Monday 31 August 2020

কাশ্মির থেকে উইঘুর... মুসলিমরা জাতীয়তাবাদী রাজনীতির শিকার

৩১শে অগাস্ট ২০২০

 

চীনা সরকারি মিডিয়ায় প্রকাশিত উইঘুরের ডিটেনশন ক্যাম্প।জাতিসংঘের হিসেবে উইঘুরে ১০ লক্ষ মুসলিমকে চীন সরকার আটকে রেখে ‘নতুন করে শিক্ষা’ দিচ্ছে। শুধু কাশ্মির, আসাম বা উইঘুরই নয়; এর সাথে রয়েছে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, লিবিয়া, আরাকান এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিমদের উপর নির্যাতনের অগুণিত প্রতিবেদন। প্রতিটা ক্ষেত্রেই জাতিরাষ্ট্রগুলি তার নিজস্ব জাতিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত ক্ষয়িষ্ণু বিশ্বব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ ‘মানবাধিকার’ এখন হাস্যকর এক শব্দে পরিণত হয়েছে। অন্ততঃ মুসলিম বিশ্বের মাঝে জাতীয়তাবাদ প্রসূত স্বার্থের রাজনীতি যে বিভাজন ও অন্যায়ের জন্ম দিচ্ছে, তা মুসলিমদেরকে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা খুঁজতে বেশি অনুপ্রাণিত করবে।

গত ৩১শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ চীনা কোম্পানি ‘শিনজিয়াং প্রোডাকশন এন্ড কন্সট্রাকশন কর্পোরেশন’ এবং এর দুইজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা প্রাক্তন পার্টি সেক্রেটারি সুন জিলং এবং ডেপুটি সেক্রেটারি পেং জিয়ারুইএর উপর চীনের পশ্চিমের উইঘুর অঞ্চলে মুসলিমদের উপর নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অবরোধ আরোপ করে। ‘ভয়েস অব আমেরিকা’ এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলছে যে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র এই কোম্পানি এবং ব্যাক্তিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা ছাড়াও ব্যাক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেবে এবং মার্কিনীদের এদের সাথে ব্যবসা করার উপর নিষেধাজ্ঞা দেবে। এর আগে গত ১৭ই জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উইঘুর মুসলিমদের উপর নির্যাতনের কারণ দেখিয়ে তৈরি করা নতুন মার্কিন আইনে স্বাক্ষর করেন। গত ডিসেম্বরে এই আইন মার্কিন কংগ্রেসে প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়; যেখানে বিপক্ষে পড়েছিল মাত্র এক ভোট। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল চীনকে মানবাধিকার বিষয়ে একটা বার্তা দেয়া। এই আইনের অধীনে চীনের উইঘুর বা শিনজিয়াং রাজ্যের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি চেন কুয়াংগুয়োর উপর অবরোধের কথা বলা হয়েছে এবং মার্কিন কোম্পানিগুলিকে উইঘুরের জোরপূর্বক শ্রমে তৈরি যে কোন পণ্য বর্জন করতে বলা হয়েছে। জাতিসংঘের হিসেবে উইঘুরে ১০ লক্ষ মুসলিমকে চীন সরকার আটকে রেখে ‘নতুন করে শিক্ষা’ দিচ্ছে। মার্কিন নেতৃবৃন্দ বলছেন যে, চীনারা উইঘুরের মুসলিমদের সংস্কৃতি এবং বিশ্বাসকে মুছে ফেলতে চাইছে। অপরদিকে চীনারা বলছে যে, এই ক্যাম্পগুলিতে বিভিন্ন বিষয়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এবং এটা উগ্রবাদী চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্যে দরকার রয়েছে। চীনারা মার্কিন কংগ্রেসে পাস করা আইনের কড়া সমালোচনা করে বলে যে, এর মাধ্যমে চীনকে খারাপ প্রমাণ করার ষড়যন্ত্র চলছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে তার ভুল শুধরে নিতে বলা হয়। চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারেও হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়। এতে আরও বলা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র এর থেকে বিরত না হলে চীন এর বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই দ্বন্দ্বের জন্যে পুরোপুরি দায়ী থাকবে। উইঘুর মুসলিমদের সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস’ ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়ে বলে যে, এটা উইঘুরের জনগণকে আশা দেবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, উইঘুরের মুসলিমদের রক্ষায় তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে? এতে কার স্বার্থই বা কি?

‘বিজনেস ইনসাইডার’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, শুধু উইঘুরই সমস্যা নয়। ভারত তার অধিকৃত কাশ্মির অঞ্চলের বিশেষ অধিকার বাতিল করেছে এবং তার পূর্বের আসাম রাজ্যে বাঙ্গালী মুসলিমদের আটক করার ব্যবস্থা করছে। চীন এবং ভারত উভয়েই বলছে যে, এই ব্যবস্থাগুলি তারা নিচ্ছে সহিংসতা বন্ধ করতে; এবং একইসাথে অন্যান্য দেশগুলিকে তারা এব্যাপারে নাক না গলাতে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছে। প্রতিবেদনে বিশেষভাবে বলা হচ্ছে যে, উভয় দেশই মূলতঃ মুসলিমদেরকে টার্গেট করেছে ‘সহিংসতা বন্ধের’ কথা বলে। আর বাকি বিশ্ব এই দুই দেশের বিরুদ্ধে প্রকৃতপক্ষে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। হয় চীনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধরে রাখতে বা চীনের হুমকির ভয়ে একটা মুসলিম দেশও চীনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও চীনকে শুধরে নিতে বলেছে, কিন্তু চীনকে বাধ্য করতে কোন পদক্ষেপই নেয়নি। উইনিভার্সিটি অব কলোরাডোর গবেষক ড্যারেন বায়লার বলছেন যে, অনেককেই চীনের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলতে শোনা যাচ্ছে; কিন্তু যখন এর ফলশ্রুতিতে মানবসম্পদ বা অর্থসম্পদহানির কোন সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখনই তারা নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। তারা একইসাথে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির নেতৃবৃন্দের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলছে যে, মুসলিম দেশগুলিই তো কিছু করছে না, তাহলে তাদের উপর কেন দায় থাকবে? তারা নিজেদের অবস্থানের সমর্থনে বলছেন যে, অন্ততঃপক্ষে এর বিরুদ্ধে কিছু কথা তো তারা বলছেন।
    

ভারতীয় বাহিনীর পেলেট গানের শিকার কাশ্মিরের জনগণ। মুসলিম হওয়াটাই যেন ছিল তাদের অপরাধ। উইঘুরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিলেও কাশ্মির এবং আসামের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি চুপ থেকেছে। অন্যদিকে কাশ্মির ইস্যুতে সবচাইতে সরব রয়েছে পাকিস্তান; আর ঠিক একইভাবে উইঘুর ইস্যুতে একইরূপ নিস্তব্ধ রয়েছে তারা। পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন রাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় স্বার্থ এক্ষেত্রে কাশ্মির, উইঘুর এবং আসামের মুসলিমদের উপর নির্যাতন চলমান থাকার পিছনে বড় রকমের ইন্ধন যুগিয়েছে।
 

উইঘুরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিলেও কাশ্মির এবং আসামের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি চুপ থেকেছে। গত অক্টোবরের মার্কিন কংগ্রেসের ‘হাউজ এশিয়া’ সাবকমিটির মানবাধিকার বিষয়ক শুনানিতে এবং এর পরবর্তীতে ‘ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ রিপোর্টে ভারতের মুসলিমদের উপর নাগরিকত্বের শর্ত দিয়ে মানবাধিকার ভূলুন্ঠিত করার কথা এসেছিল। কাশ্মির ইস্যুতে সবচাইতে সরব রয়েছে পাকিস্তান; আর ঠিক একইভাবে উইঘুর ইস্যুতে একইরূপ নিস্তব্ধ রয়েছে তারা। এবছরের জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’এর এক আলোচনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রথমে বলেন যে, তিনি উইঘুরে চীনা সরকারের কর্মকান্ডের ব্যাপারে পুরোপুরি অবগত নন। পরে সাংবাদিকদের চাপের মুখে সরাসরিই বলেন যে, পাকিস্তানের সবচাইতে খারাপ সময়ে চীন পাকিস্তানকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে; তাই তারা চীনা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানী মিডিয়া যতটা সরব, ততটাই সরব দেখা যাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়াকে উইঘুর ইস্যুতে। বিশেষ করে লাদাখ সীমান্তে চীনের সাথে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই ভারতীয় মিডিয়া উইঘুর ইস্যুতে পাকিস্তানের সমালোচনায় মুখর রয়েছে। পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন রাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় স্বার্থ এক্ষেত্রে কাশ্মির, উইঘুর এবং আসামের মুসলিমদের উপর নির্যাতন চলমান থাকার পিছনে বড় রকমের ইন্ধন যুগিয়েছে।

ব্রিটেনের ‘ইন্ডেপেন্ডেন্ট’ পত্রিকার প্রবীন কলামিস্ট প্যাট্রিক ককবার্ন বলছেন যে, দুনিয়াব্যাপী জাতীয়তাবাদের এক উত্থান দেখা যাচ্ছে। তিনি বলছেন যে, তুরস্ক তার তুর্কি জাতীয়তাবাদের সাথে ইসলামকে ব্যবহার করে তার প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে; অন্যদিকে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি হিন্দুত্ববাদী চিন্তার উপর ভর করে ভারতের পরিচয় পূননির্ধারণ করতে চাইছে। চীনারাও তাদের হান ভিত্তিক চৈনিক জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রীয় শক্তির ভিত্তি হিসেবে দেখতে চাইছে। এই জাতীয়তাবাদী চিন্তার ফলে একেকটা দেশের অভ্যন্তরে জাতি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর বয়ে আসছে অমানুষিক অত্যাচার। অধিকৃত কাশ্মির ছাড়াও ভারতের প্রায় ২০ কোটি মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর যেমন অত্যাচার হচ্ছে, তেমনি চীনের পশ্চিমাঞ্চলের উইঘুর রাজ্যেও কয়েক বছর ধরেই মুসলিমদের উপর চলছে ‘শুদ্ধাভিযান’। তুরস্কের অভ্যন্তরে কুর্দিদেরকে আলাদাভাবে দেখা হচ্ছে তুরস্কের ভৌগোলিক অখন্ডতার প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে। ককবার্নের কথাগুলিকে সাম্প্রতিক বিশ্ব মিডিয়ার খবরের সাথে সমন্বয় করলে দেখা যায় যে, প্রতি ক্ষেত্রেই বাইরের দেশগুলি সেই দেশের অভ্যন্তরের সংখ্যালঘুদেরকে সমর্থন দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাইছে। কারণ ককবার্ন মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, এই সংখ্যালঘুরা কতটুকু শক্তিশালী, তা নির্ভর করছে বিশ্বব্যাপী তারা কতটা রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করতে পারে সেটার উপর। সেই হিসেবেই কাশ্মিরের মুসলিমদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান; কুর্দিদের আলাদা রাষ্ট্র গড়ার পিছনে মদদ যোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র; আর গত এক বছরের মাঝে উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলি ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে চীনকে চাপের মুখে রাখতে চাইছে।
    

উইঘুরের সন্দেহভাজন ক্যাম্পগুলির মানচিত্র। অনেককেই চীনের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলতে শোনা যাচ্ছে; কিন্তু যখন এর ফলশ্রুতিতে মানবসম্পদ বা অর্থসম্পদহানির কোন সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখনই তারা নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। তারা একইসাথে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির নেতৃবৃন্দের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলছে যে, মুসলিম দেশগুলিই তো কিছু করছে না, তাহলে তাদের উপর কেন দায় থাকবে? তারা নিজেদের অবস্থানের সমর্থনে বলছেন যে, অন্ততঃপক্ষে এর বিরুদ্ধে কিছু কথা তো তারা বলছেন।

 

তবে ককবার্ন এক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন উইঘুর এবং কাশ্মির ইস্যুতে। কাশ্মিরের জনগণের উপর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর লকডাউন এবং বিচারবহির্ভূত অত্যাচার ভাইরাসের লকডাউনের চাইতেও বহুগুণে বেশি ক্ষতি করেছে। তবে কাশ্মির ছাড়াও ভারতের প্রায় ২০ কোটি মুসলিমের প্রতি বিজেপি সরকারের শত্রুভাবাপন্ন আচরণ এড়ানো যাবে না। রাম মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেধরণের মনোভাবই দেখিয়েছেন। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পর ফলাফলস্বরূপ দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। মোদি সরকার মনে করছে যে, তারা কাশ্মির সমস্যার ‘সমাধান’ করে ফেলবেন। তারা ভারতের বাকি মুসলিমদের ‘সমস্যা’ও সমাধান করে ফেলবেন বলে বলছেন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লীর দাঙ্গাই দেখিয়ে দেয় যে, ২০ কোটি মানুষের সংখ্যালঘু জনসংখ্যাকে এতো হাল্কাভাবে নিলে মারাত্মক ভুল হবে। ভারতের চিন্তাবিদদের চিন্তার দৈন্যতা বোঝাতে ককবার্ন এক্ষেত্রে বৈরুতের কর্মকর্তাদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যারা বছরের পর বছর নিশ্চিন্তে বিশাল বোমার উপর বসে ছিলেন। ভারতের সরকারকে পশ্চিমারা নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে; কারণ তারা মনে করছে যে, ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতায় ভারত চীনকে নিয়ন্ত্রণের একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। একই সুত্রে তারা উইঘুর ইস্যুতে মুসলিমদের পক্ষাবলম্বন করছে নিজেদের স্বার্থে।

ঊইঘুর ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান মুসলিমদের ব্যাপারে ট্রাম্পের দীর্ঘমেয়াদী চিন্তার পুরোপুরি বিরুদ্ধে। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’এর এক প্রতিবেদনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসলাম এবং মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্যের একটা তালিকা দেয়া হয়। এতে ২০১১ সাল থেকে ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বষী মনোভাবের প্রকাশ পায়। ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে বলেন যে, মুসলিমরা যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দ করে না। আবার বিভিন্ন সময়ে এ-ও বলেন যে, মুসলিমরা যুক্তরাষ্ট্রে টাইম বোমার মতো; এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলিকে বন্ধ করে দেবার পক্ষেও যুক্তি দেন।

শুধু কাশ্মির, আসাম বা উইঘুরই নয়; এর সাথে রয়েছে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, লিবিয়া, আরাকান এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিমদের উপর নির্যাতনের অগুণিত প্রতিবেদন। প্রতিটা ক্ষেত্রেই জাতিরাষ্ট্রগুলি তার নিজস্ব জাতিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ফায়দা লুঠতে একে অপরের দুর্বলতা ব্যবহার করতে চেয়েছে; মুসলিমদের বাঁচাবার উদ্দেশ্যে নয়। নিজের ভৌগোলিক অখন্ডতা অটুট রাখতে প্রতিটা জাতিরাষ্ট্র আবার চেয়েছে জাতীয় পরিচয় নির্ধারণ করতে। আর সেক্ষেত্রে জাতিগত এবং বিশ্বাসগত দিক থেকে সংখ্যালঘুরা হয়েছে অমানবিক নির্যাতনের শিকার। জাতীয়তাবাদের নামে চলেছে ‘শুদ্ধিকরণ’, যা উইঘুরই হোক, বা আসামই হোক। অভিভাবকহীন সন্তানের মতো কাশ্মির, আসাম, উইঘুর, আরাকান, ফিলিস্তিনের মুসলিমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছে রাজনৈতিক সমর্থনের জন্যে। প্রত্যেকেই তাদের এই অসহায়ত্বকে ব্যবহার করেছে নিজেদের জাতীয় স্বার্থে। করোনাভাইরাসের মহামারি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত ক্ষয়িষ্ণু বিশ্বব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ ‘মানবাধিকার’ এখন হাস্যকর এক শব্দে পরিণত হয়েছে। অন্ততঃ মুসলিম বিশ্বের মাঝে জাতীয়তাবাদ প্রসূত স্বার্থের রাজনীতি যে বিভাজন ও অন্যায়ের জন্ম দিচ্ছে, তা মুসলিমদেরকে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা খুঁজতে বেশি অনুপ্রাণিত করবে।

2 comments:

  1. ভাই এর সমাধান কোনদিন হবে নাকি সারা জীবন এভাবেই মুসলমানরা কষ্টে কাটাবে । পৃথিবীর বালেন্স অফ পাওয়ার কি ভাঙ্গতে পারবে মুসলিমরা

    ReplyDelete
    Replies
    1. সমাধান মুসলিমদের হাতেই। তারা কতটা সমাধান চাইবে, সেটার উপরই নির্ভর করবে সমাধান আসবে কিনা। জাতীয়তাবাদ মুসলিমদের বিভক্ত করেছে; যা শেষ পর্যন্ত সমাধান খোঁজার পথে হাঁটাবে।

      Delete