Tuesday 18 August 2020

বেলারুশ ... ভূরাজনৈতিক খেলার গুটি

১৯শে অগাস্ট ২০২০ 

২৬ বছর ধরে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো। বিশ্বব্যাপী মিডিয়াতে যখন বেলারুশের রাস্তায় লুকাশেঙ্কোর বিরোধী বিশাল সমাবেশের ছবি আসছে, তখন অনেকেই প্রশ্ন করছেন বেলারুশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এটা শুধু এক ব্যক্তির ভবিষ্যৎ নয়; বেলারুশ রাষ্ট্র এবং তার প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ।

৬৫ বছর বয়সী লুকাশেঙ্কো ১৯৯৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাশিয়ার সাথে রাজনৈতিক একত্রীকরণের একটা চেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনা ভেস্তে গেলেও দুই দেশের মাঝে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখনও যথেষ্ট গভীর। ২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী প্রায় ৯৫ লক্ষ মানুষের দেশ বেলারুশের ৪৮ শতাংশ মানুষ ইস্টার্ন অর্থোডক্স খ্রিস্টান। একারণেই রুশ অর্থোডক্স চার্চের সাথে তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। দেশটার দু’টা অফিশিয়াল ভাষার একটা বেলারুশিয়ান; আরেকটা রুশ। ‘ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল কমিটি অব দ্যা রিপাবলিক অব বেলারুশ’এর হিসেবে দেশটার ৫৩ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বেলারুশিয়ান; আর সাড়ে ৪১ শতাংশের মাতৃভাষা রুশ। তথাপি দেশটার ৭০ শতাংশ মানুষ নিজেদের বাড়িতে সাধারণতঃ রুশ ভাষাতেই কথা বলে।

২০০১ সালের নির্বাচনে লুকাশেঙ্কো প্রায় ৭৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ২০০৬ সালের নির্বাচনে তিনি ৮৪ শতাংশ ভোটে জয়ী হন। ২০১০ সালের নির্বাচনে পান ৮০ শতাংশ ভোট। ২০১৫ সালে তিনি আবারও ৮৪ শতাংশ ভোটে জয়ী হন। এবার ২০২০ সালে তিনি পেয়েছেন ৮০ শতাংশ ভোট। প্রতিবারই লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে; প্রতিবাদও হয়েছে। তবে ২০২০ সালের প্রতিবাদ ছিল পুরোপুরি আলাদা। ‘কিয়েভ পোস্ট’ বলছে যে, ২০১০ সালের নির্বাচনের পর প্রতিবাদের অপরাধে প্রায় ৭’শ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, ২০০৬ সালের নির্বাচনের পরেও সাড়ে ৪’শর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল; পুলিশের সাথে প্রতিবাদকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষও হয়। তবে ২০১৫ সালের নির্বাচনে তেমন কোন প্রতিবাদই হয়নি।

প্রতিবারের নির্বাচনের পরই রাশিয়া লুকাশেঙ্কোকে অভিনন্দনের মাধ্যমে সমর্থন দিয়েছে। ইউরোপিয় সরকারগুলি লুকাশেঙ্কোর সমালোচনা করলেও তার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। আদর্শগতভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করলেও লুকাশেঙ্কো ছিল ইউরোপের কাছে গুরুত্বপূর্ণ; কারণ তাকে পশ্চিমারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতে চেয়েছে। আর অন্যদিকে নিজস্ব নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থেই রাশিয়া বেলারুশের একনায়ককে সাথে রেখেছে, যদিও তার ২৬ বছরের শাসনামলে মস্কোর সাথে সম্পর্ক সকল সময়ে মধুর ছিল না। বেলারুশের ভূরাজনৈতিক এই অবস্থানকে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেশটাকে ভূরাজনৈতিক খেলার গুটি হিসেবেই মনে হবে। দেশটার গুরুত্ব শুধু একজন ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ নয়।
   

 


তেল ও গ্যাস ... ইউরোপ এবং রাশিয়ার পারস্পরিক নির্ভরশীলতা

ইউরোপ, বিশেষ করে জার্মানি রাশিয়ার তেল গ্যাসের উপর যথেষ্টই নির্ভরশীল। জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকনমিক এফেয়ার্স এন্ড এনার্জির হিসেবে জার্মানি প্রতি বছর প্রায় ৯ কোটি টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে। এর মাঝে এক তৃতীয়াংশের বেশি সরবরাহ আসে রাশিয়া থেকে, যা কিনা প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টন। রাশিয়া বাদে নরওয়ে এবং ব্রিটেন থেকে আসে প্রায় ১ কোটি টন করে। বাকিটা মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলি থেকে আসে। গবেষণা সংস্থা ‘সিইআইসি ডাটা’ বলছে যে, জার্মানি দৈনিক ১৭ লক্ষ ব্যারেলের বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে। পশ্চিম ইউরোপে জার্মানি ছাড়াও নেদারল্যান্ডস আমদানি করে সাড়ে ১১ লক্ষ ব্যারেল তেল; ফ্রান্স প্রায় ১০ লক্ষ ব্যারেল; বেলজিয়াম ৭ লক্ষ ব্যারেল। আর পূর্ব ইউরোপে পোল্যান্ড আমদানি করে প্রায় ৫ লক্ষ ব্যারেল।

