Saturday 22 October 2022

ব্রিটিশ রাজনীতি সংকটের মাঝে কেন?

২২শে অক্টোবর ২০২২
 
ব্রিটেনের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। পশ্চিমা আদর্শকে ফেরি করা ব্রিটেনের রাজনৈতিক সংকটের কারণগুলির মাঝে রয়েছে রাজনৈতিক মেরুকরণ, জনপ্রিয়তা-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, সমস্যাবহুল রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। এই সমস্যাগুলির কারণে অনেকেই দলীয় এবং ব্যক্তিস্বার্থকে রাষ্ট্রের আগে স্থান দিচ্ছে।

রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর খবরটাও এখন অনেক পুরোনো বলে মনে হচ্ছে। ক্ষমতা নেয়ার মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের পদত্যাগের পর অনেকেই ব্রিটিশ রাজনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন করছেন। মাত্র ছয় বছরের মাঝে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী; এবং ২০১৬ সালে ব্রেক্সিটের পর থেকে লিজ ট্রাস হলেন পদত্যাগ করা চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতায় যাবার সময় ট্রাস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি বাজেট না কমিয়েই কর্পোরেট এবং ধনীদের উপর থেকে কর কমাবেন। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি এবং জ্বালানি সংকটের মাঝে ট্রাসের নীতিগুলি ব্রিটেনের আর্থিক বাজারে ধ্বসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মূল্য ইতিহাসের সর্বনিম্ন হয়ে যায় এবং ব্রিটিশ সরকারের ঋণ নেবার সক্ষমতাও কমে যায়। ফলশ্রুতিতে ট্রাস তার দলের সদস্যদের আস্থা হারিয়ে ফেলেন। ‘ব্লুমবার্গ’এর প্রধান বার্তা সম্পাদক জন মিকলেথওয়েইট এক আলোচনায় বলছেন যে, ট্রাস নিজেই খেলা শুরু করে কিছুক্ষণ পরেই নিজ গোলপোস্টে বল ঢুকিয়ে আত্মঘাতী গোল করেন; যেটার কোন প্রয়োজনই ছিল না। তবে ব্রিটেনে যা ঘটে, তা বাকি দুনিয়াতে প্রতিফলিত হবার একটা ইতিহাস রয়েছে।

‘এনবিসি’ ব্যাখ্যা দিয়ে বলছে যে, ট্রাস কর্পোরেট কর কমাবার মাধ্যমে ব্রিটেনে বিনিয়োগ বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আর্থিক বাজারের প্রশ্ন - ব্রিটিশ সরকার তার ঋণগুলিকে কিভাবে পরিশোধ করবে? ট্রাস তার অর্থমন্ত্রী কোয়ার্টেংকে পদচ্যুত করে জেরেমি হান্টকে তার স্থলাভিষিক্ত করলে হান্ট নীতিকে উল্টে দেন। এরপর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ট্রাস ক্ষমাও প্রার্থনা করেন। এছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান পদত্যাগ করার পরে ট্রাস তার সমালোচক গ্র্যান্ট শ্যাপসকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেন; যা প্রমাণ করে যে, ট্রাসের কর্তৃত্ব পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।

লন্ডনের ‘কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর টিম বেইল ‘এনপিআর’কে বলছেন যে, ট্রাস এবং তার আগের বরিস জনসনের ব্যর্থতার মূলে রয়েছে তাদের অবাস্তব প্রতিশ্রুতি। জনসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলন যে, তিনি অর্থনৈতিক দুর্দশা ছাড়াই ব্রেক্সিটের বাস্তবায়ন করবেন। অপরদিকে ট্রাস বাজেটের অর্থায়ন নিশ্চিত না করেই কর কর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। লন্ডনের থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘চেঞ্জিং ইউরোপ’এর ডিরেক্টর আনান্দ মেনন ‘এনবিসি’কে বলছেন যে, কনজারভেটিভ পার্টি এবং বাস্তবতা পরস্পরের বন্ধু নয়।

‘লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস’এর প্রফেসর প্যাট্রিক ডানলীভি ‘এনপিআর’কে বলছেন যে, ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থারও সমস্যা রয়েছে। যেমন প্রধানমন্ত্রী কোন জবাবদিহিতা ছাড়াই যে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করতে পারেন। যেমন প্রায় অপরিচিত কোয়াসি কোয়ার্টেংকে ট্রাস অর্থমন্ত্রী নিয়োগ দেন। এছাড়াও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত করেন পার্টির নেতারা, পার্লামেন্ট সদস্যরা নয়। একারণে তাদের নির্বাচিত নেতারা সাধারণতঃ শ্বেতাঙ্গ, বয়সে প্রবীণ এবং সাধারণের চাইতে বেশি রক্ষণশীল হয়।

২০১৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জেমস ক্যামেরন কনজারভেটিভ পার্টির মাঝে দ্বন্দ্ব নিরসনে ইইউ থেকে বের হয়ে যাবার জন্যে গণভোটের আয়োজন করেন। এর ফলে পুরো রাষ্ট্রে মেরুকরণ শুরু হয়ে যায়। তখন অনেকেই বলেছিলেন যে, ব্রেক্সিটের কারণে ব্রিটেন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যায় পড়বে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিটের ব্যাপারে যথেষ্ট সোচ্চার থাকলেও এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, কনজারভেটিভ পার্টির প্রকৃতপক্ষে ব্রেক্সিটের ব্যাপারে কোন পরিকল্পনাই ছিল না। কয়েক দশক ধরে বাণিজ্যের জন্যে ইউরোপের উপর ব্রিটেনের নির্ভরশীলতা একদিনে মুছে ফেলা সম্ভব ছিল না।

ক্যামেরনের পদত্যাগের পর থেরেসা মে আগাম নির্বাচন ডাকেন, যার মাধ্যমে তার দল পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ হারায়। পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টির কট্টরপন্থী সদস্যদের প্রতিরোধে ব্রেক্সিটের সুরাহা করতে না পেরে থেরেসা মে পদত্যাগ করেন। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ২০১৯ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টিকে বড় বিজয় এনে দেন এবং প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ব্রেক্সিট সম্পন্ন করেন। কিন্তু করোনাভাইরাস বাধা হয়ে দাঁড়ায় জনসনের সামনে। তার সরকারের বিরুদ্ধে মহামারি নিয়ন্ত্রণে ভুল নীতি প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। ‘এনপিআর’ বলছে যে, জনসনকে ডুবিয়ে দেয় তার মিথ্যা কথার ঝুড়ি। গোটা ব্রিটেনের মানুষকে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে গণজমায়েত এড়িয়ে চলতে বলা হলেও জনসন তার লোকজন নিয়ে একাধিক পার্টির আয়োজন করেছিলেন।

ব্রিটেনের রাজনৈতিক কলহ তাদের প্রধান আন্তর্জাতিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘দ্যা আটলান্টিক কাউন্সিল’এর বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, এই ঘটনাগুলি ব্রিটেনের জন্যে যেমন লজ্জাজনক, গণতন্ত্রের জন্যেও তেমনি। ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেশটাকে তার আন্তর্জাতিক বন্ধুদের কাছে অগুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে। তারা কেউ কেউ বলছেন যে, সামনের দিনগুলিতে ব্রিটেনে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থান হতে পারে; যা ব্রিটেনের মাঝে বিভিন্ন স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি তুলতে পারে।

২৮শে অক্টোবর কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। পার্টির নেতারাই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবে; জনগণের ভোট নয়। এর আগে থেরেসা মেএর মতো লিজ ট্রাসকেও নির্বাচন জিতে প্রধানমন্ত্রী হতে হয়নি। ‘দ্যা গার্ডিয়ান’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ২০২৫ সালের জানুয়ারির আগে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন ডাকতে বাধ্য নন। তবে বিরোধী দলগুলি এর আগেই নির্বাচন চাইছে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এগিয়ে রয়েছেন। তার পিছনে রয়েছেন আরেক মন্ত্রী পেনি মরডন্ট। তবে আটজন কনজারভেটিভ এমপি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন যে, তারা বরিস জনসনকেই আবার প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান; যদিও দলের অনেকেই এর বিপক্ষে।

