Tuesday 14 April 2020

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট ভূরাজনৈতিক শূণ্যতা পূরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে তুরস্ক

১৪ই এপ্রিল ২০২০

১০ই এপ্রিল তুর্কিরা বিমানে করে মেডিক্যাল সামগ্রী পাঠায় ব্রিটেনে। তুরস্ক মানবিক সহায়তার রাজনীতিকে উস্কে দেবার পর আমিরাত, কাতার, মিশর, বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশগুলির অগ্রগামী ভূমিকা বিশ্বব্যাপী নতুন ভূরাজনীতির জন্ম দিচ্ছে।

গত পহেলা এপ্রিল তুরস্কের বিমান বাহিনীর ‘এ-৪০০এম’ পরিবহণ বিমান আঙ্কারা ছেড়ে যায়। এর গন্তব্য ছিল ইতালি এবং স্পেন; যারা নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক টুইটার বার্তায় বলা হয় যে, বিমানে ছিল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অতি দরকারি মাস্ক, গাউন এবং জীবাণুনাশক, যা কিনা তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারখানাগুলিতে তৈরি হয়েছে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি ডি মাইও এবং স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঞ্চা গঞ্জালেজ তুরস্ককে এই সহায়তার জন্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ‘দ্যা ডিফেন্স পোস্ট’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, পহেলা এপ্রিল পর্যন্ত তুরস্কে করোনাভাইরাসে ২’শ ১৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে; আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। অর্থাৎ তুরস্ক তার নিজের দেশে মেডিক্যাল সরঞ্জামের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ইতালি এবং স্পেনকে সহায়তা দিয়েছে। ইতালির ১০ বছর বয়সী একটা ছেলে এক ভিডিও বার্তায় তুরস্কের এই সহায়তাকে ধন্যবাদ দেয়, যা কিনা দুর্যোগের মুহুর্তে তুর্কিদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার চিন্তাটাকেই হাইলাইট করেছে। মিলানের এই বাসিন্দা আর্নেস্ত গাব্রিয়েল স্ক্রোচ্চি তার বার্তায় বলে যে, প্রতি পাঁচ মিনিটে একটা করে এম্বুল্যান্সের শব্দ শুনতে শুনতে সে ব্যাথিত। এমন এক সময়েই তুরস্ক ইতালিকে সহায়তা দিয়েছে। তুর্কিদের প্রতি ইতালি কৃতজ্ঞ। তবে স্ক্রোচ্চির আবেগঘন বার্তাই তুরস্কের জন্যে একমাত্র পাওয়া নয়। করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী নতুন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার একটা অংশ এই সহায়তা।

মার্চ মাস জুড়ে চীন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সহায়তা দিয়েছে। কম্বোডিয়াতে তারা পাঠিয়েছে টেস্টিং কিট, ইতালি এবং ফ্রান্সকে দিয়েছে ভেন্টিলেটর, মাস্ক এবং মেডিক্যাল কর্মী; ইরাক এবং ইরানেও পাঠিয়েছে মেডিক্যাল কর্মী। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্পেনের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে বলেন যে, ঝড়ের পরেই সূর্য দেখা যায়। ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ বলছে যে, করোনা দুর্যোগের মাঝে চীন নিজেকে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে বিশ্বের নেতৃত্বে বসাতে চাইছে। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতার মাঝে চীন বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব বাড়িয়ে নিতে চাইছে। নিজ দেশে চীন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনার সাথেসাথেই বিশ্বের প্রতি চীনের বাক্যগুলি পরিবর্তিত হয়ে গেছে। নিজ দেশে চীন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রায় ‘জয়লাভ’ করার দাবি করছে এবং বাকি বিশ্বকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা দিতে চাইছে। অস্ট্রেলিয়ার ‘লোয়ি ইন্সটিটিউট’এর রিসার্চ ফেলো নাতাশা কাসাম বলছেন যে, চীনাদের প্রচারমাধ্যম করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ‘জয়লাভ’এর ইতিহাস লিখেছে, এবং তারা চাইছে যে বিশ্বব্যাপী সকলে তা বিশ্বাস করুক। শি জিনপিং ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্টিকে ফোনে বলেন যে, তিনি একটা ‘হেলথ সিল্ক রোড’ তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন। ‘জার্মান মার্শাল ফান্ড’এর সিনিয়র ভিজিটিং ফেলো নোয়াহ বারকিন বলছেন যে, চীন চাইছে ইউরোপিয়দের নিজেদের মাঝের দূরত্বকে বাড়াতে; আর যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে চ্যালেঞ্জ করতে। একইসাথে শি জিনপিংএর সরকার নিজ জনগণকে বোঝাতে চাইছে যে, চীন নিজ দেশের দুর্যোগকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে চীনা সরকারের ব্যর্থতাগুলিকে এখন তারা আর আলোচনায় রাখতে চাইছে না। ‘চায়না ডেইলি’র এক প্রতিবেদনে গর্ব করেই লেখা হয় যে বাকি বিশ্বে সংক্রমণের সংখ্যা চীনের সংক্রমণের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছে; যা কিনা “ভাগ্য উল্টে যাওয়া”র সাথে তুলনা করা হয়। এই প্রতিবেদনের জবাবে একজন পাঠক লিখেন যে, চীনাদের ঘরে পানির পাইপ ভেঙ্গে যাবার পর তারা প্রতিবেশীদের বাড়ি ডুবিয়ে দিয়েছে। এটাই কি সেই ‘স্বর্ণযুগ’, যার আশা চীনারা করেছিল?
 
বেলগ্রেডের রাস্তায় বিলবোর্ড ঘোষণা করছে কিভাবে “ব্রাদার শি” সার্বিয়ার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চীন এতকাল তার নিজের দেড়’শ কোটি মানুষকে উন্নততর জীবন দেবার জন্যেই সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। বিশ্বের মানুষের সমস্যা নিরসনে তার কোন ভূমিকা ছিল না। এখন চীনা মাস্ক এবং ডাক্তাররা চীনের এই অবস্থানকে পরিবর্তন করতে চাইছে।


‘আটলান্টিক কাউন্সিল’এর ইউরেশিয়া সেন্টারের সিনিয়র ফেলো দিমিতার বেচেভ বলছেন যে, রাজনীতিতে অনেক সময়ই হুমকি এবং সুযোগ একত্রে আসে। চীনের উদাহরণ দিয়ে বেচেভ বলছেন যে, মার্চের মাঝামাঝি ইতালি এবং স্পেনকে মেডিক্যাল সহায়তা দেবার মাধ্যমে চীন তার ক্ষয়ে যাওয়া প্রতিচ্ছবিটাকে কিছু ঘষামাজা করতে চাইছে। অনেকেই চীনে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব হবার ব্যাপারটাকে হাইলাইট করেছেন; আবার অনেকেই ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে চীনা সরকারের অস্বচ্চতা এবং অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেছেন, যার ফলশ্রুতিতে ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়াতে পেরেছিল। চীন এতকাল তার নিজের দেড়’শ কোটি মানুষকে উন্নততর জীবন দেবার জন্যেই সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। বিশ্বের মানুষের সমস্যা নিরসনে তার কোন ভূমিকা ছিল না। এখন চীনা মাস্ক এবং ডাক্তাররা চীনের এই অবস্থানকে পরিবর্তন করতে চাইছে। রাশিয়াও চীনকে অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রে মেডিক্যাল সহায়তা পাঠিয়েছে। অনেক মার্কিনীরাই রুশ এই সহায়তাকে প্রচারণার খাতিরে করা হয়েছে বলেই বলছেন। অন্যদিকে ইতালিতে রুশ সহায়তা পাঠাবার পর ইতালি থেকে কেউ কেউ অভিযোগ করা শুরু করে যে, রুশ মেডিক্যাল কর্মীদের মাঝে ইন্টেলিজেন্সের লোকও এসেছে। একইসাথে সার্বিয়াতে চীনা সহায়তা যাবার পর সার্বিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচ দুঃখ করে বলেন যে, ইউরোপের মাঝে কোন ঐক্য নেই। তিনি বলেন যে, ইউরোপিয়রাই সার্বিয়াকে বলেছিল তাদের টেন্ডারের নিয়ম পরিবর্তন করতে, যাতে ইউরোপিয় কোম্পানিগুলি চীনা কোম্পানির স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। আর এখন ইউরোপের কাছে সার্বিয়ার কোন গুরুত্ব নেই। বেলগ্রেডের রাস্তায় সরকারপন্থী পত্রিকার বিলবোর্ড বসানো হয়েছে, যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে কিভাবে “ব্রাদার শি” সার্বিয়ার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও সার্বয়াতে মেডিক্যাল সহায়তা পাঠিয়েছেন।

চীনারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উপর মানবিক সহায়তার ভিত গড়ে তুলতে চাইলেও তুরস্ক এদিক থেকে পুরোনো খেলোয়াড়। বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তা দেয়াটা সবসময়ই তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতির অংশ। বসনিয়া থেকে শুরু করে সোমালিয়া বা আফগানিস্তান পর্যন্ত তুরস্ক মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে অনেক বছর ধরেই। গত নভেম্বরে আলবেনিয়াতে ভূমিকম্পের পর তুরস্ক সেখানে সহায়তা প্রেরণ করে। তুরস্ক ৮ই এপ্রিল বলকানের পাঁচটা দেশে মেডিক্যাল সরঞ্জাম পাঠায়। তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইটার বার্তায় বলে যে, সার্বিয়া, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া এবং কসোভোতে মাস্ক, গাউন এবং টেস্ট সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ১০ই এপ্রিল তুর্কিরা আরেকটা বিমানে করে মেডিক্যাল সামগ্রী পাঠায় ব্রিটেনে। ১২ তারিখে দ্বিতীয় বিমানটা যায় ব্রিটেনে। ইউরোপের দেশগুলিতে তুর্কিদের পাঠানো মেডিক্যাল সামগ্রীর বাক্সগুলির উপর লেখা ছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুসলিম সাধক জালালুদ্দিন রুমির কবিতা - নৈরাশ্যতার পরেই রয়েছে অনেক আশা; এবং আঁধারের পরেই রয়েছে অনেক বেশি উজ্জ্বলতর সূর্য। ৯ই এপ্রিল তুর্কি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ‘ব্লুমবার্গ’ জানায় যে, ইস্রাইলও তুরস্কের কাছে মাস্ক, গাউন এবং গ্লাভস চেয়েছে। এর বিনিময়ে ইস্রাইলি সরকার প্যালেস্টাইনিদের কাছে তুর্কি ত্রাণ যাবার সুযোগ দেবে বলে সমঝোতা হয়েছে। তবে ইস্রাইলি কর্মকর্তারা ইস্রাইলের ‘ইনেত’ পত্রিকার সাথে কথা বলতে গিয়ে প্যালেস্টাইনে ত্রাণ পাঠাবার সমঝোতার কথাটা অস্বীকার করেন।




তুরস্ক মানবিক সহায়তার রাজনীতিকে উস্কে দেবার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬ই এপ্রিল ইতালিতে ১০ টন এবং পাকিস্তানে ১১ টন মেডিক্যাল সরঞ্জাম পাঠায়। এরপর ১০ই এপ্রিল ইউক্রেনে ১১ টন মেডিক্যাল সরঞ্জাম পাঠায়। এছাড়াও আমিরাত ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, গ্রীক সাইপ্রাস এবং আরও কিছু দেশে সহায়তা পাঠাচ্ছে। ৮ই এপ্রিল ইতালিতে দু’টা ফিল্ড হাসপাতাল পাঠায় কাতার; যার মাধ্যমে মোট ২ হাজার করোনাভাইরাস রুগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। অপরদিকে নিজেদের স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও ইতালিকে সহায়তা দিয়েছে মিশর। মিশরের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হালা জায়েদ নিজে ইতালিতে দু’টা বিমান ভর্তি মেডিক্যাল সরঞ্জাম নিয়ে যান। ১৪ই এপ্রিল এক টুইটার বার্তায় ব্রিটিশ বাণিজ্যমন্ত্রী গ্রেগ হ্যান্ডস বলেন যে, মিশর থেকে বিরাট সংখ্যক মেডিক্যাল গাউন আসছে; যার জন্যে তিনি মিশরকে ধন্যবাদ জানান। মিশরে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ১’শ ৬৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন; সংক্রমিত হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি। আর কুয়েতে ১’শরও বেশি মেডিক্যাল কর্মী এবং মেডিক্যাল সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ। মালদ্বীপকেও ত্রাণ সহায়তা দিতে চাইছে বাংলাদেশ।

চীন করোনাভাইরাস থেকে কতটা ‘মুক্ত’ হতে পেরেছে, তা প্রশ্নাতীত না হলেও এই ভাইরাসকে পুঁজি করে শি জিনপিংএর চীন নিঃসন্দেহে বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব গড়ে তুলতে চাইছে। ভাইরাসের আক্রমণে সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের নাজেহাল হবার এই সুযোগে চীনারা এশিয়া, আফ্রিকা ছাড়াও ইউরোপের রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা এবং সার্বিয়ার রাস্তায় বিলবোর্ডে শি জিনপিংএর ছবি একটা বড় ভূরাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এমনই সময় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তুরস্ক, এবং তার সাথেসাথে আমিরাত, কাতার, মিশর, বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশগুলির অগ্রগামী ভূমিকা বিশ্বব্যাপী নতুন ভূরাজনীতির জন্ম দিচ্ছে। নিজ দেশে করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যাপক সমস্যায় থাকা এবং মেডিক্যাল সরঞ্জামের স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও দেশগুলি অন্যকে সহায়তা দিতে অগ্রসর হয়েছে, যা কিনা করোনাভাইরাসের কারণে ভূরাজনৈতিক শূণ্যতা পূরণের একটা চেষ্টা। সামনের দিনগুলিতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিশ্চিতভাবে কেউ কিছু বলতে না পারলেও এর ফলশ্রুতিতে অবশ্যম্ভাবী ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনকে কেউ এখন আর অস্বীকার করছেন না।


2 comments:

  1. ভূ-রাজনীতিতে ব্যাপক কোন পরিবর্তন আসবে কিনা সেটা নিশ্চিত নয়, তবে অর্থনীতিতে আসবে। অনলাইনের উপর নির্ভরশীলতা ব্যাপকভাবে বাড়বে।

    আর চীন এই সুযোগে মিয়ানমারে দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তিসহ হস্তান্তর করে বাংলাদেশকে কি বার্তা দিতে চায়? চীনাদের আর কেউ বিশ্বাস করবে না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভূরাজনীতি অনেক বড় একটা বিষয়, যার মাঝে সকল কিছুই রয়েছে। অর্থনীতির মতো একটা বিষয়ে এতবড় পরিবর্তন আসার পর সেটা ভূরাজনীতিতে কোন প্রভাব ফেলবে না, এটা চিন্তা করাটা অবান্তর। অর্থনীতিতে ধ্বস আসলে একটা দেশ কি করে দূর সমুদ্রে তার নৌবাহিনীর পাঠিয়ে নিয়ন্ত্রণমূলক অবস্থান নেবে? অর্থনীতি ডিপ্রেশনের মাঝে পড়ে গেলে একটা দেশ কি করে সারা বিশ্বে তার এমব্যাসিগুলির কর্মকান্ড চালাবে, গরীব দেশগুলিকে সহায়তা দিয়ে নিজের পক্ষে রাখবে, নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবে, বা অন্য দেশের উপর ছড়ি ঘোরাবে?

      আর ভূরাজনীতি একটা সংকীর্ণ বিষয় নয়। এখানে এমন মনে করা ঠিক হবে না যে, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার এখানে কোন বায়ুশূণ্য স্থানে ঝুলে আছে। বাংলাদেশ হলো ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপথের উপরে অবস্থিত একটা দেশ। আর ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপথ এখন দুনিয়ার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ। এই সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যখন দ্বন্দ্ব চলছে, সেখানে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারকে নিয়ে আলাদা করে চিন্তা করাটা অবান্তর।

      বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিতে হবে। এছাড়া যে অপশনটা রয়েছে তা হলো, অন্য রাষ্ট্রের চাপের মাঝে পড়ে স্যান্ডউইচ হয়ে অন্যদের প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যাওয়া।

      Delete