আরেক বড় আমদানিকারক নেদারল্যান্ডস ২০১৯ সালে প্রায় ৪৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত তেল আমদানি করে, যা কিনা বিশ্বে আমদানিকারকদের মাঝে ষষ্ঠ বৃহত্তম। জার্মানি সপ্তম স্থানে রয়েছে প্রায় ৪১ বিলিয়ন ডলারের তেল আমদানি করে।‘স্ট্যাটিসটিকস নেদারল্যান্ডস’ বলছে যে, নেদারল্যান্ডসের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বা প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি হয় রাশিয়া থেকে। ‘স্ট্যাটিসটা’র হিসেবে নেদারল্যান্ডস ২০১৯ সালে প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলারের রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। জার্মানি আমদানি করে ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের তেল; বেলারুশ এবং ইতালি আমদানি করে প্রত্যেকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের তেল; পোল্যান্ড প্রায় ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার; ফিনল্যান্ড ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার; স্লোভাকিয়া ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের তেল। একই বছরে রাশিয়া মোট ১’শ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করে। আর এর মাঝে শুধু ইউরোপেই অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করে রাশিয়া ৫৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করে। অর্থাৎ ইউরোপই শুধু রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের উপরে নির্ভরশীল নয়, রাশিয়ারও ইউরোপের উপরে নির্ভরশীলতা রয়েছে তার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির জন্যে।

‘ওইসিডি’র এক হিসেব বলছে যে, ১৯৬০এর দশক থেকে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ২০ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই গ্যাসের মূল ব্যবহার শীতকালে বাড়িঘর উষ্ণ রাখার জন্যে। অন্য কথায় এই চাহিদাটা ইউরোপের সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানিতে গ্যাসের ব্যাবহার প্রায় ৮৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার বা বিসিএম। এর মাঝে প্রায় ৬০ বিসিএমই আসে রাশিয়া থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানিকারক ইতালির প্রায় ৭০ বিসিএম আমদানির মাঝে ২৫ বিসিএম আসে রাশিয়া থেকে। তুরস্ক তার প্রায় ৫০ বিসিএম চাহিদার মাঝে ২৫ বিসিএম পায় রাশিয়া থেকে। পোল্যান্ড তার প্রায় ২০ বিসিএম চাহিদার মাঝে ১০ বিসিএম রাশিয়া থেকে আমদানি করে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হিসেবে রাশিয়া ইইউএর প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহকারী।

রাশিয়ার তেল গ্যাসের উপর ইউরোপের নির্ভরশীলতাকে যুক্তরাষ্ট্র মোটেই স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ প্রকল্প নিয়ে জার্মানির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব সেটাই দেখিয়ে দেয়। ইউক্রেনের যুদ্ধের সময় পাইপলাইনের মাধ্যমে রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবার পর ইউরোপই সবচাইতে বেশি চিন্তায় পড়েছিল। বেলারুশও ঠিক একই কারণে রাশিয়া এবং ইউরোপের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বেলারুশের রাজনৈতিক অবস্থান যেন ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে সমস্যা তৈরি করতে না পারে, সেকারণে বেলারুশকে বাইপাস করা গ্যাস পাইপলাইনগুলি রাশিয়া এবং ইউরোপের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

