Friday 25 September 2020

ফ্রান্সের পশ্চিম আফ্রিকায় রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াচ্ছে তুরস্ক

২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২০

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির অভ্যুত্থানকারীদের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন। মালির অভ্যুত্থানের পিছনে তুরস্কের হাত রয়েছে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করাটা সুদূরপ্রসারী। তবে যেহেতু মালির ক্ষমতাসীন অভ্যুত্থানকারীরা ফ্রান্সের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার কোন বার্তা দেয়নি; বরং ফরাসী বিরোধী কথাবার্তাই তারা বলেছে। তুরস্ক খুব সম্ভবতঃ এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছে না। বিশেষ করে মালিসহ পশ্চিম আফ্রিকায় যুদ্ধাবস্থার পিছনে অনেকেই যখন ফ্রান্সকে দায়ী করছে, তখন অত্র অঞ্চলে একটা শক্তির শূণ্যতা তৈরি হয়েছে।

গত ৯ই সেপ্টেম্বর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি সফর করেন। সফরকালে তিনি বলেন যে, মালি সর্বদাই তুরস্কের বন্ধু এবং ভাইয়ের মতো। তুরস্ক মালির কঠিন সময়েও মালির জনগণের পাশে থেকেছে। তিনি বলেন যে, তিনি মালির বর্তমান ‘কঠিন সময়েই’ দেশটাতে সফর করতে চেয়েছিলেন। মালির স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা তুরস্কের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। গত ১৮ই অগাস্ট মালিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটাতে তুরস্কের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিবিদের সফর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কাভুসোগলু মালির অভ্যুত্থানকারীদের তৈরি করা ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর দ্যা স্যালভ্যাশন অব দ্যা পিপল’এর নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন। মালিতে শান্তিরক্ষা করার জন্যে তুরস্কের সমর্থন ছাড়াও এই মিশনে অর্থায়নের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। এছাড়াও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর তুরস্ক মালিতে ‘এন৯৫’ মাস্ক এবং ভেন্টিলেটর সরবরাহ করেছে। মালির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্যে তুরস্ক সকল সহায়তা দেবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘আল মনিটর’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, মালির এমন পরিস্থিতিতে কাভুসোগলুর সফরের কারণে কেউ কেউ মনে করছেন যে, বর্তমানে ফ্রান্স এবং তুরস্কের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মালির অভ্যুত্থানে কোন ভূমিকা রেখেছিল কিনা।

‘আল মনিটর’ বলছে যে, মালির অভ্যুত্থানের কারণ হিসেবে মালির রাস্তায় বিক্ষোভকেই সামনে আনতে হবে। এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মালির ইসলামিক নেতা মাহমুদ ডিকো। মালির ইসলামিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ শহর তিমবুকতু থেকে আসা ডিকো সৌদি আরবের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মদিনা থেকে পড়াশোনা করেছেন। সৌদি আরবে পড়াশোনার কারণে ডিকোকে ফরাসীরা ওয়াহাবি চিন্তার লোক বলেই মনে করে এবং জিহাদিদের সাথে যোগসাজস আছে বলে সন্দেহের চোখে দেখেছে। ডিকো ২০১২ সালে মালিতে ফরাসী হস্তক্ষেপের বিরোধিতা না করলেও পরবর্তীতে তার অবস্থান পাল্টে ফেলে মালির সমস্যার জন্যে ফ্রান্সকে দায়ী করতে শুরু করেন। কিন্তু ডিকোর সাথে তুরস্কের সম্পর্ক কোথায়? প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, তুরস্কের ‘ন্যাশনাল আউটলুক মুভমেন্ট’এর সাথে ডিকোর সম্পর্ক রয়েছে। ‘ন্যাশনাল আউটলুক মুভমেন্ট’ বা ‘মিল্লি গাইয়ুশ’ ১৯৬৯ সালে তুর্কি রাজনীতিবিক এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নেকমেত্তিন এরবাকান তৈরি করেছিলেন। প্রথমে এই সংস্থার কর্মকান্ডে ইসলাম খুব কম আসলেও পরবর্তীতে তুর্কি সরকার বিভিন্ন দেশে তুর্কি প্রভাব বৃদ্ধি করতে ইসলামিক আবেদনকে ব্যবহার করা শুরু করে। মালির রাজধানী বামাকোতে তুরস্কের ‘ডিরেক্টোরেট অব রিলিজিয়াস এফেয়ার্স’ বা ‘দিয়ানেট’এর উদ্যোগে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ইউরো খরচে ‘আইয়ুব সুলতান মসজিদ’ তৈরি করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মসজিদটা উদ্বোধন করেন দিয়ানেটের প্রেসিডেন্ট মেহমেত গোরমেজ। উদ্বোধনের সময় ‘সুপ্রিম ইসলামিক কাউন্সিল অব মালি’র চেয়ারম্যান মাহমুদ ডিকো উপস্থিত ছিলেন। ‘আল মনিটর’ বলছে যে, মসজিদের জন্যে জমি জোগান দেয়ার পিছনে ডিকোর ভূমিকা ছিল। তবে মালির অভ্যুত্থানের পিছনে তুরস্কের হাত রয়েছে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করাটা সুদূরপ্রসারী। অভ্যত্থানকারীদের নেতা কর্নেল আসিমি গোইতা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং ফ্রান্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন। আরও দু’জন নেতা সাদিও কামারা এবং মালিক দিয়াও রাশিয়াতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অভুত্থানকারীদের সহায়তা দেয়া অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ফান্তা মাদি দেমবেলের সাথে জার্মানির গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

