Tuesday 17 August 2021

আফগান বিপর্যয়ে বৈশ্বিক নেতৃত্ব ফিরে পাবার শেষ আশাটুকু হারালো যুক্তরাষ্ট্র

১৮ই অগাস্ট ২০২১

কাবুলের মার্কিন দূতাবাসের উপর মার্কিন হেলিকপ্টারের ছবিগুলি যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের কাছে তেমন কিছু না হলেও তা যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বের গোড়ায় আঘাত করেছে, তা সেদেশের নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে। বুঝতে পেরেছে বলেই তারা কেউই চার দশকের মাঝে সবচাইতে মারাত্মক এই বিপর্যয়ের দায় নিতে চাইছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরা আরও আগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে। কাবুলের বিপর্যয় সেই সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ়তা দিলো কেবল। প্রকৃতপক্ষে আফগান বিপর্যয় যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বশীল অবস্থানে ফিরে আসার শেষ আশাটুকুও কেড়ে নিল।


১৬ই অগাস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তানের পরিস্থিতির ব্যাপারে মুখ খুলেছেন। এক বক্তব্যে তিনি বলেন যে, তিনি ২০০৯ সালে বারাক ওবামা প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে আফগানিস্তানে অতিরিক্ত সেনা প্রেরণের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি আরও বলেন যে, যদিও সেনা সরাতে গিয়ে অনেক সমস্যার পড়তে হয়েছে, তথাপি সেনা সরিয়ে নেবার জন্যে কোন ভালো সময় কখনোই ছিল না। তিনি বলেন যে, গত এক সপ্তাহের ঘটনা দেখিয়ে দেয় যে, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসাটা সঠিক সিদ্ধান্তই ছিল। যে যুদ্ধে আফগানরা নিজেরাই নিজেদের জন্যে যুদ্ধ করতে রাজি নয়, সেখানে মার্কিন সেনাদের যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করাটা উচিৎ নয়। তিনি আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্যে দায় পুরোপুরিভাবে নিজের কাঁধে নিতে চাননি। তিনি বলেন যে, আফগানিস্তানে মার্কিন মিশন কখনোই দেশ গড়ার জন্যে ছিল না। তিনি ক্ষমতায় এসে তালিবানদের সাথে চুক্তির ফলাফলটুকু পেয়েছেন; কারণ সেই চুক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় করা হয়েছিল। তিনি হলেন চতুর্থ মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন; এবং তিনি পঞ্চম কোন প্রেসিডেন্টের কাছে এই দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চান না। তবে সকলে বাইডেনের সাথে একমত হতে পারেননি। রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাকনেল এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, আফগানিস্তান হলো একটা চরম বিপর্যয়। বাইডেন প্রশাসনের আফগানিস্তান থেকে সরে আসার জন্যে তা যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদার উপরেই দাগ ফেলে দিয়েছে। ‘বিবিসি’ বলছে যে, অনেক মার্কিনীদের কাছেই কাবুলে মার্কিন দূতাবাসের উপর মার্কিন হেলিকপ্টার ওড়ার ঘটনাটা ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের লজ্জাজনক পলায়নের স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে; বাইডেন সেসময় একজন নব নির্বাচিত সিনেটর ছিলেন।

‘ভয়েস অব আমেরিকা’ বাইডেনের বক্তব্যের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সংস্থার প্রতিক্রিয়া যোগাড় করেছে। কংগ্রেসের রিপাবলিকান দলের প্রধান কেভিন ম্যাকার্থি বলছেন যে, কয়েক দশকের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে মারাত্মক পররাষ্ট্রনীতি বিপর্যয়ে ছয় দিন চুপ থাকার পর বাইডেন মুখ খুলেছেন। তার বক্তব্য সৈন্য সরাবার বিপর্যয়ের কারণে মার্কিন জনগণকে রক্ষা করতে না পারা, হাজারো সেনাকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া এবং সন্ত্রাসবাদের হুমকি বেড়ে যাবার বিষয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়না। আরেক রিপাবলিকান লিন্ডসে গ্রাহাম বলছেন যে, বাইডেন আফগানিস্তানে বিপজ্জনক এবং অপমানজনক পথে হেঁটেছেন; এর জন্যে তিনি নিজেকে ছাড়া কাউকেই দোষ দিতে পারেন না। ডেমোক্র্যাট দলের প্রধান স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বাইডেনকে সমর্থন করে বলেন যে, শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনার জন্যে একাগ্র ভূমিকার জন্যে প্রেসিডেন্ট প্রশংসার দাবিদার। মার্কিন থিংকট্যাঙ্ক ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট’এর ফেলো ক্যাথারিন জিমারম্যান বলছেন যে, তালিবান আফগানিস্তানে ইসলামিক আমিরাত প্রতিষ্ঠার ফলে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রয়েছে মানবাধিকার, এই কথাগুলি অন্তসারশূণ্য হয়ে গেলো। ‘ফ্রিডমওয়ার্কস’এর প্রেসিডেন্ট এডাম ব্র্যান্ডন বলছেন যে, আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতির জন্যে শুধুমাত্র বাইডেনকে দায়ী করা যাবে না। কংগ্রেসের সামনে যেসকল সামরিক এবং ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তারা ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন, তাদেরকেও দায়ী করতে হবে।

‘বিবিসি’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, একমাস আগেই বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, তালিবানরা পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেবে, এটা প্রায় অসম্ভব। তবে এবারের ভাষণে তিনি স্বীকার করেন যে, আফগানিস্তানের ঘটনাগুলি তারা যতটা দ্রুত আশা করেছিলেন, তার চাইতে বেশি দ্রুত ঘটেছে। বাইডেনের সাথে সুর মিলিয়েই ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জ্যান্স স্টলটেনবার্গ বলেন যে, আফগানিস্তানে ন্যাটোর সেনারা চিরকালের জন্যে যায়নি। তবে তালিবানরা যত দ্রুত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তা তাদেরকে অবাক করেছে। তিনি তালিবানদের এই সাফল্যের পিছনে আফগান রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই দায়ি করেন। ‘বিবিসি’ আরও বলছে যে, মার্কিন জনমত বলছে যে, বেশিরভাগ জনগণই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে। ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ বা ‘সিএসআইএস’এর এনথনি করডেসম্যান বাইডেনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ‘ভয়েস অব আমেরিকা’কে বলেন যে, আফগানিস্তানে যত সময়ই যুক্তরাষ্ট্র থাকুক না কেন, সেখানে কার্যকর একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব ছিল না; এই ব্যাপারটাকে তিনি বেশ শক্তিশালীভাবেই তুলে ধরেছেন। একই ধরনের কথা বলেছেন ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স’এর সিনিয়র ফেলো চার্লস কুপচান। তিনি বলেন যে, ছয় মাস, এক বছর বা দুই বছর সময় দিলেই ফলাফল পরিবর্তিত হয়ে যেতো, এমন কোন প্রমাণ নেই। ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’এর সিনিয়ন ফেলো আরন ডেভিড মিলার বলছেন যে, বাইডেন যে একটা বিষয় সম্পর্কে তার দায় স্বীকার করেছেন তা হলো, তারা বুঝতে পারেননি যে তালিবানরা এতটা সহজে পুরো আফগানিস্তান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে।

‘ইউরেশিয়া গ্রুপ’এর প্রধান মার্কিন চিন্তাবিদ ইয়ান ব্রেমার বাইডেনের সমালোচনা করে বলছেন যে, বাইডেন তার বক্তব্যে কেন আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়া উচিৎ সেটার শক্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আফগানিস্তানে মারাত্মক কতগুলি ব্যর্থতার ব্যাপারে তিনি কিছুই বলেননি। ব্রেমার বলছেন যে, ১৯৭৯ সালে ইরানে মার্কিন দূতাবাসের জিম্মি হবার পর থেকে চার দশকে এটা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে সবচাইতে ভয়াবহতম পররাষ্ট্রনীতির বিপর্যয়। এখানে ব্যর্থতাগুলির প্রথমে থাকবে সামরিক এবং ইন্টেলিজেন্সের ব্যর্থতা। যখন বাইডেন আফগানিস্তান ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে, আফগান সেনাবাহিনী তালিবানদের বিরুদ্ধে দুই থেকে তিন বছর যুদ্ধ করতে পারবে। অথচ যখন তালিবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে, তখন ইন্টেলিজেন্সের কর্মকর্তারা বলেন যে, আফগান সেনাবাহিনী মাত্র দুই থেকে তিন দিন টিকবে! ব্রেমার বলছেন যে, তিনি তার ক্যারিয়ারে এতবড় ইন্টেলিজেন্স ব্যর্থতার কথা কখনোই শোনেননি। যুক্তরাষ্ট্র বিশ বছর ধরে প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে যে আফগান সেনাবাহিনী তৈরি করেছে, তা যুদ্ধ করতে রাজি হয়নি! আর দুই দশক ধরে প্রশিক্ষণ দেবার পরেও এই সেনাদের সক্ষমতা এবং মনোবল সম্পর্কে তারা নিশ্চিত ছিলেন না! দ্বিতীয়তঃ সমন্বয়ের ব্যর্থতা। পশ্চিমা দেশগুলি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেসাথে আফগানিস্তানে গিয়েছে এবং যুদ্ধ করে জীবনও দিয়েছে। কিন্তু আফগানিস্তান ত্যাগের সময় যুক্তরাষ্ট্র একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যখন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত কাবুলে রয়ে গিয়েছেন, তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কাবুল ছেড়ে গিয়েছেন। তৃতীয়তঃ পরিকল্পনার ব্যর্থতা। ছয় হাজার সেনাকে একবার আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিয়ে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ড থেকে কয়েক হাজার সেনাকে উড়িয়ে নিয়ে আসা এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সহায়তা করা হাজারো আফগানের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে না পারা খুবই বাজে ধরনের পরিকল্পনার ব্যর্থতাকে তুলে ধরে। পুরো ব্যাপারটাই শেষ মার্কিন সেনা দেশ ছাড়ার আগেই করা যেতো। আর চতুর্থতঃ গণযোগাযোগের ব্যর্থতা। ৮ই জুলাই বাইডেন বলেছিলেন যে, তালিবানের পক্ষে পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়া প্রায় অসম্ভব। বাইডেন আরও বলেছিলেন যে, ১৯৭৫ সালে সায়গনে মার্কিন দূতাবাসের ছাদের উপর থেকে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেবার মতো কোন পরিস্থিতিই কাবুলে নেই। ব্রেমার বলছেন যে, বাইডেনের এই কথাগুলি স্বল্প সময়ের মাঝেই ভুল প্রমাণিত হবার পরেও মার্কিম কর্মকর্তারা বলছিলেন যে, তারা সাফল্যের সাথে কর্মসম্পাদন করেছেন। শুধু তাই নয়, এরকম একটা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বাইডেন ক্যাম্প ডেভিডের অবকাশকেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন এবং সেসময় বাইডেনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা কেউই তার সাথে ছিলেন না। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাথে কথা বলছিলেন অনলাইনে। আর এতবড় একটা দুর্যোগের পর মুখ খুলতে বাইডেন নিঃসন্দেহে অনেক বেশি সময় নিয়েছেন।

ইয়ান ব্রেমার বলছেন যে, বাইডেনের সিদ্ধান্তের পিছনে যথেষ্ট জনসমর্থন রয়েছে। কারণ রাজনৈতিক মতামত দিতে অপারগ সাধারণ আমেরিকানরা আফগানিস্তানের ব্যাপারে মাথা ঘামাতে চান না। তবে কাবুল ছেড়ে আসার সময় যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে তা ১৯৭৯ সালের তেহরান দূতাবাসের বিপর্যয়কেও ছাড়িয়ে যাবে। এবং তা বাইডেনের প্রেসিডেন্সিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলতে পারে। এই মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কাবুলের ঘটনাগুলি হয়তো বড় কোন প্রভাব ফেলবে না; তবে আন্তর্জাতিকভাবে এর ফলাফল হবে মারাত্মক। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরা হয়তো মনে করতে শুরু করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তার আগের নেতৃত্বশীল অবস্থানে ফিরে এসেছে; তারা এখন ধরেই নেবে যে, যুক্তরাষ্ট্র আসলে একা একাই সিদ্ধান্ত নেবে এবং কাজ করবে; অন্য কারুর সিদ্ধান্ত তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। যুক্তরাষ্ট্র একটা অনির্ভরযোগ্য বন্ধু। পশ্চিমা বিশ্বের আদর্শিক নেতৃত্ব দেবার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি হারালো। রাশিয়া এবং চীন এখন অন্যান্য দেশের কাছে আরও নির্ভরযোগ্যভাবে বলতে পারবে যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা রাখে না। এমতাবস্থায় বিশ্বের অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল থাকতে চাইবে না।

আফগানিস্তানের ব্যাপারে মার্কিন ইন্টেলিজেন্সের ব্যর্থতা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হারাবার ক্ষেত্রে মার্কিন ইন্টেলিজেন্সের দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যৎবাণী পুরোপুরিই সত্যি হতে চলেছে। কাবুলের মার্কিন দূতাবাসের উপর মার্কিন হেলিকপ্টারের ছবিগুলি যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের কাছে তেমন কিছু না হলেও তা যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বের গোড়ায় আঘাত করেছে, তা সেদেশের নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে। বুঝতে পেরেছে বলেই তারা কেউই চার দশকের মাঝে সবচাইতে মারাত্মক এই বিপর্যয়ের দায় নিতে চাইছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরা আরও আগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে। কাবুলের বিপর্যয় সেই সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ়তা দিলো কেবল। প্রকৃতপক্ষে আফগান বিপর্যয় যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক নেতৃত্বশীল অবস্থানে ফিরে আসার শেষ আশাটুকুও কেড়ে নিল।

3 comments:

  1. ধন্যবাদ৷
    আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরাজয়, অল্টারনেটিভ বিশ্বব্যবস্থায় আশাবাদীদের কাছে নতুন করে আশার আলো হিসাবে দেখা দেবে এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

    যুক্তরাষ্ট্র যে সোল সুপারপাওয়ার এর খেতাব যে হারিয়েছে / হারাতে যাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বে উদীয়মান খেলোয়াড় দের দেখলেই বোঝা যায়।
    এখন দেখার, এই উদীয়মান খেলোয়াড়রা সেকুলারিজম - ক্যাপিটালিজম - লিব্রালিজম কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার পতন কতটা তাড়াতাড়ি নিশ্চিত করতে পারে, যদিও তারা এই বিশ্বব্যবস্থারই ফসল।

    আফগানিস্থানে উদীয়মান ইসলামি আমিরাত, আদর্শিক বিশ্বব্যবস্থার ঘনীভূত ভ্যাকুয়াম এ কতটা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে সেটাই দেখার!

    ReplyDelete
    Replies
    1. দেখুন, ব্যাপারটা এরকম নয় যে, সকলে বিকল্প একটা বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সকলেই নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা চায়। বিশ্বের সবগুলি দেশই যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিয়েছে; সেটা পছন্দ হলেও বা না হলেও। এখন যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন অবস্থা দেখে সকলে নিজের আখের গোছাতে চাইছে। এখানে সকলেই প্রকৃতপক্ষে নিজের স্বার্থরক্ষা নিয়েই ব্যস্ত।

      কোন একজন নেতৃত্বে না থাকলে সকলেই নিজের ইচ্ছামতো চলবে - এটাই স্বাভাবিক। সকলেই চাইবে নিজের এলাকার প্রভাব বিস্তার করে বা অন্যের প্রভাবমুক্ত থাকতে। এখানে সুপারপাওয়ারের সহায়তা পাওয়া তারা ছেড়ে দেবে। এটাই হচ্ছে বৈশ্বিক নেতৃত্বশূণ্যতা। এই শূণ্যতা তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ভুলের জন্যে নয়। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু একটা আদর্শিক শক্তি, সারা বিশ্বে পশ্চিমা আদর্শকে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব তার। কিন্তু সে নিজেই যখন সমস্যায় পতিত হবে, তখন তার আদর্শও নেতৃত্ব হারাবে। আর সেই আদর্শই যদি নিম্নগামী হয়, তাহলে তো সেই আদর্শের নেতৃত্ব দেয়া অর্থ হলো, সেই নেতাই সবচাইতে আগে নিম্নগামী হবে।

      Delete
  2. একদমই তাই। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete