Saturday 1 October 2022

অর্থনৈতিক দৈন্যতা জার্মানদেরকে ইউক্রেনের শরণার্থীদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করাচ্ছে

০২রা অক্টোবর ২০২২
 
২০১৬ সাল। জার্মানিতে ডানপন্থীদের মুসলিম শরণার্থী বিরোধী বিক্ষোভ। ইউরোপে মুসলিম এবং ইউক্রেনিয় খ্রিস্টান শরণার্থীদের ব্যাপারে জনমতে ব্যাপক পার্থক্য থাকলেও জ্বালানির ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মাঝে এখন যেকোন শরণার্থীই বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এমনকি মধ্যপন্থায় থাকা রাজনীতিবিদেরাও শরণার্থীদের আটকাতে বলছেন।

গত ২৭শে সেপ্টেম্বর জার্মান ‘ফেডেরাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস’ বলে যে, জার্মানির জনসংখ্যা ২০২২ সালে রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে। এর কারণ ছিল ইউক্রেন থেকে শরণার্থীর ঢল। বর্তমানে দেশটার জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪০ লক্ষের বেশি। শরণার্থীদের কারণে জার্মানির জনসংখ্যা ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে ৮ লক্ষ ৪৩ হাজার বা ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের পুরো বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল মাত্র ৮২ হাজার। যুদ্ধের আগে সরকারি হিসেবে জার্মানিতে ইউক্রেনিয়দের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লক্ষ। যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় ৯ লক্ষ ৭১ হাজার নতুন শরণার্থীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ‘ডয়েচে ভেলে’ বলছে যে, এর আগে ১৯৯২ সালে সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় শরণার্থীদের চাপে জার্মানির জনসংখ্যা ৭ লক্ষ বৃদ্ধি পেয়েছিল। আবার ২০১৫ সালে সিরিয় শরণার্থীর ঢলে দেশটার জনসংখ্যা আরও প্রায় ১০ লক্ষ বৃদ্ধি পায়। আর ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে ইউক্রেন সরকার বেশিরভাগ পুরুষ মানুষকে দেশ ছাড়তে অনুমতি না দেয়ায় জার্মানিতে বেশিরভাগ ইউক্রেনিয় শরণার্থীই হলো নারী ও শিশু। তবে শরণার্থীদের ঢল আসার আগেই জার্মানি শুধু ইউরোপের সবচাইতে ধনীর দেশই ছিল না; সেখানে জন্মহার ছিল অত্যধিক কম এবং অল্প বয়সের মানুষের সংখ্যাও ছিল অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তাই জার্মানির অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে কর্মঠ অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সের মানুষের চাহিদা তৈরি হয়েছিল।

জার্মানিতে শরণার্থীদের নিয়ে সমস্যা বাড়ছে

জার্মানির পশ্চিমের আখেন শহরের ২০ কিঃমিঃ দূরে ছোট একটা এলাকার চিত্র তুলে ধরে ‘ডয়েচে ভেলে’। ৫০ হাজার জনসংখ্যার এই ছোট্ট শহরে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ জন করে শরণার্থী গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কয়েক মাসের মাঝেই সেখানে ৫’শ ৩০ জন শরণার্থী হাজির হয়েছে। এর বাইরেও আরও ২০টা দেশের ৮’শ ৫০ জন শরণার্থীকে সেখানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের খেলাধূলার জিমনেসিয়াম এবং হল রুমে পার্টিশনের ব্যবস্থা করে শরণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একসময় অনেকেই নিজেদের বাড়িতে শরণার্থীদের থাকতে দিলেও এখন কেউ অগ্রগামী হচ্ছে না। কারণ জ্বালানির মূল্য এতটাই বেড়ে গেছে যে, তারা মনে করছে যে, শরণার্থীদের নিলে তাদের দৈনন্দিন খরচ সক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। শরণার্থীদের মাঝে কেউ কেউ কাজ যোগাড় করতে পারলেও অনেকেই এখনও পারেনি। সাহায্যকারীরা খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে। তারা শরণার্থীদের জন্যে ফর্ম পূরণের কাজ ছাড়াও তাদের জন্যে ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করছে; তাদের থাকার জন্যে জায়গা খুঁজে দিচ্ছে; এমনকি তাদের সন্তানদের দেখাশুনা এবং তাদেরকে রান্না করার শিক্ষাও দিচ্ছে।

আখেন শহরের মেয়রও ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন যে, তার শহরে এখন আর কোন শরণার্থী রাখার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সেখানে ৪ হাজার ইউক্রেনিয় শরণার্থী রাখার পর সকল যায়গা ফুরিয়ে গেছে; যার মাঝে ৮টা জিমনেসিয়াম হলও রয়েছে। আখেন শহরে যুদ্ধের আগেই ইউক্রেনিয়দের একটা বড়সড় গ্রুপ বসবাস করতো; এরা অনেকেই শরণার্থীদেরকে তাদের বাড়িতে থাকতে দিয়েছে। ২০১৬ সালে সিরিয়া এবং আফ্রিকা থেকে আসা ১’শ ২০ জন শরণার্থীর জন্যে শহরের খেলার মাঠে অস্থায়ী বাড়ি তৈরি করা হয়। এই বাড়িগুলি পুরোনো হলেও সেখানে একান্তভাবে বসবাসের সুযোগ থাকায় সকলেই তেমন বাড়ি চায়। শহরের খালি বাণিজ্যিক জায়গাগুলিকে ব্যবহার করে শরণার্থীদেরকে জিমনেসিয়াম থেকে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ সকলেই এখন বুঝতে পারছে যে, যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে। শরণার্থীদের সন্তানদের জন্যে শিক্ষা এবং অন্যান্য সেবার ব্যবস্থাও করতে হবে। কিন্তু এই সেবা পেতে এখন শরণার্থীরা সাধারণ জার্মান নাগরিকদের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জন্যে আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ছাড়া কোন গতি নেই; নাহলে শান্তিশৃংখলা ব্যাহত হতে পারে। সাহায্যকারীরা বলছেন যে, বেশিরভাগ বাড়িওয়ালাই শরণার্থীদের কাছে বাড়ি দেয়ার কথা শুনলে ফোন রেখে দিচ্ছে। মোটকথা শরণার্থীদের বাসস্থান যোগাড় করতে এখন অনেক বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে।

‘ইউরোনিউজ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, জার্মানিতে ইউক্রেনিয় এবং রুশদের মাঝে চলছে সংঘর্ষ; যা জার্মানির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে। একদিকে ইউক্রেনিয়রা বার্লিনের রাস্তায় জার্মানির রুশ গ্যাস আমদানি করার নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। অপরদিকে রুশরা ইউক্রেনিয়দেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, জার্মানিতে রুশদের মালিকানায় থাকা ব্যবসা বাণিজ্যেও ভূতুড়ে ফোন আসছে হুমকিসহ। জার্মানিতে রুশদের একটা স্কুলে আগ্নিসন্ত্রাসও হয়েছে বলে বলছে ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’। জার্মান পুলিশ বলছে যে, এপ্রিল মাসে জার্মানিতে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রুশ, ইউক্রেনিয় এবং বেলারুশদের মাঝে ১৭’শ অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে ইউক্রেনিয়দের সংখ্যা ১১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেলেও জার্মানিতে ১৯৯০এর দশক থেকেই প্রায় ৩০ লক্ষ রুশ ভাষাভাষী মানুষ বাস করে।

 
২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২২। চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ইস্যুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। ইউরোপজুড়ে ডানপন্থী রাজনীতির জয়জয়কার দৃশ্যমান হওয়ায় জার্মানির ডানপন্থীরাও এতে আনুপ্রাণিত হয়েছে। নিজেদের দলের কর্মকান্ডের সফলতার চাইতে লিবারাল রাজনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতাই ডানপন্থীদের বেশি সহায়তা দিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, আসন্ন শীতকাল ইউরোপে, তথা জার্মানিতে, পশ্চিমা লিবারাল আদর্শের জন্যে অতি শীতল পরীক্ষা নিয়ে আসতে যাচ্ছে।

শরণার্থীদের ব্যাপারে রাজনীতিবিদেরা তাদের মতামত পাল্টাচ্ছেন

জার্মানির বৃহত্তম বিরোধী দল এঙ্গেলা মার্কেলের মধ্য-ডানপন্থী ‘ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট’ বা ‘সিডিইউ’ দলের প্রধান ফ্রেডরিক মার্জ জার্মান টেলিভিশন ‘বিল্ড টিভি’র সাথে এক সাক্ষাতে বলেন যে, ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীরা জার্মান সরকারের সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থা থেকে সুবিধা ভোগ করতে পর্যটকের মতো আচরণ করছে। ১১ লক্ষের বেশি ইউক্রেনিয় শরণার্থীদের জন্যে শীতকালে ঘর উষ্ণ করার সুবিধা দিলে সেটা জার্মান নাগরিকদের জন্যে অন্যায্য হয়ে যাচ্ছে। কারণ অনেক খেটে খাওয়া জার্মান তাদের জ্বালানি খরচ বহণ করতে পারছে না। ‘পলিটিকো’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, জার্মানির অর্ধেক বাড়িঘরই শীতকালে উষ্ণ রাখার জন্যে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। এই বাড়িগুলির জন্যে জ্বালানি খরচ কমপক্ষে দ্বিগুণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফ্রেডরিক মার্জের কথাগুলির পর দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হলে তিনি এক টুইটার বার্তায় তার মন্তব্যের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মার্জ ক্ষমতাসীন সোশালিস্ট সরকারের শরণার্থী নীতির সমালোচনা করে বলছেন যে, সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট নীতি নেই। যে-ই জার্মানিতে আসতে চাইছে, তাকেই সরকার দেশে ঢুকতে দিচ্ছে। সরকারের উচিৎ কঠোরভাবে নির্দিষ্ট করে দেয়া যে, কত শরণার্থী দেশে ঢুকতে পারবে। ‘পলিটিকো’ বলছে যে, মার্জের কথাগুলি বেশ খানিকটা পপুলিস্ট ঘরানার, যা কিনা ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী ‘অলটারনেটিভ ফর জার্মানি’ বা ‘এএফডি’ দলের কথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, ‘সিডিইউ’এর চিন্তায় বেশ খানিকটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এতদিন ‘সিডিইউ’ ইউক্রেনিয় শরণার্থীদের ব্যাপারে জার্মান সরকারের নীতিকে সমর্থন করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সরকারের ব্যর্থতাকে কাজে লাগাতে ‘সিডিইউ’ হয়তো এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছে না।

‘ইউরোনিউজ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, জার্মানির পূর্ব দিকের ছোট দেশগুলিতেও শরণার্থীদের চাপ অনুভূত হচ্ছে। চেক রিপাবলিক ৪ লক্ষ ৩৯ হাজারের বেশি ইউক্রেনিয় শরণার্থী নিয়েছে; পাশের স্লোভাকিয়া নিয়েছে আরও প্রায় ১ লক্ষ। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে সিরিয়া থেকে শরণার্থী আসা বেড়ে যাওয়ায় তারা তাদের সীমান্তে পাহাড়া বসিয়েছে; যদিও ইইউএর নিয়ম অনুসারে একদেশ থেকে অন্যদেশে যাতায়াতে কোন বাধা থাকার কথা নয়। সমস্যা হলো, যেখানে চেক রিপাবলিকের ৭৫ শতাংশ জনগণ ইউক্রেনের শরণার্থীদের দেশে ঢোকার পক্ষে, সেখানে ২০১৫ সালে সিরিয়া এবং আফ্রিকার মুসলিম শরণার্থীদের দেশে ঢোকার বিরুদ্ধে ছিল ৭০ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ ইউক্রেনের শরণার্থীদেরকে তারা ভাইয়ের মতো দেখলেও মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার মুসলিমদেরকে তারা ভিন্ন চোখে দেখেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ জীবনযাত্রার খরচ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চেক রিপাবলিকের কট্টর বামপন্থী এবং কট্টর ডানপন্থী দলগুলি রাজধানী প্রাগের রাস্তায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করেছে। অনেকেই বলা শুরু করেছে যে, সরকার শরণার্থীদেরকে চেক নাগরিকদের তুলনায় বেশি সুবিধা দিচ্ছে। স্লোভাকিয়াতেও অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে চেক রিপাবলিকে মূদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ; আর স্লোভাকিয়াতে ১৪ শতাংশ; যা কিনা ইউরোপের সর্বোচ্চগুলির মাঝে।

জার্মানিতে ডানপন্থীদের জনসমর্থন বাড়ছে

জার্মানির ‘ডের স্পাইগেল’ পত্রিকা বলছে যে, জার্মানির ১৬টা রাজ্যের মাঝে ১২টা রাজ্য ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছে যে তারা ইউক্রেন থেকে আর কোন শরণার্থী নিতে পারবে না। জার্মান স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলছেন যে, খুব শীঘ্রই সবগুলি রাজ্যই তাদের সক্ষমতার সীমানা অতিক্রম করবে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৮শ’ ৭৫ জন শরণার্থী জার্মানিতে প্রবেশ করেছে। অর্থনৈতিক চাপের মাঝে শরণার্থীদের ভার নিতে হিমসিম খাচ্ছে ইউরোপ; বিশেষ করে জার্মানি। এই সুযোগটাই নিচ্ছে জার্মানির কট্টর ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী দল ‘অলটারনেটিভ ফর জার্মানি’ বা ‘এএফডি’। তবে জার্মানির প্রাক্তন চ্যালেন্সর গেরহার্ড শ্রোডার মনে করছেন যে, ‘এএফডি’র নিজেদের মাঝেই বিভেদ রয়েছে। তিনি ‘ডয়েচে ভেলে’কে বলছেন যে, দেশের পূর্বাঞ্চলে এই দলের সমর্থকেরা রাশিয়াকে সমর্থন করলেও পশ্চিমাঞ্চলের সমর্থকেরা রাশিয়ার পক্ষে নয়। এমতাবস্থায় তারা সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত কোন আন্দোলন করতে পারবে না। তথাপি জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধির ইস্যুতে ‘এএফডি’র সরকার বিরোধী বিক্ষোভে হাজারো মানুষ যোগ দিচ্ছে। গবেষণা সংস্থা ‘আইএনএসএ’র এক জরিপে বলা হচ্ছে যে, ক্ষমতাসীন চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজএর বামপন্থী সোশালিস্ট দলের পক্ষে জনমত ২৬ শতাংশ থেকে কমে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে; শরীক দল ‘এফডিপি’র অর্ধেক কমে গিয়ে হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। অপর শরীক দল ‘গ্রিন পার্টি’ও জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। অপরদিকে ‘এএফডি’র সমর্থন ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশে উঠে গেছে; যা কিনা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। অক্টোবর থেকে রাস্তায় বিক্ষোভে ‘এএফডি’র এজেন্ডা হবে ‘আমাদের দেশ আগে’; যা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’এর সাথে মিলে যায়।

ইউরোপে মুসলিম এবং ইউক্রেনিয় খ্রিস্টান শরণার্থীদের ব্যাপারে জনমতে ব্যাপক পার্থক্য থাকলেও জ্বালানির ব্যাপক মূল্যস্ফীতির মাঝে এখন যেকোন শরণার্থীই বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এমনকি মধ্যপন্থায় থাকা রাজনীতিবিদেরাও শরণার্থীদের আটকাতে বলছেন। জার্মানির বামপন্থী সোশালিস্ট কোয়ালিশন সরকার জনগণকে আশ্বাস দিতে ব্যার্থ হয়েছে যে জার্মানির নীতি সঠিক পথে রয়েছে। অন্ততঃ সিদ্ধান্তগত দিক থেকে অনিশ্চয়তা এবং নীতিগত দিক থেকে স্বাধীনভাবে চলতে না পারাটা জার্মানির জাতীয় গর্বকে আঘাত করছে। এই সুযোগটাই নিতে চাইছে ডানপন্থী গ্রুপগুলি। মধ্যপন্থী বিরোধী দলগুলিও ডানপন্থীদের শ্লোগানকে পুঁজি করাটাকেই সঠিক বলে মনে করছে। ইউরোপজুড়ে ডানপন্থী রাজনীতির জয়জয়কার দৃশ্যমান হওয়ায় জার্মানির ডানপন্থীরাও এতে আনুপ্রাণিত হয়েছে। নিজেদের দলের কর্মকান্ডের সফলতার চাইতে লিবারাল রাজনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতাই ডানপন্থীদের বেশি সহায়তা দিয়েছে। ২০২০ সালে কট্টর ডানপন্থী দল ‘এএফডি’র মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লুথ বলেছিলেন যে, জার্মানির অবস্থা যত খারাপ হবে, ‘এএফডি’র অবস্থান তত শক্ত হবে। বোঝাই যাচ্ছে যে, আসন্ন শীতকাল ইউরোপে, তথা জার্মানিতে, পশ্চিমা লিবারাল আদর্শের জন্যে অতি শীতল পরীক্ষা নিয়ে আসতে যাচ্ছে।

No comments:

Post a Comment