Thursday 30 December 2021

সৌদিরা নিজস্ব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করছে কেন?

৩১শে ডিসেম্বর ২০২১

রাজধানী রিয়াদের ২’শ ৩০ কিঃমিঃ পশ্চিমে দাওয়াদমি এলাকার ফ্যাসিলিটি। এখানেই সৌদি আরব চীনের সহায়তায় নিজস্ব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। মার্কিনীদের উপর নির্ভরশীল সৌদিরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত। সৌদিদের এই প্রকল্প হয়তো সেই ভীতি থেকেই এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে পারছে না। এমতাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা যেমন বাড়বে, তেমনি সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাও বাড়বে।

 
মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‘সিএনএন’ জানাচ্ছে যে, সৌদি আরব চীনের সহায়তায় নিজস্ব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। প্রতিবেদনে ধারণা করা হয় যে, সৌদি আরবের এহেন কর্মকান্ডের ফলে পারমাণবিক অস্ত্র ডেভেলপ করার পরিকল্পনা থেকে ইরানকে দূরে রাখা কঠিন হয়ে যেতে পারে। স্যাটেলাইট ছবিতেও দেখা যাচ্ছে যে, সৌদি আরবের কমপক্ষে একটা স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করা হচ্ছে। চীনারাই একসময় রাজধানী রিয়াদের ২’শ ৩০ কিঃমিঃ পশ্চিমে দাওয়াদমি এলাকায় সেই ফ্যাসিলিটি তৈরি করে দিয়েছিল। গত অক্টোবর এবং নভেম্বরের মাঝে নেয়া ছবিতে সেখানে ‘বার্ন অপারেশন’এর প্রমাণ পাওয়া যায়; যা কিনা বুঝিয়ে দেয় যে, সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করা হচ্ছে। মার্কিন সরকারের সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল’এর ব্রিফিংএ চীন থেকে সৌদি আরবের কাছে সংবেদনশীল প্রযুক্তির বেশ কয়েকটা বড় আকারের শিপমেন্টের ব্যাপারে ইন্টেলিজেন্স উপস্থাপন করা হয়েছে।

চীনা পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র ‘সিএনএন’কে জানান যে, সৌদি আরবের সাথে চীনের সম্পর্ক কৌশলগত। সামরিক বাণিজ্যসহ অনেক বিষয়েই দুই দেশের সহযোগিতা রয়েছে। এই সহযোগিতাগুলি আন্তর্জাতিক আইন মেনেই হচ্ছ; এবং এর মাঝে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করার মতো কোন প্রযুক্তির আদানপ্রদান নেই। ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’এর এক প্রতিবেদনে মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি বিস্তার নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘মিসাইল টেকনলজি কনট্রোল রেজিম’ বা ‘এমটিসিআর’এ চীন এবং সৌদি আরব কেউই স্বাক্ষরকারী নয়। সৌদি আরব, ইস্রাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পকে আঞ্চলিক হুমকি হিসেবে দেখেছে। অপরদিকে ইরান তার দুর্বল বিমান বাহিনীর স্থলে ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ডিটারেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

তবে এই ব্যাপারটায় শুধু চীনকেই জড়ানো ঠিক নয় বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সৌদি আরব বেশ কয়েকটা দেশের কাছ থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাবার চেষ্টা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডলবুরি কলেজ’এর প্রফেসর জেফরি লুইস বলছেন যে, রকেট পরীক্ষা করার সময় কিছু জ্বালানি বেঁচে যায়। এই বেঁচে যাওয়া জ্বালানি খুবই দাহ্য এবং বিপজ্জনক। কঠিন জ্বালানির ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করার সময় অনেক ক্ষেত্রেই বেঁচে যাওয়া জ্বালানিগুলিকে একটা ‘বার্ন পিট’এর মাঝে ফেলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই পুড়িয়ে ফেলার অপারেশন থাকার অর্থই হলো সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করার কাজ চলছে। সৌদি আরবের দাওয়াদমি এলাকার ফ্যাসিলিটির স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করলে এব্যাপারটাই নিশ্চিত হওয়া যায়। ‘আইআইএসএস’ ওয়াশিংটনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল এলম্যান এবং মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’এর জোসেফ এস বারমুডেজ জুনিয়র ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’এর সাথে সাক্ষাতে এই ফ্যাসিলিটিকে কঠিন জ্বালানির রকেট ইঞ্জিন ডেভেলপ করার কারখানা বলে মত দেন। ব্রিটেনের ‘ডেইলি মেইল’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, সৌদিদের এই ফ্যাসিলিটির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এখানে ‘সলিড ফুয়েল’ বা কঠিন জ্বালানির রকেট তৈরি করা হচ্ছে। তরল জ্বালানির রকেটের চাইতে কঠিন জ্বালানির রকেট সহজে লুকিয়ে রাখা যায় এবং অনেক দ্রুততার সাথে উড্ডয়ন করা যায়।

 
ভিয়েনায় ইরানের সাথে পশ্চিমা দেশগুলির পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলছে আলোচনা। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ট প্রশ্নের মাঝে পড়লেও সৌদি প্রকল্পের ব্যাপারে ততটা চিন্তিত দেখা যায়নি কাউকেই। ইরান নিশ্চয়ই এমন কোন নিয়ন্ত্রণমূলক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাইবে না, যা কিনা অন্যদের উপর প্রয়োগ করা হবে না।

বাইডেন প্রশাসন এখন মনে করছে যে, এর ফলে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প সীমিতকরণের চেষ্টার ব্যাপ্তি আরও বাড়িয়ে সেখানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পকেও সীমিত করার চেষ্টাকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ইস্রাইল এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে যথেষ্টই চিন্তিত। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’এর এক প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে বলা হয় যে, সৌদি আরব তাদের প্রথম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা তৈরি করেছে। একই বছরের জুনে ‘সিএনএন’ আরেক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল যে, মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তারা এব্যাপারে অবহিত রয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সামনে গোপন ইন্টেলিজেন্স প্রকাশ করতে চাননি। ডেমোক্র্যাটরা সরকারি চ্যানেলের বাইরে থেকে এব্যাপারে জানতে পেরে ক্ষেপে যায়। ডেমোক্র্যাটরা বলতে থাকে যে, ট্রাম্প প্রশাসন সৌদিদের ব্যাপারে খুবই নরম আচরণ করছিলেন। অনেকেই বলেন যে, ট্রাম্পের নিস্তব্দতাই সৌদিদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পকে এগিয়ে নেবার পিছনে সাহস যুগিয়েছে। মার্কিন সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন যে, বাইডেন প্রশাসন এই আদানপ্রদানে জড়িত থাকা কিছু কোম্পানির উপর অবরোধ দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে; যদিও ক্যাপিটল হিলে অনেকেই মনে করেন না যে, বাইডেন প্রশাসন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কঠোর কোন সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রফেসর জেফরি লুইস বলছেন যে, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ট প্রশ্নের মাঝে পড়লেও সৌদি প্রকল্পের ব্যাপারে ততটা চিন্তিত দেখা যায়নি কাউকেই। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির বিস্তার ঠেকাতে সৌদি আরব এবং ইস্রাইলের মতো আঞ্চলিক পক্ষগুলিকেও আলোচনায় আনতে হবে; কারণ এরাও নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র নিজেরাই তৈরি করতে পারছে। ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’ বা ‘আইআইএসএস’এর এসোসিয়েট ফেলো মার্ক ফিতজপ্যাট্রিক এক লেখায় বলছেন যে, ইরান নিশ্চয়ই এমন কোন নিয়ন্ত্রণমূলক সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাইবে না, যা কিনা অন্যদের উপর প্রয়োগ করা হবে না। তবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করার ব্যাপারে ইরানের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার বাইরে সৌদি আরবের আর কোন উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা, সেব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন। সৌদিদের নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্রের সাথে ব্যবহারের জন্যে কোন পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরির প্রকল্প শুরুর কথাও শোনা যায় না। তবে ২০১৮ সালে মার্কিন মিডিয়া ‘সিবিএস’কে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন যে, সৌদি আরব পারমাণবিক অস্ত্র যোগাড় করতে চায় না। তবে ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র ডেভেলপ করে, তবে সৌদি আরব নিশ্চিতভাবেই একই কাজ করবে।

মার্কিন ভূরাজনৈতিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘স্ট্রাটফর’ ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলে যে, যদি সৌদি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের অবস্থানে পৌঁছে, তবে মার্কিন প্রশাসন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হতে পারে। মাইকেল এলম্যান ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’কে এক সাক্ষাতে বলেন যে, সৌদি আরবের বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক ‘এফ ১৫’, ‘টর্নেডো’ এবং ‘টাইফুন’ যুদ্ধবিমান রয়েছে এবং তাদের পাইলটেরাও যথেষ্ট ভালো। তবে তাদের লজিস্টিক্যাল সাপোর্টের ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহায়তার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কিন্তু সৌদিরা যদি ইরানের উপর কোন হামলা করতে যায়, সেখানে কোন নিশ্চয়তা নেই যে, যুক্তরাষ্ট্র সৌদিদেরকে সহায়তা দেবে। এই অনিশ্চয়তাই হয়তো সৌদিদেরকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পেতে আগ্রহী করে তুলেছে। গত সেপ্টেম্বরে ‘আল জাজিরা’র এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলার মাঝেই যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব থেকে তাদের ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরিয়ে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সাথে অনেকেই আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসার ব্যাপারটা যুক্ত করেছে; এবং একইসাথে তা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনীদের উপর নির্ভরশীল দেশগুলিকে দুশ্চিন্তার মাঝে ফেলে দিয়েছে। ‘রাইস ইউনিভার্সিটি’র ‘জেমস এ বেকার থ্রি ইন্সটিটিউট ফর পাবলিক পলিসি’র রিসার্চ ফেলো ক্রিশ্চিয়ান আলরিকসেন বলছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে সিদ্ধান্ত নেয়ার মানুষগুলি মোটামুটিভাবে একমত যে, যুক্তরাষ্ট্র একসময় পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলকে রক্ষায় যতটা মনযোগী ছিল, এখন ততটা নেই। সৌদিরা মনে করছে যে, ওবামা, ট্রাম্প এবং বাইডেনের পরপর তিনটা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের মাঝেই তারা মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাবার প্রবণতা দেখেছে। অন্ততঃ ট্রাম্প প্রশাসনের পর বাইডেন যখন আফগানিস্তান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত দেয়ার সময়ে নিশ্চিত করেছেন যে, তার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থই সর্বাগ্রে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বন্ধুরাই হতাশ হয়েছে।

