Tuesday 5 January 2021

বালুচিস্তানে ভারতের প্রক্সি যুদ্ধ পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী নীতিরই ফলাফল

৫ই জানুয়ারি ২০২১
বালুচিস্তানের বিচ্ছন্নতাবাদী নেত্রী করিমা বালোচের মৃত্যুর পর করাচির রাস্তায় প্রতিবাদ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এনজিও ‘ইইউ ডিজইনফোল্যাব’ তাদের এক বিশ্লেষণে বলে যে, ভারতীয় ইন্ধনে চলা ‘আফ্রিকান রুরাল এন্ড এগ্রিকালচারাল ক্রেডিট অর্গানাইজেশন’এর পক্ষে বালুচিস্তানের নেত্রী কারিমা বালোচ বক্তৃতা দিয়েছেন। 



গত ২২শে ডিসেম্বর কানাডার টরোন্টো শহরে করিমা মেহরাব নামে এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। করিমা বালোচ নামে পরিচিত এই মহিলা পাকিস্তানের দক্ষিণের বালুচিস্তান প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। ২০ তারিখ থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে বলছে তার আত্মীয়রা। টরোন্টো পুলিশ এক বিবৃতিতে বলে যে, মৃতের সকলকিছু বিশ্লেষণের পর পুলিশ অফিসাররা নিশ্চিত হয়েছেন যে, এই মৃত্যু কোন হত্যাকান্ড নয়। মৃতের পরিবারকে এব্যাপারে জানানো হয়েছে। এক টুইটার বার্তায় টরোন্টো পুলিশ জানায় যে, পুলিশ এই মৃত্যুর ব্যাপারে মিডিয়ার যথেষ্ট আগ্রহের কথা জানে। ‘ভয়েস অব আমেরিকা’ বলছে যে, করিমা বালোচ ২০১৫ সালে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে টরোন্টোতে বসবাস করছিলেন। পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনেছিল। তার মৃত্যুর সাথেসাথেই মিডিয়াতে অনেকেই সন্দেহ করা শুরু করে যে, বালোচের মৃত্যু হয়তো পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভদের হাতেই হয়েছে। পাকিস্তান সরকার ইতোমধ্যেই পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্সকে জড়িত করার চেষ্টাকে ‘অবাস্তব’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এবং বলেছে যে, এই কথাগুলি বলা হচ্ছে পাকিস্তানের ইমেজ নষ্ট করার লক্ষ্যে।

করিমা বালোচের স্বামী হাম্মাল হায়দার ব্যাপারটাকে একদমই মেনে নিতে পারছেন না। ব্রিটেনের ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন যে, বালোচ ‘টরোন্টো সেন্টার আইল্যান্ড’এ গিয়েছিলেন; যেখান থেকে তিনি আর ফেরেননি। যাবার সময় তিনি যথেষ্ট শক্তসমর্থ মানুষ হিসেবেই গিয়েছিলেন। এখানে কোন সন্দেহভাজন কর্মকান্ডকে উড়িয়ে দেয়া যায় না; কারণ তিনি হুমকির মাঝেই ছিলেন। তার বাড়িতে দু’বার অভিযানের পর তিনি পাকিস্তান ছেড়েছিলেন। ‘বিবিসি’র সাথে কথা বলতে গিয়ে করিমা বালোচের সহকর্মী লতিফ জোহার বালোচ বলেন যে, কিছুদিন আগেই করিমা হুমকি পান যে, তাকে নাকি ‘ক্রিসমাস গিফট’ দেয়া হবে এবং ‘শিক্ষা দেয়া হবে’।

২০০৫ সাল থেকে করিমা বালোচ বালুচিস্তানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ব্যাপারে প্রতিবাদ শুরু করেন। প্রতিবাদকারীরা বলছেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হাজারো মানুষের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। করিমা বালোচের পরিবারের দুইজন সদস্য নিখোঁজ হন এবং এর কিছুদিন পর তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০৬ সাল থেকে ‘বালোচ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন’এ নাম লেখান করিমা। ২০১৩ সালে সংস্থাটাকে পাকিস্তান সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে এর কার্যক্রম চলমান থাকে; এবং ২০১৫ সালে করিমা বালোচ সংস্থার চেয়ারপার্সন হন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এলে তিনি পাকিস্তান ছাড়েন। টরোন্টোতে তিনি তার সহকর্মী হাম্মাল হায়দারকে বিয়ে করেন। গত পাঁচ বছর ধরে সোশাল মিডিয়া ছাড়াও কানাডা এবং ইউরোপে তিনি বালুচিস্তানের ব্যাপারে যথেষ্ট সরব ছিলেন। ২০১৬ সালে ‘বিবিসি’ করিমা বালোচকে ১০০ জন প্রভাবশালী মহিলার তালিকায় রাখে। বালুচিস্তানের আন্দোলনকারীর এরকম রহস্যজনক মৃত্যু এবারই প্রথম নয়। ২০২০ সালের মে মাসে সুইডেনে বসবাসকারী বালুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্যে কাজ করা সাংবাদিক সাজিদ হুসাইনের মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ বলে যে, তিনি পানিতে ডুবে মারা গিয়েছেন এবং তা হত্যাকান্ড ছিল বলে কোন প্রমাণ নেই। ২০১২ সালে সাজিদ পাকিস্তান ছেড়ে পালিয়ে সুইডেনে আশ্রয় পান।
বালুচিস্তানে ‘সিপেক’ প্রকল্পের অধীন গোয়াদর বন্দর। ‘সিপেক’ প্রকল্পকে টার্গেট করে ভারত শুধু পাকিস্তানকেই দুর্বল করতে চাইছে না, চীনের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পকে হুমকির মাঝে রাখছে। এতে রক্তপাত হচ্ছে পাকিস্তানিদের; ভারতের কেউ মরছে না। এহেন প্রক্সিযুদ্ধে ভারতের লজ্জিত হবার কোন কারণও থাকার কথা নয়। বরং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার পরেও পাকিস্তানকে কেন কষ্ট করে একত্রে রাখতে হচ্ছে, সেই প্রশ্নটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।



ভারতের ভূমিকা

পাকিস্তান সরকারের অভিযোগ হলো, বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পিছনে রয়েছে ভারতের মদদ। ২০১৬ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার কুলভুষন যাদব পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গোয়েন্দাবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। পাকিস্তান সরকার একটা ভিডিও ছাড়ে, যেখানে দেখা যায় যে, কুলভুষন যাদব বালুচিস্তানে বিভিন্ন হামলার পিছনে সহায়তা দিয়েছেন বলে স্বীকার করছেন। ‘আল জাজিরা’ বলছে যে, ২০১৭ সালের এপ্রিলে একটা সামরিক আদালতে বিচারের পর কুলভুষনের মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়। ভারত এব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতে গেলেও আদালত পাকিস্তানের সামরিক আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। তবে দোষী ভারতীয় নাগরিককে ভারতীয় কূটনীতিবিদদের সাথে দেখা করার আদেশ দেয়। ২০১৯এর সেপ্টেম্বরে ভারতীয় কর্মকর্তারা কুলভুষনের সাথে দেখা করেন।

গত ৯ই ডিসেম্বর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এনজিও ‘ইইউ ডিজইনফোল্যাব’ তাদের এক বিশ্লেষণে বলে যে, ২০০৫ সাল থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে কেন্দ্র করে ভারত সরকার গোপনে মিথ্যা তথ্য ছড়াবার অপারেশন চালিয়ে আসছে। সাড়ে ৭’শর বেশি মিডিয়া আউটলেট এবং ১০টার বেশি এনজিওর নাম ব্যবহার করে প্রায় ১’শ ১৯টা দেশে এই অপারেশন চালাচ্ছে ভারত। এর অধীনে সাড়ে ৫’শ ইন্টারনেট ডোমেইন রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া মিডিয়া, এনজিও এবং থিঙ্কট্যাঙ্ক আবারও জীবন্ত করে চালিয়ে নেয়া হয় এই অপারেশন। এমনকি মৃত ব্যক্তিদেরও এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আফ্রিকা বিষয়ক এনজিওর নাম ব্যবহার করে পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক খবরাখবর প্রচার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ‘আফ্রিকান রুরাল এন্ড এগ্রিকালচারাল ক্রেডিট অর্গানাইজেশন’এর পক্ষে বালুচিস্তানের নেত্রী করিমা বালোচ বক্তৃতা দিয়েছেন। ব্রাসেলস এবং জেনেভাতে অপারেট করা এই নেটওয়ার্কের মূল টার্গেট হলো পাকিস্তান; যদিও চীনও এই টার্গেটিংএর অংশ। ‘শ্রীভাস্তাভা গ্রুপ’এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই অপারেশনের মূল লক্ষ্য হলো ভারতীয়দের মাঝে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ জাগিয়ে তোলা ও পাকিস্তান বিরোধী আবেগ উস্কে দেয়া; এবং একইসাথে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থানকে সুসংহত করা। ‘ইইউ ডিজইনফোল্যাব’ ভারতের এই অপারেশনের নাম দেয় ‘ইন্ডিয়ান ক্রনিকলস’। এই প্রতিবেদন পাকিস্তানের জন্যে বড় সুখবর হিসেবে আসে। এর মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার মিডিয়াতে ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণে যেতে পারে। পাকিস্তান সরকার ভারতের বিরুদ্ধে ‘পঞ্চম জেনারেশনের যুদ্ধ’ বা তথ্য যুদ্ধ চালনা করার অভিযোগ করে।

ভারত অবশ্য পাকিস্তানের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এবং ‘ইইউ ডিজইনফোল্যাব’কেই মিথ্যা খবরের উৎস বলে আখ্যা দেয়। ১১ই ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীভাস্তাভা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন যে, ভারত নয়, বরং পাকিস্তানই মিথ্যা এবং বানোয়াট খবর প্রচার করে। ‘ইইউ ডিজইনফোল্যাব’ এর প্রতিবাদ করে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার হুমকি দেয়।
করাচি স্টক এক্সচেঞ্জে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার পর কড়া নিরাপত্তা। ১৯৭১ সালে ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানকে ভেঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি হয় এবং পাকিস্তান তার অর্ধেক জনসংখ্যা হারায়। পাকিস্তান সরকারের উগ্র জাতীয়তাবাদী নীতিকে ভারত ব্যবহার করেছিল মাত্র। পাকিস্তানের সেই জাতীয়তাবাদ মূলতঃ পাঞ্জাবিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় পাকিস্তানকে জন্মের পর থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে; যদিও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মই হয়েছিল মুসলিম সংখ্যাধিক্য এলাকাগুলি নিয়ে। জাতিগত চিন্তাকে প্রাধান্য দেয়ায় পাকিস্তান তার বাঙ্গালী, পুশতুন, বালুচ এবং সিন্ধি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। ভারত পাকিস্তানের সেই ঐতিহাসিক ভীতিকেই কাজে লাগিয়েছে। 



পাকিস্তান যেকারণে শান্তিতে নেই

করিমা বালোচ, সাজিদ হুসাইন, ‘ইন্ডিয়ান ক্রনিকলস’, কুলভুষনের ঘটনা পাকিস্তানকে স্বস্তি দেয়না। কারণ এতে পাকিস্তানের বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায়নি। বালুচিস্তানের গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে গোয়াদরে চীনা বিনিয়োগে গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প শুরুর পর থেকে। গোয়াদর হলো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘চায়না পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর’ বা ‘সিপেক’এর দক্ষিণ প্রান্ত। ‘সিপেক’এর মাধ্যমে বালুচিস্তানের গোয়াদর চীনের মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে। বালুচিস্তানে চীনা কর্মীদের উপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা বেশ নিয়মিত। গত জুলাই মাসে বালুচ এবং সিন্ধি বিচ্ছন্নতাবাদীরা একত্রিত হয়ে একটা জোট করে। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলে যে, চীনের আগ্রাসী কর্মকান্ডে সিন্ধি এবং বালুচ উভয়েই সমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ২০২০এর জুনে করাচি স্টক এক্সচেঞ্জে হামলার জন্যে বালুচরা দায় স্বীকার করলেও তারা সিন্ধিদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছে বলে বলা হয়। ওয়াশিংটন ভিত্তিক বিশ্লেষক মালিক সিরাজ আকবর ‘নিকেই এশিয়া’র সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন যে, দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ একত্রিত হয়ে ‘সিপেক’এর জন্যে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারলেও চীন এবং পাকিস্তানকে এই প্রকল্প বন্ধ করাতে সক্ষম হবে না। তবে তারা পাকিস্তান সরকারকে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে বাধ্য করবে; যার ফলে বিচ্ছন্নতাবাদীরা সাধারণ মানুষকে চীনাদের বিরুদ্ধে আরও খেপিয়ে তুলতে পারবে। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার হয়তো বালুচিস্তানের জনগণকে এই প্রকল্পের সাথে আরও বেশি যুক্ত করতে চাইবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’এর প্রফেসর মোহন মালিকের মতে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা চীনের জন্যে ‘সিপেক’ প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দিতে চাইবে। তিনি আরও মনে করছেন যে, এর ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ এশিয়াতে প্রক্সি যুদ্ধ আরও বাড়বে। অত্র এলাকার রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রবিরোধী গ্রুপগুলিকে ভারত বা চীনের পক্ষে টানার একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাবে। লন্ডনের ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিন্সটার’এর ‘স্কুল অব সোশাল সাইয়েন্সেস’এর প্রধান দিবিয়েশ আনন্দ বলছেন যে, পাকিস্তান সরকারের জন্যে বালুচিস্তানের জনগণকে ‘সিপেক’ প্রকল্পে জড়িত করার মাধ্যমে এর উন্নয়নকে পুরো অঞ্চলের জন্যে উন্নয়নের ইঞ্জিন বানানো যায়; আর উল্টোটা হলে তা হতে পারে চীনাদের গর্ব করার মতো একটা নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রকল্প, যেটাকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ঔপনিবেশিক কর্মকান্ড বলে আখ্যা দিতে পারবে।

১৯৭১ সালে ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানকে ভেঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি হয় এবং পাকিস্তান তার অর্ধেক জনসংখ্যা হারায়। পাকিস্তান সরকারের উগ্র জাতীয়তাবাদী নীতিকে ভারত ব্যবহার করেছিল মাত্র। পাকিস্তানের সেই জাতীয়তাবাদ মূলতঃ পাঞ্জাবিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় পাকিস্তানকে জন্মের পর থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে; যদিও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মই হয়েছিল মুসলিম সংখ্যাধিক্য এলাকাগুলি নিয়ে। মুসলিম পরিচয়ের চাইতে জাতিগত পরিচয়কে প্রাধান্য দেয়ায় পাকিস্তান তার বাঙ্গালী, পুশতুন, বালুচ এবং সিন্ধি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। ভারত পাকিস্তানের সেই ঐতিহাসিক ভীতিকেই কাজে লাগিয়েছে। বালুচিস্তানে ‘সিপেক’ প্রকল্পকে টার্গেট করে ভারত শুধু পাকিস্তানকেই দুর্বল করতে চাইছে না, চীনের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পকে হুমকির মাঝে রাখছে। এতে রক্তপাত হচ্ছে পাকিস্তানিদের; ভারতের কেউ মরছে না। এহেন প্রক্সিযুদ্ধে ভারতের লজ্জিত হবার কোন কারণও থাকার কথা নয়। বরং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার পরেও পাকিস্তানকে কেন কষ্ট করে একত্রে রাখতে হচ্ছে, সেই প্রশ্নটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে চীনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করাটাই যখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে, তখন ভারতও বালুচিস্তানে প্রক্সিযুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে চীনা কৌশলগত প্রকল্পে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমান্তরালেই থাকবে। পারমাণবিক যুদ্ধ নয়, বরং প্রক্সিযুদ্ধই হতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নতুন চেহারা। 

3 comments:

  1. ভালো আর্টিকেল আলহামদুলিল্লাহ।যাযাক আল্লাহ।
    এইখানে আরো কিছু বিষয় লক্ষ্যণীয়।পাকিস্তান গোয়াদার বন্দর ও চীনের সিপেক প্রকল্প গুলোকে ফেন্স বা ঘেরা দিচ্ছে।এই ক্ষেত্রে এই প্রকল্প ও পাকিস্তানের সম্পদগুলো চীনের কলোনীতে রুপান্তরিত হচ্ছে। চীনের স্ট্রেটেজিক আউটপোস্ট গুলো রুক্ষা ও এই প্রকল্প গুলো চালানোর জন্য লোন করে তা আবার চীনকে পেবেক করা সব দেখলে মনে হচ্ছে পাকিস্তান স দিক দিয়ে হারাচ্ছে।আমার প্রশ্ন এই প্রকল্পগুলো থেকে কতটূকু লাভবান হচ্ছে পাকিস্থান?

    ReplyDelete
    Replies
    1. বারাকআল্লাহ। চিন্তাশীল কমেন্টের জন্যে ধন্যবাদ।
      আপনি 'সিপেক'এর ঘের দেয়ার যে ব্যাপারটা বলেছেন, সেই ব্যাপারটাই এখানে আলোচিত হয়েছে। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্যে এই প্রকল্প যদি ভালো কিছু বয়ে নিয়ে না আসে, তাহলে সাধারণ জনগণকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চেষ্টা থেকে আলাদা করাটা কঠিন হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, পাকিস্তান যে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মাঝে পড়েছে, তা থেকে বের হতে তাকে বিনিয়োগ আনতেই হবে; আর সেটা এই মুহুর্তে চীন ছাড়া আর কেউ করতে রাজি নয়।

      পুঁজিবাদী চিন্তার অধীনে উন্নয়নের যে সংজ্ঞা মানুষ অনুসরণ করে চলে, সেটা এরকম বড় বিনিয়োগ প্রকল্পকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত হিসেবে দেখায়। জিডিপি এবং প্রবৃদ্ধির সংজ্ঞা অনুযায়ী সেটাই ভালো মনে হবে। কারণ বিনিয়োগ বাড়লে জিডিপি বাড়বে। একসময় বাংলাদেশেও যখন বিনিয়োগ কম ছিল, তখন অর্থনীতিবিদেরা বলতেন যে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা চ্যালেঞ্জ। যখন চীনা বিনিয়োগ আসা শুরু হলো, তখন তারা বলা শুরু করলেন যে, মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগই আসল বিনিয়োগ নয়। প্রকৃতপক্ষে এই তথাকথিত 'চিন্তাবিদ' এবং 'উপদেষ্টা'এর কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে, যেগুলি বাস্তবায়নে তারা এরকম কথা বলে থাকেন। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। এতে পুঁজিবাদী হিসেবে দেশের জিডিপি বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে; জীবনযাত্রার মান বাড়ছে না; সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে না।

      প্রকৃত উন্নয়নের সংজ্ঞা খুঁজতে হলে পুঁজিবাদী চিন্তা থেকে বের হতে হবে। নাহলে কাগজে কলমে সবসময় তা ভালোই মনে হতে থাকবে। অথচ সাধারণ মানুষ তার মৌলিক চাহিদা পূরণ করা থেকে বঞ্চিত হতে থাকবে।

      Delete
  2. zazak Allah brother for your reply...

    ReplyDelete