Monday 6 April 2020

পশ্চিমাদের সেলেব্রিটি সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে করোনাভাইরাস

০৭ই এপ্রিল ২০২০

  
প্রাক্তন ব্রিটিশ সুপারমডেল নাওমি ক্যাম্পবেল তার ইন্সটাগ্রামে নিজের একটা ছবি পোস্ট করেন; যেখানে তার সারা শরীর ঢাকা ছিল সাদা রঙের পার্সোনাল প্রোটেকটিভ স্যুটে; মুখে তার ছিল ‘এন৯৫’ রেস্পিরেটর মাস্ক। এই স্যুট এবং মাস্ক পশ্চিমা সবগুলি দেশের হাসপাতালে চরম সরবরাহ স্বল্পতার মাঝে রয়েছে।



ব্রিটিশ অভিনয় শিল্পী ইদ্রিস এলবা গত ১৭ই মার্চ ঘোষণা দেন যে, তার শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তিনি সন্দেহ করেছিলেন যে, তিনি খুব সম্ভবতঃ একজন করোনাভাইরাস পজিটিভ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন। তাই কোন উপসর্গ দেখা দেয়া ছাড়াই তিনি নিজের করোনাভাইরাস টেস্টের ব্যবস্থা করেন। সেলেব্রিটি ইদ্রিস এলবা কোন উপসর্গ ছাড়াই তার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে পারলেও সাধারণ ব্যক্তিদের জন্যে ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না; অন্ততঃ উপসর্গ ছাড়া তো নয়ই। টেস্ট কিটের অপ্রতুলতার কারণে মার্কিন ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ বা ‘সিডিসি’ করোনাভাইরাস টেস্টের জন্যে কঠোর গাইডলাইন দিয়ে দেয়। ওয়াশিংটন ডিসির ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ রিসার্চ’এর প্রেসিডেন্ট ডায়ানা জুকারম্যান ‘ইনসাইডার’ ম্যাগাজিনের সাথে সাক্ষাতে বলেন যে, যখন কোন কিছু স্বল্প পরিমাণে পাওয়া যায়, তখন বিখ্যাত এবং ধনী মানুষেরাই তা আগে পেয়ে থাকে। গত ১১ই মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের ৬০ শতাংশ টেস্টিং কিট ব্যবহার করে বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের করোনাভাইরাস টেস্ট করা হয়। এই টেস্টের কারণ হিসেবে উটাহ রাজ্যের বাস্কেটবল দলের একজনের করোনাভাইরাস পজিটিভ হবার কথা বলা হয়। দলের মোট ৫৮ জন খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাকে টেস্ট করার পর একজনকে পজিটিভ পাওয়া যায়। ইদ্রিস এলবা বা বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের মতো লোকদের টেস্ট করা হয়েছে কোন লক্ষণ ছাড়াই। খুব সম্ভবতঃ প্রাইভেট ল্যাবরেটরির মাধ্যমেই এই টেস্টগুলি করা হয় বলে বলছে ‘বিজনেস ইনসাইডার’। কিছু ধনী ব্যক্তি নিজের বাড়িতে প্রাইভেট ডাক্তার এনে শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করিয়েছেন। যদিও মার্কিন সরকার জনগণের জন্যে করোনাভাইরাস টেস্ট বিনামূল্যেই করে দিচ্ছে, ধনী ব্যক্তিদের প্রাইভেট টেস্টিং অবশ্য কম খরচে হচ্ছে না। ধনী ব্যক্তিদের জন্যে কাজ করা ডাক্তার ডেভিড নাজারিন বলছেন যে, ডাক্তারের ফি বাদেই এরকম টেস্ট করতে কয়েক’শ ডলার খরচ হবার কথা। লস এঞ্জেলেসের ডাক্তার সারি আইচেস বলছেন যে, যখন ল্যাবরেটরিগুলি টেস্টের ফলাফল সরবরাহ করতে হিমসিম খাচ্ছে, তখন তাদের হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে যে, কাদের টেস্টগুলি আগে করা হবে। যাদের আর্থসামাজিক অবস্থান উপরের দিকে, তাদের টেস্টগুলিই তখন প্রাধান্য দিয়ে করা হবে।

