Saturday 4 December 2021

পুঁজিবাদ কি পৃথিবীর জলবায়ুকে বাঁচাতে পারলো?

৪ঠা ডিসেম্বর ২০২১

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ‘কপ২৬’এর সাফল্য দাবি করেন; অথচ জলবায়ু সমস্যার মূলে থাকা কনজিউমারিজম নিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন। জলবায়ু বাঁচাতে তিনি কিভাবে ব্রিটিশ নাগরিকদেরকে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে খরচ কমাতে বলবেন? আর কিভাবেই বা তিনি স্বীকার করে নেবেন যে, ‘ক্যাপিটালিজম ইজ কিলিং দ্যা প্ল্যানেট’?


স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে হয়ে গেলো জলবায়ু সন্মেলন ‘কপ২৬’। ২৬তম এই আসরের সাফল্য কতটুকু, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন ছিল, তেমনি উত্তর মেলেনি বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় জলবায়ু সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে। গ্লাসগোতে হাজারো পরিবেশবাদীরা বিক্ষোভ করেছে। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, একদল বামপন্থীদের প্লাকার্ডে লেখা ছিল ‘ক্যাপিটালিজম ইজ কিলিং দ্যা প্ল্যানেট’; অর্থাৎ ‘পুঁজিবাদ বিশ্বটাকে মেরে ফেলছে’। আসলেই কি তাই? পুঁজিবাদ কি গ্লাসগোর বৈঠকে এই অভিযোগের জবাব দিতে পেরেছে? ‘কপ২৬’ বৈঠকের শুরুতে ছিল বিজ্ঞানীদের আশংকা এবং বৈঠকের শেষে ছিল প্রতিনিধিদের একগুচ্ছ ঐচ্ছিক প্রতিশ্রুতি, যার আন্তরিকতা নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন।

‘ডয়েচে ভেলে’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ‘কপ২৬’ বৈঠকের শুরু হয়েছিল প্রতিশ্রুতির মাঝ দিয়ে; কিন্তু শেষ হয়েছে ক্ষমা চাইবার মাধ্যমে। বৈঠকের শেষে প্রতিনিধিরা একটা সমঝোতায় পৌঁছান ঠিকই। বেশিরভাগ দেশই নতুন করে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাবার উচ্চাভিলাসী টার্গেট বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন যে, ইউরোপে শিল্প বিপ্লব শুরুর সময়ের তুলনায় বর্তমানের বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির মাঝে রাখতে না পারলে জলবায়ুগত বিপর্জয় দেখা দেবে। অনেকেই মনে করছেন যে, তাপমাত্রা এই সীমার মাঝে রাখার জন্যে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন যতটা কমানো দরকার ছিলো, তা ‘কপ২৬’ বৈঠক থেকে প্রতিশ্রুত হয়নি। বৈঠকের শেষ মুহুর্তে ভারত একটা শব্দ পরিবর্তন করে ‘কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা’র স্থানে ‘কয়লার ব্যবহার কমানো’কে অন্তর্ভুক্ত করায়। একইসাথে বৈঠকে খনিজ জ্বালানির উপর থেকে ভর্তুকি পুরোপুরি প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সমঝোতা হয়। অনেক দেশ তাদের গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করার টার্গেট ঘোষণা করে। অপরদিকে ধনী দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তনে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে পিছু হটে। ‘ডয়েচে ভেলে’ বলছে যে, আগামী বছর ‘কপ২৭’ বৈঠক বসবে মিশরে; যেখানে গ্রীনহাউজ গ্যাসের প্রধান নির্গমনকারী দেশগুলিকে নতুন টার্গেট দিতে বলা হবে। কিন্তু ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার টার্গেটই যখন ‘লাইফ সাপোর্ট’এ রয়েছে, তখন জলবায়ু নিয়ে আন্দোলন করা গ্রুপগুলি বলছে যে, ‘কপ২৭’ এখনই মৃত।
 
‘কপ২৬’এর প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা বলেন যে, তিনি বৈঠকের ফলাফল নিয়ে গভীর হতাশার ব্যাপারে তিনি অবগত আছেন। তথাপি তিনি বৈঠক থেকে যা পাওয়া গিয়েছে সেটাকে রক্ষা করার জন্যে সকলকে অনুরোধ করেন। কিন্তু সরকারগুলি কিভাবে এগুলি বাস্তবায়ন করবে, সেব্যাপারে অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ এখানে জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে; কোন দেশেরই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা নেই।


‘কপ২৬’ ... সাফল্য, নাকি হতাশা?

বৈঠকের শেষ দিন ১৩ই নভেম্বর ‘কপ২৬’এর প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা তার বক্তব্যে বলেন যে, যেভাবে এই বৈঠক চলেছে, তার জন্যে তিনি ‘গভীরভাবে দুঃখিত’। তিনি আরও বলেন যে, তিনি বৈঠকের ফলাফল নিয়ে গভীর হতাশার ব্যাপারে তিনি অবগত আছেন। তথাপি তিনি বৈঠক থেকে যা পাওয়া গিয়েছে সেটাকে রক্ষা করার জন্যে সকলকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন যে, কয়লার ব্যাপারে এই প্রথমবারের মতো সমঝোতা হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন যে, তারা শেষ পর্যন্ত এমন একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছেন, যা ‘গেম চেঞ্জিং’ বা খেলা পরিবর্তন করে ফেলার মতো। তিনি মনে করেন যে, এটা ছিল জলবায়ুর ব্যাপারে বৈশ্বিক চিন্তার একটা বিশাল পরিবর্তন। একইসাথে গ্লাসগোতে কয়লার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, বৈঠকের সাফল্যের মাঝে ছিল কিছু হতাশা। স্বাধীন দেশগুলি যা করতে চায়, তার উপর তারা কোনকিছু চাপিয়ে দিতে পারেন না বলে বলেন তিনি। জনসন একইসাথে বৈঠককে রক্ষা করে বলেন যে, ‘কপ২৬’এর কখনোই জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধ করতে পারার কথা নয়। মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে, সর্বোচ্চ যেটা করা সম্ভব তা হলো জলবায়ু পরিবর্তনের দ্রুততাকে কমানো এবং ভবিষ্যতে এটা পরিবর্তন করে ফেলার জন্যে নিজেদের প্রস্তুত করা। ‘ইউরোনিউজ’এর সাথে সাক্ষাতে পরিবেশবাদী সংস্থা ‘গ্রীনপিস’এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জেনিফার মরগ্যান বলেন যে, দেড় ডিগ্রির টার্গেট কোনমতে বেঁচে আছে; তথাপি কয়লার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হওয়ায় তারা খুশি। তবে তিনি বলেন যে, জলবায়ুর ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলি প্রকৃতপক্ষে পরের বছরের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

‘কপ২৬’ বৈঠকে যেসব সমঝোতা হয়েছে, তা সরকারগুলি কিভাবে বাস্তবায়ন করবে, সেব্যাপারে অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ এখানে জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে; কোন দেশেরই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা নেই। ‘আল জাজিরা’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, জলবায়ু টার্গেটকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে ২০১০ সালের গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ থেকে ৪৫ শতাংশ নির্গমন কমাতে হবে ২০৩০ সালের মাঝেই। সবচাইতে বড় গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনকারী দেশ চীন তাদের নির্গমন শূণ্যে নিয়ে আসার টার্গেট দিয়েছে ২০৬০ সালের মাঝে; তবে তারা কয়লার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে রাজি হয়নি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রও ২০৫০ সালের মাঝে নির্গমন শূণ্যে নামানোর টার্গেট দিলেও কলয়ার ব্যবহার শূণ্য করতে নারাজ। তৃতীয় সর্বোচ্চ নির্গমনকারী ভারত ২০৭০ সালের মাঝে নির্গমন শূণ্য করতে চায়। ‘কপ২৬’এ কয়লার ব্যাপারে কেবলমাত্র তাদের শক্ত অবস্থানই মিডিয়াতে এসেছে। চতুর্থ সর্বোচ্চ নির্গমনকারী দেশ রাশিয়া ২০৬০ সালের টার্গেট দিয়েছে; কয়লার ব্যাপারে তারাও একই অবস্থানে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনকারী চারটা দেশ কয়লা ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে রাজি হয়নি। আর ‘কপ২৬’ সন্মেলনে চীনা নেতা শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যোগদানই করেননি। কাজেই বৈঠকের বাধ্যবাধকতাহীন সমঝোতাগুলির ব্যাপারে দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গি যে খুব বেশি একটা কঠোর নয়, তা বোধগম্য।
 
