Saturday 28 August 2021

কাবুল এয়ারলিফট মার্কিনীদের সামরিক কাজে বেসামরিক বিমান ব্যবহারের গুরুত্বকে সামনে নিয়ে এলো

২৮শে অগাস্ট ২০২১

ছবিঃ ২০০৩ সাল। কুয়েতে মার্কিন সেনাবাহিনীর ৪র্থ পদাতিক ডিভিশনের সেনারা বেসামরিক বিমান থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সেনারা কুয়েত থেকে ইরাকের অভ্যন্তরে সামরিক মিশনে অংশ নেয়। ২০০১ সালের পর থেকেই মার্কিন বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলি অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকে ধুঁকে চলছে বলে তারাও বিশ্বব্যাপী মার্কিন সরকারের কাজ পাবার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন সামরিক অপারেশন কমতে থাকলে মার্কিন এয়ারলাইন্সগুলিও আয় থেকে বঞ্চিত হবে। মার্কিন সামরিক বাহিনী এবং বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলির পারস্পরিক নির্ভরশীলতা উভয়কেই টিকিয়ে রেখেছে গত তিন দশক ধরে। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমার সাথেসাথে উভয়েই এখন সমস্যার মাঝে পড়েছে।



গত ২২শে অগাস্ট মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নাগরিক এবং মার্কিনীদের সহায়তা করা আফগানদের সরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিভিল রিজার্ভ এয়ার ফ্লিট’ বা ‘সিআরএএফ’কে কার্যকর করার আদেশ দেন। ‘সিআরএএফ’এর অধীনে ১৮টা বেসামরিক বিমানকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের অধীনে আনা হয়। সামরিক পত্রিকা ‘ডিফেন্স ওয়ান’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বারের মতো মার্কিন সামরিক কর্তৃপক্ষ জরুরি সামরিক মিশনে ‘সিআরএএফ’কে ব্যবহার করছে। মার্কিন পরিবহণ দপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘সিআরএএফ’ হলো এমন একটা প্রকল্প, যার মাধ্যমে মার্কিন বেসামরিক বিমান সংস্থাগুলি স্বেচ্ছায় নিজেদের বহরের প্রতিশ্রুত বিমানের মাঝে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বিমান যেকোন সময় মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করতে দেবে। প্রতিটা বিমানই যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত হতে হবে এবং প্রতিটা বিমানের জন্যে কমপক্ষে ৪ জন ক্রু থাকতে হবে। মার্কিন সামরিক কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে খেয়াল রাখে যেন এয়ারলাইন্সগুলি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করার সক্ষমতা ধরে রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ‘ট্রান্সপোর্টেশন কমান্ড’এর সাথে চুক্তি অনুযায়ী বিমান সংস্থাগুলি স্বেচ্ছায় বিমান দেয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের পণ্য এবং মানুষ পরিবহণের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবে।

‘সিআরএএফ’ আসলে কি জিনিস?

মার্কিন সামরিক বাহিনীর ‘এয়ার মোবিলিটি কমান্ড’এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হিসেবে দেখা যায় যে, ২০২১ সালের অগাস্টে ‘সিআরএএফ’এর অধীনে ২৪টা এয়ারলাইন্সের ৪’শ ৫০টা বিমান তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মাঝে ৪’শ ১৩টা বিমান রয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অপারেশনে। যার মাঝে ২’শ ৬৮টা বিমান রয়েছে দূরবর্তী রুটের জন্য; আর ১’শ ৪৫টা রয়েছে কাছাকাছি রুটের জন্যে। এছাড়াও ৩৭টা বিমান রয়েছে মার্কিন মূল ভূখন্ডে পরিচালনার জন্যে। তবে এই সংখ্যাগুলি প্রায় প্রতিমাসেই পরিবর্তিত হচ্ছে।

১৯৫১ সালের ডিসেম্বরে ‘সিআরএএফ’এর জন্ম। এর মাত্র কয়েক বছর আগেই বার্লিন এয়ারলিফটের সময় কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই বেসামরিক বিমান ব্যবহার করে বার্লিনে জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পরিবহণ করা হয়েছিল। ১৯৪৮ সালের ২৪শে জুন থেকে ১৯৪৯ সালের ১২ই মে পর্যন্ত ১৫ মাসে সোভিয়েত ইউনিয়নের বার্লিন অবরোধের সময় ২ লক্ষ ৭৮ হাজার ফ্লাইটে ২৩ লক্ষ ২৬ হাজার টনেরও বেশি মালামাল পরিবহণ করা হয়; যার ৭৬ শতাংশ পরিবহণ করেছিল মার্কিনীরা; ২৩ শতাংশ করেছিল ব্রিটিশরা। এই ঘটনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। ‘দ্যা ড্রাইভ’ ম্যাগাজিনের এই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বর্তমানে আফগানিস্তান মিশনের জন্যে প্রথম পর্যায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে; যার মাধ্যমে কোন একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে জরুরি দরকারে বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা হলো কোন অঞ্চলে বড় কোন যুদ্ধাবস্থা মোকাবিলা করা; যা বিমানের সংখ্যাকে অনেক বাড়িয়ে নেবে। আর তৃতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা হলো যদি বৈশ্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র কোন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে যা করা হবে। দরকার বিশেষে কিছু বিমান ২৪ ঘন্টা; কিছু ৪৮ ঘন্টা; আর কিছু ৭২ ঘন্টার মাঝে ব্যবহারের উপযোগী করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এর আগে দু’বার ‘সিআরএএফ’কে কার্যকর করা হয়েছিল। তবে ‘সিআরএএফ’এর বিমানগুলি বিভিন্ন সময়ে সামরিক মহড়ায় এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মিশনে নিয়মিতই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ১৯৯০ সালে প্রথম ইরাক যুদ্ধের সময় এবং ২০০৩ সালে দ্বিতীয় ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি মোতায়েন করার জন্যে প্রতিরক্ষা দপ্তর ‘সিআরএএফ’কে কার্যকর করেছিল। মার্কিন সরকারের ‘ডিফেন্স টেকনিক্যাল ইনফর্মেশন সেন্টার’এর ওয়েবসাইটে ‘র‍্যান্ড কর্পোরেশন’এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৯০ সালে ‘অপারেশন ডেজার্ট শিল্ড’ এবং ‘ডেজার্ট স্টর্ম’এর জন্যে ‘সিআরএএফ’এর ৭৭টা যাত্রীবাহী বিমান এবং ৩৯টা কার্গো বিমান কার্যকর করা হয়। এই বিমানগুলি মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো এবং সেখান থেকে ফেরত নিয়ে আসা সেনাদের ৬০ শতাংশ এবং মোট পণ্য পরিবহণের ২৫ শতাংশ পরিবহণ করে। এটা ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের মিশন। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ ছিল প্রথম পর্যায়ের অপেক্ষাকৃত ছোট মিশন। মার্কিন বিমান বাহিনীর ‘এয়ারফোর্স ম্যাগাজিন’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বিভিন্ন সময়ে ‘সিআরএএফ'’র বেসরকারি বিমানগুলি মার্কিন সামরিক মিশনের ৫০ শতাংশ জনবল এবং কার্গো পরিবহণ করে আসছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর চাইছে যে, বিশ্বব্যাপী মার্কিন সামরিক ঘাঁটি কমিয়ে আনার সাথেসাথে ‘সিআরএএফ’এর পিছনে খরচও যেন কমে আসে। কারণ এই খরচ এখন বাৎসরিক প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ শুরু করলে ‘সিআরএএফ’এর বিমানের ব্যবহার ভীষণভাবে বেড়ে যায়। মার্কিন এয়ারলাইন্সগুলি মার্কিন সরকারের কাজ পাবার উপরে অনেকাংশেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। মার্কিন সরকার নিয়ম পরিবর্তন করে বলে দেয় যে, এয়ারলাইন্সগুলির কমপক্ষে ৬০ শতাংশ আয় আসতে হবে বাণিজ্যিক পরিবহণের মাধ্যমে; বাকি ৪০ শতাংশ সরকারি কাজের মাধ্যমে আসতে পারে। মোট ২৪টা এয়ারলাইন্স ‘সিআরএএফ’এর আওতায় থাকলেও প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র পাঁচটা কোম্পানি; যেগুলি হলো, যাত্রী পরিবহণের জন্যে ‘আমেরিকান এয়ারলাইন্স’, ‘ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স’, ‘ডেল্টা এয়ারলাইন্স’; আর কার্গো পরিবহণের জন্যে ‘ফেডএক্স’ ও ‘ইউনাইটেড পার্সেল সার্ভিস’। মার্কিন সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ের জন্যেই বেশি বিমান চাওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হবে দু’টা সেনা ব্রিগেডকে যেন তার সকল রসদসহ এক সপ্তাহের মাঝে দুনিয়ার যেকোন স্থানে মোতায়েন করা যায়; অথবা কোন জনহিতকর কাজে যেন ব্যবহার করা যায়। আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দর থেকে মানুষ সরিয়ে নেয়াটা এমনই একটা প্রথম পর্যায়ের মিশন। 


ছবিঃ ২০০৪ সাল। বেসামরিক বিমানে ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছে মার্কিন সেনারা।

 
আফগানিস্তানের মিশনে বেসামরিক বিমানের ব্যাপক ব্যবহার

প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনের আদেশ অনুযায়ী ‘আমেরিকান এয়ারলাইন্স’, ‘এটলাস এয়ার’ এবং ‘ডেল্টা এয়ারলাইন্স’ তিনটা করে বিমান দেবে; ‘অমনি এয়ার’ এবং ‘হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্স’ দেবে দু’টা করে বিমান; আর ‘ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স’ দেবে চারটা বিমান। এই বিমানগুলি আফগানিস্তানে যাবে না; বরং সেগুলি কাবুল থেকে মার্কিন সামরিক পরিবহণ বিমানে করে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিতে নিয়ে আসা মানুষদেরকে আমেরিকা বা ইউরোপ বা অন্যান্য দেশে নিয়ে যাবে। ২২শে অগাস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন যে, গত ১৫ই অগাস্টে কাবুলে মার্কিন দূতাবাস খালি করার পর থেকে তখন পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজার মানুষকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। ‘দ্যা ড্রাইভ’এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, এই কাজে ‘সিআরএএফ’ কার্যকর করার আগেই অনেক বেসরকারি পরিবহণ বিমান চার্টারের মাধ্যমে ব্যবহার করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর। ‘মিলিটারি টাইমস’এর সম্পাদক হাওয়ার্ড আল্টম্যান ২১শে অগাস্টের এক টুইটার বার্তায় জানাচ্ছেন যে, ২৪ ঘন্টায় কাবুল থেকে ৩৮টা বিমান উড্ডয়ন করে, যার মাঝে ৬টা ছিল ‘সি ১৭’ সামরিক পরিবহণ বিমান; আর ৩২টা ছিল বেসামরিক চার্টার বিমান।

‘সিএনবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, আদেশ দেয়ার দিনই ‘ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স’এর প্রথম বিমানটা জার্মানির ‘ফ্রাঙ্কফুর্ট হান’ বিমানবন্দর থেকে কাতারে ‘আল উদাইদ’ মার্কিন সামরিক ঘাঁটির দিকে রওয়ানা হয়। এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা বলছেন যে, বিমানগুলিতে সম্ভবতঃ ডায়াপার, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পণ্য এবং কিছু কাপড় ভরে নিচ্ছেন তারা যাত্রীদের দরকারের জন্য। ‘ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স’ তাদের ‘বোয়িং ৭৭৭ ৩০০’ বিমান ব্যবহার করছে; এগুলির একেকটা ৩’শ ৫০ জন যাত্রী বহণ করতে পারে। এই মিশনগুলির জন্যে বিমানের ক্রুদেরকে বেশি পারিশ্রমিক দেয়া হচ্ছে। ‘ডেল্টা এয়ারলাইন্স’এর কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা বিভিন্ন রুটে বর্তমানে ওড়া বিমানগুলিকে ব্যবহার করছে না; বরং যে বিমানগুলি বসে ছিল, সেগুলিই ব্যবহার করছে। একারণে তাদের স্বাভাবিক ফ্লাইট শিডিউলে কোন পরিবর্তন হবে না। তবে ‘আমেরিকান এয়ারলাইন্স’ তাদের শিডিউল ফ্লাইট থেকেই বিমান সরিয়ে নিচ্ছে এই মিশনের জন্যে। অপরপক্ষে ‘এটলাস এয়ার’ মূলতঃ একটা কার্গো ক্যারিয়ার; যারা এমনিতেই নিয়মিতভাবে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যে মালামাল পরিবহণ করে থাকে। কোম্পানির যাত্রীবাহী বিমানগুলির মাঝে রয়েছে ‘বোয়িং ৭৪৭ ৪০০’ বিমান, যেগুলি ৩’শ ৭৪ জন যাত্রী বহণে সক্ষম; আর ‘বোয়িং ৭৬৭ ৩০০’ বিমানগুলি বহণ করতে পারে ২’শ ১৫ জন। ‘সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স’ এই প্রকল্পের অংশ না হলেও তারা এই প্রকল্পে অংশ নেবার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে মূল ভুখন্ডে বিভিন্ন বিমানবন্দরের মাঝে পরিচালনার জন্যে স্বাভাবিক ফ্লাইট ব্যাহত না করে বসে থাকা বিমানগুলিকে ব্যবহার করবে।

হোয়াইট হাউজের বরাত দিয়ে ‘সিএনএন’ বলছে যে, ১৫ই অগাস্ট থেকে ২৭শে অগাস্ট পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ৯ হাজার ২’শ মানুষকে কাবুল থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ ‘সিআরএএফ’ কার্যকর করার দিন থেকে পাঁচ দিনে প্রায় ৭১ হাজার মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে। পেন্টাগন বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে ভার্জিনিয়ার ফোর্ট পিকেট এবং নিউ মেক্সিকোর হলোম্যান এয়ার ফোর্স বেইসকে তৈরি করা হচ্ছে আফগানিস্তানের শরণার্থীদের রাখার জন্যে। ২৩শে অগাস্ট মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন যে, মার্কিন সরকার কাবুল বিমানবন্দরের অপারেশনের জন্যে তালিবানদের সাথে সর্বদাই সমন্বয় করে চলছে। কাবুল বিমানবন্দর পর্যন্ত মানুষদের সহজে পৌঁছার জন্যে তারা রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা চ্যানেলগুলি ব্যবহার করে তালিবানদের সাথে আলোচনা করে চলেছেন। তিনি বলেন যে, ৩১শে অগাস্টের মাঝে যেসকল মার্কিন নাগরিক আফগানিস্তান ছাড়তে ইচ্ছুক, তাদের সকলকেই সরিয়ে নেয়া সম্ভব। তবে এর এক সপ্তাহ আগেই পেন্টাগন বলে যে, কাবুলে থাকা মার্কিন নাগরিকদের বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাবার নিশ্চয়তাই মার্কিনীরা দিতে পারছে না; যদিও কাবুলে এই মুহুর্তে কয়েক হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে।

কাবুল এয়ারলিফট দেখিয়ে দিচ্ছে যে, মার্কিন সামরিক বাহিনী বিশ্বব্যাপী তাদের অবস্থানকে ধরে রাখতে বেসরকারি বিমান বহরের উপর কতটা নির্ভরশীল। বিশেষ করে গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ মার্কিনীদেরকে বেসামরিক বিমান বহরের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল করে ফেলেছে। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিবহণ কর্মকান্ডের প্রায় অর্ধেক এই বেসামরিক বিমান বহরগুলিই করছে; যেকারণে বিশ্বব্যাপী মার্কিন সামরিক মিশনের পরিবহণ খরচ হিসেবে ‘সিআরএএফ’এর জন্যে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের খরচ যোগাতে হিমসিম খাচ্ছে পেন্টাগন। একইসাথে ২০০১ সালের পর থেকেই মার্কিন বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলি অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকে ধুঁকে চলছে বলে তারাও বিশ্বব্যাপী মার্কিন সরকারের কাজ পাবার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছে। এই কোম্পানিগুলির মার্কিন সরকারি কাজের উপর নির্ভরশীলতা কমাতেই নিয়ম করে বলে দেয়া হয়েছে যে, এয়ারলাইন্সগুলির আয়ের ৪০ শতাংশের বেশি সরকারি কাজের উপর নির্ভরশীল থাকতে পারবে না। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হবার পর এয়ারলাইন্সগুলির অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। ইতোমধ্যেই ‘সিআরএএফ’এর বিমানের সংখ্যা ২০১৪ সালে ৫’শ ৫২ থেকে ২০২১ সালে ৪’শ ৫০এ নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন সামরিক অপারেশন কমতে থাকলে মার্কিন এয়ারলাইন্সগুলিও আয় থেকে বঞ্চিত হবে। মার্কিন সামরিক বাহিনী এবং বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলির পারস্পরিক নির্ভরশীলতা উভয়কেই টিকিয়ে রেখেছে গত তিন দশক ধরে। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমার সাথেসাথে উভয়েই এখন সমস্যার মাঝে পড়েছে।

No comments:

Post a Comment