Tuesday 2 February 2021

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব

৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২১

গণতন্ত্র নয়, বরং চীনের সাথে ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতার ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার কারণেই মিয়ানমারের সামরিক শাসকদেরকে পশ্চিমারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে বাধ্য হবে। আর সু চি ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধনের পক্ষে কথা বলে তার গণতান্ত্রিক স্বরূপ দেখিয়েছেন। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের আদর্শ ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার সামনে দাঁড়াতেই পারছে না।

 
পহেলা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। তবে তা না হয়ে এক সামরিক অভ্যুত্থানে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করে এক বছরের জন্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। গত নভেম্বরে একচ্ছত্রভাবে নির্বাচনে জেতে সু চির ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’ বা ‘এনএলডি’। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দাবি করে যে, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। তবে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন কারচুপির অভিযোগ বাতিল করে দেয়। নির্বাচনে ‘এনএলডি’ মোট ২’শ ২৪টা আসনের মাঝে ১’শ ৩৮টা আসন পায়। বাকি সকল দল মিলিয়ে পায় মাত্র ৩০টা আসন। ২০০৮ সালে সামরিক বাহিনীর সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে রচিত সংবিধান অনুযায়ী ৫৬টা আসন সামরিক বাহিনীর জন্যে বরাদ্দ থাকে। ২০১৯ সালে ‘এনএলডি’ সংবিধানে পরিবর্তন আনার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে লাগবে ৭৫ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ সামরিক বাহিনীর জন্যে বরাদ্দ রাখা ২৫ শতাংশ আসন বাদে সকল আসনই একটা দলকে পেতে হবে। তবে সামরিক বাহিনীর সমর্থিত ‘ইউএসডিপি’ দল মাত্র ৩০টা আসন পেলেও তা সংবিধান পরিবর্তন রুখে দেবার জন্যে যথেষ্ট। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সংবিধানের ‘আর্টিকেল ৪১৭’ এবং ‘আর্টিকেল ৪১৮’এর বরাত দিয়ে ক্ষমতা দখল করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। এই অভ্যুত্থানের ভূরাজনৈতিক প্রভাব কতটুকু, তা নিয়ে এখন শুরু হয়েছে আলোচনা।

‘এসোসিয়েটেড প্রেস’ বলছে যে, অনেকেই এই অভ্যুত্থানে অবাক হয়েছে। কারণ সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বাহিনীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল। স্বরাষ্ট্র, সীমান্ত এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছাড়াও দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্টের একজন সামরিক বাহিনী থেকে আসতো। কেউ কেউ মনে করছেন যে, ২০১১ সাল থেকে সামরিক বাহিনীর প্রধান থাকা সিনিয়ন জেনারেল মিং অং হিয়াংএর অবসরের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে অভ্যুত্থানের সম্পর্ক থাকতে পারে।

মার্কিন থিংকট্যাঙ্ক ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স’ বা ‘সিএফআর’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, সু চি কার্যত মিয়ানমারের বেসামরিক প্রধানই ছিলেন। নিজের দলের মাঝে তার ক্ষমতা ছিল একচ্ছত্র এবং সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা তিনি করেননি। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা তো তিনি করেনইনি, বরং সামরিক বাহিনীর ব্যাপক মানবাধিকার লংঘনকে তিনি সমর্থন করে গেছেন। মিয়ানমারের মিডিয়ার স্বাধীনতাকেও তিনি দমিয়ে রেখেছিলেন। রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযানকে তিনি সমর্থন করে গেছেন। গত বেশ কয়েক বছর ধরে সু চির গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টাটা পুরোপুরি ব্যর্থ ছিল। তবে অভ্যুত্থানের কারণে ‘এনএলডি’র নেতৃত্বে জনগণের মাঝে অসন্তোষ যেমন দানা বেঁধে উঠতে পারে, তেমনি দেশটার বহু জাতিগত বিরোধ থামাতে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলি ভেস্তে যেতে পারে।

‘এসোসিয়েটেড প্রেস’ বলছে যে, আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর সামরিক বাহিনীর অত্যাচারকে সমর্থন করে সু চি তার নোবেল বিজয়ী পরিচয়কে ধ্বংস করেছেন। প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিবিদ বিল রিচার্ডসন এক বার্তায় বলেন যে, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক চিন্তাগুলি এগিয়ে নিতে ব্যর্থতার কারণে সু চির উচিৎ অন্য কারুর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া। তবে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সু চিকে সমর্থন করে মিয়ানমারের উপর নতুন করে অবরোধ দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেনডেজ বলছেন যে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা না ছাড়লে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের উচিৎ মিয়ানমারের উপর কঠোর অবরোধ আরোপ করা।

‘সিএফআর’ বলছে যে, পশ্চিমা দেশগুলি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলেও মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলি তেমন কঠোর ভাষায় কথা বলছে না। চীন এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই মিয়ানমারকে স্থিতিশীল দেখতে চায় বলে বলেছে। বাংলাদেশ আশা করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন। একইসাথে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সু চি স্টেট কাউন্সিলর থাকার সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে হতাশা এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের কথাও উল্লেখ করা হয়। মিয়ানমারে সবচাইতে বড় বিনিয়োগকারী দেশ সিঙ্গাপুর যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত কোন কথা বলা থেকে তারা বিরত থাকে।

মিয়ানমারের সবচাইতে বড় বাণিজ্য সহযোগী হলো চীন। মিয়ানমার থেকে চীনে রপ্তানি করা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হলো প্রাকৃতিক গ্যাস; যার সবচাইতে বড় রিজার্ভ হলো রাখাইন উপকূলে। চীন এবং থাইল্যান্ডে প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস রপ্তানি করছে মিয়ানমার। ইউরোপিয়ান কমিশনের হিসেবে মিয়ানমারের সাথে ইইউএর মোট বাণিজ্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার; যার মাঝে ইইউতে মিয়ানমারের রপ্তানি প্রায় ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপে মিয়ানমারের মূল রপ্তানি দ্রব্য হলো তৈরি পোষাক এবং পাদুকা। তবে করোনা মহামারির মাঝে পশ্চিমা বাজারে মিয়ানমারের তৈরি পোষাকের সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের মোট রপ্তানির মাত্র ৩ শতাংশের ক্রেতা। অপরদিকে চীন ৩৩ শতাংশ, থাইল্যান্ড ১৮ শতাংশ এবং জাপান ৮ শতাংশের ক্রেতা। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা ভারত, হংকং, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া। মোটকথা মিয়ানমারের মূল বাণিজ্য সহযোগী হলো এশিয়ার দেশগুলি। ‘মিয়ানমার টাইমস’ বলছে যে, সেদেশে সবচাইতে বড় বিনিয়োগকারী দেশ হলো সিঙ্গাপুর। দেশটাতে গণতন্ত্রায়ন শুরু হবার পর থেকে রাখাইনে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনকে উপেক্ষা করেই যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু এই দেশগুলি সেদেশে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে এবং সেখানে চীনের একচেটিয়া প্রভাব অনেকটাই কমাতে সহায়তা করেছে। এখন মিয়ানমারের উপর পশ্চিমা অবরোধ বিনিয়োগকারী দেশগুলিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ভূরাজনীতি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘স্ট্রাটফর’ বলছে যে, মিয়ানমারের উপর অবরোধ দেয়া ছাড়া বাইডেন প্রশাসনের সামনে খুব বেশি পথ খোলা নেই। কিন্তু এহেন অবরোধে সেখানে মার্কিন প্রভাব আরও কমে গিয়ে চীনা প্রভাব বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি হয়ে দাঁড়াবে। ‘স্ট্রাটফর’এর কথা বোঝা যাচ্ছে যে, গণতন্ত্র নয়, বরং চীনের সাথে ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতার ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার কারণেই মিয়ানমারের সামরিক শাসকদেরকে পশ্চিমারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিতে বাধ্য হবে। আর সু চি ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধনের পক্ষে কথা বলে তার গণতান্ত্রিক স্বরূপ দেখিয়েছেন। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের আদর্শ ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার সামনে দাঁড়াতেই পারছে না।

14 comments:

  1. ভারত কি চাইছে ও মুলত বাংলাদেশ কি চাইছে

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভারত চাইছে চীনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বাংলাদেশ চাইছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

      Delete
  2. ১৯৪৮ সালের ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার পর অন সাং চির পিতা ক্ষমতায় আসে। মায়ানমারের ব্রিটেনের কতৃত্ব স্তিমিত হয়ে পডে।সুচির পিতার গুপ্ত হত্যার পর মায়ানমারের সেনাবাহিনীর মাধমে পুনরায় ব্রিটেন খেলায় ফিরে আসে। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং সফলতার মুখ হিসেবে নোবেল প্রাপ্ত সুচি আংশিক ক্ষমতায় আসে। গেইম বিটুইন ব্রিটেন vs USA এখানে।ক্ষুদ্র চুতোকে কাজে লাগিয়ে মায়ানমারে বর্বর সেনাবাহিনী মুসলিম রোহিংগাদের গণহত্যা শুরু করে। আমেরিকান এজেন্ট সুচির সরকার আরো বেশি ক্ষমতা গ্রহণে রোহিংগা গণহত্যাকে পুরুপুরি সমর্থন করে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। যার ফলে আমরা পশ্চিমা সবগুলো সরকারের Word through mouth বা মোখিক বিবৃতি ছাড়া রোহিংগাদের সমস্যা সমাধান থেকে মায়ানমারের দখলদারীত্বকে প্রাধান্য দেখতে পাই। আসলে এরা কখনোই মুসলিমদের সমস্যার সমাধান করবেনা সমাধান মুসলিমদেরই করতে হবে। বর্তমান সেনাবাহিনীর পুণঃ নিয়ন্ত্রণ মূলত বিট্রেনের কতৃত্বের পূনঃপ্রতিষ্টা মাত্র। এখানে কম বা বেশি গণতন্ত্রের নামে আমেরিকার কতৃত্ব প্রতিষ্টা চেষ্টার মাত্র।
    আমার দৃষ্টিতে এটাই মনে হচ্ছে। ব্রিটেন এখানে চায়নাকে ডাইরেকট ব্যাবহার করছে।ইন্টারনাল রিলেশন মেইন্টেইন করাচ্ছে। আপনার মত আশা করছি

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার বিশ্লেষণ দেখে আনন্দ লাগছে যে ব্রিটেন এবং আমেরিকার দ্বন্দ্ব আপনি ধরতে পারছেন। আদর্শিক শক্তিগুলি ছাড়া এধরনের ভূরাজনৈতিক খেলা কারুর পক্ষেই খেলা সম্ভব না। আর এই মুহুর্তে যেহেতু আমেরিকা এবং ব্রিটেনই মূল আদর্শিক শক্তি, তাই এদের দু'জনের মাঝেই যে প্রতিযোগিতা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে দুনিয়াব্যাপী ব্রিটেন আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের অনেকগুলি দ্বন্দ্বই মূলতঃ এদের দু'জনের দ্বন্দ্ব; যদিও সাধারণ মানুষ সেটা বুঝতে সক্ষম নয়।

      চীনকে ব্রিটেন পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে কিনা, তা নির্ভর করছে ব্রিটেনের আদর্শিক সক্ষমতার উপর। যেহেতু পশ্চিমা চিন্তাই এখন অস্তগামী, তাই ব্রিটেনও অস্তগামী সূর্যের মতোই। তদুপরি এখনও ব্রিটেন আদর্শিক শক্তি, যা তাকে চীন বা রাশিয়ার মতো জাতীয়তাবাদী শক্তি থেকে আলাদা করে। ব্রিটেন এই মুহুর্তে ভারত মহাসাগরে যথেষ্ট ব্যস্ত। এটা স্বাভাবিক যে, এর প্রতিফলন ভারত মহাসাগরের আশেপাশের দেশগুলিতে দেখা যাবে, যেমন - মধ্যপ্রাচ্য, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইত্যাদি দেশে।

      Delete
  3. I think the coup is pre planned through enormous support from Aung Sung Su Kee from the backdoor. Myanmar is currently utilizing backup plan just like North Korea. In such case why not Bangladesh adopting Israeli strategy to cope up in South Asia???????

    ReplyDelete
    Replies
    1. May I know, what is the basis of your thinking such?

      1. Coup done with Suu Kyi's support
      2. Myanmar acting like North Korea
      3. Whether Bangladesh should go Israel's way

      Please do bother to mention what is the basis of such thinking....

      Delete
    2. 1. To control inner situations as Myanmar is facing enormous internal and international pressure. Just to deviate the eyesight. Wait for a few days, you will see juntas acting like Mahatma Gandhi towards the Rohingyas living inside the territory.

      2. It's a mere assumption to me just like an updated version of the country e.g. North Korea 2.0

      3. Indicating towards more stable and viable aggressive diplomacy. South Korea and Japan is doing the same when it comes to North Korea and China. Same for Israel who did and is doing all sorts of aggressive activities for the sake of it's sovereignty.
      And sorry for late reply... I actually didn't get the notification.

      Delete
    3. Well, you have described a lot on "how", but did not mention the basis of such thinking or "why"...

      For example, the main article on Myanmar is based on the thinking that the world is run on an ideology; and only an ideological power dominates the world because it provides the world with a rules-based order.... in this case, US is the current superpower; Britain was the previous one; though Britain still retains substantial influence through its traditional links.... Soviet Union, being the other ideological power, challenged US and Britain until 1990.... this is the basis behind the write-up....

      Delete
  4. রোহিংগাদের আরাকান থেকে বের করে দিয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে সামরিক জান্তা অকুন্ঠ সমর্থন পেয়েছিল। আন্তর্জাতিক অংগনেও বিশ্বশক্তিদের জটিল ভূরাজনৈতিক খেলার কারনে তাদের কোন কার্যকরি চাপ মোকাবেলা করতে হয় নাই। কিন্তু এই নির্বাচনের পর অং সাং সুচিকে সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটালে দেশের ভেতর এবং দেশের বাইরে থেকে প্রচন্ড চাপের সম্মূখিন হয়। মিয়ানমার সামরিক জান্তা বুঝতে পেরেছে যে এই ব্যাপারটা ক্রমাগতভাবে তাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে পারে। আর একবার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে তাদের বিচারের সম্মূখিন হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।

    কাজেই তারা জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা রোহিংগাদের বাংলাদেশ থেকে পূর্ন নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে ফিরিয়ে নেয়া শুরু করলে আন্তর্জাতিক অংগনে একটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুরু হবে। অর্থাৎ বিতারিত রোহিংগা জনগোষ্ঠিই হচ্ছে মিয়ানমার সামরিক জান্তার ট্রাম্পকার্ড।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মিয়ানমারের ঘটনা বুঝতে হলে ভারত মহাসাগরের ভূরাজনীতি বুঝতে হবে। এখানে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানগুলি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।

      মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সকল সময়ের জন্যেই ব্রিটিশপন্থী ছিল; এখনও তা-ই আছে। অং সান সু চির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছিল; সেটা আবারও ব্রিটিশদের হাতেই চলে গেল। এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে ব্রিটিশদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হলো; যদিও ভারতের বিজেপি সরকার এখনও যুক্তরাষ্ট্রপন্থী। তবে সেখানেও বিজেপি চাপের মুখে রয়েছে।

      ভারত মহাসাগরে ব্রিটেনের অবস্থান এখন আগের চাইতে অনেক বেশি শক্তিশালী। ওমানের দুকমে বিশাল নৌঘাঁটি তৈরি করেছে ব্রিটেন; যেখানে 'কুইন এলিজাবেথ ক্লাস' বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে তারা। বাহরাইনে তাদের ঘাঁটিতে এখন স্থায়ীভাবে একটা ফ্রিগেট এবং কয়েকটা মাইনসুইপার থাকছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইস্রাইলের সাথে আরব দেশগুলির সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পিছনে ব্রিটেনের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। ইয়েমেনের যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটেন মধ্যপ্রাচ্যে তার অবস্থানকে জারি রেখেছে ব্রিটেন।

      পূর্ব এশিয়ায়ও নিজ অবস্থানকে সুসংহত করছে ব্রিটেন। সিঙ্গাপুরে নতুন করে ঘাঁটি করতে চাইছে তারা। মালয়েশিয়ার সাথে পুরোনো চুক্তিগুলিকে আবারও সামনে নিয়ে আসছে তারা। জাপানের সাথে কৌশলগত চুক্তি করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও জাপানের সাথে অস্ট্রেলিয়া 'কোয়াড' জোট তৈরি করেছে বঙ্গোপসাগরের জন্যে।

      Delete
  5. আপনার কথা বুঝলাম না বিজিপিকে আমেরিকাপন্থী আর অন্যান্য সবাইকে তাহলে কি বিট্রিশপন্থী। ভারতকে নিয়ে বিট্রিশ আমেরিকা কি রকম দ্বন্দ্ব আছে। বিজিপি চাপের মুখে কি বিট্রেনের কারনে

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভারতের কংগ্রেস হলো ব্রিটিশপন্থী; এর জবাব হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রপন্থী হলো বিজেপি। বাকিগুলি এদেরই শাখাপ্রশাখা।

      আপনি আমার আগের লেখাগুলি অথবা বইগুলি পড়ে থাকলে জানতেন যে, ভারত এবং চীন দুনিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এই দুই দেশ এবং আশেপাশের অঞ্চলে দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষ বাস করে। তাই যে রাষ্ট্র সুপারপাওয়ার হতে চায়, সে ভারত এবং চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। একারণেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল যে, ব্রিটেনকে ভারত ছাড়তে হবে।

      ব্রিটেন ভারত ছাড়লেও কংগ্রেসের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলে তার প্রভাব ধরে রেখেছিল। একারণেই সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেক চেষ্টা করেও ভারতকে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র বানাতে পারেনি। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন একমত থাকার কারণে কিছু ক্ষেত্রে তারা একে অপরের প্রভাবকে মেনে নিয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে একে অপরের বিরোধিতা করেছে। এখনও ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব রয়েছে।

      ভারতের চলমান কৃষক অন্দোলন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটা সমস্যা। তবে যেহেতু তা বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে, তাই ব্রিটেন এর সুযোগ নিলে অবাক হবার কিছু নেই।

      Delete
  6. তাহলে চীনকে যে সুপার পাওয়ার বলা হচ্ছে চীন কি সুপার পাওয়ার হতে পারবে না

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি এই ব্লগের আগের লেখাগুলি পড়ুন।
      একইসাথে আপনি পড়ুন - "যুক্তরাষ্ট্রের পর..."

      বইটা পাবেন -
      পাঠক সমাবেশ, শাহবাগ
      বাতিঘর, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, বাংলা মোটর
      রকমারি ডট কম
      Bookends, inside Unimart superstore (Gulshan-2 and Dhanmondi Shat Masjid Road)

      Delete