Friday 30 December 2016

২০১৭ সাল হতে যাচ্ছে নিয়ম ভাঙ্গার বছর

৩১শে ডিসেম্বর ২০১৬
এম ভি সি-চ্যাম্পিয়ন নামের রঙচঙ্গা এই জাহাজটি মার্কিন নৌবাহিনীর Military Sealift Command (MSC) নামের সংস্থার অধীন একটি জাহাজ, যার কাজ হচ্ছে সাবমেরিন এবং স্পেশাল ওয়ারফেয়ার-এ সহায়তা প্রদান। জাহাজটা দেখলে কেউ চিন্তা করবে না যে এটি সামরিক জাহাজ। এই সংস্থার জাহাজগুলি মূলতঃ বেসামরিক নাবিকেরা চালায়, যদিও মিশন পুরোপুরি সামরিক।

যুক্তরাষ্ট্রের Military Sealift Command (MSC) নামের যে সংস্থাটি আছে, তার কাজ হলো মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যে বিশ্বব্যাপী পরিবহণের কাজ করা এবং আরও অনান্য সাপোর্ট দেয়া। এক’শ-এরও বেশি জাহাজ রয়েছে এই সংস্থার। এই জাহাজগুলির মাঝে রয়েছে সাপ্লাই জাহাজ, ওশানোগ্রাফিক সার্ভে জাহাজ, টাগবোট, স্যালভেজ ভেসেল, সাবমেরিন টেন্ডার, মিসাইল ট্র্যাকিং জাহাজ, উভচর অভিযানের জাহাজ, কেবল লেইং জাহাজ, স্পেশাল ওয়ারফেয়ার জাহাজ, পরিবহণ জাহাজ, ইত্যাদি। তবে এই সংস্থার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এর জাহাজগুলির চালনা করার জন্যে প্রায় ১০ হাজার লোকের যে জনবল রয়েছে, তার প্রায় ৮৮% হলো বেসামরিক। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের বহরে খাবার, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ এবং ডেস্ট্রয়ার-ফ্রিগেট ইত্যাদি জাহাজগুলিতে জ্বালানি সরবরাহ করে এই জাহাজগুলি। তাদের সাবমেরিন ফ্লিটের চলাচলের সুবিধার জন্যে বিশ্বব্যাপী সমুদ্র তলদেশের ম্যাপিং করে এই সংস্থার সার্ভে জাহাজগুলি। রঙচঙ্গা কিছু ভাড়া করা জাহাজ রয়েছে এই সংস্থার যেগুলি মার্কিন স্পেশাল ফোর্স ব্যবহার করে বিভিন্ন গোপন মিশনে; বোঝার উপায় নেই যে সেগুলি সামরিক জাহাজ! তবে এই সংস্থার বড় একটি অংশ হলো পরিবহণ জাহাজ। যুক্তরাষ্ট্র যখন কোন দেশে যুদ্ধ করতে যায়, তখন সেখানে শুধু সৈন্যরা কিছু হাল্কা অস্ত্রসহ বিমানে গিয়ে অবতরণ করে। এরপর সেই দেশের যদি সমুদ্র বন্দর থাকে, সেখানে বাকি সকল ভারি অস্ত্র এবং গোলাবারুদ খুব দ্রুত পৌঁছে দেয় এই সংস্থার পরিবহণ জাহাজগুলি। এসব জাহাজে আর্টিলারি শেল, বিমান থেকে ফেলা বোমা, মিসাইল, এবং অনান্য গোলাবারুদসহ জ্বালানি, ট্যাঙ্ক, এপিসি, আর্টিলারি, গাড়ি, ট্রাক, ইত্যাদি সবসময় ভরে রাখা হয়। জাহাজগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নোঙ্গর করে রাখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ভারত মহাসাগরে দিয়েগো গার্সিয়া নামের একটি ব্রিটিশ দ্বীপ রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। এখানে ২০টি জাহাজ সবসময় নোঙ্গর করে রাখা হয়। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই জাহাজগুলি কোন সমুদ্রবন্দরে গিয়ে তাদের কার্গো নামিয়ে দেবে। এতে ভারত মহাসাগরীয় যেকোন দেশে খুব অল্প সময়ের মাঝেই তারা অপারেশনে যেতে সক্ষম। বুঝতে অপেক্ষা রাখে না যে মিশনগুলি পুরোপুরিভাবে সামরিক।
হুইলার নামের এই জাহাজটি নৌবাহিনীর জাহাজ, কিন্তু চালনা করে বেসামরিক লোকেরা। জাহাজটির কাজ হলো স্থলভাগ থেকে চার মেইল দূর থেকে পাইপের মাধ্যমে তেল সরবরাহ। বিশ্বের কোন স্থানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি করা হলে সেখানে যদি ভালো সমুদ্রবন্দর না থাকে, তাহলে এই জাহজের মাধ্যমে তেল সমুদ্রে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাঙ্কার থেকে স্থলভাগে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সামরিক মিশনে বেসামরিক লোকদের ব্যবহার তারা করতে পারে, কারণ কোনটা সকল সংজ্ঞা তাদের তৈরি। তারা অন্যদের জন্যে সংজ্ঞা তৈরি করে, যা তারা নিজেরা মানতে বাধ্য নন।
 
তাহলে প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ এরকম সামরিক মিশনে বেসামরিক লোকদের ব্যবহার করছে কেন? এর উত্তর পাওয়া যাবে সেই সংজ্ঞায় যে সংজ্ঞাটি আসলে শুধু অন্যদের জন্যে, তাদের জন্যে নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো আদর্শিক শক্তির দেশগুলি অন্যদের জন্যে সংজ্ঞা তৈরি করে বিশ্বে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে। বাকি বিশ্বের মানুষ ঐ সংজ্ঞার মাঝেই নিজেদের চিন্তাকে ধরে রাখে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের নৌবাহিনীতে জাহাজের যে ক্যাটাগরি ব্যবহার করা হয়, তা আটলান্টিকের ওপাড় থেকে সংজ্ঞায়িত হয়ে আসা। ডেস্ট্রয়ার-ফ্রিগেট-করভেট-ওপিভি ইত্যাদি জাহাজের সংজ্ঞা কোন দেশের নৌবাহিনীই বানাতে সক্ষম হয় না। অর্থাৎ এই সংজ্ঞায়িত করা কয়েকটি ক্যাটাগরির বাইরে কোন জাহাজ তৈরি করে না কেউ। যদি কেউ করে, সেটা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের কেউ করে। অন্ততঃ এটাই হয়ে আসছিলো এতোকাল।
ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়াতে নোঙ্গর করে আছে পরিবহণ জাহাজ, যার পেটের মাঝে রয়েছে বিপুল পরিমাণ রসদ। নির্দেশ পেলেই এশিয়ার যেকোন উপকূলের দিকে রওয়ানা হবে এই জাহাজগুলি। সামরিক পণ্যবাহী এই জাহাজগুলি বেসামরিক লোকেরা চালায়। সারা দুনিয়ার জন্যে সামরিক-বেসামরিক নিয়ম তৈরি করলেও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের বেলায় সেই নিয়ম মানে না।



ব্ল্যাক পাউডার নামের এই জাহাজটিও সামরিক জাহাজ; স্পেশাল ওয়ারফেয়ারে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্র নিজেরা এতকাল নিয়ম তৈরি করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কেউ কেউ তাদের তৈরি করা এসব নিয়ম ভঙ্গ করছে। গত ২৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র তার নিয়মের বাইরে যেতে দেখেনি কাউকেও। গত কয়েক বছর ধরে এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। ২০১৬-তে অনেক নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। আর ২০১৭ হতে যাচ্ছে নিয়ম ভাঙ্গারই বছর!

