Tuesday 2 August 2022

কঙ্গো… পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার আরও একটা ব্যর্থতা

০২রা অগাস্ট ২০২২
 
জুলাই ২০২২। কঙ্গোলিজরা হামলা করছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিতে। বিক্ষোভকারীরা বলছে যে, জাতিসংঘ 'এম২৩' বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। শান্তিরক্ষীদের কাজ সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা হলেও সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত জীবন হারাচ্ছে। আফ্রিকাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে রুয়ান্ডাকে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করছে প্রায় তিন দশক ধরে। এমতাবস্থায় জাতিসংঘের পক্ষে রুয়ান্ডা সমর্থিত ‘এম২৩’ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হওয়াটাই স্বাভাবিক।

জুলাইএর শেষে মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের উপর শতশত মানুষ হামলা করে। হামলাকারীরা নর্থ কিভু এবং সাউথ কিভু প্রদেশের কয়েকটা শহরে শান্তিরক্ষীদের ঘাঁটিতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। সহিংসতায় তিনজন শান্তিরক্ষী সেনাসহ কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। জুলাই মাসের শুরু থেকেই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিতভাবে গণআন্দোলন শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ হলো, ২২ বছর ধরে শান্তিরক্ষী বাহিনী কঙ্গোর মাটিতে থাকার পরেও কেন কঙ্গোলিজরা শান্তিতে নেই; কেন তাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই? শান্তিরক্ষীদের মূল কাজটাই ছিল যেখানে সাধারণ মানুষকে ‘এম২৩’সহ বিভিন্ন অস্ত্রধারী গ্রুপগুলির হাত থেকে রক্ষা করা, সেখানে এই অভিযোগ জাতিসংঘের কার্যক্ষমতাকে যথেষ্টই প্রশ্নবিদ্ধ করে। কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে এই মুহুর্তে ১’শরও বেশি অস্ত্রধারী গ্রুপ রয়েছে। জাতিসংঘের মিশন থাকা সত্ত্বেও এই গ্রুপগুলি নিজেদের অবস্থানকে দিনদিন শক্তিশালী করছে। বিক্ষোভকারীরা বলছে যে, জাতিসংঘ যখন বলছে যে, তাদের কাছে ‘এম২৩’ বিদ্রোহীদের দমন করার মতো শক্তি নেই, তখন শান্তিরক্ষী চলে যাক। আর তারা না যাবার আগ পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে বলে বলেন অনেকে।

জাতিসংঘের ব্যর্থতা কি সামরিক না রাজনৈতিক?

বর্তমান সমস্যার মূল হিসেবে অনেকেই কঙ্গোর ‘এম২৩’ বিদ্রোহী গ্রুপের পুনরুত্থানকে দায়ী করেছেন। ‘এম২৩’ গত নভেম্বর মাস থেকে নতুন করে আগ্রাসী অভিযানে বের হয়েছে। ২০১৩ সালের পর থেকে এই গ্রুপ বেশ চুপচাপই ছিল। ‘আল জাজিরা’র সাথে কথা বলতে গিয়ে মানবাধিকার সংস্থা ‘এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’এর গবেষক জঁ-মোবের সেঙ্গা বলছেন যে, জাতিসংঘ কঙ্গোর ভৌগোলিক অখন্ডতা রক্ষা করার জন্যে কাজ করেছে এবং সেখানে গণতান্ত্রিক নির্বাচন করার পিছনেও প্রচেষ্টা ছিল তাদের। এছাড়াও ২০১৩ সালে নিরাপত্তা পরিষদের ম্যান্ডেট নিয়ে জাতিসংঘ ‘ফোর্স ইন্টারভেনশন ব্রিগেড’ তৈরি করে; যাদের কাজ ছিল আক্রমণে গিয়ে কঙ্গোর বিদ্রোহী গ্রুপগুলিকে অস্ত্র ছাড়তে বাধ্য করা। এই ব্রিগেড ২০১৩ সালে ‘এম২৩’ বিদ্রোহী গ্রুপকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে তাদের সাফল্যের সাথে ব্যার্থতার সংখ্যা মোটেই কম নয়। যেকারণে এর আগেও জাতিসংঘের বিরুদ্ধে মানুষ বিক্ষোভ করেছে। জাতিসংঘ সমস্যার মূল নিয়ে তারা কাজ করেনি। যেমন সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে তারা কাজ করেনি; শুধুমাত্র সামরিক দিকটাই তারা দেখেছে। ১৯৯৪ সালের গণহত্যায় জড়িতরা প্রায় তিন দশক ধরে নিঃসঙ্কোচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মাঝে রুয়ান্ডা, উগান্ডা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকেরাও রয়েছে। এই ভয়াবহ অপরাধগুলির প্রায় কোন ধরণের জবাবদিহিতাই ছিল না; আর সেকারণেই তারা এই একই কাজ বারংবার করেছে। ২০১৩ সালে ‘এম২৩’ জাতিসংঘের ব্রিগেডের কাছে সামরিকভাবে পরাজিত হলেও তাদের কর্মকান্ডের জন্যে তাদের কোন জবাবদিহিতা করতে হয়নি। যেকারণে তারা আবারও ফিরে এসেছে।

