Tuesday 23 February 2021

মার্কিন সোশাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’এর যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্য কি?

২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ 

 



গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি ‘ফেইসবুক’ অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্যে সংবাদ মিডিয়ার কনটেন্ট দেখা বা শেয়ার করার সক্ষমতা বন্ধ করে দেয়। কয়েক মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ‘ফেইসবুক’এর যে টানাপোড়েন চলছিল, তার ফলাফল ছিল এটা। অস্ট্রেলিয়ার আইনপ্রণেতারা আলোচনা করছেন যে, সংবাদ মিডিয়া এবং সোশাল মিডিয়ার মাঝে সম্পর্ককে নতুন করে কিভাবে ব্যালান্স করা যায়। প্রস্তাবিত নতুন আইনের অধীনে ‘ফেইসবুক’ এবং ‘গুগল’এ সার্চ রেজাল্টে বা নিউজ ফিডে সংবাদ কনটেন্ট দেখালে সংবাদ মাধ্যমকে অর্থ দেবে সোশাল মিডিয়া কোম্পানি। ২৩শে ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার ট্রেজারার বা অর্থমন্ত্রী জশ ফ্রাইডেনবার্গ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন যে, তিনি মার্ক জুকারবার্গের সাথে কথা বলেছেন এবং জুকারবার্গ তাকে আশ্বাস দিচ্ছেন যে, সামনের দিনগুলিতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের উপর থেকে ফেইসবুকের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে; কারণ ‘ফেইসবুক’ আবারও অস্ট্রেলিয়াকে বন্ধু হিসেবে নিচ্ছে।

‘বিবিসি’ বলছে যে, অস্ট্রেলিয়ার আইনপ্রণেতারা মনে করছেন যে, ডিজিটাল যুগে আয়ের বন্টনে সমতা আসা প্রয়োজন। কারণ সোশাল মিডিয়ার আবির্ভাবের পর থেকে সংবাদ মাধ্যমগুলির আয়ে ভাটা পড়েছে। ‘ফেইসবুক’ বলছে যে, মিডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে তারা আর্থিকভাবে খুব বেশি লাভবান না হওয়ায় কোম্পানিগুলির সাথে চুক্তি করতে চাইছে না তারা। ‘ফেইসবুক’এর মাত্র ৪ শতাংশ পোস্ট মিডিয়া থেকে আসা। ‘ফেইসবুক অস্ট্রেলিয়া’র প্রধান নির্বাহী উইলিয়াম ইসটন বলছেন যে, বিগত বছরে ‘ফেইসবুক’ অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া কোম্পানিগুলিকে ৫ বিলিয়ন ‘ক্লিক’ যোগাড় করে দিয়েছে; যা দিয়ে মিডিয়া কোম্পানিগুলির পোস্ট বহু মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। সেই হিসেবে ‘ফেইসবুক’এরই মিডিয়া কোম্পানিগুলির কাছ থেকে ৪’শ ৭ মিলিয়ন ডলার পাওয়া উচিৎ। বর্তমানে মার্কিন এবং ব্রিটিশ ব্যবহারকারীদের জন্যে ‘ফেইসবুক’ ‘নিউজ ট্যাব’ তৈরি করেছে; যার মাধ্যমে মিডিয়া কোম্পানিগুলির খবর শেয়ার করছে ‘ফেইসবুক’ এবং বিনিময়ে মিডিয়া কোম্পানিগুলি অর্থ পাচ্ছে।

সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানি ‘গুগল’ ইতোমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার সাথে সম্পর্ক কর্তনের চিন্তা করার পর আবারও ছাড় দেয়ার মানসিকতা দেখাচ্ছে। তবে গত কয়েকদিনের মাঝেই ‘গুগল’ অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটা মিডিয়া কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে। সার্চ ইঞ্জিনে মিডিয়া কোম্পানিগুলির কনটেন্ট যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মিডিয়া এসোসিয়েশন ‘নিউজ মিডিয়া এলায়েন্স’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০১৮ সালে নিউজ মিডিয়ার কারণে ‘গুগুল’ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ‘গুগল’এর ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহার করে ‘গুগল’ যে আরও আয় করে, তা এই হিসেবে ধরা হয়নি। অথচ পুরো যুক্তরাষ্ট্রের নিউজ মিডিয়া একত্রে সেবছর আয় করেছে মাত্র ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। ‘নিউজ মিডিয়া এলায়েন্স’এর প্রেসিডেন্ট ডেভিড চ্যাভার্ন বলছেন যে, তথ্য চায় বিনা খরচায় পাঠকের কাছে পৌঁছাতে; কিন্তু সাংবাদিকদের তো এই কাজের বিনিময়ে অর্থ দরকার। যদি মিডিয়া কোম্পানিগুলি সাংবাদিকতার উন্নয়নে কাজ করে আর সোশাল মিডিয়া এর বিনিময়ে কোন অর্থ দিতে না চায়, তাহলে মিডিয়ার কাজ কঠিন হয়ে যায়। ‘গুগল’ বলছে যে, এই প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য ফুটে ওঠেনি। ‘গুগল’ প্রতিমাসে মিডিয়া কোম্পানিগুলিকে ১০ বিলিয়ন ‘ক্লিক’ দিচ্ছে। এই ‘ক্লিক’ ব্যবহার করে মিডিয়া কোম্পানিগুলি পাঠক পাচ্ছে এবং বিজ্ঞাপন পাচ্ছে। ‘কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি’র প্রফেসর বিল গ্রুসকিন ‘দ্যা গার্ডিয়ান’কে বলেন যে, এই গবেষণার ভিত বেশ দুর্বল। তিনি বলছেন যে, সোশাল মিডিয়াকে আরও নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। তবে মিডিয়া গ্রুপগুলিরও উচিৎ আরও শক্ত তথ্যের উপর তাদের প্রতিবেদনকে দাঁড় করানো।

‘ফেইসবুক’ অস্ট্রেলিয় মিডিয়াকে আটকাতে গিয়ে তাদের ডোমেইন বন্ধ করেনি; বরং ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা ‘এআই’এর মাধ্যমে মিডিয়া কনটেন্ট বন্ধ করতে চেয়েছে। এখানেই হয়ে গেছে বিপত্তি। ‘ফেইসবুক’এর ‘এআই’ নিউজ মনে করে অস্ট্রেলিয়ার সরকারি কিছু পেইজ বন্ধ করে দেয়। এর মাঝে ছিল অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য দপ্তর এবং জরুরি সেবাদানকারী সংস্থার ফেইসবুক পেইজ। অনেকেই কোম্পানির এহেন সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বা ‘একনায়কোচিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। কেউ কেউ এই দাবিও করতে শুরু করেছেন যে, মিডিয়াগুলি বন্ধ করে দেয়ায় মিথ্যা বানোয়াট খবরে ভরে যাচ্ছে ‘ফেইসবুক’। তবে উল্টোদিকে কেউ কেউ বলছেন যে, অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত আইনের পিছনে মিডিয়া টাইকুন রুপার্ট মারডকের হাত রয়েছে। মারডকের ‘নিউজ কর্প’ অস্ট্রেলিয়ার প্রধান পত্রিকাগুলির অনেকগুলিরই মালিক। অস্ট্রেলিয়ার বৃহৎ মিডিয়া কোম্পানি ‘নাইন এন্টারটেইনমেন্ট’ বলছে যে, অস্ট্রেলিয়ার সরকার ও ‘ফেইসবুক’এর আলোচনার খবরে তারা খুশি হয়েছে। তারা আশা করছে যে, অচিরেই এই আলোচনা নতুন একটা বাণিজ্যিক চুক্তির দিকে এগুবে। তবে এই পুরো ব্যাপারটা ‘ফেইসবুক’এর দুর্নামের কারণ হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন যে, ‘ফেইসবুক’ গায়ের জোরে নিজের স্বার্থকে ধরে রাখতে চাইছে। আর অস্ট্রেলিয়ার সাথে সমমনা দেশগুলি ব্যাপারটাকে খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে, এবং তাদের দেশেও একই ধরনের আইন তৈরি করার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াকে উদাহরণ হিসেবে দেখছে।

গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন যে, ‘ফেইসবুক’এর সাথে অস্ট্রেলিয়া সরকারের দ্বন্দ্বকে যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটা বেসরকারি কোম্পানির সাথে অস্ট্রেলিয় সরকারের ব্যবসায়িক লেনদেন হিসেবে দেখছে। এই ব্যবসায়িক লেনদেনের মাঝে যারা যুক্ত রয়েছে, তারাই যেকোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। প্রাইসের কথায় পরিষ্কার যে, মার্কিন সরকার এই দ্বন্দ্বে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দাঁড়াতে চাইছে না। ‘ফেইসবুক’ এবং ‘গুগল’এর মালিক ‘এলফাবেট’ উভয়েই মার্কিন কোম্পানি। ২০২০ সালে ‘এলফাবেট’ আয় করে প্রায় ১’শ ৮২ বিলিয়ন ডলার। আর ‘ফেইসবুক’ আয় করে ৮৬ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্লোবাল ফিনান্স ম্যাগাজিন’এর হিসেবে ২০২০ সালের শেষে ‘এলফাবেট’এর বাজারমূল্য ছিল ১১’শ ১৬ বিলিয়ন ডলার; আর ‘ফেইসবুক’এর বাজারমূল্য ছিল ৭’শ ৯৫ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের সবচাইতে দামি কোম্পানিগুলির মাঝে ‘এলফাবেট’ ৫ম; আর ‘ফেইসবুক’ ৭ম। সবচাইতে দামি ১০টা কোম্পানির মাঝে ৬টাই মার্কিন; যার মাঝে ‘এপল’, ‘আমাজন’ এবং ‘মাইক্রোসফট’ও রয়েছে।

অপরদিকে ব্রিটেন সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে কথা বলেছে এবং সোশাল মিডিয়াকে একটা শৃংখলার মাঝে আনার প্রচেষ্টার আভাস দিয়েছে। ১৯শে ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ‘রয়টার্স’কে বলেন যে, ব্রিটেন অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার সাথে ‘ফেইসবুক’এর সমস্যার সমাধান চায়। তবে শেষ পর্যন্ত এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, একটা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের মাঝে যেন একটা ব্যালান্স থাকে। ‘নিউ ইয়র্ক পোস্ট’ বলছে যে, আরও কিছু দেশ অস্ট্রেলিয়াকে অনুসরণ করতে যাচ্ছে। ব্রিটিশ কমনওয়েলথের আরেক সদস্যরাষ্ট্র কানাডা অস্ট্রেলিয়াকে অনুসরণ করতে চাইছে। কানাডার মন্ত্রী স্টিফেন গাইলবল্ট বলেন যে, ‘ফেইসবুক’ যা করেছে তা একেবারেই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। কানাডা এই যুদ্ধের সন্মুখে রয়েছে; এবং ভীত হবে না। ‘ফেইসবুক’ এবং ‘গুগল’কে আয় শেয়ার করতে বাধ্য করতে কিছুদিন আগেই গাইলবল্ট অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীদের সাথে বসে একটা কোয়ালিশন তৈরি করতে চেয়েছেন। তিনি আশা করছেন যে, ১৫টা দেশ এই কোয়ালিশনে যুক্ত হতে পারে। তিনি প্রশ্ন করেন যে, ‘ফেইসবুক’ কি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি এবং অন্যান্য সকল রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে? ক্লেভারলি এবং গাইলবল্টের কথাগুলি বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, ব্রিটিশ কমনওয়েলথের দেশগুলি ‘ফেইসবুক’ এবং ‘গুগল’এর বিরুদ্ধে একটা আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন তৈরি করতে চাইছে; যার মূলে থাকবে নতুন কিছু আইন। আন্তর্জাতিক আইনকে নিজের প্রভাব বৃদ্ধিতে ব্যবহার করতে চাইছে ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’। এক্ষেত্রে ইউরোপিয় পুঁজিবাদের পুরোনো স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার করে আইনগত নেতৃত্ব নেয়ার মাধ্যমে মূলতঃ মার্কিন নেতৃত্বে থাকা সোশাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে বাকি দুনিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশকে তাদের সাথে চাইছে ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ কোন সুযোগই হাতছাড়া করতে চাইছে না; বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে, যার মাধ্যমে ব্রিটেন একসময় দুনিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছে।

5 comments:

  1. আপনার রিপোর্ট পড়ে সত্য কথার আভাস পেলাম। দেশী মিডিয়ার সব মানুষকে বিভান্ত করা নিউজ। ভাই আমার প্রশ্ন বাংলাদেশি মিডিয়া কার দখলে বিট্রেন না আমেরিকার

    ReplyDelete
    Replies
    1. আসলে পৃথিবীর সকল দেশেই সুপারপাওয়ারদের প্রভাব ধরে রাখার একটা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো মিডিয়া বা গণমাধ্যম। মিডিয়ার সংজ্ঞাটাই আসলে মানুষ জানে না; তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তের শিকার হয়।

      মিডিয়ার উদ্দেশ্য হলো এডিটর বা সম্পাদকের বক্তব্যকে তুলে ধরা। এই বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে বিভিন্ন জিনিসের অবতারণা করা হয় ব্যবসায়িক সফলতাকে ধরে রাখার জন্যে। বিশ্বের বেশিরভাগ মিডিয়াই অত গভীরভাবে চিন্তা করে চালানো হয় না। মিডিয়ার নেতৃত্ব সে-ই দেয়, যে মিডিয়ার উদ্দেশ্যগুলি জানে। বাকিরা এদেরকেই অনুসরণ করতে বাধ্য হয়।

      ব্রিটিশ এবং মার্কিন উভয়েই মিডিয়াতে শক্তিশালী। তবে আদর্শিক দিক থেকে পুরোনো হওয়ার কারণে ব্রিটিশরা এব্যাপারে বেশি শক্তিশালী। মিডিয়াতে সত্য-মিথ্যা বলে কিছু নেই। এডিটর যেটা বলতে চেয়েছেন, সেটাই বিভিন্ন তথ্য সন্বলিত করে প্রকাশ করা হয়। এক পক্ষের উদ্দেশ্যের সাথে আরেক পক্ষের উদ্দেশ্যের দ্বন্দ্ব থাকলে সংবাদের সত্যাসত্য নিয়ে কাদাছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়। মূল্য এটা আদর্শিক শক্তিদের মাঝে দ্বন্দ্ব; সত্যাসত্যের দ্বন্দ্ব নয়।

      মিডিয়ার মাধ্যমে একটা সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহায়তা করা যায়; আবার ক্ষমতা থেকে নামাবার চেষ্টাও করা যায়। আদর্শিক শক্তিরা কোন একটা উদ্দেশ্য নিয়েই চলে; তবে সেটা সবসময়ের জন্যে নির্দিষ্ট নয়। ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।

      Delete
  2. মিডিয়ার আসল সংঙ্গা কি স্যার এতটু বুঝিয়ে বলবেন

    ReplyDelete
    Replies
    1. রাষ্ট্রের কিছু বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছাবার কাজ করে মিডিয়া। একসময় এটা করতো কিছু ব্যক্তি; যারা নেতৃত্বের সিদ্ধান্তগুলি মানুষকে জানাতো। ইউরোপে আদর্শিক পরিবর্তনের পর থেকে মানুষের কাছে আদর্শিক বার্তা পৌঁছানোর কাজটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। এই কাজটা তখন করা হয় প্রিন্টিং প্রেসের মাধ্যমে; বই ছাপিয়ে। ঊনিশ শতকে প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবহার করেই প্রথম পত্রিকাগুলি তৈরি হয়। এগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল সম্পাদকের আদর্শিক বার্তাগুলি মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং জনমত গঠন করা। কিছু খবর আস্তে আস্তে যুক্ত করা হয় পত্রিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্যে। তবে ঘোড়ার গাড়ি এবং জাহাজ ব্যবহার করে খবর আনা-নেয়া সময়সাপেক্ষ ছিল। এটা পরিবর্তন হয় রেলওয়ের আবির্ভাবের পর থেকে। রেলওয়ে ব্যবহার করে খুব স্বল্প সময়ের মাঝেই খবর যোগাড় করা সম্ভব হয়। তখন খবর দিয়ে পত্রিকার পাতাগুলি ভরে ফেলা সম্ভব হয়। তবে মূল লক্ষ্য থাকে সম্পাদকের আদর্শিক বার্তা পৌঁছানো। সংবাদপত্রের কাটতি বাড়ানোর মাধ্যমে এটাকে একটা ব্যাবসায়িক আঙ্গিক দেয়া হয়।

      একটা সংবাদ কিভাবে প্রচার করা হবে, তা মূলতঃ পত্রিকার সম্পাদকের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। কেউ নিরপক্ষ নয়। নিরপক্ষ অর্থ হলো যাদের জন্যে সাহায্য দরকার ছিল তারা সেই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবে। উদাহরণস্বরূপ, পলাশীর যুদ্ধে মির জাফরের সেনারা নিরপেক্ষ থাকার কারণে নবাব পরাজিত হন।

      চিন্তার ভিন্নতার কারণে কোন এক পক্ষ অপর পক্ষের খবর প্রচারকে খারাপ চোখে দেখবে; বলবে যে, খবর ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। সকলেই নিজের সুবিধামতো খরব প্রচার করবে; যা তার আদর্শিক উদ্দেশ্যের সাথে যায়।

      Delete