মালিতে তুরস্কের দূতাবাস স্থাপিত হয় ২০১০ সালে। ২০১৮ সালে মালির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুবাকার কেইতা তুরস্ক ভ্রমণ করেন। তবে মালিতে এখনও তুরস্কের চাইতে ফ্রান্সের প্রভাবই বেশি বলে বলছে ‘আল মনিটর’। দেশটার নিরাপত্তার পিছনে তুরস্কের বিনিয়োগ একেবারেই তুচ্ছ। মালিতে ১৩ হাজার জাতিসংঘ সেনা রয়েছে; রয়েছে ৫ হাজার ১’শ ফরাসী সেনা। তুরস্কের সেখানে রয়েছে মাত্র দু’জন পুলিশ অফিসার! জাতিংঘের ‘কমট্রেড’এর হিসেবে ২০১৭ সালে মালি যেখানে তুরস্ক থেকে আমদানি করছে ৪৫ লিমিয়ন ডলারের পণ্য, সেখানে ফ্রান্সের কাছ থেকে আমদানি করছে ৩’শ ৪২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। তবে মালির ক্ষমতাসীন অভ্যত্থানকারীরা ফ্রান্সের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার কোন বার্তা দেয়নি; বরং ফরাসী বিরোধী কথাবার্তাই তারা বলেছে। তুরস্ক খুব সম্ভবতঃ এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছে না। বিশেষ করে মালিসহ পশ্চিম আফ্রিকায় যুদ্ধাবস্থার পিছনে অনেকেই যখন ফ্রান্সকে দায়ী করছে, তখন অত্র অঞ্চলে একটা শক্তির শূণ্যতা তৈরি হয়েছে। 

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মালির রাজধানী বামাকোতে ‘আইয়ুব সুলতান মসজিদ’ মসজিদ উদ্বোধন করেন তুরস্কের দিয়ানেটের প্রেসিডেন্ট মেহমেত গোরমেজ। উদ্বোধনের সময় ‘সুপ্রিম ইসলামিক কাউন্সিল অব মালি’র চেয়ারম্যান মাহমুদ ডিকো উপস্থিত ছিলেন। মালির অভ্যুত্থানের কারণ হিসেবে মালির রাস্তায় বিক্ষোভকেই সামনে আনতে হবে। এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মালির ইসলামিক নেতা মাহমুদ ডিকো।


দিয়ানেট, টিকা এবং অন্যান্য তুর্কি সংস্থার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার

তদুপরি এটা নিশ্চিত যে, তুর্কিরা দিয়ানেটের মাধ্যমে আফ্রিকাসহ বিশ্বব্যাপী তুরস্কের প্রভাবকে প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। গত বছরের অক্টোবরে দিয়ানেটের উপপ্রধান সেলিম আরগুন ‘আনাদোলু এজেন্সি’কে দেয়া এক সাক্ষাতে বলেন যে, আফ্রিকার দেশগুলিতে দিয়ানেটের কর্মকান্ডকে স্বাগত জানানো হচ্ছে; কারণ এই কর্মকান্ড পুরোপুরিভাবে মানবতা এবং উন্নয়ন সম্পর্কিত। আফ্রিকাতে তুরস্কের কোন সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাস বা গোপন উদ্দেশ্য নেই। দিয়ানেটের কর্মকান্ডকে তিনি মিশনারি কর্মকান্ড থেকে আলাদা করে বলেন, ইউরোপিয় বিভিন্ন সংস্থা এবং এনজিও যখন মুসলিম দেশগুলিতে কাজ করতে যায়, তখন জনগণ সন্দেহের চোখে দেখে। তুরস্কের কর্মকান্ডকে মানুষ সেভাবে দেখে না।

অক্টোবরে আফ্রিকার ধর্মীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ইস্তাম্বুলে তৃতীয়বারের মতো হয়ে যায় ‘আফ্রিকান মুসলিম রিলিজিয়াস লিডার্স’ শীর্ষ বৈঠক। এতে আফ্রিকা থেকে বিভিন্ন সরকারের ধর্ম মন্ত্রীরা সহ একশ’রও বেশি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি অংশ নেয়। এর মাধ্যমে তুর্কিরা ইসলামকে নিয়ে তাদের নিজেদের চিন্তাধারাগুলিকেই আফ্রিকার সামনে উপস্থাপন করে; যেকারণে এই অনুষ্ঠানটা প্রতিবছর ইস্তাম্বুলে করার পরিকল্পনা রয়েছে; আফ্রিকার মাটিতে নয়। দিয়ানেটের ওয়েবসাইটে এই বৈঠকের এজেন্ডাসমূহের একটা তালিকা দেয়া হয়; যার মাঝে ছিল আফ্রিকার ছাত্রদেরকে তুরস্কের ইসলামিক কারিকুলামের স্কুলগুলিতে এবং সাতটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্যে স্কলারশিপের সুযোগ বৃদ্ধি। ‘আনাদোলু এজেন্সি’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, দিয়ানেট বিশ্বের ১’শ ১১টা দেশ থেকে শিক্ষার্থীদের তুরস্কে পড়াশোনার সুযোগ করে দিচ্ছে এবং ১৩টা দেশে মোট ২৫টা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। তুরস্কের কারাবুকে ৮ হাজারের বেশি আফ্রিকার শিক্ষার্থী শিক্ষা নিচ্ছে বলে বলছেন দিয়ানেটের সেলিম আরগুন।

দিয়ানেট ছাড়াও আফ্রিকায় কাজ করছে তুরস্কের অন্যান্য সংস্থা। ‘তুর্কস এব্রড এন্ড রিলেটেড কমিউনিটিজ’ বা ‘ওয়াইটিবি’ আরেকটা সংস্থা, যা কিনা ২০১৮ সালে ১১ হাজারেরও বেশি আফ্রিকানের জন্যে তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। গতবছরের জুলাই মাসে তুরস্কের কৃষি ও বন মন্ত্রী বলেন যে, আফ্রিকায় দিয়ানেট, ‘টারকিশ কোঅপারেশন এন্ড কোঅরডিনেশ এজেন্সি’ বা ‘টিকা’ এবং আরও অন্যান্য সংস্থা এবং এনজিও ৫’শ ৫টা পানির কূপ খনন করেছে। এর মাঝে সবচাইতে বেশি ২’শ ৫৮টা কূপ খনন হয়েছে নিজেরএ; মৌরিতানিয়াতে ১’শ ২টা; বুরকিনা ফাসোতে ৮৪টা; মালিতে ৩৬টা; সোমালিয়াতে ২০টা; সোমালিল্যান্ডে ৫টা। এর মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের ১৮ লক্ষ মানুষের পানির সংকুলান হবে বলে বলছেন তারা। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘টিকা’ আফ্রিকায় ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। টিকার ওয়েবসাইটে আফ্রিকায় টিকার ২১টা অফিস দেখানো হয়েছে; যার মাঝে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় গিনি, গাম্বিয়া, সেনেগাল, নিজের, ক্যামেরুন এবং শাদএ অফিস রয়েছে। এসব এলাকায় হাসপাতাল এবং স্কুল নির্মাণ ছাড়াও বিভিন্ন কৃষি প্রকল্পে সহায়তা দিয়েছে টিকা। বিভিন্ন দেশে শরণার্থীদের সহায়তার কাজটাও তুর্কি সরকারের পক্ষে টিকাই করে। বর্তমানে করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশে মেডিক্যাল সহায়তা দিচ্ছে টিকা।

তুর্কিরা তুর্কি ভাষা এবং সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে তৈরি করে ‘ইউনুস এমরে ইন্সটিটিউট’; আফ্রিকাতে যার অফিস রয়েছে সেনেগাল, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, তিউনিসিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া এবং মিশরে। এছাড়াও রয়েছে ‘টারকিশ মারিফ ফাউন্ডেশন’। ২০১৬ সালে স্থাপিত এই সংস্থা বিশ্বব্যাপী ৪৩ দেশে ৩’শ ৩৩টা স্কুল চালায়; যার মাঝে ২৩টা দেশই আফ্রিকার। এর মাধ্যমে তুরস্কের সহায়তায় পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষাও পায়। টারকিশ এয়ারলাইন্স তুরস্কের পতাকা নিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। মোট ১’শ ২৪টা দেশের ৩’শ ১১টা গন্তব্যে বিমান পরিচালনা করছে তারা। ২০১৮ সালে তুরস্কে ৪ কোটি মানুষ ভ্রমণ করে; যার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো টারকিশ এয়ারলাইন্স। আফ্রিকার ৫৬টা গন্তব্যে যাচ্ছে এই এয়ারলাইন্স; এর মাঝে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় রয়েছে ২১টা। আফ্রিকাতে শুধুমাত্র ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সই টারকিশ এয়ারলাইন্সএর চাইতে বেশি গন্তব্যে যায় বলে বলেন সংস্থাটার কর্মকর্তা টুনচায় এমিনোগলু। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সালের মাঝে আফ্রিকাতে তাদের যাত্রীসংখ্যা প্রায় ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সাংবাদিকদের বলেন তিনি।

‘ডেইলি সাবাহ’ বলছে যে, তুরস্কের আফ্রিকা নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে ১৯৯৮ সাল থেকে। ২০০৫ সালকে তুরস্ক ‘ইয়ার অব আফ্রিকা’ বলে আখ্যা দেয়। ২০০৮ সাল থেকে তুরস্ক আফ্রিকান ইউনিয়নের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। একই বছরে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ‘তুর্কি আফ্রিকা কোঅপারেশন সামিট’; যেখানে আফ্রিকার ৫০টা দেশ থেকে প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিল। ২০০৯ সালে যেখানে আফ্রিকার ১২টা দেশে তুরস্কের দূতাবাস ছিল, সেখানে এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২এ। দিয়ানেটের উদ্যোগে প্রথম ‘আফ্রিকান মুসলিম রিলিজিয়াস লিডার্স’ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে। দ্বিতীয় বৈঠক হয় ২০১১ সালে। মালি ছাড়াও দিয়ানেট আফ্রিকার দেশ জিবুতি, ঘানা, বুরকিনা ফাসো এবং শাদে মসজিদ নির্মাণ করেছে। দিয়ানেট বিভিন্ন ভাষায় ইসলামিক নিয়মকানুনের প্রকাশনা চালায়, যেখানে বিভিন্ন ভাষায় ইসলামিক গ্রন্থ অনুবাদও করা হয়। 


ফ্রান্সের প্রাক্তন উপনিবেশগুলিতে তুরস্কের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে

সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকাকে তুরস্ক তার পরিবর্তিত নীতিতে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে, তা তুর্কি নেতৃবৃন্দের সফরসূচি দেখলেই বোঝা যাবে। শুধু পররাষ্ট্রমন্ত্রীই নয়, প্রেসিডেন্ট এরদোগানও বেশ কয়েকবার আফ্রিকা সফর করেছেন। ২০১৪ সালে উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা; ২০১৫ সালে পূর্ব আফ্রিকা; ২০১৬ সালে আলাদাভাবে পশ্চিম ও পূর্ব আফ্রিকা; ২০১৭ সালে আবারও পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা দু’বার; ২০১৮ সালে উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা এবং আলাদাভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা; ২০২০ সালে উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণ করেন তিনি। যে দেশগুলিতে তিনি ভ্রমণ করেছেন, তার মাঝে অনেকগুলি দেশই প্রাক্তন ফরাসী উপনিবেশ এবং সেখানে ফরাসীদের প্রভাব যথেষ্ট। এরদোগানের ভ্রমণ করা ১১টা প্রাক্তন ফরাসী উপনিবেশের মাঝে রয়েছে আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, জিবুতি, সেনেগাল, আইভোরি কোস্ট, গিনি, মাদাগাস্কার, শাদ, মৌরিতানিয়া, মালি। এর মাঝে তিনি আলজেরিয়া এবং সেনেগালে ভ্রমণ করেন তিনবার করে। প্রতিটা দেশের সাথে তুরস্ক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ছাড়াও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও দাতব্য কর্মকান্ড নিয়ে চুক্তি করেছে। তবে এর মাঝে রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালীকরণ এবং নিরাপত্তা ইস্যুকেন্দ্রিক চুক্তি স্বাক্ষর খুব বেশি দেশের সাথে হয়নি। তবে এই অংশটাই প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।

সেনেগাল

কাভুসোগলু সেনেগালে তুরস্কের নতুন দূতাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শিক্ষা এবং সংস্কৃতি বিষয়ে দুই দেশের মাঝে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে সেনেগাল থেকে তুরস্কে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়। সেনাগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদু বা বলেন যে, এখন দুই দেশের মাঝে বাণিজ্য প্রায় আড়াই’শ মিলিয়ন ডলার; যা তিনি ৪’শ মিলিয়নে নিয়ে যাবার আশা করেন। তুর্কিরা সেনেগালে তাদের অবস্থানকে আরও আগে থেকেই শক্তিশালী করতে শুরু করেছে। এবছরের জানুয়ারিতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান সেনেগাল সফর করে আসেন। এর আগে ২০১৬ এবং ২০১৮ সালেও তিনি সেনেগাল সফর করেন। সেখানে বিভিন্ন কন্সট্রাকশন কাজে তুর্কিরা অংশ নিচ্ছে; সেখানে তারা বিভিন্ন স্কুলও চালাচ্ছে। ‘ডেইলি সাবাহ’ বলছে যে, ২০২২ সালের ইয়ুথ অলিম্পিক গেমসকে টার্গেট করে তুর্কি কন্সট্রাকশন কোম্পনিগুলি সেখানে একটা অলিম্পিক পুল, ৫০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার একটা স্টেডিয়াম এবং একটা হোটেল নির্মাণ করছে। তুর্কি কোম্পানিগুলি সেখানে সাড়ে ৭’শ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ২৯টা প্রকল্প পেয়েছে। তুর্কি কোম্পানি ‘সুম্মা’ রাজধানী দাকারে ‘দাকার এরেনা’, ‘দাকার এক্সপো সেন্টার’ এবং ‘দাকার ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টার’ নামে তিনটা বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এই কোম্পানিটা ‘লিমাক’ নামে আরেক তুর্কি কোম্পানিকে সাথে নিয়ে ‘ব্লেইজ দিয়েইন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ২০১৬ সালে তুর্কি কোম্পানি ‘ইয়াপি মারকেজি গ্রুপ’ ফরাসী এবং সেনেগালের কোম্পানির সাথে যৌথভাবে দাকার থেকে নতুন বিমানবন্দর পর্যন্ত রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ পায়। ২০১৮ সালে তুর্কি কোম্পানি ‘তোসইয়ালি’ সেনেগালে ২ বিলিয়ন ডলারের একটা স্টিল মিলে বিনিয়োগ করে। এরদোগান দুই দেশের মাঝে বাণিজ্য ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ব্যাপারে আশাবাদী। এরদোগানের সফরের সময়ে দুই দেশের মাঝে মোট ৭টা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়; যার মাঝে প্রতিরক্ষা চুক্তিও ছিল। সেনেগাল ইতোমধ্যেই তুরস্ক থেকে ২৫টা ‘এজদার ইয়ালসিন’ আর্মার্ড ভেহিকল এবং ৪টা ‘এজদার তোমা’ রায়ট কন্ট্রোল ভেহিকল কিনেছে। ‘ডেইলি সাবাহ’ সেনাগালে তুরস্কের বড় বিনিয়োগের ব্যাখ্যা দিয়ে বলছে যে, সেনেগাল এবং আইভোরি কোস্ট পশ্চিম আফ্রিকার স্থলবেষ্টিত দেশগুলির সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছাবার পথ। এছাড়াও সেনেগালের সমুদ্র উপকূলে হাইড্রোকার্বন রিজার্ভের খোঁজ পাওয়ায় দেশটার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। তুর্কি মারিফ ফাউন্ডেশনের ১৩টা স্কুল রয়েছে সেনেগালে। ৫০ জন সেনেগালি ছাত্র তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ছে বলে বলেন এরদোগান। টারকিশ এয়ারলাইন্স দাকারে ৮টা প্যাসেঞ্জার ফ্লাইট এবং ৪টা কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে। টিকা এবং ইউনুস এমরে ইন্সটিটিউটএর অফিসও রয়েছে সেনেগালে।

গাম্বিয়া

এরদোগান জানুয়ারির একই সফরে সেনেগালের প্রতিবেশী ছোট্ট দেশ গাম্বিয়াও সফর করেন। ২০১১ সালে সেখানে তুরস্কের দূতাবাস স্থাপন করা হয়। দুই দেশের মাঝে বাণিজ্য ২০১৯ সালে ৫৫ মিলিয়ন ডলার পৌঁছে। গাম্বিয়াতে তুরস্কের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ হলো একটা ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তুর্কি কোম্পানি ‘কারপাওয়ারশিপ’ ২০১৮ সাল থেকে গাম্বিয়াতে ৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটা ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করছে; যা কিনা গাম্বিয়ার ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।

নিজের

কাভুসোগলু নিজের সফরে গিয়ে বলেন যে, তার দেশ নিজেরএর পরিবহণ, কন্সট্রাকশন, জ্বালানি, খনিজ এবং কৃষিক্ষেত্রে অবদান রাখতে চায়। কাভুসোগলু নিজেরএর প্রেসিডেন্ট ইসুফু মোহামাদুর সাথে সাক্ষাতে লিবিয়া এবং মালিতে সংঘাত, এবং সেকারণে নিজেরএর নিরাপত্তা ব্যাহত হবার ব্যাপারটা আলোচনা করেন। দুই দেশের মাঝে নিরাপত্তা এবং সামরিক ইস্যুতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা নিয়ে ‘দ্যা নিউ খালিজ’ বলছে যে, এর মাধ্যমে লিবিয়ার দক্ষিণের প্রতিবেশী নিজেরএ তুরস্কের একটা খুঁটি স্থাপিত হলো। ২০১৩ সালে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজের সফর করে দুই দেশের মাঝে সম্পর্কের সূচনা করেন।

আইভোরি কোস্ট

পশ্চিম আফ্রিকার দ্বার হিসেবে খ্যাত আইভোরি কোস্ট সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় পার করছে। দেশটা সবসময়েই ফ্রান্সের গুরুত্বপূর্ণ একটা বন্ধু রাষ্ট্র। ২০০৯ সালে সেদেশে তুরস্কের দূতাবাস খোলা হয়। ২০১৫ সালের মার্চে আইভোরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট আলাসানে উয়াত্তারা তুরস্ক সফর করেন; আর পরের বছর তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান আইভোরি কোস্ট সফর করেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তুরস্ক আইভোরি কোস্টকে চারটা সেক্টরে সহায়তা করতে চায়; যার মাঝে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার এবং নিরাপত্তা। সফরকালে এরদোগান দুই দেশের মাঝে বাণিজ্যকে ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন, যা তখন ছিল ৪’শ মিলিয়নের নিচে। বিনিয়োগ, ঔষধ, তথ্য প্রযুক্তি, টেলিকমিউনিকেশন ছাড়াও প্রতিরক্ষা শিল্পের ব্যাপারে দুই দেশের মাঝে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছিল। প্রতিরক্ষা শিল্পের চুক্তি তুরস্কের পার্লামেন্টে ২০২০এর ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদিত হয়; যার মাঝে ছিল শিল্প উৎপাদন, ক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা, লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট, তথ্য আদানপ্রদান এবং গবেষণা।

মৌরিতানিয়া

সেনেগালের পার্শ্ববর্তী দেশ মৌরিতানিয়া সেনেগালে তুর্কি বিনিয়োগ দেখে তার সাথে নিজেরাও যোগ হতে চাইছে। এবছরের জানুয়ারি মাসে মৌরিতানিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী মোহামেদু মোহাইমিদ সেদেশে তুর্কি রাষ্ট্রদূত চেম কায়াওগলুর সাথে কথা বলতে গিয়ে মৌরিতানিয়ার পরিবহণ সেক্টরে তুর্কিদের বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট এরদোগান ২০১৮ সালে মৌরিতানিয়া সফর করেছিলেন। মৌরিতানিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হচ্ছে সেদেশের উপকূল থেকে সার্দিনেলা মাছ আহরণ করে কারখানায় প্রসেস করে তা থেকে মাছের খাদ্য তৈরি করা, যা কিনা বিশ্বব্যাপী মাছ চাষের জন্যে ব্যবহৃত হয়। সেনেগাল এবং গাম্বিয়াতেও এই শিল্প রয়েছে। তুরস্ক মৌরিতানিয়াতে এই শিল্পে বিনিয়োগ করেছে এবং উপকূলে মাছ ধরার ট্রলার অপারেট করছে।

গিনি বিসাউ

তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাভুসোগলু তার এবারের পশ্চিম আফ্রিকা সফরে মালি থেকে গিনি বিসাউ ভ্রমণ করেন। গিনি বিসাউতে তুর্কি মারিফ ফাউন্ডেশনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় স্কুল পরিচালনার বিষয়ে। গিনি বিসাউএর কূটনীতিবিদদেরকে তুর্কিরা অনলাইন ট্রেনিং দেবে বলে বলা হয়। পরিবহণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে টারকিশ এয়ারলাইন্স গিনি বিসাউকে তাদের গন্তব্যের মাঝে নেবার চেষ্টা করবে। গিনি বিসাউএর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজি কারলা বারবোসা বলেন যে, তার দেশ অবকাঠামো উন্নয়নে তুরস্কের বিনিয়োগ আশা করে। সফরের সময় কাভুসোগলুকে গিনি বিসাউএর ‘ন্যাশনাল অর্ডার’ পুরষ্কার দেয়া হয়।

টোগো

গত জুলাই মাসে কাভুসোগলু টোগোতে যান এবং সেখানে তুরস্কের একটা দূতাবাস খোলার পরিকল্পনার ঘোষণা দেন।টোগোতে তুর্কিরা স্কুল পরিচালনা করছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশটাকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে তুর্কি এজেন্সি টিকা। টোগোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট দুসে আশা করেন যে, টারকিশ এয়ারলাইন্স টোগোর রাজধানী লোমেকে তাদের নেটওয়ার্কে যুক্ত করবে।

ইকুয়েটোরিয়াল গিনি

কাভুসোগলু গিনি উপসাগরের ছোট্ট দ্বীপ দেশ ইকুয়েটোরিয়াল গিনিও সফর করেন। প্রাক্তন স্প্যানিশ উপনিবেশ এই দেশ তেল খনির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে এরদোগানও এখানে আসেন। কাভুসোগলু রাজধানী মালাবোতে নতুন তুর্কি দূতাবাস উদ্বোধন করেন। কাভুসোগলু বলেন যে, তুর্কি কোম্পানি ‘সুম্মা’ এখানকার ‘কনগ্রেশনাল সেন্টার’ ভবন তৈরি করেছে এবং ভবিষ্যতেও তুর্কি কোম্পানিগুলিকে কাজ পাবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে অনুরোধ করেন তিনি। তিনি বলেন যে, দুই দেশের মাঝে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

‘ডয়েচে ভেলে’র এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, পশ্চিম আফ্রিকার সাথে তুরস্কের সম্পর্কোন্নয়ের ব্যাপারটা শুধু অর্থনৈতিক লাভের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং ভবিষ্যতে তা নিরাপত্তার দিকেও ধাবিত হবে। সোমালিয়াতেও তুরস্ক প্রথমে অর্থনৈতিক কারণেই গিয়েছিল। ধীরেধীরে সেখানে বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যায় তারা। এরপর একসময় সোমালিয়ার সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণের জন্যে একটা সামরিক ঘাঁটিও তৈরি করে তারা। তবে তুরস্ক এখনও অর্থনৈতিক কারণেই আফ্রিকায় যেতে চায়; কারণ তুরস্ক খনিজ সম্পদে একেবারেই সমৃদ্ধ নয়।

রাজনীতি এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে পশ্চিম আফ্রিকায় তুরস্ক

মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম গত জুনে তুর্কি মার্কিন বিজনেস কাউন্সিলের এক আলোচনায় বলেন যে, তিনি সবচাইতে বেশি খুশি হবেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্ক একত্রে আফ্রিকায় কাজ করে। করোনাভাইরাসের মহামারির মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে একটা দাবি উঠেছে, যাতে চীনা পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুরস্কের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব চললেও চীনের বিকল্প খুঁজতে এক্ষেত্রে তুরস্ককে আফ্রিকাতে পার্টনার হিসেবে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি’র ফেলো মেহমেত ওজকান লন্ডনভিত্তিক ‘মিডলইস্ট আই’এর এক লেখায় বলেন যে, লিবিয়ার যুদ্ধে জড়াবার পর থেকে আফ্রিকায় তুরস্কের অবস্থানে বেশ পরিবর্তন এসেছে। এর আগে দিয়ানেট বা টিকা বা টারকিশ এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে আফ্রিকায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তার হলেও এখন এর মাঝে রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা যুক্ত হয়েছে। যেমন সোমালিয়ার সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের সাথেসাথে সেখানে তুরস্ক তার রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তার স্বার্থকে এগিয়ে নিয়েছে। একই কৌশল পশ্চিম আফ্রিকায় মালি এবং নিজেরএর ক্ষেত্রেও দেখা যেতে পারে। তবে তুরস্কের পশ্চিম আফ্রিকা কৌশল এখনও আকার নিচ্ছে মাত্র। এর মাধ্যমে তুরস্কের সাথে ফ্রান্সের দ্বন্দ্ব আরও গভীর হবে। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাঝে অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে ইতালি এবং স্পেনের সাথে নিরাপত্তা এবং অভিবাসী ইস্যুতে তুরস্কের ঐক্য হতে পারে। মোটকথা, সামনের দিনগুলিতে অত্র এলাকায় তুরস্কের নীতি নিয়ে আরও অনেক কথা হবে। তবে যে ব্যাপারটা সিনেটর গ্রাহাম বা মেহমেত ওজকান এড়িয়ে গেছেন তা হলো, ফরাসী প্রভাবের পশ্চিম আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের ভূরাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সেটা ফ্রান্সের স্বার্থের সাথে যাবে কিনা। অন্যকথায়, যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা নীতি কি ফ্রান্সের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক? একই সূত্রে প্রশ্ন করা যায় যে, পশ্চিম আফ্রিকায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের ফসল কি তুরস্কের ঘরে উঠবে, নাকি অন্য কারও ঘরে?

No comments:

Post a Comment