কঙ্গোতে বর্তমানে জাতিসংঘের প্রায় ১৬ হাজার সেনা রয়েছে। এদের বেশিরভাগই এসেছে পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশ থেকে। ‘মনুস্কো’ নামে পরিচিত এই মিশনের বাৎসরিক বাজেট ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। গত বছর এই মিশনের স্থায়িত্ব আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। কঙ্গোর এই পরিস্থিতি বুঝতে হলে কয়েকটা বিষয় নিয়ে আলোচনা আবশ্যিক। জাতিসংঘের ব্যর্থতার সাথে যুক্ত রয়েছে এই অঞ্চলের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া। আর রাজনৈতিক সমাধানের সাথে যুক্ত রয়েছে আশেপাশের দেশগুলি, বিশেষ করে রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি এবং উগান্ডার রাজনীতি। এই রাজনীতির এক অংশে রয়েছে জাতিগত বিদ্বেষ; আর অপর অংশে রয়েছে বৃহৎ শক্তিদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের স্বার্থের দ্বন্দ্ব।

 
মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গো খনিজ সম্পদের দিক থেকে অত্যন্ত ধনী একটা দেশ। কিন্তু দেশের মানুষ এই খনিজ সম্পদের সুবিধা কখনোই পায়নি। বরং পশ্চিমা শক্তিদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের বলি হয়েছে এখানকার জনগণ। ঔপনিবেশিক শক্তিরা এই অঞ্চল ত্যাগ করলেও এখানকার জনগণ এখনও উপনিবেশ হিসেবেই জীবনযাপন করছে।

একসময় এই অঞ্চল বেলজিয়ামের উপনিবেশ হলেও ফ্রান্সের সাথে বেলজিয়ামের সম্পর্কের কারণে এখানে ফ্রান্সের প্রভাব রয়েছে বরাবরই। ঔপনিবেশিক শক্তিরা এখানে জাতিগত বিভেদকে কাজে লাগিয়েছে প্রায় শতবর্ষ ধরে। রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি এবং কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে রয়েছে হুটু এবং টুটসি জাতির বসবাস। এর মাঝে টুটসির সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষের মতো; হুটুর সংখ্যা এর প্রায় ছয় গুণ। তবে সংখ্যালঘু হলেও টুটসিরা রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী; যার একটা প্রধান কারণ হলো ঔপনিবেশিক শক্তিরা টুটসিদেরকে শিক্ষিত করেছে এবং তাদেরকে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ দিয়েছে। ১৯৬০এর দশকে এই দেশগুলির স্বাধীনতা ঘোষণার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ হুটুরা ক্ষমতা নিয়ে নেয় এবং টুটসিদের উপর অত্যাচার শুরু করে। রুয়ান্ডা থেকে অনেক টুটসি পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে পালিয়ে যায়। এসময়েই শুরু হয় এই অঞ্চলের পরবর্তী ইতিহাস; যা গণহত্যার সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে।

কঙ্গোর ইতিহাসকে একদিকে যেমন হুটু ও টুটসিদের বিদ্বেষের কাহিনী থেকে আলাদা করা যাবে না; তেমনি একজন বিশেষ ব্যাক্তির সামরিক ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার থেকে আলাদা করা যাবে না। এই ব্যক্তি হলেন রুয়ান্ডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট পল কাগামি।

