Thursday 23 April 2020

করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে দক্ষিণ চীন সাগরে আগ্রাসী চীন

২৩শে এপ্রিল ২০২০
   
চীনের জরিপ জাহাজ ‘হাই ইয়াং ডি ঝি ৮’। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি চীনের সাথে সম্পর্কের বর্তমান বাস্তবতাকে মেনেই নিয়েছে। একদিকে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ চলছে; অন্যদিকে বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্কও চলছে। এমতাবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরের আশেপাশের দেশগুলি তাদের নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছাড়া কোন রাস্তা খোলা দেখছে না।
 আগ্রাসী চীন

গত ১৬ই এপ্রিল চীনের একটা জরিপ জাহাজ মালয়েশিয়ার উপকূলের কাছাকাছি এসে জরিপের কাজ শুরু করলে মালয়েশিয়া এবং চীনের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। ভেসেল ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘ম্যারিন ট্রাফিক’এর মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, চীনের জরিপ জাহাজ ‘হাই ইয়াং ডি ঝি ৮’ ৯ই এপ্রিল চীনের হাইনান থেকে যাত্রা শুরু করে ১৪ই এপ্রিল ভিয়েতনামের কাছাকাছি আসে। এরপর ১৫ই এপ্রিল দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ পার হয়ে পরদিন মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশ থেকে ৩’শ ২৫ কিঃমিঃ দূরে অবস্থান নেয়। চীনা কোস্ট গার্ডের কমপক্ষে ৬টা জাহাজ এই জাহাজকে নিরাপত্তা দিচ্ছিলো। মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ‘রয়টার্স’ বলছে যে, চীনা জাহাজটা মালয়েশিয়ার হাইড্রোকার্বন কোম্পানি ‘পেট্রোনাজ’এর জন্যে কাজ করা ৬০ হাজার টনের ড্রিলিং জাহাজ ‘ওয়েস্ট কাপেলা’র কাছাকাছি চলে আসে। ব্রিটিশ কোম্পানি ‘সীড্রিল’এর মালিকানায় থাকা এই জাহাজটা ঐ একই স্থানে কয়েক মাস ধরে ড্রিলিংএর কাজ করছে এবং চীনা কোস্ট গার্ডের জাহাজগুলি নিয়মিতই পেট্রোনাজের জাহাজের ক্রুদের ভীতি প্রদর্শন করে আসছে । দক্ষিণ চীন সাগরের এই স্থানটা মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম এবং চীন সকলেই নিজের বলে মনে করে। মালয়েশিয়ার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‘রয়টার্স’ বলছে যে, ১৭ই এপ্রিলে এক পর্যায়ে চীনা সার্ভে জাহাজটার নিরাপত্তায় চীনা কোস্ট গার্ড এবং চীনা ম্যারিটাইম মিলিশিয়ার ১০টারও বেশি জাহাজ মোতায়েন করা হয়। এগুলির কাছাকাছি ভিয়েতনামের একটা জাহাজও ছিল। এই ঘটনার ব্যাপারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অফিস বা পেট্রোনাজ কেউই মুখ খুলতে রাজি হয়নি। মালয়েশিয়ার সমুদ্র নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান জুবিল মাত সম মালয়েশিয়ার পত্রিকা ‘হারিয়ান মেট্রো’র সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন যে, জাহাজটা মালয়েশিয়ার সমুদ্রসীমানায় আসলেও তা কোন বেআইনী কাজ করছিলো না। তবে কেন জাহাজটা সেখানে অবস্থান করছিলো, তা সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান। চীনা সার্ভে জাহাজের এহেন কর্মকান্ড এমন সময়ে এলো, যখন নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিকে সহায়তা দিচ্ছে; যার মাঝে মালয়েশিয়াও রয়েছে।





দক্ষিণ চীন সাগরের ‘ফায়ারি ক্রস রীফ’এ চীনাদের নির্মিত কৃত্রিম দ্বীপ; এখানে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ফুট রানওয়ে, আর্লি ওয়ার্নিং রাডার সিস্টেম, বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই দ্বীপগুলিকে ব্যবহার করে পুরো দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে চীন। এই সমুদ্র দিয়ে সারা দুনিয়ার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হয়।