  যে সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্র আজ পড়েছে তা হলো তাদের সংজ্ঞার বাইরেও কেউ কেউ জাহাজ বানাচ্ছে। তাদের সংজ্ঞার ক্যাটাগরির মাঝে যে ব্যবধানগুলি রাখা হতো এতোকাল, সেই ব্যবধান মানা হচ্ছে না কোথাও কোথাও। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এখন যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে কোন দেশের নৌবাহিনী কতটা শক্তিশালী, তাহলে সবাই হিসেব করতে লেগে যায় যে কার কতটা ডেস্ট্রয়ার, কতটা ফ্রিগেট, কতটা করভেট, ইত্যাদি রয়েছে। কিন্তু এমন যদি জাহাজ থাকে যেটা এসব ক্যাটাগরিতে পড়ে না? সেই নৌবাহিনীকে মূল্যায়ন করা হবে কি করে? এরকম উদ্ভট সমস্যা তো যুক্তরাষ্ট্রের মতো আদর্শিক শক্তির মোকাবিলা করার কথা নয়; কারণ তারা তো সংজ্ঞা তৈরি করেন; অন্যের সংজ্ঞার পাঠোদ্ধারের চেষ্টায় থাকেন না কখনও। অন্ততঃ এটা তাদের গত ২৫ বছরে করতে হয়নি। এখন সেই সংজ্ঞা পরিবর্তন হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে; পরিবর্তিত হচ্ছে ‘নিয়ম’। চেনাজানা ক্যাটাগরি সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল থাকে। সেটার উপরে ভিত্তি করে শত্রুকে মোকাবিলার একটা পরিকল্পনাও থাকে। কিন্তু ক্যাটাগরি মানা না হলে তো পুরো পরিকল্পনাই সমস্যায় পড়ে যায়! এতকালের পরিকল্পনায় কেউ পানি ঢেলে নষ্ট করে দিলে অনুভূতিটা সুখকর হবার কথা নয়।

পশ্চিমাদের তৈরি করা ‘নিয়ম’ এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। ‘নিয়ম’কে এখন নিয়মিতভাবে ‘অনিয়ম’ করা হচ্ছে। কিছুতেই যেন এগুলি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বের উপরে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিনিধিত্বকারী যুক্তরাষ্ট্রের যে নিয়ন্ত্রণ একসময় ছিল, তা এখন বিরাট প্রশ্নের মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়াই নিয়ম ভাঙ্গা হচ্ছে; আবির্ভাব হচ্ছে নতুন নিয়মের। গত ক’বছরে এসব ‘নিয়ম-ভাঙ্গা’ নিয়ম বেড়েই চলেছে। ২০১৬ সালে এসব অনেক দেখা গেছে। আর ২০১৭ সাল হতে যাচ্ছে নিয়ম ভাঙ্গার বছর।

Friday 23 December 2016

একুশ শতকে মেধা কোন ফ্লাইটে উঠবে?

২৩শে ডিসেম্বর ২০১৬

 
প্রযুক্তিগত দিক থেকে দক্ষ লোকদেরকে বেশি বেশি করে দরকার হচ্ছে; বেশি করে লাগছে পাইলটবিহীন ড্রোন অপারেটর; লাগছে রাডার, সোনার, ইলেকট্রনিক্স কাউন্টারমেজার, স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন টেকনোলজি অপারেট করতে পারার মতো লোক; যুদ্ধবিমান-যুদ্ধজাহাজ-ট্যাঙ্কের অভ্যন্তরের মাল্টি-ফাংশন ডিসপ্লে বুঝে উঠতে পারার মতো লোক; স্মার্ট বোমা বোঝার মতো লোক, ইত্যাদি। তবে প্রযুক্তিগত এই সকল যন্ত্রপাতি ডিজাইন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং-এ লাগছে সবচাইতে মেধাবী লোকগুলি, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলিতে জনসংখ্যা স্থবিরতার কারণে চলছে এক বিশাল শূণ্যতা। ঠিক এই স্থানটিতেই, অর্থাৎ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিতেই বাংলাদেশের মেধাবী সন্তানেরা মোটা টাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ পেয়েছেন।

কয়েক যুগ ধরে পশ্চিমের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখেছে বাংলাদেশসহ তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি। এদেশের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে পাশ করা মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর দলে দলে পাড়ি জমিয়েছে পশ্চিমের দেশগুলিতে। তাদের প্রযুক্তিগত গবেষণায় যেসকল স্থানে মেধাবী লোকের অভাব ছিল, সেসব স্থান পূরণ করেছে বাংলাদেশের তরুণরা। পশ্চিমের জনসংখ্যা বহুদিন ধরেই স্থবির রয়েছে। এমতাবস্থায় সেই দেশগুলির পক্ষে মেধাবী কেন, যেকোন ধরনের মানবসম্পদ তৈরি করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবসম্পদ ছাড়া বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো অবস্থানও তারা হারাতে বসেছে। রোবোট মানুষের স্থলাভিষিক্ত হলেও সে তার সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেই পরিপালন করে। কাজেই সংখ্যা এবং মানের দিক থেকে মানবসম্পদের নিম্নমুখী অবস্থানের কারণে রোবোট সৃষ্টি করার সক্ষমতাতেও ঘাটতি আসতে বাধ্য। আর যেহেতু দুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো সক্ষমতা অর্জনে সামরিক সক্ষমতার কোন বিকল্প নেই, কাজেই সেক্ষেত্রে মানবসম্পদ কমানো যথেষ্ট বিপজ্জনক। কিন্তু সামরিক বাহিনীতে মানবসম্পদ কমানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজটিই পশ্চিমা দেশগুলি আজ করতে বাধ্য হচ্ছে; রোবোটের উপরে ঝুঁকতে হচ্ছে প্রয়োজনের চাইতে বেশি। প্রযুক্তিগত দিক থেকে দক্ষ লোকদেরকে বেশি বেশি করে দরকার হচ্ছে; বেশি করে লাগছে পাইলটবিহীন ড্রোন অপারেটর; লাগছে রাডার, সোনার, ইলেকট্রনিক্স কাউন্টারমেজার, স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন টেকনোলজি অপারেট করতে পারার মতো লোক; যুদ্ধবিমান-যুদ্ধজাহাজ-ট্যাঙ্কের অভ্যন্তরের মাল্টি-ফাংশন ডিসপ্লে বুঝে উঠতে পারার মতো লোক; স্মার্ট বোমা বোঝার মতো লোক, ইত্যাদি। তবে প্রযুক্তিগত এই সকল যন্ত্রপাতি ডিজাইন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং-এ লাগছে সবচাইতে মেধাবী লোকগুলি, যেখানে জনসংখ্যা স্থবিরতার কারণে চলছে এক বিশাল শূণ্যতা। ঠিক এই স্থানটিতেই, অর্থাৎ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানটিতেই বাংলাদেশের মেধাবী সন্তানেরা মোটা টাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের প্রযুক্তিগত এবং সামরিক সক্ষমতার মূলটিই এখানে। এখানেই ‘লাল-সবুজ’ ম্লান হয়েছে, আর পতপত করে উড়েছে ‘স্টারস এন্ড স্ট্রাইপস’ – কারুর অন্তরে ব্যাথা লাগেনি; বরং এগুলিকে ‘দেশ’এর গর্ব বলেই প্রচার করা হয়েছে। অথচ পশ্চিমে অনেকদিন আগে থেকেই মুসলিম দেশগুলির সক্ষমতা কর্তন করার জন্যে কথা বলা হচ্ছিল, যা কিনা এদেশের মানুষ জানেই না!