স্থবির জনসংখ্যার পশ্চিমা দেশগুলি কনজিউমার সংস্কৃতির প্রসারের মাধ্যমেই নিজেদের অর্থনীতিকে চালিয়ে নিচ্ছে। আর সেসব অর্থনীতির উপরেই রচিত হয়েছে দরিদ্র দেশগুলির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্য দরিদ্র এই দেশগুলির মানুষের জন্যে জলবায়ু রক্ষার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলির জন্যে কনজিউমারিজমের মাধ্যমে নিজেদের লাইফস্টাইল জারি রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কারণ তা হলো পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থনীতির জ্বালানি। জলবায়ুকে বাঁচাবার চেষ্টা এক্ষেত্রে পুঁজিবাদী অর্থনীতির উপর লাগাম। 


জলবায়ু সমস্যার দায় কার?

‘ইয়াহু নিউজ’এর এক প্রতিবেদনে ‘ওয়ার্ল্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট’এর তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে যে, বৈশ্বিক গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ৭৩ শতাংশই আসে জ্বালানি থেকে। এই জ্বালানির বেশিরভাগ যায় শিল্প, বাড়িঘর উষ্ণকরণে এবং পরিবহণে। সেই তুলনায় কৃষিখাতে নির্গমন মাত্র ১৮ শতাংশ। কেবলমাত্র পরিবহণ খাতেই নির্গমন ১৬ শতাংশ। ১৮৫০ সাল থেকে বায়ুমন্ডলে যত গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন হয়েছে, তার ২০ শতাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের নির্গমন সকল বাঁধ ভেঙ্গে ফেলেছে। চীনের অর্থনীতি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কয়লা পুড়িয়েই চীনারা পশ্চিমা বিশ্বের জন্যে স্বল্প খরচে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করে চলেছে। এখন পশ্চিমারাই চীনাদেরকে বলছে গ্রীনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাতে। তবে চীনা শহরগুলির ব্যাপক বায়ুদূষণ চীনাদেরকেও বিচলিত করেছে।

অর্থনীতি এবং জলবায়ুকে পুঁজিবাদের পাল্লায় মাপতে গিয়ে জলবায়ু সর্বদাই হেরেছে। ‘কপ২৬’এর আগে আরও ২৫টা সন্মেলন হয়েছে; কিন্তু জলবায়ু কখনোই প্রাধান্য পায়নি। গ্রীনহাউজ গ্যাসের বেশিরভাগটাই যখন পশ্চিমা দেশগুলির শিল্পবিপ্লবের কারণে নির্গমন হয়েছে, তখন সারা বিশ্বের সকল দরিদ্র দেশের মাথার উপর গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন শূণ্য করার টার্গেট বেঁধে দেয়াটা কপটতারই উদাহরণ। কারণ দরিদ্র এই দেশগুলির বেশিরভাগই পশ্চিমা দেশগুলিতে রপ্তানি করে তাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। আর এই রপ্তানি তাদের গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের পিছনে যথেষ্টই দায়ি। পশ্চিমা দেশগুলির কনজিউমার সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে বহু দেশ তাদের রপ্তানিমুখী শিল্পগুলিকে গড়ে তুলেছে। স্থবির জনসংখ্যার পশ্চিমা দেশগুলি কনজিউমার সংস্কৃতির প্রসারের মাধ্যমেই নিজেদের অর্থনীতিকে চালিয়ে নিচ্ছে। আর সেসব অর্থনীতির উপরেই রচিত হয়েছে দরিদ্র দেশগুলির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্য দরিদ্র এই দেশগুলির মানুষের জন্যে জলবায়ু রক্ষার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলির জন্যে কনজিউমারিজমের মাধ্যমে নিজেদের লাইফস্টাইল জারি রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কারণ তা হলো পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থনীতির জ্বালানি। জলবায়ুকে বাঁচাবার চেষ্টা এক্ষেত্রে পুঁজিবাদী অর্থনীতির উপর লাগাম। খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ‘কপ২৬’এর সাফল্য দাবি করেন; অথচ জলবায়ু সমস্যার মূলে থাকা কনজিউমারিজম নিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন। জলবায়ু বাঁচাতে তিনি কিভাবে ব্রিটিশ নাগরিকদেরকে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে খরচ কমাতে বলবেন? আর কিভাবেই বা তিনি পুঁজিবাদকে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে দেয়া ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়ে স্বীকার করে নেবেন যে, ‘ক্যাপিটালিজম ইজ কিলিং দ্যা প্ল্যানেট’?

3 comments:

  1. চমৎকার লেখা।
    কনজিউমারিজম কিভাবে পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থনীতির জ্বালানি যদি বলতেন।

    ReplyDelete
  2. পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতিই জনগণের কনজাম্পশনের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ মানুষ যত কনজিউম করবে, অর্থনীতি তত বড় হবে। এর মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের ২১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে ৬৮ শতাংশ বা ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার হলো কনজাম্পশন। ৩৩ কোটি মানুষের ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার কনজাম্পশনের অর্থ হলো বছরে গড়ে প্রতিটা মানুষকে ৪৩ হাজার ডলারেরও বেশি কনজিউম করতে হবে। এই হিসাব বাংলাদেশের টাকায় গড়ে প্রতি মাসে মাথাপিছু ৩ লক্ষ টাকারও বেশি। এখানে একটা বড় সংখ্যক মানুষের গড় আয় খুবই কম। তাহলে এই গড় কনজাম্পশন ঠিক রাখতে হলে কিছু মানুষকে প্রতিমাসে আকাশচুম্বী খরচ করতে হবে। শুধু দামী জিনিস কিনলেই হবে না; তাকে খুব ঘনঘন কেনাকাটা করতে হবে। দরকার না হলেও কিনতে হবে।

    এই কেনাকাটা যদি কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অর্থনীতি ধ্বসে পড়বে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে গেলে হয় জনসংখ্যা বাড়াতে হবে, নতুবা জনগণকে বেশি বেশি করে কনজিউম করতে হবে। যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলিতে জনগণ এখন বিবাহ বন্ধনেই থাকতে চাইছে না, তাই তাদের দেশে জন্মহার একেবারেই কমে গেছে। কাজেই এখন একেকটা মানুষকে অতিরিক্ত খরচ করানো ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আসবে না। অভিবাসী জনগণকে দেশে এনে ভালো ভালো চাকুরির ব্যবস্থা করলেও অবশ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আসতে পারে।

    বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হলে বা বিবাহ বিচ্ছেদ বেশি হলে প্রতিটা মানুষ আলাদা বসবাস করবে। তাদের আলাদা আলাদা বাড়ি, গাড়ি, ফ্রিজ, টেলিভিশন ইত্যাদি থাকতে হবে। পরিবারের মাঝে থাকলে সেটা সম্ভব হতো না। কাজেই তাদের অর্থনীতিবিদেরা স্বল্প মেয়াদে বিবাহ বিচ্ছেদ বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধা না হওয়াটা চাইতেই পারেন। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং তখন তৃতীয় বিশ্ব থেকে অভিবাসী এনে দেশ চালাতে হবে।

    ReplyDelete
  3. চমৎকার বিশ্লেষণ করে বুঝিয়েছেন। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete