Thursday 23 February 2017

আমার মেধা আমি কাকে ব্যবহার করতে দেবো?

২৩শে ফেব্রুয়ারী ২০১৭
সরাসরি দেখা যায়না বলেই ইলেকট্রনিক্স চিপমেকার ইন্টেল তাদের পণ্যকে বাজারজাত করতে কম্পিউটারের গায়ে লিখে দিয়েছে “Intel Inside”. ঠিক এই ব্যাপারটা F-15 এবং F-16-এর ক্ষেত্রে ঘটলেও কেউ বলে দেয়নি যে এই বিমানগুলির ভেতরের যে জিনিসগুলি এগুলিকে এতো ভয়ঙ্কর করেছে, সেগুলি কাদের তৈরি। এই দু’টি বিমানই একসময় একই ইঞ্জিনে উড়েছে। এই ইঞ্জিনের নাম “Pratt & Whitney F100”. ‘প্র্যাট এন্ড হুইটনি’ কোম্পানি এই ইঞ্জিন তৈরি করেছে, যা ঐ বিমানদু’টির “হার্ট”। যুক্তরাষ্ট্রে গর্ব করার জিনিসগুলির মাঝে এই ইঞ্জিন একটি।

বর্তমান বিশ্বে মার্কিন শক্তির সাথে সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যেসব বিষয়, তার মাঝে একটি হচ্ছে মার্কিন সামরিক শক্তি। সেই সামরিক শক্তির মাঝে আবার চোখ বন্ধ করলে সামরিক বিমানই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আর সেই বিমানগুলির মাঝে যেগুলি সবচাইতে বেশি উচ্চারিত হয়েছে তার মাঝে রয়েছে McDonnell Douglas F-15 এবং General Dynamics F-16. এই বিমানগুলি মার্কিনীদেরকে সারা দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াতে সাহায্য করেছে। ১৯৭০-এর দশকে তৈরি করা এই বিমানগুলি তাদের বয়স দেখাতে শুরু করলেও এখনও সেগুলির কদর কমেনি। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন বিমান শক্তির দাপট এতটাই ছিল যে আকাশে বিমানগুলিকে এখন পর্যন্ত কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। ইউরোপ, রাশিয়া এবং চীন নিজেদের ফাইটার বিমান তৈরি করলেও মার্কিনীদের এই বিমানগুলির মতো ভয়ঙ্কর নাম কুড়াতে সক্ষম হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কোন বিমান কত মানুষ হত্যা করেছে অথবা কত কত সম্পদ ধ্বংস করেছে, অথবা কতগুলি দেশকে ধূলিস্মাত করেছে, সেই হিসেব করলে F-15 এবং F-16 বেশ উপরের দিকেই থাকবে।

কিন্তু যে ব্যাপারগুলি নিয়ে সবচাইতে কম আলোচনা হয়, তা হলো যেগুলি সরাসরি দেখা যায় না। সরাসরি দেখা যায়না বলেই ইলেকট্রনিক্স চিপমেকার ইন্টেল তাদের পণ্যকে বাজারজাত করতে কম্পিউটারের গায়ে লিখে দিয়েছে “Intel Inside”. ঠিক এই ব্যাপারটা F-15 এবং F-16-এর ক্ষেত্রে ঘটলেও কেউ বলে দেয়নি যে এই বিমানগুলির ভেতরের যে জিনিসগুলি এগুলিকে এতো ভয়ঙ্কর করেছে, সেগুলি কাদের তৈরি। এই দু’টি বিমানই একসময় একই ইঞ্জিনে উড়েছে। এই ইঞ্জিনের নাম “Pratt & Whitney F100”. ‘প্র্যাট এন্ড হুইটনি’ কোম্পানি এই ইঞ্জিন তৈরি করেছে, যা ঐ বিমানদু’টির “হার্ট”। F-16-এর বর্তমানে জেনারেল ইলেকট্রিক বা জিই-এর ইঞ্জিন ব্যবহৃত হলেও প্রথমদিকে প্র্যাট এন্ড হুইটনির ইঞ্জিনই ব্যবহৃত হয়েছে। ইঞ্জিন তৈরিতে বহু ইঞ্জিনিয়ারের নির্ঘুম রাত গিয়েছে, স্ত্রীর সাথে হয়েছে ছাড়াছাড়ি, অথবা চিন্তায় চুল পড়ে গিয়েছে সব। আর এসব ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝে যারা ইঞ্জিনের গবেষণার কাজগুলি করেছেন, তাদের কাছ থেকে চাহিদাটাও ছিল অনেক বেশি। আসলে এই গবেষকেরাই মার্কিন এই যুদ্ধবিমানগুলিকে বাকি বিশ্ব থেকে এগিয়ে রেখেছিলেন। এই গবেষকরাই তাদের নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে মার্কিন সামরিক শক্তিকে উপরে থাকতে সহায়তা করেছেন। অথচ এই গবেষকদের নাম খুব কমই শোনা যায়। এমনই একজন গবেষকের নাম আব্দুস সাত্তার খান।
১৯৪১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খাগাতুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী বিজ্ঞানী আব্দুস সাত্তার খান। ১৯৭৮ সালে নিকেল ও তামার সংকর ধাতু নিয়ে গবেষণায় যখন তিনি প্রভূত অগ্রগতি অর্জন করেন, তখন ইঞ্জিন তৈরির কোম্পানি 'প্র্যাট এন্ড হুইটনি' তাকে টেনে নেয়। তিনি সেখানে “Pratt & Whitney F100” ইঞ্জিন নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই সংকর ধাতুর কাজটি জেট ইঞ্জিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যা কিনা কপি করা খুব কষ্টকর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত উতকর্ষতা বলতে যা বোঝায়, তার মাঝে একটি হচ্ছে এই সংকর ধাতুর প্রযুক্তি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে F-15 এবং F-16-এর ইঞ্জিন

অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার খানের জন্ম ১৯৪১ সালে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার খাগাতুয়া গ্রামে। তাঁকে তৈরি করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ছিলেন রসায়নের ছাত্র। তবে বাংলাদেশকে তিনি কিছু দিতে পারেননি (১৯৯১ সালের ঘুর্নিঝড়ের সময় ৬১ হাজার ডলারের সহায়তা ছাড়া); দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে। ১৯৭৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এমেস ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে সাত্তার খান এমেস ল্যাবরেটরি ছেড়ে যোগ দেন জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে, যা নাসা লুইস রিসার্চ সেন্টার নামে অধিক পরিচিত। এ সময় তিনি অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংকর ধাতু নিয়ে কাজ করা শুরু করেন, যা কিনা ব্যবহার হয় জেট এবং রকেট ইঞ্জিনে। ১৯৭৮ সালে নিকেল ও তামার সংকর ধাতু নিয়ে গবেষণায় যখন তিনি প্রভূত অগ্রগতি অর্জন করেন, তখন ইঞ্জিন তৈরির কোম্পানি প্র্যাট এন্ড হুইটনি তাকে টেনে নেয়। তিনি সেখানে “Pratt & Whitney F100” ইঞ্জিন নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই সংকর ধাতুর কাজটি জেট ইঞ্জিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যা কিনা কপি করা খুব কষ্টকর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত উতকর্ষতা বলতে যা বোঝায়, তার মাঝে একটি হচ্ছে এই সংকর ধাতুর প্রযুক্তি। জেট ইঞ্জিনে ব্যবহৃত হয় বলেই বিশ্বে নিকেল খনিগুলি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ। যাই হোক, প্র্যাট এন্ড হুইটনিতে সাত্তার হয়ে যান চিফ ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৮৬ সালে F-15 এবং F-16 -এর ইঞ্জিনের জ্বালানি খরচ কমানোয় বিশেষ অবদান রাখার জন্য পান ইউনাইটেড টেকনোলজিস (প্র্যাট এন্ড হুইটনির প্যারেন্ট কোম্পানি) স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৪ সালে উচ্চগতিসম্পন্ন জেট বিমানের ইঞ্জিন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে অবদানের জন্য ‘ইউনাইটেড টেকনোলজিস রিসার্চ সেন্টার অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স’ পদক লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে পান ‘প্রাট অ্যান্ড হুইটনি’র বিশেষ অ্যাওয়ার্ড। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এই কোম্পানিতে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুস সাত্তার কি করে অতটা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তাঁর আবিষ্কৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা F-15 এবং F-16-এর বোমায় তাঁর পরিবারের কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করবে না? F-15 এবং F-16 যুদ্ধবিমানের বোমায় নিহত হাজারো মানুষের (মূলত মুসলিম জনগণ) আর্তচিৎকারের দায়ভার কি আব্দুস সাত্তার নেবেন? সাত্তারের মতো আর যেসব বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা দিয়েছেন তারাও কি যুক্তরাষ্ট্রের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের দায়ভার নেবেন? হাজারো মানুষের হত্যাকান্ডের অংশীদার হয়ে গর্ববোধ করবেন? কোন আদর্শিক ভাবধারাকে তুলে ধরতে কিছু লোক F-15 এবং F-16-এর ধ্বংসক্ষমতাকে নিজের বলে মনে করে আব্দুস সাত্তার খানকে বাহবা দিয়েছেন? কোন সেই আদর্শ, যাকে তুলে ধরতে লাখো মানুষের লাশের পাহাড় রচনা করা হয়েছে?

বাংলাদেশে অনেক মানুষই আছেন যারা আব্দুস সাত্তারের আবিষ্কার নিয়ে গর্ব করেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের দুনিয়া নিয়ন্ত্রণের সাফল্যের সাথে নিজেদের একাকার করে দিতে চান। এই সাফল্যের মাঝেই তারা আব্দুস সাত্তারকে দেখেন। সবাই হয়তো সেভাবে না দেখলেও কিছু বিষয় নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না। যেমন যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীর এক দেশ আরেক দেশে একটি যুদ্ধবিমান (বা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অগ্রগামী অন্য কোন অস্ত্র বা ম্যাটেরিয়াল) রপ্তানি করতে পারবে কিনা, সেটা ঠিক করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র; কারণ সেই যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন (বা অন্য কোন অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ) অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হয়ে থাকে। তারা বলে দেন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি জিনিস উমুক দেশে রপ্তানি করা যাবে না; কেননা উমুক দেশের তুমুক মানবাধিকার সমস্যা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ (এবং বিশ্বের অন্যান্য বহু দেশ) কখনও কি চিন্তা করেছে যে বাংলাদেশের মেধা কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার ছিল? বাংলাদেশের মেধা ব্যবহার করে তৈরি যুদ্ধাস্ত্র যখন লাখো মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়, তখন কি কেউ একবারও বলেছেন যে – “এই হত্যাকান্ডের অংশ আমরা হতে চাই না”। কেউ কি বলেছেন যে - “আমাদের মেধাকে আমরা পশ্চিমাদের সাম্রাজ্যবাদী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেব না”। F-15 এবং F-16 যুদ্ধবিমানের বোমায় নিহত হাজারো মানুষের (মূলত মুসলিম জনগণ) আর্তচিৎকারের দায়ভার কি আব্দুস সাত্তার নেবেন? সাত্তারের মতো আর যেসব বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো অস্ত্র তৈরিতে সহায়তা দিয়েছেন তারাও কি যুক্তরাষ্ট্রের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের দায়ভার নেবেন? হাজারো মানুষের হত্যাকান্ডের অংশীদার হয়ে গর্ববোধ করবেন?

আব্দুস সাত্তার কি করে অতটা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তাঁর আবিষ্কৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা F-15 এবং F-16-এর বোমায় তাঁর পরিবারের কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করবে না? “Pratt & Whitney F100” ইঞ্জিনের প্রযুক্তি ডেপেলপ করতে গিয়ে তিনি কোন জাতীয়তায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন? যারা আজ আব্দুস সাত্তারের পক্ষে কথা বলছেন, তারা কোন জাতীয়তার? আন্তর্জাতিক সীমানা, ভিসা এবং রঙ্গিন পাসপোর্ট পেরিয়ে তাদের কাছে জাতীয়তা এক উদ্ভট জিনিস হিসেবে হাজির হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপরেও তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে জাতীয়তাকে ব্যবহার করেন। আদর্শিক চিন্তার এই মানুষগুলির কাছে জাতীয়তা একটি ব্যবহারিক যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রশ্ন থাকবে যে তারা কোন আদর্শিক ভাবধারাকে তুলে ধরতে F-15 এবং F-16-এর ধ্বংসক্ষমতাকে নিজের বলে মনে করে আব্দুস সাত্তার খানকে বাহবা দিয়েছেন? কোন সেই আদর্শ, যাকে তুলে ধরতে লাখো মানুষের লাশের পাহাড় রচনা করা হয়েছে? লাশের উপরে স্থাপিত সেই আদর্শের সাফাই গাইতেই তারা F-15 এবং F-16-এর মাঝে সেই আদর্শের রক্ষাকর্তা দেখতে পান। যারা এখনও জাতীয়তা নিয়ে মারামারি করেন, তারা যে চিন্তাচেতনায় কতটা পিছিয়ে রয়েছেন, সেটা বুঝে ওঠার আগেই হয়তো F-15 এবং F-16-এর “আদর্শিক বোমা”য় নিহত হবেন। প্রশ্নটা F-15 এবং F-16 নিয়ে নয়; বরং F-15 এবং F-16 কে ব্যবহার করে কারা দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটা; মানুষের মেধাকে ব্যবহার করে দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক হবে কারা, সেটা। পৃথিবীতে আদর্শিক টানাপোড়েনের এই সময়ে সিদ্ধান্ত নেবার পালা – “আমার মেধা আমি কাকে ব্যবহার করতে দেবো?”
 

----------------------------------------------------------------

অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার খানের ৩১টি প্যাটেন্টের তালিকাঃ

1) Khan, Abdus S, Nazmy, Mohamed,’ MCrAlY bond coating and method of depositing said bond coating’, US patent No. 20050003227 (January 6, 2005)

2) Khan, Abdus S, Fried, Reinhard, ‘ Thermally loaded component of a gas turbine comprises heat insulating ceramic layer used for gas turbine blades’ DE10332938 (February 10, 2005)

3) Khan, Abdus S, Nazmy, Mohamed, ‘ Method of applying a thermal barrier coating system to a superalloy substrate’, W02005038074 (April 28, 2005)

4) Allen, William P, Vernoesi, William, Hall, Robert J, Maloney, Michael J., Appleby, John W, Hague, Douglas D. and Khan, Abdus S. ’Reflective coatings to reduce heat transfer’, US patent No 6,887,587 (May 3, 2005)

5) Khan, Abdus S, Fernihough John, Konter, Maxim, ‘Method of repairing a ceramic coating’, US patent No. 6,890,587 (May 10, 2005)

6) Khan, Abdus S., Konter, Maxim, Schmees, Robert, ‘ Bond or overlay MCrAlY coating’, US patent No. 6,924,045 (August 2, 2005)

7) Fried, Reinhard, Goecmen, Alkan, Khan, Abdus.S, ’ Temperature-stable protective coating over a metallic substrate surface, and a process for producing the protective coating’, US patent No. 6,720,087 (April 13, 2004)

8) Duda, Thomas, Jung, Arnd, Khan, Abdus S, ‘Method of depositing MCrAlY coating on an article and the coated article’, European patent No. EP1411148 (April 21, 2004)

9) Khan, Abdus S., Bossmann, Hans-Peter, Duda, Thomas, Schnell, Alexander, Stefansson, Karl-Johan, Toennes, Christoph T, ‘Method of depositing an oxidation and fatigue resistant MCrAlY coating’, US patent No. 20040079648 (April 29, 2004)

10) Khan, Abdus S., Duda, Thomas, ‘Method of depositing a local coating’, US patent No.20040159552 (August 19, 2004)

11) Khan, Abdus S, Duda, Thomas, Hoebel, Mathias, Schnell, Alexander, ’A method of depositing a local coating’, US patent No. 20040163583 (August 24, 2004)

12) Khan, Abdus S, Boston, Ian W and Hearley, James. A,’ Method of depositing a wear resistant seal coating and seal system’, US patent No.20040185294 (Sept. 23, 2004)

13) Schnell, Alexander, Kurz, Wilfred, Hoebel, Mathias, Khan, Abdus S., Konter, Maxim Bezencon, Cyrille, ‘MCrAlY type alloy coating’, European patent US patent No.20040234808 (November 25, 2004)

14) Schnell, Alexander, Hoebel, Mathias, Kurz, Wilfred, Khan, Abdus S., Konter, Maxim, Bezencon, Cyrille, ‘Method of growing a MCrAlY coating and an article coated with the MCrAlY coating’, US patent No.20040244676 (December 9, 2004)

15) Khan, Abdus S., Fried, Reinhard, ‘Method of applying a coating system’, European patent No. EP1491658 (December 29, 2004)

16) Khan, Abdus S, Fried, Reinhard, ‘Method of applying a coating’, European patent No. EP 1491657 (December 29, 2004)

17) Khan, Abdus S, Duda, Thomas, Schnell, Alexander, Jung, Arnd, ‘A method of depositing a coating’, European patent No. EP 1491650 (December 29, 2004)

18) Fernihough, John, Khan, Abdus S., Konter, Maxim, Oehl, Markus, Dorn, Joachim-Hans, 'Process of repairing a coated component’, US patent No. 6,569,492 (May 27, 2003)

19) Beers, Russell A, Noetzel, Allan A, Khan, Abdus S., ‘Oxidation and fatigue resistant coating’, US patent No. 20030211356 (November 3, 2003)

20) Allen, William P, Vernoesi, William, Hall, Robert J, Maloney, Michael J., Appleby, John W, Hague, Douglas D. and Khan, Abdus S. ’Reflective coatings to reduce heat transfer’, US patent No. 6,652,987 (November 25, 2003)

21) Khan, Abdus S., Zagorski, Alexander, Savell A, Katsnelson, Savell, S, Pozdniakov, Georgij A, 'Method for treating the bond coating of a component’ European patent No. EP1215301 (June 19, 2002)

22) Beers, Russell A, Khan, Abdus S, Noetzel, Allan A, ‘Oxidation resistant coatings for copper’, US Patent No 6,277,499 (August 21, 2001)

23) Mullen, Richard S, Allen, William P, Gell, Maurice L, Barkalow, Richard H., Noetzel, Allan A., Appleby, John W, Khan, Abdus S. 'Multiple nanolayer coating system’, US Patent No. 5,687,679 (November 18, 1997)

24) Khan, Abdus S, Murphy, Kenneth S, Fenton, Richard J, ‘Method for improving oxidation and spallation resistance of diffusion aluminide coatings’, W09530779 (November 16, 1995)

25) Khan, Abdus S., 'Non-destructive test for coated carbon-carbon composite articles’, US Patent No. 5,317,901 (June 7, 1994)

26) Khan, Abdus S, Wright, Robert J.’ A method for protecting article from hydrogen absorption by Application of alumina coating’, US Patent No. 5,252,362 (October 12, 1993)

27) Senterfitt, Donald R, Hamner, Larry D., Mullaly, James. R, Khan, Abdus S, Smeggil, John. G, 'Leading edge heat Pipe arrangement’, US Patent No. 4,966,229 (October 30, 1990)

28) Gostic, William J, Khan, Abdus S, Murphy, Kenneth S, 'Oxidation resistant single crystals’ US Patent No. 4,878,965 (November 7, 1989)

29) Hecht, Ralph J, Khan, Abdus S, Barkalow, Richard H, 'Substrate tailored coatings’, US Patent No. 4,758,480 (July 19, 1988)

30) Bourdeo, Girad G, Khan, Abdus S,’ Nickel base superalloy’ British patent No. GB02110240 & FR-2517329 (June 3, 1983)

31) Barrett, Charles A, Lowell, Carl E, Khan, Abdus S, 'A ternary NiCrAl system’, US Patent No. 4,340,425 (July 20, 1982)

Thursday 16 February 2017

ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম এবং মিয়ানমারের গণতন্ত্র

১৬ই ফেব্রুয়ারী ২০১৭
১৬৪৮ সালে ইউরোপ ত্রিশ বর্ষব্যাপী যুদ্ধ (Thirty Years’ War) থেকে বাঁচে ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তির (Peace of Westphalia) মাধ্যমে। এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হওয়া ছাড়াও আরও কিছু ব্যাপারে ইউরোপের দেশগুলি ঐকমত্যে পৌঁছে। এর মাঝে একটি ছিল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। একটি দেশ অপর দেশের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেবে এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না। আর এই পুরো ব্যাপারটিকে তদারকি করবে তৎকালীন ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলি, যারা নিজেদের মাঝে একটি ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’ (Balance of Power) রাখবে, যার মাধ্যমে তারা যুদ্ধ এড়াবে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই 'ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম' মোটামুটি কাজ করেছে, অর্থাৎ শক্তিশালী দেশগুলির স্বার্থের দেখভাল করেছে। কিন্তু এর পর থেকে এটি ঠিকমতো কাজ করছে না।


ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম আসলে কি?

১৬৪৮ সালে ইউরোপ ত্রিশ বর্ষব্যাপী যুদ্ধ (Thirty Years’ War) থেকে বাঁচে ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তির (Peace of Westphalia) মাধ্যমে। এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হওয়া ছাড়াও আরও কিছু ব্যাপারে ইউরোপের দেশগুলি ঐকমত্যে পৌঁছে। এর মাঝে একটি ছিল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। একটি দেশ অপর দেশের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেবে এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না। আর এই পুরো ব্যাপারটিকে তদারকি করবে তৎকালীন ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলি, যারা নিজেদের মাঝে একটি ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’ (Balance of Power) রাখবে, যার মাধ্যমে তারা যুদ্ধ এড়াবে। তবে সমস্যা হলো যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়নি; কারণ সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে ব্যাতিব্যস্ত। শক্তিশালী দেশগুলি ওয়েস্টফালিয়ার নীতিগুলি নিজেদের উপরে প্রযোজ্য হতে দেয়নি। জোর যার, মুল্লুক তার – এই পদ্ধতিতেই চলেছে। নীতিগুলি মানতে বাধ্য ছিল শুধু ছোট দেশগুলি, যারা সবসময়ই বড় কোন শক্তির সাথে থাকতে বাধ্য হতো। ছোট দেশগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ১৬৪৮ সালের এই নিয়মখানাই পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক আমলে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ছোট কোন দেশ অন্য দেশের ভেতর নাক গলাতে পারবে না, যদি না সেখানে বড় কোন শক্তির ইন্ধন থাকে। যেমন – কোরিয়ার যুদ্ধে কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে কমিউনিস্ট উত্তর ভিয়েতনামকে ইন্ধন যুগিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন। ঊনিশ শতকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার সাথে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে নাম লেখায় জার্মানি। উসমানিয়া খিলাফত তখন দুর্বল হলেও তাদের প্রভাব ছিল যথেষ্ট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী সাম্রাজ্য এবং উসমানিয়া খিলাফতের পতন হয়; আর রাশিয়ার স্থানে জন্ম নেয় নতুন আদর্শিক শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত শক্তিশালী দেশগুলি ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি এবং ইতালি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটা মূলত হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া। আর ১৯৯০ সাল থেকে শুধু যুক্তরাষ্ট্র। শক্তিশালী দেশগুলি ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’এর মাধ্যমে ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমকে ধরে রাখছিল। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে দুনিয়ার ব্যালান্স পরিবর্তন হয়ে যায়।

  

২০১৭-এর জানুয়ারীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেবার ঠিক আগে আগে মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির প্রধান ডিরেক্ট ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স-এর উপদেষ্টা পরিষদ ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল’ বা এনআইসি (National Intelligence Council) একটি রিপোর্ট বের করে। এখানে বলা হচ্ছে যে আগামী পাঁচ বছরের মাঝেই দুনিয়ার উপরে মার্কিন শাসনের অবসান ঘটতে আসতে যাচ্ছে এবং দুনিয়াটা এখন যে নিয়মে চলছে, সে নিয়ম কেউ আর মানবে না, বা নতুন কোন নিয়ম সেটার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে, যা কিনা মার্কিনীদের তৈরি নয়। পাঁচ বছর যে কতটা অল্প সময়, তার একটা ধারণ পাওয়া যাবে এভাবে – কেউ যদি ২০১২ সালের জানুয়ারীতে বলে যে ২০১৬-এর ডিসেম্বরের মাঝে দুনিয়ায় মার্কিন কর্তৃত্ব থাকবে না, তাহলে কেমন অদ্ভূত শোনাতো ব্যাপারটা।

বর্তমান সময়ে ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম কাজ করছে না বলে লিখেছেন মার্কিন আদর্শিক চিন্তাবিদ হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি বলছেন যে দুনিয়ার ব্যবস্থাটাই (World Order) এখন সংকটের মাঝে পড়েছে। কিসিঞ্জারের কথার রেশ পাওয়া যায় সাম্প্রতিক মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে। ২০১৭-এর জানুয়ারীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেবার ঠিক আগে আগে মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির প্রধান ডিরেক্ট ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স-এর উপদেষ্টা পরিষদ ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল’ বা এনআইসি (National Intelligence Council) একটি রিপোর্ট বের করে। ‘Global Trend: Paradox of Progress’ নামের এই রিপোর্টে বলা হয়,

“The next five years will see rising tensions within and between countries. Global growth will slow, just as increasingly complex global challenges impend. An ever-widening range of states, organizations, and empowered individuals will shape geopolitics. For better and worse, the emerging global landscape is drawing to a close and era of American dominance following the Cold War. So, too, perhaps is the rules-based international order that emerged after World War II. It will be much harder to cooperate internationally and govern in ways publics expect. Veto players will threaten to block collaboration at every turn, while information “echo chambers” will reinforce countless competing realities, undermining shared understandings of world events.”

অর্থাৎ এখানে বলা হচ্ছে যে আগামী পাঁচ বছরের মাঝেই দুনিয়ার উপরে মার্কিন শাসনের অবসান ঘটতে আসতে যাচ্ছে এবং দুনিয়াটা এখন যে নিয়মে চলছে, সে নিয়ম কেউ আর মানবে না, বা নতুন কোন নিয়ম সেটার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে, যা কিনা মার্কিনীদের তৈরি নয়। পাঁচ বছর যে কতটা অল্প সময়, তার একটা ধারণ পাওয়া যাবে এভাবে – কেউ যদি ২০১২ সালের জানুয়ারীতে বলে যে ২০১৬-এর ডিসেম্বরের মাঝে দুনিয়ায় মার্কিন কর্তৃত্ব থাকবে না, তাহলে কেমন অদ্ভূত শোনাতো ব্যাপারটা। এনআইসি-এর রিপোর্টে আরও বলা হয়,

“Underlying this crisis in cooperation will be local, national and international differences about the proper role of government across an array of issues ranging from the economy to the environment, religion, security, and the rights of individuals. Debates over moral boundaries – to whom is owed what – will become more pronounced, while divergence in values and interests among states will threaten international security.”

অর্থাৎ কেউ কারও কথা শুনবে না; সকলে সকলের স্বার্থ দেখতে শুরু করবে।
  
ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের ভবিষ্যৎ কি?

আজ পৃথিবীব্যাপী মার্কিন শক্তি কমার [১] সাথে সাথে মার্কিন নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটছে। ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের সার্বভৌমত্ব এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে বারংবার। গণতন্ত্র রক্ষার নামে এখন এক দেশের সৈন্য অন্য দেশে ঢুকে পড়ছে খুব সহজেই। এখন সেখানে আর মার্কিন সেনার দরকার হচ্ছে না। তবে এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো –

১। অস্ত্রের মুখে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হচ্ছে। [২] গণতন্ত্রকে বাঁচাতে গিয়ে চরমতম মানবাধিকার লঙ্ঘনকেও গিলে ফেলতে হচ্ছে। অর্থাৎ পশ্চিমা আদর্শ এখন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।

২। অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলির কাছে অন্য দেশের সীমানায় ঢোকাটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’এর চিন্তাটি এখন নেই। এভাবে ছোট দেশগুলিও প্রভাব খাটানোর উপায় পেয়ে যাচ্ছে, যা তারা সময়-সুযোগমত ব্যবহার করছে।

৩। গণতন্ত্রকে অবস্থান দিতে হচ্ছে সার্বভৌমত্বের উপরে। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে গিয়ে সার্বভৌমত্বকে ভূলুন্ঠিত করতে হচ্ছে। অর্থাৎ পশ্চিমা আদর্শকে বাঁচাতে গিয়ে ভূরাজনৈতিক ব্যালান্সের (ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম) চিন্তাটি ছোট হয়ে আসছে। তাহলে আদর্শ যদি সামনের দিনগুলিতে আরও দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে ভূরাজনৈতিক ব্যালান্সের সাথে তো আদর্শও যাবে।

ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমে মিয়ানমারের মুসলিমদের ইস্যুটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সুতরাং সেটা সেই দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়। মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ মিয়ানমার সরকারের অনুমতি ছাড়া ঐ দেশের নির্যাতিত মুসলিমদের কাছে ত্রাণ নিয়ে যায়নি, এবং তারা বলেছে যে তারা মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অর্থাৎ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সেখানে আবার মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বকে পুরোপুরি লঙ্ঘন না করার কথা বলা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়াও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারংবার কথা বলছে; বাংলাদেশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে।

কেইস স্টাডি – মিয়ানমারের অত্যাচারিত মুসলিমরা
২০১৭ সালে মার্কিন দুনিয়ার নিয়মগুলি ভাঙ্গার কাহিনী দেখা যাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মিয়ানমারের মুসলিমদের উপর অত্যাচারের পর পার্শ্ববর্তী দেশগুলির হস্তক্ষেপ।

১। এখানে কেউ বলবেন যে মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোটা ঐ দেশগুলির দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তাহলে তো এটাও বলা যায় যে ব্যাপারটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সুতরাং সেটা সেই দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয় (ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম)। মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ মিয়ানমার সরকারের অনুমতি ছাড়া ঐ দেশের নির্যাতিত মুসলিমদের কাছে ত্রাণ নিয়ে যায়নি, এবং তারা বলেছে যে তারা মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অর্থাৎ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সেখানে আবার মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বকে পুরোপুরি লঙ্ঘন না করার কথা বলা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়াও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারংবার কথা বলছে; বাংলাদেশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে।

২। এই ত্রাণবাহী জাহাজের প্রভাবে মিয়ানমারের মুসলিমদের উপর অত্যাচার বন্ধ হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অর্থাৎ এখানে মানবাধিকারকেও প্রাধান্য দেয়া হলো না। আবার মিয়ানমারে সিঙ্গাপুর, চীন, থাইল্যান্ড, ভারত, ভিয়েতনামের মতো অনেক দেশ বিপুল বিনিয়োগ করছে; তাই তারাও চাইবে না যে মিয়ানমারের মানবাধিকার নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্য হোক। অর্থাৎ পশ্চিমা আদর্শের একটি ভিত্তিকে (বাজার অর্থনীতি) তুলে ধরা হচ্ছে আরেকটির (মানবাধিকার) উপর।

৩। তারও উপরে রয়েছে গণতন্ত্র। মিয়ানমারে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে তথাকথিত গণতন্ত্রের বাতাস বয়ে যাবার কারণেই। অং সান সু-চি-কে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়েছে তো মিয়ানমারে গণতন্ত্র আনার জন্যেই। সেখানে নির্বাচন হচ্ছে; সু-চি-কে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দেয়া হয়েছে। পুরষ্কারস্বরূপ মার্কিনীরা মিয়ানমারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিয়েছে এবং সেখানে ব্যাপক বিনিয়োগ হচ্ছে। সু-চি ভোটের জন্যে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। তাই মিয়ানমারে যখন মুসলিম-বিরোধী চেতনা দানা বাঁধছে, তখন সু-চি যে ভোট হারাবার ভয়ে মুসলিমদের পক্ষ নেবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। আর পশ্চিমারাও গণতন্ত্র রক্ষার জন্যে মুসলিমদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে কিছু বাক্যবাণ ছাড়া আর কিছুই ছুঁড়বে না। ড্রোন থেকে ছোঁড়া হেলফায়ার মিসাইলগুলি তো গণতন্ত্র আর বাজার অর্থনীতিকে রক্ষার জন্যই, নয় কি?


 
মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ এবং ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কূটনীতি ঐ দেশগুলির ক্ষেপে যাওয়া মুসলিমদের ঠান্ডা করার জন্যে; মিয়ানমারকে ভয় দেখাবার জন্যে নয়। ভয় দেখাতে চাইলে হয়তো মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সাথে ‘লাইভ-ফায়ারিং জয়েন্ট মিলিটারি এক্সারসাইজ’ করে তারপর মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরে যৌথভাবে ত্রাণ পাঠাবার কথা বলতো। ত্রাণবাহী জাহাজটির সাথে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার চারটা যুদ্ধজাহাজ এবং ৮টা যুদ্ধবিমান আসতো এবং সেগুলিকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এসকর্ট করে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে আসতো – তাহলেই বোঝা যেতো কে কার কথা শোনে। মিয়ানমার যদি বুঝতে পারতো যে এই ভীতি প্রদর্শন শুধু ফাঁকা বুলি নয়; এরা দরকার হলে সামরিক অভিযানেও পিছপা হবে না, তাহলে মিয়ানমার সরকার সত্যিকারের ভয় পেতো।

মিয়ানমারের যা প্রাপ্য ছিল...

মিয়ানমারে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে, তাতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের কোন ব্যবস্থা নেবার প্রশ্নই আসে না। সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই সেখানে কোন ড্রোন হামলা হবে না। গণতন্ত্র এবং বাজার অর্থনীতি স্থান পাবে মানবাধিকারের উপরে, যদিও সবগুলিকেই পশ্চিমারা তাদের আদর্শে ভিত্তি বলে থাকে। মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ এবং ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কূটনীতি ঐ দেশগুলির ক্ষেপে যাওয়া মুসলিমদের ঠান্ডা করার জন্যে; মিয়ানমারকে ভয় দেখাবার জন্যে নয়। ভয় দেখাতে চাইলে হয়তো মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সাথে ‘লাইভ-ফায়ারিং জয়েন্ট মিলিটারি এক্সারসাইজ’ করে তারপর মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরে যৌথভাবে ত্রাণ পাঠাবার কথা বলতো। ত্রাণবাহী জাহাজটির সাথে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার চারটা যুদ্ধজাহাজ এবং ৮টা যুদ্ধবিমান আসতো এবং সেগুলিকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এসকর্ট করে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে আসতো – তাহলেই বোঝা যেতো কে কার কথা শোনে। মিয়ানমার যদি বুঝতে পারতো যে এই ভীতি প্রদর্শন শুধু ফাঁকা বুলি নয়; এরা দরকার হলে সামরিক অভিযানেও পিছপা হবে না, তাহলে মিয়ানমার সরকার সত্যিকারের ভয় পেতো। ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে ত্রাণের জাহাজ পাঠানোতে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব লংঘন হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু যে ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম এখন ধূলায় মিশাচ্ছে, সেটাকে আঁকড়ে ধরে থেকে কার স্বার্থকে তুলে ধরা হচ্ছে? রাষ্ট্রের শক্তি শুধু পেশীতে নয়; চিন্তা-চেতনায়। সেই চিন্তা-চেতনাকে বাস্তবায়ন করা, রক্ষা করা এবং ছড়িয়ে দেয়াটাই রাষ্ট্রের লক্ষ্য। একটা রাষ্ট্রের এহেন লক্ষ্য শত্রুর মনে ভীতির সঞ্চার করে। মিয়ানমার সেই ভয় পায়নি বলেই তারা সেখানের মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে পার পেয়ে যাচ্ছে।



[১] ‘ওবামার যুদ্ধগুলো লড়বে কে?’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৯ জানুয়ারী ২০১৭

‘প্রশ্নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘যুক্তরাষ্ট্র কি নিজের যঙ্গেই যুদ্ধরত?’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

[২] ‘পশ্চিম আফ্রিকার সাম্প্রতিক ভূরাজনীতি’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ২৬ জানুয়ারী ২০১৭

Thursday 2 February 2017

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স থেকে বিমান যা শিখতে পারে

২রা ফেব্রুয়ারী ২০১৭
পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশের একটি হলেও ইথিওপিয়ার রয়েছে আফ্রিকার সবচাইতে বড় এয়ারলাইন্স। ১৯৪৬ সালে এই বিমান সংস্থার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল মার্কিনীরা। মার্কিনীদের চিন্তাই ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সকে এগিয়ে নিয়েছে। ইথিওপিয়া দেশটির দিকে তাকালে বিশ্বাস করা কঠিন যে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স এই একই দেশের। রাষ্ট্র হিসেবে ইথিওপিয়া রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কোন ঘটনাই এই এয়ারলাইন্সকে প্রভাবিত করেনি, কারণ এই এয়ারলাইন্সের সাথে দেশটির সম্পর্ক ছিল নামমাত্র।



আফ্রিকার দেশ ডিআর কঙ্গোতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সৈন্যরা রয়েছে; পার্শ্ববর্তী দেশ দক্ষিণ সুদানেও রয়েছে। এক বছর পর পর এই সেনারা দেশে ফেরত আসেন, আর তাদের স্থলে আরেকদল সেনারা যোগ দেন। এভাবেই চলে আসছে। বাংলাদেশের সেনারা যখন আফ্রিকায় যান, তখন খুব কম লোকই জিজ্ঞেস করেন যে কোন এয়ারলাইন্সে করে তারা সেখানে পৌঁছান। যেটা সাধারণত বলা হয়, তা হলো জাতিসংঘের চার্টার করা ফ্লাইটে তারা সেখানে পৌঁছান। তবে বলাই বাহুল্য যে সেই বিমানটি কোন না কোন এয়ারলাইন্সের, যা কিনা জাতিসংঘ ভাড়া করেছে। বাংলাদেশের মানুষ যখন হজ্জ্বে যান, তখনও ব্যাপারটা ওরকমই – অন্য এয়ারলাইন্সের ভাড়া করা বিমানে সকলকে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে গন্তব্যে। জিজ্ঞেস করা ছাড়াই সকলের অনুমেয় যে সেই এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের নয়। বাংলাদেশী সেনাদের আফ্রিকার পৌঁছাবার একটি মাধ্যম হলো ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স।

দরিদ্র দেশের মালিকানায় বৃহত্তম এয়ারলাইন্স

ইথিওপিয়া পৃথিবীর সবচাইতে দরিদ্র দেশগুলির একটি বলেই সকলের কাছে পরিচিত। দেশটিতে বারংবার দুর্ভিক্ষ দুনিয়ার মানুষের আর কিছু নাহোক, অন্ততঃ সহানুভূতি কুড়িয়েছে। ১০ কোটি মানুষের দেশটির জিডিপি ৭৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের জিডিপি ২২০ বিলিয়ন পেরিয়ে গেছে। পূর্ব আফ্রিকার এই বিরাট, কিন্তু দরিদ্র দেশটি পরাশক্তিদের প্রক্সি যুদ্ধ করেই বেশিরভাগ সময় পার করেছে। কিন্তু এই দেশটির বিমান সংস্থা আফ্রিকার বৃহত্তম। এটিতে বর্তমানে রয়েছে ৮২টি বিমান; এর গন্তব্যের সংখ্যা হচ্ছে ১১৩, যার মাঝে ৯৫টি আন্তর্জাতিক (২০১৬)। কার্গো পরিবহণেরও ৩৫টি গন্তব্য রয়েছে। তুলনামূলকভবে দেখানো যায় যে, যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে – সাউথ আফ্রিকান এয়ারওয়েজের রয়েছে ৫৪টি বিমান, যা কিনা ৪২টি গন্তব্যে যায়; ইজিপ্টএয়ারের (মিশর) ৪৭টি বিমান ৭৩টি গঞ্চব্যে যায়; রয়াল এয়ার মারোক (মরক্কো)-এর ৫৫টি বিমান ৯৪টি গন্তব্যে যায়; এয়ার আলজেরির (আলজেরিয়া) ৫৪টি বিমান ৬৯টি গন্তব্যে যায়; তিউনিসএয়ারের (তিউনিসিয়া) ৩৪টি বিমান ১০১টি গন্তব্যে যায়; কেনিয়া এয়ারওয়েজের ৪৫টি বিমান ৬২টি গন্তব্যে যায়; আর নাইজেরিয়ার আরিক এয়ারের ২৪টি বিমান ২৬টি গন্তব্যে যায়। অর্থনীতির আকারের হিসেব করলে দেখা যায় যে, দক্ষিণ আফ্রিকা (৩২৬ বিলিয়ন), মিশর (৩৩০ বিলিয়ন), মরক্কো (১০৩ বিলিয়ন), আলজেরিয়া (১৬৮ বিলিয়ন), তিউনিসিয়া (৪২ বিলিয়ন), নাইজেরিয়া (৪৮৫ বিলিয়ন), কেনিয়া (৬৯ বিলিয়ন) – এই দেশগুলির মাঝে ইথিওপিয়া খুব একটা উপরের দিকে থাকে না। জনসংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও ইথিওপিয়ার বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র হওয়ায় এয়ারলাইন্সের অগ্রগামিতার কারণ হিসেবে আকাশ ভ্রমণের সাথে সেটাকে খুব বেশি একটা যুক্ত করা যাচ্ছে না। তাহলে একটা কারণ তো থাকতে হবে যে কেন এই দেশটির এয়ারলাইন্স আফ্রিকার বৃহত্তম। সেই কারণটি খুঁজতে যেতে হবে বহুদিন আগে।
 
মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি জন এইচ স্পেন্সার (ডানে) ইথিওপিয়ার রাজা হাইলে সেলাসির উপদেষ্টা-রূপে ইথিওপিয়ার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনিই ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ভিত গড়েছিলেন ১৯৪৬ সালে। মার্কিন বিমান সংস্থা TWA ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স চালিয়েছিল ত্রিশ বছর ধরে। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স হচ্ছে ইথিওপিয়ার উপরে মার্কিন প্রভাবের বহিঃপ্রকাশ।

বিংশ শতকে ইথিওপিয়া - কর্তৃত্বের বদল

ইথিওপিয়া বেশিরভাগ সময়ের জন্যেই ইউরোপিয়দের অধীনে ছিল না। তবে ইউরোপিয়দের মদদ ছাড়া সকল কার্য সম্পাদনও করতে পারতো বলে গর্ব করা যায় না, কারণ পূর্ব আফ্রিকাতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইতালির মাঝে বেশ বিরোধ ছিল। ১৯৩০ সালে ইথিওপিয়ার রাজা হন হাইলে সেলাসি। তার সময়েই ১৯৩৫ সালে ফ্যাসিস্ট ইতালির নেতা বেনিতো মুসোলিনি ইথিওপিয়া আক্রমণ করেন; এবং অবশেষে দেশটি সামরিকভাবে দখলও করে নেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত দেশটি যখন ইতালির অধীনে ছিল, সেসময় হাইলে সেলাসিকে রয়াল নেভির যুদ্ধজাহাজে করে জিব্রালটার পর্যন্ত নিয়ে সেখান থেকে সাধারণ ক্রুজ লাইনারে ব্রিটেনে নিয়ে যায় ব্রিটিশ সরকার, এবং ইথিওপিয়াকে মুক্ত করার জন্যে প্রচারণা চালাতে থাকে। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ১৯৪১ সালে ব্রিটিশরা ইথিওপিয়াতে ইতালিয়ানদের পরাজিত করে। তবে ব্রিটিশদের হাত থেকে ইথিওপিয়াকে “মুক্ত” করে মার্কিনীরা। হাইলে সেলাসি দেশের বাইরে থাকার সময়েই তার দেশ ফিরে পাবার জন্যে মার্কিনীরা তাকে আইনী সহায়তা দিতে থাকে। জন এইচ স্পেন্সার নামের মার্কিন সরকারের এক প্রতিনিধি সেলাসির উপদেষ্টার কাজ করতে থাকেন। বিশ্বযুদ্ধের কিছু সময় স্পেন্সার মার্কিন নৌবাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে কাজ করার পর আবারও ইথিওপিয়াতে ফেরত আসেন সেলাসির উপদেষ্টা হয়ে। এবার তার কাজগুলি হয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ইথিওপিয়ার “স্বাধীনতা” নিশ্চিত করেন, বা অন্য অর্থে ইথিওপিয়াকে ব্রিটিশ বলয় থেকে মার্কিন বলয়ে নিয়ে আসেন। ইথিওপিয়ার পূর্বের সোমালি মুসলিম-অধ্যুষিত ওগাদেন এলাকাকে স্পেন্সার ইথিওপিয়ার অন্তর্গত করার ব্যবস্থা করেন। শুধু তা-ই নয়, নতুন তৈরি করা জাতিসংঘের মাধ্যমে এরিত্রিয়াকেও তিনি ইথিওপিয়ার অন্তর্গত করার ব্যবস্থা করেন। পড়ে অবশ্য ত্রিশ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এরিত্রিয়া আলাদা হয়ে যায় ইথিওপিয়া থেকে। এই স্পেন্সারই ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের জন্মের ভিত গড়ে দেন। ইথিওপিয়াতে এমন কোন মানুষ ছিল না যে কিনা ইথিওপিয়ার মতো দরিদ্র একটি দেশের জন্যে একটি এয়ারলাইন্সের চিন্তা করতে পারতো।

ইথিওপিয়ান নাকি মার্কিন?

স্পেন্সারের তৈরি করা ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের প্রথম ফ্লাইটটি ওড়ে ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রথম ফ্লাইটটিই ছিল আন্তর্জাতিক। অর্থাৎ প্রথম দিন থেকেই ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা ছিল, যা কিনা রাজনৈতিক সীমানা দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল না। এটা মার্কিনীদের কারণেই সম্ভব হয়েছিল, যারা নিজেরা রাজনৈতিক সীমানা মানার কথা কোনদিনও চিন্তা করেনি; বরং অন্যদের মানতে বাধ্য করেছে সর্বদা। এয়ারলাইন্সটির প্রথম বিমানগুলি ছিল মার্কিন সরকারের দেয়া Douglas C-47 Skytrain সামরিক পরিবহণ বিমান, যা কিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি হয়েছিল ১০ হাজারেরও বেশি। বিমান তো পাওয়া গেল, কিন্তু বিমান চালাবে কে? এগুলি রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনাই বা কারা করবে? এটাও মার্কিনীরা বলে দিল – মার্কিন বিমান পরিবহণ সংস্থা Trans World Airlines (TWA) ম্যানেজমেন্টের দ্বায়িত্ব নিয়ে নিল। ১৯৪৬ থেকে শুরু করে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ম্যানেজ করেছে TWA, যদিও এটির কাগজে-কলমে মালিকানা ছিল ইথিওপিয়ান সরকারের। ১৯৬৬ সালে এসে প্রথম একজন ইথিওপিয়ান ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন। ১৯৭০ সালে এসে TWA ম্যানেজার থেকে উপদেষ্টা পদ নেয়। আর প্রতিষ্ঠার তিন দশক পর ’৭০-এর মাঝামাঝিতে এসে সংস্থাটি পুরোপুরি ইথিওপিয়দের দ্বারা চালিত হতে থাকে। ১৯৪৬ সাল থেকে ইথিওপিয়ান অনেক বিমান কিনেছে - Douglas C-47 Skytrain, Convair CV-240, Douglas DC-3, Douglas DC-6B, Lockheed L-749, Boeing 720B, Boeing 707-320C, Boeing 767-200ER, Boeing 757-200, Boeing 737-700 – যেগুলির সবই মার্কিন। ১৯৭৫ সালে (TWA থেকে আলাদা হবার পর) ইথিওপিয়ান প্রথম De Havilland Dash-7 বিমান কেনে, যা কিনা কানাডার তৈরি। ’৮০ এবং ‘৯০-এর দশকে কাছের রুটগুলির জন্যে ATR-42, Twin Otter, Fokker 50 কেনে, যেগুলি ইউরোপে তৈরি। বর্তমান সময়ে এসে Boeing 777-200LR, Boeing 787 Dreamliner, Airbus 350-900, Bombardier বিমানও কিনছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ মার্কিন বিমান-নির্মাতাদের মনোপলি সেখানে কিছুটা হলেও খর্ব হয়েছে মার্কিন ম্যানেজমেন্ট চলে যাবার পর।

১৯৬৬ সালের এই ম্যাপে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের রুটগুলি দেখানো হচ্ছে। ঔপনিবেশিক সময়ে আকাশ পরিবহণে সুযোগগুলি খুঁজতে গিয়েই ইথিওপিয়ান এই রুটগুলি ডেভেলপ করেছিল। ইথিওপিয়ার অভ্যন্তরের চাহিদা ছিল খুবই নগন্য।

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের লক্ষ্য কি ইথিওপিয়ার লক্ষ্যের সাথে যায়?

ইথিওপিয়ান যেদিন থেকে ওড়া শুরু করে (১৯৪৬), সেদিন ইথিওপিয়ার আশেপাশের বেশিরভাগ দেশই ছিল উপনিবেশিক শাসনের অধীনে। তখন ফ্লাইট যেতো মিশরে (১৯৫৩ সালের সামরিক বিদ্রোহ পর্যন্ত ব্রিটিশদের অধীনেই ছিল), জিবুতিতে (১৯৭৭ সালে ফরাসীদের কাছ থেকে আলাদা হলেও সেখানে এখনও ফরাসী সৈন্য রয়েছে), ইয়েমেনে (১৯১৮ সালে নামমাত্র স্বাধীন হলেও ১৮৩৯ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত ব্রিটিশদের অধীনেই ছিল), সৌদি আরবে (মূলতঃ ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণেই ছিল), সুদানে (১৯৫৬ সালে ব্রিটিশদের থেকে আলাদা হয়), কেনিয়ায় (১৯৬৩ সালে ব্রিটিশদের থেকে আলাদা হয়)। এরপর ধীরে ধীরে গ্রীস, ইতালি, পাকিস্তান, ভারত, আরব আমিরাত, ইত্যাদি দেশে যাতায়াত শুরু করে। ইথিওপিয়ান উড়তে উড়তেই অনেক দেশের মানচিত্র পরিবর্তিত হয়ে গেছে; কিন্তু তাদের ওড়া বন্ধ হয়নি।

দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা কখনোই তাদের লক্ষ্য ছিল না; অর্থাৎ দেশের মানুষকে আকাশে ওড়ানোটা তাদের চিন্তায় কোনদিনও স্থান পায়নি। নিজ দেশ থেকে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ছিল প্রায় পুরোপুরি আলাদা। দেশটি বহু বছর যুদ্ধবিগ্রহে কাটিয়েছে, কিন্তু এই এয়ারলাইন্সের কেউ এ নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করেনি। ‘দ্যা ইকনমিস্ট’এর এক রিপোর্টে বলা হয় যে ইথিওপিয়াতে ২০১৬ সালে সহিংসতার জের ধরে জরুরী অবস্থা জারি হলেও এয়ারলাইন্সের লোকেদের এ নিয়ে কোন মাথাব্যাথাই ছিল না। ১৯৪৬ সালে জন এইচ স্পেন্সার-এর সময়েই এই এয়ারলাইন্সের ভিত্তি গড়ে দেয়া হয় – সেই ভিত্তির উপরেই এরা এখনও চলছে। এয়ারলাইন্সকে শুধু বের করতে হয়েছে যে কোথায় কোথায় প্যাসেঞ্জার পাওয়া যাবে; সেখানেই তারা ফ্লাইট অপারেট করেছে – সেসব দেশে ইথিওপিয়ানরা ছিল কিনা সেব্যপারে মাথা ঘামায়নি। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স আসলে ইথিওপিয়ার জন্যে নয় – একারণেই এটি আফ্রিকার বৃহত্তম এয়ারলাইন্স। ইথিওপিয়া দেশটির দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে আফ্রিকার সবচাইতে বড় এয়ারলাইন্স তৈরি করার লক্ষ্য এই দেশের ছিল না কখনোই। অন্য কোন লক্ষ্য থেকে ইথিওপিয়ানের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল বলেই তারা সফল; নাহলে এই এয়ারলাইন্সকেও অফ্রিকার দরিদ্রতম দেশগুলির দরিদ্র অর্থনীতির মতোই দরিদ্র দেখাতো।
 
বিশ্বব্যাপী ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের নেটওয়ার্ক এখন বেশ শক্তিশালী এবং আফ্রিকার বৃহত্তম। ইথিওপিয়ার আশেপাশের অনেক দেশই আছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোন দেশেই ইথিওপিয়ানের মতো বড় এয়ারলাইন্সের জন্ম হয়নি। মার্কিন নিয়ন্ত্রণে থাকায় ইথিওপিয়ানের পক্ষে খুব সহজেই সম্ভব হয়েছিল জাতিসত্ত্বার ভিত্তিকে গঠিত রাজনৈতিক সীমানা পেরিয়ে যাওয়া।

বাংলাদেশ বিমানের জন্যে শেখার কি কি আছে?

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের কেইস স্টাডি শেষে প্রশ্ন দাঁড়াবে যে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্যে এখানে কি কি শিক্ষনীয় থাকতে পারে?

১। বিমান সংস্থাকে পাখা মেলতে হলে রাজনৈতিক সীমানাকে পার হতে পারার মতো মনমানসিকতা থাকতে হবে। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বিদেশে কখনো না কখনো গিয়েছে। বিশ্বের ১৬০টি দেশে কোটিখানেক বাংলাদেশী রয়েছে। ৫ থেকে ৭ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর বাইরে যাচ্ছে কাজের জন্যে; ফিরেও আসছে কয়েক লক্ষ। ১৯৬টি দেশে বাংলাদেশের পণ্য যায়; পণ্যের ব্যবসায়ে প্রতি নিয়তই দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে বহু মানুষকে। দেশের বাইরে থাকা মানুষগুলিই আবার বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ক্রেতা হচ্ছে। বিবিএস-এর জরিপ বলছে যে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১৫ লক্ষ মানুষ বাইরে যাচ্ছে ঘুরতে। এর মাঝে প্রতিবছর চিকিতসার জন্যে বাইরে যাচ্ছে কমপক্ষে আড়াই লক্ষ মানুষ। কাজেই রাজনৈতিক বাউন্ডারি পার করার মতো মানসিকতা তৈরির ভিত্তি কিছুটা হলেও তৈরি হয়েছে। এই ভিতের উপরে বিল্ডিং তৈরির কাজটা বাংলাদেশ বিমানকেই করতে হবে।

২। অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহণের গুরুত্ব থাকলেও সেটা একটি বিমান সংস্থাকে বড় করার জন্যে যথেষ্ট নয়, যদি না দেশটি হয় এতো বড় যে দেশটির এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হলে উড়ে যাওয়া ছাড়া গতি নেই (যেমন – যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়ার মতো বিরাট দেশ; অথবা কঙ্গো, ইথিওপিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলির মতো দেশ, যেখানে নদী কম ও রাস্তা-রেলপথ তৈরি করা ভীষণ কষ্টসাধ্য)। বড় হতে হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে আন্তর্জাতিক আকশেই ফোকাস করতে হবে।

বিশ্বের ১৬০টি দেশে কোটিখানেক বাংলাদেশী রয়েছে। ৫ থেকে ৭ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর বাইরে যাচ্ছে কাজের জন্যে। ১৯৬টি দেশে বাংলাদেশের পণ্য যায়। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১৫ লক্ষ মানুষ বাইরে যাচ্ছে ঘুরতে। কাজেই রাজনৈতিক সীমানা পার করার মতো মানসিকতা তৈরির ভিত্তি কিছুটা হলেও তৈরি হয়েছে। এই ভিতের উপরে বিল্ডিং তৈরির কাজটা বাংলাদেশ বিমানকেই করতে হবে।

৩। কৌশলগত অবস্থানের কারণেই যে সাফল্য আসবে, তার কোন গ্যারান্টি নেই, যদিও অবস্থান একটি বড় এয়ারলাইন্স গঠনে সহায়তা করতে পারে। উগান্ডার এনতেবে শহর কৌশলগত দিক থেকে আফ্রিকার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে। আফ্রিকায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনগুলির সাথে যোগাযোগ রক্ষার মূল কেন্দ্র হলো এনতেবে। কিন্তু সেদেশের এয়ারলাইন্স বড় হয়নি। কেনিয়ার নাইরোবি, নাইজেরিয়ার লেগোস, তিউনিসিয়ার তিউনিস গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকার কারণে মোটামুটি আকারের একেকটি এয়ারলাইন্সের জন্ম দিলেও সেগুলির কোনটিই ইথিওপিয়ানের মতো বড় হয়নি। আকাশপথে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হবে যদি বিমান গুরুত্বপূর্ণ হয়।

৪। রাষ্ট্রের বিমান সংস্থার সাথে রাষ্ট্রের সামর্থ্য, শক্তি ও সন্মানের প্রশ্ন জড়িত। অন্য রাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজে চড়ে বিদেশ ভ্রমণ ইথিওপিয়ার রাজার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু একুশ শতকে বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরের টাইগার হতে যাচ্ছে যে রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন অন্য রাষ্ট্রের এয়ারলাইন্সে চড়বেন – এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনারা যখন অন্য দেশের এয়ারলাইন্সে চড়ে বিদেশে যায়, তখন সেটা রাষ্ট্রের অসহায়ত্বকেই তুলে ধরে। ২০১৫ সালে ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু হবার পর বাংলাদেশীদের উদ্ধার করতে গিয়ে ভারত সরকারের সরণাপন্ন হতে হয়েছিল। ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ এবং অন্য দেশের এয়ারলাইন্সের সহায়তায় বাংলাদেশীদের উদ্ধার করা হয়েছিল। রাষ্ট্রের সামর্থ্যকে তুলে ধরতেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে শক্তিশালী হতে হবে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা লেবানন যাচ্ছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে চড়ে। রাষ্ট্রের বিমান সংস্থার সাথে রাষ্ট্রের সামর্থ্য, শক্তি ও সন্মানের প্রশ্ন জড়িত। অন্য রাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজে চড়ে বিদেশ ভ্রমণ ইথিওপিয়ার রাজার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু একুশ শতকে বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরের টাইগার হতে যাচ্ছে যে রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন অন্য রাষ্ট্রের এয়ারলাইন্সে চড়বেন – এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনারা যখন অন্য দেশের এয়ারলাইন্সে চড়ে বিদেশে যায়, তখন সেটা রাষ্ট্রের অসহায়ত্বকেই তুলে ধরে। রাষ্ট্রের সামর্থ্যকে তুলে ধরতেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে শক্তিশালী হতে হবে।

৫। রাষ্ট্রের লক্ষ্যই নির্ধারণ করবে সেই দেশের আকাশ পরিবহণ কেমন হবে। ইথিওপিয়ানের মতো অন্য কারও “উপদেশে” রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্সের লক্ষ্য নির্ধারণ কোন অপশন হতে পারে না। সেটা করলে সেই এয়ারলাইন্স অন্য কোন রাষ্ট্রের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবে। একুশ শতকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য থাকলেও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলি সেটা হতে দিতে চাইবে না। কাজেই অন্য রাষ্ট্রের “উপদেশে” বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চলতে পারে না।

৬। রাষ্ট্রের বিমান সংস্থা একটি পরিবহণ সংস্থা মাত্র; এটি তা-ই পরিবহণ করবে, যা সেই রাষ্ট্র চায়। রাষ্ট্র না চাইবার কারণে আফ্রিকার বৃহত্তম এয়ারলাইন্সের মালিক হবার পরেও বিশ্বে ইথিওপিয়ার প্রভাব খুবই নগন্য। অন্যদিকে আরও বড় এয়ারলাইন্স থাকলে পুরো আফ্রিকা জুড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, মিশর এবং আলজেরিয়ার মতো দেশের প্রভাব হয়তো আরও বেশি হতে পারতো। এখানেই রাষ্ট্রের লক্ষ্যের সাথে বিমানের লক্ষ্যকে সমান্তরালে আসতে হবে।




যেদেশের কোটিখানেক মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সেদেশের বিমান সংস্থার বিমানের সংখ্যা সর্বমোট এক ডজন – এটা বিশ্বাস করানোটা কঠিন। এদেশের নিজেদেরই কয়েক লাখ মানুষ প্রতি বছর আকাশপথে দেশের বাইরে যাচ্ছে এবং আসছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিমানের ভাড়া বাবদই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। কমপক্ষে এক লক্ষ বাংলাদেশী আছে, এমন দেশ এখন অনেক। এখানে ব্যবসা নেই, বা লোকসানে পড়তে হবে – এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। লক্ষ্যহীন বিমান সংস্থা রাষ্ট্রকে কিছু দিতে সক্ষম নয়। একুশ শতকে শক্তিশালী অদম্য বাংলাদেশ গড়তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকেও অদম্য হতে হবে।

রাজনৈতিক সীমানা অতিক্রম করাটা একটা মানসিক চ্যালেঞ্জ যেটা জাতিসত্ত্বা থেকেই উতসারিত। মার্কিন নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সকে জাতীয়তার সংকোচবোধ ধরতে পারেনি। কারণ মার্কিনীরা নিজেরা রাজনৈতিক সীমানা অতিক্রম করতে গিয়ে জাতিসত্ত্বার বাঁধনে বাঁধা পড়েনি কোনদিনও; তবে তারা অন্য সকল রাষ্ট্রকে এই শৃংখলের মাঝে থাকতে বাধ্য করেছে সময়ে সময়ে।

যেদেশের কোটিখানেক মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সেদেশের বিমান সংস্থার বিমানের সংখ্যা সর্বমোট এক ডজন – এটা বিশ্বাস করানোটা কঠিন। এদেশের নিজেদেরই কয়েক লাখ মানুষ প্রতি বছর আকাশপথে দেশের বাইরে যাচ্ছে এবং আসছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিমানের ভাড়া বাবদই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। কমপক্ষে এক লক্ষ বাংলাদেশী আছে, এমন দেশ এখন অনেক। এখানে ব্যবসা নেই, বা লোকসানে পড়তে হবে – এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। লক্ষ্যহীন বিমান সংস্থা রাষ্ট্রকে কিছু দিতে সক্ষম নয়। একুশ শতকে শক্তিশালী অদম্য বাংলাদেশ গড়তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকেও অদম্য হতে হবে।