বিখ্যাত এবং ধনী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনাভাইরাস টেস্ট করা একটা বিষয়; আর করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে গিয়ে নিজের ধনসম্পদ ব্যবহার করা আরেকটা বিষয়। মার্কিন মিডিয়া ‘স্লেট’ এক প্রতিবেদনে বলছে যে, ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে দুই সপ্তাহের মাঝে প্রাইভেট জেট বিমানের বুকিং দশ গুণ বেড়ে গিয়েছে। ধনী ব্যক্তিরা নিজস্ব জেটবিমান ব্যবহারের মাধ্যমে জনসমাগম এড়াতে চেয়েছে। ‘সাউদার্ন জেট’এর মালিক জেরড ডেভিস বলছেন যে, নিউ ইয়র্ক থেকে দক্ষিণ ফ্লোরিডা প্রাইভেট জেট বিমানে যেতে কমপক্ষে ২০ হাজার ডলার খরচ হবে। প্রতি ঘন্টার জন্যে ৪ হাজার ডলারের উপর চার্জ করা হয়। একসময় কাস্টমার পেতে তারা দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন; এখন চাহিদার ভাড়ে নুয়ে পড়ছেন তারা। প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশটা বুকিংএর অনুরোধ আসছে। প্রাইভেট বিমান চার্টারের ব্যবসায় স্বাভাবিক সময়ে কখনোই ৩০ দিন পুরো সক্ষমতা ব্যবহার করা যায় না। আর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য যখন সর্বনিম্ন স্তরে, তখন এই প্রাইভেট চার্টার কোম্পানিগুলি ব্যাপক মুনাফা আশা করছে।
 
 
বিলিয়নায়ার ডেভিড গেফেন তার টুইটার একাউন্টে তার লাক্সারি ইয়টের ছবি পোস্ট করে বলেন যে, তিনি এই ইয়টে নিজেকে আলাদা করে রাখবেন। আর তিনি এ-ও আশা করেন যে, সকলে যেন নিরাপদ থাকে। গেফেনের এই পোস্টে জনগণ এতটাই আক্রমণাত্মক মতামত দিতে থাকে যে, তিনি তার টুইটার একাউন্টই ডিলিট করে দেন!



চার্টার বিমানের মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা অপেক্ষাকৃত ‘নিরাপদ’ জায়গা খুঁজছে। যেমন, ফেইবুকে বিনিয়োগ করা বিলিয়নায়ার পিটার থিয়েল নিউজিল্যান্ডে ৪’শ ৭৭ একর জমির মালিক। অন্যরা কেউ কেউ শহর থেকে দূরে কোথাও নিজস্ব বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। ব্রিটেনের ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’ পত্রিকা বলছে যে, কোন কোন অতিধনী ব্যক্তি করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সমুদ্রের মাঝে ঘুরে বেড়াবার পরিকল্পনা করেছেন। লন্ডনের ইয়ট চার্টার কোম্পানি ‘বুরগেস’এর প্রধান নির্বাহী জনাথন বেকেট বলছেন যে, বিলিয়নায়াররা একটা লাক্সারি ইয়ট ভাড়া করে আলাস্কা, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর বা চিলির দক্ষিণে চলে যাচ্ছেন। কোন কোন পরিবার দুই মাসের বেশি সময়ের জন্যে ইয়ট ভাড়া করেছে। তাদের নিজেদের শিশুদেরকে ইয়টের উপরেই পড়াশুনা করাবার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা! এই ইয়টগুলির এক সপ্তাহের ভাড়া ১ লক্ষ ডলার থেকে ৬ লক্ষ ডলার পর্যন্ত হতে পারে; এর উপর ক্রুর বেতন তো রয়েছেই।

১১ই মার্চ প্রাক্তন ব্রিটিশ সুপারমডেল নাওমি ক্যাম্পবেল তার ইন্সটাগ্রামে নিজের একটা ছবি পোস্ট করেন; যেখানে তার সারা শরীর ঢাকা ছিল সাদা রঙের পার্সোনাল প্রোটেকটিভ স্যুটে; মুখে তার ছিল ‘এন৯৫’ রেস্পিরেটর মাস্ক। এই স্যুট এবং মাস্ক পশ্চিমা সবগুলি দেশের হাসপাতালে চরম সরবরাহ স্বল্পতার মাঝে রয়েছে। এর আগে ২৬শে ফেব্রুয়ারি মার্কিন অভিনেত্রী গিনেথ প্যাল্ট্রো তার ইন্সটাগ্রামে একটা সেলফি পোস্ট করেন, যেখানে তার মুখে ছিল সুইডিশ কোম্পানি ‘এয়ারিনাম’এর তৈরি ‘আরবান এয়ার মাস্ক’, যা কিনা এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না।

