Monday 30 August 2021

ইউরেশিয়া ... আফগানিস্তানের পর

৩০শে অগাস্ট ২০২১

ছবিঃ নভেম্বর ২০২০। কাতারের দোহায় তুর্কমেনিস্তানের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসেছেন তালিবান প্রতিনিধিরা। তুর্কমেনিস্তান চাইছে তার বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদকে দক্ষিণ এশিয়াতে বিক্রি করতে। আর আফগানিস্তান চাইছে এই লক্ষ্যে তুর্কমেনিস্তানকে একটা করিডোর দিতে।


আফগানিস্তানের উত্তরপূর্বের বাদাখশান প্রদেশ একসময় পৃথিবী বিখ্যাত ছিল কিছু দামী পাথরের জন্যে। নীল রঙের এই পাথরগুলির নাম লাপিস লাজুলি। মধ্যযুগে এই পাথর ইউরোপে রপ্তানি হতো; যেখানে এই পাথর গুঁড়ো করে ‘আলট্রাম্যারিন’ নামে একপ্রকারের নীল রঙ তৈরি করা হতো। এই রঙ দামি পেইন্টিংএ ব্যবহার করা হতো। আফগানিস্তান থেকে ইউরোপ পর্যন্ত যাবার প্রাচীন বাণিজ্যপথটাকে উপজীব্য করেই বর্তমানে আফগানিস্তান থেকে তুরস্ক পর্যন্ত ‘লাপিস লাজুলি করিডোর’ নামে একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। এই করিডোরের মাধ্যমে শুধু আফগানিস্তান নয়, আফগানিস্তানের পূর্বে দক্ষিণ এশিয়াকে স্থলপথে যুক্ত করা হবে ইউরোপের সাথে। একইসাথে এই করিডোর প্রাচীন ‘সিল্ক রোড’এর উপরে তৈরি চীনের ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা ‘বিআরআই’ প্রকল্পের সাথে যুক্ত হবে। এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো আফগানিস্তান; যেখানে এখন তালিবানরা ক্ষমতা নিয়েছে। গত ১৫ই অগাস্ট কাবুলে মার্কিন দূতাবাস হেলিকপ্টারের মাধ্যমে খালি করার পর এই বিশাল কৌশলগত করিডোরের ভবিষ্যৎ কি হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। একইসাথে আলোচনা হচ্ছে আফগানিস্তানের ঘটনাগুলি এই করিডোরের উপর অবস্থিত দেশগুলিকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

আফগানিস্তান থেকে তুর্কমেনিস্তান

মার্কিন থিংকট্যাঙ্ক ‘জেমসটাউন ফাউন্ডেশন’এর এক লেখায় মধ্য এশিয়া বিশ্লেষক প্রাক্তন মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তা পল গোবল বলছেন যে, আফগানিস্তানের যুদ্ধে তালিবানের বিজয় এবং সেখান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলে রাশিয়া এবং চীনসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলি বিচলিত হয়েছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সবগুলিই কঠোর একনায়কোচিত শাসনের অধীনে থাকায় এবং প্রতিটা দেশেই দীর্ঘমেয়াদী ইসলামী আন্দোলন থাকার কারণে রাশিয়া এবং চীন নিজেদের অবস্থানকে নতুন করে সাজাতে চাইছে। চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট গিয়েছে মধ্য এশিয়ার মাঝ দিয়ে। আর মধ্য এশিয়া থেকে চীনের জ্বালানির একটা বড় অংশ আসে। এছাড়াও চীনের আরেকটা বড় চিন্তা হলো শিনজিয়াং বা উইঘুর প্রদেশকে নিয়ে। মুসলিম অধ্যুষিত এই প্রদেশে চীনা সরকারের নিপীড়ন যখন চলমান, তখন চীনারা দুশ্চিন্তায় রয়েছে যে, আফগানিস্তানে তালিবানদের বিজয় চীনের মুসলিমদেরকে অনুপ্রাণিত করবে কিনা। রাশিয়া ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানের উত্তরে তাজিকিস্তান এবং কিরগিজস্তানে নিজেদের সামরিক অবস্থানকে সুসংহত করতে শুরু করেছে এবং ‘কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন’ বা ‘সিএসটিও’র অধীনে থাকা মধ্য এশিয়ার চারটা দেশের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এই দেশগুলির সীমান্ত নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার মূল ফোকাসই হলো সামরিক নিরাপত্তা। তবে এখানে রাশিয়ার সবচাইতে বড় দুর্বলতা হলো মধ্য এশিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশ তুর্কমেনিস্তান তার জন্মের পর থেকেই ‘নিরপেক্ষতা’র নীতিতে এগুবার কারণে দেশটা রাশিয়ার নেতৃত্বে তৈরি হওয়া ‘সিএসটিও’র সদস্য নয়। তাই রাশিয়া চাইছে যে, তুর্কমেনিস্তান ‘সিএসটিও’র সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়ে নিক এবং রুশ সহায়তা নিয়ে আফগানিস্তানের সাথে দেশটার প্রায় ৭’শ কিঃমিঃ সীমানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক।

তবে তুর্কমেনিস্তান থেকে পুরোপুরি ভিন্নরকম খবর আসছে। ২০২০এর নভেম্বরেই কাতারের রাজধানী দোহাতে তুর্কমেন কর্মকর্তারা তালিবান প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছেন। কাবুলের মার্কিন দূতাবাস খালি করার তিন দিন পর ১৮ই অগাস্ট আফগানিস্তানের উত্তরের শহর মাজার ই-শরীফে তুর্কমেনিস্তানের কনসাল বালখ প্রদেশের তালিবানদের নতুন প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাত করেন। তুর্কমেনিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই আলোচনাকে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ এবং গঠনমূলক বলে উল্লেখ করা হয়। এতে দুই দেশের সম্পর্ককে ভ্রাতৃসুলভ বলেও বলা হয়। একই দিনে আফগানিস্তানের পশ্চিমের শহর হেরাতেও তুর্কমেনিস্তানের প্রতিনিধির সাথে তালিবান প্রতিনিধির সাক্ষাত হয়। ১৮ই অগাস্ট তুর্কমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, আফগানিস্তানের সাথে সীমান্তে রাস্তা এবং রেললাইন খোলা রয়েছে এবং সেখানে স্বাভাবিক কর্মকান্ড চলছে। ‘ইউরেশিয়ানেট’এর এক প্রতিবেদনে তুর্কমেনিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের এই ‘হৃদ্যতাপূর্ণ’ সম্পর্ককে উভয় পক্ষের বাস্তববাদী চিন্তার ফলাফল বলা হচ্ছে। এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশী মধ্য এশিয়ার চারটা দেশ ঘুরে এসেছেন। তিনি আফগানিস্তানের আশেপাশের সকল দেশকে তালিবানদের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে অনুরোধ করেছেন। ১৭ই অগাস্ট তালিবান প্রতিনিধি সুহাইল শাহীন ব্রিটেনের ‘স্কাই নিউজ’এর সাথে এক সাক্ষাতে তুর্কমেনিস্তান থেকে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান এবং ভারত পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে কথা বলেন, যা ‘টিএপিআই’ বা ‘টাপি’ পাইপলাইন বলে পরিচিত। একইসাথে তুর্কমেনিস্তানের সাথে রেলযোগাযোগ প্রকল্পকেও তিনি প্রাধান্য দেবার কথা বলেন। এগুলির কর্মযজ্ঞ খুব শীঘ্রই শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সুহাইল শাহীন আফগানিস্তানকে মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মাঝে সেতু বলে আখ্যা দেন। এছাড়াও এবছরেই তালিবান প্রতিনিধি তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাদ ঘুরে আসেন এবং তুর্কমেনিস্তান থেকে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্যে গ্রিডলাইন প্রকল্পের কথাও আলোচনা করেন বলে বলছে জ্বলানি বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘আপস্ট্রিম’।

তুর্কমেনিস্তান চাইছে তার বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে। এই লক্ষ্যে দেশটার নেতৃত্ব শুধু চীনের বাজারের উপর নির্ভরশীল থাকতে চাইছে না। ‘টাপি’ পাইপলাইনের মাধ্যমে তুর্কমেনিস্তানের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের ‘গালকাইনিশ’ খনি থেকে পাকিস্তান এবং ভারত পর্যন্ত বছরে ৩৩ বিলিয়ন কিউবিক মিটার বা বিসিএম গ্যাস রপ্তানির চিন্তা করা হচ্ছে। এই গ্যাসের ৫ বিসিএম পাবে আফগানিস্তান; বাকি ২৮ বিসিএম সমভাবে বন্টিত হবে পাকিস্তান এবং ভারতের মাঝে। এই প্রকল্পে ১৮’শ ৪০ কিঃমিঃ পাইপলাইনের মাঝে প্রায় ১৬’শ কিঃমিঃ থাকবে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে। এর শেষ প্রান্ত থাকবে পাকিস্তানের সাথে ভারতের সীমান্ত শহর ফাজিলকাতে। তুর্কমেনিস্তানের আরেকটা প্রকল্প হলো কাস্পিয়ান সাগর, ককেশাস এবং তুরস্ক হয়ে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়া এবং ইরানের যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে রাশিয়া এবং ইরানকে বাইপাস করে তুর্কমেন গ্যাস ইউরোপে রপ্তানি হবে।
 
ছবিঃ আজেরবাইজানের আলাত সমুদ্রবন্দর। আজেরবাইজান এই বন্দর তৈরি করেছে মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সাথে যুক্ত হবার জন্যে। তুর্কমেনিস্তানের রেললাইন এবং সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে আফগানিস্তান এই বন্দরের সাথে যুক্ত হয়েছে।


কাসপিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে তুরস্ক এবং ইউরোপে

তুর্কমেনিস্তানের পশ্চিমে রয়েছে কাসপিয়ান সাগর। স্থলবেষ্টিত একটা হ্রদ হলেও এটাকে সাগর বলেই আখ্যা দেয়া হয়। তবে এটাকে আইনগতভাবে হ্রদ বলা হবে, নাকি সাগর বলা হবে, সেব্যাপারে এর উপকূলবর্তী পাঁচটা দেশের মাঝে বিরোধ ছিল। রাশিয়া এবং প্রাক্তন সোভিয়েত রিপাবলিক কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং আজেরবাইজান কাসপিয়ানকে সাগর বলতে চাইছিল; ইরান বলতে চাইছিল এটা একটা হ্রদ। ইরান চাইছিল এই ‘হ্রদ’এর পুরোটা আই পাঁচ দেশের মাঝে সমভাবে বন্টন করে দেয়া হোক। এতে এক দেশ আরেক দেশের অংশে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু রাশিয়া এতে রাজি ছিল না। কারণ এতে রাশিয়ার কাসপিয়ান সাগরের নৌবহর পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যেতো। শেষ পর্যন্ত দুই দশক আলোচনার পর ইরান রাশিয়ার সিদ্ধান্তই মেনে নিতে বাধ্য হয়। ‘বিবিসি’র এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, ‘হ্রদ’ ঘোষণা না দেয়ায় ইরানই হয়তো এই চুক্তিতে কিছু হারিয়েছে। তবে চুক্তিতে যেহেতু বলা হয়েছে যে, স্বাক্ষরকারী পাঁচ দেশ ব্যতীত কাসপিয়ানে আর কোন দেশের সামরিক অবস্থান থাকবে না, সেদিক থেকে ইরান হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। অপরদিকে তুর্কমেনিস্তান এবং আজেরবাইজান ‘সাগর’ ঘোষণায় খুশি হয়েছে। কারণ এতে তারা পশ্চিমা তেল কোম্পানিগুলিকে কাসপিয়ানের তলদেশ দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন তৈরি করতে ডাক দিতে পারবে। অর্থাৎ তুর্কমেনিস্তান তার বিশাল গ্যাস সম্পদ আজেরবাইজান, জর্জিয়া এবং তুরস্ক হয়ে ইউরোপে রপ্তানি করতে পারবে।

স্থলবেষ্টিত তুর্কমেনিস্তান সমুদ্র নিয়ে চিন্তা শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। তাদের উদ্দেশ্য হলো মধ্য এশিয়ার অন্যান্য স্থলবেষ্টিত দেশগুলিকে তুর্কমেনিস্তানের মাধ্যমে তুরস্ক, ইউরোপ এবং ভূমধ্যসাগরের সাথে সংযুক্ত করা। এই লক্ষ্যে ২০১৩ সালের অগাস্টে তুর্কি সহায়তায় তুর্কমেনিস্তান কাসপিয়ান সাগরের তীরে তুর্কমেনবাশি সমুদ্রবন্দর তৈরি শুরু করে। ২০১৮ সালের মে মাসে তুর্কমেন প্রেসিডেন্ট গুরবাঙ্গুলি বারদিমুহামেদভ প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার খরচে নির্মিত এই সমুদ্রবন্দর উদ্ভোধন করেন। প্রায় সমান্তরালে আরেকটা প্রকল্পে হাত দেয় তুর্কমেনিস্তান। দেশটার পূর্বে আফগানিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। তিন বছরের মাঝে তুর্কমেনিস্তান নিজেদের অংশের লাইনের নির্মাণ শেষ করে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরের ৩০ কিঃমিঃ লাইন নির্মাণ শুরু করে। এই লাইন উদ্ভোধন করা হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে। এর মাধ্যমে আফগানিস্তান যুক্ত হয়ে যায় কাসপিয়ান সাগরে তুর্কমেনবাশি সমুদ্রবন্দরের সাথে। এছাড়াও কাজাখস্তানও কাসপিয়ানের উপকূলে আকটাউ বন্দরের ১’শ কিঃমিঃ দক্ষিণে কুরিক রেল ফেরি টার্মিনাল চালু করে ২০১৬ সালে। ‘কাসপিয়ান নিউজ’ বলছে যে, এই বন্দর তৈরি করার সময় নির্মাতারা খেয়াল রাখছিলেন কাসপিয়ানের ওপাড়ে আজেরবাইজানের আলাত বন্দরের দিকে; যাতে করে কুরিকের রেলগাড়িগুলি আলাতে ওঠানামা করা যায়।


ছবিঃ অগাস্ট ২০২১। তুরস্কের সহায়তায় নির্মিত তুর্কমেনিস্তানের অত্যাধুনিক কর্ভেট ‘দেনিজ খান’। কাসপিয়ান সাগরের মাঝ দিয়ে তৈরি করা অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ করিডোরগুলির নিরাপত্তা দিতেই এই যুদ্ধজাহাজ তৈরি করা হয়। তবে এর মাধ্যমে কাসপিয়ান সাগরে চলমান অস্ত্র প্রতিযোগিতাও সামনে চলে আসছে।
 

কাসপিয়ানের পূর্বে তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাখস্তানের সাথে যুক্ত হবার জন্যে কাসপিয়ানের পশ্চিমে আজেরবাইজান নতুন সমুদ্রবন্দর তৈরিতে হাত দেয় ২০১০ সালে। রাজধানী বাকুর ৭০ কিঃমিঃ দক্ষিণে আলাতে এই বন্দরে রেল ফেরি টার্মিনাল তৈরি হয় ২০১৪ সালে; গাড়ির টার্মিনাল তৈরি হয় ২০১৬ সালে। ২০১৮ সালের মে মাসে আজেরি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিইয়েভ এই সমুদ্রবন্দর উদ্ভোধন করেন। এই বন্দরের মাধ্যমে তুর্কমেনবাশি বন্দর থেকে আসা রেলের বগি, ট্রাক এবং কনটেইনার আজেরবাইজানে প্রবেশ করবে। তুর্কমেনিস্তানের গ্যাস ব্যবহার করে তৈরি করা রাসায়নিক সারের অর্ধেক আজেরবাইজানের মাধ্যমে রপ্তানি হচ্ছে। তাই আজেরবাইজান আলাত সমুদ্রবন্দরে ২৫ লক্ষ টন প্রসেসিং সক্ষমতার একটা ফার্টিলাইজার টার্মিনাল তৈরি করছে।

মধ্য এশিয়ার সাথে তুরস্ক এবং ইউরোপের যোগাযোগের সর্ব পশ্চিমের প্রকল্প হলো আজেরবাইজানের বাকু থেকে জর্জিয়ার তিবলিসি হয়ে তুরস্কের কার্স পর্যন্ত রেললাইন। ‘বিটিকে’ নামে পরিচিত এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তুরস্কের সমর্থনে নেয়া এই প্রকল্পে আর্মেনিয়াকে বাইপাস করা হয়। ২০০৮ সালে রাশিয়া জর্জিয়া আক্রমণ করে বসলে প্রকল্প পিছিয়ে যায়। অবশেষে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ৮’শ ২৬ কিঃমিঃ লম্বা এই রেললাইন চালু হয়। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো একটা মালবাহী রেলগাড়ি চীন থেকে ইউরোপের চেক রিপাবলিকের প্রাগ স্টেশনে পৌঁছায়। এই রেলগাড়ি চীনের শিয়ান প্রদেশ থেকে কাজাখস্তান হয়ে কাসপিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে আজেরবাইজান পৌঁছে। এরপর ‘বিটিকে’ রেললাইন ব্যবহার করে তুরস্কের রেললাইনে পৌঁছায়; সেখান থেকে সহজেই ইউরোপে পৌঁছে যায়। ‘ডেইলি সাবাহ’ বলছে যে, প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কিঃমিঃ এই পথ রেলগাড়িটা পাড়ি দেয় ১২ দিনে। পুরো রুটে রেলগাড়িটা রাশিয়াকে বাইপাস করে।
 
কাসপিয়ান সাগরের এই সমুদ্রপথকে নিরাপত্তা দিতে আজেরবাইজান এবং তুর্কমেনিস্তান উভয়েই নৌবাহিনী তৈরিতে মনোনিবেশ করেছে। রাতারাতি তৈরি হওয়া তুর্কমেন নৌবাহিনীতে ক’দিন আগেই যুক্ত হয়েছে ৯১ মিটার লম্বা একটা কর্ভেট বা ছোট আকারের ফ্রিগেট ‘দেনিজ খান’; যা কিনা কাসপিয়ান সাগরের সর্বাধুনিক যুদ্ধজাহাজ। এর আগে তুর্কমেনিস্তানের জন্যে শিপইয়ার্ড তৈরি করে দেয় তুরস্কের ‘দিয়ারসান’ কোম্পানি। তাদের সহায়তায় তুর্কমেন নৌবাহিনী ২০১২ সাল থেকে মিসাইল সজ্জিত ১০টা ৫৬ মিটার লম্বা প্যাট্রোল বোট এবং ৬টা মিসাইল বোট তৈরি করে। কাসপিয়ানের অপর পাড়ে আজেরবাইজান ইস্রাইলের সহায়তায় তৈরি করেছে মিসাইল সজ্জিত ৬টা ৬২ মিটার লম্বা ‘তুফান ক্লাস’ প্যাট্রোল ভেসেল এবং ৬টা ‘শালদাগ’ ছোট প্যাট্রোল বোট। মাত্র এক দশকের মাঝেই এই দুই দেশ শক্তিশালী নৌবহর গড়ে তুলে; যার ফলশ্রুতিতে কাসপিয়ানে চলছে একটা অস্ত্র প্রতিযোগিতা; যেখানে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হলো তুরস্ক এবং ইস্রাইল।
 
ছবিঃ ‘লাপিস লাজুলি করিডোর’, যা তুরস্ক থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। তুরস্ক, আজেরবাইজান, তুর্কমেনিস্তান এবং পাকিস্তানের লক্ষ্য এতে যুক্ত হওয়া; তালিবানরাও একই লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের রেখে যাওয়া পরিকল্পনাগুলিই মধ্য এশিয়া তথা ইউরেশিয়াতে বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এই প্রকল্পগুলির ভূরাজনৈতিক ফলাফল হিসেবে ইউরেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে। আফগানিস্তানের ঘটনাগুলি একারণেই চীন থেকে রাশিয়া এমনকি তুরস্ক এবং ইউরোপ পর্যন্ত পুরো ইউরেশিয়াতে প্রতিফলিত হচ্ছে।


তুর্কমেনিস্তানের গ্যাস এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূকৌশলগত পরিকল্পনা

ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপথ এবং উত্তরের বিশাল দেশ রাশিয়াকে পুরোপুরি বাইপাস করে চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত রেল করিডোর তৈরি করা ছিল একটা বিরাট পরিকল্পনা। এর পিছনে তুরস্ক এবং চীনের বড় সহায়তা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনাটাই ছিল মূখ্য। যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে যে, চীনের সাথে ইউরোপের যোগাযোগ যেন রাশিয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়। এর সমান্তরালে তুর্কমেনিস্তানের মাঝ দিয়ে একটা রেল করিডোর তৈরি করা হয়েছে আফগানিস্তানের সীমানা পর্যন্ত। এর মাধ্যমে তুরস্কের সাথে আফগানিস্তান রেলপথে যুক্ত হয়েছে। পাকিস্তান চাইছে এই রেল করিডোরের সাথে যুক্ত হতে।

রেল করিডোর ছাড়াও আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তুর্কমেনিস্তানের বিশাল গ্যাসের ভান্ডার। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এই গ্যাস ‘টাপি’ পাইপলাইনের মাধ্যমে পাকিস্তান এবং ভারতে রপ্তানি হোক, যাতে মধ্য এশিয়ায় চীনের প্রভাব কমে আসে। আবার যুক্তরাষ্ট্র চাইছে তুর্কমেনিস্তানের গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছাক। এতে রাশিয়ার গ্যাসের উপর ইউরোপের নির্ভরশীলতা কমে আসবে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে যে, গ্যাস বিক্রি করার মাধ্যমে একদিকে রাশিয়া ইউরোপের উপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাচ্ছে; অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার উপর যেসকল অর্থনৈতিক অবরোধ দিচ্ছে, তা এই গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

পল গোবল বলছেন যে, মধ্য এশিয়াতে রাশিয়া এবং চীন উভয়েই স্থিতিশীলতা চাইলেও তাদের লক্ষ্য আলাদা। চীন মধ্য এশিয়া থেকে তার গ্যাস সরবরাহের যেমন নিরাপত্তা চায়, তেমনি মধ্য এশিয়া হয়ে ইউরোপ যাবার রেলপথেরও নিরাপত্তা চায়। মধ্য এশিয়াতে স্থিতিশীলতা চাওয়াটা চীনের একটা অর্থনৈতিক লক্ষ্য। অপরদিকে রাশিয়া তার দক্ষিণের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে সর্বদা। তাই মধ্য এশিয়ার দেশগুলির নিরাপত্তাজনিত দিকটাই রাশিয়ার জন্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তালিবানরা আফগানিস্তানে ক্ষমতা নেবার সাথেসাথেই মস্কো এবং বেইজিংএ তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে আস্তত্ব করেছে। তথাপি রাশিয়া এবং চীনের দুশ্চিন্তা পুরোপুরি চলে যায়নি। অপরিকে তুর্কমেনিস্তানকে নিয়ে রাশিয়া চিন্তিত হলেও তুর্কমেনিস্তান কিন্তু আফগানিস্তানের মাঝে তার সুযোগই দেখতে পারছে। কারণ তালিবানরা প্রথম থেকেই বলছে যে, তারা আফগানিস্তানের মাঝ দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন, রেললাইন এবং বিদ্যুৎ গ্রিডলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে ইচ্ছুক। মধ্য এশিয়াকে দক্ষিণ এশিয়ার সাথে অর্থনৈতিকভাবে যুক্ত করাটাই এখন তালিবানরা লক্ষ্য হিসেবে বলছে; যা কিনা তাদের বাস্তবতা মেনে নেবার চিন্তাতাকেই তুলে ধরে। একই লক্ষ্য তুরস্ক, আজেরবাইজান, তুর্কমেনিস্তান এবং পাকিস্তানের; আর তা হলো 'লাপিস লাজুলি করিডোর'এর সাথে যুক্ত হওয়া। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের রেখে যাওয়া পরিকল্পনাগুলিই মধ্য এশিয়া তথা ইউরেশিয়াতে বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এই প্রকল্পগুলির ভূরাজনৈতিক ফলাফল হিসেবে ইউরেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে। আফগানিস্তানের ঘটনাগুলি একারণেই চীন থেকে রাশিয়া এমনকি তুরস্ক এবং ইউরোপ পর্যন্ত পুরো ইউরেশিয়াতে প্রতিফলিত হচ্ছে।

7 comments:

  1. অনেকদিন পর চমকপ্রদ একটা আর্টিকেল পড়লাম, মনে রাখার মতো। পড়ার সময় দৃশ্যমান মনে হয়েছে ঘটনাকে। এটা সাধারণত ভূগোলবিদদের লিখায় পাওয়া যায়। এখন মনে পড়েছে, সিকউরিটি এনালাইসিস আর জিওপলিটিক্স উভয়ের ফোকাস পয়েন্ট একই। গ্লোব।

    ReplyDelete
    Replies
    1. যেহেতু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ভূগোল পড়ানো হয় না, তাই পাঠকেরা খুব সহজেই ভূগোলের ব্যাপারগুলি বুঝে ফেলবেন, সেটা মনে করাটা অন্যায়। মানচিত্র নিয়ে বসেও চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত এই করিডোর খুঁজে এটাকে বোঝা কঠিন। এই লেখায় পুরো ব্যাপারটাকে একত্রে দেখাবার একটা চেষ্টা করা হয়েছে; তবে সেটা কতটুকু সফল হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। কারণ পাঠকের মাঝেও অনেক ক্যাটাগরি রয়েছে।

      Delete
  2. আমেরিকা ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম এবং ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য উইথড্র করে।

    ১. ৪৫ বছর ব্যবধানে এই দুই ঘটনার ভিতর সাপেক্ষে সাদৃশ্য আর বৈসাদৃশ্য কোথায়?

    ২. আমেরিকার আফগানিস্তান থেকে সৈন্য উইথড্র করে আসার পরে তার মিত্ররা বর্তমানে আমেরিকার বৈশ্বিক প্রভাব/নেতৃত্ব ধরে রাখার সামর্থ্য নিয়ে কিরুপ চিন্তা করছে? এক্ষেত্রে মিত্র হিসাবে বৃটেন,ফ্রান্স,সৌদি আরব,জাপান,দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি ধরে নেয়া যেতে পারে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটা ভালো আলোচনা তুলে নিয়ে আসার জন্যে ধন্যবাদ।

      প্রথমতঃ ভিয়েতনাম থেকে ১৯৭৫ সালে পালিয়ে আসার কৌশলগত ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের ঘরেই গিয়েছিল। যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র হেরেছিল, তথাপি ১২ বছর কমিউনিস্টদেরকে ভিয়েতনামে ব্যস্ত রাখার কারণে কমিউনিস্ট বিপ্লব মালয় দ্বীপপুঞ্জে ছড়াতে পারেনি। ভিয়েতনামের যুদ্ধকে পুঁজি করে যুক্তরাষ্ট্র থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং সেই দেশগুলিতে কমিউনিস্ট আন্দোলন দমন করেছে। একইসাথে ইন্দোনেশিয়াতে সুহার্তো সরকারের ঐতিহাসিক দমনপীড়নের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কমিউনিস্ট বিপ্লবী এবং তাদের সম্ভাব্য সহায়তাকারীদেরকে হত্যা করে সেই দেশে কমিউনিস্ট বিপ্লবের টিকিটাও মুছে ফেলা হয়েছিল। এসকলই সম্ভব হয়েছিল ১২ বছর ভিয়েতনাম যুদ্ধকে চালিয়ে নেবার জন্যে।

      যুক্তরাষ্ট্র ছিল তখন শক্তিশালী সুপারপাওয়ার। ১৯৭০এর দশকে ইন্দোচীন এবং মালয় দ্বীপপুঞ্জে কমিউনিস্ট বিপ্লব দমন করার সাথেসাথে চীনের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে চীনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ব্যালান্সার হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত আক্রমণ এবং পারমাণবিক যুদ্ধের জুজু দেখিয়ে ইউরোপকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যেও তখন বেশিরভাগ অঞ্চল ব্রিটিশদের বলয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে চলে এসেছে; বিশেষ করে ইস্রাইল, মিশর, ইরান এবং সৌদি আরব। আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ থেকে ইউরোপিয়দের উৎখাত করেছে যুক্তরাষ্ট্র; আর বেশ কিছু দেশে কমিউনিস্ট বিপ্লবকে ঠেকিয়ে রেখেছিল তারা। ল্যাটিন আমেরিকাতেও কমিউনিস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলছিল; যদিও সেটা পুরোপুরি সফলতা পায়নি। তথাপি সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নকে শক্তভাবে গেড়ে বসতেও দেয়নি তারা। সেসময়ের যুক্তরাষ্ট আর ২০২১ সালের যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য। উপরে বর্ণিত অবস্থানগুলির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থানকে তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন কতটা দুর্বল। কাজেই ১৯৭৫ সালের যুক্তরাষ্ট্র যতটা সহজে সায়গন থেকে পালিয়ে আসাটা হজম করতে পেরেছিল, ২০২১ সালে কাবুল থেকে পালিয়ে আসাটা তাদের জন্যে সেরকমই বদহজম হয়েছে।

      ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং আদর্শিক সংঘাত নিয়ে একটা পুরোনো লেখা পড়তে পারেন -

      https://koushol.blogspot.com/2016/03/ideological-war-our-readiness.html

      দ্বিতীয়তঃ আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসার সময় বন্ধু দেশগুলির সাথে কথা না বলা এবং মার্কিন অভ্যন্তরীণ নীতি দ্বারা পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবার কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার বৈশ্বিক নেতৃত্ব যতটুকু অবশিষ্ট ছিল, তাও হারিয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত পাবেন এই লেখাটায় -

      https://koushol.blogspot.com/2021/08/afghan-disaster-snaches-last-hope-for-us-to-regain-world-leadership.html

      Delete
  3. অনেক ধন্যবাদ।

    আপনি লিখেছেন,"আফগানিস্তানের ব্যাপারে মার্কিন ইন্টেলিজেন্সের ব্যর্থতা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হারাবার ক্ষেত্রে মার্কিন ইন্টেলিজেন্সের দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যৎবাণী পুরোপুরিই সত্যি হতে চলেছে।"

    যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হারাবার ক্ষেত্রে মার্কিন ইন্টেলিজেন্সের দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যৎবাণীগুলো যদি বলতেন তাহলে এই ব্যাপারে আরও কিছু ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মার্কিন ইন্টেলিজেন্সের কিছু এডভাইজরি গ্রুপ রয়েছে; যাদের কাজ হচ্ছে বৈশ্বিক ভূরাজনীতি সামনে দিনে কেমন হতে পারে, তার একটা ধারণা দেয়া। 'গ্লোবাল ট্রেন্ডস' শিরোনামে এরকমই একটা সিরিজ তারা পাবলিশ করে। এরকম আরও বিভিন্ন সিরিজ রয়েছে। এই পাবলিকেশন্সগুলিতে তারা অনেকদিন আগেই বলেছিল যে, ২০২৩ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র তার বৈশ্বিক প্রভাবের প্রায় পুরোটাই হারিয়ে ফেলবে। এর স্থলাভিষিক্ত হবে বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তি এবং 'নন-স্টেট এক্টর'।

      এটা ২০২১ সাল। তারা একেবারে ভুল ভবিষ্যৎবাণী করেনি।

      Delete
  4. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার মাধ্যমে আমাদের জ্ঞান আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।

    ReplyDelete