চীনের জন্যে দক্ষিণ চীন সাগরে এহেন উত্তেজনা নতুন নয়। এই একই চীনা জাহাজ গত বছরের জুলাইএ ভিয়েতনামের উপকূলের কাছাকাছি বিরোধপূর্ণ ‘ভ্যানগার্ড ব্যাঙ্ক’এ জরিপের কাজ চালায়। এর ফলশ্রুতিতে ভিয়েতনামের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে কয়েক মাস জুড়ে উত্তেজনা চলে। এরপর ডিসেম্বরের শেষের দিকে চীনা কোস্ট গার্ডের প্রহরায় চীনের ৬৩টা মাছ ধরার ট্রলার ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে দুই সপ্তাহের বেশি সময় মাছ ধরে নিয়ে যায়। আর এপ্রিলের শুরুতেই ভিয়েতনাম অভিযোগ করে যে, চীনা জরিপ জাহাজের ধাক্কায় ভিয়েতনামের একটা মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। দক্ষিণ চীন সাগরের স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জে চীনারা কৃত্রিমভাবে দ্বীপ উন্নয়ন করে সেখানে বিমান ঘাঁটি, রাডার স্টেশন, বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র, সৈন্য ব্যারাকসহ শক্তিশালী সামরিক স্থাপনা বসিয়েছে। চীনারা দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করে। অন্যদিকে এই সাগরের বেশকিছু অংশ ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান এবং ব্রুনাই নিজেদের বলে দাবি করে। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’এর ‘এশিয়া ম্যারিটাইম ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভ’এর ডিরেক্টর গ্রেগোরি বি পোলিংএর মতে, চীনারা মালয়েশিয়ার সাথে সংঘাতে যেতে চাইছে না; শুধুই ভয় দেখাতে চাইছে। করোনাভাইরাস চীনকে থামাতে পারেনি।

দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ‘আমেরিকা। সাথে অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিগেট ‘পারামাত্তা’, মার্কিন ডেস্ট্রয়ার ‘ব্যারি’ এবং ক্রুজার ‘বাংকার হিল’। জাহাজগুলি মালয়েশিয়া-চীন বিরোধে কোন অংশ নিতে পারেনি। ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্র যখন করোনা মোকাবিলায় ব্যস্ত, তখন মার্কিন বন্ধুরা চীনাদের কর্মকান্ড পছন্দ না হলেও করোনা মোকাবিলায় চীনের সহায়তা গ্রহণ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র কোথায়?

করোনাভাইরাসে যখন চীনের প্রতিবেশিরা ব্যাতিব্যস্ত, তখন মার্চের শেষে চীনারা দক্ষিণ চীন সাগরে বড় একটা সামরিক মহড়া দিয়েছে। চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ‘গ্লোবাল টাইমস’ বলছে যে, ‘লাইভ ফায়ারিং’ এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন এবং ফাইটার জেট অংশ নেয়। চীনা সমর বিশ্লেষক ওয়েই ডংশু বলছেন যে, এই মহড়ার মাধ্যমে চীনারা মাল্টিডিমেনশনাল সক্ষমতা প্রদর্শন করলো, যেখানে সকল ধরনের যুদ্ধাস্ত্র একত্রে কাজ করবে। মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল অত্র অঞ্চলের সমুদ্র এবং দ্বীপগুলিকে রক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ‘থিওডোর রুজভেল্ট’ এবং এম্ফিবিয়াস এসল্ট শিপ ‘আমেরিকা’ ১৫ই মার্চেই দক্ষিণ চীন সাগরে মহড়া দিয়ে যায়। এরপর ‘রুজভেল্ট’ জাহাজে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পরার পর অত্র অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির ব্যাপক অভাব দেখা দেয়। শুধুমাত্র নৌবাহিনীর ‘পি-৩সি’ ম্যারিটাইম প্যাট্রোল বিমানগুলি সাগরের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে মার্কিনীদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছিলো। তবে চীনারা বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্র অত্র অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্যে হুমকি। ২৬শে মার্চ চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রেন গুওচিয়াং বলেন যে, অত্র এলাকায় মার্কিন কর্মকান্ড দক্ষিণ চীন সাগরের আশেপাশে অবস্থিত দেশগুলির নিরাপত্তাকে হুমকির মাঝে ফেলছে। একারণেই চীনারা তাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার খাতিরে সবকিছু করবে।

মালয়েশিয়ার সাথে চীনের বিরোধকে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করতে চাইছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, একদিকে চীনারা বিভিন্ন দেশকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সহায়তা দিচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলির সমুদ্রসীমার দাবিকে উপেক্ষা করে দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করছে। মালয়েশিয়ার সাথে উত্তেজনা বাড়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র তার নৌবাহিনীর এম্ফিবিয়াস এসল্ট শিপ ‘আমেরিকা’, ক্রুজার ‘বাংকার হিল’ এবং ডেস্ট্রয়ার ‘ব্যারি’কে দক্ষিণ চীন সাগরে প্রেরণ করে। এগুলির সাথে যোগ দেয় অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিগেট ‘পারামাত্তা’। তবে ২১ তারিখে এই জাহাজগুলি ঐ এলাকায় পৌঁছার পর চীনাদের কোন জাহাজ সেখানে ছিল না। অর্থাৎ মালয়েশিয়া এবং চীনের এই বিরোধের মাঝে যুক্তরাষ্ট্র কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি।

