Monday 3 October 2022

ষষ্ঠ জেনারেশনের ফাইটার বিমান … প্রতিযোগিতার মাঝেই প্রতিযোগিতা

০৪ঠা অক্টোবর ২০২২
 
মার্কিনীরা মনে করছে না যে তারা প্রযুক্তিতে চীনাদের চাইতে পিছিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের প্রযুক্তিগুলি কে কার আগে কাজে লাগাতে পারে, সেই সক্ষমতা নিয়েই প্রতিযোগিতা হচ্ছে। মার্কিনীরা প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকতে যেই ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, চীনারা ততটা নয়। এটা দুই দেশের চিন্তাগত পার্থক্যের কারণেই।

‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সামরিক সক্ষমতা বিষয়ে যে জায়গাগুলিতে প্রযুক্তিগত উতকর্ষতা নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে, তার মাঝে একটা হলো আকাশ প্রযুক্তি। বর্তমানে আকাশ প্রযুক্তির সর্বশেষ হলো পঞ্চম জেনারেশনের ফাইটার বিমান। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘এফ-২২’ এবং ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমানকে ইতোমধ্যেই বিশ্বের সেরা ফাইটার বিমান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীন উৎপাদন করছে ‘জে-২০’ এবং রাশিয়া উৎপাদন করছে ‘সুখোই-৫৭’। এর বাইরে চীনাদের একাধিক প্রকল্প রয়েছে; তুরস্কও তাদের নিজস্ব পঞ্চম জেনারেশনের ফাইটার বিমান ডেভেলপ করছে। এখন ইতোমধ্যেই এর পরের জেনারেশন, বা ষষ্ঠ জেনারেশনের ফাইটার জেট নিয়ে কথা শুরু হয়ে গেছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মার্কিন বিমান বাহিনীর ‘এয়ার কমব্যাট কমান্ড’এর প্রধান জেনারেল মার্ক কেলি বলেন যে, তিনি জানেন না যে, চীনে এই মুহুর্তে কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেসের প্রস্তুতি ছাড়া আর কি হচ্ছে। তবে নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে, কোন বিষয়টা নিয়ে চীনে কোন কথাই হচ্ছে না। চীনে এই মুহুর্তে ষষ্ঠ জেনারেশনের ফাইটার বিমানের প্রয়োজন নিয়ে কোন আলোচনাই নেই। তবে তিনি বলেন যে, তিনি নিশ্চিত যে, চীনারা এই বিষয়ে সঠিক পথেই রয়েছে। একারণে তিনি মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ প্রতিযোগিদের চাইতে কমপক্ষে এক মাস আগে হলেও ষষ্ঠ জেনারেশনের ফাইটার তৈরি করা।

ফাইটার বিমানের ‘জেনারেশন’এর অর্থ কি?

ষষ্ঠ জেনারেশনের বিমান বলতে আসলে কি বোঝায়? আগে বুঝতে হবে যে, এই ‘জেনারেশন’ ব্যাপারটা আসলে কি। মার্কিন বিমান বাহিনীর এক ডকুমেন্টে লেঃ জেনারেল হক কারলাইল একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন যে, এককটা জেনারেশনের ফাইটার বিমান বলতে কি বোঝানো হচ্ছে। ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৫৫ সালের মাঝে ডেভেলপ করা প্রথম জেট ফাইটারগুলিকে (এফ-৮৬, মিগ-১৫) বলা হচ্ছে প্রথম জেনারেশনের ফাইটার। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬০ সালের মাঝে ডেভেলপ করা দ্বিতীয় জেনারেশনের ফাইটারগুলিতে (মিগ-২১, এফ-১০৬) নতুন তিনটা প্রযুক্তি বা সক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত হয়; এগুলি হলো, সুপারসনিক গতি, বা শব্দের চাইতে বেশি দ্রুততায় ওড়ার সক্ষমতা; বিমানের নিজস্ব রাডার; এবং প্রথম গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র। তৃতীয় জেনারেশনের ফাইটারগুলি (এফ-৪ই, মিগ-২৩, মিরাজ এফ-১) মোটামুটিভাবে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০এর মাঝে ডেভেলপ করা। এগুলিতে প্রথম মাল্টি-রোল কনসেপ্ট অন্তর্ভুক্ত হয়; অর্থাৎ একটা ডিজাইনের বিমানই অনেকগুলি মিশন সফলভাবে সম্পাদন করতে পারবে। একইসাথে বিমানগুলিতে নতুন ধরণের অনেক ইলেকট্রনিক্স অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রথমবারের মতো নিখুঁতভাবে টার্গেটে আঘাত হানার মতো অস্ত্র বহণের ব্যবস্থা করা হয়।

