Saturday 25 February 2023

ইউক্রেন যুদ্ধ… চীন আসলে কোন পক্ষে?

২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে চীনা শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইয়ি। সামনের দিনগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে একটা দ্বন্দ্ব হতে চলেছে সেব্যাপারে চীন নিশ্চিত। এমতাবস্থায় চীন রাশিয়ার মতো একটা বন্ধুকে পাশে চাইছে। তাই নিরপেক্ষ থাকার কথা বলেও চীনারা কিছুটা রাশিয়ার দিকেই ঝুঁকে রয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্তিতে চীন ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কাজ করতে ইচ্ছুক। ২৪শে ফেব্রুয়ারি চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নীতিপত্রে যুদ্ধের ব্যাপারে চীনের অবস্থানকে তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয় যে, এই যুদ্ধ কারুর জন্যেই সুবিধা বয়ে নিয়ে আসছে না। কাজেই সকলেরই উচিৎ স্বাভাবিক চিন্তা প্রয়োগ করা, যাতে করে এই যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে না ফেলে। ‘আল জাজিরা’র এই বিশ্লেষণে চীনা প্রস্তাবের বিশেষ দিকগুলিকে তুলে ধরা হয়; যার মাঝে ছিল মানবিক করিডোরের মাধ্যমে বেসামরিক নাগরিকদের সরানোর ব্যবস্থা করা, সারা দুনিয়াতে খাদ্যশষ্যের মূল্য স্থিতিশীল করতে শস্য রপ্তানি পুনরায় চালু করা। তবে এর মাঝে চীনারা বহুকাল ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের যে অবস্থানকে তুলে ধরেছে, সেগুলিকেই নিয়ে আসা হয়; যেমন, যেকোন দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং ভৌগোলিক সীমানার নিশ্চয়তা দেয়া। একইসাথে প্রস্তাবে পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। তবে একইসাথে সেখানে ‘ঠান্ডা যুদ্ধের মানসিকতা’ পরিহার করতে বলা হয়; যার মাধ্যমে চীনারা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকেই বোঝায়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে চীনের এই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তবে তিনি মনে করিয়ে দেন যে, এখানে শুধুমাত্র ইউক্রেনের সীমারেখাই লঙ্ঘন করা হয়েছে। ইউক্রেনের ভূমি ছেড়ে যেতে রুশদের রাজি করাতে তিনি চীনাদের সচেষ্ট দেখতে চান। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা মিখাইলো পদোলিয়াক এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, ইউক্রেনের সীমানা থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার না করেই যদি কোন যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়, তাহলে সেটা শান্তি হবে না; হবে যুদ্ধকে একটা অবস্থানে থামিয়ে রাখা।

মার্কিন মিডিয়া ‘সিএনএন’ বলছে যে, চীনা নীতিপত্রের অধিকাংশ অংশেই পশ্চিমাদের টার্গেট করা হয়েছে এবং পশ্চিমাদের সামরিক জোটের পরিধি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান ‘সিএনএন’কে বলেন যে, চীনা প্রস্তাবে যখন বলা হয়েছে সকল দেশের সার্বভৌমত্বকে মেনে চলা উচিৎ, তখনই ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেয়া উচিৎ ছিল যে। কারণ ইউক্রেন, ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই রাশিয়ার উপরে হামলা করেনি; হামলা করেছেন পুতিন। অপরদিকে বেইজিংএ ইইউএর প্রতিনিধি সাংবাদিকদের বলেন যে, চীনের এই প্রস্তাব কোন শান্তি প্রস্তাব নয়। তবে ইইউ এই প্রস্তাবকে খুঁটিয়ে দেখছে।

‘সিএনএন’ বলছে যে, এর আগের সপ্তাহেই মিউনিখে নিরাপত্তা আলোচনাতে চীনা শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইয়ি এই নীতিপত্রের ব্যাপারে কথা বলেন। একই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ওয়াং মস্কো সফর করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করেন। পুতিন তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেন এবং দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে দুই দেশের সহযোগিতার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। তবে ওয়াং তার বক্তব্যে বলেন যে, দুই দেশ বিভিন্ন সময়ে সমস্যার মাঝ দিয়ে যায়; যেখানে সম্পর্কোন্নয়নে নতুন সুযোগের সৃষ্টি হয়। তিনি উভয় দেশের পরিবর্তনগুলিকে স্বেচ্ছায় তুলে ধরে সেগুলির ব্যাপারে অগ্রগামী ভূমিকা নেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকার কথা বলেন। অস্ট্রেলিয়ার ‘নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটি’র আলেক্সান্ডার করোলেভ ‘বিবিসি’কে বলছেন যে, ওয়াং তার ইউরোপ সফরে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং হাঙ্গেরি গিয়েছে; যে দেশগুলি ইউক্রেনকে সহায়তা করার ব্যাপারে কিছুটা হলেও দোদুল্যমান ছিল। চীনারা হয়তো দেখতে চাইছে যে, ইউরোপের কিছু অংশকে তারা তাদের পক্ষে আনতে পারে কিনা।
 
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সাথে চীনা শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইয়ি। ওয়াং তার ইউরোপ সফরে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং হাঙ্গেরি গিয়েছে; যে দেশগুলি ইউক্রেনকে সহায়তা করার ব্যাপারে কিছুটা হলেও দোদুল্যমান ছিল। চীনারা হয়তো দেখতে চাইছে যে, ইউরোপের কিছু অংশকে তারা তাদের পক্ষে আনতে পারে কিনা।

 যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়েল ‘ল স্কুল’এর ‘পল সাই চায়না সেন্টার’এর ফেলো নিকোলাস বেকেলিন ‘আল-জাজিরা’কে বলছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চীন বড় ধরণের সমস্যায় পড়েছে; তার অর্থনীতি বিপদে রয়েছে, ইউরোপের সাথে তার সম্পর্ক টানাপোড়েনে পড়েছে। একইসাথে সামনের দিনগুলিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে একটা দ্বন্দ্ব হতে চলেছে সেব্যাপারে চীন নিশ্চিত। এমতাবস্থায় চীন রাশিয়ার মতো একটা বন্ধুকে পাশে চাইছে। তাই নিরপেক্ষ থাকার কথা বলেও চীনারা কিছুটা রাশিয়ার দিকেই ঝুঁকে রয়েছে।

সাংহাইএর ‘ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিট’র ঝাং শিন ‘বিবিসি’কে বলছেন যে, যদিও পশ্চিমারা বলছে যে, চীনারা রাশিয়াকে অস্ত্র দিতে চাইছে, তথাপি সেটা যে চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধ, সেব্যাপারে চীনারা অবগত রয়েছে; কারণ চীনের বেশিরভাগ বাণিজ্যই পশ্চিমাদের সাথে। একইসাথে তা অনেক দেশকেই যুক্তরাষ্ট্রের আরও কাছে নিয়ে যাবে। যেটা বরং সম্ভাব্য তা হলো, চীনারা রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যাবে; যা রাশিয়ার উপর পশ্চিমা অবরোধের বিরুদ্ধাচরণ। ‘জার্মান মার্শাল ফান্ড’এর সিনিয়র ফেলো এন্ড্রু স্মল ‘বিবিসি’কে বলছেন যে, চীনারা হয়তো ঘুরপথে রাশিয়াকে সহায়তা দিতে পারে; যাতে করে তারা বলতে পারে যে, তারা ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে না। যেমন উত্তর কোরিয়ার মাধ্যমে এমন সকল প্রযুক্তি তারা রাশিয়াকে সরবরাহ করতে পারে, যেগুলি সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। তবে যুদ্ধ যেভাবে চলছে, তাতে একটা সময় চীনাদেরকে ঠিক করতেই হবে যে, তারা রাশিয়াকে সহায়তা দিতে আরও কতদূর যাবে।

‘বিবিসি’র বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, এক বছর ধরেই পশ্চিমারা চাইছিল চীনারা যেন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে সহায়তা দেয়। এখন চীনের প্রস্তাব আসার পর সেটা পশ্চিমাদের মনঃপুত হয়নি। পশ্চিমারা হয়তো চীনাদের প্রস্তাবে খুশি হয়নি; তবে পশ্চিমাদের রাজি করানোটা হয়তো বেইজিংএর লক্ষ্য ছিল না। বেইজিং এই নীতিপত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কথা উল্লেখ করে উন্নয়নশীল বিশ্বকেই বুঝিয়েছে; যেখানে চীনারা যুক্তরাষ্ট্রের একটা বিকল্প হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে চাইছে। উন্নয়নশীল বিশ্ব যখন ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে উৎকণ্ঠার সাথে চেয়ে রয়েছে, তখন চীনারা মার্কিন নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থার একটা বিকল্প দেখাবার চেষ্টা করছে। আলেক্সান্ডার করোলেভ বলছেন যে, চীনারা আরও বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, পশ্চিমাদের সাথে দ্বন্দ্বে রাশিয়া একা নয়; একইভাবে চীনের সাথে পশ্চিমাদের দ্বন্দ্বের সময়েও চীনারা একা থাকবে না। চীনারা ইচ্ছে করলে আরও আগেই এই প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারতো; ঠিক যুদ্ধের বর্ষপূর্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করতো না।

Thursday 16 February 2023

তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পে ত্রাণ সহায়তার কূটনীতি

১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩

তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিশ্বের বহু দেশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকেরা সকলেই একমত যে, সহযোগিতার এই উদাহরণগুলি কতদিন এই দেশগুলির মাঝে সম্পর্ককে উষ্ণ রাখবে, তা বলা মুস্কিল। পশ্চিমা চিন্তার উপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সেকুলার বিশ্বব্যবস্থায় সকল রাষ্ট্রই জাতীয় স্বার্থকে সকলকিছুর উপরে স্থান দেয়; যেখানে মানবতার দিকগুলি সর্বদাই থাকে পিছনের সাড়িতে।

তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্ক সরকারের হিসেবে ৮০ হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে, আর ১০ লক্ষের বেশি মানুষ অস্থায়ী তাঁবুতে বাস করছে। প্রচন্ড শীত ও বৃষ্টির মাঝে উদ্ধারকাজ যেমন কঠিন হয়েছে, তেমনি বেঁচে যাওয়া মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণও হয়েছে চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বের বহু দেশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে তুর্কি সরকারি মিডিয়া ‘টিআরটি’ জানাচ্ছে যে, ১৩ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বের মোট ১’শটা দেশ তুরস্ককে সহায়তা দিতে চেয়েছে। এই মুহুর্তে তুরস্কের মাটিতে ৮১টা দেশের ৯ হাজার ৪’শ ৫৬ জন উদ্ধার ও ত্রাণকর্মী কাজ করছে। এছাড়াও আরও ৭’শ ৪৭ জন ত্রাণকর্মী আসার পথে রয়েছে। এই সহায়তা কতটা মানবতার জন্যে, আর কতটা জাতীয় স্বার্থ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে, সেটা নিরূপণ করা না গেলেও এই সহায়তার সাথে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কথাগুলি আলোচনায় আসা শুরু হয়েছে। একইসাথে রাজনৈতিক কারণেই আবার সিরিয়ার অভ্যন্তরে ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্ধারকাজ নিয়ে আলোচনা প্রায় নেই বললেই চলে।

তুরস্কের ভূমিকম্পে জরুরি সহায়তা দিয়েছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। উভয় দেশই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ন্যাটোর সদস্যপদ পাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের সদস্যপদ পাবার পথে বাধা হয়েছে তুরস্ক। তুরস্ক বলছে যে, এই দুই দেশ তুরস্কের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী বামপন্থী সংগঠন ‘কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি’ বা ‘পিকেকে’কে বিভিন্নভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে; যদিও ‘পিকেকে’কে শুধু তুরস্ক নয়, পশ্চিমা দেশগুলিও সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যা দিয়েছে। কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থক অনেককেই নরডিক এই দেশগুলি আশ্রয় দিয়েছে এবং সেখান থেকে তারা রাজনৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মাঝে কেউ কেউ আবার সুইডেনের পার্লামেন্ট সদস্যও হয়েছে। তুরস্ক চাইছে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থক ১’শ ৩০ জনকে এই দেশগুলি তুরস্কের কাছে হস্তান্তর করুক। এখন পর্যন্ত তুরস্কের দাবি ফিনল্যান্ড তুরস্কের শর্ত মানার ক্ষেত্রে অগ্রগামী হয়েছে; তবে সুইডেন পিছিয়ে রয়েছে।

‘ইউরোনিউজ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, তুরস্কের দুর্যোগে সহায়তাদানের পর আঙ্কারার পররাষ্ট্রনীতিতে এর প্রভাব কতটুকু পড়বে, তা নিয়ে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে মতবিরোধ রয়েছে। ফিনল্যান্ডের তুর্কি বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদ ওজান ইয়ানার ‘ইউরোনিউজ’কে বলছেন যে, ভূমিকম্পে তুরস্কের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাতে সামনের বেশ অনেকদিন তুরস্কে অন্য কোন ইস্যু নিয়ে কথা বলা যাবে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়া থেকে সুইডেনকে বঞ্চিত করার তুর্কি যেকোন পরিকল্পনাকে তুর্কি জনগণ ভূমিকম্প থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নেবার প্রয়াস হিসেবেই দেখবে। অপরদিকে সুইডেনের ‘স্টকহোম ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর পল লেভিন মনে করছেন যে, ভূমিকম্প তুর্কি নেতা রিচেপ তাইয়িপ এরদোগানের চিন্তাকে পরিবর্তন করাতে পারবে না। কারণ ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজে ধীরগতিকে ঘিরে তুরস্কে যথেষ্ট পরিমাণে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় জনগণের ক্রোধকে ক্ষমতাসীন দলের উপর থেকে সরাতে এরদোগান হয়তো আবারও সুইডেনের বিরুদ্ধাচরণে সোচ্চার হবেন। এমনকি খুব কঠিন পরিস্থিতিতে পতিত হলে তিনি নির্বাচনের দিনও পরিবর্তন করতে পারেন।

মার্কিন থিংকট্যাঙ্ক ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স’ বা ‘সিএফআর’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, সিরিয়ার অভ্যন্তরের রাজনীতিকে এই ভূমিকম্প যথেষ্ট প্রভাবিত করতে পারে। সিরিয়ায় ভূমিকম্পের সবচাইতে বড় আঘাতটা এসেছে ইদলিব অঞ্চলে; যার অনেকটাই যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এখন তা বিদ্রোহী গ্রুপগুলির হাতে রয়েছে। এখানে আবার তুর্কি সেনারা সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনী আর বিদ্রোহী গ্রুপগুলির মাঝে বাফার জোন তৈরি করেছে। এতকাল তুরস্কের সাথে শুধুমাত্র একটা সীমান্ত রাস্তার মাধ্যমে ইদলিবের লক্ষ লক্ষ বাস্তুহারা মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে পারছিল। সিরিয় সরকার এই অঞ্চলে কার কাছে ত্রাণ পৌঁছাবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। সিরিয়াতে তুরস্ক বাশার সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক সিরিয়ার সরকারের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছে। ‘আল জাজিরা’ বলছে যে, ত্রাণকর্মীদের হিসেবে সিরিয়ায় নিহত সাড়ে ৩ হাজার মানুষের মাঝে শুধু ইদলিবেই ১৩ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে ২২’শর বেশি মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গিয়েছে। জাতিসংঘের হিসেবে সিরিয়াতে ৫৩ লক্ষ মানুষ বর্তমানে গৃহহারা।

এদিকে কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে ‘রয়টার্স’ বলছে যে, ১৩ই ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সংস্থার ত্রাণ কর্মকান্ডের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস জানিয়েছেন যে, সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপগুলির নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার সুবিধার্থে সিরিয়ার বাশার সরকার তিন মাসের জন্যে তুরস্কের সাথে আরও দু’টা সীমান্ত সংযোগ চালু করার অনুমতি দিয়েছে। অর্থাৎ রাশিয়া এবং চীন ত্রাণ কর্মকান্ডকে বাধা দেয়নি; যদিও ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ বলছে যে, কিছুদিন আগ পর্যন্তও রাশিয়া বলেছে যে, ইদলিবে ত্রাণ পৌঁছাবার জন্যে একটা সীমান্ত রাস্তাই যথেষ্ট।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মিডিয়া ‘দ্যা মিডিয়া লাইন’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে ইইউএর সাথে তুরস্কের সম্পর্ক বেশ খানিকটাই শীতল যাচ্ছিলো। কিন্তু ভূমিকম্পের সহায়তা হিসেবে ইইউএর ২০টা দেশ ২৯টা উদ্ধারকারী দল এবং ৫টা মেডিক্যাল দল পাঠিয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের সম্পর্কের মাঝেও টানাপোড়েন চলছিল। ওয়াশিংটন তুরস্কে দেড়’শ উদ্ধারকারী দল এবং ৭৭ টন যন্ত্রপাতি পাঠিয়েছে। ইস্রাইলের সাথেও তুরস্কের রাজনৈতিক সম্পর্ক বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পার হয়েছে। তবে ইস্রাইল তুরস্কে ৪’শ সদস্যের বিশাল উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। জেরুজালেমের ‘হিব্রু ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর ইয়োনাটান ফ্রীম্যান বলছেন যে, জরুরি সহায়তা দেয়ার ব্যাপারগুলি একটা রাষ্ট্রের সক্ষমতাকে যেমন তুলে ধরে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে তার প্রভাবও বৃদ্ধি করে। এই সহায়তাগুলি নিঃশর্ত হলেও এর মাধ্যমে দু’টা রাষ্ট্রের জনগণের মাঝে সুসম্পর্ক গড়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়। তবে বিশ্লেষকেরা সকলেই একমত যে, সহযোগিতার এই উদাহরণগুলি কতদিন এই দেশগুলির মাঝে সম্পর্ককে উষ্ণ রাখবে, তা বলা মুস্কিল। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের ভূমিকম্পের পর গ্রিস সহায়তা দিয়েছিল; যার ফলশ্রুতিতে বেশ কয়েক বছর দুই দেশের মাঝে উত্তেজনা কমেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের সমস্যাগুলি আবারও সামনে চলে আসে। পশ্চিমা চিন্তার উপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সেকুলার বিশ্বব্যবস্থায় সকল রাষ্ট্রই জাতীয় স্বার্থকে সকলকিছুর উপরে স্থান দেয়; যেখানে মানবতার দিকগুলি সর্বদাই থাকে পিছনের সাড়িতে।

Sunday 5 February 2023

বেলুন কান্ড ও এর সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক ফলাফল

০৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের বিশাল বেলুনকে অতিক্রম করছে মার্কিন বিমান বাহিনীর 'এফ-২২' যুদ্ধবিমান। মার্কিন গোয়েন্দা বিমানগুলি যখন নিয়মিতভাবেই চীনের কাছাকাছি ঘুরে চীনাদের অস্বস্তির মাঝে ফেলছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের বেলুনের অবাঞ্ছিত প্রবেশকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়; যা চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমান্বয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যের দিকেই নির্দেশ করে।

মার্কিন আকাশসীমায় চীনের তৈরি বিশাল একটা বেলুনের প্রবেশকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন যে, বেলুনটা সর্বপ্রথম ২৮শে জানুয়ারি প্রায় ৬০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে আলাস্কার আকাশে ঢোকে। এর তিনদিন পর কানাডার আকাশসীমায় চলে গেলেও ৩১শে জানুয়ারি তা আবারও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে প্রবেশ করে। এরপর পুরো যুক্তরাষ্ট্রের উপর দিয়ে ওড়ার পরে ৫ই ফেব্রুয়ারি আটলান্টিক মহাসাগরের উপরে বেলুনটাকে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত করা হয়। মার্কিন কর্মকর্তারা এটাকে গোয়েন্দা বেলুন বলে আখ্যা দিচ্ছেন। আর চীনারা বলছে যে, বেলুনটা ছিল আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহের জন্যে তৈরি; যা কিনা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে চলে গিয়েছে। ‘সিএনএন’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, বেলুনটা ভূপাতিত হবার আগে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনার উপর দিয়ে উড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো’র এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংএর প্রফেসর ইয়াইন বয়েড ‘ডয়েচে ভেলে’কে বলছেন যে, বেলুনটা খুব সম্ভবতঃ আবহাওয়ার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছিল না। কারণ আবহাওয়া বেলুনের আকৃতি অনেক ছোট হয়। এটা বিশ্বাস করাটা কঠিন যে, চীনারা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি বাতাসের তাপমাত্রা বা চাপ মাপার চেষ্টা করবে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’র প্রাক্তন কর্মকর্তা ট্রেসি ওয়াল্ডার মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ‘এমএসএনবিসি’কে বলছেন যে, এই বেলুন খুব সম্ভবতঃ ছবি তোলার জন্যে পাঠানো হয়নি। কারণ চীনের বেশকিছু গোয়েন্দা স্যাটেলাইট রয়েছে, যেগুলি হাই রেজোলিউশনের ছবি তুলতে পারে। এই বেলুন হয়তো ইলেকট্রনিক সিগনালস ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করছিল। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে তেজষ্ক্রিয়তা কতটুকু বা আকাশ প্রতিরক্ষা রাডারের কর্মকান্ড কেমন, এগুলি জানতে হলে স্যাটেলাইটের চাইতে আরও কম উচ্চতায় উড়তে হবে।

মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন জেনারেল ব্যারি ম্যাকাফরে ‘এমএসএনবিসি’কে বলছেন যে, এটা নিঃসন্দেহে গত ৫০ বছরের মাঝে চীনা ইন্টেলিজেন্সের সবচাইতে ‘গোঁয়াড়’ কর্মকান্ড ছিল। তার ধারণা, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা নিশ্চয়ই এটা সম্পর্কে জানতেন না। এটাও হতে পারে যে, চীনের সামরিক বাহিনীর উপর রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণ নেই। জেনারেল ম্যাকাফরে মনে করছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র নিঃসন্দেহে সামরিক দিক থেকে চীনের চেয়ে বহু এগিয়ে রয়েছে। এখানে তাইওয়ানের সামরিক সক্ষমতা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সামরিক শক্তি। এবং অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনে নতুন করে ৯টা সামরিক ঘাঁটি পাবার অবস্থানে পৌঁছেছে; যার মাধ্যমে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কৃত্রিম দ্বীপভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটা ডিটারেন্ট তৈরি হবে। কাজেই চীনারা মারাত্মক ভুল না করলে যুদ্ধ হবার সম্ভাবনা নেই। ট্রেসি ওয়াল্ডার বলছেন যে, গোয়েন্দা সংস্থাতে তিনি চীনা ইন্টেলিজেন্স ঠেকাতে কাজ করেছেন; কিন্তু কখনোই চীনাদের এহেন খোলামেলা কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করেননি। সাধারণতঃ চীনারা খুব সন্তর্পণে কাজ করে; সহজে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’র প্রাক্তন প্রধান লিয়ন প্যানেট্টা ‘সিএনএন’কে বলছেন যে, বেলুনের ধ্বংসাবশেষ থেকে যদি বুঝতে পারা যায় যে, এটা কি প্রকারের তথ্য সংগ্রহ করছিল এবং আকাশে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল কিনা, তাহলে বোঝা যাবে যে এটা যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে গোয়েন্দাবৃত্তির জন্যেই এসেছিল কিনা। প্যানেট্টা মনে করছেন যে, যদি মার্কিন সামরিক নেতৃত্ব বুঝেই থাকে যে, বেলুনটা একটা গোয়েন্দা বেলুন, তাহলে এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনার উপর দিয়ে উড়তে দেয়াটা উচিৎ হয়নি; বরং এটাকে আরও আগেই ভূপাতিত করা উচিৎ ছিল। প্যানেট্টা বলছেন যে, চীন কিভাবে কাজটা করেছে, তা নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হলেও চীনে কেন এই কাজটা করেছে, সেটা নিয়ে খুব কমই কথা হচ্ছে। চীনারা নিঃসন্দেহে জানতো যে, মার্কিনীরা এটা খুঁজে পাবে এবং এর প্রত্যুত্তর দেবে। তারা হয়তো বার্তা দিতে চাইছিলো যে, মার্কিনীরা যদি চীনের উপরে গোয়েন্দাবৃত্তি করে, তাহলে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের উপরে গোয়েন্দাবৃত্তি করতে সক্ষম। কারণ মার্কিনীরা নিয়মিতভাবেই চীনের সীমানার খুব কাছ দিয়ে গোয়েন্দা বিমান ওড়ায় এবং সেগুলি বেশ নিয়মিতভাবেই চীনারা বাধা দিতে আসে। কারণ চীনারা এই কর্মকান্ডকে মোটেই ভালো চোখে দেখে না।

‘সিআইএ’র আরেক প্রাক্তন প্রধান জন ব্রেনান ‘এমএসএনবিসি’কে বলছেন যে, এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে, চীনারা প্রকৃতপক্ষে কি চিন্তা করছিল। একটা বেলুন ৬০ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে কিছু কাজ করতে পারে, যা কিনা একটা গোয়েন্দা স্যাটেলাইট আরও বেশি উচ্চতা থেকে করতে পারে না। তবে এই বেলুন কে উৎক্ষেপণ করেছিল এবং এর প্রযুক্তিগত সক্ষমতাই বা কতটুকু ছিল, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে চীনারা জানতো যে, যুক্তরাষ্ট্র এটাকে খুঁজে পাবে এবং ব্যবস্থা নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের আলোচনার অনেকগুলি বিষয় রয়েছে, যেগুলি এখন ব্যাহত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু সেটাই চীনারা চেয়েছিল কিনা, সেব্যাপারে এখনও কেউই নিশ্চিত নয়।

ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট’এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল মাইকেল ক্লার্ক ব্রিটেনের ‘স্কাই নিউজ’কে বলছেন যে, এই বেলুনের মাধ্যমে চীনারা এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ইন্টেলিজেন্স পাবে না, যা কিনা তারা ইতোমধ্যেই পাচ্ছে না। বরং দেখতে হবে যে, এর মাধ্যমে চীনাদের বার্তাটা কি ছিল। ক্লার্ক বলছেন যে, তারা ধারণা কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনে যে ঘাঁটি তৈরির চুক্তি করেছে, এটা সেই চুক্তিরই প্রত্যুত্তর।

মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব এন্টনি ব্লিনকেন বেলুনের ঘটনাকে একটা ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কর্মকান্ড বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং ইতোমধ্যেই ৫ই ফেব্রুয়ারি তার বেইজিং সফর বাতিল করেছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলছে যে, তারা চীনের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে ইচ্ছুক নয়, তথাপি ব্লিনকেনের বেইজিং সফর বাতিল করা দেখিয়ে দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র বেলুনের ইস্যুটাকে ব্যবহার করতে চাইছে। অথচ মাত্র কিছুদিন আগেই ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ঘাঁটি তৈরির যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটাকে তারা চীনের অসন্তুষ্ট হবার কোন কারণই দেখছে না। আর মার্কিন গোয়েন্দা বিমানগুলি যখন নিয়মিতভাবেই চীনের কাছাকাছি ঘুরে চীনাদের অস্বস্তির মাঝে ফেলছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের বেলুনের অবাঞ্ছিত প্রবেশকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়; যা চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমান্বয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যের দিকেই নির্দেশ করে।