রুয়ান্ডার গণহত্যা - পল কাগামির ক্ষমতায় আরোহণের পথ

রুয়ান্ডার টুটসি রাজ পরিবারে জন্ম নেয়া পল কাগামি ১৯৭০এর দশকে এক মিলিশিয়া গ্রুপের অংশ হিসেবে তাঞ্জানিয়ার সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ উগান্ডার সরকারকে উৎখাতে অংশ নেন। কাগামি ছিলেন রুয়ান্ডা থেকে উৎখাত হওয়া সংখ্যালঘু টুটসি জনগোষ্ঠীর একজন। তিনি উগান্ডাতেই তার পড়াশোনা শেষ করেছেন; যা একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। টুটসি যোদ্ধাদের সহায়তায় ইয়োওয়েরি মুসেভেনি উগান্ডার ক্ষমতায় আসেন। সেসময় থেকেই মুসেভেনির সাথে কাগামির সখ্যতা। ১৯৯০ সালের অক্টোবরে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট মুসেভেনির প্রত্যক্ষ সহায়তায় টুটসি যোদ্ধারা রুয়ান্ডার অভ্যন্তরে হামলা করে। প্রথমে কাগামি এই বাহিনীর সদস্য ছিলেন না; কারণ সেসময় কাগামি যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসের ফোর্ট লিভেনওয়ার্থএ কমান্ড এন্ড জেনারেল স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। রুয়ান্ডার এই গৃহযুদ্ধে টুটসি ‘রুয়ান্ডান প্যাট্রিওটিক ফ্রন্ট’ বা ‘আরপিএফ’এর বিরুদ্ধে রুয়ান্ডার হুটু সরকারকে সামরিক সহায়তা দিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশ কঙ্গো এবং সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স। কাগামি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেই ‘আরপিএফ’এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ‘আরুশা একর্ডস’এর মাধ্যমে রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। চুক্তি অনুযায়ী ‘আরপিএফ’কে রুয়ান্ডার রাজনীতিতে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থান দেয়া হয়। সামরিক বাহিনীর অফিসারদের কমপক্ষে অর্ধেক আসতে হবে ‘আরপিএফ’ থেকে। আর পুরো সামরিক বাহিনীর ৪০ শতাংশ সদস্য আসতে হবে ‘আরপিএফ’ থেকে। ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ‘আরুশা একর্ডস’কে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় আড়াই হাজার সেনার মাঝে সবচাইতে বড় গ্রুপ ছিল দেশটার প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি বেলজিয়ামের।

পরের বছর ১৯৯৪এর ৬ই এপ্রিল রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালি বিমানবন্দরে অবতরণের ঠিক আগে একটা ভিআইপি বিমানকে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত করা হয়। বিমানের আরোহীদের মাঝে ছিলেন বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট সিপ্রিয়েন নিতায়ামিরা এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাবিয়ারিমানা; উভয়েই ছিলেন হুটু। মার্কিন এবং ব্রিটিশ তদন্ত রিপোর্ট বলে যে, হুটুদের মাঝে উগ্রপন্থীরাই তাদের নিজেদের হুটু প্রেসিডেন্টদ্বয়কে হত্যা করে; যাতে করে টুটসিদের উপর গণহত্যা চালানো যায়। অপরদিকে ফরাসি এবং বেলজিয়ান রিপোর্ট বলে যে, টুটসি ‘আরপিএফ’ যোদ্ধারাই ঐ বিমান ভূপাতিত করেছিল। তবে এই ঘটনার পরপরই রুয়ান্ডার হুটু সামরিক অফিসার থিওনেস্তে বোগোসোরার অধীনে সেনারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা করে এবং টুটসিদের উপর হামলা শুরু করে। শুরু হয় ভয়াবহ গণহত্যা।

 
রুয়ান্ডার গণহত্যায় নিহত মানুষের মাথার খুলি। ১৯৯৪ সালের গণহত্যাটা কাগামিকে তার ক্ষমতার ভিত শক্ত করতে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তবে এর ফলশ্রুতিতে ফ্রান্সের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের যে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তার ফলাফল ভোগ করতে বাধ্য হয় পার্শ্ববর্তী দেশ কঙ্গো। কঙ্গোর গৃহযুদ্ধে রুয়ান্ডা এবং উগান্ডা ভয়াবহ ভূমিকা নেয়; যার ফলশ্রুতিতে কঙ্গোতে ৩০ থেকে ৭৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তথাপি এই দ্বন্দ্ব এখনও শেষ হয়নি; যার ফলাফল দেখা যাচ্ছে কঙ্গোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের মাঝে।


১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইএর মাঝে মাত্র ১’শ দিনে মধ্য আফ্রিকার ছোট্ট দেশ রুয়ান্ডাতে ৮ লক্ষের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়; যা কিনা স্বল্প সময়ে হত্যাযজ্ঞের সকল রেকর্ডকে ভেঙ্গে ফেলে। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল টুটসি। ছুরি-চাপাতি বা লাঠি-বাঁশ ব্যাবহার করে বা ঘরের ভেতরে পাকরাও করে ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হুটু জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু টুটসিদের হত্যা করে।

চার মাস পর ১৯৯৪ সালের জুলাই মাসে গণহত্যা মোটামুটি বন্ধ হলে ‘আরুশা একর্ডস’ অনুযায়ী রুয়ান্ডার নতুন সরকার গঠিত হয়। নিহত প্রেসিডেন্ট হাবিয়ারিমানার রাজনৈতিক দল ‘এমআরএনডি’কে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আর এই শূণ্যস্থান পুরণ করে কাগামির দল ‘আরপিএফ’। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, টুটসিরা মারাত্মক গণহত্যার শিকার হলেও টুটসিদের দল ‘আরপিএফ’এর ক্ষমতা কিন্তু বৃদ্ধি পায়। কাগামি হন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী। আর প্রেসিডেন্ট হন প্যাস্তুর বিজিমুনগু, যিনি একজন হুটু হয়েও ‘আরপিএফ’এর সদস্য ছিলেন। সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব, পররাষ্ট্রনীতি এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকায় কাগামি প্রকৃতপক্ষে রুয়ান্ডার ক্ষমতায় চলে আসেন। ১৯৯৪ সালের বাকি বছরগুলিতে পশ্চিমা দেশগুলি থেকে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সহায়তা প্রদান করা হয়।

রুয়ান্ডার সরকারে ‘আরপিএফ’এর সদস্যদের সাথে হুটুদের দ্বন্দ্বের জের ধরে দেশব্যাপী ক্ষমতা দখলের হিরিক পড়ে যায়। এমনকি দেশের বাইরেও তা সংক্রমিত হয়। কাগামির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সেথ সেন্দাসোঙ্গা ১৯৯৮ সালের মে মাসে কেনিয়াতে এক হামলায় নিহত হন। ২০০০ সালে হুটু প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বন্দ্বের পর কাগামি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। রুয়ান্ডার সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হতে হলে শুধুমাত্র মন্ত্রীসভা এবং পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেলেই যথেষ্ট; গণভোটের প্রয়োজন নেই। কাগামি খুব সহজেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে কাগামি রুয়ান্ডার নতুন সংবিধান রচনা করেন; যা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন প্রতি ৭ বছরের জন্যে; দেশের রাজনীতিতে হুটু বা টুটসি কেউই নিয়ন্ত্রণমূলক অবস্থানে থাকতে পারবে না; জাতিগত পরিচয়ের কোন রাজনৈতিক দল রাজনীতি করতে পারবে না। ২০০৯ সালে মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, এই সংবিধানে গণহত্যা বন্ধ করার কথা বলে প্রকৃতপক্ষে একটা একদলীয় শাসনের প্রবর্তন করা হয়। প্রতিবেদনের কথাগুলি প্রকৃতই সত্য; কারণ ২০২২ সালেও কাগামি ক্ষমতা ধরে রেখেছেন।

কঙ্গো এবং পল কাগামি

পল কাগামি ক্ষমতা নিয়েই পার্শ্ববর্তী দেশ জায়ারএর (বর্তমান নাম ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো বা ডিআর কঙ্গো) পূর্বে বাস করা টুটসি গ্রুপগুলিকে সামরিক সহায়তা দিতে থাকেন এবং কঙ্গোর অভ্যন্তরে হুটু শরণার্থী শিবিরগুলির উপর হামলা করেন। কারণ এই হুটুরা কাগামির ক্ষমতা ধরে রাখার পিছনে হুমকি হিসেবে কাজ করছিল। বিশেষ করে রুয়ান্ডার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা কঙ্গো থেকে রুয়ান্ডার অভ্যন্তরে হামলা করছিলো। এরপর কাগামি কঙ্গোর ফরাসি সমর্থিত একনায়ক মোবুটু সেসে সেকোকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। লরেন্ট কাবিলার নেতৃত্বে কঙ্গোর বিদ্রোহী গ্রুপকে কাগামি এবং উগান্ডার মুসেভেনি সমর্থন দেন। তবে কাবিলা কঙ্গোর ক্ষমতা নেবার পরপরই কাগামির সাথে শত্রুতা শুরু হয়। কাগামি অভিযোগ করেন যে, কঙ্গো থেকে বিদ্রোহীরা রুয়ান্ডার ভেতর হামলা করছে। জবাবে কাগামি কঙ্গোর অভ্যন্তরে ‘র‍্যালি ফর কঙ্গোলিজ ডেমোক্র্যাসি’ বা ‘আরসিডি’ গ্রুপকে সমর্থন দিতে শুরু করেন। শুধুমাত্র এঙ্গোলা, নামিবিয়া এবং জিম্বাবুয়ের সরাসরি সমর্থনের কারণে লরেন্ট কাবিলা ক্ষমতাচ্যুত হওয়া থেকে বেঁচে যান। তবে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয় এবং ২০০৩ সাল পর্যন্ত রেডক্রসের হিসেবে ৩০ থেকে ৭৬ লক্ষ মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধের কারণে মৃত্যুবরণ করে। ২০০১ সালের জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী কাগামি এবং উগান্ডার মুসেভেনি কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের নর্থ কিভু ও সাউথ কিভু অঞ্চলের খনিজ সম্পদের মালিক হবার চেষ্টা করেছেন। কঙ্গোর প্রচুর মূল্যবান খনিজ রুয়ান্ডা হয়ে বাইরের দুনিয়াতে বিক্রি হয়েছে।

২০০১ সালে রুয়ান্ডা ঘোষণা দেয় যে, কঙ্গো থেকে রুয়ান্ডার সকল সেনা সরে এসেছে। এর বিনিময়ে কাগামির সমর্থিত ‘আরসিডি’ লরেন্ট কাবিলার ছেলে জোসেফ কাবিলার সাথে কঙ্গোর ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেয়। তদুপরি কাগামি অভিযোগ করতে থাকেন যে, হুটু বিদ্রোহীরা এখনও কঙ্গোর ভূমি ব্যবহার করে রুয়ান্ডায় হামলা করছে। অপরদিকে কঙ্গোর সরকার বলে যে, হুটুদের কথা বলে কাগামি পুরো অঞ্চলে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’এর এক বিশ্লেষণে বলা হয় যে, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সালের মাঝে লরেন্ট নেকুন্দার নেতৃত্বে কঙ্গোর টুটসিদের গ্রুপকে কাগামি সমর্থন দিয়েছেন; আর ২০১২ সাল থেকে বসকো নেতাগান্দার অধীনে ‘মার্চ ২৩ মুভমেন্ট’ বা ‘এম২৩’কে সমর্থন দিয়েছেন তিনি। ২০১০ সালে জাতিসংঘের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, কঙ্গোর অভ্যন্তরে রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী মারাত্মক মানবাধিকার লংঘনের কাজে জড়িত ছিল। আর ২০১২ সালে জাতিগংঘের ফাঁস হওয়া এক গোপন রিপোর্টে বলা হয় যে, রুয়ান্ডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস কাবারেবে প্রকৃতপক্ষে ‘এম২৩’এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন!

২০১৯ সালে ফেলিক্স শিসেকেদি কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও রুয়ান্ডার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। ২০২০ সালেও কাগামির বিরুদ্ধে কঙ্গোর অভ্যন্তরে রুয়ান্ডার সেনা মোতায়েন রাখার অভিযোগ রয়েছে। আর ২০২১ সালের নভেম্বরে ‘এম২৩’ নতুন করে আভিযান শুরু করলে সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়।

 
১৯৯৪ সাল। রুয়ান্ডাতে ফরাসি সেনা। ১৯৯০ সালে টুটসি বিদ্রোহী গ্রুপ ‘আরপিএফ’ রুয়ান্ডায় হামলা শুরু করলে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়াঁ মিতেরাঁর সরকার রুয়ান্ডা সরকারকে সহায়তা করার জন্যে ৬’শ প্যারাট্রুপার সেনা পাঠায়। এই সেনারা টুটসি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ চালিয়ে নেয় এবং ১৯৯৪ সালে টুটসিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলার সময় ফরাসি সেনারা হুটু শরণার্থীদেরকে সুরক্ষা দেয়; যাদের মাঝে মানবাধিকার লংঘনকারীরা ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।

ফ্রান্সের চক্ষুশূল কাগামি

নিহত হবার আগ পর্যন্ত রুয়ান্ডার হুটু প্রেসিডেন্ট হাবিয়ারিমানাএর সাথে ফ্রান্সের যথেষ্ট সখ্যতা ছিল। ১৯৯০ সালে টুটসি বিদ্রোহী গ্রুপ ‘আরপিএফ’ রুয়ান্ডায় হামলা শুরু করলে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়াঁ মিতেরাঁর সরকার রুয়ান্ডা সরকারকে সহায়তা করার জন্যে ৬’শ প্যারাট্রুপার সেনা পাঠায়। এই সেনারা টুটসি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ চালিয়ে নেয় এবং ১৯৯৪ সালে টুটসিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চলার সময় ফরাসি সেনারা হুটু শরণার্থীদেরকে সুরক্ষা দেয়; যাদের মাঝে মানবাধিকার লংঘনকারীরা ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। ‘আরপিএফ’ রুয়ান্ডার ক্ষমতা নেবার পর ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ৬ মাস লাগে। তারপরেও দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না; কাগামির সরকার অভিযোগ করতে থাকে যে, ফ্রান্স গণহত্যাকারীদের সহায়তা দিয়েছে। এরপর ২০০৬ সালে ফরাসি এক বিচারপতি একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেন, যেখানে বলা হয় যে, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামি ১৯৯৪ সালে দুই প্রেসিডেন্টের বিমান ভূপাতিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কাগামি সরকারের ৯ জন সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। রুয়ান্ডা সাথেসাথেই ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তবে ২০০৮-০৯ সালের দিকে কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি গণহত্যার পর থেকে প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে রুয়ান্ডা সফর করেন। সফরকালে তিনি স্বীকার করেন যে, ১৯৯৪ সালে ফ্রান্স অনেক বড় ভুল করেছে। পরের বছর কাগামিও প্যারিস সফর করেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কাছের বন্ধু কাগামি

গত ২৫শে জুলাই ‘রয়টার্স’এর এক খবরে বলা হয় যে, মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান রবার্ট মেনেনডেজ মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব এন্টনি ব্লিনকেনের কাছে লেখা এক চিঠিতে রুয়ান্ডাকে মার্কিন আর্থিক সহায়তার ব্যাপারটা পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান। চিঠিতে বলা হয় যে, রুয়ান্ডা সরকারের বিরুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ কঙ্গোর অভ্যন্তরে ‘এম২৩’ বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সহায়তা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমতাবস্থায় মার্কিন সরকার যদি রুয়ান্ডাকে সহায়তা দেয়া চালিয়ে যায়, তাহলে অনেকেই ধরে নিতে পারে যে, রুয়ান্ডার এহেন কর্মকান্ডে মার্কিনীদের সমর্থন রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০২১ সালে ১’শ ৪৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র রুয়ান্ডার সবচাইতে বড় সহযোগী রাষ্ট্র। এই সহায়তার একটা অংশ যাচ্ছে জাতিসংঘ মিশনে রুয়ান্ডার সেনাদের অংশ নেয়ার প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক্যাল সহায়তা হিসেবে। রুয়ান্ডার একনায়ক পল কাগামি গত ২২ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট এবং প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি রুয়ান্ডার বাস্তবিক শাসনকর্তা। সিনেটর মেনেনডেজ কাগামি সরকারের সমালোচনা করলেও গত তিন দশকের বেশি সময় ধরেই রুয়ান্ডার সাথে মার্কিনীদের সখ্যতা কমেনি এক বিন্দুও।

পল কাগামির বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশ নেবার অভিযোগ রয়েছে; তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ কঙ্গোর অভ্যন্তরে বহু বছর ধরে সেনা মোতায়েন রেখেছেন এবং সেখানে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে নিয়েছেন। তথাপি দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাগামি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা পশ্চিমাদের, বিশেষ করে মার্কিনীদের যথেষ্টই খুশি করেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে পল কাগামি প্রেসিডেন্ট হবার সময় রুয়ান্ডার মাথাপিছু জিডিপি ছিল ৬’শ ৩১ ডলার; যা ২০২০ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২’শ ১৪ ডলারে। কাগামি রুয়ান্ডাকে উন্মুক্ত বাজার করে দেন এবং দেশকে সিঙ্গাপুর হিসেবে তৈরি করার কথা বলেন। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ অনেকেই পল কাগামির সরকারের এহেন মুক্ত বাজার অর্থনীতির ভুয়সী প্রশংসা করেন। তবে এই উন্নয়ন শুধুমাত্র রাজধানী শহরের কিছু মানুষই ভোগ করেছে। বেশিরভাগ সম্পদই স্বল্প সংখ্যক মানুষের হাতে চলে গেছে।

 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার স্ত্রীর সাথে রুয়ান্ডার একনায়ক পল কাগামি। ১৯৯৪ সালের গণহত্যার পর থেকে রুয়ান্ডা ইংরেজী ভাষাভাষী দুনিয়া, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের বেশ কাছাকাছি গিয়েছে। কাগামি গত ২২ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট এবং প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি রুয়ান্ডার বাস্তবিক শাসনকর্তা। তদুপরি রুয়ান্ডার সাথে মার্কিনীদের সখ্যতা কমেনি এক বিন্দুও।

১৯৯৪ সালের গণহত্যার পর থেকে রুয়ান্ডা ইংরেজী ভাষাভাষী দুনিয়া, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের বেশ কাছাকাছি গিয়েছে। ব্রিটেন রুয়ান্ডাকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে; আর যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে সামরিক সহায়তা ও উন্নয়ন অর্থায়ন। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন কাগামিকে বর্তমান সময়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একজন বলে আখ্যা দেন। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও কাগামি সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের ভূয়সী প্রসংসা করে এই বলেন যে, রুয়ান্ডা হলো আন্তর্জাতিক সহায়তা কাজে লাগাবার ক্ষেত্রে সকলের জন্যে উদাহরণস্বরূপ। ব্লেয়ার রুয়ান্ডার সরকারের উপদেষ্টারূপেও কাজ করেছেন। এখানেই শেষ নয়। ২০০৯ সালে ইংরেজী ভাষাভাষী না হয়েও মোজাম্বিকের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে রুয়ান্ডা ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১২ সালে রুয়ান্ডা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যও নির্বাচিত হয়।

তবে ২০১২ সালের নভেম্বরে কঙ্গোর ‘এম২৩’ বিদ্রোহীদের সহায়তা দানের জন্যে ব্রিটিশ সরকার রুয়ান্ডার জন্যে ২১ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা স্থগিত করে। জার্মানিও তাই করে। যুক্তরাষ্ট্রও রুয়ান্ডার সামরিক সহায়তা স্থগিত করে। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই সহায়তাগুলি আবারও দেয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র রুয়ান্ডার সবচাইতে বড় সহায়তাকারী দেশ।

পশ্চিমাদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব

মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গো খনিজ সম্পদের দিক থেকে অত্যন্ত ধনী একটা দেশ। কিন্তু দেশের মানুষ এই খনিজ সম্পদের সুবিধা কখনোই পায়নি। বরং পশ্চিমা শক্তিদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের বলি হয়েছে এখানকার জনগণ। ঔপনিবেশিক শক্তিরা এই অঞ্চল ত্যাগ করলেও এখানকার জনগণ এখনও উপনিবেশ হিসেবেই জীবনযাপন করছে। রুয়ান্ডার গণহত্যায় ৮ লক্ষাধিক মানুষের লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন পল কাগামি; যিনি তার দেশকে ফ্রান্সের কোল থেকে বের করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কোলে নিয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ উগান্ডা কাগামিকে ক্ষমতায় যেতে বিশাল সহায়তা দিয়েছে। ১৯৯৪ সালের গণহত্যাটা কাগামিকে তার ক্ষমতার ভিত শক্ত করতে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তবে এর ফলশ্রুতিতে ফ্রান্সের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের যে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তার ফলাফল ভোগ করতে বাধ্য হয় পার্শ্ববর্তী দেশ কঙ্গো। কঙ্গোর গৃহযুদ্ধে রুয়ান্ডা এবং উগান্ডা ভয়াবহ ভূমিকা নেয়; যার ফলশ্রুতিতে কঙ্গোতে ৩০ থেকে ৭৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তথাপি এই দ্বন্দ্ব এখনও শেষ হয়নি; যার ফলাফল দেখা যাচ্ছে কঙ্গোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের মাঝে। আফ্রিকাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে রুয়ান্ডাকে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করছে প্রায় তিন দশক ধরে। এমতাবস্থায় জাতিসংঘে রুয়ান্ডা সমর্থিত ‘এম২৩’ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর ফ্রান্স তার শক্তি হারাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। আফ্রিকাতে ফ্রান্সের অবস্থানগুলি দখলে নিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার অসারতার জানান দিচ্ছে ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনের দ্বন্দ্বের বলি কঙ্গো ও রুয়ান্ডার লাখো মানুষের লাশ।

