বলছেন যে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের শুরু হয়েছিল ১৯৯০এর দশকে চীনের সাথে তুরস্কের সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে। চীনা ‘বি-৬১১’ ক্ষেপণাস্ত্রের আদলে তৈরি করা তুর্কি ক্ষেপণাস্ত্র থেকেই শেষ পর্যন্ত এই ‘বরা’ বা ‘খান’ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হয়েছে। চীনা ক্ষেপণাস্ত্রগুলির চাইতে তুর্কিদের এই ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানা অপেক্ষাকৃত নিখুঁত। এরকম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার যে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ, তা ইয়েমেন এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও সর্বশেষ প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্রগুলি টার্গেটে আঘাত করার ঠিক আগ মুহুর্তে দিক পরিবর্তন করতে পারে এবং এগুলির নিশানাও অনেক ভালো; যা কিনা যুদ্ধক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল এনে দিতে পারে। তুর্কিরা এখন সেই প্রযুক্তির লক্ষ্য নিয়েই কাজ করবে।

তুর্কি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি আন্তর্জাতিক আইনের মাঝে থাকার কারণে ৩’শ কিঃমিঃএর ভিতরে সীমাবদ্ধ থাকছে। এই পাল্লা গুরুত্বপূর্ণ কোন কৌশলগত লক্ষ্য বাস্তবায়নে সম্ভব হবে না; যেটা ইয়েমেনের যুদ্ধে দেখা গিয়েছে। হুথিরা সৌদি আরবের রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা করে; যা কিনা ইয়েমেন থেকে প্রায় ১ হাজার কিঃমিঃ দূরে। জেদ্দার তেল স্থাপনাগুলিও ইয়েমেন থেকে প্রায় ৮’শ কিঃমিঃ দূরে ছিল। সেপ্টেম্বর ২০১৯এর আবকাইক এবং খুরাইসএর তেল স্থাপনার উপর হামলা ছিল সবচাইতে মারাত্মক। সেই স্থাপনা ইয়েমেন থেকে প্রায় ১৩’শ কিঃমিঃ দূরে। কাজেই তুর্কি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলির কৌশলগত গুরুত্ব যথেষ্টই কম থাকছে।

 
তুর্কি যুদ্ধজাহাজ থেকে ছোঁড়া হচ্ছে 'আতমাকা' ক্ষেপণাস্ত্র। তুর্কি ‘আতমাকা’ ক্ষেপণাস্ত্র ইজিয়ান সাগর ও ভূমধ্যসাগরে তুর্কিদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ‘হারপুন’ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিস্থাপন করার পর তুরস্ক অনেক ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র সামরিক মিশনের জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে; যদিও তুরস্কের বাস্তবাদী পররাষ্ট্রনীতির কারণে রাজনৈতিকভাবে সেগুলির ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধই থাকবে। তথাপি এগুলির জন্যে রপ্তানি ক্রেতা পাওয়া সহজ হবে।

জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র

তুর্কিদের ডেভেলপ করা জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ‘আতমাকা’ (অর্থ বাজ পাখি) ইতোমধ্যেই মিডিয়াতে যথেষ্ট নাম করে ফেলেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ডিফেন্স নিউজ’এর এক খবরে বলা হয় যে, তুর্কিরা ‘আতমাকা’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পুরোনো মার্কিন নির্মিত ‘হারপুন’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে। তুরস্কের নৌবাহিনীর সূত্র বলছে যে, সামনের কয়েক বছরের মাঝেই তুর্কি নৌবাহিনীর জাহাজগুলিতে ‘আতমাকা’ স্থান পাবে। ক্ষেপণাস্ত্রের ডেভেলপার ‘রকেটসান’এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলছেন যে, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মাঝেই প্রায় সাড়ে ৩’শ ‘হারপুন’ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিস্থাপন করা যাবে। ২০০৯ সালে রকেটসান এই ক্ষেপণাস্ত্রের কনট্রাক্ট পায়। ২০২০ সালের জুলাই মাসে তুর্কি নৌবাহিনীর ফ্রিগেট ‘কিনালিয়াদা’ থেকে সফলভাবে ‘আতমাকা’র পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। ‘রকেটসান’ বলছে যে, যেহেতু ‘আতমাকা’র খরচ ‘হারপুন’এর অর্ধেক, তাই তুর্কিরা প্রায় ৫’শ মিলিয়ন ডলার অর্থ বাঁচাতে পারবে। ২’শ ২০ কিঃমিঃ পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রের রয়েছে ২’শ ৫০ কেজি ওয়ারহেড। যেকোন আবহাওয়ায় সমুদ্রের সমতল ঘেঁষে ওড়া এই ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুপক্ষের ইলেকট্রনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এড়াতে সক্ষম বলে বলা হচ্ছে। পরীক্ষার সময় ‘আতমাকা’ সমুদ্রের পানি থেকে মাত্র ১০ ফুট উপর দিয়ে উড়েছে বলে বলা হয়। শুধু সমুদ্রের টার্গেটই নয়; ভূমির টার্গেটেও এই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে সক্ষম। সামনের দিনগুলিতে এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘আদা-ক্লাস’ কর্ভেট, ‘ইস্তাম্বুল-ক্লাস’ ফ্রিগেট ও ভবিষ্যতের ‘টিএফ-২০০০’ ডেস্ট্রয়ার বহণ করবে।

গত মার্চ মাসে তুরস্ক ঘোষণা দেয় যে, তারা ছোট আকারের আরেকটা জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করেছে। সরকারি মিডিয়া ‘আনাদোলু এজেন্সি’ বলছে যে, এখনও ‘চাকির’ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র ডিজাইনের মাঝেই রয়েছে এবং ২০২২এর মাঝেই প্রথম পরীক্ষা হতে পারে। ১’শ ৫০ কিঃমিঃ পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ভূমি, জাহাজ, বিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোন থেকে ছোঁড়া সম্ভব। এই ক্ষেপণাস্ত্র একসাথে কয়েকটা ছোঁড়া হতে পারে; যেগুলি উড়ন্ত অবস্থাতেই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সমন্বয় করে অনেকগুলি টার্গেটে আঘাত হানতে পারবে। টার্গেট পরিবর্তন করা এবং মাঝপথে ক্ষেপণাস্ত্রের নিয়ন্ত্রক পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। যেমন একটা জাহাজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পর সেটার নিয়ন্ত্রণ একটা বিমানের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। শত্রুর শক্ত অবস্থানগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া অথবা উপকূলের টার্গেটে আঘাত হানতে গিয়ে ভূমির উপর দিয়ে ওড়া, শেষ মুহুর্তে দিক পরিবর্তন করে ফেলা, ইত্যাদি পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে এই ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ভিন্ন রকমের সক্ষমতা হাজির করবে। অপেক্ষাকৃত ছোট এবং কমদামি হবার কারণে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি একসাথে অনেকগুলি ছুঁড়ে দিয়ে শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যতিব্যস্ত করে ফেলা সম্ভব। ২০২৩ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্রকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত করা শুরু হবে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের জন্যে ইঞ্জিন হবে ‘কালে আরএন্ডডি’এর ডেভেলপ করা ‘কেটিজে-১৭৫০’।

তুর্কি ‘আতমাকা’ ক্ষেপণাস্ত্র ইজিয়ান সাগর ও ভূমধ্যসাগরে তুর্কিদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ‘হারপুন’ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিস্থাপন করার পর তুরস্ক অনেক ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র সামরিক মিশনের জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে; যদিও তুরস্কের বাস্তবাদী পররাষ্ট্রনীতির কারণে রাজনৈতিকভাবে সেগুলির ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধই থাকবে। তথাপি এগুলির জন্যে রপ্তানি ক্রেতা পাওয়া সহজ হবে।

ড্রোনের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্র

তুরস্কের ‘বায়রাকতার টিবি-২’ ড্রোনগুলি নাগোর্নো কারাবাখের যুদ্ধ, সিরিয়া ও লিবিয়ার যুদ্ধ এবং সর্বশেষ ইউক্রেনের যুদ্ধে সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। কিন্তু যে ব্যাপারটা এই ড্রোনের কাজগুলিকে সম্ভব করেছে তা হলো তুরস্কের নিজস্ব ডেভেলপ করা কিছু অস্ত্র, যা ছোট্ট এই ড্রোনগুলি মারাত্মক নিখুঁতভাবে ব্যবহার করেছে। ‘রকেটসান’ কোম্পানির ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে যে, ‘এমএএম-সি’ বা ‘ম্যাম-সি’ নামের মাত্র সাড়ে ৬ কেজি ওজনের লেজার গাইডেড বোমাগুলি প্রথম ‘টিবি-২’ ড্রোনগুলিকে ৮ কিঃমিঃ দূর থেকে আঘাত করার শক্তি দিয়েছে। এরপর এসেছে ২২ কেজি ওজনের ‘এমএএম-এল’ বা ‘ম্যাম-এল’ বোমা; যেগুলি ১৫ কিঃমিঃ দূর থেকে নিখুঁতভাবে টার্গেটে আঘাত করতে পারছে। এছাড়াও ৯৫ কেজি ওজনের ‘ম্যাম-টি’ ডেভেলপ করা হয়েছে; যার পাল্লা ৩০ কিঃমিঃএর উপর। ‘বায়রাকতার আকিনচি’ ড্রোনগুলি এই বোমাগুলি বহণে সক্ষম।

২০২১এর শেষের দিকে ‘তুবিতাক সেইজ’ নিজস্ব কিছু ছোট আকারের ক্ষেপণাস্ত্রের ডেভেলপমেন্ট শুরু করেছে। ‘কুজগুন’ নামের একটা ১’শ কেজি ওজনের ‘গাইডেড মডিউলার মিউনিশন ফ্যামিলি’ তারা তৈরি করছে, যা বিভিন্ন রকমের ইঞ্জিন, ন্যাভিগেশন ও গাইড্যান্স এবং ওয়ারহেড বহণ করতে পারবে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা ম্যাগাজিন ‘ডিফেন্স টার্কি’র সাথে কথা বলতে গিয়ে ‘তুবিতাক সেইজ’এর কর্মকর্তা বলেন যে, তারা আরও আগ থেকেই যেহেতু ‘এফ-১৬’ এবং ‘এফ-৪ই’ বিমানের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে আসছিলেন, তাই তুরস্কের ড্রোনগুলির জন্যে ২০১৯ সালে তারা যখন ছোট আকারের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে গেলেন, তখন অনেক কাজই সহজ হয়ে গিয়েছিল। ‘কুজগুন ফ্যামিলি’র ক্ষেপণাস্ত্রগুলি একইরকম এভিওনিক্স এবং মেকানিক্যাল বডি ব্যবহার করছে।

২০২২এর জুনে ‘তুবিতাক সেইজ’ ঘোষণা দেয় যে, তারা ‘টিবি-২’ ড্রোনগুলির জন্যে ‘বজক’ নামের ‘সেমি একটিভ লেজার’ গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন শুরু করেছে। ‘ডিফেন্স নিউজ’ বলছে যে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা ৯ কিঃমিঃ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ কিঃমিঃ করা হয়েছে। ১৬ কেজি ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ‘ম্যাম-এল’ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় সমান লম্বা হলেও ওজনে প্রায় ৬ কেজি কম।

তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র শিল্পের সবচাইতে বড় সাফল্য হলো তাদের ড্রোনগুলিকে “দাঁত” সরবরাহ করা। সাধারণ সার্ভেইল্যান্স ড্রোনগুলির সাথে বড় পার্থক্য তৈরি করা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সারা দুনিয়ায় একেবারেই আলাদা। মানবচালিত ফাইটার বিমান কেনা, সেগুলি অপারেট করা এবং মেইনটেইন করায় যে খরচ হয়, তার একটা ছোট্ট অংশ ব্যয় করে এই ড্রোনগুলিকে অপারেট করা সম্ভব। অর্থাৎ এই ড্রোনগুলি স্বল্প খরচে একটা রাষ্ট্রকে যুদ্ধক্ষেত্রে আকাশ থেকে আক্রমণের সক্ষমতা দিচ্ছে। অন্যকথায় বলতে গেলে অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকা রাষ্ট্রগুলি এই ড্রোনগুলির সহায়তায় আকাশ শক্তির মালিক হয়েছে। আর ড্রোনগুলির সবচাইতে বড় শক্তি হলো এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি; যেগুলি টার্গেটের উপর নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম এবং সেই আক্রমণের ভিডিও ছবি তুলে প্রচার করার সুবিধাও দিচ্ছে।

বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে ভূমিতে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র

‘রকেটসান’ সাধারণ বোমার উপর গাইড্যান্স কিট লাগিয়ে সেগুলিকে নিখুঁতভাবে টার্গেটে আঘাত হানার জন্যে প্রস্তুত করেছে। ‘তেবার’ নামে পরিচিত এই গাইড্যান্স কিটের সহায়তায় ১’শ ৫৫ কেজি অথবা ২’শ ৭০ কেজি একটা সাধারণ বোমা ২ থেকে ২৮ কিঃমিঃ দূর থেকে নিখুঁত নিশানায় ছোঁড়া যাচ্ছে। জিপিএস বা ইনারশিয়াল মেজারমেন্টের মাধ্যমে এই গাইড্যান্স সম্ভব হচ্ছে।

‘ডেইলি সাবাহ’ জানাচ্ছে যে, ২০২১এর জুনে তুর্কি বিমান বাহিনী নতুন প্রকারের অস্ত্রের ডেলিভারি পাওয়া শুরু করেছে। ‘এইচজিকে-৮২'’নামের এই অস্ত্র মূলতঃ সাধারণ ২’শ ২৬ কেজি ‘মার্ক-৮২’ বোমার সাথে কিছু উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়। ‘তুবিতাক সেইজ’, ‘আসেলসান’ এবং ‘আফসাত’ ২০২২ সালের অগাস্টের মাঝে প্রায় ১ হাজার এরকম বোমা সরবরাহ করবে বলে বলা হয়। প্রথমবারের মতো নিজস্ব ডেভেলপ করা ‘কাসিফ’ জিপিএস রিসিভার যুক্ত করার মাধ্যমে বোমাগুলিকে বিদেশী সরবরাহ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। প্রায় ২৮ কিঃমিঃ দূর থেকে এই বোমাগুলি টার্গেটে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এছাড়াও ‘এইচজিকে-৮৩' (৪’শ ৫৩ কেজি) এবং ‘এইচজিকে-৮৪’ (৯’শ ৭ কেজি)এর ক্ষেত্রে আরও বড় আকারের বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ‘এলএইচজিকে-৮৪’ ডেভেলপ করা হয়েছে লেজার গাইডেড বোমা হিসেবে।

২০২০এর জুনে তুরস্ক ঘোষণা দেয় যে, ‘তুবিতাক সেইজ’এর ডেভেলপ করা ‘এসএআরবি-৮৩’ বোমা উৎপাদনে গিয়েছে। এই বোমাগুলি কংক্রিটের অবকাঠামো ধ্বংস করতে সক্ষম। বিশেষভাবে ডেভেলপ করা ওয়ারহেড কংক্রিট বাংকার, রানওয়ে, মাটির নিচের লুকিয়ে থাকা স্থাপনা, কংক্রিটের এয়ারক্রাফট হ্যাংগার, নদীর উপরে বাঁধ, ইত্যাদি শক্ত টার্গেট ধ্বংস করতে পারবে। পরীক্ষার সময় এই বোমা প্রায় ৫ ফুট পুরু কংক্রিট ভেদ করে, যার শক্তি ছিল প্রায় ৫ হাজার পিএসআই। এই বোমাগুলি তৈরি করা হয়েছে ‘তুবিতাক’এর ‘এনইবি পেনেট্রেটর বম্ব’এর উপর ভিত্তি করে; যা ৮’শ ৭০ কেজি বোমা ব্যবহার করে। এই বোমার সাথে যেকোন গাইড্যান্স কিট জুড়ে দেয়া যায়।

এছাড়াও ‘তুবিতাক সেইজ’ ডেভেলপ করেছে ‘উইং এসিসটেড গাইড্যান্স কিট’; যা মূলতঃ সাধারণ বোমার উপর বসানো ডানা। এই ডানার উপর ভর করে বোমাগুলি ১১ কিঃমিঃ থেকে ১’শ ১১ কিঃমিঃ পর্যন্ত দূরের টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বহণকারী বিমান শত্রুর প্রতিরক্ষার মাঝে না গিয়েই বোমা ফেলতে সক্ষম হবে।

‘তুবিতাক সেইজ’এর ডেভেলপ করা বোমাগুলি এবং ‘রকেটসান’এর ডেভেলপ করা ‘তেবার’ গাইড্যান্স কিটের সহায়তায় তুর্কি বিমান বাহিনীর ‘এফ-১৬’ বিমানগুলির সক্ষমতা অনেকাংশেই বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত বোমার উপর তুরস্কের নির্ভরশীলতা অনেকাংশেই কমবে।

‘রকেটসান’এর ডেভেলপ করা আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো ‘উমটাস’ নামের দূরপাল্লার ট্যাংক ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। প্রায় ৩৮ কেজি ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি প্রায় ৮ কিঃমিঃ দূরে একটা ট্যাংককে ধ্বংস করতে সক্ষম। হেলিকপ্টার, বিমান অথবা ভূমি এমনকি সমুদ্রের নৌযান থেকেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া সম্ভব। এর মূল গাইড্যান্স হলো ‘ইমেজিং ইনফ্রারেড’। তবে ‘এল-উমটাস’ নামে আরও একটা ভার্সন তৈরি করা হয়েছে, যার গাইড্যান্স হলো ‘সেমি একটিভ লেজার’এর। এছাড়াও মধ্যম পাল্লার (৪ কিঃমিঃ) ‘ওমটাস’ নামের আরেকটা ভার্সনও ডেভেলপ করা হয়েছে।

 
কৌশলগত দিক থেকে ‘রকেটসান’এর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো ‘স্ট্যান্ড অফ মিসাইল’ বা ‘এসওএম’ বা ‘সম’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ধ্বংস করতে সক্ষম বিধায় এগুলির গুরুত্ব যথেষ্ট। এগুলি তুরস্কের অস্ত্র কূটনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

