Wednesday 15 December 2021

আমিরাত ‘এফ ৩৫’ যুদ্ধবিমান ত্যাগ করতে রাজি; তবে চীনকে নয়

১৫ই ডিসেম্বর ২০২১

আমরাত মার্কিন ‘এফ ৩৫’ বিমান তারা ত্যাগ করতে রাজি থাকলেও চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে তারা ত্যাগ করতে রাজি নয়। মার্কিন কর্মকর্তারা যখন তাদের বন্ধু দেশগুলির উপর চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিতে চাপ দিচ্ছেন, তখন আমিরাতের অবস্থান দেখিয়ে দেয় যে, কেউই তাদের ডিমগুলি আজ এক ঝুড়িতে রাখতে রাজি নয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ঝুড়িটা এখন আগের মতো নিরাপদ নয়।

 
১৪ই ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাত ঘোষণা দেয় যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ২৩ বিলিয়ন ডলারের একটা সামরিক ক্রয় যুক্তি বাতিল করতে যাচ্ছে; যার মাঝে ছিল ‘এফ ৩৫’ স্টেলথ যুদ্ধবিমান। একজন আমিরাতি কর্মকর্তা ‘সিএনএন’কে জানান যে, ‘প্রাযুক্তিক প্রয়োজন’, ‘সার্বভৌম অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা’ এবং ‘লাভ খরচার বিশ্লেষণ’এর পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন যে, ক্রয় চুক্তি বাস্তবায়নে একে অপরের প্রতিরক্ষার নিরাপত্তাজনিত অবস্থানগুলির ব্যাপারে একটা সমঝোতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্র। তবে উন্নততর প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখনও আমিরাতের পছন্দের সরবরাহকারী এবং ভবিষ্যতে হয়তো ‘এফ ৩৫’এর ব্যাপারে আলোচনা পুনরায় শুরু করা যেতে পারে। একইদিনে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কার্বি সাংবাদিকদের বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং আমিরাতের সম্পর্ক কৌশলগত এবং একটা সামরিক চুক্তির চাইতে অনেক বেশি জটিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের শর্ত বাস্তবায়নে চাপ দেবেই। এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এই শর্তগুলি শুধু আমিরাতের জন্যে নয়, বরং সকল দেশের জন্যেই প্রযোজ্য; কারণ এগুলি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রযুক্তিকে রক্ষা করার জন্যেই প্রয়োগ করা হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এগুলি আলোচনার উর্ধ্বে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের নতুন ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’র মাঝে পড়তে চায়না আমিরাত

‘সিএনএন’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ২০২০ সালের অগাস্টে ইস্রাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সমঝোতার মূল স্তম্ভই ছিল আমিরাতের কাছে ‘এফ ৩৫’ যুদ্ধবিমান বিক্রয়। এটা ছিল আরব দেশগুলির কাছে বিক্রয়কৃত অস্ত্রের মাঝে সবচাইতে উন্নত প্রযুক্তি। তখন থেকেই মার্কিন রাজনীতিবিদদের অনেকেই এই চুক্তির ব্যাপারে নিজেদের সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এখনও আমিরাতের কাছে ‘এফ ৩৫’ যুদ্ধবিমান, ‘এমকিউ ৯বি’ ড্রোন এবং গোলাবারুদ বিক্রয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন যাবতই চীনা টেলিকম কোম্পানি ‘হুয়াই’কে আমিরাতের টেলিকম নেটওয়ার্ক থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে আমিরাতের উপর চাপ দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে যে, চীনা প্রযুক্তি মার্কিন অস্ত্র ব্যবস্থাগুলির জন্যে হুমকি। আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন উপসহকারি পররাষ্ট্র সচিব মিরা রেজনিক ‘সিএনএন’কে বলছেন যে, ‘এফ ৩৫’ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বন্ধুদের সামরিক প্রযুক্তির মাঝে মুকুটের মণির মতো; এটাকে তারা রক্ষা করবেনই। তবে আমিরাতের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সংশয়ের ব্যাপারে সন্দিহান। আমিরাতের নেতৃত্বের উপদেষ্টা আনওয়ার গারগাশ বলছেন যে, তাদের কাছে সংশয় হলো আরেকটা ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’এর মাঝে আটকে যাওয়া; যেখানে চীন হলো আমিরাতের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী, আর যুক্তরাষ্ট্র হলো কৌশলগত সহযোগী। তিনি বলছেন যে, একটা ছোট দেশ হিসেবে তারা বড় দুই দেশের প্রতিযোগিতার কারণে সমস্যায় পড়বেন; কিন্তু তারা এই প্রতিযোগিতাকে কমাতে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারবেন না।

 
ইস্রাইলি প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদের সাথে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাবার ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি যেমন চিন্তার মাঝে পড়েছিল, সেটা আরও বেশি ঘনীভূত হয়েছে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চলে যাবার সাথেসাথে। একারণেই আমিরাত চাইছে ইরান এবং তুরস্কের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা কমাতে এবং ইস্রাইলের কাছাকাছি যেতে।

নভেম্বর মাসে ‘ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, আবু ধাবির ৮০ কিঃমিঃ দূরে ‘খলিফা পোর্ট’এ চীনারা একটা বহুতল ভবন নির্মাণের জন্যে বড় একটা গর্ত করেছে। মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তারা বলছেন যে, এই কর্মকান্ডের কোন সামরিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। মার্কিনীরা হুমকি দেয় যে, সেখানে কোন চীনা সামরিক উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্ককে সমস্যায় ফেলবে। একারণেই মার্কিন কর্মকর্তারা চীনাদের এই কর্মকান্ড বন্ধ করতে আমিরাতের উপর চাপ প্রয়োগ করা শুরু করে। ৯ই ডিসেম্বর আনওয়ার গারগাশ ওয়াশিংটনের ‘এরাব গালফ স্টেটস ইন্সটিটিউট’কে বলেন যে, আমিরাত চীনাদের এই কর্মকান্ড বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। তবে এব্যাপারে আমিরাতের অবস্থান হলো, এটা কোন সামরিক স্থাপনা নয়। তিনি আরও বলেন যে, বাইডেন প্রশাসনের জন্যে তার বন্ধুদের সংশয়ের কথা শোনার পরেও একেবারেই আমলে না নেয়াটা বোকামি। মার্কিন প্রেসিডেণ্ট জো বাইডেন আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদের সাথে সাক্ষাতে আমিরাতে চীনা অবস্থানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সংশয় প্রকাশ করলে বিন জায়েদ বলেন যে, তিনি বাইডেনের কথাগুলি পুরোপুরিভাবেই শুনতে পেয়েছেন। ‘মিডলইস্ট আই’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ২০১৬ থেকে ২০২০এর মাঝে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের সরবরাহ ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে একইসাথে ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা ‘বিআরআই’ চিন্তার অংশ হিসেবে চীনারা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে এবং অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে অংশ নিচ্ছে।

মার্কিনীদের প্রস্থান এবং আমিরাতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা চিন্তায় পরিবর্তন

বিশ্বব্যাপী সামরিক অবস্থান কমিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মোতায়েন করার অংশ হিসেবে গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয় যে, তারা ইরাক, কুয়েত, জর্দান এবং সৌদি আরব থেকে ৮টা ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা এবং সৌদি আরব থেকে আরেকটা অত্যাধুনিক ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরিয়ে নিচ্ছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব থেকে আরও ৩টা ‘প্যাট্রিয়ট’ ব্যাটারি সরিয়ে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তগুলি মধ্যপ্রাচ্যে তার উপর নির্ভরশীল দেশগুলিকে চিন্তায় ফেলেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব কমার সাথেসাথে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশগুলি নতুন বন্ধু খুঁজছে।

‘রয়টার্স’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, আমিরাত বর্তমানে পুরোনো বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র, নতুন বন্ধু ইস্রাইল এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের মাঝে ব্যালান্স করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আনওয়ার গারগাশ বলছেন যে, ইস্রাইলের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন ছাড়াও আমিরাত আঞ্চলিকভাবে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্যে ইরান, তুরস্ক এবং সিরিয়াকে সাথে চাইছে। যুবরাজ বিন জায়েদের ভাই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শেখ তাহনুন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ডিসেম্বরের শুরুতেই ইরান সফর করেছেন। নভেম্বরের শেষে যুবরাজ বিন জায়েদ তুরস্ক সফর করে এসেছেন। আর ইস্রাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও আমিরাত সফর করছেন। ইরান তার বাণিজ্যের একটা বড় অংশ আমিরাতের মাধ্যমে করে থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে ২০১৯ সালে আমিরাত থেকে ইরানে রপ্তানি অনেক কমে গেলেও ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল। ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের কারণে দুবাইএর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর গাওদাত বাহগাত ‘ব্রেকিং ডিফেন্স’কে বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাবার ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি যেমন চিন্তার মাঝে পড়েছিল, সেটা আরও বেশি ঘনীভূত হয়েছে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চলে যাবার সাথেসাথে। একারণেই আমিরাত চাইছে ইরান এবং তুরস্কের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা কমাতে এবং ইস্রাইলের কাছাকাছি যেতে।

 
ফ্রান্স থেকে কেনা কাতারি বিমান বাহিনীর 'রাফাল' যুদ্ধবিমান। আমিরাত তার নির্ভরশীলতাগুলিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে; এক ঝুড়িতে সবগুলি ডিম না রাখার নীতি নিয়ে এগুচ্ছে তারা। ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারটা এই কৌশলেরই অংশ। নিশ্চিতভাবেই ফ্রান্সের চাইতে চীনের ব্যাপারে বেশি আপত্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।

ফ্রান্স থেকে ‘রাফাল’ বিমান ক্রয়… ‘এফ ৩৫’এর প্রতিস্থাপন?

২রা ডিসেম্বর আমিরাৎ ফ্রান্সের কাছ থেকে ৮০টা ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের জন্যে ১৯ বিলিয়ন ডলারের এক চুক্তি করে। আমিরাতি সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ‘ব্রেকিং ডিফেন্স’ বলছে যে, এই চুক্তি পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আমিরাত চীনের সাথে ‘ফাইভ জি’ প্রযুক্তির টেলিকম চুক্তি বাতিল করবে না, যখন যুক্তরাষ্ট্র আমিরাতের কাছে ‘এফ ৩৫’ যুদ্ধবিমান বিক্রয় করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ‘রাফাল’ বিমানে মার্কিন অস্ত্র বহণের ব্যবস্থা রাখা এবং বিমানের উন্নয়ন চালিয়ে নিতে পারার ব্যাপারে আমিরাতের শর্ত না মানার কারণে ২০১১ সালে ফ্রান্সের সাথে আমিরাত আলোচনা বাতিল করেছিল। কুয়েতি সামরিক বিশ্লেষক আলি আল হাশিম বলছেন যে, আমিরাত এখন প্রথমে ফ্রান্সের কাছ থেকে যা চেয়েছিল, তা পেয়েছে। তবে এতকাল ফ্রান্সের সাথে আলোচনার পর এতগুলি বিমানের ব্যাপারে চুক্তি হঠাৎ করেই আসেনি বলে বলছেন সামরিক বিশ্লেষক ব্রেনডন প্যাট্রিক। এই ‘রাফাল’গুলি সম্ভবতঃ আমিরাতের ৮০টা মার্কিন নির্মিত ‘এফ ১৬’ বিমান এবং ৫৩টা ফরাসি নির্মিত ‘মিরাজ ২০০০’ বিমানকে প্রতিস্থাপিত করবে। এর ফলে আমিরাতের বিমান বাহিনী মার্কিন নির্মিত বিমানের চাইতে ফরাসি বিমানের উপর বেশি নির্ভরশীল হবে। তবে গাওদাত বাহগাত মনে করছেন না যে, আমিরাত ‘এফ ৩৫’এর চিন্তা একেবারেই বাদ দিয়ে দিয়েছে। তার কথায়, আমিরাত তার নির্ভরশীলতাগুলিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে; এক ঝুড়িতে সবগুলি ডিম না রাখার নীতি নিয়ে এগুচ্ছে তারা। ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারটা এই কৌশলেরই অংশ। তিনি বলেন যে, নিশ্চিতভাবেই ফ্রান্সের চাইতে চীনের ব্যাপারে বেশি আপত্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। আমিরাতের বার্তা সংস্থা ‘ওয়াম’কে আমিরাতের বিমান বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল ইব্রাহিম নাসের আল আলাউই বলছেন যে, ফ্রান্সের সাথে চুক্তি ‘এফ ৩৫’এর প্রতিস্থাপন হিসেবে নয়। বরং এটা হলো বিমান বাহিনীতে নতুন সক্ষমতা যুক্ত করা। এই কথাগুলির সাথে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলিরও মিল পাওয়া যায়। মিশর তাদের বিমান বাহিনীর মূল শক্তি মার্কিন বিমানের উপরে নির্ভরশীল হলেও তারা আগে কেনা ২৪টা ‘রাফাল’এর সাথে আরও ৩০টা যোগ করছে। কাতারও ৩৬টা মার্কিন ‘এফ ১৫কিউএ’ বিমানের সাথেসাথে ২৪টা ব্রিটিশ নির্মিত ‘ইউরোফাইটার টাইফুন’ এবং ৩৬টা ফরাসি ‘রাফাল’ও কিনছে।

ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘চ্যাটহ্যাম হাউজ’এর এসোসিয়েট ফেলো নেইল কুইলিয়াম ‘রয়টার্স’কে বলছেন যে, ইরানের বৈরিতাকে ব্যালান্স করতে আমিরাত সকল চেষ্টাই করবে; তবে এখানে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই যে, যুক্তরাষ্ট্রই আমিরাতের কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। যে ব্যাপারটাতে সকলেই একমত তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনতে চাওয়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল দেশগুলির মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে; যা তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা চিন্তায় পরিবর্তন এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশগুলির সম্পর্ক এখনও সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেলেও যুক্তরাষ্ট্রের উপর কেউই এখন আগের মতো নির্ভর করতে পারছে না; বিশেষ করে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার পর। এই নতুন আঞ্চলিক নীতির অংশ হিসেবেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে। এর ফলাফলস্বরূপ, আমিরাতের মতো দেশগুলির উপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব দিনে দিনে কমছে। একারণেই মার্কিন ‘এফ ৩৫’ বিমান তারা ত্যাগ করতে রাজি থাকলেও চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে তারা ত্যাগ করতে রাজি নয়। মার্কিন কর্মকর্তারা যখন তাদের বন্ধু দেশগুলির উপর চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিতে চাপ দিচ্ছেন, তখন আমিরাতের অবস্থান দেখিয়ে দেয় যে, কেউই তাদের ডিমগুলি আজ এক ঝুড়িতে রাখতে রাজি নয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ঝুড়িটা এখন আগের মতো নিরাপদ নয়।

No comments:

Post a Comment