Monday 5 September 2022

চীনাদের পঞ্চম জেনারেশনের ‘জে-২০’ স্টেলথ যুদ্ধবিমান মার্কিন বিমান শক্তির তুলনায় কতটা সক্ষম?

০৫ই সেপ্টেম্বর ২০২২
 
উভয় পক্ষের কথায় এটা পরিষ্কার যে, মার্কিনীরা এখনও পূর্ব এশিয়ার আকাশের নিয়ন্ত্রণ শক্তভাবেই ধরে রেখেছে। ‘জে-২০’ বিমান চীনের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সেরা সাফল্য। তথাপি, এখনও চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিকে ধরতে পারেনি; অন্ততঃ পঞ্চম জেনারেশনের স্টেলথ যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে পারেনি। এছাড়াও মার্কিনীরা এখনও পর্যন্ত ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমানের উৎপাদন সক্ষমতা দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, খুব দ্রুতই পূর্ব এশিয়ার আকাশের প্রযুক্তিগত ব্যালান্স পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে না; যদিও চীনারা ‘জে-২০’ বিমানের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন কংগ্রেসের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর চীনারা যখন ব্যাপক সামরিক মহড়া শুরু করে, তখন চীন তার সর্বাধুনিক ‘জে-২০ মাইটি ড্রাগন’ স্টেলথ যুদ্ধবিমানও মোতায়েন করে বলে চীনা মিডিয়াতে বলা হয়। চীনা সরকারের প্রকাশ করা একটা ভিডিওতে এই বিমান দেখানো হয়। পশ্চিমারা ‘জে-২০’ বিমানকে মার্কিন বিমান বাহিনীর সর্বাধুনিক ফাইটার বিমান ‘এফ-২২’ এবং ‘এফ-৩৫’এর প্রতিযোগী হিসেবে দেখছে। বিমানের প্রথম পরীক্ষামূলক ফ্রাইট সংঘটিত হয় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে। আর ২০১৭ সালে বিমানটা অফিশিয়ালি চীনা বিমান বাহিনীর অন্তর্গত করা হয়। এই বিমান চীনা সামরিক বাহিনীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতাগুলির একটা। বিমানটা ইতিহাসে মার্কিন ‘এফ-২২’ এবং ‘এফ-৩৫’ স্টেলথ বিমানের পর পঞ্চম জেনারেশনের তৃতীয় বিমান। রাশিয়াও পঞ্চম জেনারেশনের ‘সুখোই-৫৭’ বিমান ডেভেলপ করেছে।

‘বিজনেস ইনসাইডার’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, ‘জে-২০’ যুদ্ধবিমান ডেভেলপ করতে চীনাদের প্রায় ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হয়েছে। একেকটা বিমানের উৎপাদন খরচ বর্তমানে রয়েছে প্রায় ১’শ থেকে ১’শ ২০ মিলিয়ন ডলার। অথচ একসময় মনে করা হয়েছিল যে, একেকটা বিমানের খরচ হয়তো ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ডলারের মতো হতে পারে। অর্থাৎ গত এক দশকে এই বিমানের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। বিমানটার সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ২ হাজার ৪’শ ৬৮ কিঃমিঃ (আরেক হিসেবে ২ হাজার ১’শ কিঃমিঃ) এবং একবারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯’শ ২৬ কিঃমিঃ পর্যন্ত উড়তে সক্ষম। এর তুলনায় মার্কিন ‘এফ-৩৫’ এর সর্বোচ্চ গতি হলো ঘন্টায় ১ হাজার ৯’শ ৬০ কিঃমিঃ এবং সর্বোচ্চ পাল্লা ২ হাজার ২’শ কিঃমিঃ পর্যন্ত। ‘জে-২০’এর প্রথম ভার্সন ছিল ‘জে-২০এ’; আর দুই আসনের ‘জে-২০এস’ ছিল দ্বিতীয় ভার্সন। রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির কারণে বিমানের গতি খুব বড় কোন ব্যবধান তৈরি করবে না। আর বিমানের পাল্লা আকাশ থেকে আকাশে রিফুয়েলিংএর মাধ্যমে বহুগুণে বাড়িয়ে নেয়া সম্ভব।

‘জে-২০’ বিমানের সক্ষমতা

‘দ্যা ইউরেশিয়া টাইমস’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, পশ্চিমাদের বিমানের ডেভেলপমেন্টের সাথে তুলনা করলে ‘জে-২০’এর ডেভেলপমেন্টের সময় ছিল খুবই দ্রুত; যদিও বিমান বাহিনীর অন্তর্গত করার আগে বিমানের ডিজাইনে অন্ততঃ ৯টা বড় রকমের পরিবর্তন আনা হয়েছিল; যা কিনা বিমানের বাইরে থেকেই বোঝা গেছে। ‘চেংডু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ’ এই বিমানটার ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট সম্পন্ন করে। তবে এখন পর্যন্ত ‘জে-২০’ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। বিমানটা খুব সম্ভবতঃ খুব কাছে থেকে শত্রু বিমানের সাথে ডগফাইটে জড়াবে না; বরং দূর থেকে শত্রু বিমান, বিশেষ করে অতি গুরুত্বপূর্ণ বড় টার্গেট, যেমন ট্যাঙ্কার বিমান, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ভূমিতে স্থাপিত রাডার বা গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী অবস্থানের উপর হামলায় ব্যবহৃত হতে পারে।

২০২২এর মার্চে মার্কিন ‘প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সেস’এর কমান্ডার জেনারেল কেনেথ উইলসবাক ‘মিচেল ইন্সটিটিউট ফর এরোস্পেস স্টাডিজ’এর সাথে এক সাক্ষাতে তথ্য দেন যে, কোন একটা সময় পূর্ব চীন সাগরের আকাশে টহল দেয়ার সময় মার্কিন ‘এফ-৩৫’ স্টেলথ বিমানের মুখোমুখি হয় চীনা ‘জে-২০’ বিমান। তিনি এই ঘটনার সময়টা অবশ্য উল্লেখ করেননি; তবে আরও কিছু তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, মার্কিনীরা এখনও নিশ্চিত নয় যে, চীনারা ‘জে-২০’ বিমান কোন মিশনে ব্যবহার করতে চায়; যদিও আপাততঃ তারা বিমানগুলিকে ‘এয়ার সুপেরিঅরিটি’ বা আকাশ নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করছে। এখনও বোঝা যাচ্ছে না যে, বিমানটা কি ‘এফ-৩৫’এর মতো হবে কিনা; অর্থাৎ একটা বিমান দিয়ে বহু মিশন বাস্তবায়ন করাবে কিনা; অথবা এটা ‘এফ-২২’এর মতো হবে কিনা; অর্থাৎ বিমানটা প্রাধানতঃ ‘এয়ার সুপেরিঅরিটি’ মিশনেই ব্যবহৃত হবে, যদিও মাঝে মাঝে ভূমিতে আক্রমণেও ব্যবহৃত হতে পারে। বিমানগুলি চীনারা বেশ পেশাদারিত্বের সাথে অপারেট করছে। অন্ততঃ চীনাদের ‘কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল’ ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো মনে হয়েছে। এর অর্থ হলো ‘জে-২০’ বিমানগুলি আকাশ নিয়ন্ত্রণের জন্যে ব্যবহৃত রাডার বিমান ‘কেজে-৫০০’ বা ‘এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং এন্ড কন্ট্রোল’ বিমানের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে। দূরপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলি এই রাডার বিমানের সহায়তার উপর নির্ভরশীল। জেনারেল উইলসবাকএর কথায় ‘পিএল-১৫’ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সাথে ‘কেজে-৫০০’ বিমানের রাডারের সমন্বয় স্পষ্ট ফুটে ওঠে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২’শ কিঃমিঃএরও বেশি। চীনা বিমান বাহিনীর অনেক বিমানই এই ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করতে সক্ষম; যার মাঝে রয়েছে ‘জে-২০’, ‘জে-১০সি’, ‘জে-১১বি’, ‘জে-১৫’ এবং ‘জে-১৬’। ‘কেজে-৫০০’ বিমান এই ক্ষেপণাস্ত্রের জন্যে টার্গেট খুঁজে দেয়ার পর ক্ষেপণাস্ত্রের নিজস্ব রাডার তার টার্গেটের পেছনে ছুটবে।

 
'জে-২০' বিমানের নিচে দূরপাল্লার 'পিএল-১৫' আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। বিমানটা খুব সম্ভবতঃ খুব কাছে থেকে শত্রু বিমানের সাথে ডগফাইটে জড়াবে না; বরং দূর থেকে শত্রু বিমান, বিশেষ করে অতি গুরুত্বপূর্ণ বড় টার্গেট, যেমন ট্যাঙ্কার বিমান, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ভূমিতে স্থাপিত রাডার বা গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী অবস্থানের উপর হামলায় ব্যবহৃত হতে পারে।

‘জে-২০’ বিমানের ইঞ্জিন নিয়ে চ্যালেঞ্জ

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মাঝে অনেকেই ‘জে-২০’ বিমানকে পঞ্চম জেনারেশনের বিমান হিসেবেই আখ্যা দিতে নারাজ। তারা বলছেন যে, ‘জে-২০’ বিমানের ডিজাইন যত উন্নতই হোক না কেন, এর ইঞ্জিন বহু পুরোনো প্রযুক্তির। বিমানে প্রথমে রুশ নির্মিত ‘এএল-৩১’ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে এর ইঞ্জিন হলো চীনাদের নিজেদের ডেভেলপ করা ‘ডব্লিউএস-১০’। তবে এই ইঞ্জিনের সক্ষমতা এখনও বিমানের প্রয়োজনের চাইতে কম বলে অনুমান করা হচ্ছে। ১৯৯০এর দশক থেকেই স্টেলথ বিমানের জন্যে চীনারা আরও একটা ইঞ্জিন ডেভেলপ করছে। ‘ডব্লিউএস-১৫’ নামের এই ইঞ্জিনে ‘লো বাইপাস রেশিও’ এবং ‘থ্রাস্ট ভেক্টর কন্ট্রোল’ প্রযুক্তি যুক্ত থাকলেও এটা এখনও সকল পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি। এই ইঞ্জিন ‘জে-২০’ বিমানের সক্ষমতাকে মার্কিন বিমানগুলির কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন। তবে মার্কিন চাপে পড়ে গত কয়েক বছর ধরে চীনারা ‘জে-২০’ বিমানে রুশ ‘এএল-৩১এফ’ এবং চীনা ‘ডব্লিউএস-১০বি’ ও ‘ডব্লিউএস-১০সি’ ইঞ্জিন ব্যবহার করে আসছে। গত মার্চে চীনা সরকারি টেলিভিশন ‘সিসিটিভি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, চীনারা ‘জে-২০’ যুদ্ধবিমানে ব্যবহারের জন্যে ‘ডব্লিউএস-১৫’ ইঞ্জিন ডেভেলপ করেছে।

‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’এর এক প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চীনা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয় যে, চীনারা ‘জে-২০’ যুদ্ধবিমানে রুশ ‘এএল-৩১’ ইঞ্জিনকে প্রতিস্থাপন করে নতুন ‘ডব্লিউএস-১৫’ ইঞ্জিন ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে। যেসব ‘জে-২০’ বিমানে চীনা ‘ডব্লিউএস-১০সি’ ইঞ্জিন রয়েছে, সেগুলির কোন পরিবর্তন হবে না। তবে সামনে দিনে সকল ‘জে-২০’ বিমানেই চীনা ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। কানাডার ‘কানওয়া এশিয়ান ডিফেন্স মান্থলি’র প্রধান সম্পাদক আন্দ্রেই চ্যাংএর মতে, চীনারা ‘ডব্লিউএস-১৫’ ইঞ্জিন ব্যবহার শুরু করলেও ‘এফ-২২’ বিমান চীনাদের জন্যে হুমকি হিসেবেই রয়ে যাবে। একটা শক্তিশালী ইঞ্জিন ছাড়াও ‘এফ-২২’ বিমানে এতগুলি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় করা হয়েছে, যা কিনা বাকি দুনিয়ার সকলের কাছেই ধোঁয়াশা হিসেবে ঠেকছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে ১’শ ৮০টা ‘এফ-২২’ বিমান। ২০১১ সালে অতিরিক্ত খরচের কারণে ‘এফ-২২’ বিমানের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। কাজেই বর্তমানে চীনাদের জন্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো বর্তমানে উৎপাদনে থাকা ‘এফ-৩৫’ বিমান।

বেইজিংএর ‘ইউয়ান ওয়াং’ সামরিক প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটএর বিশ্লেষক ঝু চেনমিংএর মতে, ‘এফ-৩৫’ বিমানে ব্যবহৃত ‘এক্সএ-১০০’ ইঞ্জিনের তুলনায় ‘ডব্লিউএস-১৫’ ইঞ্জিন এখনও ১০ বছর পিছিয়ে রয়েছে। তার কথায়, চীনারা এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনের কিছু ক্ষেত্রে মার্কিনীদের সমান সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হলেও, সার্বিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে পারেনি। তবে সামরিক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটা ব্যাপারে তুলনা করাটা ঠিক নয়। কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হয় উভয় পক্ষের সকল সিস্টেমের মাঝে; যেখানে সকল অস্ত্র যৌথভাবে ব্যবহার করা হয়। মার্কিনীরা পুরো এশিয়াপ্যাসিফিকের আকাশ নিয়ন্ত্রণ করছে; কারণ এটা চীনের উদ্দেশ্য নয় যে তারা মার্কিনীদের হাত থেকে আকাশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। ‘জে-২০’ এবং ‘কেজে-৫০০’ বিমানের কাজ হলো সম্ভাব্য যুদ্ধের সময় পূর্ব চীন সাগরে মার্কিন বিমানগুলিকে ঢুকতে বাধা দেয়া। আর ‘জে-২০’ বিমানগুলির আরেকটা কাজ হলো এক রকমের ডিটারেন্ট হিসেবে কাজ করা; যাতে করে তাইওয়ান স্বাধীনতার ঘোষণা না দেয়।

সংখ্যার খেলা

‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, চীনারা এখন পর্যন্ত ৫০টার বেশি ‘জে-২০’ তৈরি করেছে। সামরিক বিশ্লেষক ক্রিস অসবোর্ন ‘দ্যা ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় বলছেন যে, সক্ষমতার বিচার যদি নাও করা হয়, তবুও পঞ্চম জেনারেশনের স্টেলথ বিমানের ক্ষেত্রে চীনারা এখনও সংখ্যায় অনেক পিছিয়ে। ২০২১ সাল পর্যন্ত চীনারা ১’শ ৫০টার মতো ‘জে-২০’ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। অপরদিকে শুধুমাত্র মার্কিন বিমান বাহিনীই পেয়েছে ২’শ ৮০টা ‘এফ-৩৫এ’ বিমান। এছাড়াও ম্যারিন কোর এবং নৌবাহিনীর হাতে রয়েছে আরও ‘এফ-৩৫বি’ এবং ‘এফ-৩৫সি’ বিমান। যুক্তরাষ্ট্র সব মিলিয়ে ১ হাজার ৭’শ ৬৩টা ‘এফ-৩৫’ বিমান অর্ডার করেছে। এর মাঝে ম্যারিন কোর পাবে ৪’শ ২০টা, আর নৌবাহিনী পাবে ২’শ ৭৩টা। এর বাইরেও কমপক্ষে ১৩টা দেশ এখনও পর্যন্ত ‘এফ-৩৫’ বিমান অর্ডার করেছে। চীনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী জাপান একাই প্রায় ২’শ ‘এফ-৩৫’ বিমান কিনতে চাইছে। আঞ্চলিকভাবে দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরও এই বিমান কিনছে। আর ইউরোপে ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইতালিও ‘এফ-৩৫’ কিনছে। মোটকথা ‘জে-২০’এর উৎপাদন ‘এফ-৩৫’এর উৎপাদনের চাইতে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পিছিয়ে রয়েছে। একারণেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা ‘গ্লোবাল টাইমস’ পত্রিকার সাথে কথা বলতে গিয়ে ‘জে-২০’ বিমানের ডিজাইনার ওয়াং হাইতাও বলছেন যে, ‘জে-২০’র উৎপাদন অতি দ্রুত বৃদ্ধি করতে হবে।

‘এয়ার ফোর্স ম্যাগাজিন’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, চীনারা যদি শুধুমাত্র মার্কিন বিমান বাহিনীর সমকক্ষ হতে চায়, তাহলে ২০২৫ সালের মাঝে তাদেরকে কমপক্ষে ৫’শ স্টেলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করতে হবে। অন্য কথায় প্রতি বছরে ১’শ ২৫টা করে পঞ্চম জেনারেশনের বিমান তৈরি করতে হবে। ‘এফ-৩৫’ বিমানের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘লকহীড মার্টিন’এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার হিসেবে ২০২৩ সালে ‘এফ-৩৫’ বিমানের উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে; যা কিনা বছরে ১’শ ৫৬টা। এই হারে তারা সামনের দিনগুলিতে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারবে বলে ঘোষণা দেয়। ২০২১ সাল পর্যন্ত এই হার ছিল ১’শ ৪০এর নিচে; ২০২২ সালে এটা ১’শ ৫৩এর মতো হবে বলে তাদের ধারণা। আপাততঃ মার্কিন বিমান বাহিনী বছরে ৪৩টা করে ‘এফ-৩৫এ’ বিমান কিনছে। ২০২৫ সাল নাগাদ মার্কিন বিমান বাহিনীর হাতে থাকবে ৪’শ ৭২টা ‘এফ-৩৫এ’ এবং ১’শ ৮০টা ‘এফ-২২’; মোট ৬’শ ৫২টা পঞ্চম জেনারেশনের স্টেলথ ফাইটার। আর এই বাইরে মার্কিন ম্যারিন কোর, মার্কিন নৌবাহিনী এবং মার্কিনীদের অন্যান্য বন্ধু দেশগুলির হাতেও অনেক ‘এফ-৩৫’ থাকবে।

মার্কিন জেনারেল উইলসবাক বলছেন যে, পূর্ব এশিয়াতে মার্কিনীরা আকাশের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে ধরে রেখেছে; কারণ পেন্টাগন সেখানে প্রায় ২’শ ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমান মোতায়েন রেখেছে। অপরদিকে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’এর সাথে কথা বলতে গিয়ে চীনা সামরিক সূত্র জানাচ্ছে যে, চীনারা ২০২০ সালে পূর্ব চীন সাগরে দূরপাল্লার প্যাট্রোলের জন্যে ‘জে-২০’ এবং ‘কেজে-৫০০’ বিমান মোতায়েন করতে শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল যে, করোনা মহামারিতে চীন যখন বেসামাল ছিল, সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মার্কিনীরা যদি হঠাৎ কোন আক্রমণ করে বসে, তাহলে সেটাকে প্রতিহত করা।

উভয় পক্ষের কথায় এটা পরিষ্কার যে, মার্কিনীরা এখনও পূর্ব এশিয়ার আকাশের নিয়ন্ত্রণ শক্তভাবেই ধরে রেখেছে। ‘জে-২০’ বিমান চীনের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সেরা সাফল্য। তথাপি, এখনও চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিকে ধরতে পারেনি; অন্ততঃ পঞ্চম জেনারেশনের স্টেলথ যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে পারেনি। এছাড়াও মার্কিনীরা এখনও পর্যন্ত ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমানের উৎপাদন সক্ষমতা দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, খুব দ্রুতই পূর্ব এশিয়ার আকাশের প্রযুক্তিগত ব্যালান্স পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে না; যদিও চীনারা ‘জে-২০’ বিমানের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলছে। বাস্তবতা হলো, উভয় পক্ষেরই বেশিরভাগ বিমান স্টেলথ নয়। তবে আধুনিক আকাশযুদ্ধে স্টেলথ বিমানের ব্যবহার এক পক্ষকে অতটুকুই এগিয়ে দিতে সক্ষম, যা কিনা জয়-পরাজয়ের হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। অর্থনৈতিক দিক থেকে চীন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ খানিকটা কাছে চলে গেলেও সামরিক প্রযুক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এখনও ততটাই এগিয়ে আছে, যা কিনা ওয়াশিংটনকে আক্রমণাত্মক নীতিতে যেতে উদ্বুদ্ধ করছে। অন্ততঃ চীনারা সামরিক প্রযুক্তি ও সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ধরে ফেলার আগ পর্যন্ত ওয়াশিংটন বসে থাকার পাত্র নয়। নিঃসন্দেহেই পূর্ব এশিয়াতে যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে যাবার সবচাইতে বড় কারণ হলো চীনের উপরে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সামরিক অগ্রগামিতা, যা সামনের দিনগুলিতে কোন এক সময় নাও থাকতে পারে।



সূত্র -

‘China Puts Its J-20 Stealth Fighters In ‘Action Mode’ For The Very 1st Time; PLAAF Sends Dozens Of Warplanes Into Taiwan ADIZ’ in The Eurasian Times, 03 August 2022

‘Top designers announce J-20 production capacity, Y-20 domestic engines, new carrier-based fighter at Airshow China’ in Global Times, 29 September 2021

‘China’s J-20 Fighter Jet Is Fierce, But It Has a Numbers Problem’ by Kris Osborn in The National Interest, 01 October 2021

‘China’s J-20 Stealth Fighter Is a Serious Threat’ by Maya Carlin in 1945, 04 May 2022 (https://www.19fortyfive.com/2022/05/chinas-j-20-stealth-fighter-is-a-serious-threat/)

‘China’s advanced J-20 stealth fighters are getting an engine upgrade, source says’ in South China Morning Post, 15 March 2022

‘China to start upgrading J-20 fighter engines in bid to close gap with US F-22’ in South China Morning Post, 20 January 2022

‘Take a look at the 'Mighty Dragon,' China's $120 million answer to the Lockheed Martin F-35 fighter jet’ in Business Insider, 02 January 2022

‘US F-35 and Chinese J-20 fighter jets had close encounter over East China Sea: US general’ in South China Morning Post, 18 March 2022

‘Aerospace Nation: Gen Kenneth S. Wilsbach’ in The Mitchell Institute for Aerospace Studies (https://www.youtube.com/watch?v=GNPo6S5uwZQ)

‘China fully capable of jet engine development, narrowing technology gaps’ in Global Times, 09 March 2022

‘China Likely Stepping Up Stealth Fighter Production’ in Air Force Magazine, 08 October 2021

No comments:

Post a Comment