২২শে মার্চ মার্কিন সেলেব্রিটি ম্যাডোনা তার ইন্সটাগ্রামে নিজের একটা ছবি পোস্ট করেন, যেখানে তাকে গোলাপের পাপড়ি ভাসা বাথটাবে গোসল করতে দেখা যাচ্ছে! তিনি ছবির টাইটেলে লেখেন ‘কোন বৈষম্য নয়’। তিনি বলেন যে, যে যতটা ধনীই হোক না কেন, করোনাভাইরাস সকলকে এক সাড়িতে নামিয়ে আনে। তবে ম্যাডোনার এই ছবির সাথে কথাগুলি মানুষের কাছে ভালোভাবে যায়নি মোটেই। বিলিয়নায়ার ডেভিড গেফেন তার টুইটার একাউন্টে তার লাক্সারি ইয়টের ছবি পোস্ট করে বলেন যে, তিনি এই ইয়টে নিজেকে আলাদা করে রাখবেন। আর তিনি এ-ও আশা করেন যে, সকলে যেন নিরাপদ থাকে। গেফেনের এই পোস্টে জনগণ এতটাই আক্রমণাত্মক মতামত দিতে থাকে যে, তিনি তার টুইটার একাউন্টই ডিলিট করে দেন!

মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী ফ্যারেল উইলিয়ামস এক টুইটার পোস্টে তার অনুসারীদেরকে হাসপাতালে দান করতে বলেন। এর জবাবে তার এক ভক্ত বলেন যে, উইলিয়ামস কমপক্ষে দেড়’শ মিলিয়ন ডলারের মালিক; তার উচিৎ তার নিজের অর্থ দান করা। উইলিয়ামস পরবর্তীতে জবাবে বলেন যে, তিনি নিজেও দান করেছেন। তবে ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ পত্রিকা এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন সেলেব্রিটিদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অনুদানের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন করছে। মার্কিন সেলেব্রিটি শেফ ববি ফ্লে তার রেস্তোঁরার কর্মীদের বেতন দেয়ার জন্যে জনগণের কাছে অর্থ চাইছেন। অথচ তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার। পত্রিকাটা বলছে যে, করোনাভাইরাস মানুষকে এক কাতারে নামায়নি; বরং মানুষের মাঝে বৈষম্যকে আরও বেশি ফুটিয়ে তুলেছে। সম্পদের ক্ষেত্রে বৈষম্য ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা পাবার ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে বৈষম্য। সেলেব্রিটিরা করোনাভাইরাসের লক্ষণ না দেখিয়েও তাদের টেস্ট করিয়ে ফেলতে পাচ্ছেন। অথচ সাধারণ মানুষ কাশতে থাকলেও টেস্ট করাতে পারেনি। রিপোর্টের উপসংহারে বলা হচ্ছে যে, পশ্চিমের সেলেব্রিটি সংকৃতি এবং পুঁজিবাদ একই সূত্রে গাঁথা। উভয়েই ব্যক্তিকে সমাজের উপরে স্থান দেয়। এটা অস্বস্তিকরভাবে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, মেডিক্যাল কর্মী, সুপারমার্কেট স্টাফ, বাস ড্রাইভার, পণ্য ডেলিভারি কর্মীদের মতো কঠোর পরিশ্রমীরা যখন বিশ্বকে টিকিয়ে রাখছে, তখন ধনী ব্যক্তিরা শহর ছেড়ে দূরবর্তী অঞ্চলে পালাচ্ছে। আর এর আগে কখনো এতটা পরিষ্কারভাবে দেখা যায়নি যে, সমাজের অতিকায় ধনী ব্যক্তিরা সমাজকে কতটা কম দিচ্ছে।


2 comments:

  1. But the question is whether COVID 19 will rapid the situation towards a more approved system led by equality????????

    ReplyDelete
    Replies
    1. There is a difference between equality and equity... e.g. if you give equal facility to a rich and to a poor, it will result in discrimination.... if you tell a man to give birth to a child, it wouldn't result in equality....

      you need a system that views human beings from their creational standpoint.... you need to cater to the basic needs of each and every human being.... human beings also need to fulfill their instincts... you have let them satisfy their instincts without creating problems in the society....

      COVID-19 is leading to a disbelief on current system among the people... and it surely has accelerated the search for a new system....

      Delete