পাইপলাইন এবং বাইপাস পাইপলাইনের ভূরাজনীতি

ভূরাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা ‘জিওপলিটিক্যাল ফিউচার্স’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, রাশিয়ার উপর তেল গ্যাসের জন্যে নির্ভরশীলতা ইউরোপে একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। পোল্যান্ড রুশ গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে ‘বল্টিক পাইপ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে নরওয়ে থেকে পাইপলাইন ডেনমার্ক হয়ে পোল্যান্ডে আসবে। এর সক্ষমতা প্রায় ১০ বিসিএম। ২০২২ সালে পোল্যান্ডের সাথে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। তখন ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের এই পাইপলাইন রাশিয়ার উপর পোল্যান্ডের নির্ভরশীলতা একেবারেই কমিয়ে ফেলবে। পোল্যান্ড রাশিয়ার সীমান্তে থাকায় ন্যাটোর সদস্য হিসেবে রাজনৈতিকভাবে পোল্যান্ডের অবস্থান বেশ সংবেদনশীল। রুশ হুমকি মোকাবিলা করতেই রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে পোল্যান্ড। অপরদিকে জার্মানি রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বৃদ্ধি করতে চাইছে। বর্তমানে জার্মানি যে কয়টা গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি করে, তার মাঝে ২০০৭ সালে তৈরি করা ‘নর্ড স্ট্রিম’ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এর সক্ষমতা প্রায় ৫৫ বিসিএম। এই পাইপলাইনের সমান্তরালে একই সক্ষমতার আরেকটা ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইন তৈরির প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জার্মানি এবং রাশিয়ার টানাপোড়েন চলছে। পাশাপাশি দেশ পোল্যান্ড এবং জার্মানি রাশিয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। পোল্যান্ড যেখানে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতা শূণ্যের কোঠায় নিয়ে আসতে চাইছে, সেখানে জার্মানি তার নির্ভরশীলতাকে দ্বিগুণ করতে চাইছে। এই ইস্যুতেই জার্মানির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে; আর অপরদিকে পোল্যান্ডের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন হচ্ছে।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘দ্যা জেমসটাউন ফাউন্ডেশন’এর এক প্রতিবেদনে বেলারুশের বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বেলারুশ এমন একটা দেশ, যা নিজে তেল গ্যাস উৎপাদন না করলেও এর রপ্তানি পণ্যের একটা বড় অংশই তেল গ্যাস। স্থলবেষ্টিত এই দেশটা ইউরোপ এবং রাশিয়ার মাঝে সেতুর মতো। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েতরা বেলারুশে দু’টা তেল রিফাইনারি তৈরি করেছিল। ১৯৫৮ সালে তৈরি করা নাফতান রিফাইনারির বাৎসরিক সক্ষমতা ১ কোটি ২০ লক্ষ টন। আর মজির রিফাইনারির সক্ষমতা ৮০ লক্ষ টন। এই রিফাইনারিগুলিতে দ্রুজবা পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আসে সাইবেরিয়ার তেলখনিগুলি থেকে; আর সেখান থেকে রিফাইন করা বিভিন্ন জ্বালানি পাইপলাইনের মাধ্যমে যায় ইউরোপের বাজারে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল যায় জার্মানি, পোল্যান্ড, বেলারুশে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বেলারুশ প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ টন অপরিশোধিত তেল পায় রাশিয়া থেকে; আর একই পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ইউরোপ যাচ্ছে ৪ কোটি টন তেল।

তেল ছাড়াও বেলারুশ পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ২০ বিসিএম গ্যাস আমদানি করে; আর একইসাথে প্রায় ৩৯ বিসিএম গ্যাস বেলারুশ হয়ে ইউরোপ যায়। রাশিয়া থেকে ভূমির উপর দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে যতো গ্যাস যায়, তার পুরোটাই যায় বেলারুশ এবং ইউক্রেনের উপর দিয়ে। এর বাইরে গ্যাস যাচ্ছে কৃষ্ণ সাগর এবং বল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে।

ঠান্ডা যুদ্ধের পর বেলারুশ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর থেকেই দেশটার অর্থনীতি তেল গ্যাস বাণিজ্যের উপরে নির্ভরশীল। বেলারুশ পাইপলাইনের ব্যবসা করা ছাড়াও স্বল্প মূল্যে রাশিয়া থেকে গ্যাসের সরবরাহ পায়। তেল গ্যাসের মূল্য নিয়ে রাশিয়ার সাথে বেলারুশের দ্বন্দ্ব হয়েছে বহুবার। দ্বন্দ্বের জের হিসেবে রাশিয়া ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেলারুশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলশ্রুতিতে ইউরোপের জনগণকে গ্যাসের অভাবে প্রচন্ড ঠান্ডায় শীত পোহাতে হয়েছিল। প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বেলারুশ ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবয়াহ বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকবার। আর ২০০৭ সাল থেকে বেলারুশ নতুন কৌশল হিসেবে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাঠানো গ্যাস থেকে নিজেদের জন্যে গ্যাস সরিয়ে রাখার হুমকি দিতে থাকে। আর তেলের বাজারে মূল্যপতনের পর থেকে বেলারুশের পাইপলাইনের আয়ও কমতে থাকে। ২০১৬ সালে রাশিয়া বেলারুশের কাছে বিক্রি করা তেলের মূল্য বৃদ্ধি করতে চাইলে বেলারুশ রাজি হয়নি। কিন্তু রাশিয়া তার দাবি আদায়ে ২০১৭ সালের শুরুতে বেলারুশে তেলের সরবরাহ ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে বেলারুশ বেশি মূল্য দিয়ে ইউক্রেন এবং পোল্যান্ডের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। ২০১৯এর অগাস্টে বেলারুশ নিজ দেশের উপর দিয়ে যাওয়া রুশ পাইপলাইনের ট্রানজিট ফি ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করার ঘোষণা দেয়। আর ২০২০এর জানুয়ারিতে বেলারুশ পাইপলাইনের ট্রানজিটের উপর আরও ৬ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করে।

