Monday 8 February 2021

পাকিস্তানের ‘লুক আফ্রিকা’ নীতির ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব কতটুকু?

০৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২১

জানুয়ারি ২০২০, নাইরোবি, কেনিয়া। ‘পাকিস্তান আফ্রিকা ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স’ নামে একটা সন্মেলন। ‘লুক আফ্রিকা ইনিশিয়েটিভ’এর অধীনে পাকিস্তানের সমুদ্রবন্দরগুলি আফ্রিকার জন্যে মধ্য এশিয়ার দেশগুলি এবং চীনের পশ্চিমাঞ্চলের বাজার ধরার দরজা হতে পারে।

 
পাকিস্তানের পত্রিকা ‘দ্যা নিউজ’ বলছে যে, ২০১৭ সালের অগাস্টে পাকিস্তান মুসলিম লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ‘লুক আফ্রিকা ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটা পরিকল্পনা নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের প্রধান বাণিজ্য সহযোগীদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নতুন বাজার খোঁজা। পাকিস্তানের মোট বৈদেশিক বাণিজ্য যেখানে প্রায় ৮৮ বিলিয়ন ডলার, সেখানে আফ্রিকার সাথে বাণিজ্য মাত্র ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। একই নীতির অধীনে ২০১৯ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দেয় যে, পররাষ্ট্র দপ্তর ছয়টা নতুন বাণিজ্য সেকশন ইউরোপ থেকে আফ্রিকায় স্থানান্তরিত করছে। এই সেকশনগুলি উত্তর আফ্রিকার আলজেরিয়া ও সুদানে; পূর্ব আফ্রকার ইথিওপিয়া, সুদান ও তাঞ্জানিয়ায়; এবং পশ্চিম আফ্রিকার সেনেগালে স্থাপন করা হচ্ছে। একই চেষ্টার অংশ হিসেবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ‘পাকিস্তান আফ্রিকা ট্রেড ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স’ নামে একটা সন্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে আফ্রিকার মোট ২৬টা দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা অংশ নেয়। পাকিস্তানের ম্যারিটাইম এফেয়ার্স সচিব রিজওয়ান আহমেদ সন্মেলনে বলেন যে, পাকিস্তানের সমুদ্রবন্দরগুলি আফ্রিকার জন্যে মধ্য এশিয়ার দেশগুলির এবং চীনের পশ্চিমাঞ্চলের বাজার ধরার দরজা হতে পারে। পাকিস্তানি সচিবের কথাগুলি পাকিস্তানের কৌশলগত চিন্তাকেই প্রতিফলিত করে। পাকিস্তানের ‘লুক আফ্রিকা ইনিশিয়েটিভ’এর ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব আসলে কতটুকু?

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দৈন্যতা

আফ্রিকার সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কোন্নয়নের কেন্দ্রে রয়েছে দেশটার অর্থনৈতিক দৈন্যদশা। পাকিস্তানের অর্থনীতি এশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলির উপর বেশ নির্ভরশীল। দেশটার বাণিজ্য ঘাটতি যথেষ্ট। ২০১৮ সালের হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের রপ্তানি যেখানে ছিল প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার, সেখানে আমদানি ছিল ৬১ বিলিয়ন ডলারের উপর। প্রতিমাসে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির বিপরীতে আমদানি করতে হয় প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার। ‘পাকিস্তান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্স’এর হিসেবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দেশটার মাসিক বাণিজ্য ঘাটতি গিয়ে দাঁড়ায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের উপর। ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ যোগ দিয়ে পাকিস্তানের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়। রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা আসে এবং আমদানি বাড়তে থাকায় খুব দ্রুত বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে ব্যাপকভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে দেশটা। তবে ২০১০ সালের পর থেকে ঋণের বোঝা কিছুটা কমে আসে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হিসেবে যেখানে ২০০১ সালে রাষ্ট্রীয় ঋণ গিয়ে দাঁড়ায় জিডিপির ৮৮ শতাংশে, সেখানে ২০১০ সালের দিকে তা ৬০ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে তা আবারও বাড়তে থাকে এবং ২০১৯ সালে তা জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ হয়ে যায়। ১৫ই জানুয়ারি ‘আইএমএফ’এর ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের শর্ত হিসেবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা দেন যে, বিদ্যুতের ট্যারিফ প্রতি ইউনিটের জন্যে ১ রুপি ৯০ পয়সা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ‘দ্যা নিউজ’ পত্রিকা বলছে যে, এই বৃদ্ধি ৩ রুপি ৩০ পয়সা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনার প্রথম ধাপ মাত্র। এছাড়াও জানুয়ারির শেষে ‘এআরওয়াই নিউজ’এর এক খবরে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয় যে, পেট্রোলের মূল্য লিটারপ্রতি ২ রুপি ৭০ পয়সা বৃদ্ধি করে ১’শ ১১ রুপি ৯০ পয়সা এবং ডিজেলের মূল্য ২ রুপি ৮৮ পয়সা বৃদ্ধি করে ১’শ ১৬ রুপি ৭ পয়সা করা হয়েছে। ‘এশিয়া টাইমস’ বলছে যে, ২০১৮ সালে ক্ষমতার আসার পর থেকে ইমরান খানের সরকার প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার ঋণ যোগ করেছেন; যার মাঝে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে নেয়া সাড়ে ৫ বিলিয়ন; চীন থেকে নেয়া ৬ দশমিক ৭ বিলয়ন; এবং ‘আইএমএফ’ ও বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে নেয়া ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ‘আইএমএফ’এর কাছ থেকে ১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেবার পরেও দেশটার মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশের উপর। পাকিস্তানি রুপির মূল্য এতটাই কমে গিয়েছে যে, ২০১০ সালের আগে ৫০ রুপিতে এক মার্কিন ডলার পাওয়া গেলেও বর্তমানে ১’শ ৬০ রুপি ব্যয় করতে হচ্ছে।

অর্থনৈতিক দৈন্যতা কাটিয়ে উঠতেই পাকিস্তান আফ্রিকার দিকে তাকাচ্ছে। গত ৭ই জানুয়ারি ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি আফ্রিকার ৮টা দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া বাকি দেশগুলি ছিল উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকার। মন্ত্রী আফ্রিকার সাথে কৃষি, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি এবং পর্যটন উন্নয়ন বিষয়ে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেন। একইসাথে পাকিস্তান আফ্রিকার সাথে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করতে চায় বলে উল্লেখ করেন কোরেশি। এক সপ্তাহ আগে পাকিস্তান জিবুতিতে নতুন কূটনৈতিক মিশন চালু করার ঘোষণা দেয়; এবং আরও মিশন চালু করবে বলেও বলা হয়। ‘গালফ নিউজ’ বলছে যে এর কিছুদিন আগেই শাহ মাহমুদ কোরেশি আফ্রিকায় পাকিস্তানের ১৪টা কূটনৈতিক মিশনের প্রধানদের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। তিনি সেই বৈঠকে অর্থনৈতিক কূটনীতির উপর জোর দেন। ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনকে পুঁজি করে আফ্রিকার দেশগুলির সাথে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে বাণিজ্য, অর্থের আদানপ্রদান, বিনিয়োগ, পর্যটন এবং প্রযুক্তি দেয়ানেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াবার উপর জোর দেন। তবে আফ্রিকায় পাকিস্তানের সম্পর্কোন্নয়ন শুধুমাত্র বাণিজ্যের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়।

 
২০১৩ সাল। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে পাকিস্তানি শান্তিরক্ষীদের মেডাল প্রদান করা হচ্ছে। শান্তিরক্ষী মিশনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার দেশগুলিতে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে চাইছে পাকিস্তান।


নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সামরিক প্রশিক্ষণ

অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার চিন্তা থেকে শুরু হলেও পাকিস্তান এই প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে; বিশেষ করে নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করার চেষ্টা করেছে। জাতিসংঘের হিসেবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শান্তিরক্ষী মিশনে পাকিস্তানের মোট ৪ হাজার ৭’শ ৩৭ জন সেনা মোতায়েন রয়েছে; যার প্রায় সবাই রয়েছে আফ্রিকার মাটিতে। এর মাঝে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে রয়েছে প্রায় ১২’শ; ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে রয়েছে প্রায় ১৯’শ; দারফুরে রয়েছে প্রায় ১ হাজার; দক্ষিণ সুদানে রয়েছে প্রায় আড়াই’শ; মালিতে রয়েছে প্রায় দেড়’শ সেনা। আফ্রিকার অনেক দেশের সেনারা পাকিস্তানের সামরিক একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার সামরিক ম্যাগাজিন ‘ডিফেন্স ওয়েব’ বলছে যে, ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে পাকিস্তানের এমনই এক সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মোতাবেক দক্ষিণ আফ্রিকার সেনারা পাকিস্তানে এবং পাকিস্তানের সেনারা দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রশিক্ষণ নেয়। ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪০ জনের মতো সেনা পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। এছাড়াও উভয় দেশের সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দ পারস্পরিক সফর বিনিময় করেছেন নিয়মিতই। পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজও নিয়মিত বিরতিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও আফ্রিকার অন্যান্য দেশও পাকিস্তানের দিকে তাকাচ্ছে প্রশিক্ষণের জন্যে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল পাকিস্তান সফরের সময় পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সমঝোতা করেন। ২০১৯ সালের জুলাইএ পাকিস্তান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল জাফর মাহমুদ আব্বাসির পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়া সফরের সময় কেনিয়া সরকার পাকিস্তানের সাথে সামরিক প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করার আগ্রহ ব্যাক্ত করে।

তুর্কি মিডিয়া ‘টিআরটি ওয়ার্ল্ড’এর এক লেখায় ‘রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট’এর ভিজিটিং ফেলো কামাল আলম বলছেন যে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এখন তার আন্তর্জাতিক অবস্থানকে বেশ শক্তিশালী করেছে। দুনিয়ার তিন ডজন দেশ তাদের সেনাদের পাকিস্তানে প্রশিক্ষণের জন্যে পাঠাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো আগের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও অর্থনৈতিক সহায়তার উপর নির্ভরশীলতা কমেছে পাকিস্তানের। অন্যদিকে আফগানিস্তানে বহুদিন ধরে যুদ্ধ করার কারণে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতাকে অনেক দেশই গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং পাকিস্তানিদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে চাইছে। এছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে লম্বা সময় পাকিস্তানিরা শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করার কারণে পাকিস্তানের সামরিক একাডেমিগুলিকে শান্তিরক্ষী প্রশিক্ষণের জন্যে প্রধান কেন্দ্র হিসবে দেখছে অনেক দেশ।

 
নভেম্বর ২০২০। নাইজেরিয়ার জন্যে তৈরি করা ‘জেএফ ১৭’ ফাইটার বিমান। নাইজেরিয়ায় পাকিস্তানের সামরিক সরঞ্জামের রপ্তানি বাড়ছে, তথাপি বাকি আফ্রিকায় পাকিস্তানের অস্ত্র বাণিজ্য এখনও উল্লেখ করার মতো নয়।


আফ্রিকার অস্ত্রের বাজারে পাকিস্তান

বহুদিন ভারতের সাথে সামরিক প্রতিযোগিতার কারণে পাকিস্তান তার সামরিক শিল্পকে গড়ে তুলেছে। এখন সেই শিল্পকে ব্যবহার করেই পাকিস্তান বৈদেশিক মুদ্র অর্জন করা ছাড়াও অন্তর্জাতিকভাবে বন্ধু তৈরি করতে চাইছে। ২০১৬ সালে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া পাকিস্তান থেকে ১০টা ‘সুপার মুশশাক’ প্রশিক্ষণ বিমান কেনার চুক্তি করে। এরপর ২০১৯ সালে নাইজেরিয়া ১’শ ৮৪ মিলিয়ন ডলারে পাকিস্তানের কাছ থেকে ৩টা ‘জেএফ ১৭’ ফাইটার বিমান এবং বিমানগুলির জন্যে বিভিন্ন অস্ত্র কেনার চুক্তি করে। ‘ডিফেন্স ওয়ার্ল্ড’ বলছে যে, নাইজেরিয়া ইতোমধ্যেই পাকিস্তান থেকে আরও ‘জেএফ ১৭’ বিমান কেনার জন্যে আলোচনা চালাচ্ছে। তবে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াতে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করার ব্যাপারটাকে ভারত ভালো চোখে দেখেনি। ভারতের ‘ইকনমিক টাইমস’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান ভারতের সামরিক সরঞ্জামের বাজারকে টার্গেট করে এগুচ্ছে।