……………………………………………………



সূত্র -

‘Why are there protests against UN peacekeepers in DR Congo?’ in Inside Story, Al-Jazeera, 29 July 2022 (https://youtu.be/hP-U3sKyfBs)

‘America’s secret role in the Rwandan genocide’ in The Guardian, 12 September 2017

‘U.S. senator questions aid to Rwanda over human rights, role in Congo’ in Reuters, 26 July 2022

‘Rethinking the Rwandan Narrative for the 25th Anniversary’, by Gerald Caplan in Genocide Studies International, 2018

‘The Rwanda Crisis: History of a Genocide’ by Gerald Prunier, 1999

‘The Responsibility to Protect and the Duty to Prevent Genocide: Lessons to be Learned from the Role of the International Community and the Media During the Rwandan Genocide and the Conflict in the Former Yugoslavia’ by Jeremy Sarkin and Carly Fowler, in Suffolk Transnational Law Review, 2010

‘Hutus 'killed Rwanda President Juvenal Habyarimana'’ in BBC News, 12 January 2010

‘A Thousand Hills: Rwanda's Rebirth and the Man Who Dreamed it’ by Stephen Kinzer, 2008

‘Silent Accomplice: The Untold Story of France's Role in the Rwandan Genocide’ by Andrew Wallis, 2007

‘Paul Kagame And Rwanda: Power, Genocide and the Rwandan Patriotic Front’ by Colin Waugh, 2004

‘Rwanda's Leaders Vow to Build a Multiparty State for Both Hutu and Tutsi’ in The New York Times, 07 September 1994

‘Ex-Rwandan Minister Killed in Kenya’ in Associated Press, 17 May 1998

‘Report of the Panel of Experts on the Illegal Exploitation of Natural Resources and Other Forms of Wealth of the Democratic Republic of the Congo’, United Nations, 12 April 2001

‘Kagame elected Rwandan president’ in BBC News, 17 April 2000

‘The power of horror in Rwanda’, Human Rights Watch, 11 April 2009

‘Rwandans Led Revolt in Congo’ in The Washington Post, 09 July 1997

‘Review of Congo war halves death toll’ in Associated Press, 20 January 2010

‘Delayed UN report links Rwanda to Congo genocide’ in The Guardian, 01 October 2010

‘GDP per capita, PPP (current international $) – Rwanda’, World Bank, 2020

‘Rwanda's Economic Miracle’ in National Review, 13 December 2010

‘Tracking Rwanda's ICT ambitions’ in The New Times, 27 May 2012

‘Paul Kagame: Rwanda's redeemer or ruthless dictator?’ in The Daily Telegraph, 22 July 2010

‘Whispering truth to power: The everyday resistance of Rwandan peasants to post-genocide reconciliation’ by S. Thomson in African Affairs, 2011

‘Kabila Accuses Rwanda of Trying to Profit from Congo Chaos’ in Voice of America, 30 October 2009

‘Averting Proxy Wars in the Eastern DR Congo and Great Lakes’, International Crisis Group, 23 January 2020

‘Rwanda defence chief leads DR Congo rebels, UN report says, in BBC News, 17 October 2012

‘Shake Hands with the Devil: The Failure of Humanity in Rwanda’ by Romeo Dallaire, 2005

‘Securing Human Rights?: Achievements and Challenges of the UN Security Council’ by Bardo Fassbender, 2011

‘France's shame?, in The Guardian, 11 January 2007

‘France issues Rwanda warrants’ in BBC News, 23 November 2006

‘Rwanda cuts relations with France’ in BBC News, 24 November 2006

‘Kabuye's release not condition for resuming ties with France-Museminali’ in The New Times, 25 November 2008

‘On Visit to Rwanda, Sarkozy Admits 'Grave Errors' in 1994 Genocide’ in The New York Times, 25 February 2010

‘Rwanda's Kagame pays 'reconciliation visit' to France’ in BBC News, 12 September 2011

‘The end of the west's humiliating affair with Paul Kagame’ in The Guardian, 25 July 2012

‘Blair takes on unpaid role as Rwanda advise’ in The Guardian, 18 January 2008

‘Rwanda joins the Commonwealth’ in The Daily Telegraph, 29 November 2009

‘UK stops £21m aid payment to Rwanda’ in BBC News, 30 November 2012

‘The Effects of the Exit From Budget Support In Rwanda’, German Institute for Development Evaluation, February 2008

‘Obama accused of failed policy over Rwanda's support of rebel group’ in The Guardian, 11 December 2012

No comments:

Post a Comment