শুধু অর্থনীতিতে পেটের খোরাকই মিলবে, অন্য কিছু নয়। একটা শক্তিশালী রাষ্ট্র তৈরির স্বপ্ন কোনদিনও বাস্তবায়ন হবে না। “পাওয়ারফুল আগামীর অদম্য বাংলাদেশ” তৈরি করতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। সেমিকনডাকটর, স্যাটেলাইট টেকনলজি, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক্স, পেট্রোকেমিক্যালস, মেটালার্জি, কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালস, ইত্যাদি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সময় এখনই। রযুক্তিগত উতকর্ষ সাধনে শুধু প্রযুক্তি কেনার ব্যবস্থা করলেই চলবে না; প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেবার মতো জনশক্তি প্রয়োজন। মেধা এক্সপোর্ট অনেক হয়েছে; এবারে উলটো ফ্লাইট ধরার সময় হয়েছে।

অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এখন এশিয়ার যুগ চলছে। কিন্তু শুধু অর্থনীতিতে পেটের খোরাকই মিলবে, অন্য কিছু নয়। একটা শক্তিশালী রাষ্ট্র তৈরির স্বপ্ন কোনদিনও বাস্তবায়ন হবে না। “পাওয়ারফুল আগামীর অদম্য বাংলাদেশ” তৈরি করতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। সেমিকনডাকটর, স্যাটেলাইট টেকনলজি, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক্স, পেট্রোকেমিক্যালস, মেটালার্জি, কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালস, ইত্যাদি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সময় এখনই। সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিযোগীর অভাব নেই, যারা চেয়ে চেয়ে দেখবে না। প্রযুক্তিগত উতকর্ষ সাধনে শুধু প্রযুক্তি কেনার ব্যবস্থা করলেই চলবে না; প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেবার মতো জনশক্তি প্রয়োজন। ঠিক যে কাজটি এতোদিন পশ্চিমা দেশগুলি করেছে, সেটাই এখন করতে হবে এখানে – মেধাবী লোকগুলিকে ব্যবহার করতে হবে। টাকার বিনিময়ে মেধা বিক্রির মতো সস্তা চিন্তা থেকে বের হবার সময় এখন এসেছে। অর্থের বিনিময়ে স্থবির অর্থনীতির অংশীদার হওয়া নয়, বরং একুশ শতকের বাঘের গর্জনে গলা মেলানোর সুযোগ পাওয়াটাই হওয়া উচিত স্বপ্ন। অনেক মেধাবীরা এই সুযোগ হারাবেন; আবার সেরা মেধাবী না হয়েও অনেকে সময়মতো ট্রেনে চেপে বসার কারণে গন্তব্যে পৌঁছবেন।

২০৩০ সালের বাংলাদেশের সাথে আজকের বাংলাদেশের কোন মিল থাকবে না। যারা সেই দিনটিকে দেখতে পাচ্ছেন, তাদের কাছে এই মুহুর্তের প্রযুক্তির উতকর্ষতা সাধন দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। মেধা এক্সপোর্ট অনেক হয়েছে; এবারে উলটো ফ্লাইট ধরার সময় হয়েছে। ভারত মহাসাগর অনেক বিশাল এবং গভীর; হিমালয় পর্বত বহু উঁচু; এশিয়া এবং আফ্রিকার ভূমি অকল্পনীয় বিশাল এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ – এই সকলকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ। এই আহ্বান যারা শুনতে পাবেন এবং অন্তরে অনুভব করবেন, তারাই একুশ শতকের সেই বাঘ।

Monday 5 December 2016

দেশের আকাশ নিরাপত্তা আজ কোথায়?

০৬ ডিসেম্বর ২০১৬
১৯৯১ সালের ঘুর্নিঝড়ের সময় কিছু লোক বিমান বাহিনীকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিয়ে সৃষ্টিকর্তার উপরে 'দোষ' চাপানোর চেষ্টায় ছিল। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর বিমানকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে কিছু লোক নাট-বল্টুর উপর দিয়ে চালিয়ে নেবার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্র-বিরোধী কর্মকান্ডে দায়িত্ব এড়িয়ে বেঁচে যাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।

১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ের কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা। যারা তখন জন্মেনি বা বয়সে খুব বেশি ছোট ছিল, তারা অগ্রজদের কাছ থেকে জেনেছেন সেই দুর্যোগের দিনটির কথা। সেদিনের বহু দুর্যোগের মাঝে একটি দুর্যোগের কথা অনেকেই মনে রাখেনি, বা মনে রাখার চেষ্টা করেনি। চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে ওই মুহুর্তে অবস্থান করছিলো বিমান বাহিনীর বিরাট সংখ্যক ফাইটার জেট। ঝড়ের পরপর বিমান বন্দর থেকে তোলা আলোকচিত্রে গোটা চল্লিশেক যুদ্ধবিমানের তালগোল পাকানো চিত্র চোখে পড়ে। কয়েক লক্ষ মানুষের মৃতদেহের মাঝে সেই ছবিগুলি গৌণ হয়ে গেলেও এটা বোঝা প্রয়োজন যে ওই মুহুর্তে রাষ্ট্র ছিল ভয়ংকরভাবে দুর্বল। শুধু দুর্যোগের কারণেই নয়, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হবার কারণেও। আর এই ধ্বংসজজ্ঞকে শুধু সৃষ্টিকর্তার উপর চাপিয়ে কিছু লোক পার পাবার চেষ্টা করেছিল সেদিন। এদের বিচার হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু রাষ্ট্রের যে ক্ষতি তারা সেদিন করেছিল, সেটা এই লোকগুলিকে শতবার শিরচ্ছেদ করলেও পোষাবে না! দেশের প্রতিরক্ষাকে এক সুযোগে পঙ্গু করার উদ্দেশ্যেই এতগুলি বিমানকে ঘুর্ণিঝরের পূর্বাভাষের পরেও চট্টগ্রাম থেকে সরাবার কোনরূপ চেষ্টাই করা হয়নি। এটাই হলো রাষ্ট্রদ্রোহিতার উতকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা সেই ঘটনা থেকে কিছু শিখেছিলাম কিনা। এদেশের মানুষের হাত দিয়েই বিদেশী শক্তি যে এই দেশকে দুর্বল করতে পারে, সেটা আমরা কি বুঝেছিলাম কিনা। খুব যে কিছু একটা এখনো বুঝতে পারিনি, সেটার উদাহরণ কিন্তু আমরা সেদিন পেয়েই গেলাম।
  
যেদিন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ফাইটার বিমানগুলি উড়বে, সেদিন ওই ভবনের কেউ যে বিমানের দিকে বা ফুয়েল ডিসপেন্সারের দিকে একটা ঢিল ছুঁড়বে না, বা সিগারেটের লাইটখানা নেভাতে ভুলে যাবে না বা পকেট থেকে ভুল করে তার কুকুরের জন্যে জমিয়ে রাখা হাড্ডি রানওয়েতে পড়ে যাবে না, সেটার গ্যারান্টি আমাদের কে দিচ্ছে? রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে রাষ্ট্রের জন্যে পুরোপুরি বিশ্বস্ত লোকদের ছাড়া আর কাউকে দায়িত্ব দেয়ার কোনরূপ সুযোগ নেই – তার যতবড় পশ্চিমা ডিগ্রীই থাকুক না কেন!

নাট-বল্টু নয়, নাট-বল্টু যার হাতে ছিল তার কথা বলছি…

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমান তুর্কমেনিস্তানে জরুরী অবতরণ করার সাথে সাথে যেসকল প্রশ্ন সামনে আসতে শুরু করেছিল, তার মাঝে প্রথমটিই ছিল – নিরাপত্তায় কোনরকম ঘাটতি ছিল কি না। প্রধানমন্ত্রীর বিমানে নিরাপত্তার সমস্যা মানে যেকোন বিমানেই এই সমস্যা হতে পারে। আর যদি মনুষ্য-সৃষ্ট কারণে নাট-বল্টু হাল্কা হয়ে গিয়ে থাকে, তার মানে হলো নিরাপত্তার ঘাটতি খুঁজতে আমাদের বিমান বন্দরের নিরাপত্তার দিকে তাকাতে হবে। কিছুদিন আগেই পশ্চিমাদের প্রবল চাপে বিমান বন্দরের নিরাপত্তা তুলে দেয়া হলো বিদেশী কোম্পানির হাতে। এখন সেই সিদ্ধান্তের পর যদি নিরাপত্তার এই অবস্থা হয়, তাহলে প্রশ্ন আসবে – ওই নিরাপত্তা কাদের জন্যে ছিল? রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের নিরাপত্তা যেই নিরাপত্তা-বিষয়ক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আসে না, সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল, তা কি এখন প্রমাণ করার কিছু বাকি থাকে? বিমান বন্দরের বিশেষ কিছু এলাকার দখল নিয়েই পশ্চিমারা ক্ষান্ত ছিল – কারণ সেটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। এই দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব অন্যের হাতে দিলে আমরা ‘হোলি আর্টিসান’ ছাড়া ভালো কিছু আশা করতে পারি না।

উপরেই উল্লেখ করেছি যে এই দেশের মানুষের হাত দিয়েই দেশের বিরুদ্ধে কাজ করানো হয়ে থাকে। নাট-বল্টু হাল্কা করার একটা লোকও যদি সেই ভবনের ভেতর রয়ে যায়, এটা যে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে একটা ভয়াবহ হুমকি, তা আজ দিনের মতো পরিষ্কার। আর আমাদের বিমান বন্দরের সাথে একই রানওয়ে ব্যবহার করছে আমাদের বিমান বাহিনী। একটা ঢিল মারলেও একটা ফাইটার প্লেনের উপরে গিয়ে পড়বে। এটা বুঝতে কি আমাদের কোয়ান্টাম ফিজিক্স পড়ে আসতে হবে? যেদিন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ফাইটার বিমানগুলি উড়বে, সেদিন ওই ভবনের কেউ যে বিমানের দিকে বা ফুয়েল ডিসপেন্সারের দিকে একটা ঢিল ছুঁড়বে না, বা সিগারেটের লাইটখানা নেভাতে ভুলে যাবে না বা পকেট থেকে ভুল করে তার কুকুরের জন্যে জমিয়ে রাখা হাড্ডি রানওয়েতে পড়ে যাবে না, সেটার গ্যারান্টি আমাদের কে দিচ্ছে? রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে রাষ্ট্রের জন্যে পুরোপুরি বিশ্বস্ত লোকদের ছাড়া আর কাউকে দায়িত্ব দেয়ার কোনরূপ সুযোগ নেই – তার যতবড় পশ্চিমা ডিগ্রীই থাকুক না কেন! এই একই রানওয়ে দিয়ে ক’দিন আগেই চীনা প্রেসিডেন্টের বিমান নেমেছিল। সেই নেতার বিমানকে এসকর্ট করেছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফাইটার বিমান – এ তো বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর মতো ব্যাপার হয়ে গেলো। মোটকথা যার উদ্দেশ্য ক্ষতি করা, সে যে কোন সময়েই সেটা করতে পারে; যে কোন উপায়েই করতে পারে। এখানে শুধু উপায় ঠেকিয়ে কাজ হবে না; মানুষ ঠিক করতে হবে। আর মানুষ ঠিক করতে গেলে কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে হবে।
বিমান বাহিনীর সবচাইতে বড় ঘাঁটি ‘বিএএফ বঙ্গবন্ধু’কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনই জাতীয় পতাকা প্রদান করে আসলেন। এর মাঝে মেইনটেন্যান্স, সিকিউরিটি, রাডার অপারেটর, সাপ্লাই চেইন, ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত। এই পুরো চেইন-এর একটা স্থানে ফাটল মানে পুরো ঘাঁটির প্রতি হুমকি। সবচাইতে বড় এই ঘাঁটি যে সম্ভাব্য রাষ্ট্রদ্রোহীদের আড্ডাখানা থেকে আড়াই ফুট দূরে, সেটা আমরা কতটুকু চিন্তা করে দেখেছি? সিভিল এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি বিদেশী এজেন্সির ‘নিরাপদ’ হাতে তুলে দিলে দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বিমান তখন রাষ্ট্রদ্রোহীদের আড্ডাখানা থেকেই তো উড়বে।


রাষ্ট্রীয় কাজ কি সামরিক না বেসামরিক?

বিমান বাহিনীর সবচাইতে বড় ঘাঁটি ‘বিএএফ বঙ্গবন্ধু’কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনই জাতীয় পতাকা প্রদান করে আসলেন। এখানে ঘাঁটি বলতে বোঝানো হয়েছে ঘাঁটিকে যারা সচল রাখে সেই বিমান-সেনারা; মানে গ্রাউন্ড-ক্রু। এর মাঝে মেইনটেন্যান্স, সিকিউরিটি, রাডার অপারেটর, সাপ্লাই চেইন, ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত। এই পুরো চেইন-এর একটা স্থানে ফাটল মানে পুরো ঘাঁটির প্রতি হুমকি। ভারতের পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে জঙ্গী হামলার কথা আমরা এখনও ভুলে যাইনি। আর আমাদের সমস্যা তো আরও ব্যাপক। সবচাইতে বড় এই ঘাঁটি যে সম্ভাব্য রাষ্ট্রদ্রোহীদের আড্ডাখানা থেকে আড়াই ফুট দূরে, সেটা আমরা কতটুকু চিন্তা করে দেখেছি? সবচাইতে বড় সিভিল এবং সবচাইতে বড় মিলিটারি এয়ারপোর্ট তো এখানে একইসাথে। এখন কেউ কি বলবেন যে সিভিল আর মিলিটারি এয়ারপোর্ট আলাদা করে ফেলার জন্যেই এই লেখার অবতারণা? তাহলে সিভিল এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি কি বিদেশী এজেন্সির ‘নিরাপদ’ হাতে তুলে দেয়া হবে? দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বিমান তখন রাষ্ট্রদ্রোহীদের আড্ডাখানা থেকেই উড়বে, তাই তো? একটু খেয়াল করে দেখুন তো – এটাই আজ হচ্ছে কিনা? সামরিক-বেসামরিক বিভেদ তৈরি করে আমরা এমন একটা বাজে অবস্থার অবতারণা করেছি, যা থেকে বের হবার কোন তরিকা আমরা পাচ্ছি না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিমানের নাম হলো – ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’, অর্থাৎ সেটা বিমান বাহিনীর বিমান। রাষ্ট্রনায়ককে রক্ষা করা রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার একটা অংশ। তাই বিমান বাহিনীর হাতে তাদের দেশের প্রেসিডেন্টের বিমান। যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করা উদ্দেশ্য নয়; উদ্দেশ্য হচ্ছে মনে করিয়ে দেয়া যে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার মাঝে কোন সামরিক-বেসামরিক ব্যাপার নেই; রাখা যাবে না। বিমান বন্দরের যেকোন কোণায় নিরাপত্তার চ্যুতি হলো রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় চ্যুতি। আমরা আজ যদি প্রধানমন্ত্রীর বিমানের নাট-বল্টু খোলাকে মেনে নিই, তাহলে মিগ-২৯-এর দিকে ঢিল ছোঁড়াকে তো খেলা হিসেবেই দেখবো; তাই না? এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না।
ই একই রানওয়ে দিয়ে ক’দিন আগেই চীনা প্রেসিডেন্টের বিমান নেমেছিল। সেই নেতার বিমানকে এসকর্ট করেছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফাইটার বিমান – এ তো বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর মতো ব্যাপার হয়ে গেলো। মোটকথা যার উদ্দেশ্য ক্ষতি করা, সে যে কোন সময়েই সেটা করতে পারে; যে কোন উপায়েই করতে পারে। এখানে শুধু উপায় ঠেকিয়ে কাজ হবে না; মানুষ ঠিক করতে হবে। আর মানুষ ঠিক করতে গেলে কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে হবে।


প্রথমতঃ যে পশ্চিমারা এই রাষ্ট্রের অংশ নয় এবং এই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করে না, তাদের হাতে বিমান বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়ে যে আমরা ভুল করেছি, সেটা তো বুঝতে বাকি নেই। এতে শুধু যেসব সাম্রাজ্যবাদীদের চাপে এটা করা হয়েছে, তাদের স্বার্থই রক্ষিত হচ্ছে।

দ্বিতীয়তঃ বিমান বন্দরের ওই ভবনকে রাষ্ট্রদ্রোহীদের আড্ডাখানা হিসেবে পোষা যাবে না। আমরা এফ-৭ স্যাবোটাজ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না। এদেশী লোক দিয়ে বিদেশী স্বার্থ রক্ষা করার দিন শেষ। তারা যতো শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের পেছনে যতো শ্রমিক সংগঠকই থাকুক না কেন, এদের শেকড় উপড়াতে হবেই। জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে ছাড় দেবার প্রশ্নই আসে না।

তৃতীয়তঃ যে রানওয়ে ব্যবহার করে দেশের সামরিক বিমান এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ লোকজনের বিমান ওড়ে, সেই রানওয়েকে সামরিক-বেসামরিক বিভেদের সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা থেকে বাদ দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত রানওয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অংশ হতে হবে; পুরোটার নিরাপত্তা একই সূত্রে গাঁথা হতে হবে। পুরোটা একটা শরীরের মতো কাজ করবে; শরীরের এক অংশে চিমটি কাটলে সারা শরীর টের পাবে এবং সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবে।

চতুর্থতঃ নাট-বল্টুর উপর দোষ চাপানোর মানে কি? অর্থাৎ আবারও সেই ১৯৯১-এর মতো সৃষ্টিকর্তার উপর দিয়ে চালিয়ে নেবার চেষ্টা নাকি? দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া এই ক্ষেত্রে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ‘আমার অধীনে এগুলি হয়েছে, তবে আমি জানতাম না’ – এধরনের যুক্তি অবান্তর। জাতীয় নিরাপত্তা যেখানে ভূলুন্ঠিত, সেখানে এধরণের গা-বাঁচানো কথা শুনতে আমরা প্রস্তুত থাকবো কেন?

‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের পথে আমরা যদি এসব আবর্জনা পেছনে জমিয়ে রেখে সামনে এগুনোর চেষ্টা করি, তাহলে আমরা হোঁচট খেতে বাধ্য। বিমান বন্দর এবং বিমান বাহিনী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলিকে আলাদা করে দেখতে গেলে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেয়াও সম্ভব হবে না। এই সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরা রাষ্ট্রকে করবে দুর্বল। এই রাষ্ট্রের অতি-গুরুত্বপূর্ণ এই ‘গেইটওয়ে’র নিরাপত্তা এই রাষ্ট্রের হাতেই থাকতে হবে।

Friday 2 December 2016

সৃজনশীলতাকে আমরা কি করে এগিয়ে নেব?

০৩ ডিসেম্বর ২০১৬
সইচিরো হনডা জাপানের বিখ্যাত হনডা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৪৬ সালে তিনি একটি মোটরসাইকেল তৈরি করেন, যা আসলে ছিল একখানা ইঞ্জিন বসানো বাইসাইকেল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর জাপানের সমাজে আবারো উঠে দাঁড়াবার যে বিপুল আকাংক্ষা ছিল, সেটার মাধ্যমে এই ইঞ্জিন-লাগানো বাইসাইকেল থেকে হনডা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচাইতে বড় মোটরসাইকেল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজ চাইছিলো হনডা মোটরসাইকেল তৈরি করেন, সন্ত্রাসীসের অস্ত্র নয়।


সৃজনশীলতাকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না

বাংলাদেশ তথা পুরো বিশ্বেই তথাকথিত জঙ্গীবাদের কথা যখন আমরা টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় দেখি, তখন এমন কিছু মানুষের কাহিনী আমরা জানতে পারি, যারা তাদের high-tech জ্ঞানকে ভুল পথে প্রবাহিত করে বহু মানুষের হত্যাকান্ডের কারণ হয়েছে। এরা এই সমাজ থেকেই তাদের সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নেবার জন্যে ভুল দিকনির্দেশনা পেয়েছে বলেই এটা হয়েছে। সমাজ চাইলে এই সৃজনশীলতা মানুষের কাজে লাগতো। একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। সইচিরো হনডা (Soichiro Honda) ছিলেন জাপানের বিখ্যাত হনডা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন মোটরগাড়ি কারখানার মেকানিক। পরে ইঞ্জিনের পিস্টন তৈরি করার কারখানা করেন এবং পরবর্তীতে নিজেই অটোমোবাইল কারখানা দিয়ে ফেলেন। তার অটোমোবাইল কারখানা করার শুরুতে ১৯৪৬ সালে তিনি একটি মোটরসাইকেল তৈরি করেন, যা আসলে ছিল একখানা ইঞ্জিন বসানো বাইসাইকেল; আর এর ফুয়েল ট্যাংকটা ছিল পানির বোতল দিয়ে তৈরি। উদ্ভট শোনাতে পারে তার এই প্রথম মোটরসাইকেলের কথা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর জাপানের সমাজে আবারো উঠে দাঁড়াবার যে বিপুল আকাংক্ষা ছিল, সেটার মাধ্যমে এই ইঞ্জিন-লাগানো বাইসাইকেল থেকে হনডা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচাইতে বড় মোটরসাইকেল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজ চাইছিলো হনডা মোটরসাইকেল তৈরি করেন, সন্ত্রাসীসের অস্ত্র নয়।

বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় বহু নতুন নতুন আবিষ্কারের কাহিনী আসে নিয়মিতই। কিন্তু রাষ্ট্র কি সেই আবিষ্কারগুলিকে বুঝতে পারে? আবার যেহেতু সেই আবিষ্কারকেরা এই সমাজ থেকেই আবির্ভূত, প্রশ্ন আসবে যে সমাজের কোন ধরনের চিন্তা তাদেরকে এই বিশেষ আবিষ্কারের দিকে মনোনিবেশ করালো? সেই চিন্তাটা সমাজের বা‌‌ রাষ্ট্রের কি আসলেই কাজে লাগবে? নাকি মানুষের কাজে লাগে না – এমন কোন আবিষ্কারের চিন্তা সমাজ থেকে সেই মানুষটি পাচ্ছে? যদি এরকম ব্যর্থ আবিষ্কারের কাহিনী লেখার জন্যেই এই সমাজের বা‌‌ রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে আজ অথবা কাল যেকোন সময়েই হোক, এই আবিষ্কারকের দল বিভ্রান্ত হতে বাধ্য! আর বিভ্রান্ত এই আবিষ্কারকেরাই হবে সমাজের তথা রাষ্ট্রের জন্যে হুমকি স্বরূপ। যেহেতু এই সমাজ এই আবিষ্কার বোঝেনা, এই আবিষ্কারের চিন্তা সমাজের কোন চিন্তার ফলাফল সেটাও সে বোঝেনা, তাই যারা এই সমাজকে বা রাষ্ট্রকে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তারাই এই আবিষ্কারকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করবেন – এটাই স্বাভাবিক। এমনকি দরকার হলে সেই আবিষ্কারকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে বা‌‌ রাষ্ট্রকে দুর্বল থেকে আরও বেশি দুর্বল করে তুলবে। আমরা আমাদের intellectual ability-তে ঘাটতি কারণে কিছুই বুঝতে ব্যর্থ হবো।
  
বরিশালের আজোপাড়াগাঁয়ের এক সৃজনশীল ইঞ্জিনিয়ারের স্বপ্নের জেট ইঞ্জিন কি ঢাকার এক শিল্পপতির জেট বিমানের স্বপ্নের সাথে মিলে যায়? চট্টগ্রামের এক মোটরসাইকেল নির্মাতার স্বপ্নের সাথে রাজশাহীর এক তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের জ্বালানি সাশ্রয়ী মোটরসাইকেলের কি মিল খুঁজে পাওয়া যায়? গাজীপুরের কোন ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারারের স্বপ্নের সাথে খুলনার কোন স্পাইং ডিভাইস আবিষ্কারকের স্বপ্নের কি মিল হয়? ইঞ্জিন, ড্রোন, সী-প্লেন, রকেট, হাই-টেক কেমিক্যাল, ইত্যাদি যে কোন জিনিসই সমাজের বিভিন্ন মানুষের স্বপ্নের যোগাযোগ করে দিতে পারে। কিন্তু এখানে আসল প্রভাবক হবে রাষ্ট্র।