কৌশলগত দিক থেকে ‘রকেটসান’এর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো ‘স্ট্যান্ড অফ মিসাইল’ বা ‘এসওএম’ বা ‘সম’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। আড়াই’শ কিঃমিঃ পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ২’শ ৩০ কেজি ওয়ারহেড দ্বারা সজ্জিত, যা কিনা শত্রুর শক্ত অবস্থানগুলির উপর হামলা করতে পারবে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের তিনটা ভার্সন মোট ছয় প্রকারের ন্যাভিগেশন ও গাইড্যান্স সিস্টেম বহণ করতে সক্ষম; যা শত্রুর প্রতিরক্ষাকে নাকাল করার জন্যে যথেষ্ট। ২০০৬ সালে ‘রকেটসান’ এর ডেভেলপমেন্ট শুরু করে এবং ২০১১ সালে প্রথম এটা জনসন্মুখে আনে। ‘এয়ারফোর্স টেকনলজি’র এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ২০১২ সাল থেকে ‘সম’ তুর্কি বিমান বাহিনীর সার্ভিসে রয়েছে। ২০১২ সালে ‘কালে এরো’ কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয় এই ক্ষেপণাস্ত্রের জন্যে নিজস্ব একটা টারবোজেট ইঞ্জিন ডেভেলপ করার জন্যে। তবে ৬’শ কেজি ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোট আকারের বিমান বা ড্রোনের পক্ষে বহণ সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক সময়ে ‘বায়রাকতার আকিনচি’ ড্রোনে ‘সম’ ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

‘সম’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি আজেরবাইজানের কাছে বিক্রয় করার খবর পাওয়া যায়। তবে এগুলি আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহৃত হবার কোন প্রমাণ মেলেনি। তথাপি এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ধ্বংস করতে সক্ষম বিধায় এগুলির গুরুত্ব যথেষ্ট। এগুলি তুরস্কের অস্ত্র কূটনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

তুরস্কের আরেকটা ক্ষেপণাস্ত্র হলো স্বল্প পাল্লার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ‘সুঙ্গুর’; যা মূলতঃ একজন সৈন্য তার কাঁধের উপর থেকে ছুঁড়তে পারে। নিচু দিয়ে ওড়া ড্রোন, হেলিকপ্টার, বিমান এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এর টার্গেট। ‘আর্মি টেকনলজি’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ‘সুঙ্গুর’ ক্ষেপণাস্ত্র তুর্কিরা মূলতঃ মার্কিন নির্মিত ‘স্টিংগার’ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিস্থাপনে ব্যবহার করবে। ২০১৩ সালে ‘রকেটসান’এর সাথে স্বাক্ষরিত কনট্রাক্ট অনুযায়ী এই ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করা হয়। ২০১৮ সালে এটা প্রথম উড্ডয়ন করে। ২০২০এর জুলাই মাসে সকল পরীক্ষা শেষে ‘সুঙ্গুর’ তুর্কি সামরিক বাহিনীর ব্যবহারের জন্যে সার্টিফিকেট পায়। এই ক্ষেপণাস্ত্রের টার্গেটিংএর জন্যে ‘ইনফ্রারেড সীকার’ সরবরাহ করেছে তুর্কি কোম্পানি ‘আসেলসান’। এছাড়াও এই ক্ষেপণাস্ত্রকে একটা সাঁজোয়া যানের উপরে ‘লেজার ডেজিগনেটর’ (যা দিন বা রাতে চারিদিকের একটা পরিষ্কার ছবি তুলে ধরে) ও ‘রেঞ্জ ফাইন্ডার’ (যা নিখুঁতভাবে টার্গেট খুঁজে পেতে সহায়তা করে) সহ বসানো হয়েছে। এই গাড়ি একসাথে চারটা ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করে এবং চলন্ত অবস্থায় ৮ কিঃমিঃএর মাঝে যেকোন টার্গেটকে ধ্বংস করতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্র টার্গেট সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য পাবে ‘আসেলসান’এর ডেভেলপ করা ‘হেরিকস-৬’ কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম থেকে; যা অন্যান্য রাডার থেকে ‘সুঙ্গুর’ ক্ষেপণাস্ত্রের জন্যে টার্গেট খুঁজে দেবে।

‘ডেইলি সাবাহ’ বলছে যে, ১৫ কিঃমিঃ পাল্লার ‘হিসার-এ’ ক্ষেপণাস্ত্র ইতোমধ্যেই তুর্কি সামরিক বাহিনীর সার্ভিসে এসেছে। আর ২৫ কিঃমিঃ পাল্লার ‘হিসার-ও’ এখন উৎপাদনে গিয়েছে। ‘আর্মি রেকগনিশন’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ২০০৭ সাল থেকে ডেভেলপমেন্ট শুরু হবার পর ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ‘হিসার-ও’ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালানো হয়। ২০১৭ সালে ‘হিসার-ও’এর প্রথমবারের মতো ‘ভার্টিক্যাল লঞ্চিং’ সম্পন্ন করা হয়। ২০২১এর মার্চে তুরস্ক ‘হিসার-ও প্লাস’ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। ‘সিপার’ ডেভেলপ করার আগ পর্যন্ত এটাই ছিল তুরস্কের ডেভেলপ করা সর্বোচ্চ পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এরপর মে মাসে ‘হিসার-এ প্লাস’এরও পরীক্ষা সম্পাদন করা হয়। ২০২১এর ডিসেম্বরে ‘হিসার-ও প্লাস’ তুর্কি সামরিক বাহিনীর সার্ভিসে ঢোকার আগে শেষ পরীক্ষা সম্পাদন করে। অবশ্য জুলাই মাসেই সরকার ঘোষণা দেয় যে, ‘হিসার-ও প্লাস’ উৎপাদনে যাবার জন্যে প্রস্তুত। আর ২০২২এর জানুয়ারি মাসে তুর্কি সামরিক বাহিনী ঘোষণা দেয় যে, ‘হিসার-ও প্লাস’ সার্ভিসে এসেছে।

 
তুরস্কের প্রথম দূরপাল্লার বিমান ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র 'সিপার'। আকাশ প্রতিরক্ষায় তুরস্ক অনেকগুলি ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করলেও দূরপাল্লার এবং বিশেষ করে শত্রুর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সক্ষমতা থেকে এখনও কিছুটা দূরে রয়েছে। এই ঘাটতি সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ককে শক্তিশালী কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক মিশনে যেতে বাধা দিতে পারে। বিশেষ করে তুরস্কের প্রতিবেশী দেশগুলির অনেকগুলিই যখন মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মালিক, তখন তা তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতিকে খাঁচায় বন্দী করতে পারে।

২০২১এর নভেম্বরে তুরস্ক ঘোষণা দেয় যে, তারা প্রথমবারের মতো একটা দূরপাল্লার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ‘সিপার’ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করেছে ‘আসেলসান’, ‘রকেটসান’ এবং ‘তুবিতাক সেইজ’। তুরস্কের ‘প্রেসিডেন্সি অব ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ’এর প্রধান ইসমাঈল দেমির এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, ২০২৩ সাল নাগাদ এই ক্ষেপণাস্ত্র তুরস্কের সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি আরও বলেন যে, তুরস্ক ৬টা আলাদা ধরণের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ডেভেলপ করছে। ২০২২এর অগাস্টে এক পরীক্ষায় ‘সিপার’ ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ৯০ কিঃমিঃএর বেশি দূরের এবং ২৬ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়া একটা সুপারসনিক টার্গেটকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরবর্তী ভার্সনগুলি ১’শ থেকে ১’শ ৫০ কিঃমিঃ পর্যন্ত পাল্লা হবে বলে বলা হচ্ছে।

‘ডেইলি সাবাহ’র সাথে এক সাক্ষাতে ইসমাঈল দেমির বলেন যে, ‘হিসার’এর মতোই ‘সিপার’এরও ‘ডুয়াল পালস’ ইঞ্জিন, ‘একটিভ রাডার সীকার’ এবং ‘ইমেজিং ইনফ্রারেড সীকার’ রয়েছে। ‘আসেলসান’এর ওয়েবসাইট বলছে যে, মার্কিন ‘প্যাট্রিয়ট’ ও রুশ ‘এস-৪০০’ সিস্টেমের মতোই ‘সিপার’ কৌশলগত অবকাঠামোগুলির সুরক্ষা দেবে। আর সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মতোই ‘সিপার’ও কয়েক প্রকারের ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারবে। ২০২২এর মে মাসে আজেরবাইজানের ‘টেকনোফেস্ট’এর সাইডলাইনে ‘আনাদোলু এজেন্সি’র সাথে এক সাক্ষাতে দেমির বলেন যে, ‘সিপার’ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো আমদানি করা সিস্টেমের উপর থেকে তুরস্কের নির্ভরতা সরিয়ে ফেলা। জুলাই মাসে ‘ওন্দোকুজ মায়িজ ইউনিভার্সিটি’র এক সেমিনারে দেমির বলেন যে, মাত্র ছয় বছর আগেও তুরস্কের নিজস্ব কোন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই ছিল না। এর মাঝে ‘কোরকুত’, ‘সুঙ্গুর’, ‘হিসার-এ’, ‘হিসার-ও’ এবং ‘সিপার’ সিস্টেমগুলি ডেভেলপ করেছে তুরস্ক। ‘কোরকুত’ হলো স্বল্প পাল্লার (৪ কিঃমিঃ) ৩৫মিঃমিঃএর একটা অটোম্যাটিক বিমান বিধ্বংসী কামান; যা ২০১৩ সালে প্রথম ঘোষণা দেয়ার পর ২০১৯ সালে উৎপাদন শুরু হয়।

আকাশ প্রতিরক্ষায় তুরস্ক অনেকগুলি ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করলেও দূরপাল্লার এবং বিশেষ করে শত্রুর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সক্ষমতা থেকে এখনও কিছুটা দূরে রয়েছে। এই ঘাটতি সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ককে শক্তিশালী কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক মিশনে যেতে বাধা দিতে পারে। বিশেষ করে তুরস্কের প্রতিবেশী দেশগুলির অনেকগুলিই যখন মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মালিক, তখন তা তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতিকে খাঁচায় বন্দী করতে পারে।

আকাশ থেকে আকাশে

গত জুলাই মাসে তুরস্কের ‘প্রেসিডেন্সি ফর ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ’এর পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তুরস্ক প্রথমবারের মতো দূরপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করেছে। ‘গোকদোগান’ নামের এই ‘রাডার গাইডেড’ ক্ষেপণাস্ত্র দৃষ্টির অগোচরে থাকা টার্গেটেও আঘাত হানতে পারবে। প্রেসিডেন্সির প্রধান ইসমাঈল দেমির এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, ‘গোকদোগান’ এবং ‘বজদোগান’ ক্ষেপণাস্ত্র ২০২২ সালের মাঝেই তুর্কি সামরিক বাহিনীর হাতে দেয়া হবে। ‘বজদোগান’ ক্ষেপণাস্ত্র হলো স্বল্প পাল্লার ‘ইনফ্রারেড হোমিং’ ক্ষেপণাস্ত্র। দু’টা ক্ষেপণাস্ত্রই মূলতঃ তুর্কি বিমান বাহিনীর ‘এফ-১৬’ বিমান এবং ভবিষ্যতের ‘হুরজেট’ ও ‘টিএফ-এক্স’ বিমানের জন্যে ডেভেলপ করা হয়েছে। ‘এয়ার রেকগনিশন’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ‘গোকদোগান’ ক্ষেপণাস্ত্র মুলতঃ ‘একটিভ রাডার সীকার’এর উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও এতে রয়েছে ‘কাউন্টার ইলেকট্রনিক কাউন্টারমেজার’; যা শত্রুপক্ষের জ্যামিং বা অন্যান্য ব্যবস্থাকে প্রতিরোধ করতে পারে। উভয় ক্ষেপণাস্ত্রই ২০১৮ সালে প্রথম পরীক্ষা করা হয়।

‘গোকদোগান’ এবং ‘বজদোগান’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি তুরস্কের বিমান বাহিনীর সক্ষমতাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করতে পারে। ‘বজদোগান’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ‘এআইএম-৯ সাইডওয়াইন্ডার’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিস্থাপিত করবে। অপরদিকে ‘গোকদোগান’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি তুর্কিদেরকে নতুন সক্ষমতা দেবে। ২০১৪ সালে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘এফ-১৬’ বিমানগুলির জন্যে ১’শ ৫ কিঃমিঃ পাল্লার ১’শ ৪৫টা অত্যাধুনিক ‘এআইএম-১২০সি-৭ এমরাম’ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু তুরস্কের উপর অবরোধ দেয়ার ফলে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সরবরাহ করেনি ওয়াশিংটন। এর ফলশ্রুতি প্রায় আড়াই’শ ‘এফ-১৬’ যুদ্ধবিমান থাকার পরেও এগুলির সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে। নিজস্ব দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবারের মতো তুরস্ককে আকাশে শক্তিশালী দেশগুলির ফাইটার বিমানকে মোকাবিলার সক্ষমতা প্রদান করবে। অবশ্য সেটাও ‘এফ-১৬’ বিমানের ব্যবহারের উপর তুরস্কের কতটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেটার উপর নির্ভর করবে।

 
তুর্কি 'এফ-১৬' বিমানের ডানার নিচে 'গোকদোগান' এবং 'বজদোগান' ক্ষেপণাস্ত্র। তুরস্কের উপর অবরোধ দেয়ার ফলে দূরপাল্লার অত্যাধুনিক 'এমরাম' ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সরবরাহ করেনি ওয়াশিংটন। এর ফলশ্রুতি প্রায় আড়াই’শ ‘এফ-১৬’ যুদ্ধবিমান থাকার পরেও এগুলির সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে। নিজস্ব দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবারের মতো তুরস্ককে আকাশে শক্তিশালী দেশগুলির ফাইটার বিমানকে মোকাবিলার সক্ষমতা প্রদান করবে। অবশ্য সেটাও ‘এফ-১৬’ বিমানের ব্যবহারের উপর তুরস্কের কতটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেটার উপর নির্ভর করবে।

ক্ষেপণাস্ত্রের ইঞ্জিন ডেভেলপমেন্ট

তুর্কি কোম্পানি ‘কালে আরএন্ডডি’ ২০২১এর সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দেয় যে, তারা তুরস্কের প্রথম নিজস্ব টারবোজেট ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে। ‘ডিফেন্স নিউজ’ বলছে যে, ‘কেটিজে-৩২০০’ নামের এই ইঞ্জিন তুরস্কের দু’টা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র ‘স্ট্যান্ডঅফ মিসাইল’ বা ‘সম’ এবং ‘আতমাকা’ জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহৃত হবে। এই ইঞ্জিনের উৎপাদন শুরুর কনট্রাক্ট স্বাক্ষরিত হয় সেই বছরের অগাস্টে। ২০১২ সালে যখন এই ইঞ্জিনের ডেভেলপমেন্ট শুরু হয়, তখন একইসাথে ‘আতমাকা’ ক্ষেপণাস্ত্রের ডেভেলপমেন্টও চলছিল; যেকারণে এই ইঞ্জিন ‘আতমাকা’ ক্ষেপণাস্ত্রেও ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছিল। ফরাসি ‘টিআর-৪০’ ইঞ্জিনের মতো হলেও ‘কেটিজে-৩২০০’এর চাইতে ‘টিআর-৪০’ ইঞ্জিনে জ্বালানি খরচ আরও কিছুটা কম হয়। তবে ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব বেশি একটা পার্থক্য হয় না। সবচাইতে বড় কথা হলো, ‘কেটিজে-৩২০০’ তৈরি হয়েছে তুরস্কের নিজস্ব সক্ষমতা ব্যবহার করে। এখানে বুঝতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই ইঞ্জিনের সাথে তুরস্কে ডেভেলপ চলতে থাকা বিমানের ইঞ্জিনের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ বিমানের ইঞ্জিনে মূল বিষয় হলো বহু ঘন্টা ধরে কোন সমস্যা ছাড়াই ইঞ্জিনের চলতে পারা। অপরদিকে ক্ষেপণাস্ত্রের ইঞ্জিনকে চলতে হয় মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্যে।

এছাড়াও আরও টারবোজেট ইঞ্জিন ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে; যেগুলি ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহার করা যাবে। ‘তুবিতাক সেইজ’, ইঞ্জিন কোম্পানি ‘তুসাস ইঞ্জিন ইন্ডাস্ট্রিজ’ বা ‘টিইআই’ এবং ‘রকেটসান’এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে ‘টিজে-৩০০’ ইঞ্জিন। ২০২১এর এপ্রিলে ২’শ ৪০ মিঃমিঃ ব্যাসের আকৃতির মাঝে এই ইঞ্জিন ১ হাজার ৩’শ ৪২ নিউটন শক্তি উৎপাদন করে বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করে। ‘ডেইলি সাবাহ’ বলছে যে, ২’শ ৩০ থেকে ২’শ ৫০ মিঃমিঃ ব্যাসের ইঞ্জিনের শক্তি সাধারণতঃ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ১২’শ নিউটনের মতো। ‘টিজে-৩০০’ ইঞ্জিন শব্দের গতির ৯০ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারবে এবং ৫ হাজার ফুট উচ্চতায়ও উঠতে পারবে। এই ইঞ্জিন ডেভেলপমেন্টের সময় বলা হয়েছিল যে, এর মূল উদ্দেশ্য হবে মধ্যম পাল্লার জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহার করা।

তুর্কি ক্ষেপণাস্ত্রের ভবিষ্যৎ

গত ৩০শে জুন এক সংবাদ সন্মেলনে তুর্কি বিমান বাহিনী জানায় যে, তারা তাদের ভবিষ্যতের ‘টিএফ-এক্স’ পঞ্চম জেনারেশনের বিমান ডেভেলপ করার মাঝ দিয়ে সেই বিমানের ব্যবহারের জন্যে বিভিন্ন অস্ত্রও ডেভেলপ করছে। সেই আঙ্গিকে তুর্কি প্রতিরক্ষা কোম্পানি ‘রকেটসান’ নতুন একটা সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করছে। ‘আকবাবা’ (অর্থ শকুন) নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র হলো ‘এন্টি র‍্যাডিয়েশন’ ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রের কাজ হলো শত্রুপক্ষের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাডারের থেকে আসা রাডার রশ্মিকে ব্যবহার করে সেই রাডারকে আক্রমণ করা। তবে ‘ডিফেন্স নিউজ’এর খবরে বলা হচ্ছে যে, ‘আকবাবা’ প্রকল্পটা তুরস্ক গোপন রেখেছে। কারণ ‘রকেটসান’এর ওয়েবসাইটে এই অস্ত্রের কোন উল্লেখ নেই। ‘রকেটসান’এর পক্ষ থেকে ৮ই জুলাই বলা হয় যে, জাতীয় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তারা ‘আকবাবা’ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারবে না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তুর্কি কর্মকর্তা ‘ডিফেন্স নিউজ’কে বলেন যে, নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা ‘এজিএম-৮৮’ ‘হাই স্পীড এন্টি র‍্যাডিয়েশন মিসাইল’ বা ‘হার্ম’ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিস্থাপন করবে। বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন যে, ‘আকবাবা’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে বিমান বাহিনীর ‘১৫১তম “ব্রোঞ্জ” স্কোয়াড্রন’; যা ‘এফ-১৬সি/ডি’ বিমান অপারেট করে; এবং যার মূল কাজ হলো ‘হার্ম’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা। বর্তমানে তুরস্কের হাতে যে ১’শ ‘হার্ম’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, সেগুলি ‘আকবাবা’ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে গেলে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে।

 
তুরস্কের ২'শ ৮০ কিঃমিঃ পাল্লার 'খান' বা 'বরা' ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ভূমিতে আঘাত করতে সক্ষম ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করার দিক দিয়ে তুরস্ক পশ্চিমা আইনের লঙ্ঘন করতে সাহস পাচ্ছে না; যেকারণে ৩’শ কিঃমিঃ পাল্লার বাইরে তারা যেতে পারছে না। তুর্কি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বেশ নিখুঁত নিশানায় টার্গেটে আঘাত হানতে পারলেও পাল্লা কম হওয়ায় এগুলির কৌশলগত গুরুত্ব বেশ কমই থাকবে।

২০২১ সালের নভেম্বরেই তুর্কি সরকারের শিল্প ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মুস্তাফা ভারাঙ্ক সংসদীয় কমিটির সামনে বলেন যে, তুরস্কের প্রথম আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ‘গোকদোগান’ এবং ‘বজদোগান’ ইতোমধ্যেই প্রথমবারের মতো আকাশে উড়েছে। আর ২০২২ সালের মাঝেই ‘র‍্যামজেট’ ইঞ্জিনের ‘গোখান’ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম প্রোটোটাইপ তৈরি হয়ে হবে। তুর্কি প্রতিরক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘তুরডেফ’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ‘র‍্যামজেট’ ইঞ্জিন নিয়ে তুর্কি প্রতিরক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউট ‘তুবিতাক সেইজ’ আরও আগ থেকেই কাজ করছে। বিশেষ করে লিকুইড ফুয়েল ব্যবহার করা ‘র‍্যামজেট’ ইঞ্জিনের দিক থেকে তারা সকলের চাইতে এগিয়ে থাকতে চাইছে।

এবছরের মার্চে তুর্কি মিডিয়া ‘সাভুনমা সানায়ি এসটি’র সাথে কথা বলতে গিয়ে ‘তুবিতাক সেইজ’এর ডিরেক্টর গুরকান ওকুমুস জানান যে, তার সংস্থা বর্তমানে একটা ‘র‍্যামজেট’ ইঞ্জিনের ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কাজ করছে। এবং ২০২২ সালের মাঝেই এই ইঞ্জিন জনসন্মুখে আনা হবে। এছাড়াও তারা আরেকটা ‘স্ক্র্যামজেট’ ইঞ্জিনের ধারণা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ করছেন। তারা একটা ‘ট্রাইসনিক উইন্ড টানেল’ তৈরি করছেন; যা ২০২৪ সালের মাঝে নির্মিত হবে। এই টানেলে ‘সাবসোনিক’, ‘ট্রানসোনিক’ এবং ‘সুপারসনিক’ গতির যন্ত্র পরীক্ষা করা যাবে। ওকুমুস জানাচ্ছেন যে, এই প্রচেষ্টার ফলাফলস্বরূপ তারা উচ্চ সুপারসনিক এবং হাইপারসনিক সিস্টেমগুলি নিয়ে কাজ করবেন। এর জন্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তাদের হাতে চলে আসছে।

ড্রোনগুলির জন্যে তৈরি করা ছোট্ট ‘ম্যাম-সি’ ও ‘ম্যাম-এল’ লেজার গাইডেড বোমা থেকে শুরু করে মধ্যম পাল্লার ‘সম’ ও ‘আতমাকা’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘খান’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তুরস্ককে সামরিক শিল্পের ক্ষেত্রে সন্মান এনে দিয়েছে। ‘রকেটসান’ এক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা নিলেও ‘আসেলসান’ ও ‘তুবিতাক সেইজ’এর ইলেকট্রনিক্স এবং ‘কালে আরএন্ডডি’র টারবোজেট ইঞ্জিনের কথা উল্লেখ করতেই হবে। তবে এখনও কিছু ক্ষেত্রে তুর্কিরা আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাইতে পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ভূমিতে আঘাত করতে সক্ষম ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করার দিক দিয়ে তুরস্ক পশ্চিমা আইনের লঙ্ঘন করতে সাহস পাচ্ছে না; যেকারণে ৩’শ কিঃমিঃ পাল্লার বাইরে তারা যেতে পারছে না। তুর্কি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বেশ নিখুঁত নিশানায় টার্গেটে আঘাত হানতে পারলেও পাল্লা কম হওয়ায় এগুলির কৌশলগত গুরুত্ব বেশ কমই থাকবে। এছাড়াও আকাশ প্রতিরক্ষায় তুর্কিরা এখনও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের দিক দিয়ে নতুন খেলোয়াড়। এধরণের ক্ষেপণাস্ত্রের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে যখন প্রশ্ন উঠবে যে, তুরস্ক শত্রুর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিজেকে বাঁচাতে কতটা সক্ষম। তুরস্কের সামরিক শিল্প এখন এমন একটা অবস্থানে রয়েছে, যেখান থেকে পরবর্তী উচ্চতায় যেতে হলে বাইরে থেকে কিছু প্রযুক্তি তাকে যোগাড় করতে হবে, এবং পশ্চিমা আইনগুলিকে বাইপাস করার জন্যে ছুতো খুঁজতে হবে। তবে এর জন্যে যে রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র প্রয়োজন, তা তুরস্ক কতটা অর্জন করতে পারবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।



সূত্রঃ
‘Turkey’s New UCAV AKINCI engages sea target for the 1st time’ in Naval News, 24 April 2022
‘SOM Air-to-Surface Cruise Missile’ in Air Force Technology, 24 March 2015 (https://www.airforce-technology.com/projects/som-air-to-surface-cruise-missile/)
‘Turkish firm unveils new cruise missile Cakir’ in Anadolu Agency, 31 March 2022
‘Turkey’s own Atmaca missile to replace Harpoons on its Navy ships’ in Defense News, 10 February 2022
‘Turkey successfully tests its future air-to-air missile Gokdogan’ in Air Recognition, 11 July 2022
‘Türkiye successfully tests air-to-air missile Gokdogan with radar seeker’ in TRT World, 11 July 2022
‘Korkut Self-propelled Short-Range Air Defense 35mm Gun System’ in Army Recognition, 15 August 2020
‘Turkey Successfully Test Fires HISAR O+ Mid-Range Missile’ in The Defense Post, 28 December 2021
‘HISAR-O HISAR-O+ Aselsan – Roketsan’ in Army Recognition, 21 January 2022
‘Turkiye test-fires SIPER area air defence missile’ in Naval News, 28 August 2022
‘SIPER Air Defence Missile System About to Enter Inventory’ in C4Defence (https://www.c4defence.com/en/siper-air-defence-missile-system-about-to-enter-inventory/)
‘Long Range Air and Missile Defense System – SİPER’ (https://www.aselsan.com.tr/en/capabilities/air-and-missile-defense-systems/air-and-missile-defense-systems/long-range-air-and-missile-defense-system-siper)
‘Turkey successfully test-fires air defense missile Siper, rival to S-400’ in Daily Sabah, 06 November 2021
‘Turkey’s local air defense system hits target in longest range test’ in Daily Sabah, 09 March 2021
‘Sungur Air Defence Missile System, Turkey’ in Army Technology, 05 August 2022
‘Turkey’s Roketsan develops missile to replace Raytheon weapon’ in Defense News, 09 July 2021
‘Turkey Targets Hypersonic, Supersonic Missile Development’ in The Defense Post, 24 March 2022
‘Ramjet Gökhan Prototype Will Be Available Soon’ in TurDef, 03 November 2021 (https://www.turdef.com/Article/ramjet-gokhan-prototype-will-be-available-soon/840)
‘Turkey’s 1st local medium-range missile engine breaks world record’ in Daily Sabah, 16 April 2021
‘Firing Tests of the TÜBİTAK SAGE KUZGUN Guided Modular Munition Family Will Start in the Last Quarter of 2021!’ in Defence Turkey, October 2021
‘Turkish science-tech council showcases new UAV missiles’ in Anadolu Agency, 19 August 2021
‘Turkish firm Kale delivers homemade turbojet engine for missiles’ in Defense News, 21 September 2021
‘Turkey’s Bora missile saw combat debut: What next?’ by Dr. Can Kasapoglu, in Anadolu Agency, 16 June 2019
The KHAN Missile , provides accurate and effective fire power on strategic targets in the battlefield. (https://www.roketsan.com.tr/en/products/khan-missile)
TRLG-122 Laser Guided Missile (https://www.roketsan.com.tr/en/products/trlg-122-laser-guided-missile)
TRLG-230 Laser Guided Missile (https://www.roketsan.com.tr/en/products/trlg-230-laser-guided-missile)
TRG-230 Guided Missile (https://www.roketsan.com.tr/en/products/trg-230-guided-missile)
TRG-300 Guided Missile (https://www.roketsan.com.tr/en/products/trg-300-guided-missile)
MAM-T Munition (https://www.roketsan.com.tr/en/products/mam-t-munition)
OMTAS Medium-Range Anti-Tank Missile System (https://www.roketsan.com.tr/en/products/omtas-medium-range-anti-tank-missile-system)
L-UMTAS Laser Guided Long-Range Anti-Tank Missile System (https://www.roketsan.com.tr/en/products/l-umtas-laser-guided-long-range-anti-tank-missile-system)
UMTAS Long-Range Anti-Tank Missile System (https://www.roketsan.com.tr/en/products/umtas-long-range-anti-tank-missile-system)
TEBER Guidance Kit (https://www.roketsan.com.tr/en/products/teber-guidance-kit)
SOM Stand-Off Missile (https://www.roketsan.com.tr/en/products/som-stand-missile)
MAM-L Smart Micro Munition (https://www.roketsan.com.tr/en/products/mam-l-smart-micro-munition)
MAM-C Smart Micro Munition (https://www.roketsan.com.tr/en/products/mam-c-smart-micro-munition)
HİSAR Air Defence Missiles (https://www.roketsan.com.tr/en/products/hisar-air-defence-missiles)
‘Turkey starts mass production of miniature drone missile’ in Defense News, 07 June 2022
‘Bozok: The Bayraktar TB2 Drone Has a New Mini Missile’ in 1945, 09 June 2022 (https://www.19fortyfive.com/2022/06/bozok-the-bayraktar-tb2-drone-has-a-new-mini-missile/)
‘New generation AMRAAM to boost Turkey’s air firepower’ in Hurriyet Daily News, 10 September 2014
‘Why the Turkish Air Force Still Has No Modern Air to Air Missiles: 250 F-16s Can’t Fire Far Enough’ in Military Watch, 03 February 2022 (https://militarywatchmagazine.com/article/why-the-turkish-air-force-still-has-no-modern-air-to-air-missiles-250-f-16s-can-t-fire-far-enough)
‘Turkish forces add domestically sourced smart bomb mod to arsenal’ in Daily Sabah, 24 June 2021
Precision Guidance Kit (HGK) (https://www.sage.tubitak.gov.tr/en/urunler/precision-guidance-kit-hgk)
‘Turkey's domestic SARB-83 penetrator bomb ready for mass production’ in Daily Sabah, 06 July 2020
Penetrator Bomb (NEB) (https://www.sage.tubitak.gov.tr/en/urunler/penetrator-bomb-neb)
Wing Assisted Guidance Kit (KGK) (https://www.sage.tubitak.gov.tr/en/urunler/wing-assisted-guidance-kit-kgk)

1 comment: