Monday 17 October 2022

ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে রাশিয়া কি ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহের ঘাটতিতে রয়েছে?

১৭ই অক্টোবর ২০২২
 
১৫ই অক্টোবর ২০২২। ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপোল শহর থেকে উৎক্ষেপিত সুপারসনিক জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র 'পি-৮০০ ওনিক্স'। রুশদের প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ফ্রন্টলাইনের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। একদিকে এই হামলা যেমন রুশদের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত নিয়ে প্রশ্নকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে, তেমনি পশ্চিমাদেরকে ‘আইরিস-টি’ এবং ‘ন্যাস্যাম’এর মতো অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলি ইউক্রেনকে সরবরাহ করার ছুতো দিয়েছে। 

গত ৮ই অক্টোবর রুশ নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়ার মূল ভূখন্ডকে যুক্ত করা কার্চ সেতুর উপর হামলার পর থেকে ইউক্রেনের বিভিন্ন বেসামরিক কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্থাপনার উপর রুশদের প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু হবার পর থেকে অনেকেই প্রশ্ন করা শুরু করেছেন যে, ক্রেমলিনের হাতে আর কত ভূমিতে নিখুঁতভাবে আঘাত করার মতো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে এবং রুশরা কতদিন এই হামলা চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। তবে এই প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু হবার আরও আগ থেকেই পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‘ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর’ বলছে যে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট এবং ড্রোনগুলি ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ছাড়াও ২০টারও বেশি শহর ও বসতির উপরে হামলা চালিয়েছে। ১৪ই অক্টোবর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাংবাদিকদের বলেন যে, ইউক্রেনের বেসামরিক স্থাপনার উপর হামলার জন্যে তিনি দুঃখিত নন। তবে তিনি ঘোষণা দেন যে, আপাততঃ ইউক্রেনের উপর বড় কোন হামলার প্রয়োজন নেই।

ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের সক্ষমতা

মার্কিন ভূরাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নিউ লাইন্স ইন্সটিটিউট’এর বিশ্লেষক জেফ হওন ‘ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর’কে বলছেন যে, রাশিয়া প্রথমবারের মতো এতো বড় আকারের হামলা করছে। রুশরা প্রমাণ করতে চাইছে যে, তারা ইউক্রেন জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আক্রমণ চালাতে সক্ষম। তবে সমস্যা হলো এর মাধ্যমে রুশদের দু’টা সমস্যা সামনে আসছে। প্রথমতঃ এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বেশিরভাগ সময়েই টার্গেটে আঘাত করতে পারছে না; আর দ্বিতীয়তঃ এগুলিকে শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়। কারণ এগুলি যথেষ্ট বড় সামরিক বিনিয়োগ।

রুশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’ বলছে যে, রাশিয়ার ভূমিতে নিখুঁতভাবে আঘাত করার মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ পুরোদমে চালু আছে; কারখানাগুলিও নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। রুশরা বলছে যে, রুশদের সরবরাহের ঘাটতির ব্যাপারে পশ্চিমাদের দাবি পুরোপুরি অসত্য। তবে ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, রুশরা কতগুলি ক্ষেপাণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে বা কতগুলি অবশিষ্ট রয়েছে, সেব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও কিছুদিন আগেই অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে একটা আলোচনায় নেতৃত্ব দেন; যা রুশ টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। সেখানেও পুতিনের নির্দিষ্ট করে বলা কোন বক্তব্য দেখানো হয়নি।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের প্রাক্তন চিফ অব স্টাফ জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান কুয়েজনো ‘ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর’কে বলছেন যে, রুশ প্রতিরক্ষা শিল্পের সক্ষমতা রয়েছে বছরে ১’শ থেকে ২’শ ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করার। ব্যবহার করে ফেলা ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিস্থাপন করাটাই চ্যালেঞ্জ। কারণ রুশদের কাছে স্টিল এবং বিস্ফোরক রয়েছে। কিন্তু গাইড্যান্সের জন্যে ইলেকট্রনিক সিস্টেমগুলির সরবরাহ কম রয়েছে রাশিয়ার কাছে। অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে রুশরা ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারছে না। এর ফলে রুশরা তাদের অস্ত্র রপ্তানি কমানো বা স্থগিত করা ছাড়াও ইরান ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সামরিক সরবরাহ নিচ্ছে।

‘দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট’ পশ্চিমা ইন্টেলিজেন্সের সূত্র ব্যবহার করে বলছে যে, গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ইরানের কর্মকর্তারা রাশিয়ার কাছে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করার জন্যে চুক্তি ফাইনাল করে এসেছেন। পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন যে, ইরান রাশিয়ার কাছে ৩’শ কিঃমিঃ পাল্লার ‘ফাতেহ-১১০’ এবং ৭’শ কিঃমিঃ পাল্লার ‘জোলফাঘার’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করছে। এর আগের চুক্তি মোতাবেক ইরান ইতোমধ্যেই রাশিয়ার কাছে ‘মোহাজের-৬’ এবং ‘শাহেদ-১৩৬’ ড্রোন বিক্রি করছে।
 
রুশ 'তুপোলেভ ২২এম' বোমারু বিমানের নিচে তিনটা 'কেএইচ-২২' জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। খোলা সমুদ্রে একটা জাহাজকে টার্গেট করার জন্যে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি রাডার ব্যবহার করে। কিন্তু ভূমির কোন টার্গেটে আঘাত করতে গেলে এই রাডার দিয়ে বোঝা সম্ভব নয় যে কোন বিল্ডিংটা মূল টার্গেট। তাই ভূমির টার্গেটে এগুলির নিখুঁতভাবে আঘাত করার সক্ষমতা খুবই কম। তবে সোভিয়েত আমল থেকে এগুলির মজুত বিপুল। পুরোনো এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবার আগেই রুশরা হয়তো এগুলি ব্যবহার করে ফেলতে চাইছে।

ক্ষেপণাস্ত্রের প্রকার

১০ই অক্টোবর ইউক্রেনের উপর শুরু হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রুশরা সকল ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করেছে। এর মাঝে রয়েছে কৌশলগত বোমারু বিমান থেকে ছোঁড়া ‘কেএইচ-৫৫’ ও ‘কেএইচ-১০১’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র; সমুদ্রে জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে ছোঁড়া ‘ক্যালিবর’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র; এবং ভূমি থেকে ছোঁড়া ‘ইসকান্দার’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়াও রুশরা দূরপাল্লার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ‘এস-৩০০’ও ব্যবহার করেছে ভূমির টার্গেটের বিরুদ্ধে। ‘বিবিসি’ বলছে যে, গত জুন মাসে তারা ইউক্রেনের ক্রিমেনচাক শপিং সেন্টারে হামলার তদন্ত করে দেখেছে যে, রুশরা ‘কেএইচ-২২’ অথবা এর উন্নততর ভার্সনের ‘কেএইচ-৩২’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এগুলি পুরোনো ক্ষেপণাস্ত্র; যেগুলি তৈরি করা হয়েছিল জাহাজ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে।

ভূমি থেকে ভূমির টার্গেটে আঘাত হানার জন্যে রুশদের ডেভেলপ করা ‘ইসকান্দার’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৪’শ থেকে ৫’শ কিঃমিঃ এবং এগুলি প্রায় ৪’শ ৮০ কেজি থেকে ৭’শ কেজি পর্যন্ত ওয়ারহেড বহণে সক্ষম। ‘সিএসআইএস’ বলছে যে, প্রায় ৩ দশমিক ৮ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি টার্গেটের ৬ থেকে ১৬ ফুটের মাঝে আঘাত হানতে পারে। ১৪ই অক্টোবর ব্রিটেনের ‘দ্যা সান’ পত্রিকা রুশ প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রকাশ করা এক ভিডিও প্রচার করে; যেখানে দেখানো হয় যে, ‘ইসকান্দার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হচ্ছে ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে। এর আগে ইউক্রেনের ‘প্রাভদা’ বার্তাসংস্থা বলে যে, রুশরা বেলারুশের ভূমি ব্যবহার করে ‘ইসকান্দার’ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করছে। অপরপক্ষে রুশ নৌবাহিনীর ভূমিতে আঘাত হানার ক্ষেপণাস্ত্র হলো ‘৩এম-১৪ ক্যালিবর’। প্রায় সাড়ে ৪’শ কেজি ওয়ারহেড নিয়ে এগুলি ১৫’শ থেকে ২৫’শ কিঃমিঃ দূরে ভূমির লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। সিরিয়াতে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘ইসকান্দার’ এবং ‘ক্যালিবর’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ভূমির টার্গেটের জন্যে ডেভেলপ করা হলেও ইউক্রেন যুদ্ধে অনেক ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করা হচ্ছে, যেগুলি ভূমির টার্গেটের জন্যে ডিজাইন করা হয়নি।

১৫ই অক্টোবর ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপোল শহর থেকে ধারণকৃত এক ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায় যে, ভূমি থেকে একটা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য এবং ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষক এইচ আই সাটন বলেন যে, ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণের ধরণ এবং এর পাশের গাড়ির অবস্থান থেকে ধারণা করা যায় যে, এটা খুব সম্ভবতঃ ‘পি-৮০০ ওনিক্স’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র; যা কিনা ‘ব্যাসচন-পি’ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চিং সিস্টেম থেকে উৎক্ষেপিত হয়েছে। এটা রুশদের সর্বোৎকৃষ্ট সুপারসনিক জাহাজধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যা এখন ভূমির টার্গেটেও আঘাত হানছে। ৩’শ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহণে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা সাড়ে ৪’শ কিঃমিঃএর বেশি এবং এর দ্রুতি শব্দের গতির দুই গুণেরও বেশি। প্রায় ৩ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্র টার্গেটের পাঁচ ফুটের মাঝে আঘাত হানতে সক্ষম। জাহাজ এবং সাবমেরিন থেকে ছোঁড়ার জন্যে তৈরি করা হলেও ২০১৫ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র ভূমি থেকে ‘ব্যাসচন-পি’ লঞ্চিং সিস্টেম থেকে ছোঁড়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে জাহাজের বিরুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্র যতটা মারাত্মক, ভূমির টার্গেটের বিরুদ্ধে তা ততটা না-ও হতে পারে। কারণ এগুলির টার্গেটিং সিস্টেম জাহাজ ধ্বংসের জন্যেই ডিজাইন করা; ভূমির টার্গেটের জন্যে নয়।

‘দ্যা ড্রাইভ’ ম্যাগাজিনের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সেকশন ‘দ্যা ওয়ারজোন’এর এক লেখায় আকাশ প্রতিরক্ষা বিষয়ের লেখক পিয়টর বুটাউস্কি রুশ দূরপাল্লার বোমারু বিমানের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। রুশ ‘তুপোলেভ-২২এম৩’, ‘তুপোলেভ-৯৫এমএস’ এবং ‘তুপোলেভ-১৬০’ বিমানগুলি ইউক্রেনের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের সামরিক উৎপাদন ও মেরমত কারখানা, কৌশলগত জ্বালানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক, বিমান ঘাঁটি, রেলওয়ে স্থাপনা, ইত্যাদির উপরে হামলা করে আসছে। পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছাবার রুটের উপরে এগুলি হামলা করলেও ইউক্রেনের রণাঙ্গনে পশ্চিমাদের অস্ত্রের বিপুল সমারোহ দেখে এই বিমান আক্রমণের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ‘কেএইচ-১০১’ হলো এই বিমানগুলির বহণকৃত ক্ষেপণাস্ত্রের মাঝে সর্বোত্তম। অতি দামী এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সাম্প্রতিক সময়ে কম ব্যবহৃত হচ্ছে। বুটাউস্কির ধারণা রুশদের হাতে খুব বেশি হলে ১’শর মতো ‘কেএইচ-১০১’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। আর এর উৎপাদন মাসে ৩ থেকে ৪টার বেশি নয়। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘সিএসআইএস’ বলছে যে, প্রায় সাড়ে ৪’শ কেজি ওয়ারহেডের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি প্রায় ২৮’শ কিঃমিঃ দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। অনেক নিচু দিয়ে ওড়ার ফলে এবং স্টেলথ ডিজাইনের কারণে এগুলি সহজে রাডারে ধরা পড়েনা। প্রায় ২ দশমিক ৪ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রে স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ব্যবহার করার কারণে এগুলির নিখুঁতভাবে টার্গেটে আঘাত হানার সক্ষমতা যথেষ্ট। সিরিয়াতে রাশিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছিল।

 
রুশ 'তুপোলেভ-৯৫' বোমারু বিমানের ডানার নিচে মোট আটটা 'কেএইচ-১০১' ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দেখা যাচ্ছে। এটা হলো রুশ বিমানগুলির বহণকৃত ক্ষেপণাস্ত্রের মাঝে সর্বোত্তম। রায় ২ দশমিক ৪ টন ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রে স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন ব্যবহার করার কারণে এগুলির নিখুঁতভাবে টার্গেটে আঘাত হানার সক্ষমতা যথেষ্ট। অতি দামী এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সাম্প্রতিক সময়ে কম ব্যবহৃত হচ্ছে।

সোভিয়েত আমলে তৈরি করা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহণের জন্যে তৈরি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রচলিত অস্ত্র বহণের জন্যে পরিবর্তন করে ‘কেএইচ-৫৫৫’ হিসেবে সার্ভিসে আনা হয়। ‘সিএসআইএস’ বলছে যে, মার্কিন ‘টোমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দেখতে ‘কেএইচ-৫৫’ ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন প্রায় ১২’শ কেজি এবং এগুলি প্রায় ৪’শ কেজি ওয়ারহেড বহণ করতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিঃমিঃ। ২০০৬ সালে ধারণা করা হতো যে, রাশিয়ার হাতে ৮’শ ৭২টা ‘কেএইচ-৫৫’ ক্ষেপণাস্ত্র ছিল।

এছাড়াও রয়েছে ‘তুপোলেভ-২২এম৩’ বিমান থেকে ছোঁড়া প্রায় ৬ টন ওজনের দৈত্যাকৃতির সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘কেএইচ-২২’। সোভিয়েত আমলে তৈরি প্রায় সাড়ে ৩’শ কিঃমিঃ পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রের গতি শব্দের ৩ থেকে ৪ গুণ। এর উন্নততর ভার্সনের ‘কেএইচ-৩২’এর পাল্লা অবশ্য এর প্রায় দ্বিগুণ। ইউক্রেনিয়রা বলছে যে, গত জুন মাসেই রুশরা এহেন প্রায় ২’শ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। তবে এর আগের তিন মাসে ছুঁড়েছে মাত্র কয়েক ডজন। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ডেভেলপ করা হয়েছিল মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজগুলিকে টার্গেট করার জন্যে। খোলা সমুদ্রে একটা জাহাজকে টার্গেট করার জন্যে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি রাডার ব্যবহার করে। কিন্তু ভূমির কোন টার্গেটে আঘাত করতে গেলে এই রাডার দিয়ে বোঝা সম্ভব নয় যে কোন বিল্ডিংটা মূল টার্গেট। তাই ভূমির টার্গেটে এগুলির নিখুঁতভাবে আঘাত করার সক্ষমতা খুবই কম। তবে সোভিয়েত আমল থেকে এগুলির মজুত বিপুল। পুরোনো এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবার আগেই রুশরা হয়তো এগুলি ব্যবহার করে ফেলতে চাইছে। তবে উন্নততর ‘কেএইচ-৩২’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি রুশরা খুব কমই ব্যবহার করছে। যুদ্ধের আগে রুশদের হাতে খুব বেশি হলে ১’শ থেকে দেড়’শ ‘কেএইচ-৩২’ ক্ষেপণাস্ত্র ছিল।

এছাড়াও গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে রুশ বিমান বাহিনীর ‘মিগ-৩১’ ফাইটার বিমান থেকে ‘৯এস-৭৭৬০ কিনজাল’ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নামে পরিচিত এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি শব্দের ৫ গুণেরও বেশি গতিতে উড়ে ইউক্রেনের অস্ত্রের ভান্ডার, জ্বালানির মজুত এবং কমান্ড সেন্টারে আঘাত হানে। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার আর শোনা যায়নি। ইউক্রেনের ইন্টেলিজেন্সের হিসেবে যুদ্ধের আগে রুশদের হাতে খুব বেশি হলে ৩৫ থেকে ৪০টা ‘কিনজাল’ ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। ‘কেএইচ-২২’ বা ‘কিনজাল’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলির গতি ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে হারানোর জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু যেহেতু ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বলার মতো তেমন কিছু নয়, তাই এই গতি খুব বেশি যে কাজে লাগছে তা-ও নয়।

ক্ষেপণাস্ত্রের স্বল্পতা ও খরচ

মার্কিন থিংকট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ বা ‘সিএসআইএস’এর ফেলো ইয়ান উইলিয়ামস ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’কে বলছেন যে, ভূমির টার্গেটের বিরুদ্ধে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার দেখিয়ে দেয় যে, রুশরা ভূমিতে নিখুঁতভাবে আঘাত করার মতো ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ সমস্যার মাঝে রয়েছে। ‘এস-৩০০’এর মতো বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র যখন ভূমির টার্গেটের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে, তখন একটা বিল্ডিংএর উপরেও সঠিকভাবে আঘাত করার সক্ষমতা এই ক্ষেপণাস্ত্রের থাকবে না। এছাড়াও শত্রুপক্ষের শক্তিশালী অবস্থানগুলি ধ্বংস করার মতো যথেষ্ট শক্তি একটা বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের থাকে না।এগুলি এভাবে ব্যবহার করা হলো বাতাসে ছুঁড়ে দিয়ে আশায় বুক বাঁধার মতো। খুব সম্ভবতঃ রুশরা ক্ষেপণাস্ত্রের পুরোনো ভার্সনগুলিকে ব্যবহার করে ফেলতে চাইছে; যাতে করে তাদের অপেক্ষাকৃত আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটের জন্যে জমিয়ে রাখা যায়।
 
রুশ 'ইসকান্দার' ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ‘ইসকান্দার’ এবং ‘ক্যালিবর’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ভূমির টার্গেটের জন্যে ডেভেলপ করা হলেও ইউক্রেন যুদ্ধে অনেক ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করা হচ্ছে, যেগুলি ভূমির টার্গেটের জন্যে ডিজাইন করা হয়নি।

ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মূল্য যথেষ্ট। ‘ইউক্রেনিয়ান ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় ইউক্রেনিয় বিশ্লেষক ভলদিমির লান্ডা এবং কন্সটানটিন জিনেনি রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্যের একটা ধারণা দিয়েছেন। একেকটা ‘কেএইচ-১০১’ ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার; একটা ‘ক্যালিবর’ ক্ষেপণাস্ত্র হলো প্রায় সাড়ে ৬ মিলিয়ন; ‘ইসকান্দার’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার; ‘পি-৮০০ ওনিক্স’এর মূল্য ১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন; ‘কেএইচ-২২’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ১ মিলিয়ন; আর ‘টচকা-ইউ’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য প্রায় দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার। ‘বিবিসি’র এক হিসেবে বলা হচ্ছে যে, ১০ই অক্টোবর একদিনে রুশরা কমপক্ষে ৮৩টা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইউক্রেনিয়রা বলছে যে, একইদিনে মিকোলায়েভ শহরে ৪৭টা, কিয়েভে ৬০টা, লেভিভে ১৫টা, খারকিভে ২০টা, এবং ওডেসাতে ১৫টা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ‘ইউক্রেনিয়ান ফোর্বস’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, এই এক দিনেই রুশরা প্রায় ৪’শ থেকে ৭’শ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।

পিয়টর বুটাউস্কি বলছেন যে, রুশদের হাতে বহু বিমান ও পাইলট থাকলেও এগুলি থেকে ছোঁড়ার মতো ক্ষেপণাস্ত্র দিন দিনই কমছে। আর এগুলির উৎপাদন সক্ষমতাও যথেষ্টই সীমিত। ইউক্রেনিয়রা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির ধ্বংসাবশেষ নিয়ে গবেষণা করছে। ‘কেএইচ-১০১’ ক্ষেপণাস্ত্রের মাঝে পাওয়া গিয়েছে ‘এসএন-৯৯’ স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন রিসিভার; যা রুশরা আমদানি করে। তবে এরকম অনেক যন্ত্রাংশই খুব উচ্চ প্রযুক্তির নয়। এবং এগুলি বেসামরিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় বলে রুশরা বিভিন্নভাবে এগুলি পেয়ে যেতে পারে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, কয়েক মাসের মাঝে ব্যবহার করে ফেলা শতশত ক্ষেপণাস্ত্র রুশরা হঠাৎ করেই প্রতিস্থাপন করে ফেলতে পারবে। তৈরি করতে পারা এক জিনিস; আর প্রয়োজনমতো সরবরাহ দিতে পারা আরেক জিনিস।

ইউক্রেনের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলাফল

তবে রুশরা বলছে যে, ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের উপর হামলার জন্যে ইউক্রেনই দায়ী। রুশ পার্লামেন্টের কর্মকর্তা এভগেনি পোপভ ‘বিবিসি’কে বলছেন যে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্যে ইউক্রেনের ছোঁড়া বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রগুলির অংশাবশেষ ভূমিতে পড়ে গিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট’এর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সিদ্ধার্থ কৌশল ‘বিবিসি’কে বলছেন যে, রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়েই ‘এস-৩০০’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। উভয়ের ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেডই একইরকমের ধ্বংসাবশেষ তৈরি করে। কাজেই এব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে ইয়ান উইলিয়ামস মনে করছেন যে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইউক্রেনের হবার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ ইউক্রেনের শহরগুলিকে রক্ষা করার জন্যে ‘এস-৩০০’ শহরের ভিতরে নয়, বরং শহরের বাইরে থাকার কথা। কাজেই শহরের মাঝখানে ইউক্রেনের ‘এস-৩০০’ ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যাবার সম্ভাবনাও কম।

ইউক্রেনজুড়ে রুশদের হামলার ছুতোয় পশ্চিমারা ইউক্রেনকে এমন কিছু অস্ত্র দেয়া শুরু করেছে, যা তারা এতদিন আটকে রেখেছিল। ১১ই অক্টোবর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ এক টুইটার বার্তায় ঘোষণা দেন যে, জার্মান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আইরিস-টি’ ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে পৌঁছেছে। আর মার্কিন ‘ন্যাস্যাম’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আসছে খুব শিগগিরই। ‘ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর’এর সাথে কথা বলতে গিয়ে ন্যাটোর প্রাক্তন উপ-প্রধান জেনারেল মাইকেল ইয়াকোভলেফ বলছেন যে, যখন ফ্রন্টলাইনের রুশ সেনারা সোশাল মিডিয়াতে অভিযোগ করে পোস্ট দিচ্ছে যে, তারা যথেষ্ট পরিমাণে গোলাবারুদের সরবরাহ পাচ্ছে না, তখন রুশ হাই কমান্ডের এই ‘ফায়ারওয়ার্কস’এর কোন সামরিক অর্থ নেই।

কার্চ সেতুর উপর হামলা রাশিয়ার জন্যে বড় কোন ক্ষতি ছিল না। ন্যাটোর প্রাক্তন সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওয়েসলি ক্লার্ক ‘সিএনএন’কে বলছেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে এই সেতুর উপরে হামলা খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। কার্চ সেতুর উপর হামলাকে ক্রেমলিন প্রেসিডেন্ট পুতিন, তথা রাশিয়ার আত্মসন্মানের উপর হামলা হিসেবেই দেখেছে। এর প্রমাণ ছিল পুরো ইউক্রেনজুড়ে বেসামরিক স্থাপনার উপর প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। জেনারেল মাইকেল ইয়াকোভলেফ বলছেন যে, রুশদের প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ফ্রন্টলাইনের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। একদিকে এই হামলা যেমন রুশদের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত নিয়ে প্রশ্নকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে, তেমনি পশ্চিমাদেরকে ‘আইরিস-টি’ এবং ‘ন্যাস্যাম’এর মতো অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলি ইউক্রেনকে সরবরাহ করার ছুতো দিয়েছে। এই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলি রুশ বিমানগুলিকে যেমন ইউক্রেনের আকাশে আরও অনিরাপদ করে তুলবে, তেমনি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের সফলতাকে কমিয়ে দেবে। একইসাথে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইউক্রেনের জনগণকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও ক্ষেপিয়ে তুলতে সহায়তা দেবে। মোটকথা কার্চ সেতুর উপর হামলার প্রতিশোধস্বরূপ রাশিয়া যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সূচনা করেছে, তা ইউক্রেনের যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।

সূত্রঃ
‘Recent missile attack on Ukraine cost Russia approximately EUR 700 mln’ in Baltic News Network, 11 October 2022
‘3M-14 Kalibr (SS-N-30A)’ in CSIS Missile Threat, updated 07 March 2022
‘9K720 Iskander (SS-26)’ in CSIS Missile Threat, updated 02 August 2021
‘Kh-101 / Kh-102’ in CSIS Missile Threat, updated 31 July 2021
‘Kh-47M2 Kinzhal’ in CSIS Missile Threat, updated 19 March 2022
‘Kh-55 (AS-15)’ in CSIS Missile Threat, updated 02 August 2021
‘P-800 Oniks/Yakhont/Bastion (SS-N-26 Strobile)’ in CSIS Missile Threat, updated 12 August 2021
‘Russia resumes Iskander missile attacks on Ukraine from Belarus – Air Force’ in Ukrainska Pravda, 25 June 2022
‘Russia launches nuclear capable Iskander-M missiles at Ukrainian positions’ in The Sun, 14 October 2022 (https://www.youtube.com/watch?v=gnhdQrvfSNs)
‘Likely #Russian Navy P-800 Oniks cruse missile launched from a Bastion-P (SS-C-5 STOOGE) system’ by H I Sutton, 15 October 2022 (https://twitter.com/CovertShores/status/1581248898412482560)
‘Spotted launch’, 15 October 2022 (https://twitter.com/Cyx_5/status/1581257962437283841)
‘Russia’s Secretive Long-Range Bomber Operations Against Ukraine’ by Piotr Butowski, in The Warzone, 14 September 2022 (https://www.thedrive.com/the-war-zone/russias-secretive-long-range-bomber-operations-against-ukraine)
‘Росія за вихідні випустила по Україні ракет вартістю близько $200 млн. Оцінка Forbes, by Володимир Ланда and Костянтин Гненний, 27 September 2022 (https://forbes.ua/inside/rosiya-za-vikhidni-vipustila-po-ukraini-raket-vartistyu-blizko-200-mln-otsinka-forbes-27062022-6838)
‘Putin has ‘no regrets’ over missile barrage in Ukraine, but says no need for more ‘massive’ strikes for now’ in CNN, 14 October 2022
‘Strikes in Ukraine shine a spotlight on dwindling Russian missile stocks’ in Frace24, 13 October 2022
‘War in Ukraine: Is Russia’s stock of weapons running low?’ in BBC, 14 October 2022
‘EXPLAINER: What’s the state of Russia’s missile arsenal?’ in AP News, 13 October 2022
‘Ukraine gets more air defense pledges as Russia hits cities’ in AP News, 14 October 2022
‘Retired general says Russian forces haven't advanced since World War I’ in CNN, 10 October 2022 (https://www.youtube.com/watch?v=n3GMjwwvmR4)
‘Ukraine war: Iran 'plans to send Russia missiles' as supplies dwindle’ in The Middle East Eye, 16 October 2022

No comments:

Post a Comment