১৯৭০ থেকে ২০০০ সালের মাঝে ডেভেলপ করা বিমানগুলিকে বলা হচ্ছে চতুর্থ জেনারেশনের ফাইটার বিমান। ‘এফ-১৫’, ‘এফ-১৬’, ‘এফ-১৪’, ‘এফ/এ-১৮’, ‘মিগ-২৯’, ‘সুখোই-২৭’, ‘মিরাজ-২০০০’, ‘টর্নেডো’, ‘রাফাল’, ‘গ্রিপেন’, ’ইউরোফাইটার টাইফুন’সহ আরও অনেক বিমান এই ক্যাটাগরিতে পড়েছে। এগুলিতে ইলেকট্রনিক্সের আরও উন্নয়ন করা হয় এবং নিখুঁতভাবে টার্গেটে আঘাত হানার ব্যাপারটাকে আরও পাকাপোক্ত করা হয়। একইসাথে আকাশে শত্রুপক্ষের বিমানের সাথে ডগফাইটে সফলতা আনার জন্যে ডিজাইনে অনেক পরিবর্তন আসে। রাডারের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি করা হয় এবং প্রথমবারের মতো রাডারে ধরা না পড়া ‘স্টেলথ’ যুদ্ধবিমান (এফ-১১৭) তৈরি করা হয়। ২০০০ সালের পরে ডেভেলপ করা পঞ্চম জেনারেশনের যুদ্ধবিমানের মাঝে ইলেকট্রনিক্স এবং সেন্সরের পুরোপুরিভাবে সমন্বয় করা হয়। অর্থাৎ বিমান যেসব তথ্য সংগ্রহ করবে, সেগুলি সমন্বয় করে একত্রে ডিসপ্লে করা হয়। স্টেলথ প্রযুক্তির আরও অনেক উন্নয়ন করা হয়; যাতে করে শত্রুপক্ষের বিমানের চোখে পড়ার আগেই টার্গেটে হামলা করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও এর মাঝে নেটওয়ার্কভিত্তিক যুদ্ধ করার সক্ষমতা দেয়া হয়; যার অর্থ হলো, এই বিমানগুলি নিজ পক্ষের বিভিন্ন ইউনিট, তা বিমান হোক, বা ভূমি বা পানিতেই হোক, সেগুলির সংগ্রহ করা তথ্যকে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সংগ্রহ করবে এবং তা প্রসেস করে যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে; এমনকি অন্যান্য বিমান বা অন্যান্য ইউনিটকে কমান্ড দিতে বা নিয়ন্ত্রণও করতে পারবে। মোটকথা এই বিমানগুলি অন্যান্য বিমান বা যেকোন ইউনিটের সক্ষমতাকে ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে। তবে এক্ষেত্রে সক্ষমতা অনেকটাই নির্ভর করবে নেটওয়ার্কের সক্ষমতা এবং বিভিন্ন বাহিনীর মাঝে তথ্য আদানপ্রদানের সংস্কৃতির উপরে।

 
ষষ্ঠ জেনারেশনের ফাইটার বিমানের আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কিনা, তা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন। ‘এফ-৩৫’ বিমানের যে সক্ষমতা রয়েছে, সেটাকে পেরিয়ে আরও সক্ষমতার কতটুকু প্রয়োজন রয়েছে? ষষ্ঠ জেনারেশনের ফাইটার বিমানের জন্যে যেসকল প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি পঞ্চম জেনারেশনের উপরে সক্ষমতাকে আসলে কতটুকু বৃদ্ধি করবে? অথচ এগুলি ডেভেলপ করতে এবং তৈরি করতে বিশাল অর্থ গুণতে হবে। 

ষষ্ঠ জেনারেশন বলতে আসলে কি বোঝানো হচ্ছে?

‘ব্রেকিং ডিফেন্স’ বলছে যে, যেসব দেশ ষষ্ঠ জেনারেশনের ফাইটার নিয়ে কাজ করছে, তারা তাদের প্রকল্পকে গোপন রেখেছে। আর এর মাঝে চীনারা তাদের এই প্রকল্পকে সবচাইতে বেশি গোপন রেখেছে। ২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে চীনের ‘চেংডু এরোস্পেস কর্পোরেশন’এর প্রধান ডিজাইনার ওয়াং হাইফেং বলেন যে, চীনারা পরবর্তী জেনারেশনের যুদ্ধবিমানের জন্যে চিন্তাভাবনা করছে; যাতে করে নতুন ধরণের এই বিমান ২০৩৫ নাগাদ চীনা বিমান বাহিনীতে সার্ভিসে আসতে পারে। তিনি চীনাদের ষষ্ঠ জেনারেশন প্রকল্প নিয়ে কিছু না বললেও মার্কিনীদের প্রকল্পে কি কি থাকতে পারে, তার একটা ধারণা দিয়েছেন; এর মাঝে থাকবে ড্রোনের সাথে একটা গ্রুপে কাজ করতে পারা; আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা; স্টেলথ সক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করা; এবং বিমানের সেন্সরগুলি এমন হবে, যা কিনা কোন নির্দিষ্ট দিক নয়, বরং সকল দিক থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। এছাড়াও লেজার অস্ত্রের সংযোজন, এবং ‘এডাপটিভ ইঞ্জিন’এর ব্যবহার হতে পারে সেই বিমানে।

মার্কিন বিমান বাহিনীর এই প্রকল্পের নাম হলো ‘নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিন্যান্স’ বা ‘এনজিএডি’ বা ‘এনগ্যাড’। এটা অত্যন্ত জটিল একটা প্রকল্প; কারণ এর মাঝে রয়েছে একটা পাইলট চালিত বিমানের নকশা করা; নতুন ধরণের অস্ত্র ডেভেলপ করা; এমনকি নতুন ধরণের কয়েক প্রকারের ড্রোনেরও ডিজাইন করা। বিমান বাহিনীর সচিব ফ্রাঙ্ক কেনডাল বলছেন যে, এরকম একেকটা বিমানের খরচ কয়েক’শ মিলিয়ন ডলার হয়ে যেতে পারে। যদিও কেনডাল বলছেন যে, মার্কিনীরা এই দশকের মাঝেই এই বিমানের ডেভেলপমেন্ট শেষ করতে পারবে, তথাপি যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রকল্পই দেরিতে শেষ হওয়ায় কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না যে, এত জটিল একটা প্রকল্প ঠিক সময়মতো শেষ হবে। কাজেই অনেকেই ধারণা করছেন যে, এই দেরির সুবাদেই চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত দূরত্ব কমে আসবে।