রাষ্ট্রকে স্বপ্ন দেখাতে হবে, হতে হবে স্বপ্নের যোগাযোগের মাধ্যম

আমাদের শিল্পপতিরা এদেশের ব্লু ইকনমি গড়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারেন। সমাজের সৃজনশীল মানুষেরাও কি রাষ্ট্রের জন্যে কাজ করার স্পৃহা পান? একজন মানুষ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে কি আরেকজনের স্বপ্নের সাথে মিল খুঁজে পান? একজনের স্বপ্ন কি আরেকজনের স্বপ্ন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আরও বেশি দ্রুত সামনে এগুতে থাকে? বরিশালের আজোপাড়াগাঁয়ের এক সৃজনশীল ইঞ্জিনিয়ারের স্বপ্নের জেট ইঞ্জিন কি ঢাকার এক শিল্পপতির জেট বিমানের স্বপ্নের সাথে মিলে যায়? চট্টগ্রামের এক মোটরসাইকেল নির্মাতার স্বপ্নের সাথে রাজশাহীর এক তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের জ্বালানি সাশ্রয়ী মোটরসাইকেলের কি মিল খুঁজে পাওয়া যায়? গাজীপুরের কোন ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারারের স্বপ্নের সাথে খুলনার কোন স্পাইং ডিভাইস আবিষ্কারকের স্বপ্নের কি মিল হয়? ইঞ্জিন, ড্রোন, সী-প্লেন, রকেট, হাই-টেক কেমিক্যাল, ইত্যাদি যে কোন জিনিসই সমাজের বিভিন্ন মানুষের স্বপ্নের যোগাযোগ করে দিতে পারে। কিন্তু এখানে আসল প্রভাবক হবে রাষ্ট্র।

রাষ্ট্র তার চিন্তাকে প্রতিষ্ঠা করে, নিরাপত্তা দেয় এবং বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। সেটাই হচ্ছে রাষ্ট্রের লক্ষ্য। রাষ্ট্র যখন তার লক্ষ্যের পিছনে ছুটবে, তখন সমাজের শিল্পপতি, আবিষ্কারক, চিন্তাবিদ, এবং অন্যান্য সকলেই একই লক্ষ্যের পিছনে ছুটবে। একই লক্ষ্যের পিছনে ছোটা মানুষগুলি একে অপরকে একই রাস্তায় নিজের পাশেই খুঁজে পাবে। কোনকিছুই অসংলগ্ন মনে হবে না। কোন শিল্পপতির জেট বিমান বানাবার স্বপ্ন তার ঘুমের ওষুধ হিসেবেই শুধু কাজ করবে না; কোন আবিষ্কারকের আবিষ্কৃত জেট ইঞ্জিনখানাকে তার মা চালের ঝুড়ি হিসেবে ব্যবহার করবে না; কোন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের স্বপ্নের কেমিক্যাল প্ল্যান্টের প্ল্যান তার বিছানার বালিশ হিসেবে ব্যবহৃত হবে না; কোন এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের তৈরি প্রথম বিমান শুধু মশা মারার অস্ত্র হিসেবেই সমাজের কাছে গণ্য হবে না। হাজার হাজার নতুন আবিষ্কার শুধুমাত্র সায়েন্স ফেয়ারে হাততালি পাবার জন্যে বা পশ্চিমা দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্যেই তৈরি হবে না। কোন শিল্পপতি পৃথিবীর সবচাইতে হাই-টেক অন্তর্বাস তৈরি করেছেন বলে শান্তিতে কবরে যেতে পারবেন বলে ভাববেন না। এদেশের পাটের মাঝে এই দেশের আসল উন্নতি মনে করে কেউ পাট থেকে হাই-টেক কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল তৈরির দিকে না গিয়ে মনোরম ঝুড়ি তৈরি করে কিছু ডলার কামিয়ে একবেলা আগের চাইতে একটু বেশি ভালো খাবার খাওয়ার চেষ্টাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে দেখবে না। বরং, স্টিলের পাতের মাঝে সে আফ্রিকার বন্দরে নিজেদের জাহাজ দেখবে! এলুমিনিয়ামের মাঝে সে ঘটি-বাটি নয়, বরং বিমান দেখবে। পাটের মাঝে সে ভারতে রপ্তানিযোগ্য সুতা নয়, বরং কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালের মিলিটারি এপ্লিকেশন দেখবে। ধানের তুষের মাঝে সে রপ্তানিযোগ্য ছাই নয়, বরং দেখতে পাবে কেমিক্যাল প্ল্যান্ট।
 
নিজেদের শ্রমে পশ্চিমাদের উপরে তোলার চেষ্টা বাদ দিতে হবে – এগুলি আমরা করে চলেছি আড়াই’শ বছরের বেশি সময় ধরে। এখন এদেশের ওইসব প্রভাবশালী পত্রিকার পশ্চিম-মুখী লোলুপ প্রতিবেদন গেলার সময় নয়। পশ্চিমা বিশ্বকে আজ অতি-জাতীয়তাবাদ ও বর্ণবাদ, চলমান ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ বেকারত্ব, ক্ষয়িষ্ণু জনসংখ্যা, চরম নৈতিক অবক্ষয়, ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থপরতা, বৃদ্ধ জনসংখ্যা, ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যা জেঁকে বসেছে। সামনের দিনগুলিতে এসব সমস্যা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। কাজেই তাদেরকে আইডল হিসেবে দেখাটা বোকার স্বর্গে বাস করা।

সৃজনশীলতাকে পশ্চিম-মুখী করার সময় শেষ

একজন তরুণের স্বপ্ন হতে পারে না প্যারিসের ক্যাটওয়াকে তার ডিজাইন করা অর্ধনগ্ন জামাকাপড়ের জড়ানো মডেলের দিকে সবাই লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে থাকবে। অথবা তার ডিজাইন করা পাইলট-বিহীন সোলার বিমান ইউরোপের বড় কোম্পানি মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তার কাছ থেকে কিনে নেবে। অথবা বাংলাদেশের পাটকে ব্যবহার করে সে ইউরোপের কোম্পানির জন্যে মোটগাড়ির ইন্টেরিয়র ও বাম্পার তৈরি করবে। অথবা নাসার জন্যে রকেট বানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে করমর্দনরত অবস্থায় একটা সেলফি তুলবে। নিজেদের শ্রমে পশ্চিমাদের উপরে তোলার চেষ্টা বাদ দিতে হবে – এগুলি আমরা করে চলেছি আড়াই’শ বছরের বেশি সময় ধরে। এখন এদেশের ওইসব প্রভাবশালী পত্রিকার পশ্চিম-মুখী লোলুপ প্রতিবেদন গেলার সময় নয়। ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতার পক্ষে ঢোল পেটানোর মতো সময় আমাদের এখন নেই। পশ্চিমা বিশ্বকে আজ অতি-জাতীয়তাবাদ ও বর্ণবাদ, চলমান ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ বেকারত্ব, ক্ষয়িষ্ণু জনসংখ্যা, চরম নৈতিক অবক্ষয়, ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থপরতা, বৃদ্ধ জনসংখ্যা, ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যা জেঁকে বসেছে। সামনের দিনগুলিতে এসব সমস্যা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। কাজেই তাদেরকে আইডল হিসেবে দেখাটা বোকার স্বর্গে বাস করা। সবার হাতেই এখন ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। একটু সার্চ করলেই সামনে এসে যাচ্ছে তাদের এই সমস্যাগুলির কথা। এখন সকল ভবিষ্যত এখানে। সকল সৃজনশীলতার প্রয়োগও এখানেই হতে হবে।
 