 
জানুয়ারি ২০২০। ভারত মহাসাগরের সেইশেল দ্বীপপুঞ্জে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর জাহাজ। সফরকালে জাহাজগুলি আফ্রিকার উপকূলে বিভিন্ন স্থানে শুভেচ্ছা সফর সফর ছাড়াও সাধারণ জনগণের জন্যে মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করে। সেসব দেশের জনগণের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টাতেই এক সফরের আয়োজন করে পাকিস্তান নৌবাহিনী। তবে পাকিস্তানের কৌশলগত চিন্তায় এখনও পূর্ব আফ্রিকার উপকূলই প্রাধান্য পাচ্ছে।


নৌ কূটনীতি

‘গালফ নিউজ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ১৮ই জানুয়ারি পাকিস্তান নৌবাহিনীর সাপ্লাই জাহাজ ‘নাসর’ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আফ্রিকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, জাহাজটা বন্যা ও খরায় আক্রান্ত মানুষকে সহায়তা দিতে পূর্ব আফ্রিকার জিবুতি ও সুদান এবং পশ্চিম আফ্রিকার নিজের যাবে। এছাড়াও জাহাজটা কেনিয়ার মোম্বাসা বন্ধর সফর করবে। এর আগে ২০১৯এর নভেম্বর থেকে ২০২০এর জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তান নৌবাহিনীর ফ্রিগেট ‘আসলাত’ এবং সাপ্লাই জাহাজ ‘মোয়াউইন’ পুরো আফ্রিকা প্রদক্ষিণ করে। সফরকালে জাহাজগুলি মরক্কো, মৌরিতানিয়া, ঘানা, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া ও সেইশেল দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ করে। সফরকালে জাহাজগুলি বিভিন্ন স্থানে শুভেচ্ছা সফর ছাড়াও সাধারণ জনগণের জন্যে মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করে। সেসব দেশের জনগণের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টাতেই এই সফরের আয়োজন করে পাকিস্তান নৌবাহিনী।

চীনা সরকারি মিডিয়া ‘গ্লোবাল টাইমস’এর সাথে এক সাক্ষাতে পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল আমজাদ খান নিয়াজি পাকিস্তান নৌবাহিনীর আফ্রিকা প্রদক্ষিণের মিশনকে তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, এই মিশন ছিল পাকিস্তান সরকারের ‘এনগেজ আফ্রিকা’ নীতির অংশ। সরকারের আফ্রিকা নীতি যে নৌবাহিনীর প্রধান মিশনগুলির মাঝে পড়ছে না, তা ২০১৮এর ডিসেম্বরে প্রকাশ করা পাকিস্তানের ‘ম্যারিটাইম ডকট্রাইন’ থেকেই বোঝা যায়। প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা এই নীতিতে আফ্রিকার উল্লেখ নেই বললেই চলে। এই নীতির বর্ণনা দিতে গিয়ে নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার মুহাম্মদ আজম খান ‘গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস’এর এক লেখায় শুধুমাত্র পূর্ব আফ্রিকার উপকূলের কথাই উল্লেখ করেন।

পাকিস্তানের চিন্তা এখনও পূর্ব আফ্রিকা নিয়ে

২০১৯এর জুলাইএ পাকিস্তানের থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইন্সটিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদ’এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভারত মহাসাগরে ভারতের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আফ্রিকায় পাকিস্তানের রপ্তানি বৃদ্ধি করার উপর জোর দেয়া হয়। তবে প্রতিবেদনে বলা হয় যে, আফ্রিকায় ভারতের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে যতটা শক্তিশালী নৌবাহিনীর প্রয়োজন, পাকিস্তানের পক্ষে তা তৈরি করা কষ্টকর। এছাড়াও আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়ার উপকূলীয় শহরগুলিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনগণের বসবাস থাকায় সেখানে ভারতের প্রভাব তৈরি করাটা সহজ হয়েছে। সেখানে ভারতীয় পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকাটা পাকিস্তানের পণ্যের জন্যে বেশ কঠিন হবে। তবে বলাই বাহুল্য যে, প্রতিবেদনে মূলতঃ ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলিকে নিয়েই কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানের কৌশলগত চিন্তায় এখনও পূর্ব আফ্রিকার উপকূলই প্রাধান্য পাচ্ছে। পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়ার বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা, মরক্কো, নাইজেরিয়া এবং মিশর আফ্রিকায় পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী। ‘অবজারভেটরি অব ইকনমিক কমপ্লেক্সিটি’র হিসেবে পুরো আফ্রিকা থেকে পাকিস্তান যে ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কেনে, তার ৮৪ শতাংশই এই পাঁচ দেশ থেকে আসে; যদিও আফ্রিকার ১৪টা দেশে পাকিস্তানের কূটনৈতিক মিশন রয়েছে। আফ্রিকায় পাকিস্তানের মোট ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির ৪৬ শতাংশই যায় পূর্ব আফ্রিকার ৭টা দেশে।

নতুন নৌশক্তির উদ্দেশ্য কি?

১৯৯০এর দশক পর্যন্ত পাকিস্তানের নৌবাহিনীর মূল সমুদ্রগামী জাহাজ বলতে ছিল ১৯৭০এর দশকে ব্রিটেনে তৈরি ৬টা ‘টাইপ ২১’ ফ্রিগেট এবং ১৯৮০এর দশকে চীন থেকে ক্রয় করা ১৫ হাজার টনের সাপ্লাই জাহাজ ‘নাসর’। ২০০৪ সাল থেকে চীনের সহায়তায় ‘জুলফিকার ক্লাস’এর ৪টা ফ্রিগেট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৩ সালের মাঝে এই ফ্রিগেটগুলি পাকিস্তানের হাতে আসে। প্রায় একই সময়ে ২০১০ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর ‘অলিভার পেরি ক্লাস’এর পুরোনো একটা ফ্রিগেট পায় পাকিস্তান। ২০১৩ সালে তুরস্কের কোম্পানি ‘এসটিএম’এর সহায়তায় ১৭ হাজার টনের একটা সাপ্লাই জাহাজ তৈরি করা শুরু করে পাকিস্তান। ২০১৮ সালে ‘মোয়াউইন’ নামের এই জাহাজটা কমিশনিং করা হয়। ২০১৭ সালে হল্যান্ডের ‘ডামেন’ শিপইয়ার্ড থেকে ‘ইয়ারমুক ক্লাস’এর ২টা কর্ভেট অর্ডার করে পাকিস্তান। ২০২০এ এগুলি কমিশনিং করা হয়। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে চীন থেকে ৪টা ‘টাইপ ০৫৪ এপি ক্লাস’এর ফ্রিগেট অর্ডার করে পাকিস্তান। ২০২১ সালের মাঝেই সবগুলি জাহাজের কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। ২০১৮ সালে পাকিস্তান তুরস্কের কাছ থেকে ‘মিলজেম ক্লাস’এর ৪টা কর্ভেট অর্ডার করে। ২০১৯ থেকে এগুলির কাজ শুরু হয়ে ২০২৪এর মাঝে শেষ হবার কথা রয়েছে। নৌবাহিনীর জাহাজ ক্রয়ের এই প্রক্রিয়ার ফলাফলস্বরূপ ১৯৯০এর দশকে পাকিস্তান নৌবাহিনীর সমুদ্রগামী জাহাজ যেখানে ছিল ৬টা ফ্রিগেট ও ১টা সাপ্লাই জাহাজ, সেখানে ২০২০ সাল নাগাদ তা দাঁড়ায় ৮টা ফ্রিগেট, ২টা কর্ভেট, ২টা সাপ্লাই জাহাজে। এক দশকের মাঝে পাকিস্তান নৌবাহিনীর দূরদেশের বন্দরে পাঠাবার মতো জাহাজের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আরও ৪টা ফ্রিগেট ও ৪টা কর্ভেট বর্তমানে তৈরি হচ্ছে; যেগুলি বছর পাঁচেকের মাঝেই সার্ভিসে আসবে। তখন সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা আরও বাড়বে।

গত বেশ কয়েক দশক ধরেই পাকিস্তান নৌবাহিনীর মূল শক্তি সাবমেরিন। কিছুদিন আগ পর্যন্তও পাকিস্তান নৌবাহিনীর মূল শক্তি ছিল ৫টা সাবমেরিন। সমুদ্রগামী জাহাজ পাকিস্তানের শক্তিশালী হস্ত ছিল না কখনোই। সামরিক বাজেটের প্রায় সবটাই গিয়েছে সেনা এবং বিমান বাহিনীর কাছে। কারণ মূল উদ্দেশ্যই ছিল ভারতের সাথে স্থলসীমানা রক্ষা। পাকিস্তানের জনগণের কাছে নৌবাহিনীর গুরুত্ব কখনোই খুব বেশি ছিল না। ‘গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ এখনও নিজ চোখে সমুদ্র দেখেনি। তাই দেশটাকে ‘ম্যারিটাইম নেশন’ হিসেবে তৈরি করতে এখনও বেশ কষ্ট করতে হচ্ছে।

 
সেপ্টেম্বর ২০১৯। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্যে ‘মিলজেম ক্লাস’ কর্ভেট তৈরি উদ্ভোধন করছেন। ভারতের প্রভাবকে ব্যালান্স করে আফ্রিকার মাটিতে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চীন এবং তুরস্কের মতো দেশগুলির সহায়তা চাইবে পাকিস্তান।

আফ্রিকায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি?

আফ্রিকায় পাকিস্তানের কূটনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রে অর্থনীতি থাকলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কাশ্মিরকে সবসময়ই আলোচনার বিষয়বস্তু করেছে পাকিস্তান। কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক সমর্থন আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। ২০১৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান নৌবাহিনীর দু’টা জাহাজ পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়া ভ্রমণ করে। ‘দ্যা নিউজ’ বলছে যে, সেই ভ্রমণে পাকিস্তান নৌবাহিনীর কমান্ডার মৌরিতানিয়ার প্রতিনিধিদের সাথে কাশ্মিরে ভারতের আগ্রাসী কর্মকান্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেন। ‘দ্যা ফ্রন্টিয়ার পোস্ট’ বলছে যে, এই জাহাজগুলি পরবর্তী জানুয়ারি মাসে যখন তাঞ্জানিয়া সফর করে, তখনও পাকিস্তানি কমান্ডার কাশ্মির ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। পাকিস্তানের ‘ডন’ পত্রিকা বলছে যে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে কেনিয়ার নৌবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল লেভি ফ্রাঙ্কলিন মাঘালু যখন পাকিস্তান সফর করেন, তখন পাকিস্তান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল জাফর মাহমুদ আব্বাসি কাশ্মির ইস্যুকে তুলে ধরেন এবং সেখানে ভারতের ‘আর্টিকেল ৩৭০’ বাতিল করার পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলেন। তবে এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা পাকিস্তানের জন্যে বা কাশ্মিরের জন্যে কতটুকু সুবিধা এনে দিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। ২০১৯ সালের অগাস্টে কাশ্মির ইস্যু নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনার মুহুর্তে দক্ষিণ আফ্রিকা নিরপেক্ষ থেকেই দুই দেশকে আলোচনার পথ অনুসরণ করতে বলেছে। ভারতের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার বাণিজ্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। স্বাভাবিকভাবেই কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা শক্ত কোন বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত থাকে।

আফ্রিকায় পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কি?

পাকিস্তানের ‘লুক আফ্রিকা’ বা ‘এনগেজ আফ্রিকা’ নীতি মূলতঃ দেশটার অর্থনৈতিক দৈন্যতা থেকে মুক্তি পাবার একটা প্রচেষ্টা। এখানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এখনও কাশ্মিরের পক্ষে ফাঁপা জনসমর্থন আদায়ের মাঝেই সীমিত। আফ্রিকার সাথে ভারতের বাৎসরিক বাণিজ্য ৬২ বিলিয়ন ডলারের উপরে; যার ধারেকাছেও নেই পাকিস্তান। তাই আফ্রিকায় পাকিস্তানের প্রভাব এখনও উল্লেখ করার মতো নয়। তবে পাকিস্তান তার নামকরা ইন্টেলিজেন্সের কারণে আফ্রিকায় নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার একটা জোর প্রচেষ্টা চালাতে পারে। পাকিস্তানের চিন্তাবিদেরা ভারত মহাসাগরে ভারতের প্রভাব কমাবার কৌশল হিসেবে আফ্রিকায় বাণিজ্য বৃদ্ধির কথা বললেও তা মূলতঃ পূর্ব আফ্রিকাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। যদিও পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় পাকিস্তানের সামরিক সরঞ্জামের রপ্তানি বাড়ছে, তথাপি বাকি আফ্রিকায় পাকিস্তানের অস্ত্র বাণিজ্য এখনও উল্লেখ করার মতো নয়। ভারতকে মোকাবিলার জন্যে তৈরি করা অস্ত্রগুলি আফ্রিকার দেশগুলির জন্যে সকল ক্ষেত্রে উপযোগী নয়। তারপরেও ভারতীয় চিন্তাবিদেরা আফ্রিকায় পাকিস্তানের অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। পাকিস্তানের নৌবাহিনী আফ্রিকা প্রদক্ষিণ করে আসলেও আফ্রিকা নিয়ে পাকিস্তানের চিন্তা এখনও যথেষ্টই সংকীর্ণ। আফ্রিকার উপকূলে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রভাবের তুলনায় তা এখনও উল্লেখ করার মতো কিছু নয়।

তথাপি পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কমার সাথেসাথে পাকিস্তানের মতো দেশের প্রভাব তৈরি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আফ্রিকায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নেবার ফলে আফ্রিকার দেশগুলির সাথে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর একটা নির্ভরতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যা পাকিস্তান এখন ব্যবহার করতে চাইছে। ভারতের প্রভাবকে ব্যালান্স করে আফ্রিকার মাটিতে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চীন এবং তুরস্কের মতো দেশগুলির সহায়তা চাইবে পাকিস্তান। রূঢ় অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে আফ্রিকা নীতিকে হাল্কা করে দেখাটা পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব নয়। দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনও সমুদ্র না দেখলেও একটা শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ার দিকে এগুচ্ছে পাকিস্তান, যা কিনা পাকিস্তানের জন্মের পর সাত দশকে প্রথমবারের মতো দেশটার দৃষ্টিকে ভারত এবং আফগানিস্তানের স্থলসীমানা থেকে মহাসাগরের দিকে নিয়ে যাবে। আফ্রিকার সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জই পাকিস্তানকে এই কঠিন লক্ষ্য বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাবে। আর এতে আফ্রিকার মাটিতে পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থার ফলাফল হিসেবে নতুন ভূরাজনৈতিক খেলায় পাকিস্তানও যোগ হবে। আফ্রিকার প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তিরা পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তারকে কিভাবে দেখবে, সেটাও হবে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

2 comments:

  1. আপনার প্রতিবেদন পড়ে সত্য ঘটনার আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা গনমাধ্যমে যে সকল খবর শুনি তার মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝা যায় না কেমন যেন অসম্পূর্ণ মনে হয়। কেন তারা এই রকম ভাবে খবর পরিবেশন করে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটা খবর সত্য বা মিথ্যা কিনা, সেটা নির্ভর করছে লেখাটা কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছে এবং পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি সেই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলছে কিনা। একটা ভুল খবরও পাঠকের কাছে ঠিক মনে হতে পারে যদি খবরের দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলে যায়।

      গণমাধ্যম তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই খবর উপস্থাপন করে। অনেক ক্ষেত্রেই সেই দৃষ্টিভঙ্গি কোন নির্দিষ্ট আদর্শের অংশ অথবা কমপক্ষে সেই আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাঠক যদি আদর্শের সাথে পুরোপুরি একমত না থাকেন, তাহলে গণমাধ্যমের খবরগুলিকে ভুল বা মিথ্যা ও বানোয়াট মনে হতে পারে।

      উদাহরণস্বরূপ, গণমাধ্যমে একজন 'সেলেব্রিটি'কে যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়, ততটা গুরুত্ব একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা গবেষককে দেয়া হয় না। একজন 'সেলেব্রিটি' মৃত্যুবরণ করলে গণমাধ্যমে যতটা গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হয়, তা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতে পারে। ঠিক একইভাবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তিকে 'সেলেব্রিটি'তে পরিণত করা হয়। এই ব্যাপারগুলি একজন ব্যক্তি যখন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন, তখন তার কাছে গণমাধ্যমের তৈরি করা 'সেলেব্রিটি'লে কৃত্রিম মনে হবে। এবং একইসাথে সেই 'সেলেব্রিটি' ছাড়াও গণমাধ্যমের অনেক কিছুই বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে না।

      পুরো ব্যাপারটাই দৃষ্টিভঙ্গির।

      Delete