Monday, 25 April 2022

ইউক্রেন যুদ্ধের দায় আসলে কার?

২৫শে এপ্রিল ২০২২
 

ইয়ান ব্রেমার সমালোচনা করেছেন জন মিয়ার্সহাইমারের। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে তারা একমত। মিয়ার্সহাইমার যুদ্ধের দায় পশ্চিমাদের উপর দিচ্ছেন; আর ব্রেমার এই পরিস্থিতিতে আসার জন্যে পশ্চিমাদের দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরেছেন। পশ্চিমা দায়বদ্ধতার মূল ব্যাপারটাতে উভয়েই একমত হলেও তারা কেউই পশ্চিমা লিবারাল মিডিয়াতে ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্যে সরাসরি পশ্চিমাদেরকে দায়ী করতে পারছেন না।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর ১১ দিন আগে ১৩ই ফেব্রুয়ারি মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ‘এনবিসি’র এক বিশ্লেষণে বলা হয় যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত প্রভাবের অধীনে থাকা দেশগুলির বেশিরভাগই ন্যাটোর অধীনে চলে আসে। এর ফলে রাশিয়া তার প্রভাব এবং ভৌগোলিক বাফারের বেশিরভাগটাই হারিয়ে ফেলে। ৫টা ন্যাটো সদস্য দেশের আবার রাশিয়ার সাথে সীমানা রয়েছে; আর অনেক দেশেই এখন মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। রাশিয়াতে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফাউল ‘এনবিসি’কে বলেন যে, যদি রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক হামলা করে, তাহলে সেটা ন্যাটোর পূর্ব দিকে সম্প্রসারণের কারণে নয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মনে করেন যে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার আশেপাশের স্লাভিক অঞ্চলগুলিকে অযাচিতভাবে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। ম্যাকফাউল মনে করছেন যে, পুতিন হিসেব করে চলার মতো ব্যক্তি নন; তিনি বরং ইতিহাস বইতে তার নাম লেখাতে চাইছেন। ম্যাকফাউলের কথাগুলি অনেককিছুই এড়িয়ে যায়; যা ইউক্রেন যুদ্ধের দায়বদ্ধতা খুঁজে বের করার জন্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পরদিন ২৫শে ফেব্রুয়ারি মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ‘সিবিএস শিকাগো’র সাথে এক সাক্ষাতে ‘শিকাগো ইউনিভার্সিটি’র এসোসিয়েট প্রফেসর এবং ‘শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল এফেয়ার্স’এর ফেলো পল পোস্ট বলেন যে, ক্রেমলিনের কাছের লোকগুলি পশ্চিমাদের একেবারেই বিশ্বাস করে না। রুশ জনগণের মাঝে কিছু রয়েছে যারা রুশ সাম্রাজ্যকে পুনপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। আর এই লোকগুলিকেই এখন ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বাস করছেন। তবে পল পোস্ট তার টেলিভিশন সাক্ষাতে কিছু তথ্য এড়িয়ে গেছেন; যেগুলি তিনি যুদ্ধ শুরুর এক মাস আগে ১৬ই জানুয়ারি টুইটারে এক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। তিনি তার বিশ্লেষণে বলেছিলেন যে, ইউক্রেনে যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কারণ পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা বহুদিন থেকেই এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎবাণী করছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনে কিন্তু যুদ্ধ চলছে। আর ঠান্ডা যুদ্ধের পর থেকে যারা এ বিষয়ে লেখালেখি করেছেন, তাদের কাছে ইউক্রেনের যুদ্ধ কোন অবাক হবার বিষয় নয়। কারণ তাদের বেশিরভাগই ঠান্ডা যুদ্ধের পর থেকে ইউক্রেনকে সম্ভাব্য সংঘাতের কারণ হিসেবে দেখেছেন।

২০১৩ সালের শেষে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মাইদান স্কয়ারে ইইউএর পক্ষে ‘ইউরোমাইদান’ আন্দোলনকে রাশিয়া শুধু ইউক্রেনে প্রভাব হারানো হিসেবেই দেখেনি; সেটাকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার ক্ষমতার প্রতি হুমকি হিসেবেই দেখেছেন। পুতিন ‘ইউরোমাইদান’ আন্দোলনকে দেখেছেন একটা পশ্চিমা ষড়যন্ত্র হিসেবে; যার মাধ্যমে পশ্চিমারা রাশিয়ার একজন বন্ধুকে সড়িয়ে দিয়ে রাশিয়ার প্রভাব কমাতে এবং ন্যাটোর পূর্বদিকে সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে চায়।


‘ভোক্স’ ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ১৯৯১ সালে ইউক্রেনিয়ানরা যখন ৯২ শতাংশ ভোটে নতুন রাষ্ট্র তৈরির ইচ্ছা ব্যক্ত করে, তখন থেকেই পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা বলতে শুরু করেন যে, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সীমান্ত ভবিষ্যতে একটা সংঘাতের কারণ হবে। ইউক্রেনের ইউরোপ ঘেঁষা পশ্চিমাংশের জনগণ, পূর্বের রাশিয়া ঘেঁষা জনগণ, ক্রিমিয়া উপদ্বীপের প্রতিযোগিতামূলক এলাকা এবং রুশ প্রভাব থেকে বের হয়ে যাওয়া প্রাক্তন সোভিয়েত এলাকাগুলির উপর রুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে রূপ দিতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছিলেন। বাস্তবায়িত হতে ২০ বছর লাগলেও সেই ভবিষ্যৎবাণী ঠিকই বাস্তবে রূপ নেয়। ২০১৩ সালের শেষের দিকে রুশ সমর্থিত ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। এবং ২০১৪এর ২২শে ফেব্রুয়ারি ইয়ানুকোভিচ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় রাশিয়া দ্রুতবেগে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নিয়ে সেটাকে রুশ অঞ্চল বলে ঘোষণা দেয়। একই বছর পূর্ব ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষী অঞ্চলে রুশ প্ররোচনায় মারাত্মক গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০১৩ সালের শেষে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মাইদান স্কয়ারে ইইউএর পক্ষে ‘ইউরোমাইদান’ আন্দোলনকে রাশিয়া শুধু ইউক্রেনে প্রভাব হারানো হিসেবেই দেখেনি; সেটাকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার ক্ষমতার প্রতি হুমকি হিসেবেই দেখেছেন। পুতিন ‘ইউরোমাইদান’ আন্দোলনকে দেখেছেন একটা পশ্চিমা ষড়যন্ত্র হিসেবে; যার মাধ্যমে পশ্চিমারা রাশিয়ার একজন বন্ধুকে সড়িয়ে দিয়ে রাশিয়ার প্রভাব কমাতে এবং ন্যাটোর পূর্বদিকে সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে চায়। ২০১৪ সালের মার্চে পুতিন বলেন যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার পশ্চিমা পার্টনাররা ‘লাইন ক্রস’ করেছেন। ‘ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো’র সেভা গুনিতস্কির মতে, পুতিন যেকোন রুশ বিরোধী আন্দোলনের পিছনে মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা সিআইএ রয়েছে বলে মনে করেন। পুতিনের ধারণা যে, পশ্চিমারা ইউক্রেনের মতোই ‘সাবভার্সন’এর মাধ্যমে রাশিয়ারও নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। ‘ভোক্স’এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ২০২১এর জুলাই মাসে পুতিন ৫ হাজার শব্দের এক লম্বা লেখায় ব্যাখ্যা দেন যে, ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদ প্রকৃতপক্ষে অন্তসারশূণ্য; এবং ইউক্রেন সবসময় রাশিয়ারই অংশ ছিল। আর পশ্চিমা ঘেঁষা ইউক্রেন রুশ ফেডারেশনের অস্তিত্বের জন্যে হুমকি। তিনি ইউক্রেনিয়ান জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া রাষ্ট্রকে ব্যাপক ধ্বংসী অস্ত্রের সাথে তুলনা দেন।

 



ইউক্রেন যুদ্ধের জন্যে পশ্চিমাদের কোন দায় নেই… পশ্চিমা মিডিয়া অন্ততঃ সেটাই বলতে চায়

পল পোস্ট ঠান্ডা যুদ্ধ পরবর্তী সংঘাতের সম্ভাবনা, যা পশ্চিমা চিন্তাবিদেরা বারংবার বলেছেন, সেব্যাপারে কেন ‘সিবিএস’এর সামনে কথা বলেননি? কারণ পশ্চিমা মিডিয়া ইউক্রেনের ইস্যুটাকে শুধুমাত্র ভ্লাদিমির পুতিনের উপরেই চাপাতে চাইছে। কেউ যদি এই চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিক কোনকিছু বলে, তবে তাকে মিডিয়া আনঅফিশিয়ালি বয়কট করছে। সবচাইতে বড় উদাহরণ হলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সনামধন্য মার্কিন লেখক ‘শিকাগো ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর জন মিয়ার্সহাইমার। মিয়ার্সিহাইমার ২০১৫ সালের জুনে ‘ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো’র এলামনাইএর সামনে এক ভাষণে বলেন যে, ২০১৪ সালে ইউক্রেনে তৈরি হওয়া সংঘাতের জন্যে পশ্চিমারাই দায়ী। তিনি সরাসরিই বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে তার সাথে একমত হবার মতো খুব কম লোকই রয়েছে; যাদের মাঝে রয়েছেন স্টিফেন এফ কোহেন এবং হেনরি কিসিঞ্জার। মিয়ার্সহাইমারের ভাষণের পাঁচ বছর পর কোহেন ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেন; অপরদিকে কিসিঞ্জার এখন ৯৮ বছরের বয়োবৃদ্ধ।

মিয়ার্সহাইমার তার ব্যাখ্যায় বলেন যে, ইউক্রেন খুবই খারাপভাবে বিভক্ত একটা দেশ। ২০০৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল দেখিয়ে তিনি বলেন যে, ইউক্রেনের পশ্চিমের ইউক্রেনিয়ান ভাষাভাষী বেশিরভাগ মানুষ যেখানে ভিক্টর ইয়ুশচেংকোকে ভোট দিয়েছিল, সেখানে পূর্বের বেশিরভাগ রুশ ভাষাভাষী মানুষই ভোট দিয়েছিল ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে। ২০১০ সালের নির্বাচনেও টিমোশেংকোকে ভোট দিয়েছে দেশের পশ্চিমের লোকেরা; আর পূর্বাঞ্চলে ৬০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশের উপর ভোট পেয়েছিলেন ইয়ানুকোভিচ। ২০১৫ সালের মে মাসে ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট’এর এক জরিপে দেখানো হয় যে, ইউক্রেনের পশ্চিমের বেশিরভাগ শহরের ৬০ শতাংশ থেকে ৯২ শতাংশ মানুষ ইইউতে যোগদানের পক্ষে; অপরদিকে পূর্ব ও দক্ষিণের মিকোলায়িভ, খারকিভ, ওডেসা, নিপ্রো, খেরসনএর মতো শহরগুলিতে অর্ধেকের বেশি মানুষ ইইউতে যোগদানের পক্ষে নয়। ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমাদের দ্বন্দ্ব এই প্রেক্ষাপটের উপরেই চলছে। আর একইসাথে জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলির রুশ গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টিতে বাধা দিয়েছে।

মিয়ার্সহাইমার বলছেন যে, পশ্চিমা এবং রুশদের মাঝে দ্বন্দ্বের মূল কারণ হলো, পশ্চিমারা চেয়েছে ইউক্রেনকে রাশিয়ার বলয় থেকে বের করে এনে পশ্চিমা ছাঁচের মাঝে নিয়ে আসতে; অপরদিকে রাশিয়া বলেছে যে, তারা সেটা বন্ধ করতে সম্ভব সকল কিছুই করবে। পশ্চিমারা তিনটা কৌশলে ইউক্রেনকে নিজেদের বলয়ে আনতে চেষ্টা করেছে; প্রথমতঃ ন্যাটো সামরিক জোটে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো; দ্বিতীয়তঃ ইইউএর অর্থনৈতিক জোটে ইউক্রেনকে ঢোকানো; এবং তৃতীয়তঃ ‘অরেঞ্জ রেভোলিউশন’এর মাধ্যমে ইউক্রেনকে গণতান্ত্রিক বানানো। কিন্তু সমস্যা হলো, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাকে পুতিন বা চীনের শি জিনপিংএর মতো নেতারা সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা হিসেবে দেখে। এই কথার পিছনে সত্য রয়েছে; কারণ পশ্চিমারা মনে করছে যে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা পশ্চিমা ঘেঁষা হবে। অর্থাৎ এখানে ‘এক ঢিলে দুই পাখি শিকার’ করছে পশ্চিমারা।

২০০৪ সালে দ্বিতীয় দফায় রাশিয়ার সীমানায় বল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া এবং লাটভিয়াকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মিয়ার্সহাইমার বলছেন যে, রাশিয়া ১৯৯০এর দশক থেকেই ন্যাটোর পূর্বদিকে সম্প্রসারণের প্রতিবাদ করলেও তারা এব্যাপারে কিছু করার সক্ষমতা রাখেনি; আর রাশিয়ার সীমানায় বল্টিক রাষ্ট্রগুলি যথেষ্ট ছোট বিধায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে এদের ভূমিকা খুব বেশি কিছু হবে না। কিন্তু ২০০৮ সালের ৩রা এপ্রিল ন্যাটোর বুখারেস্ত বৈঠকে বলা হয় যে, ন্যাটো ইউক্রেন এবং জর্জিয়াকে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র হবার ইচ্ছাকে স্বাগত জানাবে। ন্যাটোতে সমঝোতা হয়েছে যে, এই দেশগুলি ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র হবে। পুতিন এবং ক্রেমলিনের অন্যান্যদের বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয় যে, ন্যাটোর এই ঘোষণাকে রাশিয়া মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখেছে। আর এর ফলশ্রুতিতে এর পরের অগাস্টে রাশিয়া জর্জিয়ায় সামরিক হামলা করে বসে।

সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। ক্রুশ্চেভ যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার মানুষ ছিলেন এবং তিনি বুঝতেন যে, পারমাণবিক যুদ্ধ বলতে কি বোঝায়। একারণেই কিউবা সমস্যার সমাধানে সোভিয়েতরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ২০২২ সালে সমস্যা হলো, পুতিন ক্রুশ্চেভের মতো এতটা ঠান্ডা মাথার নন। আর ক্রুশ্চেভের ক্ষেত্রে যেমন একা সিদ্ধান্ত নেয়াটা অনেক কঠিন ছিল, পুতিনের ক্ষেত্রে সেটা ততটা কঠিন নয়। কারণ ক্রেমলিনের উপর ক্রুশ্চেভের যে নিয়ন্ত্রণ ছিল, পুতিনের নিয়ন্ত্রণ তার চাইতে অনেক বেশি।


১৯৬২ সালে কিউবায় সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘটনার সাথে ইউক্রেন যুদ্ধের সম্পর্ক

২০১৫ সালে মিয়ার্সহাইমার ঠিকই বুঝেছিলেন যে, তার কথাগুলি পশ্চিমারা পছন্দ করবে না। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু পর বেশিরভাগ পশ্চিমা মিডিয়াই মিয়ার্সহাইমারকে বয়কট করে। আর ভিন্ন মত দেয়ার কারণে চীনা সরকারি মিডিয়া ‘সিজিটিএন’ও তাকে আমন্ত্রণ জানায়। ১৭ই এপ্রিল এমনই এক সাক্ষাতে তিনি বলেন যে, ন্যাটোর নীতিকে দোষারোপ না করে পশ্চিমা মিডিয়া পুতিনকেই দোষারোপ করছে। তিনি বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম গোলার্ধে ‘মনরো ডকট্রাইন’ মেনে চলছে; যার অর্থ হলো পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলির নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার অধিকার নেই। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন যে, ১৯৬২ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করেনি যে, কিউবার স্বাধীনতা রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেপণাস্ত্র কিউবায় মোতায়েন করার। যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম গোলার্ধে যে নীতি অনুসরণ করেছে, ঠিক একই রকমের নীতি রুশরা অনুসরণ করেছে ইউক্রেনে। তবে পশ্চিমাদের মাঝে অনেকেই মনে করেন যে, ন্যাটোর পূর্বদিকে সম্প্রসারণ রাশিয়ার অস্তিত্বের প্রতি হুমকি নয়। কিন্তু পশ্চিমারা কি চিন্তা করে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং পুতিন এবং তার আশেপাশের লোকেরা কি চিন্তা করছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। পুতিনের সাথে কি আচরণ করা হবে, সেটা সাবধানে চিন্তা করা উচিৎ; কারণ তার হাতে হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। মিয়ার্সহাইমার বলছেন যে, একদিকে যুক্তরাষ্ট্র যেমন ইউক্রেনে রাশিয়াকে হারাতে চাইছে এবং রুশ অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে চাইছে, তেমনি রাশিয়াও চাইছে সামরিক বিজয়। উভয় পক্ষই জিততে চাইছে। এমতাবস্থায় শান্তি কিভাবে আসবে, তা চিন্তা করাটা কঠিন। অনেকেই ধারণা করছেন যে, ইউক্রেনের এই যুদ্ধ কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

মার্কিন অনলাইন মিডিয়া ‘দ্যা রিকাউন্ট’এর সাথে এক সাক্ষাতে ‘এনবিসি’র প্রেসিডেন্সিয়াল ইতিহাসবিদ মাইকেল বেশলস বলছেন যে, ১৯৬২ সালে কিউবায় সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সময় সোভিয়েত নেতা ছিলেন নিকিতা ক্রুশ্চেভ। ক্রুশ্চেভ যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার মানুষ ছিলেন এবং তিনি বুঝতেন যে, পারমাণবিক যুদ্ধ বলতে কি বোঝায়। একারণেই কিউবা সমস্যার সমাধানে সোভিয়েতরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ২০২২ সালে সমস্যা হলো, পুতিন ক্রুশ্চেভের মতো এতটা ঠান্ডা মাথার নন। আর ক্রুশ্চেভের ক্ষেত্রে যেমন একা সিদ্ধান্ত নেয়াটা অনেক কঠিন ছিল, পুতিনের ক্ষেত্রে সেটা ততটা কঠিন নয়। কারণ ক্রেমলিনের উপর ক্রুশ্চেভের যে নিয়ন্ত্রণ ছিল, পুতিনের নিয়ন্ত্রণ তার চাইতে অনেক বেশি। বেশলস বলছেন যে, ১৯৯০এর দশকে পশ্চিমারা রাশিয়ার গণতন্ত্রায়ন না করে ভুল করেছে; যার ফলশ্রুতিতে পুতিনের মতো নেতার আবির্ভাব হয়েছে।

১১ই মার্চ ‘দ্যা ইকনমিস্ট’এর এক লেখায় মিয়ার্সহাইমার তার মতামতগুলিকে লিপিবদ্ধ করেন। তার কথাগুলি অনেকেই যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন; ফলাফলস্বরূপ পশ্চিমা লিবারালদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। একারণেই প্রায় এক মাস পর ৮ই এপ্রিল মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইউরেশিয়া গ্রুপ’এর প্রধান ইয়ান ব্রেমার ‘জিজিরো মিডিয়া’তে মিয়ার্সহাইমারের যুক্তিগুলি খন্ডনের চেষ্টা করেন। তবে মিয়ার্সহাইমারের বেশিরভাগ যুক্তিকেই তিনি এড়িয়ে যান। প্রথমতঃ মিয়ার্সহাইমারের কথা যে, পশ্চিমারা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধের জন্যে দায়ী – এটাকে ব্রেমার পুরোপুরিভাবে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন যে, পশ্চিমাদের কোন কর্মকান্ডই পুতিনকে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করেনি। পুতিন নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; এবং এর জন্যে দায় “একমাত্র” তার। দ্বিতীয়তঃ মিয়ার্সহাইমার বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র রুশ ‘লাল দাগ’ উপেক্ষা করেই ইউক্রেনকে রুশ সীমানায় পশ্চিমাদের দূর্গ হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছে। ব্রেমার এর সমালোচনা করে বলছেন যে, রুশ হুমকির কারণেই ইউক্রেনের জনগণ পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকেছে; এখানে পশ্চিমা কৌশলীদের কোন ভূমিকা নেই। অর্থাৎ রাশিয়ার নিজস্ব হুমকির কারণেই ইউক্রেন পশ্চিম ঘেঁষা হয়েছে। তবে ব্রেমারের সমালোচনাগুলিকে সরাসরি নেয়া যাবে না; কারণ এই কথাগুলি তিনি উদ্দেশ্য ছাড়া বলেননি।
 

১৯৯৫। রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলতসিনের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ইয়েলতসিনের মতো পশ্চিমা ঘেঁষা রাষ্ট্রপ্রধান থাকার সময়েও পশ্চিমা কাঠামোর মাঝে রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্তির কোন প্রয়াসই দেখা যায়নি। ন্যাটো এবং ‘জি৭’এর আলোচনায় রাশিয়াকে বসতে দিয়ে আলোচনা শুনতে দেয়া হয়েছে; কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে কোন ক্ষমতাই দেয়া হয়নি। রাশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অপমানজনক নীতির কারণেই শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী নীতিগুলিকে রাশিয়া অনুসরণ করেছে।


ঠান্ডা যুদ্ধের পর পশ্চিমারা রাশিয়ার প্রতি যে আচরণ করেছে, তা কতটুকু সঠিক ছিল?

মিয়ার্সহাইমারের সমালোচনার তিন দিন আগে ৫ই এপ্রিল ইয়ান ব্রেমার ‘জিজিরো মিডিয়া’র আরেক আলোচনায় বলেন যে, ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ হবার পর পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি যখন ইইউএর অংশ হয়ে নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চাইছিল, তখন রাশিয়া কি পেয়েছে? তারা পেয়েছে পশ্চিমা প্রেসক্রিপশন; যেগুলির অনেকগুলিরই রাশিয়ার বাস্তবতার সাথে কোনরূপ সম্পর্ক ছিল না। বেসরকারিকরণ করতে গিয়ে রাশিয়ার সকল সম্পদ মাত্র কয়েকটা মানুষের হাতে দিয়ে দেয়া হয়েছে। রাশিয়ার উন্নয়নের জন্যে প্রকৃতপক্ষে কোন পরিকল্পনাই ছিল না। এমনকি বরিস ইয়েলতসিনের মতো পশ্চিমা ঘেঁষা রাষ্ট্রপ্রধান থাকার সময়েও পশ্চিমা কাঠামোর মাঝে রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্তির কোন প্রয়াসই দেখা যায়নি। ন্যাটো এবং ‘জি৭’এর আলোচনায় রাশিয়াকে বসতে দিয়ে আলোচনা শুনতে দেয়া হয়েছে; কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে কোন ক্ষমতাই দেয়া হয়নি। জার্মানি এবং জাপানের সাথে পশ্চিমারা যুদ্ধে জিতেছিল। কিন্তু হয়তো সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুদ্ধ ছাড়াই সহজে জয়লাভের কারণে রাশিয়ার দায় কেউ নিতে চায়নি। ঠান্ডা যুদ্ধের পর যে শান্তির সময়টা পশ্চিমারা পেয়েছিল, সেটা রক্ষার জন্যে তারা খরচ করতে রাজি হয়নি। তারা এটাকে ‘ফ্রি মানি’ হিসেবে দেখেছে। রাশিয়া যদি রাষ্ট্র হিসেবে কোন কারণে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমাদের কোন দায় নেই। এরপর ব্রেমার সবচাইতে মারাত্মক কথাগুলি বলছেন। পশ্চিমারা রাশিয়াকে কিছুই না দিয়ে বঞ্চিত এবং অপমান করেছে; এবং একইসাথে নিজেদের আদর্শ থেকেই সড়ে এসেছে। ২০০৮ সালে ইউক্রেন এবং জর্জিয়াকে ন্যাটোর মাঝে আনার সিদ্ধান্ত নেয় ন্যাটো। যার ফলশ্রুতিতে অগাস্টে রাশিয়া জর্জিয়া আক্রমণ করে বসে। মার্কিন নেতৃবৃন্দ তখন অনেক কথা বললেও জর্জিয়াকে কোন সামরিক সহায়তা দেয়নি; রাশিয়ার উপরেও কোন অর্থনৈতিক অবরোধ দেয়নি। এরপর ২০১৪ সালে যখন রাশিয়া ক্রিমিয়া এবং ডনবাস নিজেদের করে নেয়, তখনও মার্কিনীরা তেমন কিছুই করেনি। রাশিয়ার উপর সীমিত কিছু অবরোধ দিয়েছে; এবং ইউক্রেনকে খুবই নগন্য পরিমাণ অস্ত্র দিয়েছে। ক্রিমিয়া দখল থাকা এবং ডনবাসে যুদ্ধ চলার মাঝেই রাশিয়া ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করে এবং পশ্চিমারা সেখানে যোগ দেয়। খেলা দেখার জন্যে এবং পুতিনের সাথে আলোচনার জন্যে বেশ কয়েকজন পশ্চিমা নেতা রাশিয়ায় গমন করেন। এই ঘটনাগুলির কারণে রাশিয়া ধারণা করেছে যে, তাদের উপর পশ্চিমারা যেসকল অযাচিত আচরণ করেছে, সেগুলির ব্যাপারে রুশরা কিছু করলে পশ্চিমারা খুব বেশি কিছু করবে না।

তদুপরি, ব্রেমার রাশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অপমানজনক নীতি এবং বিশ্বব্যাপী ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী নীতিকে তুলে ধরছেন, যেগুলিকে রাশিয়া অনুসরণ করেছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বারাক ওবামা হোয়াইট হাউজের সংবাদ সন্মেলনে বলেছিলেন যে, রাশিয়া কোন ‘গ্রেট পাওয়ার’ নয়; তারা বড়জোর একটা আঞ্চলিক শক্তি, এবং তারা এখন নিম্নগামী। কথাগুলি যতটাই সত্য হোক না কেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই কথাগুলি বলা একেবারেই সমীচিন হয়নি বলে বলছেন ব্রেমার। কারণ এই কথাগুলি পুতিনের কাছে এমন সময়ে গিয়েছে, যখন তিনি মনে করছিলেন যে, কয়েক দশক ধরে পশ্চিমারা রাশিয়াকে অপমান করেছে। এছাড়াও রুশরা মার্কিন দ্বিমুখী নীতিগুলিকে কপি করেছে। যেমন ক্রিমিয়াকে দখল করতে গিয়ে যে কথাগুলি তারা বলেছে, তার অনেকগুলিই মার্কিনীরা বলেছিল কসভোকে স্বীকৃতি দেয়ার সময়; যদিও সেগুলি ছিল প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। রুশরা মনে করেছে যে, মার্কিনীরা এগুলি করতে পারলে তারাও পারবে। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন ইউক্রেনের সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল যে, ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে পাওয়া পারমাণবিক অস্ত্রগুলিকে ফেরত দিয়ে দেয়ার পর পশ্চিমারা ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখন্ডতার নিশ্চয়তা দেবে! ব্রেমার বলছেন যে, এই প্রতিশ্রুতির মূল্য এক টুকরা কাগজের মূল্যের সমানও ছিল না! ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের সময় মার্কিনীরা এই ডকুমেন্ট নিয়ে কোন কথাই বলেনি! ২০২২ সালেই বা তারা সেই ডকুমেন্ট নিয়ে কথা বলবে কেন? আর ইরাক এবং আফগানিস্তানে মার্কিনীদের হাতে মারাত্মক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলির পর যুক্তরাষ্ট্র কি বলতে পারে যে, তারা মুক্ত দুনিয়ার নেতৃত্বে রয়েছে? আর রাশিয়াও এই উদাহরণগুলি দিয়েই বলবে যে, কেউই সত্যি কথা বলছে না; তারাই বা বলবে কেন? ব্রেমার বলছেন যে, তিনি যুদ্ধের জন্যে পুতিনকেই দায়ী করবেন। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে, এই পরিস্থিতিতে আসার জন্যে পশ্চিমারা তাদের দায় এড়াতে পারে না।

পশ্চিমা স্বার্থ বনাম রুশ স্বার্থ

ইয়ান ব্রেমার সমালোচনা করেছেন জন মিয়ার্সহাইমারের। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে তারা একমত। মিয়ার্সহাইমার যুদ্ধের দায় পশ্চিমাদের উপর দিচ্ছেন; আর ব্রেমার এই পরিস্থিতিতে আসার জন্যে পশ্চিমাদের দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরেছেন। মিয়ার্সহাইমার রাশিয়ার নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেছেন এবং বলেছেন যে, রুশরা মার্কিনীদের নীতিকেই অনুসরণ করেছে। ব্রেমারও বলছেন যে, পশ্চিমারা রাশিয়াকে অপমান করেছে এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনের পর মার্কিনীরা দুনিয়ার নেতৃত্ব হারিয়েছে। এমতাবস্থায় রাশিয়া মনে করেছে যে, তারা মার্কিনীদের মতোই দ্বিমুখী আচরণ করলে সমস্যার কিছু নেই। পশ্চিমা দায়বদ্ধতার মূল ব্যাপারটাতে উভয়েই একমত হলেও তারা কেউই পশ্চিমা লিবারাল মিডিয়াতে ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্যে সরাসরি পশ্চিমাদেরকে দায়ী করতে পারছেন না। একারণেই পল পোস্ট টুইটারে যা বলছেন, তা ‘সিবিএস’এ এসে বলতে পারছেন না। মিডিয়া বরং রাশিয়াতে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফাউলএর মতো একপেশে বক্তব্যই পছন্দ করছে। তবে ইতিহাসবিদ মাইকেল বেশলসএর কথাগুলি ফেলে দেয়ার মতো নয়, যখন তিনি বলছেন যে, ১৯৬২ সালে ক্রুশ্চেভ যত সহজে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়িয়েছিলেন, পুতিন সেটা নাও করতে পারেন; বিশেষ করে পশ্চিমারা যদি পুতিনের উপর অনেক বেশি চাপ প্রয়োগ করে, তাহলে তার ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে। মিয়ার্সহাইমারও বলছেন যে, পুতিনের মতো একটা মানুষের সাথে বুঝেশুনে কথা বলা উচিৎ, কারণ তার কয়েক হাজার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। যে ব্যাপারটা নিয়ে কেউই আলোচনা করছেন না তা হলো পশ্চিমারা এবং রুশরা সকলেই নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে পুরো দুনিয়াকে মহা বিপদের মাঝে ফেলে দিয়েছে। এই আলোচনাটাই পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প খোঁজার জন্যে যথেষ্ট।

No comments:

Post a Comment