 
২০১৮ সালে মার্কিন মিডিয়া ‘সিবিএস’কে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন যে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র ডেভেলপ করে, তবে সৌদি আরব নিশ্চিতভাবেই একই কাজ করবে। সৌদিরা মনে করছে যে, ওবামা, ট্রাম্প এবং বাইডেনের পরপর তিনটা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের মাঝেই তারা মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাবার প্রবণতা দেখেছে। অন্ততঃ ট্রাম্প প্রশাসনের পর বাইডেন যখন আফগানিস্তান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত দেয়ার সময়ে নিশ্চিত করেছেন যে, তার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থই সর্বাগ্রে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বন্ধুরাই হতাশ হয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানে সৌদিরা নিজেদের প্রতিরক্ষা নিজেরাই নিশ্চিত করতে পারবে, সেব্যাপারে কেউই নিশ্চিত নয়। ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, গত পাঁচ বছরে সৌদি আরবের অস্ত্র আমদানি ৬১ শতাংশ বেড়েছে। আর ‘মিডিলইস্ট আই’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ২০২১ সালেই সৌদি আরব ঘোষণা দেয় যে, তারা নিজস্ব সামরিক শিল্পে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে। এছাড়াও ২০৩০ সালের মাঝে তারা তাদের সামরিক বাজেটের ৫০ শতাংশ নিজস্ব উৎস থেকে ক্রয় করার টার্গেট ঠিক করেছে। অর্থাৎ বাইরের উৎসের উপর নির্ভরতা কমাতে পরিকল্পনা নিয়েছে সৌদি আরব। তবে কিছুদিন আগেই বাইডেন প্রশাসন সৌদিদের কাছে ট্রাম্প প্রশাসনের এক অস্ত্র বিক্রির চুক্তিতে আংশিক সম্মতি দিয়েছে। সাড়ে ৬’শ মিলিয়ন ডলারের সেই অস্ত্র চুক্তির মাঝে রয়েছে ২’শ ৮০টা ‘এআইএম ১২০সি’ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র; এবং এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ফাইটার বিমান থেকে ছোঁড়ার জন্যে ৫’শ ৯৬টা ‘এলএইউ ১২৮ মিসাইল রেইল লঞ্চার’। এই চুক্তিতে সম্মতির পর মার্কিন সিনেটে প্রবল বাকবিতন্ডা চলে। সিনেটররা ইয়েমেনের যুদ্ধে সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, দুই বছর আগে সৌদি ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের ফ্যাসিলিটি তৈরির কাজ শেষ হলেও যুক্তরাষ্ট্র সেব্যাপারে চুপ ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ডেমোক্র্যাটরা অভিযোগ করেছিল যে, সৌদি প্রকল্পে ট্রাম্প প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। এখন বাইডেন প্রশাসনের এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্র এব্যাপারে অফিশিয়ালি কোন বিবৃতি দেয়নি। এমনকি অতি সংবেদনশীল প্রযুক্তির বড় কিছু শিপমেন্টের ব্যাপারে ইন্টেলিজেন্স থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র চুপ থেকেছে; যদিও সকলেই মনে করছেন যে, ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনার ক্ষেত্রে সৌদিদের এই প্রকল্প একটা বড় বাধা। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে সম্ভাব্য যুদ্ধে সৌদিদেরকে সরাসরি সহায়তা দেবে কিনা, সেব্যাপারে অনিশ্চয়তাই হয়তো সৌদিদেরকে নিজস্ব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে এই প্রকল্পের ব্যাপারে কয়েক বছর ধরে ট্রাম্প এবং বাইডেন প্রশাসনের নীরবতাই যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ স্বীকৃতির প্রমাণ। দু’বছর আগে ‘স্ট্রাটফর’ বলেছিল যে, সৌদিরা ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করলে যুক্তরাষ্ট্র সৌদিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। তবে কি বাইডেন প্রশাসন পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্যেই অপেক্ষা করছে? নাকি ইরানের সাথে আলোচনার সফলতার ব্যাপারে সন্দেহের কারণেই বাইডেন প্রশাসন সৌদিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া থেকে দূরে থাকছে? অর্থাৎ ইরানের সাথে আলোচনায় সৌদিদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে দরকষাকষির একটা সুযোগ দিচ্ছে। তথাপি অনেকেই বলছেন যে, মার্কিনীদের উপর নির্ভরশীল সৌদিরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত। সৌদিদের এই প্রকল্প হয়তো সেই ভীতি থেকেই এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে পারছে না। এমতাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা যেমন বাড়বে, তেমনি সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনাও বাড়বে।

No comments:

Post a Comment