Sunday 21 September 2014

ডিফেন্স জার্নালিজমঃ আমরা কোথায়?

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪

সামরিক বাহিনীর কাছাকাছি গিয়ে সাংবাদিকতা করতে হলে বাহিনীর আস্থা অর্জন করতে হবে। আস্থার অভাব থাকলে খবরের একটা গুরুত্বপূর্ণ উতস সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জবাবদিহিতা।




বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে; অনেক ভালো কিছু হয়েছে; আবার অনেক খারাপ কিছুও চোখের সামনে চলে আসছে। আমি সবার পা মাড়ানোর চেষ্টায় যাবো না; শুধু একদিকেই যাবো - প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সাংবাদিকতা। এই বিষয়টাতে আসলে এখনো দেশে কোন ভালো সাংবাদিকের আগমণ ঘটেনি। এটা খুবই স্পেশালাইজড একটা বিষয়, তাই খুব সহজে এক্ষেত্রে ভালো লোক চলে আসবে, এটা চিন্তা করাটাও খুব একটা সমিচীন নয়। তবে এখানে একটা বড় ব্যাপার হলো দূরদৃষ্টি। খোলামনে সামনে দেখতে পারার ক্ষমতা কিন্তু অনেক কিছুকেই পালটে দিতে পারে। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন এটা দিতে পারে, তা হলো শেখার আগ্রহ। মায়ের পেট থেকে বের হয়েই কেউ কোন বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে যায় না; শিখতে শিখতেই হয়। আমার মনে হয় এই শেখার আগ্রহতেও ঘাটতি রয়েছে এই ধরনের সাংবাদিকতায়। যারা এসব বিষয়ে লিখছেন বা রিপোর্ট করছেন, তাদের লেখা দেখে মনে হয় যে কেউ জোর করে তাদের সেগুলি লেখাচ্ছে। নিজের ইচ্ছা না থাকলে কোন কিছু নিয়েই ভালো কোন পর্যায়ে পোঁছানো সম্ভব নয়। তেমনই কয়েকটি সাংবাদিকতার উদাহরণ নিয়ে আজকের এই লেখা। তাহলে এই লেখার সাথে জাতীয় নিরাপত্তার সম্পর্ক কি? বিরাট সম্পর্ক! বহু মানুষ এইসব লেখা পড়ে প্রভাবিত হবে। আর যদি বি-গ্রেডের লেখা পড়ে কেউ প্রভাবিত হয়, আর সেটা যদি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কোন লেখা হয়, তাহলে সেটা আসলেই চিন্তিত হবার বিষয়। 

কাটতির অপব্যবহার!

সেদিন একটা বিশাল কাটতির পত্রিকার প্রথম পাতায় দেখলাম বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন ক্রয় নিয়ে লেখা হয়েছে। এরকম রিপোর্ট আমরা এর আগেও বেশ কিছু দেখেছি। রিপোর্টটির ভাষ্য ছিল কিছুটা সামরিক বাহিনী বিমুখ। সেটা কি খারাপ কিছু? বিমুখ হতেই পারে; কেউ হয়তো যুদ্ধাস্ত্র কেনাটা পছন্দ না-ই করতে পারেন। তাতে সমস্যা দেখি না। দুনিয়ার সব যায়গাতেই এধরণের মানুষ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিছুটা অন্যদিক থেকে দেখতে হবে। পত্রিকার প্রথম পাতায় কোনরকম একটা রিপোর্ট করলে কিছু বলতেই হয়। রিপোর্ট কতটুকু দায়সাড়া ছিল, সেটার প্রমাণ মেলে একটা ছোট্ট তথ্য থেকে। রিপোর্টে লেখা হয়েছে যে নৌবাহিনী সাবমেরিন পাচ্ছে ২০১৮ সালে। কিন্তু অল্প একটু গুগল সার্চ করলেই তো সে জানতে পারতো যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং নৌবাহিনী প্রধান আলাদা আলাদাভাবে ২০১৪ সালেই বলেছেন যে আমরা সাবমেরিন পেতে যাচ্ছি ২০১৫ সালে। রিপোর্টে সবথেকে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে সাবমেরিনের বয়স - ২৪ বছর এবং এর মূল্য - ১৫০০ কোটি টাকা। আর একইসাথে সাবমেরিন কেনাটা জরুরি কিনা সেটা প্রশ্ন করা হয়েছে। আর এই প্রশ্নের উত্তর উদ্ঘাটন করতে উদ্ভট সব সাক্ষাতকারের আবির্ভাব ঘটেছে, যেখানে বীজ বপন করা হয়েছে সন্দেহের। বিষয়টা সম্পর্কে জানেন এমন কোন লোকের সাথে কথা বলা হয়নি, অথবা বলা হয়েছে যে সেটা সম্ভব হয়নি। রিপোর্টার সাবমেরিন কি ও কেন - সেটা আসলেই জানেন না। এবং সেটার উত্তর খোঁজার খুব একটা ইচ্ছেও তার ছিল বলে মনে হয়নি। (সাবমেরিন কেন দরকার সেটা আগের একটা পোস্টে লিখেছি, তাই আজকে আর লিখছি না।) তাই একটা ভাসা-ভাসা ধারণা নিয়ে রিপোর্ট শুরু করে ওভাবেই শেষ করেছেন তিনি। এখানে উল্লেক্ষ্য যে এর আগেও আমরা এধরনের দায়সাড়া রিপোর্ট দেখেছি। আরেকটি ইংরেজি পত্রিকায় লেখা হয়েছিল যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন চীন বা আমেরিকা থেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আমেরিকা থেকে হতেই পারে। কিন্তু এখানে বাগড়া হলো 'অফ দ্যা শেলফ' সাবমেরিন। এর মানে কি? এর মানে হচ্ছে যেটি অলরেডি তৈরি এবং ব্যবহারে আছে; মানে নতুন করে বানাতে হবে না। একটা নতুন সাবমেরিন বানাতে ৪-৫ বছর লেগে যাবে এবং দামও বেশি হবে। একটা অফ দ্যা শেলফ' সাবমেরিন এখনই পাওয়া যাবে। এখানে যে ব্যাপারটা রিপোর্টার একেবারেই জানেন না তা হচ্ছে গত ৫০ বছরে আমেরিকা পারমাণবিক সাবমেরিন ছাড়া আর কোন সাবমেরিন বানায়নি। তাহলে বাংলাদেশ কি আমেরিকার কাছে তাদের পারমাণবিক অফ দ্যা শেলফ' সাবমেরিন আশা করছিলো?? ঠিক এই ব্যাপারটাই পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আমি তুলে ধরার পরে তারা উত্তর দিলেন যে তারা অফ দ্যা শেলফ' সাবমেরিনের কথা বলেছেন, নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের কথা বলেননি। পরিষ্কার বোঝা গেল যে পত্রিকার সংশ্লিষ্টদের অফ দ্যা শেলফ'-এর অর্থ জানা নেই! কাজেই আমার পরবর্তী কমেন্টের কোন উত্তর তাদের কাছে ছিল না। 

জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলি নিয়ে কোন ধরনের আগ্রহ না থাকলে সেক্ষেত্রে সাংবাদিকতার কোন মানেই হয় না। কোন বিষয়ে আগ্রহ না থাকলে সেই বিষয়ে বেশিদূর যাওয়া কোনদিনই সম্ভব নয়।


মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার

এই পত্রিকাগুলিকে বারংবার লেখা হচ্ছে যে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের সাথে কেউ কথা বলছেন না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই একই সামরিক সদস্যরা কি করে বিদেশী ডিফেন্স ম্যাগাজিনে বহুল তথ্য দিয়ে সাক্ষাতকার দিচ্ছেন? সমস্যাটা তাহলে অবশ্যই জাতীয় নিরাপত্তার নয়; অন্য কোথাও। একটা উদাহরণ দিই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যখন হোয়াইট হাউজ-এ সাংবাদিক সন্মেলনে কথা বলেন, তখন তিনি প্রত্যেক সাংবাদিককে নাম ধরে ডাকেন। অর্থাৎ মার্কিন রাষ্ট্রপতির সাথে ওই সাংবাদিকদের একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই তারা প্রেসিডেন্টের সাথে বারংবার কথা বলতে পারবেন। তারা জানেন কি করে একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়। তারা এ-ও জানেন যে এই সম্পর্কে একবার চির ধরলে তাদের সংবাদ পাবার একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান তাদের জন্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের দেশে সামরিক বাহিনীর লোকেদের সাথে সাংবাদিকদের সেই সম্পর্কটা হয়নি। সম্পর্কোন্নয়নে কারুরই শক্ত ভূমিকা ছিল না কখনো। আর এই ধরনের বি-গ্রেডের রিপোর্টের কারণে এই সম্পর্ক যদি উন্নতির পথে যাওয়া শুরুও করে, তবু মুখ থুবড়ে পড়বে। যে মানুষটা আপনার বিষয় সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান রাখেন না এবং অসংলগ্ন প্রশ্ন করে আপনাকে বিব্রত করার চেষ্টায় থাকবেন তার সাথে আপনি কখনোই কথা বলতে চাইবেন না। আন্তর্জাতিক ডিফেন্স জার্নালিস্ট মৃত্যুঞ্জয় মজুমদারকে নৌবাহিনী প্রধান সাক্ষাত দিয়েছেন কিছুদিন আগেই, যেখানে তিনি নৌবাহিনীর বর্তমান অবস্থা থেকে শুরু করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও বিষদ আলোচনা করেছেন। আসলে মজুমদার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন বলেই নৌবাহিনী প্রধান তাকে সময় দিয়েছেন; গভীরে গিয়ে আলোচনা করেছেন, যদিও তিনি বাংলাদেশী নন। তিনি এমন কিছু তথ্য তার সাথে শেয়ার করেননি যাতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এই ধরনের সাক্ষাতকার নেওয়ার মতো যোগ্যতা আমাদের দেশের বর্তমান কোনো সাংবাদিকের নেই। 

সামরিক বাহিনীর সাথে বেসামরিক মানুষের পার্থক্য আসলে খুব বেশি কিছু নয়। উভয়েই রক্তমাংসের মানুষ। সেতুবন্ধন খুব বেশি দূরে কখনোই ছিল না। শুধু ইচ্ছার অভাব।


আসলেই কি এতটাই দূরত্ব?

এখানে মার খেয়ে যাচ্ছে জবাবদিহিতা। ডিফেন্সের বড় বড় কেনাকাটার ব্যাপারে স্বচ্ছতা থাকছে না। আমাদের নেই কোন প্রতিরক্ষা নীতি। কাজেই কোন জিনিসটা কেন কেনা হচ্ছে, সেটার কোন আলোচনা নেই। আমাদের পার্শবর্তী ভারতে সাবমেরিন ফ্লিটের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছেতারা সবাই চাচ্ছেন দেশের প্রতিরক্ষা জোরদার হোক; তাই সবাই মতামত দিতে চাচ্ছেন। এভাবে তাদের জবাবদিহিতা বাড়ছে। অপরদিকে আমাদের দেশে ডিফেন্স সাংবাদিকতার প্রসার না হওয়ায় আমরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছি। সাংবাদিকের প্রথম প্রশ্নই যদি হয় টাকা-পয়সা নিয়ে, তাহলে তারা যে পিছিয়ে যাবেন সেটা বলে দিতে হবে না। প্রথম প্রশ্ন শুনেই তারা দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমার বহু বছরের বাজার গবেষণার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি যে একটা মানুষকে যদি তার আয় বা টাকা-পয়সা সম্পর্কে কোন কথা জিজ্ঞেস করতে হয়, তাহলে সেটা করতে হয় সবশেষে; কারণ সেখানেই ইন্টারভিউ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর বদ্ধ দুয়ারের দু'পাশে বসে সম্পর্ক হয় না। কিন্তু দেশের স্বার্থে এইক্ষেত্রে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমরা আজকাল মাঝে মধ্যে সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদেরকে টেলিভিশনের টক শো-তেও দেখেছি। সিভিলিয়ান পোষাকে তাদেরকে আসলেই অন্যান্য সাধারন মানুষের মতনই লেগেছে। দেশের উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আজকাল অনেক সামরিক অফিসারদের দেখা যায়। তাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমার আলাপও হয়েছে। প্রতিবারই আমার মনে হয়েছে যে তারা আমাদেরই মতো রক্তমাংসের মানুষ। আমরা যেভাবে চিন্তাভাবনা করি, তারাও একই রকম। সামরিক বাহিনী মানেই ব্যারাকের বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা - এটা আজকাল একেবারেই বলা যাবে না। এটা ইন্টারনেটের যুগ। অনেকেই সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ব্যারাকের বাইরে দেখতে চান না; আবার এও অভিযোগ করেন যে তারা বেসামরিক মানুষকে বোঝেন না এবং সুযোগ পেলেই ছোট করে দেখার চেষ্টায় থাকেন। কিন্তু যদি তা-ই হবে, তাহলে সামরিক বাহিনীর অফিসাররা বিজনেস ডিগ্রী নিয়ে চাকুরি ছেড়ে বেসরকারি দুনিয়ায় যাবার প্রচেষ্টায় থাকতেন না। তারা যদি 'সুপেরিয়র'ই হতেন, তাহলে তারা বেসামরিক 'ইনফেরিয়র' জীবনে যাবার চেষ্টায় রত থাকতেন না। ঐ যে বলেছি, তারাও রক্ত-মাংসের মানুষ; তারাও তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবেন; তাদের সন্তানদের কোন স্কুলে পড়াবেন সেটা নিয়ে ভাবেন; ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেন। সামরিক আর বেসামরিক এই দুনিয়ার মাঝে ব্রিজ তৈরিটা খুব কঠিন নয়। এখানে বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে পদ্মা ব্রিজ বানাতে হবে না; ছোট্ট একটা কালভার্টই যথেষ্ট।


আমাদের মৃত্যুঞ্জয় কোথায়?

দেশের জন্যেই সামরিক বাহিনী - এটা সকলেরই অনুধাবন করাটা জরুরি। দেশের মানুষ যেমন তাদের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে টিকিয়ে রাখছে এই বাহিনী, ঠিক তেমনি এই দেশের মানুষের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখার গুরু দায়িত্ব পড়েছে এই বাহিনীর উপরেই। একে অপরকে ছাড়া চলতে পারে না। এই চিরসত্যগুলিকে মনে করিয়ে দেবার জন্যেই দরকার জবাবদিহিতা। আর তাতেই দেশের মানুষ আর সামরিক বাহিনীর মাঝে তৈরি হবে সেই সেতু, যেই সেতুর প্রকৃতপক্ষে কোন দরকারই পড়তো না যদি আমাদের রাজনীতিকেরা গত ৪৩ বছর ধরে ঠিক কাজটি করতেন। এখন আর পেছনে ফিরে যাবার সময় নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মতো আমরাও চাই সামরিক আর বেসামরিক সমাজের মাঝে কোন বিভক্তি না থাকুক। এই বিভক্তি সবসময়ই দেশকে করেছে দুর্বল; আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দীদের সুযোগ দিয়েছে আমাদের ঘাড়ের উপরে চড়ে বসতে। তাদের এই অশুভ প্রয়াসকে সমূলে উতপাটনের জন্যেই আমাদের এই সেতু তৈরি করতে হবে। এই সেতুর নির্মাতা হতে হবে এমন একজন (বা একাধিক) যিনি সবাইকে অন্তত সন্মান করতে জানেন। বেসামরিক নাগরিকদের অধিকার বুঝতে পারাটাও হতে হবে তার বাধ্যতামূলক যোগ্যতা। আর সামরিক বিষয়ে জ্ঞান থাকাটা হবে তার অতিরিক্ত যোগ্যতা। আমরা দেখতে চাই যে আমাদের বাহিনী প্রধানেরা মৃত্যুঞ্জয় মজুমদারদের সাক্ষাতকার দেবার চাইতে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের সাক্ষাতকার দিতেই যেন বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

Wednesday 3 September 2014

জাতীয় নিরাপত্তা মানেই কি সামরিক কোন কিছু?

http://www.dailymail.co.uk/news/article-2632719/US-Official-China-cited-cyber-espionage-case.html
ওয়াং ডং নামের এই ব্যাক্তি চীনা সামরিক বাহিনীর সদস্য। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তাকে খুঁজছে হ্যাকিং-এর জন্যে। এফবিআই বলছে যে ওয়াং এবং তার হ্যাকার গ্রুপ কয়েকটি মার্কিন প্রাইভেট কোম্পানীর সিস্টেমে হ্যাকিং করে চীনা কোম্পানীগুলিকে সহায়তা করেছে। অনৈতিক হলেও চীনারা দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে সবার উপরে।

 ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪



জাতীয় নিরাপত্তা বলতে আমরা মোটামুটি সবসময়ই মনে করি এটা বোধহয় সামরিক বাহিনী সম্পর্কিত কোনকিছু। হয়তো বহির্শত্রু থেকে দেশকে সামলে রাখাটাই এর মূলকাহিনী। কিন্তু এটা আমরা চিন্তা করে দেখি না যে বহির্শত্রুর আক্রমণ ঠেকানো কেনো গুরুত্বপূর্ণ। বহির্শত্রু আসলে আমাদের কি করতে পারে? আর সেটাতে আমাদের কি কি ক্ষতি হতে পারে? এই রকম ক্ষতি কি বহির্শত্রুর আক্রমণ ছাড়াও হতে পারে? সেটা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে জাতীয় নিরাপত্তা ব্যাপারটা আসলে কি। তাহলে একটু গভীরে যাবার চেষ্টা করি ব্যাপারটা নিয়ে। 

http://joequinn.net/2014/04/12/putin-having-way-too-much-fun-with-eu-and-usa-over-ukraine/
রাশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত গ্যাস পাইপলাইনের নেটওয়ার্ক। ইউরোপের জ্বালানী সরবরাহের একটা বিরাট অংশ আসে রাশিয়া থেকে। ইউক্রেন সঙ্ঘাত নিয়ে রাশিয়া-ইউরোপের দ্বন্দে রাশিয়া এগিয়ে থাকছে এই অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে। এই পাইপলাইনগুলিই এখন রাশিয়ার রক্ষাকবচ।


ঢাল-তলোয়ারের সংজ্ঞা পরিবর্তন?  
কোন বহির্শত্রু যখন আমার দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোন স্থানে হস্তক্ষেপ করবে, আমরা তখন স্বভাবতই আমাদের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সচেষ্ট হবো। স্বাধীনভাবে নিজেদের দেশকে চালাতে না পারলেই তো স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্ন উঠবে; ঠিক কিনা? তার মানে বহির্শত্রুর আক্রমণে স্বাধীনভাবে দেশ চালানো হুমকির মুখে পড়বে। তাহলে শুধু বহির্শত্রুর আক্রমণেই কি দেশের স্বাধীন পরিচালনা বিঘ্নিত হতে পারে, নাকি অন্য কারণেও হতে পারে? কোন একটা পরিস্থিতিতে আমাদের দেশ যদি অন্য কোন দেশ বা কোন গোষ্ঠি বা সংস্থার সাথে এমন কোন চুক্তি করতে বাধ্য হয়, যার শর্ত মোতাবেক আমরা ভবিষ্যতে ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছুই করতে পারবো না তাহলে কি দেশের স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে না? যদি পড়ে, তাহলে এই ধরণের হুমকি থেকে দেশকে রক্ষা করার উপায় কি? এখানেই ঢাল তলোয়ারের সংজ্ঞা নিয়ে চিন্তার ব্যাপার রয়েছে। সবক্ষেত্রেই যে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে তা নয়। বরং অস্ত্র ব্যবহার করার আগেই যেন যুদ্ধ হেরে বসে না থাকি, সেটাও চিন্তা করতে হবে। একটা সাম্প্রতিক উদাহরণ দেওয়া যাক। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে নির্বিঘ্নে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মুখে মুখে বললেও রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে দূরে রাখতে পারছে না। রাশিয়ার সামরিক শক্তি এখন সেই সোভিয়েত যুগের সাথে তুলনীয় নয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের গুরুত্বকে অনেকটা উপরে উঠিয়েছে। বর্তমানে প্রায় সারা ইউরোপ রাশিয়া থেকে লম্বা পাইপলাইনের মাধ্যমে পাওয়া জ্বালানীর উপরে নির্ভর করছে। এই জ্বালানীর যোগান হঠাত বন্ধ হয়ে গেলে রাশিয়ার চাইতে ইউরোপই বেশি বিপদে পড়বে। কাজেই এখানে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি অর্থনৈতিক ভারসাম্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। রাশিয়া সামরিক দিক থেকে যেটা পারেনি, সেটা অর্থনীতির মারপ্যাঁচে পুষিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার উদ্ধৃত্ত জ্বালানী সম্পদ এক্ষেত্রে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই তাদের উপকৃত করেনি, কৌশলগত দিক থেকে রাশিয়ার রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে। 

অর্থনীতিই সর্বোচ্চ স্বার্থ 
অর্থনীতি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ। একটি দেশ তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ চীনের কথা বলা যেতে পারে। চীনা কম্পিউটার হ্যাকারদের অত্যাচারে যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাহি অবস্থা। আমেরিকানদের মতে এই হ্যাকার গোষ্ঠী চীনের সামরিক বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একারণে মার্কিন সরকারের এজেন্সিগুলি চীনা সামরিক বাহিনীর প্রযুক্তি বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে চিনহিত করেছে; তাদের ছবিসহ পোস্টার ছাপিয়েছে। এই হ্যাকারগোষ্ঠী কিন্তু ক্রেডিট কার্ড বা টেলিকম কোম্পানি থেকে টাকা চুরির লক্ষ্যে হ্যাকিং করে না। এই গোষ্ঠীর কাজ হচ্ছে চীনারা যেসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে, সেসব ক্ষেত্রে চীনকে এগিয়ে নেয়া। কিছুদিন আগে খবরে এলো যে চীনা হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক হাসপাতালের সিস্টেমে হ্যাকিং করে সেখান থেকে অনেক তথ্য চুরি করেছে। হ্যাকাররা এমনই সব তথ্য চুরি করেছে, যা ব্যবহার করে চীনা মেডিকেল কোম্পানিগুলি আমেরিকার মার্কেটে আমেরিকান কোম্পানির সাথে পাল্লা দিয়ে আরও ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারে। কাজেই এই তথ্য যুদ্ধ আসলেই হেলা-ফেলার ব্যাপার নয়। এখানে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা জড়িত। চীনা হ্যাকাররা এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখেছে। হয়তো চীনা সামরিক বাহিনীও সেখানে জড়িত। কিন্তু এরা সকলেই চেষ্টায় রয়েছে দেশের স্বার্থকে উপরে তুলে ধরতে; সেটা ন্যায়সম্মত হোক আর না হোক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এখন জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে হাসপাতালের কম্পিউটারও ঢুকে গেল। হয়তো আগে থেকেই ছিল; তবে এখন গুরুত্বের দিক দিয়ে সেটা কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল আরকি। 

http://usatoday30.usatoday.com/news/nation/story/2011-09-07/How-9-11-changed-us-IV-Have-terrorists-won/50303168/1
যুক্তরাষ্ট্রে আল কায়েদার হামলার পর থেকে নিরাপত্তা অনেক ক্ষেত্রেই জোরদার করা হয়েছে। এই নিরাপত্তা বেষ্টনির ভেতরে নিয়ে আসা বেশিরভাগ স্থাপনাই কিন্তু বেসামরিক। আসলে বেসামরিক জীবনযাত্রার নিরাপত্তা বিধানই সামরিক লক্ষ্য।


বেসামরিক নাকি অগুরুত্বপূর্ণ? 
শুধু হাসপাতাল কেন? আরও অনেক কিছুই মার্কিন সিকিউরিটি লিস্টে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। ৯/১১-এর আল কায়েদার হামলার পরে যুক্তরাষ্ট্র শত শত বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে দেশের বহু বেসামরিক স্থাপনাকে প্রতিরক্ষা বলয়ের মাঝে নিয়ে আসার জন্য। বিমান পরিবহণের কথা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। বিমানবন্দরে  প্রতিটি বিমানে দেওয়া হয়েছে সাদা পোষাকের এয়ার মার্শাল। এনথ্রাক্স জীবানু হামলার পরে ডাক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছিল তারা। রাসায়নিক সার, গ্যাস সিলিন্ডার, শিল্পে ব্যবহার্য বিস্ফোরক, ইত্যাদি বিপজ্জনক দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে বহু ধরণের নতুন নিয়ম-নীতির প্রচলন করা হয়েছিল। কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে মানুষকে গুটি বসন্তের টীকা দেওয়া হয়েছিল। বিমান বন্দর, ব্যবসা কেন্দ্র, গুরুত্বপূর্ণ সেতু, সমুদ্র বন্দর, রেল স্টেশন, পানি শোধনাগার, বিদ্যুত কেন্দ্র, বাঁধ, ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নেওয়া হয়েছিল কঠিন নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। এগুলি সব-ই বেসামরিক স্থাপনা, কিন্তু এগুলির কারণেই সেই দেশের অর্থনীতি সচল ছিল। সামরিক স্থাপনাগুলির চাইতে এগুলির গুরুত্ব বেশি বৈ কম নয়। তাই সর্বশক্তি দিয়ে তারা তাদের অর্থনৈতিক সম্পদকে নিরাপত্তা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একটু বেশিই করে ফেলেছে। আর বেশি বলেই সমালোচনা করবো কেন? আমাদের দেশে রপ্তানিমূখী গার্মেন্টস শিল্পে বিশৃংখলা তৈরির অনেক চেষ্টা চলেছে। শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন না দেওয়া থেকে শুরু করে মনুষ্য-সৃষ্ট দুর্ঘটনা, এমনকি কারখানায় অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু আমরা এসব ক্ষেত্রে ২৪ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করা এই শিল্পের বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা দিতে পারিনি, অতিরিক্ত করা তো দূরে থাক। ষড়যন্ত্রকারীদের ধরতে পারিনি; শ্রমিক অসন্তোষ নিভাতে পারিনি; দিতে পারিনি শ্রমিকের জীবনের মূল্য। অর্থনীতির এতবড় সেক্টরকে আমরা ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছি; জাতীয় নিরাপত্তাকে ছেড়ে দিয়েছে সৃষ্টিকর্তার হাতে!  

ব্যবসায়িক তথ্যের নিরাপত্তা 
তবে জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে আসলে বেশি বলে কোন কিছু নেই। কিছু না ঘটলে সবাই বলে যে অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু ঘটে গেলে সবাই বলতে থাকে কিছুই করা হয়নি। এই কিছু করার ক্ষেত্রটা অনেক বিশাল। সবসময় এটার গুরুত্ব বোঝাও কঠিন। যেমন পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনের পরে পাটের উপরে নতুন করে গবেষণার দুয়ার খুলে গেছে। যদিও অনেকেই জানে যে বেশ কিছু গবেষণা অনেকটা এগিয়েছে, কিন্তু কি ধরণের গবেষণা হচ্ছে সেটা নিয়ে কেউই কথা বলতে নারাজ। কেন? কারণ পাটের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দীর অভাব নেই। বর্তমানে পাটের কয়েকটি পেটেন্ট-এর জন্যে বাংলদেশ আবেদন করেছে। যেগুলি পেয়ে গেলে বাংলাদেশকে রয়ালটি না দিয়ে কেউ পাটের উপরে বিশেষ কিছু কাজ করতে পারবে না। আমাদের গবেষণার বিষয় আমাদের প্রতিদ্বন্দীরা আগেভাগে থেকে জেনে ফেললে এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক ক্ষতির একটা কারণ হতে পারে। বর্তমানে পাটের সাথে বাংলাদেশের ৭০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য জড়িত, যা এখন খুব ছোট মনে না হলেও পাটের ভবিষ্যত সম্ভাবনার কাছে নিতান্তই নস্যি। ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে পাটজাত পণ্য আমাদের গার্মেন্টস-নির্ভর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে ব্যালান্স করতে পারবে। আর এই গবেষণার নিরাপত্তার উপরে নির্ভর করছে আমাদের অর্থনীতির বিরাট এক সম্ভাবনা আর বহু মানুষের কর্মসংস্থান। আমাদের প্রতিদ্বন্দীরা কেউ এখানে গোয়েন্দাগিরি করছে না, সেটা কখনোই বলা যায় না। বড় বড় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তাদের দেশের বড় বড় প্রাইভেট কোম্পানিগুলিকে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহায়তা করে। এইসব তথ্য আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় কোম্পানিগুলির টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/55094/%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A1
বাংলাদেশের গরুর বাজার প্রায় পুরোপুরিভাবে ভারতের সাথে সীমান্ত বাণিজ্যের উপরে নির্ভরশীল। এই গরুর সরবরাহের উপরেই গড়ে উঠেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি শিল্প, যা গত বছর ১.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। সীমান্তে বিএসএফ-এর অমানবিক আচরণের পরেও গরু ব্যবসা তো আর বন্ধ করা যাচ্ছে না।


বাণিজ্য নির্ভরশীলতাও কি নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে? 
অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা যে সময়মত কতটা গুরুত্ববহ হয়ে যায়, সেটার জন্য আগে বর্ণিত রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইনের কথা বলা যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতীয় গরুর কথা বলা যায়। এই গরু আমাদের দেশে শুধুমাত্র প্রোটিনের চাহিদাই পূরণ করে না। গরুর চামড়ার উপরে নির্ভর করছে আমাদের ১.৩ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য। আমদের দেশ এখনো যেহেতু গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি, তাই এই ভারতীয় গরুর উপরেই আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। সীমান্তে এই ব্যবসাকে ঘিরে কত মানুষ যে ভারতের ট্রিগার-হ্যাপি বিএসএফ সদস্যদের হাতে মারা পড়েছে, তার হিসেব নেই। তারপরেও আমরা এখানে জিম্মি হয়ে থাকছি। আমরা প্রতিবাদ করলেও বলতে পারছি না যে ভারত থেকে আর গরু আনবো না। অন্যদিকে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় পুরোটাই ইউরোপ-নির্ভর। কোন কারণে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা বা ইউরোপের সাথে এদেশের রাজনৈতিক কোন্দলে আমাদের রপ্তানি বাজারে বিরাট প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়তে পারে। ইউরোপে মন্দার কারণে এদেশের অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে এর প্রভাব ছিল সবচাইতে বেশি। উঠতি এই শিল্পে প্রচুর বিনিয়োগের ঠিক পরপরেই একনাগারে কয়েক বছর একটিও বিদেশী জাহাজের অর্ডার পায়নি। এমতাবস্থায় হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। এই সময়ে দেশী জাহাজের অর্ডার অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় এই শিল্প সমূহ ধংসের হাত থেকে রেহাই পেয়েছিল। ভিয়েতনামের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে আমাদের চাইতে আরও অনেক বেশি বিনিয়োগ হয়েছিল। তাই তাদের ক্ষতির পরিমাণ আমাদের চাইতে বহুগুণ বেশি ছিল। 

http://bdn24x7.com/?p=196087
জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট একটা ভূমিকা রাখে। ১৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স মুখের কথা নয়। আমাদের বেশিরভাগ নাগরিক কর্মরত আছেন মধ্যপ্রাচ্যে, যেখানে কিছুদিন পরপরই চলছে সংঘাত। এসবের যের ধরে মাঝে মধ্যেই এসব কর্মজীবি মানুষকে দেশে পালিয়ে আসতে হচ্ছে। পড়ছে অর্থনীতির উপরে চাপ।


কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা 
যেকোন বাণিজ্যে ক্ষতি বেশি হবে যদি সেখানে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হয়। এক্ষেত্রে অর্থের ব্যাপারটা আসলে সবচেয়ে ছোট। চিন্তা করে দেখুন এমন কোন শিল্পের কথা যেখানে হাজার হাজার মানুষ বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। তাদের উপরে নির্ভরশীল হয়েছে তাদের পরিবার। এমন শিল্প যেখানে অনেক প্রতিভাবান তরুন তাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় ব্যয় করেছে বিশেষ কোন বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্যে, যাতে সে সেই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের একজন অংশীদার হতে পারে। একটা বিরাট শিল্পের ধ্বসে জনশক্তির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়াটা সবচাইতে কঠিন। আর বাংলাদেশ যেহেতু ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, তাই এদেশের জনশক্তির নিরাপত্তা দেখাটা দেশের সরকারের সবচাইতে জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে একটি। আর জনশক্তির কথা বলতে গেলে বিদেশে এদেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাটা দেশের অভ্যন্তরের চাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ দেশে যে হারে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, তা আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্যে এখনো অপ্রতুল। দেশের অর্থনীতিতে বিদেশ থেকে পাঠানো প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের এই রেমিট্যান্স বাজার বিশাল এক ভূমিকা রাখে। এখানেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে বাংলাদেশ কোন একটি বা দুটি দেশের উপরে খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে কিনা। মধ্যপ্রাচ্যের উপরে বরাবরই আমাদের জনশক্তি রপ্তানি নির্ভরশীল। কিন্তু এখানে প্রায় সবসময়ই কোন না কোন আন্তর্জাতিক বিবাদ লেগেই আছে। অগণতান্ত্রিক এই দেশগুলিতে বড় ধরণের পরিবর্তন হলেই আমাদের কর্মসংস্থান বাজারের উপরে ব্যপক চাপ পড়ে যায়। আবার এইসব দেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নও অনেক গুরুত্ব বহন করা শুরু করে। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং-এর বিরূদ্ধে দেশে বা বিদেশে যেকোন কর্মকান্ড এক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে। এখানে ভুলে গেলে চলবে না যে আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে আমাদের প্রতিদ্বন্দী দেশগুলি বসে নেই। তারা কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের কয়েকগুণ দ্রুতগতিতে জনশক্তি রপ্তানি করছে; বন্ধ করে দিচ্ছে আমাদের রপ্তানির পথ। দক্ষ জনশক্তির দিক থেকে তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। দক্ষ জনশক্তির চাহিদা যেমন বেশি, তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সও তেমনি বেশি হয়। কাজেই দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারাটা হয়ে যাচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু। গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এবং শিক্ষা কেন্দ্রগুলিকে ঠিকমতো চালানোটা কারো চোখে পড়বে না। কিন্তু কোন ধরণের অনাকাংক্ষিত বিশৃংখলায় যদি এসব গুরুত্ববহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হঠাত অকার্যকর হয়ে পড়ে, তখন কিন্তু সেখানে সবার চোখ যাবে। কিন্তু গার্মেন্টস সেক্টরে বিশৃংখলা দেখা দেয়ার পরও আমরা ভুলে গেছি যে সেখানে ৪০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব সেক্টরে নজরদারি রাখাটা জাতীয় নিরাপত্তার একটা অংশ।  

http://janatarnews24.com/detail.php?sid=%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B2&id=2094
জাটকা ইলিশ ও মা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে কোস্ট গার্ড সহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ইলিশ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে এই ধরণের অপারেশন বিরাট ভূমিকা রাখছে। জলদস্যুদের দেশে জেলেদের নিরাপদ রাখারও জোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু তারপরেও এই চেষ্টা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/industry-business/2013/11/29/25635
অবরোধের কারণে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ঘাটে আটকে আছে সারি সারি ট্যাঙ্ক লরি। এই বন্দর অকেজো হয়ে গেলে গোটা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের চাষাবাদ ব্যাহত হয়; দেখা দেয় উতপাদন ঘাটতি। এই বন্দর সচল রাখা জাতীয় নিরাপত্তার অংশ।


আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার কিছু ইস্যু 
নজরদারিতে রাখার মতো অনেক বিষয়ের মাত্র কয়েকটি বিষয় উপরে উল্লেখ করেছি; আরও অনেক রয়েছে। চিন্তা করে দেখুন তো চট্টগ্রাম বন্দর, যেখান দিয়ে দেশের ৯০% বাণিজ্য হয়, সেখানে কোন কারণে এক সপ্তাহ সকল কাজ বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে কতটা ক্ষতি হতে পারে? বন্দরের মুখে ডুবে যাওয়া জাহাজ, নদীর নাব্যতা, শ্রমিক অসন্তোষ, ইত্যাদি যেকোন সমস্যাই বন্ধের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। অথবা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোন একটি ব্রিজ এক সপ্তাহের জন্যে অকার্যকর হয়ে পড়লে ঢাকা এবং এর আশেপাশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কতটুকু পড়বে? বেশিরভাগ বড় বড় ব্রিজ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট দ্বারা সুরক্ষিত। কিন্তু ব্রিজগুলির টেকনিক্যাল সিকিউরিটি কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ারদের উপরে। একইভাবে যদি প্রাকৃতিক বা মনুষ্য-সৃষ্ট কোন কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি এবং মাওয়া কেওড়াকান্দি ফেরি একসাথে অকার্যকর হয়ে পড়ে, তাহলে ঢাকার সাথে দেশের পুরো দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে; শত শত কোটি টাকার মাছ ও সবজি নষ্ট হবে পথিমধ্যে, আর ঢাকায় এগুলির মূল্য হবে সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে শুষ্ক মৌসুমে এই ফেরি রুটের নিরাপত্তা চলে যায় নদী খননের জন্য ড্রেজার চালনা করা ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে। একইভাবে, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি নৌবন্দর হলো উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের চাষাবাদে ব্যবহৃত ডিজেল তেল (সেচ ও জমি চাষ) ও রাসায়নিক সারের চাবিকাঠি। প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে মানিকগঞ্জ থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত নৌপথে নাব্যতা ভয়াবহ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে তেল ও সার নিয়ে আসা জাহাজগুলি বাঘাবাড়ি পৌঁছার আগেই আটকে যায়। ড্রেজিং চলে দিনরাত; তারপরেও নৌরুটের বিপদ কাটে না; রাতের বেলায় চলে ডাকাতের উপদ্রব; নজরদারী বাড়াতে হয় পুলিশের। এখানে তেল ও সার পৌঁছাতে দেরী হওয়া মানে বছর শেষে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিপণ্য উতপাদনে বিরাট ঘাটতি। তিস্তা নদীতে সেচের জন্যে পানি না থাকাও একই রেজাল্ট দেবে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভারতের সাথে তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তির বাস্তবায়ন। আরও একটি উদাহরণ হলো দেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ যে সময় (এপ্রিল ও অক্টোবরের কিছু সময়), সে সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের শত শত কিলোমিটার নদী পাহাড়া দেওয়া। কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশ এসময়ে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেও হিমসিম খায় ইলিশ ধরা বন্ধ করতে গিয়ে। এই একটি মাছ ইলিশ এদেশের জিডিপি-তে ১% অবদান রাখে; বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে; কর্মসংস্থান দেয় ৪.৫ লক্ষ জেলেরসময়মত ইলিশ ধরা বন্ধ না রাখতে পারলে এই সম্পদ বেশিদিন টেকানো সম্ভব হতো না। গভীর সমুদ্রে বিদেশী ট্রলারের মাছ চুরি রোধ করাটাও একই ধরনের গুরুত্ব বহণ করে। আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হবার পরে নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করাটা এখন তাই একটি জাতীয় ইস্যু। আরেকটি ইস্যু রয়েছে জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের পরিবেশগত দিক ও শ্রমিক নিরাপত্তাএই শিল্পের উপরে নির্ভর করে গোটা দেশের নির্মাণ শিল্প (রড, বার, এঙ্গেল); বেশিরভাগ যাত্রীবাহী লঞ্চ ও ছোট জাহাজ (বালুবাহী বার্জ, কার্গো জাহাজ, মালামালবাহী লোহার নৌকা) তৈরি শিল্প;  ফাউন্ড্রি শিল্প (টিউব ওয়েল, পানির পাম্প, ধান মাড়ানি মেশিনের যন্ত্রাংশ, ইত্যাদি); বাস-ট্রাকের বডি তৈরির শিল্প; এমনকি পুরোনো জাহাজ ভেঙ্গে পাওয়া নানা যন্ত্রপাতি ও আসবাব এগুলিরও নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। এসব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির একটা বিশাল অংশ জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের উপরে নির্ভর করে। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন জাহাজ মালিকেরা যে আমাদের এই শিল্পে শ্রমিকের নিরাপত্তাহীনতাকে ভ্রু কুঁচকে দেখছে, সেটা আমরা জানি কি? আমাদের দেশ থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ চীন ও ভারতে যেতে থাকলে আমরা মহা বিপদে পরে যাবো। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সহ সেক্টরটিকে সবসময় নজরদারির মাঝে রাখাটা জরুরি। আর বিদ্যুত, গ্যাস, তেল শোধনাগার, ইত্যাদির গুরুত্ব বোঝাবার নেই। এগুলি যে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তা কাউকে বলে বোঝাতে হবে না। 

http://www.arthosuchak.com/archives/66685/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%A8-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%81-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9/
সুন্দরবন থেকে আহরণ করা হচ্ছে মধু। দেশের অর্থনীতি ও জলবায়ুর উপরে সুন্দরবনের বিরাট এক ভূমিকা রয়েছে। এই বনকে ধ্বংস হতে দেওয়া আর নিজেরদের কবর রচনা করা একই কথা। জাতীয় নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সুন্দরবন রক্ষা করা।

http://bangladeshfirst24.com/news/%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%BF/
বাজারের মাছে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে। একটি জাতিকে সারাজীবনের জন্যে পঙ্গু করে দেবার জন্যে তাদের একটি জেনারেশনকে ধারাবাহিকভাবে বিষ খাওয়াতে পারলেই যথেষ্ট। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ জাতীয় নিরাপত্তার অংশ।


কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও কিছু কিছু ব্যাপার দীর্ঘমেয়াদে দেশের অনেক ক্ষতি করতে পারে। তাই সেসব দিকে সবসময় খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন মাদক চোরাচালান রোধ করা। মাদক দেশে অবাধে আসতে দিলে একটা পুরো জেনারেশন ধ্বংস হয়ে যাবে; যারা একসময় দেশের জন্যে সম্পদ না হয়ে বোঝা হয়ে যাবে। এরপর রয়েছে খাদ্যে ভেজাল ও দূষন রোধ করা। একটা পুরো জাতিকে পঙ্গু করে ফেলার জন্যে তাদের শিশুদের প্রতিদিন কিছু কিছু করে বিষ খাওয়ালেই হবে; তারা সারাজীবনে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। পুরো জাতির পুষ্টির চাহিদা পূরণ করাটাও একইভাবে জরুরি। সময়মত দেশের একটি জেনারেশনের ভিটামিন ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা না গেলে সেই জেনারেশন থেকে মেধাসম্পন্ন বা সুস্বাস্থ্যের নাগরিক তৈরি করা যাবে না; যাবে না শক্তিশালী দেশ তৈরি করা। নদনদীর সম্পদ, সামুদ্রিক সম্পদ, বনজ সম্পদ এগুলি দেশের জন্যে অনেক বড় আশীর্বাদ। এগুলি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করাও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

এত কথা? বুঝে কয়জন? 
তাহলে এটা বোঝা যাচ্ছে যে দেশের নিরাপত্তা দেওয়া মানে দেশের আর্থ-সামাজিক সবদিক দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই নিরাপত্তা দিতে শুধু অস্ত্র দিয়ে হবে না। এখানে দেশের সব ধরনের সম্পদই কাজে লাগতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশের মানবসম্পদ। দেশের স্বার্থ দেশের মানুষকে বোঝার শক্তি দিতে হবে। কারো একার পক্ষে দেশের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়; সকল নাগরিককেই এখানে দরকার। সকল নাগরিকের মাঝে আবার দেশের নেতৃস্থানীয় মানুষের দায়িত্ব সবচাইতে বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে দেশের স্বার্থ বুঝতে পারার ঘাটতি আমাদের সকলের মাঝেই রয়েছে।