Thursday 28 April 2022

যুক্তরাষ্ট্র কি ইউক্রেন যুদ্ধকে চালিয়ে নিতে পারবে?

২৯শে এপ্রিল ২০২২

২৫শে এপ্রিল ২০২২। রাশিয়ার ব্রিয়ান্সক শহরের দু'টা জ্বালানি তেলের ডিপোতে প্রায় একই সময়ে বিস্ফোরণ ঘটে। ডনবাসের যুদ্ধের ধরণের কারণেই উভয় পক্ষ একে অপরের লজিস্টিকসের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলির উপর হামলা করতে থাকবে। উভয় পক্ষই অপরের ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি করতে চাইছে। এর অর্থ হলো, উভয় পক্ষের জন্যেই যুদ্ধের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন।


২৫শে এপ্রিল ইউক্রেন রেলওয়েজের প্রধান ওলেক্সান্দর কামিশিন এক ‘টেলিগ্রাম’ বার্তায় বলেন যে, রুশরা এক ঘন্টার ব্যবধানে ইউক্রেনের পাঁচটা রেলস্টেশনে হামলা করেছে। এই হামলার মাধ্যমে এটা পরিষ্কার যে, রুশরা ইউক্রেনের রেল নেটওয়ার্ককে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে। ‘পলিটিকো’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এই আক্রমণের মাত্র দু’দিন আগেই ইউক্রেন পোল্যান্ডের সাথে সীমান্ত রেলওয়ে ব্যবহার সহজীকরণের ব্যাপারে একটা সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে। ইউক্রেনের সমুদ্রবন্দরগুলি যখন রুশ অবরোধের মাঝে রয়েছে, তখন এই চুক্তি ইউক্রেনে মালামাল আনানেয়ার পিছনে অনেক বড় সহায়তা দেবে। ইউক্রেন তার পুরো পরিবহণ ব্যবস্থাকে সমুদ্রবন্দর থেকে সরিয়ে রাস্তা, রেলওয়ে এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথের দিকে নিয়ে আসতে হিমসিম খাচ্ছে। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শামিহাল বলছেন যে, পোল্যান্ডের সাথে সমঝোতা রেলের মাধ্যমে ইউক্রেনের বহির্বাণিজ্যকে বহুগুণে বাড়াতে সহায়তা দেবে। তবে পোল্যান্ডের সীমানা দিয়ে রেলযোগাযোগ যে ইউক্রেনের পূর্বে ডনবাসে যুদ্ধের জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ইউক্রেনের রেল ব্যবস্থার উপর রুশ হামলাই বলে দিচ্ছে।

লজিস্টিকসের উপর পাল্টাপাল্টি হামলা

তবে উভয় পক্ষই ডনবাসের যুদ্ধে লজিস্টিকসের গুরুত্ব বুঝতে পেরে একে অপরের গুরুত্বপুর্ণ সাপ্লাই ব্যবস্থার উপর হামলা করছে। ‘আল জাজিরা’ বলছে যে, ২৭শে এপ্রিল ইউক্রেনের সীমানায় অবস্থিত তিনটা রুশ অঞ্চলে ভোর বেলায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইউক্রেনের সীমানা থেকে ৪০ কিঃমিঃএর কম দূরত্বে থাকা বেলগোরদ শহরের একটা গোলাবারুদের স্টোরে আগুন লেগেছে বলে বলেন বেলগোরদের গভর্নর ভিয়াচিস্লাভ গ্লাদকভ। এই একই শহরে কিছুদিন আগেই দু’টা হেলিকপ্টার একটা জ্বালানি তেলের ডিপোতে হামলা করে বলে সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়। রুশরা ইউক্রেনকে সেই হামলার জন্যে দায়ী করলেও ইউক্রেন তা স্বীকার করেনি। বেলগোরদ ছাড়াও ইউক্রেন সীমানা থেকে প্রায় ১’শ ৬০ কিঃমিঃ দূরে কুর্স্ক অঞ্চলের গভর্নর রোমান স্টারোভোইত বলছেন যে, সেখানেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন যে, খুব সম্ভবতঃ ইউক্রেনের ড্রোন হামলা ঠেকাতে রুশ বিমান বিধ্বংসী অস্ত্রের গোলাবর্ষণের শব্দ ছিলো সেগুলি। কোন ক্ষয়ক্ষতি সেখানে হয়নি। তবে পার্শ্ববর্তী ভরোনেজ অঞ্চলের দুই জায়গায় বিস্ফোরণ হয়েছে বলে বলেছে রুশ বার্তা সংস্থা ‘তাস’। এর আগে ইউক্রেনের রেলওয়ের উপর রুশ হামলার দিন, অর্থাৎ ২৫শে এপ্রিল ইউক্রেনের সীমানা থেকে ১’শ ৫০ কিঃমিঃ দূরে রুশ শহর ব্রিয়ান্সক হামলার শিকার হয়। শহরের দু’টা বেসামরিক ও সামরিক জ্বালানি তেলের ডিপোতে প্রায় একইসাথে বিশাল বিস্ফোরণ হয়। ‘দ্যা গার্ডিয়ান’এর সাথে কথা বলতে গিয়ে সাবেক মার্কিন ম্যারিন কোর সদস্য এবং থিংকট্যাঙ্ক ‘ফরেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট’এর ফেলো রব লী বলেন যে, ভিডিও ফুটেজগুলি দেখে মনে হচ্ছে যে, এই বিস্ফোরণগুলি খুব সম্ভবতঃ ইউক্রেনের হামলা। ইউক্রেনের সীমানা থেকে দূরত্ব দেখে বলা যায় যে, এই হামলায় ইউক্রেনিয়ানরা হয় ‘টচকা-ইউ’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অথবা তুর্কি নির্মিত ‘বায়রাকতার টিবি-২’ ড্রোন ব্যবহার করে করেছে। ইউক্রেনিয়ানরা যদি এটা করে থাকে, তাহলে তারা রুশ সাপ্লাই লাইনকে সমস্যায় ফেলার জন্যেই এটা করেছে। এর আগে ১২ই এপ্রিল ‘দ্যা গার্ডিয়ান’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বেলগোরদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রেলসেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছবি দেখে অনেকেই ধারণা করছেন যে, সেটা কোন বিস্ফোরণের কারণে হতে পারে; যার পিছনে কোন স্যাবোটাজ জাতীয় কর্মকান্ড থাকতে পারে। রুশরা ডনবাসে তাদের সামরিক কর্মকান্ড চালিয়ে নিতে রেলওয়ের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। রাশিয়ার ভেতরে পূর্ববর্তী কোন হামলার দায় ইউক্রেনিয়ানরা স্বীকার না করলেও ২৭শে এপ্রিল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পদোলিয়াক এক বার্তায় বলেন যে, যদি রুশরা ইউক্রেনের মানুষ হত্যা করে যেতে থাকে, তাহলে রুশ কর্মকান্ডে সহায়তাকারী ডিপোগুলি যেসব অঞ্চলে রয়েছে, সেই অঞ্চলগুলিকেও হিসেব দিতে হবে। তিনি সরাসরিই বলেন যে, বেলগোরদ এবং ভরোনেজ অঞ্চলের ডিপোগুলিকে ধ্বংস করাটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তারা তাদের কর্মফল ভোগ করছে। ‘আল জাজিরা’ বলছে যে, এই ঘটনাগুলি রুশ সামরিক লজিস্টিকসের দুর্বলতাগুলিকে তুলে ধরেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে উভয় পক্ষের টার্গেট করা লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক। উভয় পক্ষই ডনবাসের যুদ্ধের গুরুত্ব বুঝতে পারছে। যুদ্ধ দীর্ঘ হতে থাকলে লজিস্টিকসের উপর হামলার ক্ষেত্রে রুশরা অবশ্যই এগিয়ে থাকবে, যদি ইউক্রেন তাদের সাপ্লাই লাইনগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে না পারে এবং আরও উন্নয়ন করতে সক্ষম না হয়। ডনবাসে যেপক্ষ ভালোভাবে সাপ্লাই পাবে, তাদেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘দি আটলান্টিক কাউন্সিল’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, ডনবাসের যুদ্ধের ধরণের কারণেই উভয় পক্ষ একে অপরের লজিস্টিকসের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলির উপর হামলা করতে থাকবে। ইউক্রেনের রেলস্টেশনগুলির উপর হামলায় রুশরা নিখুঁত নিশানায় হামলা করেছে, যেখানে হয়তো আকাশ থেকে ছোঁড়া অস্ত্র অথবা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। যুদ্ধ দীর্ঘ হতে থাকলে লজিস্টিকসের উপর হামলার ক্ষেত্রে রুশরা অবশ্যই এগিয়ে থাকবে, যদি ইউক্রেন তাদের সাপ্লাই লাইনগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে না পারে এবং আরও উন্নয়ন করতে সক্ষম না হয়। ডনবাসে যেপক্ষ ভালোভাবে সাপ্লাই পাবে, তাদেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, অবশেষে মার্কিন সরকার তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনে ইউক্রেনকে আক্রমণে যাবার মতো অস্ত্র দিতে শুরু করেছে। এর আগে ট্রেনিং দেয়ার সমস্যার কথা বলে জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে অনেক অস্ত্রই দিতে চায়নি। এখন তারা সেটাই করছে। প্রতিবেদনে ইউক্রেনের জন্যে শুধুমাত্র সোভিয়েত আমলের অস্ত্র যোগাড় করতে নিষেধ করা হয়; কারণ সেই অস্ত্রগুলি একসময় গোলাবারুদের অভাবের মাঝে পড়ে যাবে। কাজেই ইউক্রেনকে পশ্চিমা নির্মিত অস্ত্র, বিশেষ করে ‘এফ-১৬’ যুদ্ধবিমান, ইস্রাইলের ‘আয়রন ডোম’এর মতো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, নিখুঁতভাবে টার্গেট করতে পারা ‘হিমার্স’ রকেট সিস্টেম, এবং ‘এনএসএম’ ও ‘হারপুন’এর মতো জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা উচিৎ।

 
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের যুদ্ধে সরাসরি না জড়িয়েও এর ফলাফলের অনেকটাই ভোগ করছে। করোনা মহামারির পর ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মাঝে যখন মার্কিন জনগণই তাদের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে, তখন ইউক্রেনের জন্যে কত বিলিয়ন ডলারের সহায়তা যুক্তরাষ্ট্র বরাদ্দ দিতে সক্ষম হবে, তা প্রশ্নাতীত নয়। এই ব্যাপারগুলি পৃথিবীর অন্য আরেক প্রান্তে আরেকটা যুদ্ধে জড়াবার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতাকে যথেষ্টই খর্ব করেছে।

যুদ্ধের অর্থায়ন আসবে কোত্থেকে?

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে এই যুদ্ধের অর্থায়নের ক্ষেত্রে। ২১শে এপ্রিল এবং ২৫শে এপ্রিলের নিরাপত্তা সহায়তা যোগ করার পর ইউক্রেনের জন্যে মার্কিন সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। অথচ যুদ্ধ এখন পর্যন্ত মাত্র দু’মাস চলেছে। অনেকেই মনে করছেন যে, এই যুদ্ধ কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে; কারণ কোন পক্ষই হারতে চাইছে না। ২৮শে এপ্রিল ওয়াশিংটনে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন যে, ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্যে এর আগে কংগ্রেসের কাছ থেকে চাওয়া ১৪ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজকে বৃদ্ধি করে ৩৩ বিলিয়ন ডলার করার চেষ্টা চলছে; যার মাঝে ২০ বিলিয়ন ডলারই থাকবে সামরিক সহায়তা; আর বাকিটা অর্থনৈতিক এবং মানবিক সহায়তা। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা তাদের ‘জি-৭’ সহযোগী দেশগুলির কাছ থেকে একই রকমের সহায়তা আশা করছেন। এই সহায়তা দেয়ার জন্যে মার্কিনীরাই আসলে কতটা প্রস্তুত, তা নিয়েই প্রশ্ন থাকছে।

২৭শে এপ্রিল ‘ডিফেন্স নিউজ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ব্যাপক মূল্যস্ফীতির ফলাফলস্বরূপ ২০২২ সালে জ্বালানি তেলের জন্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যে বরাদ্দকৃত বাজেটের চাইতে ৩ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ হতে চলেছে; যার জন্যে কংগ্রেসের কাছে অর্থ চাওয়া হয়েছে। মার্কিন সরকার পেন্টাগনের ২০২৩ সালের বাজেট ৪ শতাংশ বা ৩০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি করে ৮’শ ১৩ বিলিয়ন ডলার করতে চাইছে। তবে অনেকেই অভিযোগ করছেন যে, বাজেটে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতির ব্যাপারটা ঠিকমতো সমন্বয় করা হয়নি। অপরদিকে ‘সিএনবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ১ লক্ষ ডলার আয় করা ব্যক্তিরাও মূল্যস্ফীতির কারণে দৈনন্দিন খরচ, বিশেষ করে মুদিপণ্য এবং জ্বালানি তেলের খরচ বহণে হিমসিম খাচ্ছে। তাদের আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ চলে যায় বাড়িভাড়া দিতে; এরপর রয়েছে গাড়ির দেনা শোধ; জ্বালানি তেল; ক্রেডিট কার্ডের বিল। সকল কিছুরই মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বলছেন অনেকে। ‘এক্সপেরিয়ান’এর এক জরিপের উল্লেখ করে বলা হচ্ছে যে, ৭১ শতাংশ মার্কিন জনগণ মনে করছে না যে, তাদের ‘পে-চেক’ মূল্যস্ফীতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে। অপরদিকে ২৯ শতাংশ বলছে যে, তারা বর্তমান মাসে কোনমতে তাদের খরচ মেটাতে পারবে; আর আরও প্রায় একই সংখ্যক মানুষ বলছে যে, পরের মাসে তাদের বাজেটের চাইতে খরচ বেশি হবে। ‘লেনডিং ক্লাব’এর আরেক জরিপ বলছে যে, প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ ‘পে-চেক’এর উপর ভর করে চলছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে উভয় পক্ষের লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক টার্গেটের অর্থ হচ্ছে উভয় পক্ষই অপরের ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি করতে চাইছে। এর অর্থ হলো, উভয় পক্ষের জন্যেই যুদ্ধের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন। ‘দি আটলান্টিক কাউন্সিল’এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ইউক্রেনকে শুধুমাত্র কোনমতে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে বাইডেন প্রশাসন এতদিন যেসব অস্ত্র দিয়েছে, সেগুলি দীর্ঘ যুদ্ধের জন্যে মোটেই যথেষ্ট নয়; বিশেষ করে ডনবাসের সমতলভূমিতে যুদ্ধ করতে গেলে যার কাছে গোলাবর্ষণের সক্ষমতা বেশি থাকবে, জেতার সম্ভাবনা তারই বেশি থাকবে। ওয়াশিংটন শেষ পর্যন্ত ১৫৫ মিঃমিঃ আর্টিলারি, ওয়েপন লোকেটিং রাডার, ‘সুইচব্লেইড’ এবং ‘ফিনিক্স ঘোস্ট’ সুইসাইড ড্রোন ইত্যাদি অস্ত্র ইউক্রেনকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও মার্কিন অর্থনীতির উপর চাপ সামলে নিয়ে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু সহায়তা দিতে সক্ষম? ইউক্রেনের প্রতিদ্বন্দ্বী তালিবানের মতো কোন সংগঠন নয়, বরং রাশিয়ার মতো পারমাণবিক শক্তিধর একটা ‘গ্রেট পাওয়ার’। রাশিয়াকে ইউক্রেনে হারাতে যে অর্থায়নের প্রয়োজন, তা মাত্র দুই মাসেই পাহাড়সম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডনবাসের যুদ্ধে যেসব অস্ত্রের দরকার পড়ছে, সেগুলি হবে আরও বেশি দামী। এছাড়াও রয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের স্টকের প্রশ্ন। মার্কিনীরা ডনবাসের যুদ্ধ শুরুর আগেই তাদের নিজেদের সামরিক বাহিনীর এক তৃতীয়াংশ ‘জ্যাভেলিন’ ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং এক চতুর্থাংশ ‘স্টিংগার’ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করেছে; যেগুলির স্টক তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বছর লেগেছিল। মোটকথা, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের যুদ্ধে সরাসরি না জড়িয়েও এর ফলাফলের অনেকটাই ভোগ করছে। করোনা মহামারির পর ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মাঝে যখন মার্কিন জনগণই তাদের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে, তখন ইউক্রেনের জন্যে কত বিলিয়ন ডলারের সহায়তা যুক্তরাষ্ট্র বরাদ্দ দিতে সক্ষম হবে, তা প্রশ্নাতীত নয়। এই ব্যাপারগুলি পৃথিবীর অন্য আরেক প্রান্তে আরেকটা যুদ্ধে জড়াবার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতাকে যথেষ্টই খর্ব করেছে।

No comments:

Post a Comment