Thursday 9 December 2021

চীনা অর্থনীতির গতি কি মন্থর হয়ে আসছে?

০৯ই ডিসেম্বর ২০২১

চীনের 'এভারগ্র্যান্ড' কোম্পানির দৈত্যাকৃতির রিয়েল এস্টেট প্রকল্প। চীনা অর্থনীতি পুঁজিবাদের সমস্যাগুলি থেকে মুক্ত নয়। লাগামহীন ঋণের উপর নির্ভরশীল হবার কারণেই চীনের রিয়েল এস্টেট সেক্টর সমস্যায় পতিত; যা পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে অনুসরণ করারই ফলাফলস্বরূপ।

 
গত ৬ই ডিসেম্বর চীনা সরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘চাইনিজ একাডেমি অব সোশাল সায়েন্সেস’ বা ‘সিএএসএস’এর এক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ২০২২ সালে চীনের আর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২০ সালে কোভিড দুর্যোগের পর ২০২১ সালে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দেশটার। এর ফলে ২০২০ থেকে ২০২২এর মাঝে গড় প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ‘সিএএসএস’ বলছে যে, আগামী বছর চীনের রিয়েল এস্টেট সেক্টরের সমস্যাগুলি চলমান থাকবে এবং তা প্রাদেশিক সরকারগুলির বাজেটকে প্রভাবিত করবে। রিয়েল এস্টেট সমস্যা, স্থবির রপ্তানি এবং করোনাভাইরাসের কারণে কড়াকড়ি আরোপে জনগণের খরচ করার প্রবৃত্তি কমে যাওয়ায় ‘সিএএসএস’ চীনা সরকারকে ২০২২ সালের প্রবৃদ্ধির টার্গেট ২০২১ সালের চাইতে কম রাখতে পরামর্শ দিয়েছে। একইসাথে তারা সরকারকে রিয়েল এস্টেট বাজারকে বাঁচাতে হস্তক্ষেপ করতে উপদেশ দেয়। তাদের কথায়, বড় শহরগুলিতে ভূমির নিলাম বাজারে বিপর্জয় এবং ছোট শহরগুলিতে রিয়েল এস্টেটের মূল্য দ্রুত কমে যাওয়া থামাতে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। ‘রয়টার্স’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, চীনের বিশাল রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ‘এভারগ্র্যান্ড’ ব্যাংকের ঋণ ফেরত দিতে না পারার কারণে চীন সরকার রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলির জন্যে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন করে ফেলেছে। এর ফলে রিয়েল এস্টেট সেক্টর অর্থায়ন পেতে হিমসিম খাচ্ছে। এতে ব্যাংকিং সেক্টরও সমস্যায় পতিত হয়েছে। এছাড়াও মারাত্মক জ্বালানি সমস্যায় পতিত হয়েছে চীন।

নানামুখী চ্যালেঞ্জে চীনা অর্থনীতি

‘বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে চীনের জ্বালানি সমস্যাকে ব্যাখ্যা করা হয়। ২০৬০ সালের মাঝে চীন সরকার গ্রীন হাউজ গ্যাসের নির্গমণ শূণ্যের কোঠায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে চীনা সরকার তাদের প্রাদেশিক সরকারগুলির উপর পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে চাপ প্রদান করা শুরু করে। একারণে অনেক অঞ্চলেই বিদ্যুতের ব্যবহারকে র‍্যাশনিং ব্যবস্থার অধীনে আনা হয়। এতে বহু বাড়িঘর অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়াও সিমেন্ট, স্টিল এবং এলুমিনিয়াম শিল্পের মতো বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এর মাঝে ৩০ শতাংশ কয়লা উৎপাদনকারী শানজি প্রদেশে বন্যা হওয়ায় কয়লার মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধি পায়। এরই মাঝে যুক্ত হয় ‘এভারগ্র্যান্ড’এর সমস্যা। রিয়েল এস্টেট এই কোম্পানি ৩’শ বিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দেউলিয়া হবার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ‘ফ্যান্টাসিয়া’ নামের আরেকটা ডেভেলপার কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে; আর ‘সাইনিক হোল্ডিংস’ও একই পথে যাবার কথা বলছে।

 
চীনের সাংহাই শহরের মারাত্মক দূষণ।  পুঁজিবাদী আদর্শকে অনুসরণ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ায় চীনের পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটেছে। আর এই বিপর্যয় এড়াতে গিয়েই মারাত্মক জ্বালানি সংকটে পড়ে চীনা জনগণ অন্ধকারে রাত কাটাচ্ছে।

‘দ্যা ইকনমিস্ট’ পত্রিকার ‘ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’এর ইউ সু বলছেন যে, রিয়েল এস্টেট সেক্টর স্থবির হয়ে আসলে এর সাথে যুক্ত কন্সট্রাকশন কনট্রাক্টর, বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াস প্রস্তুতকারক এবং বাড়িঘরের অভ্যন্তরের ফার্নিশিংএর ব্যবসাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিরেক্টর জৌ ল্যান বলছেন যে, ‘এভারগ্র্যান্ড’এর সমস্যা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হবার কিছু নেই। কারণ এই কোম্পানির ঋণ অনেক ব্যাংকের মাঝে ছড়িয়ে আছে। কোন একটা ব্যাংক এখানে বড় সমস্যায় পড়বে না। অর্থাৎ আর্থিক সেক্টরে ‘এভারগ্র্যান্ড’এর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ‘বিবিসি’ বলছে যে, চীনের বড় প্রযুক্তি কোম্পানি, গেমিং কোম্পানি এবং শিক্ষা সেক্টর সরকারের নিয়ন্ত্রণের শিকার হয়েছে। সরকার সামাজিক দিকনির্দেশনাকে পরিবর্তন করতে পাঁচ বছর মেয়াদী এই নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মকান্ডগুলি বাস্তবায়ন করছে। অর্থাৎ এই নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মকান্ড আরও কয়েক বছর ধরে চলবে। তবে একইসাথে অনেকগুলি নীতির পরিবর্তনের স্বল্পমেয়াদী প্রভাব অবশ্যই দেখা যাবে।

চীনা সরকার চিন্তিত; সেকারণেই তারা তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনছে

চীনা সরকার ইতোমধ্যেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। ৬ই ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘পিপলস ব্যাংক অব চায়না’ তার নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ১৫ই ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি তাদের রিজার্ভ থেকে শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ করে কমিয়ে ফেলতে পারবে। রিজার্ভ হলো ব্যাংকগুলির পুঁজির একটা অংশ যা ব্যাংক সবসময় ধরে রাখতে বাধ্য। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলি নতুন করে অর্থ যোগার করা ছাড়াই আরও অতিরিক্ত ১’শ ৮৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সক্ষম হবে। ‘সিএনএন’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এবছরে দ্বিতীয়বার চীনা বাণিজ্যিক ব্যাংকের রিজার্ভের বাধ্যবাধকতা কমানো হলো। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ‘পলিটব্যুরো’র এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, ২০২২ সালে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার আরও সাহসী সিদ্ধান্ত নেবে। অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাককুয়ারি গ্রুপ’এর অর্থনীতিবিদ ল্যারি হু মত দিচ্ছেন যে, এর আগে কখনোই চীনা নেতৃত্ব ‘স্থিতিশীলতা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’এর মতো কথা বলেনি। এর অর্থ হতে পারে যে, চীনা শীর্ষ নেতৃত্ব সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতার ব্যাপারে যথেষ্টই চিন্তিত।

‘সিএনএন’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, করোনাভাইরাসের দুর্যোগের মাঝেও চীন সরকার অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থেকেছে। ২০২০এর প্রথম ভাগের পর থেকে চীনা সরকার সুদের হার কমায়নি। এমনকি অর্থনীতিতে বড় রকমের কোন প্রণোদনার বন্যাও বইয়ে দেয়নি। তারা শুধুমাত্র করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ব্যবসাগুলিকে কিছু সমর্থন দিয়েছে। ২০২০ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীন প্রায় সকল বড় অর্থনীতিকে ছাপিয়ে যায়। তবে তার অর্থনীতি ২০২১ সালে কিছু সমস্যায় পতিত হয়; যার মাঝে রয়েছে নিজেদের জ্বালানি সংকট, আন্তর্জাতিক শিপিং সাপ্লাইএর বিলম্ব এবং অভ্যন্তরীণ রিয়েল এস্টেট সমস্যা। এছাড়াও দেশটার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি এবং আরও কিছু বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উপর সরকারের চাপপ্রয়োগের ব্যাপারটাও অনেক বিশ্লেষকদের চিন্তিত করেছে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ‘এভারগ্র্যান্ড’ গত ৩রা ডিসেম্বর ঘোষণা দেয় যে, তারা হয়তো তাদের সকল ঋণ ফেরত দিতে পারবে না। এই ঘোষণায় ৬ই ডিসেম্বর হংকংএর পুঁজি বাজারে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য একদিনে ২০ শতাংশ পড়ে যায়।

বিশ্লেষকেরা ভয় পাচ্ছেন যে, ‘এভারগ্র্যান্ড’এর সমস্যা হয়তো চীনের পুরো রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে আক্রান্ত করে ফেলতে পারে। আর চীনের জিডিপির ৩০ শতাংশই রিয়েল এস্টেট সেক্টরের উপর নির্ভরশীল। এতকাল ‘পলিটব্যুরো’র সদস্যরা বলেছেন যে, রিয়েল এস্টেট সেক্টরকে নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং সেব্যাপারে শি জিনপিং নিজেও যথেষ্ট কঠোর ছিলেন। কিন্তু এবছরই প্রথমবারের মতো তারা রিয়েল এস্টেট সেক্টরের ব্যাপারে কঠোর কোন কথা বলেননি। ‘সিটি গ্রুপ’এর বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, ব্যাংকের রিজার্ভের বাধ্যবাধকতা কমানো এবং ‘পলিটব্যুরো’র বিবৃতিতে বাসস্থানের চাহিদাকে সমর্থন দিয়ে যাবার কথায় বোঝা যাচ্ছে যে, সামনের দিনগুলিতে রিয়েল এস্টেট সেক্টরের ব্যাপারে চীনা সরকার আরও নরম সুরেই কথা বলবে।

 
চীনারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকেই এগুচ্ছে এবং স্বল্পমেয়াদী সমস্যাগুলির সমাধান করতে যেয়ে তারা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে না। আর নিজেদের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণের মাঝে রেখে তারা সমস্যাগুলিকে বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতে পারবে।

চীনা অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন; তবে ধ্বস নয়

চীন ভিত্তিক বাজার গবেষণা সংস্থা ‘চায়না বেইজ বুক ইন্টারন্যাশনাল’এর প্রধান নির্বাহী লেল্যান্ড মিলার ‘ব্লুমবার্গ’এর সাথে এক সাক্ষাতে বলছেন যে, তিনি মনে করেননা যে বর্তমানে চীনে যে অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলি হচ্ছে, তা পূর্বে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো কোনো ঘটনার মতো। তার মতে, আজকে চীনে যা ঘটছে, তার প্রভাব আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হবে। এর মূল কারণ হলো সারা বিশ্বের হিসেবটাই এখন পাল্টে গেছে; যা কিনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করবে। ওয়াল স্ট্রীটের পুঁজিপতিরা মনে করছিলেন যে, কোভিডের লকডাউনের পর চীনারা বড় ধরনের অর্থনৈতিক প্রণোদনার ঘোষণা দেবে; কিন্তু সেটার ঘোষণা এখনও আসেনি। কারণ চীনারা মনে করছে যে, ধীরস্থির কম প্রবৃদ্ধিই চীনের অর্থনীতির জন্যে ভালো হবে। মিলার আরও বলছেন যে, চীনের রিয়েল এস্টেট সেক্টর যখন মুষরে পড়ছে, সেখানে অভ্যন্তরীণ বেসরকারি কনজাম্পশন বা খরচ বেড়ে গিয়ে সেটাকে প্রতিস্থাপন করার কোন সম্ভাবনা আসলে নেই। সরকার মানুষের খরচ বৃদ্ধি করতে পারার জন্যে বড় কোন সহায়তা দেয়নি। রাষ্ট্রের সম্পদকে জনগণের হাতে তুলে দেয়া হয়নি। আর বাইরের বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের জন্যে বর্তমানে চীনের আর্থিক সেক্টর ছাড়া অন্য সেক্টরগুলিতে বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত। তবে মিলার মনে করেন না যে, ‘এভারগ্র্যান্ড’এর সমস্যা চীনের অর্থনীতির জন্যে বিশাল কোন সমস্যা বয়ে নিয়ে আসবে। এর কারণ হলো, চীনা অর্থনীতি পশ্চিমা অর্থনীতির মতো মুক্তভাবে চলে না। এখানে সরকার ইচ্ছে করলেই অর্থনৈতিক সমস্যাগুলিকে স্বল্প পরিসরে আটকে দিয়ে বাকি অর্থনীতিকে রক্ষা করতে পারে। চীনা সরকার ‘এভারগ্র্যান্ড’এর ব্যাপারে প্রথমেই সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে চীনা জনগণকে শিক্ষা দিচ্ছে যাতে তারা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের আগে হিসেব করে সিদ্ধান্ত নেয়।

‘কর্নেল ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর এবং মার্কিন থিংকট্যাংক ‘ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশন’এর সিনিয়র ফেলো এসওয়ার প্রসাদ ‘ব্রুকিংস’এর এক আলোচনায় বলেন যে, যেটা বোঝা যাচ্ছে তা হলো, চীনারা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। একইসাথে তারা মধ্যমেয়াদে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে চিন্তাভাবনা না করে কেনাবেচাকে নিরুৎসাহিত করা ছাড়াও পরিবেশের উপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রভাবকে কমাতে চাইছে। এই মধ্যমেয়াদী লক্ষ্যগুলিকে বাস্তবায়ন করতে চীন স্বল্প মেয়াদে কিছু প্রবৃদ্ধিকে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। চীনা সরকার জনগণকে বোঝাতে চাইছে যে, যেসব কোম্পানির বিনিয়োগের উৎস ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিৎ নয়। আর একইসাথে কেউ যদি মনে করে যে, কোন কোম্পানি নিজেদের খারাপ ব্যবস্থাপনার জন্যে দেউলিয়া হয়ে গেলে সরকার তাদেরকে উদ্ধার করবে, সেটা একেবারেই সঠিক নয়। তবে বহু মানুষের পুঁজি রিয়েল এস্টেট সেক্টরে আটকে থাকার ব্যাপারটা চীনা সরকারের চিন্তার কারণ হিসেবে রয়েছে। প্রফেসর প্রসাদ মনে করছেন না যে, রিয়েল এস্টেটের সমস্যাগুলি পুরো আর্থিক সেক্টরকে প্রভাবিত করবে।

 
চীনে 'মার্সিডিস' কোম্পানির কারখানা। চীনের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোকে হিসেবে ধরেই অনেক পশ্চিমা চিন্তাবিদেরা ভবিষ্যৎবাণী করছেন যে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে যাচ্ছে। মূলতঃ এই দৃষ্টিভঙ্গিটা পশ্চিমা পুঁজিপতিদের; যারা চীনে শতশত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে মুনাফার আশায়। তারা চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় শংকিত; যদিও সেই প্রবৃদ্ধি সকল বৃহৎ অর্থনীতি থেকে বেশি। ওয়াল স্ট্রীটের পুঁজিপতিরা শংকায় রয়েছে যে, তাদের ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ বুঝি ডিম দেয়া বন্ধ করে দিচ্ছে!

‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’!

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘দ্যা আটলান্টিক কাউন্সিল’ এবং ‘রোডিয়াম গ্রুপ’এর এক যৌথ প্রতিবেদনে চীনের দুই নৌকায় পা রাখার ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, চীন এতকাল মনে করছিল যে, তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সংকীর্ণ নীতিকে তারা সমান্তরালে রেখেই এগিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে শুরু করে চীনাদের ভবিষ্যৎ জিডিপি পূর্বাভাসই বলে দিচ্ছে যে, চীনারা তাদের এতকালের পথ থেকে সরে আসছে। এই প্রতিবেদনের সাথে পশ্চিমা চিন্তাবিদেরা মোটামুটিভাবে একমত যে, চীনারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকেই এগুচ্ছে এবং স্বল্পমেয়াদী সমস্যাগুলির সমাধান করতে যেয়ে তারা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে না। আর নিজেদের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণের মাঝে রেখে তারা সমস্যাগুলিকে বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতে পারবে।

চীনের অর্থনীতি এখনও পশ্চিমা দেশগুলিতে রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। পশ্চিমা বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনৈতিক মন্দা চীনা পণ্যের বাজারকে চ্যালেঞ্জের মাঝে ফেলছে। চীনা অর্থনীতি পুঁজিবাদের সমস্যাগুলি থেকে মুক্ত নয়। লাগামহীন ঋণের উপর নির্ভরশীল হবার কারণেই চীনের রিয়েল এস্টেট সেক্টর সমস্যায় পতিত; যা পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে অনুসরণ করারই ফলাফলস্বরূপ। পুঁজিবাদী আদর্শকে অনুসরণ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ায় চীনের পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটেছে। আর এই বিপর্যয় এড়াতে গিয়েই মারাত্মক জ্বালানি সংকটে পড়ে চীনা জনগণ অন্ধকারে রাত কাটাচ্ছে। চীনের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোকে হিসেবে ধরেই অনেক পশ্চিমা চিন্তাবিদেরা ভবিষ্যৎবাণী করছেন যে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে যাচ্ছে। মূলতঃ এই দৃষ্টিভঙ্গিটা পশ্চিমা পুঁজিপতিদের; যারা চীনে শতশত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে মুনাফার আশায়। তারা চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় শংকিত; যদিও সেই প্রবৃদ্ধি সকল বৃহৎ অর্থনীতি থেকে বেশি। ওয়াল স্ট্রীটের পুঁজিপতিরা শংকায় রয়েছে যে, তাদের ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ বুঝি ডিম দেয়া বন্ধ করে দিচ্ছে!

3 comments:

  1. Nice analysis.
    বর্তমানে চায়নিজ কোস্ট গার্ড একের পর এক দশ হাজার টনের উপরের জাহাজ কমিশনিং করছে। এটাওত এক ধরনের হাইব্রিড প্রস্তুতি বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে চায়নার মেরিটাইম প্রতিবেশীরা চায়নার হাইব্রিড প্রস্তুতির বিপরীতে কি ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক এই বিষয়টাই কয়েকদিন আগেই আরেক লেখাতে আলোচিত হয়েছে। https://koushol.blogspot.com/2021/11/is-china-winning-without-firing-shots.html

      Delete