Saturday 8 July 2023

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী সরিয়ে নেবার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

০৮ই জুলাই ২০২৩

মালি, সেপ্টেম্বর ২০১৭। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা মিশনে নিহত তিনজন বাংলাদেশী সেনার মৃতদেহ বহণ করছে। শক্তিশালী দেশগুলির ভূরাজনৈতিক স্বার্থ এবং তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হয়েছে তৃতীয় বিশ্বের ৩ শতাধিক সেনা; যারা অর্থের বিনিময়ে মালির মরুভূমিতে শক্তিশালী দেশগুলির স্বার্থরক্ষা করেছে।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর মিশন ২০২৩এর ৩০ জুন পর্যন্ত থাকার কথা ছিল, যদি সেই মিশনের সময় বৃদ্ধি করা না হতো। কিন্তু জাতিসংঘের অনুরোধ সত্ত্বেও জাতিসংঘে মালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুলায়ে দিওপ মিশনের ইতি টানার কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, মালিতে নিরাপত্তার যেই চ্যালঞ্জগুলি রয়েছে, সেগুলির সমাধান দিতে ব্যার্থ হয়েছে এই মিশন। এছাড়াও মালি সরকার অভিযোগ করে যে, জাতিসংঘ মিশন সেদেশে জাতিগত বিদ্বেষ তৈরি করছে, যেকারণে মালির শান্তি নষ্ট হচ্ছে, এবং দেশের মানুষকে সহিংসতা ভুলে গিয়ে শান্তির পথে এগুতে বাধা সৃষ্টি করছে। অপরদিকে জাতিসংঘ অভিযোগ করছে যে, ২০২২ সালের মার্চে মালির সেনাবাহিনী এবং রুশ ভাড়াটে সেনারা দেশের মধ্যাঞ্চলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ৫’শরও বেশি বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে। এছাড়াও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী অভিযোগ করেছে যে, মালির সরকার শান্তিরক্ষী মিশনের কর্মকান্ডে নিয়মিতভাবে বাধা সৃষ্টি করেছে। এহেন অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০শে জুন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফ্রান্সের প্রস্তাবিত এক রেজোলিউশনে ভোটাভুটির পর সর্বসম্মতিক্রমে ২০২৩এর ৩১শে ডিসেম্বরের মাঝে মালি থেকে শান্তিরক্ষী বাহিনী সরিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত হয়। একইদিনে জাতিসংঘের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ৫ম কমিটির সভায় আগামী ছয় মাসের জন্যে মালির মিশনের জন্যে ৫’শ ৯০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়; যা স্বাভাবিক বার্ষিক বাজেটের অর্ধেক।

২০১৩ সালে মালির উত্তরাঞ্চলে ‘আল-কায়েদা’ সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীদের কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেখানে ইতোমধ্যেই মোতায়েন করা ফরাসি বাহিনীর সমর্থনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসে মালিতে মোট ১৭ হাজার ৪’শ ৩০ জন বিদেশী শান্তিরক্ষী মোতায়েন ছিল। ‘আল জাজিরা’ বলছে যে, দশ বছর পরেও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন থাকা অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসেনি। বছরে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার খরচে এই মিশনের সাফল্য নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। তবে এই মিশনের সাফল্য পাবার ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা ছিল ২০২০ সালের অগাস্টের সামরিক অভ্যুত্থান; যার প্রধান কারণ ছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করায় ব্যার্থতা। এরপর ২০২১এর মে মাসে দ্বিতীয়বার সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। সেসময় থেকেই মালির সরকার অভিযোগ করতে থাকে মালির পরিস্থতিকে অশান্ত করছে প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স।

মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন পরিচালনা সত্ত্বেও সহিংতার কমতি হয়নি। মালিতে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েনের তিন বছর পর ২০১৬ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের নিজস্ব মিডিয়া ‘ইউএন ডিসপ্যাচ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের পর শান্তিরক্ষীরাই সেখানে জঙ্গি গোষ্ঠিগুলির প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে। মার্কিন গবেষণা সংস্থা ‘আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন এন্ড ইভেন্ট ডাটা’ বা ‘এসিএলইডি’ পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে সহিংসহতার নিয়মিত হিসেব রাখছে। তাদের হিসেবে মালিতে সহিংস ঘটনার সংখ্যা কমেনি; বরং বেড়েছে। ২০২০ সালে প্রায় ৩ হাজার সহিংস ঘটনা থেকে ২০২১ সালে কমে গিয়ে ২ হাজারের নিচে নেমে গেলেও ২০২২ সালে তা সাড়ে ৪ হাজার পেরিয়েছে। একইসাথে জঙ্গি সংগঠনগুলিতে মালির জনগণ রিক্রুটিংও বেড়েছে। গত এক দশকে সেখানে ৩’শরও বেশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী সদস্য নিহত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মালি থেকে এই সংঘাত আশেপাশের দেশ বুরকিনা ফাসো এবং নিজেরএ ছড়িয়ে পড়েছে।

‘বিবিসি’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, রাশিয়া এবং চীন মালির এই মিশনের সমালোচনা করেছে ও ব্রিটেন এবং সুইডেন সেখানে সেনা মোতায়েনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ২০২২ সালে মালি সরকারের বিরুদ্ধাচরণের ফলস্বরূপ ফ্রান্স মালি থেকে তাদের সেনা সরিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত নেয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর হতাশা ছিল, মালির সামরিক সরকার দেশটাতে নির্বাচন দিতে দেরি করছে এবং তারা নিরাপত্তার জন্যে রুশ ভাড়াটে সেনাবাহিনী ‘ওয়াগনার গ্রুপ’এর হাজারখানেক সদস্যকে সেখানে মোতায়েন করেছে।

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন সীমিত করতে চেয়েছিলেন। জো বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের নীতি পরিবর্তন করলেও অর্থায়নের ক্ষেত্রে তা অনেক ক্ষেত্রেই মার্কিন কংগ্রেসের উপর নির্ভরশীল। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স’ বা ‘সিএফআর’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের বাজেটের ২৭ শতাংশ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সমস্যা হলো, ২০০১ সাল থেকে মার্কিন কংগ্রেস জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাজেটের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছে; এর বেশি অংশ যুক্তরাষ্ট্র দেবে না। একারণেই প্রতিবছরের শান্তিরক্ষী বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র বড় একটা অংক বাকি রেখে দিচ্ছে। তবে ৮ বছরের মাঝে তিনগুণ বাড়িয়ে ২০২১ সাল নাগাদ চীন শান্তিরক্ষী বাজেটের ১৫ শতাংশ অর্থায়ন করে। তথাপি শান্তিরক্ষী মিশনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলি তেমন কোন সেনা মোতায়েন করে না। এই শূণ্যস্থান পূরণ করছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ; যারা অর্থের বিনিময়ে মিশনে সেনা পাঠায়।

ব্রিটিশ থিংকট্যাংক ‘চ্যাটহ্যাম হাউজ’এর গবেষক পল মেলি ‘আল জাজিরা’কে বলছেন যে, শান্তিরক্ষীরা চলে যাবার ফলে মালির কিছু অঞ্চলে সরকার বিভিন্ন সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হবে এবং বিদ্রোহীদের সাথে সরকারের নতুন করে সংঘাত হতে পারে। কিন্তু পল মেলি এড়িয়ে গেছেন যে, এক দশকেও জাতিসংঘ মালিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি। মালি থেকে শান্তিরক্ষী বাহিনী সরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া এবং চীন সেই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। যা প্রমাণ করে যে, শক্তিশালী দেশগুলির স্বার্থ ছিল মালি থেকে সেনা প্রত্যাহারের পিছনে; যার ঠিক উল্টোটা ছিল মালিতে সেনা মোতায়েনের সময়। শান্তিরক্ষী মিশন যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না, সেই বাস্তবতাটা এক দশক ধরেই ছিল; কিন্তু ২০২৩ সালে শক্তিশালী দেশগুলির স্বার্থ একত্রিত হওয়ায় মিশনের সমাপ্তি ঘটছে। শান্তিরক্ষী মিশনের অর্থায়ন অনেক ক্ষেত্রেই মার্কিন কংগ্রেসের মর্জির উপরে নির্ভরশীল; যা আবার যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সাথে জড়িত। অর্থাৎ শক্তিশালী দেশগুলির ভূরাজনৈতিক স্বার্থ এবং তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হয়েছে তৃতীয় বিশ্বের ৩ শতাধিক সেনা; যারা অর্থের বিনিময়ে মালির মরুভূমিতে শক্তিশালী দেশগুলির স্বার্থরক্ষা করেছে।

Monday 3 July 2023

‘ব্রিকস’এর সম্প্রসারণের সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক ফলাফল

০৩রা জুলাই ২০২৩

কেপ টাউন। ০২রা জুন ২০২৩। 'ব্রিকস' পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক। নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে অনেক দেশ ‘ব্রিকস’এর সদস্য হতে চাইলেও পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প হয়ে ওঠার মতো অবস্থান ‘ব্রিকস’ তৈরি করতে পারেনি। ভারত এবং চীনের মতো কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টা দেশ ‘ব্রিকস’এর সদস্য হওয়ায় সংস্থার লক্ষ্যের দৃঢ়তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংস্থার রাজনৈতিক কর্মকান্ড এখনও কিছু বিবৃতির মাঝেই সীমাবদ্ধ।

গত ২রা জুন সাউথ আফ্রিকার কেপ টাউনে ‘ব্রিকস’ জোটের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়ে গেলো। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, পশ্চিমা বৈশ্বিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার উদ্দেশ্য নিয়ে হয়ে যাওয়া এই বৈঠকে প্রতিষ্ঠাতা দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং সাউথ আফ্রিকা সংস্থাটার সম্প্রসারণ নিয়ে কথা বলেছে। একসময় বিশ্বের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে থাকা পাঁচটা রাষ্ট্রের হাল্কা বন্ধনের উপরে গঠিত সংস্থা বলে মনে করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চীনের প্রচেষ্টায় এর কর্মকান্ড নির্দিষ্ট রূপ ধারণ করতে থাকে। আর ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়াও সংস্থাটাকে শক্তিশালী করতে আগ্রহী হয়েছে। গত বছর ‘ব্রিকস’এর এক অনলাইন বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়া ইয়ি বলেন যে, চীন চাইছে ‘ব্রিকস’এর সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া শুরু করতে এবং ধীরে ধীরে এব্যাপারে সদস্য দেশগুলির মাঝে একটা সমঝোতায় পৌঁছতে। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, চীনের এই প্রস্তাবের পর থেকে সদস্য দেশগুলি সম্প্রসারণের জন্যে নিজেদের মনোনীত দেশগুলির নামের তালিকা দিতে শুরু করেছে।

ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কিউবা, ডি আর কঙ্গো, কমোরুজ, গ্যাবন এবং কাজাখস্তান এবারের বৈঠকে ‘ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস’ আলোচনার জন্যে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল। এছাড়াও মিশর, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, গিনি বিসাউ এবং ইন্দোনেশিয়া এবারের বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেয়। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর সাংবাদিকদের বলেন যে, ‘ব্রিকস’এর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে যে, সংস্থার সদস্যপদ পেতে কি রকমের নীতি, মানদন্ড বা শর্ত থাকবে, এবং কোন পদ্ধতিতে সম্প্রসারণ হবে। আগামী অগাস্টে জোহান্সবার্গে ‘ব্রিকস’এর শীর্ষ বৈঠকের আগে এই ব্যাপারগুলি নিয়ে আলোচনা চলবে।

‘ব্রিকস’এ যোগ দেয়ার জন্যে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ রয়েছে; যার মাঝে আর্থিক বিনিয়োগই প্রধানতম। ‘ফিনানশিয়াল টাইমস’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, সৌদি আরব ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ বা ‘এনডিবি’র সদস্য হিসেবে যুক্ত হবে কিনা, সেব্যাপারে আলোচনা চলছে বলে ব্যাংকের এক বিবৃতিতে বলা হয়। ‘এনডিবি’ হলো ‘ব্রিকস’এর আর্থিক সংস্থা; যাকে কিনা বিশ্বব্যাংক এবং ‘আইএমএফ’এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রতিষ্ঠাতা দেশ রাশিয়ার অর্থনৈতিক সমস্যা ‘এনডিবি’র অর্থের উৎসকে চাপের মাঝে ফেলেছে; কারণ এই ব্যাংকে রাশিয়ার ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ইতোমধ্যেই ‘এনডিবি’ ‘ব্রিকস’এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, বাংলাদেশ এবং উরুগুয়েকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং ৩৩ বিলিয়ন ডলার এই দেশগুলিতে বিনিয়োগ করেছে। ব্যাংকের ডিরেক্টর জেনারেল আশওয়ানি মুথু এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, এই মুহুর্তে অর্থের যোগান সংস্থার জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ। একারণে চীনা মুদ্রা ইউয়ান এবং সাউথ আফ্রিকার মুদ্রা র‍্যান্ডে ব্যাংক অর্থ যোগাড় করছে।

‘ব্রিকস’এর সম্প্রসারণ একবার ইতোমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্সের ‘লে মন্ড’ পত্রিকার এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ এবং ‘গোল্ডমান সাকস’এর অর্থনীতিবিদ জিম ওনীল ২০০১ সালে যখন সর্বপ্রথম ভবিষ্যতের চারটা বড় অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেন, তখন তার মাঝে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চীন থাকলেও সাউথ আফ্রিকা ছিল না। অর্থাৎ চারটা দেশকে একত্রে ওনীল ‘ব্রিক’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার দীর্ঘ সময়ের কূটনীতির ফলাফলস্বরূপ দেশটা নতুন এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং এর নাম পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়ায় ‘ব্রিকস’। ওনীল বলেছিলেন যে, সাউথ আফ্রিকার এই সংস্থায় যুক্ত হওয়াটা অর্থহীন। তবে যদি দেশটাকে পুরো আফ্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে দেখা হয়, তাহলে ব্যাপারটা অন্যরকম। ওনীলএর এই চিন্তাটা সাউথ আফ্রিকার চিন্তাবিদেরা কিভাবে দেখছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ‘প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটি’র লায়াল হোয়াইট বলছেন যে, সাউথ আফ্রিকার ভবিষ্যৎ হলো আফ্রিকার বাজার ধরা; এখানে বাইরের কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিয়ে আসাটা বিপজ্জনক।

ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষক ইন্দ্রানি বাগচি ‘দ্যা টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক লেখায় বলছেন যে, ‘ব্রিকস’এর সম্প্রসারণ উভয় সংকট তৈরি করতে পারে। যেহেতু ‘ব্রিকস’এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণকে পাশ কাটিয়ে একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বব্যবস্থা চাইছে, সেহেতু রাশিয়া এবং চীন উভয়কেই সাবধান হতে হবে যে, ‘ব্রিকস’এর নতুন সদস্য দেশগুলির মাঝে কোন একটাকে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে কিনা। যুক্তরাষ্ট্র তার পুরোনো বন্ধু দেশগুলির সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েন হলে সেখান থেকে পরিস্থতি ঘুরিয়ে ফেলতে পরিপক্ক। তিনি বিশেষ করে সৌদি আরবের কথা উল্লেখ করেন।

অনেক প্রশ্ন থাকলেও ‘ব্রিকস’কে অনেকেই পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে দেখার চেষ্টা করছে। সাউথ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পান্ডর কেপ টাউনের বৈঠকে বলেন যে, করোনা মহামারির সময়ে ধনী দেশগুলি এবং বৈশ্বিক সংস্থাগুলি যখন উন্নয়নশীল দেশগুলিকে উপেক্ষা করেছিল, তখন ‘ব্রিকস’ এই দেশগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে। উন্নত দেশগুলি কথা দিয়ে কথা রাখেনি এবং তারা সকল দায় উন্নয়নশীল দেশগুলির উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। ডি আর কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফে লুতুনদুলা আপালা বলেন যে, তার দেশ নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরি করে পরিবর্তন আনার জন্যে ‘ব্রিকস’কে উৎসাহ যোগাবে; কারণ সামষ্টিক শান্তি এবং উন্নয়নে উন্নত দেশগুলির কোন রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা ‘দ্যা গ্লোবাল টাইমস’ বলছে যে, নতুন সদস্য যুক্ত হলে ‘ব্রিকস’ আরও শক্তিশালী হবে।

নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে অনেক দেশ ‘ব্রিকস’এর সদস্য হতে চাইলেও পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প হয়ে ওঠার মতো অবস্থান ‘ব্রিকস’ তৈরি করতে পারেনি। ভারত এবং চীনের মতো কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টা দেশ ‘ব্রিকস’এর সদস্য হওয়ায় সংস্থার লক্ষ্যের দৃঢ়তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংস্থার রাজনৈতিক কর্মকান্ড এখনও কিছু বিবৃতির মাঝেই সীমাবদ্ধ। তথাপি অর্থায়নের জন্যে চীনের উপর নির্ভরশীলতা এবং মার্কিন ডলার-কেন্দ্রিক পশ্চিমা পুঁজিবাদী আর্থিক ব্যবস্থাকে বাইপাস করতে না পারাটাও সংস্থার বড় দুর্বলতা। ‘ফিনানশিয়াল টাইমস’ বলছে যে, ‘ব্রিকস’এর ব্যাংক ‘এনডিবি’ এবং চীনা নেতৃত্বের ‘এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক’ বা ‘এআইআইবি’ ইতোমধ্যেই পশ্চিমা ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির চাপে পড়ে অর্থায়নের খরচ কমাতে রাশিয়াতে তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রমকে স্থগিত করেছে। ডলার-ভিত্তিক ঋণ নেয়াকে সহজ করতেই ‘এনডিবি’র নীতিতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে আবির্ভাবের কথা বললেও মার্কিন ডলারের উপরে নির্ভরশীলতাকে এড়াতে পারেনি ‘ব্রিকস’।

Saturday 1 July 2023

ফ্রান্সে আবারও বিক্ষোভ… সামাজিক অবিচার, নাকি দুর্বল রাষ্ট্রের উদাহরণ?

০১লা জুলাই ২০২৩

সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন এবং পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পর এবারের বর্ণবাদ-বিরোধী বিক্ষোভ শুধুমাত্র সামাজিক অবিচারকেই তুলে ধরে না, রাষ্ট্রের দুর্বলতাকেও সামনে নিয়ে আসে।

গত ২৭শে জুন ফ্রান্সের নঁতেরে শহরে ১৭ বছর বয়সী এক যুবককে পুলিশ গুলি করে হত্যা করার পর থেকে পুরো ফ্রান্স জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। ভিডিওতে ধারণ করা এই ঘটনায় দেখা যায় যে, পুলিশ একটা ট্রাফিক সিগনালে খুব কাছে থেকে কাউকে গুলি করছে। সকাল ৯টার দিকে দু’জন পুলিশ গাড়িটা আটকাবার পর চালক গাড়ি চালিয়ে চলে যাবার চেষ্টা করলে পুলিশ তার বুকে গুলি করে। প্রতিবাদের কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফ্রান্সের ‘সোশালিস্ট পার্টি’র নেতা অলিভিয়ের ফাউরে ‘বিবিসি’কে বলছেন যে, পুলিশের কথায় কেউ যদি না থামে, এর অর্থ এই নয় যে, তাকে গুলি করা যাবে। প্রত্যেক ব্যক্তিরই সুবিচার পাবার অধিকার রয়েছে।

নিহত যুবকের স্মরণে শোকমিছিল থেকেই শুরু হয় বিক্ষোভ। পহেলা জুলাই পর্যন্ত চার দিনের বিক্ষোভে ফ্রান্সজুড়ে ১৩’শ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভবন এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ছাড়াও বিভিন্ন দোকানপাটে লুটপাট হয়েছে। ফ্রান্সজুড়ে সাঁজোয়া গাড়িসহ প্রায় ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সরকার বলছে যে, কঠোর অবস্থান নেবার কারণে সহিংসতা কিছুটা হলেও কমে আসছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ এই বিক্ষোভকে অযৌক্তিক বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং নাগরিকদেরকে তাদের সন্তানদের বিক্ষোভের দায় নিতে বলেন। একইসাথে তিনি ‘টিকটক’ এবং ‘স্ন্যাপচ্যাট’এর মতো সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে সহিংসতা ছড়ানো বন্ধ করার পদক্ষেপ নেবার কথা বলেন। সংবেদনশীল তথ্য সোশাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে না দেয়ার জন্যে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকে তিনি দোষারোপ করেন।

নঁতেরে শহরের সরকারি উকিল পাসকাল প্রাশ সাংবাদিকদের বলেন যে, প্রাথমিক তদন্তে তার মনে হয়েছে যে, আইনগতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার যে শর্তগুলি রয়েছে, সেগুলি উপেক্ষিত হয়েছে। ‘আল জাজিরা’ বলছে যে, ফ্রান্সের আইন অনুযায়ী একজন পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার অর্থ হলো বিচারক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথেষ্ট শক্ত প্রমাণ পেয়েছেন। তবে বিচারকার্য শুরু করার আগে এতে যথেষ্ট সময় দেয়া হয়।

ফ্রান্সে অ-শ্বেতাঙ্গদের সুবিচার পাওয়া নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০০৫ সালে প্যারিসের কাছাকাছি এক স্থানে পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্যে উত্তর আফ্রিকার বংশোদ্ভূত দু’জন মুসলিম যুবক এক বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে লুকাতে গেলে বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভ তিন সপ্তাহ ধরে চলে এবং শেষ পর্যন্ত ফরাসি সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। সেই ঘটনায় দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হলেও ১০ বছরের দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সেই বিক্ষোভের পিছনে বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছিল; যার মাঝে ছিল মুসলিম সংখ্যালঘুদের মাঝে ব্যাপক বেকারত্ব এবং পুলিশের বৈষম্যমূলক জুলুম। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ৯/১১এর ঘটনার পর থেকে ফ্রান্সে মুসলিম-বিদ্বেষী চিন্তার প্রসারকেও সেই বিক্ষোভের একটা কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এবারের ঘটনাও মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধেই ঘটেছে। ‘বিবিসি’ বলছে যে, আলজেরিয় বংশোদ্ভূত নাহেল তার মায়ের একমাত্র সন্তান; যে কিনা পণ্য ডেলিভারি দেয়ার কাজ করতো। একইসাথে গত তিন বছর ধরে সে একটা রাগবি ক্লাবেও খেলতো। ইলেকট্রিশিয়ান হবার জন্যে একটা কলেজেও ভর্তি হয়েছিলো সে; যদিও কলেজে খুব বেশি একটা সময় সে দিতে পারেনি। নাহেলের বিরুদ্ধে পুলিশের কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকলেও অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গাড়ি চালাবার অভিযোগ ছিল। দরিদ্র্য পরিবারদের নিয়ে কাজ করা এনজিও ‘ওভাল সিটোইয়েঁ’র প্রধান জেফ পুয়েশ ‘বিবিসি’কে বলছেন যে, নাহেল সমাজে সকলের সাথে মিশে চলার মতো ছেলে ছিলো। মাদকাসক্তি বা অপরাধের সাথে জড়াবার মতো ব্যক্তি সে ছিলো না। নাহেলকে বহণকারী এম্বুলেন্সের মেডিকেল কর্মী মারুয়ানি বলছেন যে, তিনি নাহেলকে দেখেই চিনতে পেরেছেন এবং তিনি জানতেন যে এই ছেলে কারুর দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলার মতো নয়। নাহেলের মা ‘ফ্রান্স ৫ টিভি’র সাথে সাক্ষাতে বলেন যে, পুলিশ হয়তো তার ‘আরব চেহারা’ দেখেই তাকে হত্যা করতে চেয়েছে।

‘আল জাজিরা’ বলছে যে, যুবকের হত্যার ঘটনাটা ফ্রান্সে পুলিশের সাথে দরিদ্র্য এলাকার মানুষের উত্তেজনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফ্রান্সে অ-শ্বেতাঙ্গ যুবকদের বিরুদ্ধে পুলিশের কৌশল নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। এক যুবক ‘বিবিসি’কে বলছেন যে, প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের সহিংসতা চলছে; বিশেষ করে কেউ যদি আরব বা কৃষ্ণাঙ্গ হয়। নাহেলের আইনজীবী ইয়াসিনে বুজরুউ অবশ্য পুলিশের বর্ণবাদের বিষয়টাকে সামনে না এনে বলছেন যে, ফ্রান্সের আইন এবং বিচারব্যবস্থা পুলিশকে বিশেষ রকমের সুরক্ষা দিয়ে থাকে; যেকারণে অনেকেই নিজেকে বিচারের উর্ধ্বে মনে করতে থাকে। বুজরুউএর বর্ণবাদকে পাশ কাটিয়ে যাবার এই চেষ্টাটাকেই অনেকে মারাত্মক বলে আখ্যা দিচ্ছেন। ‘আল জাজিরা’র এক লেখায় নিউ ইয়র্কের ‘স্টোন ব্রুক ইউনিভার্সিটির’ প্রফেসর ক্রিস্টাল ফ্লেমিং বলছেন যে, ফ্রান্সের সমাজে বর্ণবাদের কারণে নাহেলের জীবন গেছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ জানেন যে, নাহেলের মৃত্যু ব্যাখ্যার বাইরে নয়। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত না তারা ফ্রান্সের বর্ণবাদকে স্বীকার করে না নেবেন, ততদিন পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। ৩০শে জুন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, সময় এসেছে ফ্রান্সের বর্ণবাদ এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর বর্ণবাদজনিত বৈষম্যের গভীর সমস্যাকে স্বীকার করা। পাল্টা বিবৃতিতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে।

‘দ্যা গার্ডিয়ান’এর এক লেখায় ফরাসি সাংবাদিক রোখায়া দিয়াল্লো বলছেন যে, ফ্রান্সের দারিদ্র্যপীড়িত শহরাঞ্চলে পুলিশের দ্বারা অপরাধগুলি দেশটার অনেকগুলি দাঙ্গার মূল কারণ। বহু বছর ধরে মিছিল, প্রতিবাদপত্র, অনুরোধ-আহ্বানে কোন কাজ না হওয়ায় একজন যুবকের সামনে সহিংসতা ছাড়া কোন পথ খোলা থাকে না। প্রশ্ন করতেই হয় যে, এতটা সহিংসতা না হলে নাহেলের হত্যাকান্ডকে নিয়ে কেউ কোন কথা বলতো? রোখায়া দিয়াল্লোর কথাগুলি ফ্রান্সের গভীরের এমন এক সমস্যার কথা তুলে ধরে, যা কিনা ফরাসি রিপাবলিকের সেকুলার স্তম্ভকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন এবং পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পর এবারের বর্ণবাদ-বিরোধী বিক্ষোভ শুধুমাত্র সামাজিক অবিচারকেই তুলে ধরে না, রাষ্ট্রের দুর্বলতাকেও সামনে নিয়ে আসে।