গ্রেগোরি পোলিং বলছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্র যখন করোনা মোকাবিলায় ব্যস্ত, তখন মার্কিন বন্ধুরা চীনাদের কর্মকান্ড পছন্দ না হলেও করোনা মোকাবিলায় চীনের সহায়তা গ্রহণ করছে। ‘লস এঞ্জেলেস টাইমস’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, মার্চের ২০ তারিখে চীনারা ইতালি, ইথিওপিয়া এবং কোরিয়াসহ পৃথিবীর ডজনখানেক দেশে করোনা প্রতিরোধের সরঞ্জাম পাঠাবার খবর দেয়। আবার একই দিনে ‘নিউ চায়না নিউজ এজেন্সি’ বলছে যে, সমুদ্র গবেষণার জন্যে দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের ‘ফায়ারি ক্রস রীফ’ এবং ‘সুবি রীফ’এ তৈরি করা কৃত্রিম দ্বীপে দু’টা গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের মাঝ দিয়ে পৃথিবীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ বাণিজ্য সম্পাদিত হয়। আর এই এলাকায় রয়েছে প্রচুর খণিজ সম্পদ।
 
করোনা পরিস্থিতি চীনকে নিজের অবস্থান সুসংহত করার নতুন সুযোগ করে দিয়েছে, যা কিনা দক্ষিণ চীন সাগরের প্রতিবেশী দেশগুলিকে আরও ব্যাপক চাপের মাঝে ফেলবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের অবর্তমানে অত্র অঞ্চলের দেশগুলিও চীনকে ব্যালান্স করতে অন্যান্য শক্তিশালী দেশের উপস্থিতি চাইবে।



দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি কি করবে?

বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীন এবং মালয়েশিয়ার সম্পর্ক বেশ কাছের। কিন্তু দক্ষিণ চীন সাগরের ব্যাপারে দুই দেশের মতবিরোধ রয়েছে। গত ১২ই ডিসেম্বর মালয়েশিয়া জাতিসংঘের ‘ইউএন কমিশন অন দ্যা লিমিটস অব দ্যা কন্টিনেন্টাল শেলফ’ বা ‘সিএলসিএস’এর কাছে নিজেদের দাবির ডকুমেন্ট পেশ করে। পরিকল্পনা মোতাবেক মালয়েশিয়া তার সমুদ্রতট থেকে ৩’শ ৭০ কিঃমিঃ দূরের সমুদ্র পর্যন্ত নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। টোকিওর ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর স্টিফেন নাগি বলছেন যে, দক্ষিণ চীন সাগরের আশেপাশের অন্যান্য দেশগুলিও যেহেতু চীনা আধিপত্যবাদকে রুখতে চাইছে, তাই সেই সুযোগে মালয়েশিয়াও অন্যদের সাথে সাথে নিজের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে চাইছে। মালয়েশিয়া নিজেকে একা আলাদাভাবে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চাইছে না। অন্যদিকে সমুদ্রে চীনাদের আগ্রাসী ভূমিকা ঠেকাতে এই সাগরের আশেপাশের দেশগুলিকে মার্কিন সরকার এবং তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলি সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। ‘ভয়েস অব আমেরিকা’র এই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, দক্ষিণ চীন সাগরে মালয়েশিয়ার অধিকার আদায়ের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত চীনাদেরকে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড় করাবে এবং চীন থেকে সহায়তা পাওয়াটা মালয়েশিয়ার জন্যে ধীরে ধীরে আরও কঠিন হয়ে যাবে। ২০১৮ সালে নির্বাচনে হেরে যাওয়া নজিব রাজাকের সরকার চীন থেকে অনেক প্রকল্পের জন্যে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের আশ্বাস পেয়েছিল। মাহাথির মোহামেদ নির্বাচনে জেতার পর বিভিন্ন সময়ে চীনের সমালোচনা করলেও চীনের সাথে বন্ধুত্ব যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেছিলেন। ‘সিঙ্গাপুর ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স’এর সিনিয়র ফেলো ওহ এই সুন বলছেন যে, মালয়েশিয়া খুব সম্ভবতঃ চীনের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিবাদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক আইনী পদক্ষেপের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সিঙ্গাপুরের ‘এস রাজারাতনাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’এর এসোসিয়েট প্রফেসর এলান চং মনে করছেন যে, আইনী পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে মালয়েশিয়রা চীনের কাছ থেকে উন্নয়ন সহায়তা পাবার ক্ষেত্রে আরও ভালো শর্ত পাবার আশা করছে।

