Sunday 23 January 2022

‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ কি একটা দিবাস্বপ্ন?

২৩শে জানুয়ারি ২০২২

পশ্চিমা আদর্শের অধঃপতনের ফলস্বরূপ ব্রিটেনের নাগরিকেরা যখন নিজেদের স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে সামরিক বাহিনীতে যেতে ইচ্ছুক নয়, তখন সামরিক বাহিনী আকারে ছোট হতে থাকলেও প্রযুক্তির কারণে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে, এহেন বক্তব্য হয়তো সেই চিন্তাটার অবাস্তবতাকে ঢেকে রাখার জন্যেই। ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’এর বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের চিন্তাটাও সেই আঙ্গিকে দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।

 
ব্রিটেনের বৈশ্বিক ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ‘এমএই ৬’এর নতুন প্রধান অনেকটা নিয়ম ভেঙ্গেই জনসন্মুখে এসে কথা বলছেন। ২০২১এর ডিসেম্বরে সংস্থার প্রধান রিচার্ড মুর ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’ বা ‘আইআইএসএস’এর এক অনুষ্ঠানে পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের ভূমিকা নিয়ে এক বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন যে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন ঠিকমতো কাজ করছে না এবং বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বীরা আগের চাইতে বেশি আত্মবিশ্বাসী; তারা কম বাধার সন্মুখীন হচ্ছে; এবং তারা আগের চাইতে বেশি সম্পদ কাজে লাগাতে পারছে। একারণেই তারা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার দুর্বলতাগুলিকে কাজে লাগাচ্ছে। তিনি রাশিয়া, চীন, ইরান এবং সন্ত্রাসবাদকে তাদের বড় ফোকাস বলে উল্লেখ করেন। একইসাথে জলবায়ু পরিবর্তন এবং মহামারির মতো বৈশ্বিক সমস্যাও রয়েছে। তিনি চীনের প্রভাব বিস্তারকে ‘এমআই ৬’এর সবচাইতে বড় প্রাধান্য হিসেবে আখ্যা দিলেও চীনের সাথে বৈশ্বিক ইস্যু এবং বাণিজ্যের ব্যাপারে সহযোগিতার কথা বলেন। কারণ চীনের কর্মকান্ড এবং নীতি অনেক ক্ষেত্রেই ব্রিটেনের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। তিনি আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে, রাশিয়ার কর্মকান্ডকে, বিশেষ করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্যে সকলকে আহ্বান জানান। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া, লেবানন এবং ইরাকে ইরানের প্রভাব বিস্তারের কথা উল্লেখ করেন; এবং এর ফলে ব্রিটেন এবং ব্রিটেনের বন্ধু রাষ্ট্রদের প্রতি হুমকিকে মোকাবিলায় সহায়তা দেয়ার কথা বলেন। এছাড়াও আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ব্রিটেনের কাজ করার কথা বলেন তিনি। প্রতিটা বিষয়েই তিনি নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। মুরের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, একুশ শতকে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় ব্রিটেন একটা বিশ্বশক্তি হিসেবে নিজের নামকে সামনে আনতে চাইছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটেনের এই ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তার বাস্তবায়নে পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ে সমন্বিত নীতিপত্র প্রকাশের পর থেকে ব্রিটেনের লক্ষ্যকে অনেকেই অতি উচ্চাভিলাসী বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

‘ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, অস্টিন’এর প্রতিরক্ষা ম্যাগাজিন ‘ওয়ার অন দ্যা রক্স’এর এক লেখায় ব্রিটেনের ‘ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথ’এর সামরিক বিষয়ের শিক্ষক ক্রিস মরিস বলছেন যে, ব্রিটিশ নেতৃবৃন্দ দেশের সম্পদের অপ্রতুলতাকে বিবেচ্য বিষয় না ধরে বরং বৈশ্বিক বাস্তবতাকে নিজেদের মতো করে উপস্থাপন করছে। ফলশ্রুতিতে ব্রিটেন যা করতে চাইছে, তার জন্যে যথেষ্ট শক্তি সে যোগাড় করতে পারছে না। একারণে ব্রিটেন তার সামরিক শক্তির কিছু অংশকে শক্তিশালী করতে গিয়ে বাকিগুলিকে একেবারেই কমিয়ে ফেলছে। বিশেষ করে বলা হচ্ছে যে, কিছু সামরিক শক্তিকে কমিয়ে ফেলে অর্থ বাঁচিয়ে সেই অর্থ দিয়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে ব্রিটেন সকলের চাইতে এগিয়ে থাকবে। কিন্তু যেটা সকলেই ভুলে যাচ্ছে তা হলো, ব্রিটেনের বন্ধু এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে আরও অনেক বেশি সম্পদ রয়েছে; যেকারণে তারা কেন ব্রিটেনের থেকে প্রযুক্তির দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকবে? ব্রিটেনের ছোট করে ফেলা সামরিক বাহিনীকে সামনের দিনগুলিতে আরও ঘনঘন এবং আরও বেশি সময়ের জন্যে বিশ্বব্যাপী মোতায়েন করতে হবে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীরও কাগজে কলমে যতটুকু সক্ষমতা রয়েছে, বাজে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিকল্পনার কারণে সেটাও পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করতে পারছে না।

 
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর রিক্রুটিং বিজ্ঞাপণ, যেখানে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। তবে নাগরিকেরা বলছে যে, অনেক জায়গাতেই আত্মবিশ্বাস পাওয়া যেতে পারে; সেটা সেনাবাহিনীতে নাও হতে পারে। কেউ কেউ বলছেন যে, সেনাবাহিনীতে যোগদানের অর্থ হলো অনেক বড় একটা প্রতিশ্রুতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা; যা অনেকেই করতে ইচ্ছুক নয়। তারা নিজেদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ধরে রাখতেই বেশি আগ্রহী।

কাগজে কলমে ব্রিটেনের সামরিক বাজেট বিশ্বের মাঝে চতুর্থ। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারত ব্রিটেনের চাইতে এগিয়ে আছে। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালেও ৭৮ বিলিয়ন ডলার নিয়ে সৌদি আরব এবং ৬১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে রাশিয়া ব্রিটেনের থেকে এগিয়ে ছিল। তখন ব্রিটেনের বাজেট ছিল প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২০ সালে বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার পর ব্রিটেনের সামরিক বাজেট ৬১ বিলিয়ন ডলার পেরিয়ে গেলে এবং রাশিয়ার বাজেট কিছুটা কমানো হলে ব্রিটেন চতুর্থ অবস্থানে চলে আসে। আর সেবছর সৌদি আরব তেলের বাজারে মারাত্মক ধ্বসের কারণে সামরিক বাজেট কমিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে কমিয়ে আনে। ফ্রান্স তার বাজেট ৫২ থেকে ৫৫ বিলিয়নে উন্নীত করলেও তা রাশিয়ার পিছনে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকে। ‘আইআইএসএস’এর সিনিয়ন ফেলো অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বেন ব্যারি বলছেন যে, সামরিক বাজেটের র‍্যাংকিংএর কারণে ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্রিটেনের সামরিক শক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। তবে এর মাধ্যমে ব্রিটেনের সামরিক শক্তি খুব বেড়ে যাচ্ছে না। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ রয়াল এয়ার ফোর্সে নতুন কোন স্কোয়াড্রনও যুক্ত হচ্ছে না। রয়াল নেভির যে আকার পরিকল্পনা করা হতো, সেদিকে নিয়ে যাবার একটা চেষ্টা চলছে। বরিস জনসন যখন বলেছেন যে, ব্রিটিশ রয়াল নেভি হবে ইউরোপের মাঝে সবচাইতে বড়, তখন কথাটা ঠিক। তবে এর মানে এই নয় যে, নৌবাহিনী অনেক বড় হয়ে যাবে। একইসাথে এই বাজেট বৃদ্ধির মানে এই নয় যে, বিশ্বব্যাপী মোতায়েন করার জন্যে ব্রিটেনের সেনা ইউনিটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

ব্রিটিশ সামরিক শক্তির সমস্যা বহু প্রকারের। এর মাঝে সবচাইতে বড় সমস্যাগুলির একটা হলো রিক্রুটিং। ব্রিটেনের ‘স্কাই নিউজ’এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সর্বশেষ রিক্রুটিং বিজ্ঞাপণে জনগণকে বিজ্ঞাপণ এবং সোশাল মিডিয়াতে হাল্কা লাইফস্টাইল বক্তব্য থেকে সরে আসতে আহ্বান জানানো হচ্ছে; যখন টানা নয় বছর ধরে সেনাবাহিনী ছোট হচ্ছে। রিক্রুটিং সমস্যা বহুদিন ধরেই চলছে। ২০০৬ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটা গ্রুপ মাউন্ট এভারেস্ট আরোহন করতে গিয়েছিল জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে। সেই মিশন সফল হয়নি। যারা সেনাবাহিনীর জন্যে নাম লেখায়, তাদের মাঝে মাত্র ১০ শতাংশ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পর্যন্ত যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধান করতে সেনাবাহিনী আগ্রহীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং শারীরিক সক্ষমতাকে সামরিক মাপকাঠিতে নিয়ে আনার জন্যে কাজ করছে। তবে এর চাইতে বড় সমস্যা হলো, গবেষণা বলছে যে, ব্রিটিশ ছেলেমেয়েরা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছে। এটাকে মাথায় রেখেই সর্বশেষ রিক্রুটিং ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে বলা হয় যে, এই ভিডিও দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়নি। নাগরিকেরা বলছে যে, অনেক জায়গাতেই আত্মবিশ্বাস পাওয়া যেতে পারে; সেটা সেনাবাহিনীতে নাও হতে পারে। কেউ কেউ বলছেন যে, সেনাবাহিনীতে যোগদানের অর্থ হলো অনেক বড় একটা প্রতিশ্রুতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা; যা অনেকেই করতে ইচ্ছুক নয়। তারা নিজেদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ধরে রাখতেই বেশি আগ্রহী।

 
বিশ্বব্যাপী ব্রিটেনের প্রধান প্রধান সামরিক অবস্থান। ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তাটাকে বাস্তবায়ন করতেই বিশ্বব্যাপী ব্রিটেনকে সামরিক উপস্থিতি রাখতে হচ্ছে। এই সামরিক অবস্থানগুলিকে ধরে রাখতে বৈশ্বিকভাবে ব্রিটেন অনেক দেশের সরকারকেই নিজেদের প্রভাবের অধীনে রাখতে চাইছে। এটা পরিষ্কার যে, সামরিক শক্তির অপ্রতুলতাকে কাটাতে রাজনৈতিক এবং ইন্টেলিজেন্স প্রভাবকেই ব্রিটেন প্রাধান্য দিতে চাইছে।

ইউরোপে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান লেঃ জেনারেল বেঞ্জামিন হজেস ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর মিডিয়া ‘ফোর্সেস নিউজ’এর সাথে এক সাক্ষাতে বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের মতোই বিশ্বব্যাপী ব্রিটেনের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইন্দোপ্যাসিফিক, ইউরোপ সকল ক্ষেত্রেই ব্রিটেনের নিরাপত্তা দেবার দায়িত্ব রয়েছে। ২০১০ সালে যখন আফগানিস্তানে সেনাসংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল, তখন ব্রিটেন মাত্র তিনটা দেশের মাঝে একটা হিসেবে সেটাকে সমর্থন করেছিল। সেই তুলনায় ব্রিটেনের সেনাবাহিনীর আকার মারাত্মক ছোট হয়ে গেছে। পৃথিবীর সকল মানুষই স্থলে বাস করে; কাজেই স্থলভাগে মানুষ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে স্থলবাহিনীর প্রয়োজন। তিনি বলেন যে, বাইরের একজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি খুবই চিন্তিত হবেন জেনে যে, ব্রিটেনের সেনাবাহিনীর আকার মেঝের নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে।

ক্যারিবিয়ান সাগর, দক্ষিণ আটলান্টিকের ফকল্যান্ডস দ্বীপপুঞ্জ, ভূমধ্যসাগরের জিবরালটার ও সাইপ্রাস, মধ্যপ্রাচ্যে বাহরাইন এবং ওমান ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর ও ব্রুনাই; এবং আফ্রিকার কেনিয়া ও উত্তর আমেরিকার কানাডাতে ব্রিটেনের সামরিক অবস্থান রয়েছে। এর বাইরেও ইউরোপের নরওয়ে, তিনটা বল্টিক রাষ্ট্র, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি এবং পশ্চিম আফ্রিকার মালিতে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর মিশন রয়েছে। ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তাটাকে বাস্তবায়ন করতেই বিশ্বব্যাপী ব্রিটেনকে সামরিক উপস্থিতি রাখতে হচ্ছে। এই সামরিক অবস্থানগুলিকে ধরে রাখতে বৈশ্বিকভাবে ব্রিটেন অনেক দেশের সরকারকেই নিজেদের প্রভাবের অধীনে রাখতে চাইছে। ‘এমআই ৬’এর প্রধানের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, সামরিক শক্তির অপ্রতুলতাকে কাটাতে রাজনৈতিক এবং ইন্টেলিজেন্স প্রভাবকেই ব্রিটেন প্রাধান্য দিতে চাইছে। একটা আদর্শিক শক্তি হিসেবে দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশের রাজনৈতিক সীমানা এবং সংবিধানকে ব্রিটেন তৈরি করেছে, অথবা প্রভাবিত করেছে। পশ্চিমা আদর্শিক চিন্তাগুলি ব্রিটেনই একসময় উপনিবেশের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ আইনকানুনই ব্রিটেনের হাতে তৈরি অথবা সেখানে ব্রিটেনের প্রভাব ছিল। এমনকি বিশ্বের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ভাষাও ব্রিটেনের মানুষের মাতৃভাষা। ব্রিটেন নিজে সুপারপাওয়ার থাকার সময়েই এই কাজগুলির বেশিরভাগ সম্পাদন করেছিল। সেই ঐতিহাসিক প্রভাবটাকে ব্যবহার করেই ব্রিটেন আবারও শক্তিশালী হতে চাইছে। বৈশ্বিক রাজনীতিকে প্রভাবিত করে নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী আকৃতি দিতে; অথবা অন্যের সক্ষমতাকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক উদ্দেশ্যগুলিকে বাস্তবায়ন করতে চাইছে তারা। তবে সকলেই বুঝতে পারছেন যে, অতি ক্ষুদ্র একটা সামরিক বাহিনী দিয়ে একটা পরিবর্তনশীল লাগামহীন বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করাটা অবাস্তব চিন্তা। পশ্চিমা আদর্শের অধঃপতনের ফলস্বরূপ ব্রিটেনের নাগরিকেরা যখন নিজেদের স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে সামরিক বাহিনীতে যেতে ইচ্ছুক নয়, তখন সামরিক বাহিনী আকারে ছোট হতে থাকলেও প্রযুক্তির কারণে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে, এহেন বক্তব্য হয়তো সেই চিন্তাটার অবাস্তবতাকে ঢেকে রাখার জন্যেই। ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’এর বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের চিন্তাটাও সেই আঙ্গিকে দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।

9 comments:

  1. অনেক ধন্যবাদ যে আপনি এত দিন পরে হলেও গ্লোবাল বৃটেন নামক মার্কেটিং থেকে সরে এসেছেন। ধন্যবাদ স্যার!!!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. কোনকিছু না পড়ে মন্তব্য করার প্রবণতা থেকে সরে আসুন। আপনার মন্তব্যের অসারতা বুঝতে পারার জন্যে নিচের লেখাগুলি পড়ুন।

      ১১ই জানুয়ারি ২০২০
      "এমনই একটা পরিস্থিতিতে পত্রিকার হেডলাইন হতে শুরু করেছে ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতা। আদর্শিক শক্তি হোক বা না হোক, সকলেই চাইছে সুপারপাওয়ারের দুর্বলতার সুযোগে যতটুকু পারা যায় মুনাফা করে নিতে। এই খেলায় সবচাইতে আগে আবির্ভূত হয়েছে ব্রিটেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই ব্রিটেন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। যেহেতু সুপারপাওয়ারকে ব্যালান্স করার মতো আর কেউ নেই, তাই ব্রিটেন চেয়েছে শূণ্যস্থান কিছুটা হলেও পূরণ করতে। আর ব্রিটেন বলে কথা! তারাতো একসময় সুপারপাওয়ার ছিল; তাই সেই স্বপ্নই তারা আবারও দেখতে শুরু করেছে। তবে এইবার ব্রিটেনের জন্যে কাজটা অনেক কঠিন। প্রথমতঃ ব্রিটেন তার ক্ষয়িষ্ণু পশ্চিমা সভ্যতাকেই তুলে ধরে; কাজেই দুনিয়ার সমস্যাগুলির আদর্শিক সমাধান ব্রিটেন তার আগের ঝুলি থেকেই দিতে বাধ্য হবে। ব্রিটেনের সমাধান ঠেকবে পুরোনো বোতলে পুরোনো মদের মতোই! দ্বিতীয়তঃ সেই অর্থনৈতিক সক্ষমতা ব্রিটেনের নেই, যা কিনা তাকে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। নিজের সামরিক সক্ষমতা এখন সর্বনিম্ন কোঠায়। এমতাবস্থায় অন্যের সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করে ব্রিটেন কতদূর এগুতে পারবে? বন্ধুদের মনরক্ষা করে ব্রিটেনকে চলতে হবে; ছাড় দিতে হবে প্রতিনিয়ত। ২০১৯ সালে ব্রিটেন তার ভূরাজনৈতিক বাসনাকে এগিয়ে নেবার চেষ্টা কমায়নি; তবে ব্রেক্সিটের চাপে অন্য বিষয়গুলি সামনে আসতে পারেনি। ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্রিটেনকে ইইউএর নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি থেকে বের হতে হবে। কিন্তু ইইউ থেকে বের হলেও ইইউএর উপর অর্থনৈতিক নির্ভরতার কারণেই ব্রিটেন এক পা এগুচ্ছে তো দুই পা পেছাচ্ছে। ব্রিটেন ইইউএর সুবিধাগুলি চাইছে; বিনিময়ে দিতে চাইছে না কিছুই! এভাবে সুপারপাওয়ার হওয়াটা আকাশ-কুসুম চিন্তাই বটে!"
      - 'যুক্তরাষ্ট্রের পর...' পৃষ্ঠা ৮

      ২৭শে জুলাই ২০১৯
      "প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে, ঔপনিবেশিক সময়ে ব্রিটেনের যে নৌবাহিনী মহাসাগরগুলি নিয়ন্ত্রণ করেছে, উপনিবেশ-পরবর্তী বাস্তবতায় সেটা পূনপ্রতিষ্ঠার বাজেট ব্রিটেন জোগাড় করতে পারবে কিনা। একারণেই হংকং-এর প্রতিবাদী আলেক্সান্দ্রা অং যেমন চীনা মূল ভূখন্ডে গেলে প্রতিবাদী টি-শার্টটা খুলে ফেলেন, তেমনি ব্রিটেনও চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বাঁচাবার খাতিরে হংকং-এর প্রতিবাদীদের ব্যাপারে রয়েসয়েই কথা বলতে চাইছে।"
      - 'যুক্তরাষ্ট্রের পর...' পৃষ্ঠা ১১৬

      Delete
    2. ২৮শে নভেম্বর ২০১৯
      "ব্রিটেন তার বন্ধুদের উপর কতটা নির্ভর করতে পারে? অন্যান্য দেশ থেকে রিক্রুট এনে সামরিক মিশন চালানো কতটা বুদ্ধিদীপ্ত? আর আফ্রিকা এবং এশিয়াতে তার প্রাক্তন উপনিবেশগুলিতে ব্রিটেন তার অবস্থানকে আবারও সুসংহত করতে যে চেষ্টাখানা করছে, তা সেসব দেশের মানুষ কিভাবে নেবে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৬০এর দশকের মাঝে ব্রিটেন তার বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশ হারায়; সাথে হারায় একটা বিশাল আয়ের উৎস। ভারত, সিঙ্গাপুর, হংকং, সুয়েজ খাল হারাবার পর ব্রিটেনের অর্থনীতিতে বিশাল টান পড়ে যায়। সামরিক সক্ষমতার উন্নতিকরণ এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে সহায়তা বৃদ্ধির জন্যে ব্রিটেনকে তার স্থবির অর্থনীতির উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। ব্রেক্সিটের কারণে ব্রিটেন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে সেটা কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানে বিশ্বব্যবস্থায় ফাঁকা জায়গাটা নেবার ইচ্ছাটাও ব্রিটেন ছেড়ে দিতে পারছে না। ইউরোপের উপর নির্ভরশীল না হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ব্রিটেনের সবচাইতে বড় চাওয়া; যদিও সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোটা ব্রিটেনের জন্যে যথেষ্ট কঠিন হবে।"
      - 'যুক্তরাষ্ট্রের পর...' পৃষ্ঠা ১৩৯

      ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২০
      "কিন্তু এর বাস্তবতা নিয়ে কৌতুহলের চাইতে প্রশ্নই বেশি আসছে। ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিশ্বের সকলকে বিশ্বাস করানো যে ব্রিটেন বিশ্বকে আবারও নেতৃত্ব দেবার সক্ষমতা রাখে।" - 'ভূরাজনৈতিক ভূমিকম্প ২০২০' পৃষ্ঠা ১৪১

      ২৭শে ডিসেম্বর ২০২০
      "তথাপি অপরের শক্তির উপর ভিত্তি করে প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা বিপজ্জনক হলেও ব্রিটেনের চোখে এটা শতবছরের মাঝে সবচাইতে বড় সুযোগ।" - 'নয়া বিশ্ব অব্যবস্থা' পৃষ্ঠা ২৫২

      ৭ই মে ২০২১
      "ব্রিটেনের সমস্যা তার অপ্রতুল সম্পদ। ইন্দোপ্যাসিফিকে মোতায়েন করা বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের এসকর্ট হিসেবে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও থাকবে ডাচ এবং মার্কিন যুদ্ধজাহাজ। জাহাজের ডেকে যে ‘এফ ৩৫বি’ যুদ্ধবিমান থাকবে, তার কিছু ব্রিটিশ; বাকিগুলি মার্কিন ম্যারিন কোরের। সামরিক বাহিনীতে কাজ করাবার জন্যে যথেষ্ট জনবল খুঁজে পাচ্ছে না ব্রিটেন। আবার নিজেদের আদর্শিক চিন্তাকে সমুন্বত রাখতে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে উপেক্ষা করে কাউকে সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে বাধ্যও করতে পারছে না তারা। প্রযুক্তিগত দিক থেকে ব্রিটেন এখন অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। অন্য দেশের সম্পদ ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্টা আপাতঃদৃষ্টিতে চতুর মনে হলেও পশ্চিমা বিশ্বের আদর্শিক চিন্তার অধঃপতনের মাঝে এর সফলতার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে।"
      - 'নয়া বিশ্ব অব্যবস্থা' পৃষ্ঠা ২৭৬

      Delete
  2. আশা করি, বর্তমানে রাশিয়া ন্যাটো যুদ্ধাবস্থা নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখবেন। বর্তমান প্রেক্ষিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা কতোওটুকু?? এই টালমাটাল অবস্থায় অন্য কোন আদর্শিক রাষ্ট্রের উত্থানের সম্ভাবনা কতটুকু? পৃথিবীর কোন রিজিয়ন এই রকম একটি আদর্শিক রাষ্ট্রের জন্য উর্বর ভূমি হতে পারে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. গতমাসে রাশিয়া ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে দু'টা লেখা রয়েছে। এর একটা আপডেট হয়তো আসবে সময়মতো ইনশাআল্লাহ।

      https://koushol.blogspot.com/2021/12/will-russia-attack-ukraine.html

      https://koushol.blogspot.com/2021/12/biden-putin-meeting-why-no-tendency-to-concede.html


      বিশ্ব ব্যবস্থা বলতে এখন আসলে কিছুই নেই। পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে। রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বের মাঝে ইউরোপকে (ব্রিটেন ছাড়া) বাইপাস করা; রাশিয়ার পাশ থেকে চীনকে সরাতে ইউক্রেনকে রাশিয়ার হাতে তুলে দেয়া; ন্যাটোর সদস্যা হয়েও জার্মানির ইউক্রেনের পক্ষে না দাঁড়ানো - এগুলি অব্যবস্থার লক্ষণ।

      নতুন কোন ব্যবস্থার আবির্ভাব বিশ্বের যেকোন স্থানেই হতে পারে। তবে সেটা নির্ভর করবে কিছু ভূকৌশলগত ভ্যারিয়েবল এবং জনমতের উপর। তদুপরি এটা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত যে, হ্যালফোর্ড ম্যাকিন্ডারের সংজ্ঞায়িত 'ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ড' বা 'বিশ্ব দ্বীপ' (ইউরোপ + এশিয়া + আফ্রিকা)তেই এটা হবে। কারণ এটাই ভূরাজনৈতিকভাবে দুনিয়ার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমি।

      Delete
  3. রোহিংগাদের নিয়ে অনেকদিন কোন লেখা পাচ্ছি না আপনার কাছ থেকে। এই সমস্যার আশু সমাধান করতে না পারলে আমাদের বিশাল ভূ-প্রাকৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমষয়ার সম্মুখিন হতে হবে। বাংলাদেশের করনীয় কি আছে সেটা ও জানতে চাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আসলে নতুন করে কিছু লেখার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি; সেকারণেই এই ইস্যুটা আপাততঃ ওখানেই আছে।

      সমাধান বাংলাদেশের হাতে নেই। আরও একটু বুঝিয়ে বলতে গেলে বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এর সমাধান নেই। বাংলাদেশের এমন কিছু করতে হবে, যা এই ব্যবস্থায় সম্ভব নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে হুমকি দিয়ে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। এখানে ভারতও কোন ইস্যু নয়। এহেন সিদ্ধান্ত নিতে পারার মতো রাজনৈতিক শক্তি এখনও ঢাকার হয়নি। কাজেই সেই সামর্থ্য হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

      Delete
  4. আপনার ইংগিত টা আমি ধরতে পেরেছি, সামরিক সামর্থ্য বৃদ্বির কথা বলছেন তো? অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি? কিন্তু এর পাশাপাশি কূটনৈতীক তৎপরতায় আমাদের যে ঘাটতি আছে এটা তো দিবালোকের মত পরিস্কার। ভারতকে সেভেন সিস্টারকে দেখিয়ে প্রশমিত করা যায়, কিন্তু চীন ও রাশিয়াকে? তাছাড়া তথাকথিত মানবিধিকারের নামে রোহিংগাদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য আমাদের উপর বিশ্বব্যাংকের চাপ তো আছেই। এ থেকে একটা জিনিস পরিস্কার, এখানে খুবই স্পর্শকাতর ভূ-রাজনৈতিক ব্যাপার জড়িত যার সাথে প্রাচ্যের দেশগুলির সাথে পাশ্চাত্যের কিছু মোড়ল দেশগুলি ও জড়িত।

    যাই হোক, তাদের ব্যাপার-স্যাপারই আলাদা। আমাদের এটা বুঝে নেয়া দরকার যে আগের পরিস্হিতিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, নেই বললেই চলে। এখন পরিবর্তিত পরিস্হিতিতে কিভাবে নিজেদের সর্বচ্চো সুবিধা আদায় করে নেয়া যায় সেই ছক তৈরীর দিকে মনোযোগ দিতে হবে, এটা আমাদের জন্য একটা সুযোগ ও বটে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটা রাষ্ট্রের সবচাইতে বড় শক্তি হলো তার চিন্তাগত উতকর্ষতা। আর এর মাঝে রাজনৈতিক চিন্তা হলো সর্বাগ্রে। রাজনৈতিক চিন্তায় এগিয়ে থাকা একটা রাষ্ট্র অন্যদের উপর ছড়ি ঘোরাতে পারে; অন্যদের সম্পদকে নিজের চিন্তার সাথে সমন্বিত করে বিশ্বব্যাপী তা তার প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করতে পারে। এখানে সম্পদ কোথায়, কার কাছে রয়েছে, সেটা মূখ্য নয়। সেটা যত দূরেই থাকুক না কেন, চিন্তাগত দিকে এগিয়ে থাকতে পারলে একটা রাষ্ট্র সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

      বঙ্গোপসাগরের ভূরাজনীতিতে এই ব্যাপারটাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। অস্ত্র বা সম্পদ এক্ষেত্রে নগন্য। মিয়ানমারের রাজধানীতে ঢাকার সাথে রাজনৈতিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ করা একটা সরকার থাকাটা ৫০টা সাবমেরিনের চাইতেও বড় পাওয়া। কারণ এর ফলে পুরো বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে থাকবে; যে সমুদ্রাঞ্চল দিয়ে মালাক্কা প্রণালি এবং শ্রীলংকার মাঝে সকল জাহাজ চলাচল করে। বাংলাদেশের এধরনের কোনকিছু করতে হলে রাজনৈতিক চিন্তার দিক থেকে উতকর্ষতা আসতে হবে। পশ্চিমা দেশ থেকে অস্ত্র কিনে শুধুমাত্র তাদের উপরে নির্ভরশীলতাই বাড়বে; এবং তাদের শর্ত মেনে চলতে হবে। নিজের নিরাপত্তাকে অন্যের কাছে সঁপে দিয়ে শক্তিশালী হওয়া যায় না।

      Delete