জাতীয় নিরাপত্তা ম্যাগাজিন ‘নাইনটিন ফোরটিফাইভ’এর এক লেখায় ব্রেন্ট ইস্টউড প্রশ্ন করছেন যে, ষষ্ঠ জেনারেশনের ফাইটার বিমানের আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কিনা। ‘এফ-৩৫’ বিমানের যে সক্ষমতা রয়েছে, সেটাকে পেরিয়ে আরও সক্ষমতার কতটুকু প্রয়োজন রয়েছে? চীনের সর্বোচ্চ প্রযুক্তির বিমানগুলি আসলে কতটুকু সক্ষম, সেটা সম্পর্কে তো কেউ এখনও তেমন জানেই না। তাহলে কেন বলা হচ্ছে যে, আরও সক্ষম নতুন প্রজন্মের বিমানের প্রয়োজন? আর ষষ্ঠ জেনারেশনের ফাইটার বিমানের জন্যে যেসকল প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি পঞ্চম জেনারেশনের উপরে সক্ষমতাকে আসলে কতটুকু বৃদ্ধি করবে? অথচ এগুলি ডেভেলপ করতে এবং তৈরি করতে বিশাল অর্থ গুণতে হবে। যদি ‘এফ-৩৫’ বিমান দিয়েই আকাশের নিয়ন্ত্রণ নেয়া সম্ভব হয়, তাহলে ষষ্ঠ জেনারেশনের বিমান ডেভেলপ না করে সেই অর্থ দিয়ে আরও বেশি ‘এফ-৩৫’ কেনা প্রয়োজন।

 
চীনারা খুব সম্ভবতঃ তাদের পঞ্চম জেনারেশনের 'জে-২০' বিমানের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই ষষ্ঠ জেনারেশনের বিমান তৈরি করতে চাইছে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে মেনে নিয়ে তারা কম ঝুঁকিপূর্ণ পথে এগুচ্ছে; যেপথে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ধীরে ধীরে সক্ষমতার ব্যবধান কমাতে পারবে। তাড়াহুড়া নয়, বরং চীনের ধীরে চলার চিন্তাটাই মার্কিনীদের সাথে চীনাদের মূল পার্থক্য। মার্কিনীরা এখন ভবিষ্যতের বিভিন্ন মাইলস্টোনের কথা বলছে। এই মাইলস্টোনগুলিই বলে দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে মাইলস্টোনগুলির আগেই সংঘাতের ছুতো খুঁজছে।

মার্কিনীদের সাথে চীনাদের চিন্তাগত পার্থক্য

জেনারেল মার্ক কেলি বলছেন যে, চীনারা মূলতঃ মার্কিনীদেরকেই অনুসরণ করছে। কারণ স্টেলথ সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করা, কম্পিউটারের প্রসেসিং সক্ষমতা ও তথ্য সংগ্রহ করার সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করা, এবং নতুন নতুন সিস্টেমকে দ্রুত বিমানের সাথে যুক্ত করে ‘রিপ্রোগ্রাম’ করে নিতে পারার সক্ষমতা – এগুলি মূলতঃ মার্কিনী চিন্তা। যদি এখানে কোন ভিন্নতা থাকে, তা খুবই সূক্ষ্ম। যেমন, চীনারা খুব ধীরে ধীরে একটা ফাইটার বিমান থেকে অন্য ফাইটার বিমান ডেভেলপ করে; যেমনটা তারা করেছিল রুশ ‘সুখোই-২৭’ ও ‘সুখোই-৩০’ বিমান থেকে চীনাদের নিজস্ব ‘জে-১৬’ বিমান ডেভেলপ করার ক্ষেত্রে। অপরদিকে জাতি হিসেবে মার্কিনীরা নতুন কিছু ডেভেলপ করতে গিয়ে বড় আকারের লাফ দেয়। সিঁড়ির বর্তমান ধাপ ছেড়ে দিয়ে পরের ধাপ পুরোপুরি এড়িয়ে সামনের ধাপ ধরার জন্যে সেই লাফ দেয় মার্কিনীরা। চীনারা এধরণের কাজ করে না; তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে বারংবার চেষ্টা করতে থাকে। এর মাঝে দূরের ধাপটা ধরতে গিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে তারা কাছাকাছি ধাপটা ধরে ফেলতে পারে।

চীনারা প্রযুক্তির দিক থেকে কখনোই তাড়াহুড়া করেনি। জেনারেল কেলি বলছেন যে, চীনারা সর্বদাই সহজ পথটাকেই বেছে নিয়েছে। প্রতিরক্ষা ম্যাগাজিন ‘দ্যা ওয়ার জোন’এর এক লেখায় থমাস নেডউইক বলছেন যে, চীনারা শুধু রুশ ‘সুখোই-২৭’ থেকেই শেখেনি। তারা রুশ ‘সুখোই-৩৫’ বিমান কিনে সেটা নিয়ে গবেষণা করেছে। এর ফলে পঞ্চম জেনারেশনের বিমানের ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম, ‘থ্রাস্ট ভেকটরিং ইঞ্জিন’ এবং অস্ত্রগুলি ডেভেলপ করতে পেরেছে। এভাবেই তারা হয়তো ‘জে-২০’ বিমানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ষষ্ঠ জেনারেশনের বিমান ডেভেলপ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র কি আসলেই প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে?

যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, মার্কিনীরা মনে করছে না যে তারা প্রযুক্তিতে চীনাদের চাইতে পিছিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের প্রযুক্তিগুলি কে কার আগে কাজে লাগাতে পারে, সেই সক্ষমতা নিয়েই প্রতিযোগিতা হচ্ছে। মার্কিনীরা প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকতে যেই ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, চীনারা ততটা নয়। এটা দুই দেশের চিন্তাগত পার্থক্যের কারণেই। মার্কিন বিমান বাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান জেনারেল কেনেথ উইলসবাক গত সেপ্টেম্বরে সাংবাদিকদের সামনে চীনাদের পঞ্চম জেনারেশনের যুদ্ধবিমান ‘জে-২০’ নিয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন যে, এটা চীনাদের সবচাইতে শক্তিশালী ফাইটার বিমান। এটা নিয়ে মার্কিনীরা খুব বেশি একটা গবেষণার সুযোগ পায়নি। এটা ভালো একটা বিমান। কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তা করে রাতের ঘুম নষ্ট করার কোন কারণ নেই। তার ধারণা, মার্কিন পঞ্চম জেনারেশনের বিমানগুলি চীনাদের বিমানের চাইতে অনেক বেশি সক্ষমতার। এর আগে মার্কিন বিমান বাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল চার্লস ব্রাউন চীনা ‘জে-২০’ বিমানের পক্ষে ভালো কিছু মন্তব্য করলেও তিনি বলেন যে, এই বিমান নিয়ে তিনি চিন্তিত নন মোটেই।

জেনারেল মার্ক কেলি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, চীনারা প্রযুক্তির দিক থেকে মার্কিনীদেরকেই অনুসরণ করবে। কিন্তু চিন্তাগত দিক থেকে তারা মার্কিনীদের থেকে ভিন্ন। মার্কিনীরা প্রযুক্তির উপরেই তাদের সকল চিন্তাকে সীমাবদ্ধ করলেও চীনারা তা করছে না। বরং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে মেনে নিয়ে তারা কম ঝুঁকিপূর্ণ পথে এগুচ্ছে; যেপথে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ধীরে ধীরে সক্ষমতার ব্যবধান কমাতে পারবে। তাড়াহুড়া নয়, বরং চীনের ধীরে চলার চিন্তাটাই মার্কিনীদের সাথে চীনাদের মূল পার্থক্য। আর এই চিন্তাটা এখন মার্কিনীদের সিদ্ধান্তকে যথেষ্টই প্রভাবিত করছে। মার্কিনীরা এখন ভবিষ্যতের বিভিন্ন মাইলস্টোনের কথা বলছে, যেই মাইলস্টোনগুলি প্রযুক্তি ও সামরিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সমতা এনে দিতে পারে। মার্কিনীরা হয়তো চীনাদের সেই মাইলস্টোনগুলি ধীরে সুস্থে ধরে ফেলা দেখতে চাইছে না। মোটকথা, এই মাইলস্টোনগুলিই বলে দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে মাইলস্টোনগুলির আগেই সংঘাতের ছুতো খুঁজছে।



সূত্রঃ

‘China ‘on track’ for 6th-gen fighter, US Air Force needs to get there first: ACC chief’ in Breaking Defense, 26 September 2022

