Sunday 10 January 2021

ওয়াশিংটন ডিসির সহিংসতার ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব কতটুকু?

১১ই জানুয়ারি ২০২১
সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র এখন অভ্যন্তরীণভাবে ভীষণভাবে বিভক্ত। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা সকলের কাছে দৃশ্যমান; অনেকেই এই বিভাজনে ইন্ধন যোগাতেও পিছপা হবে না। কেউ কেউ সেই বিভক্তিতে কোন একটা পক্ষকে সরাসরি সমর্থন করছে; আবার কেউ কেউ বিশ্বব্যাপী পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তিত। সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পিছনে যতটা জোরেসোরে চেষ্টা চালিয়েছে এতকাল, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় পশ্চিমাদের ভূরাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরও কমলো। চীন এবং রাশিয়া ছাড়াও ছোট দেশগুলি নিজেদের মতো করেই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দাঁড় করাবে এবং পশ্চিমা আদর্শকে ভূলুন্ঠিত করতে থাকবে।


গত ৬ই জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা হামলা করে কিছু সময়ের জন্যে ক্যাপিটল হিলের পার্লামেন্ট ভবন দখলে নেয়। নজিরবিহীন এই সহিংসতায় কমপক্ষে ৪ জন নিহত হয় এবং অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সারা দুনিয়ার নেতৃবৃন্দ, চিন্তাবিদেরা এবং মিডিয়া তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন। এহেন ঘটনার ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব আসলে কতটুকু, তা বুঝতে হলে এই বিবৃতিগুলির বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

‘গ্লোবাল ব্রিটেন’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ৬ই জানুয়ারি এক টুইটার বার্তায় মার্কিন কংগ্রেসের ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক দৃশ্য’ বলে আখ্যা দেন। তিনি একইসাথে শান্তিপূর্ণ এবং নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, আইনগত ক্ষমতা হস্তান্তরকে বাধাগ্রস্ত করার পিছনে কোন যুক্তিই থাকতে পারে না। ব্রিটিশ বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টার্মার এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, এটা ছিল গণতন্ত্র এবং জনগণের প্রতিনিধিদের উপর সরাসরি আঘাত, যারা জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করছেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ওয়াশিংটনের ঘটনাকে ‘ভীষণ দুঃখজনক’ ও ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দেন। তিনি আরও বলেন যে, এটা পরিষ্কার যে, সময়টা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে বেশ কঠিন যাচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ সরকার পরিবর্তন আশা করেন।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, উশৃংখল জনগণের কারণে গণতন্ত্র অকার্যকর হয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। পরদিন এক টুইটার বার্তায় আরডার্ন বলেন যে, এই ঘটনায় যারা দুঃখ পেয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের এতাত্মতা থাকবে তাদের জন্যে। নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নানাইয়া মাহুতা এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, এত কঠিন সময়ের মাঝে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হবার ব্যাপারে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত নেয়াটা ছিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালিয়ে নেবার পথে বড় একটা পদক্ষেপ।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ৬ই জানুয়ারি এক রেডিও ইন্টারভিউতে বলেন যে, তিনি ওয়াশিংটনের সহিংস ঘটনা দেখে ‘উদ্বিগ্ন’ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে ‘গণতন্ত্রের উপর এই হামলায় কানাডিয়রা ভীষণভাবে মর্মাহত’। দু’দিন পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ট্রুডো ঘটনার জন্যে ট্রাম্পকে সরাসরি দায়ী করেন। তিনি বলেন, এটা ছিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং কিছু রাজনীতিবিদের উস্কে দেয়া সহিংস দাঙ্গা। তবে তিনি মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র যথেষ্ট শক্তিশালী এবং উগ্রবাদীরা মানুষের ইচ্ছাকে ছাপিয়ে যেতে পারে না।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন

‘ডয়েচে ভেলে’র টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল বলেন যে, মার্কিন ক্যাপিটলএর ছবিগুলি তাকে একইসাথে ‘রাগান্বিত’ এবং ‘দুঃখিত’ করেছে। নির্বাচনের ব্যাপারে জনমনে যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই শেষ পর্যন্ত এই ঘটনাকে বাস্তবতা দিয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, ওয়াশিটনের এই বীভৎস ছবিগুলি দেখে গণতন্ত্রের শত্রুরা ভীষণ খুশি হবে। ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদেরকে শেষ পর্যন্ত মার্কিন জনগণের রায়কে মেনে নিতে হবে এবং গণতন্ত্রের উপর আঘাত করা বন্ধ করতে হবে। জার্মান পত্রিকা ‘ডাই ওয়েল্ট’এর শিরোনামে বলা হয় যে, এটা ছিল মার্কিন গণতন্ত্রের জন্যে লজ্জার দিন। মিথ্যাবাদী প্রেসিডেন্ট এবং মেরুদন্ডহীন রিপাবলিকান পার্টিই এর জন্যে দায়ী।

৭ই জানুয়ারি টুইটারে এক ভিডিও বার্তায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেন যে, অল্প কয়েকজন ব্যক্তির সহিংসতার কাছে তারা নতি স্বীকার করবেন না। তিনি ইংরেজিতে বলেন যে, ওয়াশিংটন ডিসিতে যা ঘটেছে তা নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্র নয়। তিনি ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের শক্তির উপর আস্থা রয়েছে বলে বলেন।

তুরস্ক

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, ক্যাপিটল হিলের ঘটনা তুরস্ক উদ্বিগ্নতার সাথে অবলোকন করছে। একইসাথে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সকল পক্ষকে সাবধানী হবার এবং প্রজ্ঞার মাধ্যমে কাজ করার উপদেশ দেয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে, তুরস্ক আশা করছে যে, যুক্তরাষ্ট্র পরিপক্কতা দেখিয়ে এই অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলা করবে।

চীন

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা ‘গ্লোবাল টাইমস’এর এক লেখায় বলা হয় যে, চীনারা এখনও ভুলতে পারেনি সেই দিনটার কথা, যেদিন হংকংএর দাঙ্গাকারীরা ব্যাপক সহিংসতা চালাচ্ছিল। সেই সময়ে দাঙ্গার বিরুদ্ধে কথা না বলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদেরা দাঙ্গাবাজদের সাহসিকতার প্রশংসা করেছিলেন। চীনের সোশাল মিডিয়া ‘উইবো’র একজন ব্যাবহারকারীর বক্তব্য তুলে ধরে ‘দ্যা টাইম’ ম্যাগাজিন। সেখানে বলা হয় যে, এটা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মফল। যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে সারা বিশ্বে আগুন লাগিয়েছে; এখন সেই ‘স্বাধীনতা’র আগুন তাদেরকেই পোড়াচ্ছে। আরেকজন বলেন যে, এখানে কোন আইন নেই; আইনের শাসন নেই। এটাই হলো সেই ‘গণতন্ত্র’, যা নিয়ে তারা গর্ব করে। চীনা সাংবাদিক সিমা নান ২০১৯ সালে মার্কিন পার্লামেন্টের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির এক কথাকে তুলে আনেন; যখন হংকংএর সরকার বিরোধী আন্দোলন দেখে তিনি বলেছিলেন ‘চমৎকার একটা দৃশ্য’। সিমা নান বলেন যে, ওয়াশিংটনের দৃশ্যটা ছিল আরও চমৎকার।

রাশিয়া

‘রাশান ফেডারেশন কাউন্সিল’এর পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান কন্সটান্টিন কসাচেভ এক ফেইসবুক পোস্টে বলেন যে, গণতন্ত্রের জয়জয়কার এখন শেষ। এটা প্রথমবারের মতোও হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্যে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করার পক্ষে এখন কোন যুক্তি নেই। আমেরিকা যেখানে নিজেই সেই পথে হাঁটছে না, সেখানে সেই পথের সংজ্ঞা দেয়ার অধিকারও সে হারিয়েছে; আর অন্যের উপর তার চাপিয়ে দেয়ার অধিকার থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না। তিনি আরও বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজের বিভাজন এতটাই গভীর যে, রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট উভয় শিবিরই এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে খুশি হতে পারবে না। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সাংবাদিকদের বলেন যে, এটা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে রাশিয়া আবারও বলছে যে, মার্কিন নির্বাচনী পদ্ধতি একটা অতি পুরাতন পদ্ধতি এবং তা আধুনিক গণতান্ত্রিক মানদন্ডে পাস করে না। এতে নিয়ম বহির্ভূত কর্মকান্ডের সম্ভাবনা থাকে। একইসাথে তিনি বলেন যে, মার্কিন মিডিয়া রাজনৈতিক কোন্দলের হাতিয়ার হয়ে গিয়েছে।

রুশ বিশ্লেষকেরা কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, বেলারুশ এবং ইউক্রেনে মস্কোপন্থী সরকার উৎখাত করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র একসময় উস্কানি দিয়েছিল। রুশ রাজনীতিবিদ সের্গেই মারকভ ফেইসবুকে এক লেখায় বলেন যে, এটা আশ্চর্য ব্যাপার যে, যেসব মার্কিন রাজনীতিবিদ একসময় ইউক্রেন এবং বেলারুশের পার্লামেন্ট ভবন দখলের পক্ষে কথা বলেছিলেন, এবং ট্রাম্প সমর্থকদের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ বিষয়ে রাস্তায় সহিংসতায় জড়াবার পক্ষে ছিলেন, তারাই এখন মার্কিন কংগ্রেসে হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন।

কারা কোন পক্ষে

বিবৃতিগুলি থেকে এটা পরিষ্কার যে, ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’এর অন্তর্গত ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডা মোটামুটিভাবে সরাসরিই ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে এবং জো বাইডেনের পক্ষ নিয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, ব্রিটেনের বৈশ্বিক আকাংক্ষা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কতটা জরুরি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জার্মানি গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছে। ২০২১ সালেই এঙ্গেলা মার্কেল জার্মান চ্যান্সেলর পদ ছেড়ে দিচ্ছেন, যা ইউরোপে একটা নেতৃত্বের শূণ্যতা তৈরি করতে পারে। ফ্রান্সও যত জোর গলায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছে, ততই তার দুর্বলতাটা প্রকাশ পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সের রাস্তা সহিংসতায় পরিপূর্ণ ছিল। ফ্রান্স এবং জার্মানি উভয় দেশেই ডানপন্থীদের উত্থান পশ্চিমা সেকুলার আদর্শকে দুর্বল করেছে। ক্যাপিটল হিলের ঘটনার মাঝে ইউরোপ নিজেকেই দেখতে পাচ্ছে।

চীনা এবং রুশরা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমালোচনাতেই বেশি ব্যস্ত রয়েছে। হংকং, ইউক্রেন এবং বেলারুশের রাস্তায় সহিংসতার কথা মনে করে তারা ওয়াশিংটনের ঘটনা দেখে খুশিই হয়েছে। তারা হয়তো এই ভেবে খুশি হবে যে, তাদের দেশে গণতন্ত্রের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তারা একটা শক্ত যুক্তি পেয়েছে। রুশরা অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাম্পকেই সমর্থন দিয়েছে।

সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র এখন অভ্যন্তরীণভাবে ভীষণভাবে বিভক্ত। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা সকলের কাছে দৃশ্যমান; অনেকেই এই বিভাজনে ইন্ধন যোগাতেও পিছপা হবে না। কেউ কেউ সেই বিভক্তিতে কোন একটা পক্ষকে সরাসরি সমর্থন করছে; আবার কেউ কেউ বিশ্বব্যাপী পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তিত। সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পিছনে যতটা জোরেসোরে চেষ্টা চালিয়েছে এতকাল, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় পশ্চিমাদের ভূরাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরও কমলো। চীন এবং রাশিয়া ছাড়াও ছোট দেশগুলি নিজেদের মতো করেই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দাঁড় করাবে এবং পশ্চিমা আদর্শকে ভূলুন্ঠিত করতে থাকবে।

3 comments:

  1. মার্কিন সমাজের এই বিভক্তির কারন কি। তারা কেন তাদের মূল্যবোধের সাথেই কেন লড়াই করছে৷ তাদের মূল্যবোধ তাদের সমস্যার সমাধান দিতে পারছে না। মূলত আমেরিকার ভবিষত্য কি

    ReplyDelete
    Replies
    1. যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা চিন্তার ঝান্ডাবাহী আদর্শিক রাষ্ট্র। পশ্চিমা সেকুলার পঁজিবাদ হলো যুক্তরাষ্ট্রের তথা পশ্চিমা বিশ্বের ভিত্তি। গণতন্ত্র এই সেকুলার চিন্তাকে বাস্তবায়নের একটা পদ্ধতি মাত্র, যেই পদ্ধতিতে জনগণের প্রতিনিধি আইন তৈরি করে। চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইরান, ফ্রান্স, ব্রিটেন, তুরস্ক ইত্যাদি সকল রাষ্ট্রই মূলতঃ পশ্চিমা সেকুলার গণতন্ত্র। কারণ এই দেশগুলির সবগুলিতেই আইনের উৎস হলো মানূষের প্রতিনিধি। প্রতিনিধি কিভাবে নিয়োগ করা হবে, সেখানে পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে; তবে সেই পার্থক্য তাদের গণতান্ত্রিকতাকে ছাপিয়ে নয়।

      কি ধরণের চিন্তার উপর ভিত্তি করে আইন তৈরি করা হবে, সেখানে পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। জনগণই আইন তৈরি করে; তবে পুঁজিবাদের আইন আর সমাজতন্ত্রের আইনের পার্থক্য রয়েছে। উভয়েই সেকুলার চিন্তা থেকে এসেছে; কিন্তু দুইটা আলাদা লাইন অনুসরণ করেছে। এই দুইটা লাইন দুই আদর্শ - পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্র। এই মুহুর্তে পুরো সমাজতান্ত্রিক দেশ আসলে আছে কিনা, তা প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও উত্তর কোরিয়া এবং কিউবা নিজেদের সমাজতান্ত্রিক দাবি করে। চীন এখন সমাজতন্ত্র থেকে পুরোই সরে এসেছে।

      যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা পুঁজিবাদের রক্ষাকর্তা। এটাকা সারা দুনিয়াতে রক্ষা করা এবং ছড়িয়ে দিতে তারা বদ্ধপরিকর। একসময় ব্রিটেন এটা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল শক্তিই হলো এই আদর্শিক শক্তি। কিন্তু আদর্শিক চিন্তাটাই যদি নিম্নগামী হতে থাকে, তাহলে এই আদর্শের ধারকের অবস্থাও খারাপ হবে, এটাই স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে অপারগতার কারণে তাদের আদর্শ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আর তারা নিজেরাই এই আদর্শের ভিতগুলিকে একে একে দুর্বল করেছে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে।

      আমেরিকা সুপারপাওয়ার থাকবে না -- এটা নিশ্চিত। তবে ঠিক কতদিনের মাঝে এই ব্যাপারটা ঘটবে, তা বলতে যাওয়াটা ঠিক হবে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের আদর্শিক দুর্বলতা সম্পর্কে আরও জানতে এই ব্লগে উল্লেখ করা বইগুলি পড়তে পারে।
      ১। মার্কিন দুনিয়ায় পরিবর্তনের হাওয়া
      ২। যুক্তরাষ্ট্রের পর...
      ৩। ভূরাজনৈতিক ভূমিকম্প ২০২০

      Delete
  2. যাযাকাল্লাহ খুব ভালো লাগল। আল্লাহর ইচ্ছাই সব।

    ReplyDelete