ব্রিটেনের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। পশ্চিমা আদর্শকে ফেরি করা ব্রিটেনের রাজনৈতিক কলহ নিয়ে যখন বিশ্বব্যাপী সমালোচনা হচ্ছে, তখন কনসালট্যান্সি কোম্পানি ‘এরগো’র বিশ্লেষক এড প্রাইস ‘ব্লুমবার্গ’কে বলছেন যে, ব্রিটেনের গণতন্ত্র কাজ করছে বলেই অযোগ্য লোকটা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, লিজ ট্রাসের ক্ষমতাচ্যুত হবার পিছনে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বাজার অর্থনীতি। অপরদিকে ‘ব্লুমবার্গ’এর কলামিস্ট জন অথার্স মনে করছেন যে, ব্রিটেনের রাজনৈতিক সংকটের কারণে অর্থনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হবে। আর সরকারকেও নতুন করে তৈরি করা সমস্যা নিরসণে আরও ঋণ করতে হবে। ‘এনপিআর’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, ব্রিটেনের রাজনৈতিক সংকট যথেষ্ট গভীর; যার কারণগুলির মাঝে রয়েছে রাজনৈতিক মেরুকরণ, জনপ্রিয়তা-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, সমস্যাবহুল রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। এই সমস্যাগুলির কারণে অনেকেই দলীয় এবং ব্যক্তিস্বার্থকে রাষ্ট্রের আগে স্থান দিচ্ছে।

6 comments:

  1. আস সালামু আলাইকুম।
    রাজনৈতিক মেরুকরণ, জনপ্রিয়তা-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, সমস্যাবহুল রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং যোগ্য নেতৃত্বের অভাব।" এই কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে বুজতে সুবিধা হত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওয়াআলাইকুমসালাম!

      রাজনৈতিক মেরুকরণ হলো কোনো একটা বা একাধিক বিষয়ে জাতীয় ঐক্য না থাকা এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলির সেই বিষয়গুলিকে ধরে রেখে বিরোধীপক্ষকে মারাত্মকভাবে প্রতিরোধ করা। প্রত্যেক দলই মনে করতে থাকে যে, তারা সঠিক। ব্রিটেনের জন্যে এটা ঘটেছে ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে। যারা ব্রেক্সিটের পক্ষে ছিল, তারা বিপক্ষে থাকা লোকদেরকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করেছে। আর অনেকেই ব্রেক্সিটের জন্যে নিজেদের স্বার্থরক্ষা হয়নি বলে দাবি করেছে। এর মাঝে রয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের মতো অঞ্চলগুলি; যেগুলি এই মুহুর্তে ব্রিটেনের অংশ। এই অঞ্চলগুলির অনেক মানুষই মনে করতে থাকে যে, ব্রিটেনের সাথে থাকলে তাদের স্বার্থ রক্ষিত হবে না। এটাও একটা রাজনৈতিক মেরুকরণ। নিজেদেরকে অপরের তুলনায় ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করার সাথে তুলনা দেয়া হয়।

      জনপ্রিয়তা-কেন্দ্রিকতা হলো জনগণের ভোট আদায় করার জন্যে জনগণ যা শুনতে পছন্দ করে, তা বলতে থাকা। কথাগুলি রাষ্ট্রের জন্যে ভালো না হলেও অনেকেই জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে সেগুলি বলছে। এটা অনেকটা জাতীয়বাদী চিন্তা। মানুষকে জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত করে ভোট আদায় করে নেয়া।

      সমস্যাবহুল রাজনৈতিক ব্যবস্থার কিছুটা মূল লেখার মাঝেই রয়েছে। ব্রিটেনের জনগণ ভোটের মাধ্যমে দল বাছাই করলেও কে প্রধানমন্ত্রী হবে, তা নির্বাচন করতে পারে না। এর ফলে একজন প্রধানমন্ত্রী তার কাজে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করলেও নতুন করে নির্বাচন দিতে হয় না। রাজনৈতিক নেতাদের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রেও মারাত্মক রকমের ঘাটতি রয়েছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাঝেই।

      নেতৃত্বের অভাব যে রয়েছে, তা লেখার মাঝেই পরিষ্কার হয়ে যাবার কথা। ছয় বছরে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী সেই বার্তাটাই দেয়।

      Delete
  2. ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক বৃটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন টোরি পার্টির প্রধান নিযুক্ত হয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদী বৃটেনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এরকম ঘটনা যেখানে একজন অশেতাঙ্গ এবং সাবেক কলোনী থেকে উঠে আসা একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। এটি বিশ্বে বৃটেনের সাম্রাজ্যবাদী ভাবমূর্তি কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করবে? বৃটেনের চরম বর্ণবাদী লর্ডরা বিষয়টিকে কীভাবে মেনে নিবে? তার গঠন করা সরকার কি বর্তমান সমস্যাগুলো মোকাবিলা করে টিকে থাকতে পারবে? আপনার মতামত জানতে চাই। ধন্যবাদ।।

    ReplyDelete
    Replies
    1. গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

      ঋষি সুনাককে নির্বাচিত করেছে লর্ডরাই। শ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিজ ট্রাস কতটা উপযুক্ত ছিল, তা তার ৪৪ দিনের কর্মকান্ডেই পরিষ্কার। ট্রাসের দুর্যোগের কারণেই এখন সকলে ঋষিকে মেনে নিতে বাধ্য হবে। ঋষি সুনানককে প্রথমে নিয়ে আসলে অনেকেই পছন্দ করতো না। এবং প্রকৃতপক্ষে অনেকেই পছন্দ করেনি। অনেকেই ঋষি সুনাককে ভোট না দিয়ে লিজ ট্রাসকে ভোট দিয়েছিল; যদিও ঋষি সুনাক ছিল অধিকতর যোগ্য। এখন কেউ ঋষি সুনাকের প্রধানমন্ত্রী হবার ব্যাপারে বাধা দিচ্ছে না। অর্থাৎ এটা সেই লর্ডদের মাঝে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটারই একটা ইচ্ছার প্রতিফলন।

      ঋষি সুনাককে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অনেকেই নিজেদের লোক বলে মনে করা শুরু করেছে। অর্থাৎ ব্রিটেনের বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধিতে ঋষির চেহারাটাকে ব্রিটেন কাজে লাগাতে পারবে। আর মার্কিন ডেমোক্র্যাটরাও ঋষি সুনাককে পছন্দ করছে; যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্রিটেনের সম্পর্ক আরও ভালো হতে পারে। কিন্তু এর সবই নির্ভর করছে ঋষি সুনাকের সরকার কতদিন টেকে সেটার উপরে।

      ব্রিটেনের অর্থনৈতিক অবস্থা করুন। ঋষি সুনাকের হাতে কোন জাদু নেই যে, হঠাত করেই ব্রিটেনের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ব্রিটেনের অর্থনীতি পুরোপুরিভাবে আমদানি-নির্ভর। আর সেই আমদানির বেশিরভাগই আসে ইউরোপ থেকে; যার থেকে ব্রিটেন জোর করে আলাদা হয়ে গেছে। এখন ইউরোপের সকল জিনিসই বেশি দামি হয়ে গেছে। এর উপরে জ্বালানির সমস্যা যোগ হয়েছে। যখন ব্রিটেনের বাজার অর্থনীতিতে কথা ছড়িয়ে পড়ে যে, সরকার আমদানির জন্যে পেমেন্ট দিতে পারবে না, তখনই ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্য পড়ে যায়। এটা বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার হয়েছে। পাউন্ডের মূল্য পড়ে গেলে ব্রিটেনের অর্থনীতির বারোটা বেজে যায়। এখন যেমনটা হচ্ছে। ব্রিটেনকে হয় আমদানি কমাতে হবে অথবা ব্রিটিশ পাউন্ডকে শক্তিশালী করতে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড ঋণ করে মুদ্রা বাজারে ঢালতে হবে। কোনটাই সুখকর হবে না। আর যদি ঋষি সুনাক রাষ্ট্রের খরচ ব্যবস্থাপনার জন্যে কর বৃদ্ধি করেন, তাহলে কনজারভেটিভ দলের ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে; বিরোধীরা আগেভাগেই নির্বাচন দাবি করতে থাকবে।

      Delete
  3. ব্রিটিশ রাজনীতি আর বেহাল দশা কি, তাদের আদর্শিক চিন্তার দৈন্যতা প্রকাশ করে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. বেশ কিছুটা তো বটেই। রাজনৈতিক মেরুকরণ ব্রিটেনে জাতীয়তাবাদকে উস্কে দিচ্ছে; যার ফলে ব্রিটেনের ভৌগোলিক অখন্ডতা প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে। আর যদি স্কটল্যান্ড ব্রিটেন থেকে আলাদা হয়ে যায়, তাহলে ব্রিটেন বলেই কিছু থাকবে না; এটা হয়ে যাবে ইংল্যান্ড; যা ১৭০৭ সালের আগে ছিল।

      ব্রিটেন তার আদর্শকে দুনিয়াকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে ব্রিটেন ঘোষিত হবার পর। অর্থাৎ স্কটল্যান্ড যখন ইংল্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়, তার পরে। স্কটল্যান্ড ব্রিটেন থেকে বের হয়ে গেলে ব্রিটেনের বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক প্রভাব কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এধরণের কোন বিচ্ছেদের চাইতে বড় কোন ধ্বস ব্রিটেনের ভাগ্যে আসতে পারে না।

      Delete