Monday 13 April 2020

করোনা ঝুঁকির মাঝেও যুদ্ধ চলছে লিবিয়াতে

১৩ই এপ্রিল ২০২০

লিবিয়ার বেশিরভাগ এলাকাই এখন জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনীর হাতে। তবে রাজধানী ত্রিপোলিসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর এখনও ‘জিএনএ’এর নিয়ন্ত্রণে। প্রায় এক বছর চেষ্টার পরেও হাফতারের বাহিনী ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন আনতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মাঝেও চলছে সামরিক অভিযান।

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’এর বরাত দিয়ে ‘লিবিয়া হেরাল্ড’ জানাচ্ছে যে, ৭ই এপ্রিল পর্যন্ত লিবিয়াতে মোট ২১ জন নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রুগী সনাক্ত হয়েছে। এর মাঝে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং দু’জন সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। ২৫শে মার্চ লিবিয়ার সরকার যুদ্ধবিদ্ধ্বস্ত দেশটাতে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ খুঁজে পায়, যখন ৭৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির শরীরে রোগের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন বলা হয় যে, তিনি তিন সপ্তাহ আগে সৌদি আরব থেকে তিউনিসিয়া হয়ে লিবিয়া পৌঁছান। লিবিয়ার পুর্বের জেনারেল খলিফা হাফতারের অধীন ‘লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ বা ‘এলএনএ’এর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় বেনগাজি শহরেও প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তুরস্ক থেকে ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তিন সপ্তাহ আগে তিউনিসিয়া হয়ে বেনগাজি পৌঁছান। কিন্তু করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগের মাঝেও লিবিয়াতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি। ৬ই এপ্রিল ত্রিপোলির ‘আল খাদরা জেনারেল হসপিটাল’এর উপর আর্টিলারি হামলা হয়, যার ফলশ্রুতিতে ৬ জন মেডিক্যাল কর্মী আহত হন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকান্ডের মুখপাত্র জ্যান্স লেরকা এক বার্তায় এই হামলার সমালোচনা করে বলেন যে, লিবিয়ার মানুষের যখন নিরাপদ বাড়ি এবং কার্যক্ষম মেডিক্যাল সার্ভিসের সবচাইতে বেশি দরকার, তখনই হাসপাতালে হামলার আরেকটা খবর এলো। লিবিয়ার মেডিক্যাল সার্ভিস এবং কর্মীরা এসময়ে বৈশ্বিক মহামারী মোকাবিলায় অতি গুরুত্বপূর্ণ।

লিবিয়াতে যুদ্ধরত উভয় পক্ষই তাদের সমর্থক দেশগুলি থেকে বেশি করে অস্ত্রের সরবরাহ পাচ্ছে। ডিসেম্বর মাসে ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ জানায় যে, সুদান থেকে ৩ হাজার যোদ্ধা ‘এলএনএ’এর পক্ষে যোগ দিয়েছে। এছাড়াও রাশিয়া থেকেও এসেছে ৬’শ ভাড়াটে সেনা। ফেব্রুয়ারি মাসের এক প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডাটার বরাত দিয়ে ‘রয়টার্স’ বলছে যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ‘এলএনএ’কে ৮৯টা ফ্লাইটের মাধ্যমে বড় আকারের কার্গো বিমানে করে ৪ হাজার ৬’শ ৮০ টন সাপ্লাই পাঠিয়েছে। ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ এবং ‘আইএইচএস জেনস’ বলছে যে, ‘জিএনএ’ও তুরস্কের কাছ থেকে জাহাজে করে সাঁজোয়া যান, আর্টিলারি, বিমান বিধ্বংসী কামান এবং ড্রোন পেয়েছে। সিরিয় মিলিশিয়া যোদ্ধাদেরকে সিরিয়া থেকে লিবিয়ায় মোতায়েন করেছে তুরস্ক। অস্ত্রের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় এটা বোঝাই যাচ্ছিল যে, নতুন করে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে উভয় পক্ষই। মার্চের শুরুতে হাফতারের বাহিনী ত্রিপোলি এবং মিসরাতা শহরের উপর অবরোধ আরও কঠোর করলেও তুরস্কের সমর্থন পাবার পর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ‘জিএনএ’ই আক্রমণে যায়।

হাফতারের বাহিনী ত্রিপোলির উপকন্ঠে পৌঁছে গেলেও আল আজিজিয়াহ এলাকা ‘জিএনএ’এর নিয়ন্ত্রণে থাকায় হাফতারের ত্রিপোলি অপারেশনের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একইসাথে ভবিষ্যতে ত্রিপোলির উপকন্ঠে হাফতারের বাহিনীর আটকা পড়ে যাবার সম্ভাবনাও রয়েছে।



২০১৯এর এপ্রিল মাসে নতুন অভিযান শুরুর পর থেকে লিবিয়ার বেশিরভাগ এলাকাই হাফতারের অধীন ‘এলএনএ’ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে ‘এলএনএ’ রাজধানী ত্রিপোলি অধিকার করতে ব্যর্থ হয়। একইসাথে জুন মাসে পাল্টা আক্রমণে ত্রিপোলির ৯৩ কিঃমিঃ দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক্যাল শহর ‘ঘারিয়ান’ দখল করে নেয় ‘জিএনএ’। ঘারিয়ানের উত্তরে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার জংশন আল আজিজিয়াহ শহরও ‘জিএনএ’এর হাতে থাকে। ঘারিয়ানের পশ্চিমের জাবাল নাফুসাহ এলাকার ইয়াফরান, আল ঘাওয়ালেশ, কিকলাহ, জাদু, নালুতসহ বেশকিছু শহর ‘জিএনএ’এর নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ত্রিপোলির পশ্চিমে তিউনিসিয়ার সীমানার কাছাকাছি কিছু এলাকা ‘এলএনএ’এর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এর মাঝে রয়েছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘আল ওয়াতিয়াহ’ বিমান ঘাঁটি। এর ফলশ্রুতিতে উত্তরে জুয়ারাহ থেকে দক্ষিণে জাদু শহর পর্যন্ত এবং পূর্বে ঘারিয়ান শহর থেকে পশ্চিমে তিউনিসিয়ার সীমানা পর্যন্ত ‘এলএনএ’এর নিয়ন্ত্রণাধীন একটা ‘পকেট’এর আবির্ভাব হয়, যার দক্ষিণ এবং পূর্বে ‘জিএনএ’এর অধিকৃত অঞ্চল, পশ্চিমে তিউনিসিয়া এবং উত্তরে ভূমধ্যসাগর। ‘এলএনএ’ গত অগাস্টে আবারও ঘারিয়ান শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হলে এই ‘পকেট’টা রয়েই যায়। প্রায় এক বছর ধরে টিকে থাকা এই ‘পকেট’টাই এখন ‘জিএনএ’এর টার্গেট। ‘রাশান ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স কাউন্সিল’এর এক লেখায় কিরিল সেমেনভ এক বিশ্লেষণে বলেন যে, আজিজিয়াহ এবং ঘারিয়ান শহরের নিয়ন্ত্রণ ‘জিএনএ’এর হাতে থেকে যাওয়ায় তা হাফতারের ত্রিপোলি দখল করার চেষ্টাকেই শুধু বাধাগ্রস্ত করবে না, ত্রিপোলিকে অবরোধ করে রাখা হাফতারের বাহিনীকে ঘিরে ফেলার মতো অবস্থায়ও নিয়ে যেতে পারে।

গত ২৫শে মার্চ থেকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে অবস্থিত ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল একর্ড’ বা ‘জিএনএ’ সরকারের অধীন বাহিনী ত্রিপোলি অবরোধকারী ‘এলএনএ’এর বিরুদ্ধে নতুন অভিযান শুরু করে। ‘জিএনএ’কে সরাসরি সহায়তা দিচ্ছে তুরস্ক ও কাতার; আর ‘এলএনএ’কে সহায়তা দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, সৌদি আরব, জর্দান, রাশিয়া এবং ফ্রান্স। নতুন এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন পিস স্টর্ম’। এই নামকে অনেকেই সিরিয়াতে তুরস্কের ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ এবং ‘অপারেশন ‘স্প্রিং শিল্ড’এর সাথে তুলনা করছেন। ‘আল মনিটর’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ত্রিপোলির কাছের মিতিগা মিলিটারি একাডেমিতে স্থাপিত অপারেশন সেন্টারে এখন তুর্কি সামরিক এবং ইন্টেলিজেন্স অফিসারদের ব্যাপক প্রভাব। এই অপারেশনের লক্ষ্য হলো ত্রিপোলি থেকে ১’শ ৬০ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে তিউনিসিয়ার সীমানার কাছাকাছি ‘আল ওয়াতিয়াহ’ বিমান ঘাঁটি। ২০১৪ সালের অগাস্ট থেকে এই ঘাঁটি হাফতারের বাহিনীর হাতে রয়েছে। অপারেশনের প্রথম দিনেই ঘাঁটিটা ‘জিএনএ’ হাত করে নেয়। তবে পরদিন হাফতারের সেনারা পাল্টা আক্রমণে এই ঘাঁটি পুনর্দখল করার দাবি করে। আর একইসাথে এর প্রায় ৫০ কিঃমিঃ উত্তরে সমুদ্রউপকূলের কাছে জুয়ারা শহরের বাইরে পৌঁছে যাবার দাবি করে। হাফতারের বাহিনী ৩০শে মার্চ ত্রিপোলির দক্ষিণে একটা তুর্কি নির্মিত ‘বায়রাকতার টিবি-২’ ড্রোন বিমান ভূপাতিত করে এর ছবি প্রকাশ করে। আর পহেলা এপ্রিল ‘এলএনএ’ তুর্কি যুদ্ধজাহাজ থেকে ছোঁড়া একটা ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের ছবি প্রকাশ করে। তারা বলে যে, উপকূলের কাছাকাছি ‘আল আযাইলাত’ এলাকায় হাফতারের বাহিনীর উপর তুর্কি নৌবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। ছবিতে মার্কিন নির্মিত ‘আরআইএম-৬৬ই’ বা ‘স্ট্যান্ডার্ড এসএম-১’ ক্ষেপণাস্ত্র দেখা যায়, যা কিনা তুরস্কের মার্কিন নির্মিত ৮টা ‘জি-ক্লাস’এর ফ্রিগেট ব্যবহার করে। এছাড়াও লিবিয়াতে তুর্কিরা সিরিয় মিলিশিয়াদের জড়িত করার পর থেকে এদের মাঝেও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটস’এর হিসেবে লিবিয়াতে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত ১’শ ৮২ জন সিরিয় যোদ্ধা নিহত হয়েছে। সংস্থাটা আরও বলছে যে, ইতোমধ্যেই ৪ হাজার ৭’শ ৫০ জন সিরিয় যোদ্ধাকে লিবিয়াতে পাঠানো হয়েছে। আরও ১ হাজার ৯’শ জন তুরস্কে অবস্থান করছে প্রশিক্ষণের জন্যে।


ঘারিয়ান শহরের পশ্চিমে হাফতার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘পকেট’এর মাঝে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা ‘আল ওয়াতিয়াহ’ বিমান ঘাঁটিই বর্তমানে ‘জিএনএ’এর অভিযানের মূল টার্গেট



লিবিয়ায় ‘অপারেশন পিস স্টর্ম’এর বিষদ বর্ণনা দেন তুর্কি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেতিন গুরকান। লিবিয়ার ‘জিএনএ’ বাহিনী সাম্প্রতিককালে সিরিয়াতে তুরস্কের সামরিক অপারেশনের আঙ্গিকেই তাদের অপারেশনের পরিকল্পনা করে। এই অভিযানের মূলে থাকে কাতাদের অর্থায়নে তুর্কিদের সরবরাহ করা ‘বায়রাকতার টিবি-২’ ড্রোন। এই ড্রোনগুলিকে রক্ষা করার জন্যে লিবিয়াতে মোতায়েন করা হয়েছে তুরস্কের অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক জ্যামার ‘কোরাল’। এই ‘কোরাল’এর কাজ হলো ড্রোনের কাছাকাছি এলাকায় হাফতারের বাহিনীর মোতায়েনকৃত বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের রাডারগুলিকে অকার্যকর করে দেয়া। ছোট এই ড্রোনগুলি ‘এমএএম-এল’ নামের ক্ষুদ্র ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করে এবং অব্যর্থভাবে শত্রুর টার্গেটে হামলা করে। তবে ক্ষুদ্র হওয়ায় এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম। ইতোমধ্যেই ‘এলএনএ’এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার ড্রোন হামলায় নিহত হবার খবর আসছে। বেশ কিছুদিন আগে ইস্রাইলের কাছ থেকে কেনা ‘অরবিটার-৩’ ড্রোনও তুরস্ক সরবরাহ করেছে ‘জিএনএ’কে। হাফতারের বাহিনীও আরব আমিরাতের কেনা চীনা ‘উইং লুং-২’ ড্রোন ব্যবহার করছে বেশ কিছুদিন ধরেই। ১লা এপ্রিল লিবিয়ার উপকূলে টহল দেয়া তুরস্কের নৌবাহিনীর ফ্রিগেট থেকে এমনই একটা ড্রোনকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই তুর্কি ‘জি-ক্লাস’এর ফ্রিগেট ‘গোকসু’ এবং ‘গোকোভা’ ত্রিপোলি এবং সাব্রাথার মাঝামাঝি লিবিয়ার উপকূল পাহাড়া দিচ্ছে।


লিবিয়াতে ভূপাতিত তুরস্কের নির্মিত ‘বায়রাকতার টিবি-২’ ড্রোন। সিরিয়ার যুদ্ধের কৌশল অনুসরণ করে এই ড্রোনগুলি লিবিয়ার যুদ্ধের চিত্র দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে।


মেতিন গুরকান বলছেন যে, এখন লিবিয়ার আকাশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার যুদ্ধ চলছে দুই পক্ষের মাঝে। এমতাবস্থায় সমুদ্র থেকে তুর্কি নৌবাহিনীর পক্ষে লিবিয়ার আকাশের নিরাপত্তা দেয়াটা কঠিন হবে। তাই খুব দ্রুতই লিবিয়াতে তুর্কিদের নিজস্ব ‘হিসার-ও’ বিমানধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হতে পারে। তুর্কি বিমান বাহিনীর একটা ‘বোয়িং ই-৭টি ওয়েজটেইল’ ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমান লিবিয়ার উপকূল বরাবর উড়ে আকাশ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা দিচ্ছে। সামরিক বিমানের ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘ইতামিল রাডার’ বলছে যে, তুরস্কের ‘কনইয়া’ বিমান ঘাঁটি থেকে ওড়া ‘ওয়েজটেইল’ বিমানগুলি গত বছরের জুন মাস থেকে বেশ নিয়মিতই লিবিয়ার উপকূলে টহল দিচ্ছে।

এটা এখন পরিষ্কার যে, করোনাভাইরাসের কারণে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্যবাধকতা আছে বলে লিবিয়ার যুদ্ধরত পক্ষগুলি মনে করছে না। তুরস্কের সরাসরি সমর্থন পাবার পর থেকে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে ‘জিএনএ’। তবে এতে ত্রিপোলি হারাবার সম্ভাবনা কিছুটা কমলেও যুদ্ধ জেতাটা এখনও বহু দূরে। এদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চাইছে লিবিয়ার উপকূল পাহাড়া দিয়ে লিবিয়ার উপর জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে নিশ্চিত করতে। তবে এতে সমুদ্রপথের উপর নির্ভরশীল ‘জিএনএ’ই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরূপ সম্ভাবনা তুরস্ককে ভূমধ্যসাগরে সরাসরি ইইউএর বিরুদ্ধে দাঁড় করাবে। যুক্তরাষ্ট্রও এখন চাইছে না যে, লিবিয়ার তেল বিক্রির অর্থ শুধুমাত্র তুর্কি সমর্থিত ‘জিএনএ’এর কাছে যাক। বর্তমানে তেলক্ষেত্রগুলি হাফতারের বাহিনী অবরোধ করে তেল রপ্তানি বন্ধ করে রেখেছে। ভূমধ্যসাগরে নিজের প্রভাব বাড়াতে তুরস্ক কোন ছাড় দিতে নারাজ। অপরদিকে সৌদি গ্রুপের মিশর ও আমিরাত এবং তার সাথে রাশিয়াও নিজেদের ভাগ ছাড়তে চাচ্ছে না। করোনাভাইরাস ইউরোপকে ভীষণভাবে আক্রান্ত করেছে, যা কিছুদিনের জন্যে হলেও লিবিয়াতে ইউরোপিয় শক্তিদের প্রভাব কমাবে। তবে ভূমধ্যসাগর হলো ইউরোপের দক্ষিণের সীমান্ত; ইউরোপিয়রা অত সহজে এর নিয়ন্ত্রণ তুরস্কের কাছে ছেড়ে দিতে চাইবে না। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির মাঝেও কেউই চাইছে না লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে। অন্য কথায়, ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাঝেও থেমে থাকেনি।

No comments:

Post a Comment