সইচিরো হনডা তার বাইসেকেলে পানির বোতল ব্যবহার করেছিলেন ফুয়েল ট্যাঙ্ক হিসেবে – এটা জানলে কিন্তু আমাদের আবার আগের জায়গায় ফেরত যেতে হবে না। অর্থাৎ আবারও নতুন করে মোটসাইকেল আবিষ্কারের দরকার নেই। বরং একুশ শতকে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে আমরা নতুন কি দিতে পারি, সেটাই আজকে প্রশ্ন। ড্রোন, রাডার, সোনার, রকেট, স্যাটেলাইট, নাইট ভিশন, সিমুলেটর, রোবোটিক্স, ইত্যাদি প্রযুক্তি এখন হওয়া উচিত স্বাভাবিক। এগুলিকে পুঁজি করেই আগাতে হবে সামনে; রাষ্ট্র এখানে হবে মাধ্যম। রাষ্ট্র দেখাবে পথ; বলে দেবে ভবিষ্যত কোনটা - আন্ডার-ওয়্যার, নাকি আন্ডার-ওয়াটার ওয়ারফেয়ার।

সৃজনশীলতার দরকার একটা কর্মপদ্ধতি…

সৃজনশীলতাকে রাষ্ট্রের সাথে একই পথে নেয়ার জন্যে কিছু পথ অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন –

১. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খবর পৌঁছে দেয়া যে নতুন কোন সৃজনশীল কাজ দেখলেই সেটা যেন ডকুমেন্ট করা হয় এবং রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের কাছে (যেমন প্রশাসক, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক বাহিনী, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ) সেটা লিখিত আকারে পৌঁছে দেয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সৃজনশীল কাজের মেলা বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং সেখানে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের জড়িত হওয়া এক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে নেবে। তবে এখানে ক্রিয়েটিভিটি ফিল্টারিং-এর একটা ব্যবস্থা থাকতে হবে, নয়তো অদরকারী ব্যাপারগুলিও সৃজনশীল হিসেবে স্থান পেয়ে যাবে।

২. রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের কাছে লিখিত আকারে বলে দেয়া যে কোন ধরনের সৃজনশীল কর্মকান্ডকে কোথায় রিপোর্ট করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে যেসকল সৃজনশীল কর্মকান্ড থাকবে, সেগুলি রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা নিজেরাই রিপোর্ট করবেন। তাদের সকল অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে এধরনের সৃজনশীল কর্মকান্ড দেখলেই রিপোর্ট করার নিয়ম থাকবে।

৩. রাষ্ট্রের সকল বিভাগে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আরএন্ডডি) উইং থাকতে হবে, যারা সৃজনশীলতা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট প্রসেস করবে। এই উইং-গুলি এই রিপোর্টগুলিকে ডকুমেন্ট করবে এবং সেগুলি গুরুত্ব অনুসারে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করবে। বিভিন্ন বিভাগের আরএন্ডডি উইং-এর মাঝে যোগসূত্র থাকবে কাজের সুবিধার্থে। উদাহরণস্বরূপ - আইসিটি সেক্টরে কোন সৃজনশীল কাজের রিপোর্ট যাবে আইসিটি বিভাগে। যদি নৌ-পরিবহণ বিভাগের আইসিটি বিভাগের সাথে যোগাযোগ থাকে, তাহলে এমন হতে পারে যে আইসিটি বিভাগের ওই কাজ নৌ-পরিবহণের কাজে লেগে যেতে পারে।

৪. আরএন্ডডি উইং-গুলির সাথে এপ্লিকেশন এরিয়ার সরাসরি সংযোগ থাকতে হবে। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগের উপদেশ দেবে অথবা উচ্চতর শিক্ষার উপদেশ দেবে। উদাহরণস্বরূপ – কৃষি ক্ষেত্রের অনেক গবেষণা কৃষক পর্যায়ে যাচ্ছে বিএডিসি-র মাধ্যমে। তাই কৃষিক্ষেত্রে সকল সৃজনশীল কাজগুলিকেও এই প্রসেসের মাঝে নিয়ে আসতে হবে।

৫. আরএন্ডডি উইং-গুলির সাথে ওই বিভাগের সাথে সম্পর্কিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সরাসরি যোগাযোগ থাকতে হবে, যাতে কোন সৃজনশীলতাকে সরাসরি এপ্লিকেশনে পাঠানো যায় কিনা বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে আরও আরএন্ডডি-তে নেয়া যায় কিনা, সেটা দেখা হবে। উদাহরণস্বরূপ – মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির আরএন্ডডি উইং-এর সাথে স্টিল ইন্ডাস্ট্রির যোগ থাকতে পারে, যাতে নতুন কোন সৃজনশীল প্রজেক্টকে এগিয়ে নেয়া যায়।

৬. গুরুত্ব অনুধাবন করা গেলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগের পদ্ধতিও রাখতে হবে। এভাবে গুরুত্ব অনুসারে বেসরকারি শিল্পোদ্যক্তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে সম্পূর্ণ নতুন কোন শিল্প-ধারণাকেও এগিয়ে নেয়া যায়।

৭. রাষ্ট্রের কোন কাজগুলি কাকে দিয়ে করা যাবে, সেটা রাষ্ট্রকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভুল পোস্টিং দিলে কোন সৃজনশীল কাজই কোনদিন দিনের আলো দেখবে না; রাষ্ট্র হবে প্রতারিত।

সৃজনশীলতার ব্যাপারে কর্মপদ্ধতিগুলি নিয়ে আগানোর সময় এখনই। সইচিরো হনডা তার বাইসেকেলে পানির বোতল ব্যবহার করেছিলেন ফুয়েল ট্যাঙ্ক হিসেবে – এটা জানলে কিন্তু আমাদের আবার আগের জায়গায় ফেরত যেতে হবে না। অর্থাৎ আবারও নতুন করে মোটসাইকেল আবিষ্কারের দরকার নেই। বরং একুশ শতকে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে আমরা নতুন কি দিতে পারি, সেটাই আজকে প্রশ্ন। ড্রোন, রাডার, সোনার, রকেট, স্যাটেলাইট, নাইট ভিশন, সিমুলেটর, রোবোটিক্স, ইত্যাদি প্রযুক্তি এখন হওয়া উচিত স্বাভাবিক। এগুলিকে পুঁজি করেই আগাতে হবে সামনে; রাষ্ট্র এখানে হবে মাধ্যম। রাষ্ট্র দেখাবে পথ; বলে দেবে ভবিষ্যত কোনটা - আন্ডার-ওয়্যার, নাকি আন্ডার-ওয়াটার ওয়ারফেয়ার।