তবে চীনের এহেন আগ্রাসী মনোভাব চীনের জন্যে ক্ষতিকরও হতে পারে। সিঙ্গাপুরের ‘নানইয়াং টেকনলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি’র ম্যারিটাইম সিকিউরিটি বিশ্লেষক কলিন কোহ মনে করছেন যে, চীনের আগ্রাসী কর্মকান্ড করোনা মোকাবিলায় অত্র অঞ্চলের দেশগুলিকে সহায়তা দিয়ে আয় করা বিশ্বাসটুকু নষ্ট করে দিতে পারে। মার্চ মাসে চীন থেকে মেডিক্যাল সরঞ্জাম পাবার পর মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেইজিংকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন যে, দুর্যোগের সময়েই সত্যিকারের বন্ধু চেনা যায়। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘লোয়ি ইস্টিটিউট’ বলছে যে, করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্র স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির দিক থেকে ব্যাপক চাপের মাঝে পড়ায় অত্র অঞ্চলের দেশগুলি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা দেবার সক্ষমতা নিয়ে চিন্তিত। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে যে, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেউই বন্ধু হিসেবে নির্ভরযোগ্য নয়। ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট’এর রিসার্চ ফেলো জ্যাক কুপার বলছেন যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি চীনের এহেন বাস্তবতাকে মেনেই নিয়েছে। একদিকে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ চলছে; অন্যদিকে বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্কও চলছে। এমতাবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগরের আশেপাশের দেশগুলি তাদের নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছাড়া কোন রাস্তা খোলা দেখছে না। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনাম নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে মনোনিবেশ করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অবর্তমানে চীনের আগ্রাসী মনোভাবের কাছে কোন কিছুই যেন দাঁড়াতে পারছে না। করোনা পরিস্থিতি চীনকে নিজের অবস্থান সুসংহত করার নতুন সুযোগ করে দিয়েছে, যা কিনা দক্ষিণ চীন সাগরের প্রতিবেশী দেশগুলিকে আরও ব্যাপক চাপের মাঝে ফেলবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের অবর্তমানে অত্র অঞ্চলের দেশগুলিও চীনকে ব্যালান্স করতে অন্যান্য শক্তিশালী দেশের উপস্থিতি চাইবে।

2 comments:

  1. Getting bored after reading so many international analysis. Hope you will put some analysis on Bangladesh and Indian sub continent. Specially on recent India's proposal of helping Bangladesh for fighting against COVID 19 to which Bangladesh cordially submitted his refusal. To me, India's recent strategy is simply a step forward to showcase to the world that we are helping our neighbors because big game changers are now fighting with the pandemic which is a clear sign that humanity got little emphasis from the super powers, they all ultimately did everything (get this in a broader sense) to safeguard their interest. But there are some other entities those who are managing things in a positive way (for an ulterior approach in future - I mean to become a regional power or if possible "super power"). But to me, in future we could see a multi polarized world which might led towards another anarchy. In such sense, I think entity focusing on humanitarian issues will survive, thus will be the future role model. I am not making sense from the perspective of an analyst, rather I am looking at the intention of the mass people.
    Another discussion could be done on Bangladesh's approach on the ongoing pandemic. Bangladesh showed kinda of its capabilities like manufacturing PPE, introducing ventilators and so on. A fruitful discussion will help us to get the matter nicely...

    ReplyDelete
    Replies
    1. There was a time when I mostly did not post international analysis here.... People used to ask a lot of questions regarding international issues... That was mostly because none of my writings about Bangladesh only concerned about Bangladesh.... There was no writings with narrow perspectives.... And Bangladesh now has concerns about anything that happens around the world.... Perhaps you omitted this year's writing on Myanmar-China Economic Corridor, which is a very important issue for Bangladesh.... and probably you have also forgot late last year's posts on India, which have significant meaning for Bangladesh....

      In fact, last December's posts on India summarized India's problems.... Those problems are so sticky, that any new problems will get seconded to these... I can go on talking about India... But it will be those same words that you heard last December....

      When the entire globe is changing, what justifies our inward thinking?.... Thinking globally and acting globally is the way to go addressing this geopolitical earthquake...

      And perhaps you have also missed my post on Bangladesh's Coronavirus issue.... Just go through the post history...

      Delete