‘5th Generation Fighters’ by Lt. Gen. Hawk Carlisle, USAF (unclassified)

‘China racing for 6th-gen fighter edge over US’ in Asia Times, 01 October 2022

‘China Is Working On Its Own Sixth-Generation Fighter Program: Official’ by Thomas Nedwick, in The Warzone, The Drive, 28 September 2022 (https://www.thedrive.com/the-war-zone/china-is-working-on-its-own-sixth-generation-fighter-program-official )

‘China should ‘worry’ about Taiwan 2027 timeline, J-20 is just ‘OK’ fighter: PACAF chief’ in Breaking Defense, 19 September 2022

‘Do We Really Need 6th-Generation Stealth Fighters?’ by Brent M. Eastwood, in 1945, 22 July 2022 (https://www.19fortyfive.com/2022/07/do-we-really-need-6th-generation-stealth-fighters/)

‘Beyond the F-22 or F-35: What Will the Sixth-Generation Jet Fighter Look Like?’ by Sebastian Roblin, in The National Interest, 21 July 2018

5 comments:

  1. ভিন্ন প্রসঙ্গে আলাপঃ
    চায়না সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি করেছে যার দরুণ সলোমন দ্বীপ তার দেশে মার্কিন কোস্ট গার্ডের জাহাজ প্রবেশ করতে দেয়নি।

    চায়না তার ডেস্ট্রয়ার সলোমন দ্বীপে মোতায়েন করতে পারে। ডেস্ট্রয়ারত মূলত ভাসমান মিসাইল সাইলো।
    সলোমন দ্বীপপুঞ্জ থেকে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ২০০০ কিমি দূরে।
    তাহলে চাইনিজ ডেস্ট্রয়ার অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তার জন্য কিভাবে Threat? অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া কোন কোন দিক(angle/point of view) থেকে নিজের উপকূলের কাছাকাছি চাইনিজ ডেস্ট্রয়ার মোতায়েন তার নিরাপত্তার জন্য Threat মনে করে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. Please read the following writeups....

      https://koushol.blogspot.com/2020/05/australian-shipyards-busy-during-corona-pandemic.html?m=1

      https://koushol.blogspot.com/2021/12/why-australia-sent-troops-to-solomon-islands.html?m=1

      https://koushol.blogspot.com/2022/04/china-trying-to-spread-influence-in-australias-own-backyard.html?m=1

      https://koushol.blogspot.com/2022/09/west-using-china-fear-to-militarize-south-pacific.html?m=1

      Delete
    2. অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। আপনার pattern খেয়াল করেছি। আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে আপনি আপনার ব্লগের এক বা একাধিক লিঙ্ক দেন। সেসব ব্লগে কিছু think tank এর বাণী আর পরিস্থিতির বর্ণনা থাকে। কিন্তু আমি আপনার কাছে to the point/specific জানতে চেয়েছিলাম। আপনি চাইলে আমাকে summary বলতেও পারতেন। তবে আবারও ধন্যবাদ আপনার আন্তরিকতার জন্য। আশা করি বাংলাদেশের সাপেক্ষে চীন,ভারত, ভারত মহাসাগর,মিয়ানমার, আমেরিকা এসব নিয়েও লিখবেন। নিজের দেশের করণীয় আর সম্ভাব্য ভূরাজনইতিক পরিস্থিতি অনুধাবন না করতে পারলে শুধু বাইরের দেশ নিয়ে লেখালেখি বিষয়টা ভালো দেখায়না।

      Delete
    3. Please do not assume that I have all the time in the world to answer every question with details... Rather I would request you to read thoroughly without asking for shortcuts... And regarding Bangladesh, I again say that you are new to this blog... Those who had been reading my writeups for the last seven or eight years, they know what recommendations I had given and how many of those had already been implemented by state... And it's a pity that you have not read the book I had suggested to you... That book is full of recommendations for the state....

      Delete
  2. Thank you so much

    ReplyDelete