Wednesday 30 September 2015

হান্টিংটনের দুই দশক এবং আমাদের বাস্তবতা

৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১৫

স্যামুয়েল হান্টিংটনের দুই দশক আগের থিউরি আজ বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে। কাজেই সেই কথাগুলিকে উদ্ভট চিন্তা বলার অবকাশ আজ আমাদের আর নেই।


বিশ্ব-রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান বুঝতে না পারলে নিজেদের নীতি তৈরি করাটা শুধু কঠিনই নয়, বরং না বুঝে নীতি তৈরি করাটা মহাবিপদের কারণ হতে পারে। প্রথমেই বুঝতে হবে যে বাংলাদেশ বিশ্বের বাইরে নয়। কাজেই বিশ্বের অন্য কোথায় কি হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারাটা এবং সেই ব্যাপারগুলি আমাদের দেশকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে, সেটা বোঝাটা জরুরি। ইউক্রেন সমস্যা যে আমাদের দেশ থেকে তেমন দূরে নয়, সেটা আমরা টের পেয়েছি হাড়ে হাড়ে। মার্কিন এবং ইউরোপিয়ান অবরোধের কারণে রাশিয়ায় পণ্য সরবরাহের বিরাট ঘাটতি হওয়ার পরে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের যেকোন বাণিজ্য চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত করতে চাইছে। বাংলাদেশে রাশিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কেনাকাটার জন্যে রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ যুক্তরাষ্ট্রের ভালো চোখে দেখার কোন কারণ নেই। এমনিতেই বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের আধিক্য এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জন্যে চীনা অস্ত্রসস্ত্রের দুয়ার খুলে দেওয়াটা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চিন্তায় ফেলেছে। এর উপরে ইউক্রেন সমস্যার পরপর রাশিয়ার সাথে চীনের সম্পর্কোন্নয়ন এবং বঙ্গোপসাগরের গভীর গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক এলাকায় রাশিয়ার অবতরণ পুরো ব্যাপারটাকে ঘোলাটে করে ফেলেছে। এই মুহূর্তে আমাদের নিজেদের অবস্থান বুঝে এগুনো হবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আসল লাইন কোনটা?

বিশ্ব-রাজনীতি বুঝতে আমাদের দেখতে হবে শীতল যুদ্ধের পরে বিশ্ব কোন দিকে এগুচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে বিশ্ব ব্যবস্থায় কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, সেটা নিয়ে অনেকেই অনেক থিউরি দিয়েছেন। কিন্তু লাল ফৌজ ধ্বংসের পঁচিশ বছর পরে বুঝতে খুব একটা বাকি থাকে না কোন থিউরি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন (Samuel P Huntington) ১৯৯৩ সালে ‘The Clash of Civilizations? The Next Pattern of Conflict’ শীর্ষক একটা প্রবন্ধ লিখেন, যা বিরাট সাড়া ফেলে এবং ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়। এই লেখার উপরে তিনি ১৯৯৬ সালে তার থিউরিকে শক্ত ফাউন্ডেশন দেওয়ার নিমিত্তে একটি বইও (The Clash of Civilizations and the Remaking of World Order) লিখে ফেলেন। দুই দশক পর তার সেই থিউরিগুলি আর হাইপোথিসিস আকারে নেই; এর অনেকটাই বাস্তবায়নের আকারে এগুচ্ছে। তার পরবর্তীতে জিবিগনিউ ব্রেজিন্সকি, জর্জ ফ্রীডম্যান, হেনরি কিসিঞ্জার এবং অন্যান্যরাও মোটামুটি একই সুরে কথা বলেছেন; থিউরির কিছুটা বিরোধিতা করলেও আসল লাইন থেকে দূরে সরে যাননি একেবারেই। তাহলে এই আসল লাইনটি কি, সেটা বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ।



https://en.wikipedia.org/wiki/Western_world
হান্টিংটনের কাছে সভ্যতার ম্যাপের বাইরে অন্য কোন জাতীয়তা গুরুত্ব পায়নি, কারণ সেসব জাতীয়তার পক্ষে বিশ্ব-রাজনীতিতে দীর্ঘ-মেয়াদী অবদান রাখা সম্ভব নয়।

কার-কার মাঝে এই দ্বন্দ্ব? 

হান্টিংটন যেটা বলতে চেয়েছিলেন, সেটা হচ্ছে, কমিউনিজমের পতনের পর মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সভ্যতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছে ‘ইসলামিক সভ্যতা’। মুসলিম দেশগুলি আলাদা-আলাদা-ভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকলেও তিনি পুরো মুসলিম সমাজকে একত্রেই দেখেছেন। যেহেতু পশ্চিমা সভ্যতা মুসলিমদেরকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করবে, কাজেই মুসলিমরাও প্রায় স্বভাবসিদ্ধভাবেই নিজেদেরকে একই কাতারে দেখা শুরু করবে। এটা মুসলিম দেশগুলির সরকারের ক্ষেত্রে নয়, বরং মুসলিম দেশগুলির জনগণের চিন্তায় প্রতিফলিত হবে। হান্টিংটন দেখিয়েছেন যে মুসলিম সভ্যতার সাথে সবচাইতে কম রেষারেষি হচ্ছে ‘চৈনিক সভ্যতা’র (Sinic Civilaization) বা চীনের। অর্থাৎ ইসলামিক দুনিয়াকে শক্তিশালী হতে চীন সাহায্য করতে পারে। এই গ্র্যান্ড থিউরির উপরে নির্ভর করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সভ্যতার জন্যে হান্টিংটন কিছু উপদেশ দিতেও কার্পণ্য করেননি, যেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন – “to restrain the development of the conventional and unconventional military power of Islamic and Sinic countries”. ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, এবং অন্যান্য দেশের বর্তমান অবস্থা দেখলে বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয় না যে হান্টিংটন-কে পশ্চিমারা হাল্কাভাবে নেয়নি এবং হান্টিংটনের পরের থিউরিস্টরাও ওই একই পথ নেয়াকেই যুক্তিযুক্ত মনে করেছেন।

এখানে বলাই বাহুল্য যে হান্টিংটনের কাছে জিওপলিটিক্সে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিতে পারা শক্তি ছাড়া বাকিরা গুরুত্ব পায়নি একেবারেই। যেমন ‘আফ্রিকান সভ্যতা’ নিয়ে তিনি তেমন মাথা ঘামাননি। তবে ‘ল্যাটিন আমেরিকান সভ্যতা’-কে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন এই বলে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হতে পারে। রাশিয়া (পূর্ব অর্থোডক্স সভ্যতা), জাপান এবং ভারতকে (হিন্দু সভ্যতা) তিনি আলাদা শক্তি হিসেবে দেখেছেন, তবে তাদের আসল দ্বন্দ্বের (পশ্চিম বনাম ইসলাম) সাইড-শোর বাইরে গুরুত্ব দেননি। তার কথায় এরা নিজেদের স্বার্থ বুঝে প্রধান দল দু’টির (পশ্চিম এবং ইসলাম) যেকোন একটির সাথে যাবে। হান্টিংটনের লেখায় প্রথমেই প্রত্যেক মানুষকে তিনি প্রশ্ন করেছেন যে মানুষ নিজের পরিচয় সন্বন্ধে কতটা ওয়াকিবহাল। সেই পরিচয়ের উপরে নির্ভর করেই তিনি তার থিউরি সাজিয়েছেন। তিনি এক্ষেত্রে আরব মুসলিমদের জন্যে ‘আরব’-এর চাইতে ‘মুসলিম’-কে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। অর্থাৎ আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরবের জাতীয়তার চাইতে মুসলিম পরিচয় বেশি গুরুত্ব বহণ করবে। এই মুসলিম পরিচয় কিন্তু শুধু আরবের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল থেকে শুধু করে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত সকল মুসলিম-প্রধান দেশকেই বুঝিয়ে সারে। আর যখন আমরা উপরে উল্লিখিত হান্টিংটনের উপদেশের কথা মনে করি, তখন শিউরি উঠি যে এই সকল মুসলিম দেশই এই হিসাবের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। মানে সকল মুসলিম দেশকে নিরস্ত্র করার মাঝেই পশ্চিমা সভ্যতার গ্রানাইট ফাউন্ডেশন! বাংলাদেশও এই একই হিসাবের ভেতরে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে সমস্যা হিসেবে দেখানো হলেও এই জনসংখ্যার কারণেই যে এই দেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে, সেটা অনেকেই হিসেব করেন না।


এতো বড় খেলায় বাংলাদেশ কোথায়?
 যারা বিশ্বাস করতে পারেন না যে কেন ছোট্ট বাংলাদেশ এই হিসেবের মধ্যে পড়বে, তারাও হয়তো বিশ্বাস করবেন যখন এই হিসেবের সরাসরি Receiving End-এ থাকবেন। বাংলাদেশ ছোট দেশ নয়। একুশ শতকে দেশের আকার হিসেব হচ্ছে সেই দেশের জনসংখ্যা এবং সেই জনসংখ্যার প্রকৃতির উপরে। মুসলিম বিশ্বের মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের (ভারতকেও ধরা যায় এর মধ্যে) পরপরই বাংলাদেশের স্থান। হান্টিংটন দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার দেশগুলির জিওপলিটিক্সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনার কথা বলেছেন; কারণ যার জনসংখ্যা যত দ্রুত বাড়বে, তার কাছেই যুব সমাজের (১৫ থেকে ২৪ বছর বয়স) সবচাইতে বড় অংশটা থাকবে, যারা সমাজের চালিকাশক্তি হবে। একটা দেশ কোন সমরে জড়িয়ে পড়লে এই যুব সমাজই কিন্তু জীবন দেবার জন্যে তৈরি থাকে। হান্টিংটন মুখে না বললেও বিভিন্ন গ্রাফিক্যাল এনালিসিসের মাধ্যমে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে মুসলিম বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার কারণে মুসলিম যুবসমাজ পশ্চিমের জন্যে হুমকি। জনসংখ্যার দিক থেকে বড় মুসলিম দেশগুলির কাছেই এই যুবসমাজের সবচাইতে বড় অংশটুকু রয়েছে, যা কিনা এখন টার্গেট।

একটা রাষ্ট্র বা সভ্যতা দাঁড় করাতে মানুষ লাগে। যন্ত্রপাতি লাগে সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে, কিন্তু মানুষই তো সেই যন্ত্র তৈরি করে। তালগাছ ভর্তি একটা দেশ কোন দেশ নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সেখানে মানুষ বসতি স্থাপন না করে। কাজেই এই মুসলিম জনসংখ্যার কারণেই আমরা যে টার্গেট, সেটা বুঝতে বাকি থাকেনা। এই টার্গেটকে তাহলে কি করে দুর্বল করা যায়, সেটা বুঝতে পারলে টার্গেটের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব। প্রথম টার্গেট হলো জনসংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখা। আমাকে কেউ যদি বড় জনসংখ্যার সমর্থক বলে ধিক্কার দিতে চান, তাহলে দিতে পারেন। কিন্তু এটা তাদের বোঝা উচিত যে চীন এবং ভারত শক্তিশালী দেশ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে তাদের বিশাল জনসংখ্যার কারণে, জনসংখ্যা কমিয়ে রাখার কারণে নয়। আর দ্বিতীয়ত, যুবসমাজই যেহেতু মূল টার্গেট, কাজেই যুবসমাজকে অগ্রগামী হতে বাধা দেওয়া। তাদেরকে Subversion-এর মাধ্যমে বিপথে নেওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি কাজে লাগানো এবং সরাসরি মাদক এবং অন্যান্য অবৈধ কাজে তাদেরকে নিয়োজিত করে ফেলে তাদের একটা শক্তি হিসেবে আবির্ভাবে বাধা প্রদান করা। তৃতীয়ত, দেশকে অকারণে একটা যুদ্ধে নিয়োজিত করা, যাতে যুবসমাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। শেষোক্ত এই পদ্ধতি মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশেই পাওয়া যাবে, যেখানে বিরাট এক যুবসমাজকে মুসলিমদের নিজেদের মধ্যে মারামারি লাগিয়ে ধসংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সিরিয়া এবং ইরাকে অযথা যুদ্ধ বাধিয়ে বিশাল এক জনগোষ্ঠীর সবচাইতে ভালো অংশটিকে পশ্চিমা সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হয়েছে। তাহলে এই তিনটি পদ্ধতিকে একত্র করলে আমরা পশ্চিমা সভ্যতার রক্ষাকবচ বলতে যা দেখতে পাই, তা হচ্ছে – মুসলিম জনসংখ্যা কমিয়ে রাখো; যদি তারপরেও বেড়ে যায়, তাহলে তাদের যুবসমাজকে নষ্ট করো; আর তার পরেও যদি জেগে ওঠার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি লাগিয়ে ধ্বংস করো।
http://thepoliticalscienceclub.com/wp-content/uploads/2014/04/damaged-buildings-syrian-civil-war1.jpg
ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া থেকে আমাদেরও শিক্ষা নিতে হবে। Big Picture না বুঝতে পারলে মহাবিপদের সন্মুখীন হওয়াটা আমাদের জন্যে অসম্ভব নয়।


 ভুল শুধু ভুল নয়!

বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দেশ। এদেশের ম্যারিটাইম শক্তির সম্ভাবনার উপরে আমি এর আগের কয়েকটি লেখায় আলোকপাত করেছি। এদেশের অর্থনীতির দ্রুত এগুনোর মূলে আছে এদেশের জনগণ। জনগণের বিরূদ্ধে যায় এমন যেকোন কিছু থেকে দূরে থাকাটা এই বিশ্ব-দ্বন্দ্বের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদেরকে দুনিয়া থেকে আলাদা ভেবে অন্য কোন ফর্মুলায় ফেলার বৃথা চেষ্টা করা ঠিক হবে না; কারণ উপরেই বলেছি যে বর্তমানের সব পশ্চিমা থিউরিস্টরাই ওই একই লাইনে কথা বলছেন। তারা কিন্তু তাদের কথা লুকাননি; আমরা যদি বুঝতে ভুল করি, সেই ভুল আমাদের। সাদ্দাম হোসেন ইরাকী জাতীয়তাবাদের নাম করে যুদ্ধে জড়িয়ে ইরাকের সামরিক শক্তিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে পশ্চিমাদের খায়েস মিটিয়েছিলেন। যা বাকি ছিল, সেটা ২০০৩ সালে জর্জ বুশ ফিনিস করেছিলেন ইরাক আক্রমণ করে। এরপর ইরাক এবং সিরিয়ার পুরো যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত জেলখানায় সৃষ্ট ISIS এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চদের তৈরি সিরিয়ার আল-আসাদ পরিবারের দুষ্টচিন্তা-প্রসূত উন্মাদনার কারণে। তুরস্কও ওই যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে। লিবিয়া বেসামাল; আর ইয়েমেনের যুদ্ধে জড়ানো হয়েছে পুরো আরবকে। তিউনিসিয়া এবং মিসর অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল। আফগানিস্তান আর দাঁড়াতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ক্রন্দনরত। দূরবর্তী দ্বীপদেশ ইন্দোনেশিয়া এবং মালেশিয়াকে বাইরে রাখলে বাকি থাকছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের যুবসমাজকে কল্পনার জগতে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে আরও আগে থেকেই। তবে এতে এখনো পুরো কাজ হয়নি। ষোল কলা পূর্ণ করতে কি দরকার? --- যুদ্ধ! নিজের দেশের উপরে আক্রমণ আসলে যুদ্ধ করতে হতেই পারে। কিন্তু সেটারও সময় আছে। দেশ সেই যুদ্ধের জন্যে কতটুকু প্রস্তুত, সেটা চিন্তা করে দেখতে হবে। প্রস্তুত হবার আগেই এড্রিনালিনের উপরে ভর করে নিজেদের গৌরব বৃদ্ধি করতে গিয়ে যুদ্ধে জড়ানো হবে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে বিপদের মাঝে ফেলে দেওয়া। Big picture ভুলে গিয়ে Small picture নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলে মারাত্মক ভুল হয়ে যাবে। সেই ভুলের মাশুল চিরকাল গুণতে হতে পারে। প্ররোচনা আসতেই পারে। কিন্তু সেই প্ররোচনা জাদুকরের ছলনা কিনা, সেটা বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকাটা জরুরি। জাদুকর কিন্তু মানুষের ছোট ছোট প্রবৃত্তিকেই (Instinct) কাজে লাগাবে। কাজেই কোন ধরনের আবেগের বশবর্তী না হয়ে Rational চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে Big picture চিন্তা করে সঠিক সময়ের জন্যে অপেক্ষা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যেদিন আমরা জাদুকরের ছলনা পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম হবো, সেদিনই বুঝে নেব যে আমরা প্রস্তুত; তার আগে নয়।

Tuesday 22 September 2015

ফ্রান্সিস ড্রেইক এবং আমাদের নৌ-চিন্তার ভিত্তি

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ফ্রান্সিস ড্রেইক কে ছিলেন সেটা নিয়ে একেক দেশের মানুষের মাঝে দ্বিমত থাকলেও তিনি যে ব্রিটেনকে একটা ম্যারিটাইম দেশ হিসেবে তৈরি করতে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন, সেটা অস্বীকার করার উপায় কারুরই নেই।


ফ্রান্সিস ড্রেইক (Sir Francis Drake, 1540-1596) ইতিহাসে কি হিসেবে পরিচিত? সেটা অবশ্য নির্ভর করছে সেই ইতিহাস কে রচনা করেছিল। কারণ স্প্যানিশ-পর্তুগীজ-ফ্রেঞ্চদের কাছে ড্রেইক ছিলেন একজন জসদস্যু; আর ব্রিটিশদের কাছে তিনি একজন জাতীয় বীর। তিনি আসলে কি করতেন? ড্রেইক ইংল্যান্ডের শত্রু দেশের বাণিজ্য জাহাজ এবং বাণিজ্য কেন্দ্র হামলা করে লুট করতেন। ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ (রানী ছিলেন ১৫৫৮ খ্রিঃ-১৬০৩ খ্রিঃ) ড্রেইককে পছন্দ করতেন বলেই তিনি তাকে জলদস্যুতার জন্যে সাজা দেননি। বরং যখন স্পেনের সাথে ইংল্যান্ডের যুদ্ধ (১৫৮৫ খ্রিঃ-১৬০৪খ্রিঃ) বেধে গেল, তখন এলিজাবেথ তাকে ভাইস এডমিরাল পদে নিয়োগ দেন। এর আগেই পৃথিবী প্রদক্ষিণের (১৫৭৭ খ্রিঃ-১৫৮০খ্রিঃ) পরপরেই ড্রেইককে নাইট উপাধি দেন রানী। স্প্যানিশদের কাছ থেকে সমুদ্রের দখল নিতে ইংল্যান্ডের জন্যে ড্রেইকের অবদান অনস্বীকার্য। ড্রেইকের আসল অবদান অবশ্য স্প্যানিশদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করা বা দস্যুবৃত্তি নয়। ১৫৭৭ সালে দুনিয়া প্রদক্ষিণের মিশনে বের হবার সময় ড্রেইক বেশ কিছু সম্ভান্ত বংশীয় যুবককে তার সাথে নেন। এই ব্যাপারটার গুরুত্ব অনেকে না বুঝলেও স্প্যানিশ নীতিনির্ধারকেরা ঠিকই বুঝেছিলেন। তারা যেটা সন্দেহ করেছিলেন তা হচ্ছে, ড্রেইক ইংলিশ নৌবাহিনীর অফিসার কোর তৈরি করার জন্যেই তার সাথে ওই যুবকদের নিয়েছিলেন। ড্রেইকের মিশনে রানী এলিজাবেথ নিজেও গোপনে বিনিয়োগ করেছিলেন, যা কিনা ওই মিশনের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। ড্রেইক এই মিশনের মাধ্যমে রয়্যাল নেভির অফিসার কোর তৈরি করার যে ট্র্যাডিশন তৈরি করেছিলেন, সেটা পরবর্তীতে ব্রিটিশদের সমুদ্রের রানী বানাতে ব্যাপক সাহায্য করেছিল।


শুধুই বাণিজ্য, নাকি আরও কিছু?


এখানে একটা ব্যাপার কিছুটা অদ্ভুত ঠেকলেও বিশেষভাবে বিবেচ্য। ড্রেইকের মিশনটা কি বেসামরিক ছিল, নাকি সামরিক ছিল? প্রাইভেট ছিল, নাকি সরকারী ছিল? এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে হলে কিছু ব্যাপার ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। ড্রেইক কয়েকবার স্প্যানিশদের আমেরিকান উপনবেশের বিরূদ্ধে মিশনে বের হন। ষোড়শ শতকে ক্যাথোলিক স্প্যানিশ এবং পর্তুগীজরা তাদের আমেরিকান কলোনিগুলিতে আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস, সোনা, রূপা, চিনি, ইত্যাদির একচেটিয়া ব্যবসা করতো। ইংলিশ এবং ফ্রেঞ্চরা এই ব্যবসা থেকে ছিল বঞ্চিত। স্প্যানিশ-পর্তুগীজরা শক্তি দিয়ে এই বাণিজ্য রক্ষা করতো। কাজেই এই বাণিজ্যে ভাগ বসাতে হলেও শক্তির প্রয়োজন হতো। নব্য পুঁজিবাদের এই সময়ে মার্কেন্টিলিস্ট পলিসি অনুসরণ করতো সবাই – অর্থাৎ অর্থনীতি ছিল রপ্তানি নির্ভর; কমদামে বেসিক পণ্য আমদানী করে বেশি দামে ফিনিশড গুডস রপ্তানি করেই চলতো এসব দেশের অর্থনীতি। এই নীতিতে একে অপরকে নিজের আফ্রিকান এবং আমেরিকান বাণিজ্য কেন্দ্রের কাছে আসতেই দিত না; ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চ জাহাজ দেখলেই স্প্যানিশ-পর্তুগীজরা আক্রমণ করে বসতো, অথচ এসব দেশের মধ্যে তখন যুদ্ধাবস্থা ছিল না! ইংল্যান্ড থেকে যেসব জাহাজ আমেরিকায় বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতো, তারা গোপনে ইংল্যান্ড ছাড়তো। কিন্তু তারা ইংল্যান্ড ছাড়ার আগেই স্প্যানিশ চর মারফত স্প্যানিশ সরকার খবর পেয়ে যেত এবং স্প্যানিশ রাষ্ট্রদূত এলিজাবেথের কাছে আর্জি নিয়ে যেত সেই মিশন বন্ধ করার জন্যে। এই ধরনের প্রতিযোগীতার কারণে ড্রেইক এবং অন্যান্য যারা আমেরিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতো, তারা তাদের জাহাজগুলিকেই শুধু অস্ত্রসজ্জিত করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা তাদের নাবিকদের সিলেক্ট করার ক্ষেত্রেও একই রকম সাবধানতা অবলম্বন করতো। তাদের জাহাজের নাবিকদের বেশিরভাগই অস্ত্র চালনায় দক্ষ হতো। অথচ তারা কিন্তু ‘বাণিজ্যের’ উদ্দেশ্য নিয়েই বের হতো সমুদ্রে।

আটলান্টিক মহাসাগরে বাণিজ্য ছিল ক্রীতদাস বাণিজ্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই বাণিজ্যের দখল নিতেই ইউরোপিয় দেশগুলির মাঝে হয় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা

একচেটিয়া ব্যবসার রক্ষার্থে

প্রথমে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে গিয়ে তারা ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে আনা পণ্য বিক্রি করতো এবং সেখান থেকে কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস দিয়ে জাহাজ ভর্তি করতো। এরপরে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে এই ক্রীতদাসদের তারা আমেরিকায় স্প্যানিশ উপনিবেশগুলিতে বিক্রি করতো, যেখানে আদিবাসীদের নির্মমভাবে নিধনের কারণে চাষাবাদ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজের জন্যে জনবলের বড়ই অভাব ছিল। আফ্রিকার উপকূলে এলেই পর্তুগীজরা ইংলিশ জাহাজগুলিকে আক্রমণ করে বসতো। ইংলিশরা নিজেদেরকে রক্ষা করেই জোরপূর্বক আফ্রিকায় তাদের বাণিজ্য সম্পন্ন করতো; আবার আমেরিকাতে গিয়েও জোরপূর্বক তারা বাণিজ্য করতো। স্প্যানিশ উপনিবেশের অধিকর্তারা তাদের সরকারের নির্দেশের বিরূদ্ধে না গিয়ে ইংলিশ জাহাজকে বাণিজ্য করতে না দিলে ইংলিশরা তাদের জাহাজ থেকে উপকূলে অস্ত্রধারী নাবিকদের নামিয়ে দিত। তারা পরে অস্ত্রের মুখে বাণিজ্য করতো। ড্রেইক এবং বাকিরা এরকম অস্ত্রের মুখে বাণিজ্য করেই ক্ষান্ত হননি। তারা সরাসরি স্প্যানিশ জাহাজে হামলা করে জাহাজ লুট করেছেন, জাহাজের নাবিকদের মাঝে কিছু লোককে বন্দী করে পরবর্তীতে আলোচনায় ব্যবহার করেছেন, এবং যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই স্থলভাগে সৈন্য নামিয়ে (উভচর উভিযান) ব্যাপক লুটতরাজ এবং ক্ষতিসাধন করেছেন। এই ব্যাপারগুলি ইংলিশরা খারাপ চোখে দেখেনি। তারা চেয়েছে আমেরিকার নতুন বাজারে বাণিজ্য করতে, কারণ সেই বাণিজ্যের মাঝেই তারা নিজেদের সমৃদ্ধি দেখতে পেয়েছিল। স্প্যানিশ-পর্তুগীজদের একচেটিয়া বাণিজ্য তারা দেখতে আগ্রহী ছিল না। অন্যদিকে স্প্যানিশ-পর্তুগীজরা মনে করতো যে – আমরাই আমেরিকায় প্রথম এসেছি; আমরাই সেই ভূমি খুঁজে পেয়েছি অনেক কষ্ট করে; যদি কারও বাণিজ্য করার অধিকার সেখানে থাকে, তাহলে সেটা আমাদের। এটা ছিল একটা এলাকার বাণিজ্যসহ পুরো ভূমি কপিরাইট করার এক অনন্য উদাহরণ। আপাতদৃষ্টে এই মনোপলি ব্যাবসার বিরূদ্ধে ইংলিশদের একটা ভালো জাতি মনে হলেও পরবর্তীতে সারা বিশ্বে নিজেদের বাণিজ্য আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশরা ঠিক এই কাজটাই করেছে; তখন অবশ্য ব্রিটিশদের কাছে এটা মনে হয়েছে নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার যুক্তিযুক্ত সংগ্রাম।



স্প্যানিশদের বাণিজ্য জাহাজগুলির হাত থেকে বাণিজ্যের কতৃত্ব ছিনিয়ে নেবার জন্যে ব্রিটিশরা তাদের বাণিজ্য জাহাজগুলিকে সাজাতো যুদ্ধজাহাজের আঙ্গিকে; নাবিকগুলিকেও তারা সেভাবেই নিত।


বাণিজ্যের জন্যে জাহাজ, নাকি যুদ্ধের জন্যে?


ইংলিশ রাজ দেখেছেন তার দেশের উন্নতির দিকগুলি। যেকারণে তিনি তার দেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখেছেন। যেখানেই দরকার হয়েছে, সেখানেই তিনি ব্যবসায়ীদের সাথে অংশীদারীত্বে গিয়েছেন - ব্যবসা করার জন্যে নয়, বরং দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্যে। দেশের স্বার্থ এখানে সরকারী-বেসরকারী মালিকানার উর্ধে ছিল সবসময়। নিজের দেশের বাণিজ্যকে রক্ষা করার জন্যে সবকিছু করেছেন ইংলিশ রাজ। এমনকি যখন তারা এটা বুঝতে পেরেছেন যে স্প্যানিশ সমুদ্র বাণিজ্যে ভাগ বসানোর মাঝেই তাদের উন্নতি নিহিত, তখন তারা স্প্যানিশদের বিরূদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেও পিছপা হননি। এই ব্যাপারগুলিকে খুব হিংসাত্মক মনে হলেও এটা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে এরকম হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা পুঁজিবাদ স্বাভাবিকভাবেই তৈরি করে। কাজেই যতদিন পৃথিবীতে পুঁজিবাদী শাসন চালু থাকবে, ততদিন সব দেশেরই নিজের বাণিজ্যিক স্বার্থকে নিজেরই দেখতে হবে। এখানে লজ্জা পেয়ে অভদ্রতা মনে করে কেউ যদি অন্য কোন বাণিজ্য-শক্তিকে ছাড় দিয়ে বসে, সেটা হবে কৌশলগত দিক থেকে বিরাট এক ভুল। ব্রিটিশরা লজ্জা করেনি বলেই ছোট্ট একটা দেশ হয়েও তারা দুনিয়ার রাজা বনে গিয়েছিল। বাণিজ্য করা এবং বাণিজ্য রক্ষার মাঝে তারা কোন পার্থক্য করেনি। দুই-ই তাদের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেকারণে তাদের বাণিজ্য জাহাজের বহর দেখলে বোঝা সম্ভব ছিল না যে সেগুলি বাণিজ্যের জন্যে, নাকি যুদ্ধের জন্যে তৈরি। তাদের বাণিজ্য জাহাজের সব নাবিকেরাই যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত থেকেছে সর্বদা। যেসব জাহাজ সরাসরি বিপক্ষের যুদ্ধজাহাজের বিরূদ্ধে যুদ্ধে নামেনি, সেসব জাহাজ সৈন্য পরিবহণ করেছে এবং উভচর অভিযানে অংশ নিয়েছে। বিপক্ষের সম্পদবাহী বাণিজ্য জাহাজ দখলের মাঝে তারা তাদের দেশের উন্নতিই শুধু দেখেনি, বরং এটা ছিল পরবর্তীতে বিংশ শতকের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং যুদ্ধের চিন্তার শুরু। বিশেষ করে সমুদ্র বাণিজ্যের উপরে নির্ভরশীল একটা দেশকে কুপোকাত করতে হলে সেই দেশের সমুদ্র বাণিজ্যকেই যে কুপোকাত করতে হবে, এই থিওরিটা বুঝতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি কারুর। বিপক্ষের বাণিজ্য জাহাজ আক্রমণ থেকে লজ্জাবশতঃ দূরে থাকলে নিজেদেরই ক্ষতি – এটা ইউরোপিয়দের মাঝে ব্রিটিশরাই প্রথম বুঝেছিল। নিজের উপরে এই থিওরি কার্যকর হলে কেমন লাগে, সেটাও অবশ্য ব্রিটিশরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মান সাবমেরিন বহর ব্রিটেনকে না খাইয়ে মারার উপক্রম করেছিল।



ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারত, ১৮০৫ সাল। যদি কোম্পানি হয় বেসরকরারী সংস্থা, তাহলে তারা ভারতে রাজনীতি এবং সমরনীতিতে কি করছিল? তাহলে ১৮০৫ সালের এই ম্যাপ কি বেসরকারী না সরকারী??


দেশের স্বার্থ কি সরকারী-বেসরকারী বা সামরিক-বেসামরিকের মাঝে আলাদা?

দেশের স্বার্থের মাঝে সরকারী-বেসরকারী অথবা সামরিক-বেসামরিক কিছু নেই; দেশের স্বার্থ মানেই সেটাকে রক্ষা করতে হবে সর্বশক্তি দিয়ে – এটাই ছিল ড্রেইকের সময়ের পুঁজিবাদী সমাজের নীতিনির্ধারকদের চেতনা। এই চেতনার উপরে নির্ভর করেই তারা দুনিয়া শাসন করেছে এবং যেসব জাতির উপরে ছড়ি ঘুরিয়েছে, সেসব জাতির মাঝে যাতে এই চেতনাগুলির জন্ম না হয়, সেটার ব্যবস্থা করেছে। এমন এক বিশ্বব্যবস্থার জন্ম তারা দিয়েছে, যেখানে সমুদ্র বাণিজ্য থাকবে অল্প কিছু কোম্পানির হাতে, যেগুলির মালিকানা থাকবে পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলির হাতে। আর এই বিশ্বব্যবস্থা এমন একটা নিয়ম করে রাখবে, যার কারণে ওই বাণিজ্যকে চ্যালেঞ্জ করার একমাত্র পদ্ধতি থাকবে বেসামরিক-বাণিজ্যিক, যা কিনা বেশিরভাগ আপশ্চিমা দেশের জন্যে পুঁজিভিত্তিক অর্থনৈতিক কারণে সম্ভব হবে না। কাজেই যেকোন মুহূর্তে খুব সহজেই যেকোন দেশের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বা অর্থনৈতিক যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হবে। অথচ ব্রিটিশসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি যখন নিজেদের বাণিজিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে, তখন কিন্তু সামরিক-বেসামরিক কোন আলাদা কিছু ছিল না। আমরা সকলেই ভুলে যাই যে ভারতীয় উপমহাদেশ প্রথম একশ’ বছর শাসন করেছে ব্রিটিশ সরকার নয়, বরং ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি, যা কিনা প্রাচ্যে ব্রিটিশদের সকল বাণিজ্যের দেখভাল করতো। তারা সৈন্য এবং যুদ্ধজাহাজ দিয়ে উপমহাদেশের বাণিজ্যকেন্দ্রগুলি দখল করেছে এবং সকল ধরণের কূটকৌশল অবলম্বন করেছে এই দেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করে দেশের বাণিজ্যসহ স্থলভূমি দখল করে এদেশের মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করতে। তাহলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কি সরকারী প্রতিষ্ঠান ছিল, নাকি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ছিল? সামরিক প্রতিষ্ঠান ছিল, নাকি বেসামরিক? আজ আমাদের দেশের এফবিসিসিআই যদি ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো কাজ করতে যায়, তাহলে শুধু উদ্ভটই শোনাবে না, পশ্চিমা শক্তিগুলি তাদের কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামরিক সকল শক্তিকে কাজে লাগাবে এই ধরনের কার্যকলাপের বিরূদ্ধে। যে কাজটা পশ্চিমা দেশগুলি একসময় নির্দ্বিধায় করেছে, সেটাকে তারা আজ খারাপ বলবে – এটা হতে পারে না। বরং তারা চায় না যে তাদের পথ অনুসরণ করে তাদেরই সাম্রাজ্য অন্য কেউ দখল করে নিক। চীনারা যখন এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় তাদের বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি করে, পশ্চিমা দেশগুলি তখন এই বিপদটাই দেখে। চীনারাও গত কয়েকশ’ বছরের ইতিহাস ভুলে না গিয়ে তাদের বাণিজ্য জাহাজের পিছনে পিছনে যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে ভুলেনি। তারা পশ্চিমা ক্রীতদাসের শৃংখল থেকে বের হয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টায় রত।

বিখ্যাত মার্কিন জিওস্ট্র্যাটেজিস্ট এবং জিওপলিটিশিয়ান আলফ্রেড মাহান একটা জাতিকে ম্যারিটাইম জাতিতে পরিণত করতে ‘রিজার্ভের’ কথা বলেছিলেন। এই রিজার্ভে তিনি বলেছিলেন সেই জাতির সী-ফেয়ারিং মানুষের সংখ্যার কথা – অর্থাৎ কত মানুষ সমুদ্র-চারণের উপরে নির্ভরশীল। সেই দেশের সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ পরিচালনা করা ছাড়াও সেই জাহাজ তৈরি এবং মেরামতের দক্ষ জনশক্তিকে মাহান রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ষোড়শ শতকে ব্রিটিশ নাবিক এবং পরবর্তীতে রয়্যাল নেভির এডমিরাল ফ্রান্সিস ড্রেইক যখন তার জাহাজে সম্ভ্রান্ত যুবকদের ট্রেনিং দিচ্ছিলেন, তখন কিন্তু তিনিও এই ‘রিজার্ভ’ তৈরি করছিলেন। এই রিজার্ভই পবর্তীতে ব্রিটিশদের নৌবাহিনীকে করেছে জগদ্বিখ্যাত। মাহান সামরিক সমুদ্রশক্তিকে বেসামরিক সমুদ্রশক্তির পিছনে রেখেছিলেন। কারণ তার কথায় বাণিজ্য জাহাজ ছাড়া একটা জাতি খামোকা যুদ্ধজাহাজ বানাবে না। আর বাণিজ্য জাহাজ চালাতে না জানলে সেই জাতি সমুদ্রকেও চিনবে না এবং যুদ্ধজাহাজও চালাতে শিখবে না; অর্থাৎ সেই জাতির ম্যারিটাইম জাতি হবার কোন সম্ভাবনাই থাকবে না।

ব্রিটিশরা যখন দুনিয়ার দখল নিয়েছিল, তখন তারা সামরিক-বেসামরিক বা সরকারী-বেসারকারীর মাঝে দাগ টানেনি। কিন্তু তাদের উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা দেবার সময় কিন্তু এই দাগগুলি টেনে দিতে তারা ভুলেনি

আসলে চিন্তার ভিত্তিটা কোথায়?

এই সামরিক-বেসামরিক আলোচনার ইতি টানতে ষোড়শ শতকে তৈরি ব্রিটেনের ‘এডমিরালটি এন্ড ম্যারিন এফেয়ার্স’ অফিসের দিকে তাকাতে হবে। এই অফিস তাদের ম্যারিটাইম সকল কিছু দেখাশুনা করতো, যার সর্বোচ্চ পদাধারী ছিলেন লর্ড হাই এডমিরাল, যিনি বেশিরভাগ সময়েই ছিলেন একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তি। তার দায়িত্ব বর্তমান যুগের বাণিজ্য, নৌ, নৌবাহিনী এবং কোস্ট-গার্ড একত্র করে মন্ত্রণালয় তৈরি করলে সেটার সমান হতে পারে। তার অধীনে দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন ভাইস এডমিরাল অব ইংল্যান্ড, যিনি ছিলেন আসলে নেভি-এর চীফ অব স্টাফ। নৌবাহিনীর ব্যাপারে তিনি সিভিলিয়ান লর্ড হাই এডমিরালকে উপদেশ দিতেন। এই দু’জনের নিচে একই এডমিরালটি অফিসের অধীনে ছিল অর্ডন্যান্স, ট্রেজারার, সার্ভেয়র, কন্ট্রোলার এবং ক্লার্ক, যারা জাহাজ তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতেন এবং ম্যারিটাইম শক্তি ধরে রাখার জন্যে সব ধরনের রিজার্ভের দিকে খেয়াল রাখতেন। নৌ-বিষয়ক সকল কিছু একটা অফিসের অধীনে হওয়াতে সমুদ্রকেন্দ্রিক জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে সবসময় একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এই নীতিই কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানে চালু আছে। এই নীতির সুবিধা হিসেবে উদাহরণস্বরূপ বলা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে। ব্রিটেনের বেশিরভাগ ফিশিং ট্রলারই মিলিটারি সার্ভিসের জন্যে উপযুক্ত ছিল এবং শত শত জাহাজ নৌবহরে শুধু যুক্তই হয়নি, বেসামরিক জাহাজের ডিজাইন কপি করে হাজার হাজার জাহাজ তৈরি করা হয়েছিল যেগুলি যুদ্ধের সময়ে জার্মান সাবমেরিনের হাত থেকে আটলান্টিক নৌ-বাণিজ্যপথ রক্ষা করতে এন্টি-সাবমেরিন জাহাজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, অথবা নৌপথ নিরাপদ রাখতে মাইন-সুইপার হিসেবে ব্যবহার হয়েছে, অথবা প্যাট্রোল বোট হিসেবে ব্রিটিশ উপকূল রক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময়েও ব্রিটিশরা অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সিভিলিয়ান লাইনার জাহাজ সৈন্য পরিবহণের জন্যে প্রস্তুত করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আটলান্টিক মহাসাগরের পরিবহণ জাহাজের কনভয়গুলির কমান্ডার থাকতেন একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ নৌবাহিনী অফিসার। এগুলি সম্ভব হতো না কোনদিনই যদি ব্রিটিশদের ম্যারিটাইম চিন্তায় সরকারী-বেসরকারী বা সামরিক-বেসামরিক চিন্তার বিভেদ থাকতো।

বাংলাদেশ ইতিহাসের এমন একটা অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে সমুদ্র নিয়ে। আমরা চিন্তা কোন ভিত্তির উপরে করবো, সেটার উপরে নির্ভর করবে চিন্তাটা কতটা শক্তিশালী হবে। অন্যের তৈরি করে দেওয়া ভিত্তির উপরে দাঁড়াতে চাইলে অন্যের স্বার্থই দেখা হবে। তবে এটাও জেনে রাখা প্রয়োজন যে নিজেদের ভিত্তি নিজেরা তৈরি করতে চাইলে যেসব বাধা আসবে সামনে, সেগুলি অতিক্রম করার মতো শক্ত নীতি-নির্ধারনী ভূমিকা নিতে পারার মতো স্বাধীনতা আমাদের নেতৃত্বের থাকতে হবে।

Tuesday 15 September 2015

ব্রিটিশ-ডাচ বিরোধ এবং আমাদের জন্য শিক্ষা

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  
ইংলিশরা রানী এলিজাবেথের সময় তেমন শক্তিশালী না হলেও তার সময়েই ইংল্যান্ড সমুদ্রে তার প্রথম প্রতিদ্বন্দী স্পেনকে তার রাস্তা থেকে সড়াতে সক্ষম হয়।



ইউরোপের ছোট্ট রাষ্ট্র ইংল্যান্ডের সারা বিশ্বের মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভাব এবং তাদের দ্বারা পরবর্তীতে বিশ্বের এক বিশাল অংশের ভাগ্য নির্ধারণী রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিভাজন এক সত্যিকারের আশ্চর্য্য ইতিহাস। দুই শতকের বেশি সময় ধরে দুনিয়ার রাজা বনে যাওয়া এই রাষ্ট্রের ইতিহাস পর্যালোচনার মাঝে নিহিত রয়েছে অনেক রাষ্ট্রের বর্তমান উত্থান বা পতনের মূল গল্প, যা কিনা সেই রাষ্ট্রসমূহের ভবিষ্যত চিন্তার পেছনে ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। কিছুদিন আগে মার্কিন জিওপলিটিশিয়ান আলফ্রেড মাহানের থিওরির উপরে ভিত্তি করে ব্রিটিশদের (তথা ইংলিশদের) ভারতীয় উপমহাদেশের সবচাইতে শক্তিশালী রাষ্ট্র বাংলাকে বিভাজনের কাহিনী নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সেই আলোচনারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামনের দিনগুলি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাণিজ্য জাহাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলাম। এই সমুদ্র বাণিজ্য নিয়েই আজকে কিছু কথা বলতে চাই, যা থেকে ভারত মহাসাগর এবং অন্যত্র ব্রিটিশদের সমুদ্র বাণিজ্য-কেন্দ্রিক চিন্তাধারার কিছু প্রধান দিক পাওয়া সম্ভব। আর এই চিন্তাধারাগুলি বাংলাদেশের মানুষের জন্যে ভারত মহাসাগর নিয়ে চিন্তার জন্যে দেবে নতুন খোরাক।

ইংল্যান্ডের কাহিনী কি শুধু ইংল্যান্ডে?

ইংল্যান্ড নিয়ে কথা বলতে চাইলেও ইংল্যান্ডের ইতিহাস এখানে বর্ণনা করতে চাই না। বরং ইউরোপের কঠিন বাস্তবতা পেরিয়ে ইংল্যান্ড কিভাবে অন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির সামনে চলে আসে, সেটা নিয়েই কথা বলবো। অর্থাৎ ইংল্যান্ডের সাথে ইউরোপের অন্য দেশগুলির সম্পর্কই হবে আজকের আলোচনার মূল ভিত্তি। এর আগের লেখাগুলিতে বলার চেষ্টা করেছি যে ইংল্যান্ড (তথা ব্রিটেন) সমুদ্র বাণিজ্যকে কাজে লাগিয়ে বিশাল সম্পদের মালিক বনে যায়। সেই ইতিহাস ঘাটতে হলে ইউরোপের অন্য দেশগুলির সমুদ্র বাণিজের ইতিহাসও ঘাটতে হবে; কারণ এদের সকলের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা। একজনের উত্থান আরেকজনের পতন ঘটিয়েছে। ইউরোপের এই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি পুঁজিবাদের প্রধান স্তম্ভগুলিকে কাজে লাগিয়েই একে অপরকে পেছনে ফেলতে চেয়েছে। একত্রে চলার নীতি তারা পুঁজিবাদ থেকে কখনো পায়নি বলেই কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে একত্রে হতে দেখা গেলেও সেটা ছিল মূলত স্বল্প সময়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত; দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা নয়। দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা বলতে রাষ্ট্রের উত্থানই তাদের একমাত্র পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে। ইউরোপে রেনেসাঁর সময় থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের বিরূদ্ধে সবচাইতে বড় প্রতিদ্বন্দী হয়ে দাঁড়ায় স্পেন এবং পর্তুগাল। এই দুইটি দেশ আফ্রিকা এবং আমেরিকায় নতুন ভূমি খুঁজে পাওয়া এবং সেখানে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে বিশাল সম্পদের অধিকারী হতে থাকে। তারা পুঁজিবাদের মার্কেন্টিলিস্ট পলিসির উদাহরণ টেনে একচেটিয়া (মনোপলি) ব্যবসা করতে থাকে সেই নতুন জায়গাগুলিতে। এখানে ইংলিশ এবং ফ্রেঞ্চদেরকে তারা দাঁড়াতেই দেয়নি। ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলি তখন দক্ষিণ ইউরোপের সাথে উত্তর এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিরে মাঝে সমুদ্র বাণিজ্য করেই দেশ চালাতো। এই বাণিজ্য তাদের জন্যে ছিল অপেক্ষাকৃত কম লাভজনক, কারণ এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ডাচদের হাতে, যারা ছিল স্প্যানিশ রাজ্যের একটা অংশ। এই ডাচদের কাহিনীই হয়ে দাঁড়ালো ইউরোপের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী।

 
https://en.wikipedia.org/wiki/Anglo-Dutch_Wars
ইংলিশরা সপ্তদশ শতকে ডাচদের বিরূদ্ধে তিন দফা যুদ্ধ করেও তাদের নৌশক্তিকে পুরোপুরি খর্ব করতে ব্যর্থ হয়। তবে তৃতীয় দফা যুদ্ধই বলে দেয় যে ডাচদের দুর্বলতা কোথায়।

ডাচদের উত্থান ও পতন

ষোড়শ শতকের শেষ দিকে ইংলিশদের সাথে স্প্যানিশ এবং পর্তুগীজদের বাণিজ্য দ্বন্দ শুরু হয়। ক্যাথোলিক এই দুই দেশ ‘নিউ ওয়ার্ল্ড’ বা আমেরিকাতে ইংলিশ এবং ফ্রেঞ্চদের বাণিজ্য করার অনুমতি না দেয়ায় শেষোক্ত দেশদু’টি জলদস্যুতার আশ্রয় নেয়। সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি এবং চালনায় ইংলিশরা এগিয়ে থাকায় তারাই একমাত্র স্প্যানিশদের জন্যে সত্যিকারের বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। স্পানিশরা বহু দূরদুরান্তে উপনিবেশ স্থাপন করলেও স্প্যানিশরা জাতি হিসেবে সমুদ্রের প্রতি খুব বেশি ভালোবাসা রাখতো না। তাদের বাণিজ্য জাহাজের একটা বিরাট অংশ চালনা করতো ডাচরা, যারা বহু আগে থেকেই সমুদ্রগামী জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল (এ বিষয়ে এর আগেও আলোচনা করেছি)। ডাচদের সমস্যা ছিল তাদের প্রায় উন্মুক্ত স্থলসীমান্ত। স্প্যানিশরা স্থলশক্তি হওয়ায় তারা ডাচদের সীমানা প্রহরার জন্যে সেনাবাহিনী রক্ষণাবেক্ষণ করতো, যা কিনা ডাচদের নিজেদের জন্যে ছিল বেশ কষ্টকর। ডাচরা এর বিনিময়ে স্পানিশদের সমুদ্রগামী জাহাজগুলি চালনা করতো। শুধু তা-ই নয়, ইউরোপের উপকূলের ঠিক মাঝামাঝি হবার কারণে দক্ষিণ ইউরোপ এবং উত্তর-পূর্ব ইউরোপের মাঝে বেশিরভাগ বাণিজ্যই তারা নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়। এর সাথে সাথে রাইন নদী নেদারল্যান্ডের মাঝে দিয়ে সমুদ্রে পড়ায় তাদের দেশের মাঝ দিয়ে এই নদী ব্যবহার করে জার্মানরা তাদের প্রায় সকল বাণিজ্য সম্পাদন করতো। রাইন ছিল মধ্য-ইউরোপের সুপার হাইওয়ে; আর সেটার চাবি ছিল ডাচদের হাতে। ডাচদের হাতে ছিল ইউরোপের সমুদ্রগামী বাণিজ্য জাহাজের বহরের বেশিরভাগ। ডাচরা আমেরিকা এবং এশিয়াতে অনেক উপনিবেশ স্থাপন করে এবং বিশাল সম্পদের মালিক হয়ে যায়। তবে ডাচরা স্প্যানিশদের অধীনে থাকতে চায়নি। তারা স্প্যানিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার জন্যে ১৫৬৮ সাল থেকে ১৬৪৮ পর্যন্ত ৮০ বছর সংগ্রাম করেছে। স্প্যানিশদের থেকে ডাচরা আলাদা হবার সাথে সাথেই ডাচদের স্থলসীমান্ত পাহাড়া দেবার দায়িত্ব পড়ে যায় নিজেদের ঘাড়ে। সেনাবাহিনীর ভার সামলাতে গিয়ে তারা নৌবাহিনীকে দুর্বল করতে বাধ্য হয়। আর শক্তিশালী নৌবহর না থাকার কারণে তাদের সমুদ্র বাণিজ্যকে শত্রু দেশগুলি থেকে রক্ষা করার কোন পদ্ধতিই রইলো না। আর অপরদিকে এমনিতেই সমুদ্রাভিমুখী না হবার কারণে স্প্যানিশরা ইংলিশদের কাছে শুধু হেরেই যাচ্ছিলো। আর ডাচদের হারিয়ে স্প্যানিশদের দুর্বল হবার ইতিহাসের শেষ হয়।

সপ্তদশ শতাব্দীকে ডাচদের স্বর্ণযুগ বলা হয়; যার অবসান হয় ব্রিটিশদের সাথে টিকতে না পেরে। স্বাধীনতা পাবার পরপরেই ডাচদের উপরে চড়াও হয় ইংলিশরা। সমুদ্র বাণিজ্য থেকে ডাচদের বের করার চেষ্টায় ১৬৫২ সালে ইংলিশরা যুদ্ধ শুরু করে ডাচদের সাথে। যুদ্ধে ইংলিশরা ডাচদের ১,২০০ থেকে ১,৫০০ বাণিজ্য জাহাজ দখল করে নেয়, কিন্তু তারপরেও ১৬৫৪ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত সমুদ্র থেকে ডাচদের বিতাড়িত করতে ব্যর্থ হয়। এই কারণে ১৬৬৫-৬৭ সালের মধ্যে ইংলিশদের সাথে ডাচদের আরেক দফা যুদ্ধ হয় সমুদ্র বাণিজ্যের দখল নিয়ে। এবারেও ইংলিশরা ৪৫০টা ডাচ জাহাজ দখল করলেও যুদ্ধ জিততে ব্যর্থ হয়। পরপর দু’টা যুদ্ধ শেষপর্যন্ত ডাচদের দিকে হেলেই শেষ হয়। কিন্তু ইংলিশরা হাল ছাড়েনি। ১৬৭২ সালে ইংলিশরা ফ্রেঞ্চদের সাথে একত্রিত হয়ে যুদ্ধ শুরু করে ডাচদের বিরূদ্ধে। ফ্রেঞ্চরা ডাচদের স্থলভূমি দিয়ে আক্রমণ করায় এবারে যুদ্ধের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়। সমুদ্র থেকে ইংলিশ এবং ফ্রেঞ্চ নৌবহর আক্রমণ করে ডাচদের হারাতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু ফ্রেঞ্চ সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করতে গিয়ে ডাচদের সেনাবাহিনীতে বিনিয়োগ করতে হয়। ইংলিশরা ১৬৭৪ সালে যুদ্ধ থেকে ঝরে পরে, কিন্তু ফ্রেঞ্চরা ১৬৭৮ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এই যুদ্ধের ফলে ডাচদের সমুদ্র শক্তি দুর্বল হতে থাকে।

 
http://skepticism.org/timeline/july-history/7162-protestant-king-william-iii-england-defeats-catholic-king-james-ii-battle-boyne.html
ডাচ রাজা তৃতীয় উইলিয়াম ইংল্যান্ডেরও রাজা হবার পরে ডাচদের সমুদ্রশক্তির কফিনের শেষ পেরেকগুলি গাঁথা হয়। ডাচদের রাজা হয়েও উইলিয়ামের নীতি ভেতর থেকে ডাচ শক্তির বিরূদ্ধে এজেন্টের মতো কাজ করেছে।


রাজার এক দেশ; মনে-প্রাণে দুই দেশ

১৬৮৯ সালে ডাচ রাজা তৃতীয় উইলিয়াম ব্রিটিশদের আমন্ত্রণে ব্রিটিশদেরও রাজা (রাজা ছিলেন ১৬৮৯ খ্রিঃ-১৭০২ খ্রিঃ) হয়ে যান। ব্রিটিশ এবং ডাচদের নৌবাহিনী তখন একত্রিত হয়ে যায়। এসময় একই দেশের অংশ হওয়া সত্তেও ব্রিটিশরা ডাচদের নিজেদের সমকক্ষ করতে চাননি। ঠিক করা হয় যে, পুরো নৌবহরের ৮ ভাগের ৫ ভাগ হবে ব্রিটিশ এবং বাকি ৩ ভাগ হবে ডাচ। অর্থাৎ ডাচ নৌবহরের আকৃতি হবে ব্রিটিশ নৌবহরের প্রায় অর্ধেক (৩/৫), যা কিনা আগে শক্তির দিক থেকে যথেষ্ট কাছাকাছি ছিল। এভাবে একই রাজের সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ নীতিনির্ধারকেরা ডাচদের নৌবহরকে ছোট করে ফেলে। উইলিয়াম ডাচদের স্থলসীমানা রক্ষার জন্যে বড়সড় একটা সেনাবাহিনীও গড়ে তোলেন, যা কিনা বড় নৌবহর রক্ষণাবেক্ষণ করার পেছনে অন্তরায় হয়ে দেখা দেয়। শুধু ফ্লীটের আকৃতি ছোট করাই নয়, একজন ডাচ এডমিরালকে একজন ব্রিটিশ ক্যাপ্টেনের নিচে স্থান দেওয়া হতো। একই রাজা থাকা সত্তেও ব্রিটিশরা ডাচদেরকে সবসময়েই নিজেদের সমুদ্রনীতিতে প্রতিদ্বন্দী হিসেবেই দেখেছে। উইলিয়ামের শাসনকে ব্রিটিশরা ইতিহাসে ছোট একটা ঘটনা হিসেবে দেখেছে, তাই তারা তাদের দীর্ঘমেয়াদী নীতিতে পরিবর্তন আনেনি। উইলিয়ামের নীতির কারণে ইউরোপের বাণিজ্যের কেন্দ্র হল্যান্ড থেকে লন্ডনে চলে যায়। ১৭২০ সাল নাগাদ ডাচদের অর্থনীতি স্থবির হয়ে যায়। আর ১৭৮০ সাল নাগাদ ইংল্যান্ড (এখন গ্রেট ব্রিটেন)-এর মাথাপিছু জিডিপি ডাচদের অতিক্রম করে যায়। ১৭৮০ থেকে ১৭৮৪ সালের আরেক দফা যুদ্ধে ডাচরা ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে দাঁড়ানোর সকল ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এভাবে সপ্তদশ শতকের স্বর্ণযুগের অধিকর্তা ডাচদের করুন পরিণতি হয়। ফ্রেঞ্চ বিপ্লবের পর ন্যাপোলিয়নের আবির্ভাবে ডাচদের স্বাধীনতাও শেষ হয়ে যায়।

 
http://www.returnofkings.com/37944/10-life-lessons-from-louis-xiv
ফ্রেঞ্চ রাজা চতুর্দশ লুই ফ্রান্সকে শক্তিশালী স্থলশক্তিতে পরিণত করেন। কিন্তু একইসাথে ডাচদের বিরূদ্ধে স্থলযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ব্রিটিশ সমুদ্র বাণিজ্যের জন্য পথ উন্মুক্ত করে দেন

ব্রিটিশদের পরবর্তী শিকার – ফ্রান্স

স্প্যানিশদের থেকে আলাদা হবার সাথে সাথেই ডাচদের উপরে চড়াও হয় ইংলিশরা। ফ্রেঞ্চরা ইংলিশদের পক্ষ নেয় ডাচদের বিরূদ্ধে। আলফ্রেড মাহানের মতে এটা ছিল ফ্রেঞ্চদের একটা বিরাট ভুল। স্প্যানিশদের মতো ফ্রেঞ্চরাও ইউরোপের মূল ভূখন্ডের স্থলশক্তি ছিল; সমুদ্র ছিল তাদের জন্যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। ফ্রেঞ্চরা ডাচদেরকে তাদের বন্ধু না বানিয়ে শত্রু বানিয়ে ফেলায় ফ্রেঞ্চরা একটা শক্তিশালী সমুদ্রাভিমুখী বন্ধু থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে সেনাবাহিনী তৈরি করতে গিয়ে ডাচদের নৌশক্তি দুর্বল হতে থাকে এবং সমুদ্র বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই ব্রিটিশদের (তথা ইংলিশদের) নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এভাবে পর পর স্প্যানিশ এবং ডাচদের মতো দু’টা বিরাট শক্তিকে নিজের পথ থেকে সরিয়ে দিতে সফল হয় ব্রিটিশরা। এখন তাদের সামনে রইলো শুধু ফ্রান্স। ঐতিহাসিকভাবেই ফ্রেঞ্চরা সমুদ্র বাণিজ্যকে খুব একটা গৌরবোদ্দীপ্ত কাজ মনে করতো না, সে কারণে ব্রিটিশরা যে সমুদ্রের রাণী, এটা ফ্রেঞ্চরা একরকম মেনেই নিল। একসময় ব্রিটিশদের ১৩০ খানা যুদ্ধজাহাজের বিপক্ষে ফ্রেঞ্চদের পক্ষে ৪৫টার বেশি মোতায়েন করা সম্ভব ছিল না। ফ্রান্সের প্রতাপশালী রাজা চতুর্দশ লুই-এর সময়ে (রাজা ছিলেন ১৬৪৩ খ্রিঃ- ১৭১৫ খ্রিঃ) অর্থমন্ত্রী জঁ-বাতিস্ত কলবের (মন্ত্রী ছিলেন ১৬৬৫ খ্রীঃ-১৬৮৩ খ্রীঃ) ফ্রেঞ্চ সরকারের সমুদ্র নিয়ে ভাবনায় কিছুটা পরিবর্তন আনলেও তার পরবর্তী নীতিনির্ধারকেরা তাকে অনুসরণ করেননি। যার কারণে ফ্রান্স ইউরোপের মূল ভূখন্ডে অনেক কিছু জয় করতে পারলেও ব্রিটেনের মতো সম্পদশালী হতে পারেনি কখনোই। ব্রিটেন ইংলিশ চ্যানলের ওই পাড়ে থেকেই ফ্রান্সের আশেপাশের সকল সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে। শুধু তা-ই নয়, ব্রিটিশরা আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়াতেও ঐপনিবেশিক শক্তি হিসেবে ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল এবং ডাচদের ছাড়িয়ে যায়। এভাবে একে একে স্প্যানিশ, ডাচ এবং ফ্রেঞ্চদের পেছনে ফেলে উপরে উঠে আসে ব্রিটিশরা।

ডাচদের থেকে কি কিছু শেখার আছে?

ডাচদের সমুদ্রশক্তির বিরূদ্ধে ব্রিটিশদের এই গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি থেকে কিছু জিনিস বের করা যায়। প্রথমত, সমুদ্র বাণিজ্য যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তারা অন্যের হাতে সেটার নিয়ন্ত্রণ কখনোই ছেড়ে দেবে না। কারণ এই বাণিজ্যই হচ্ছে উতপাদন কেন্দ্র এবং পণ্যের বাজারের মাঝে একমাত্র যোগসূত্র। সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার মাঝেই পুঁজিবাদী বিশ্বে একটা দেশ অন্য দেশের উপরে কর্তৃত্ব করে। নতুন কোন শক্তি যাতে সমুদ্র বাণিজ্যের উপরে ভাগ বসাতে না পারে, সেটা বর্তমান কর্তারা খেয়াল রাখবে; দরকার হলে কয়েকজন একত্রিত হয় নতুন শক্তিকে প্রতিহত করতে চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়ত, সমুদ্র শক্তির একটা দেশকে সমুদ্র থেকে সরানোর একটা পদ্ধতি হলো তাকে স্থলভাগে ব্যতিব্যস্ত রাখা। ব্রিটিশরা ফ্রেঞ্চদের সাথে একত্রিত হবার সাথেসাথেই ডাচদের স্থলসীমানায় ফ্রেঞ্চদেরকে আবির্ভাব ঘটে। তৃতীয়ত, নিজেদের স্থলসীমানা নিরাপদ করতে একটা সমুদ্র-শক্তির যদি অন্য একটা স্থলশক্তির সাহায্য লাগে, সেক্ষেত্রে তৃতীয় শক্তি চাইবে এই সমুদ্র-শক্তি এবং স্থলশক্তির মাঝে দূরত্ব তৈরি করতে। বাইরের শক্তির উপরে নিজের সীমানা রক্ষার জন্যে নির্ভর করার কারণে ঐ সমুদ্র-শক্তি সবসময়েই বিপদের মুখে থাকবে। চতুর্থত, কোন নব্য সমুদ্রশক্তির দেশ যদি নিজেদের নীতিনির্ধারণে আরেকটি প্রতিষ্ঠিত সমুদ্রশক্তিকে ডেকে আনে বা সুযোগ করে দেয়, তাহলে সেই নব্য সমুদ্রশক্তির দেশের সমুদ্রশক্তি হবার সম্ভাবনা নিঃশেষ হয়ে যাবার সম্ভাবনাই বেশি।

কি করা, আর কি না করা

বাংলাদেশ এখন বঙ্গোপসাগরের দিকে তাকাচ্ছে; যা নিয়ে এর আগেই বিস্তর আলোচনা করেছি। এখন এদেশের নেতৃত্বের খেয়াল রাখতে হবে যে ব্যাপারগুলির দিকে, তা হচ্ছে – এক. সমুদ্রশক্তি হতে গেলে বাধা আসবেই, এমনকি সমন্বিত বাধাও আসতে পারে। এক্ষেত্রে পুঁজিবাদী বিশ্বের শক্তিদের সাথে পেরে ওঠা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ খালি নেই। নেতৃত্বের কঠোর ভূমিকাই একমাত্র দেশকে এগিয়ে নিতে পারে। কিন্তু পুঁজিবাদী বিশ্বে যারা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে, তারা নিজেদের স্বার্থ দেখে এবং কখনো দরজা ছেড়ে সড়ে দাঁড়ায় না। আরেকজনের নিয়ন্ত্রিত দরজা দিয়ে কতদিন নিজের খেয়ালখুশিমতো যাতায়াত করা সম্ভব, সেটা প্রশ্নাতীত নয়। দুই. অপর কোন সমুদ্রশক্তিকে কোন অবস্থাতেই দেশের নীতি নির্ধারণে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। সেটা দেওয়া হলে সমুদ্র বাণিজ্য তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেই, এমনকি তারা ছলে বলে কৌশলে দেশের স্থলসীমানায় অস্থিরতা সৃষ্টি করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ নষ্ট করার পদ্ধতি করে দিতে পারে, যাতে সমুদ্রশক্তি তৈরি করার জন্যে অর্থের সঙ্কুলান না হয়।