ইউক্রেনের সাথেও রাশিয়ার পাইপলাইনের বিরোধ বহুদিনের। থেকে থেকে চলা এই দ্বন্দ্ব সবচাইতে মারাত্মক আকার ধারণ করে ২০১৪ সালে, যখন ইউক্রেনে রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে। সেবছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে গণুভ্যুত্থানে রুশ সমর্থিত ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের সরকারের পতনের পরপরই রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়। এর জের হিসেবে পশ্চিমা অবরোধের কারণে রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধ্বস নামে। জুন মাসে ইউক্রেনের মাঝ দিয়ে যাওয়া পাইপলাইনগুলিতেও রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যস্ততায় গ্যাস সরবরাহ আবারও শুরু হলেও এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি একেবারেই কমে যায়। রাজনৈতিক সমস্যা এড়াতেই ইউক্রেন এবং বেলারুশকে বাইপাস করে বল্টিক সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরের নিচ দিয়ে যথাক্রমে ‘নর্ড স্ট্রিম’ এবং ‘তুর্ক স্ট্রিম’ পাইপলাইন তৈরি করা হয়। বেলারুশও আগে যেভাবে ইউরোপে রাশিয়ার তেল গ্যাস রপ্তানি করার পাইপলাইন বন্ধ করে দেবার হুমকি দিয়ে আলোচনার টেবিলে রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখতো, এই বাইপাস পাইপলাইনগুলির কারণে বেলারুশের সেই ক্ষমতা অনেকাংশেই কমে গিয়েছে।


রুশ সস্তা গ্যাসের কবল থেকে বের হবার পথ খুঁজে পাচ্ছে না বেলারুশ

বেলারুশের অর্থনীতি পুরোপুরিভাবে গ্যাস নির্ভর। দেশটার ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় গ্যাস থেকে। শীতকালে বাড়ি উষ্ণ রাখার জন্যেও গ্যাসই ব্যবহার করা হয়। বেলারুশ নিজ দেশে গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করেও সফলতা পায়নি।‘ওয়ার্ল্ড ও মিটারস’এর হিসেবে বেলারুশে মাথাপিছু গ্যাস ব্যবহার প্রায় ১’শ ৮১ কিউবিক ফিট। অপরদিকে ব্রিটেনে মাথাপিছু গ্যাস ব্যবহার প্রায় ১’শ ১৫ কিউবিক ফিট; জার্মানিতে প্রায় ১’শ ৯ কিউবিক ফিট। ফ্রান্সে এটা মাত্র ৬২ কিউবিক ফিট; পোল্যান্ডে মাত্র ৫১ কিউবিক ফিট। সবচাইতে বেশি নেদারল্যান্ডসে ২’শ ৪৭ কিউবিক ফিট; বেলজিয়ামে ১’শ ৪৯ কিউবিক ফিট।

প্রতি হাজার কিউবিক মিটারে বেলারুশ রাশিয়াকে যা দিচ্ছে, তা বাকি দুনিয়ার চাইতে অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, ‘রয়টার্স’ বলছে যে, রাশিয়া ২০১৬ সালে কিরগিজস্তানে রপ্তানি করা গ্যাসের মূল্য প্রতি হাজার কিউবিক মিটারে ১’শ ৬৫ ডলার থেকে কমিয়ে ১’শ ৫০ ডলারে নামিয়ে নিয়ে আসে। রুশ বার্তা সংস্থা ‘তাস’কে রুশ কোম্পানি ‘গ্যাজপ্রম’এর ডিরেক্টর জেনারেল এলেনা বুরমিসত্রোভা বলেন যে, ২০১৯ সালে ইউরোপে রপ্তানির জন্যে রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য ২’শ ৩০ ডলার থেকে ২’শ ৫০ ডলারের মাঝে ছিল। ২০১৮ সালে এই মূল্য প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে গিয়ে ২’শ ৪৫ ডলার হয়। অপরদিকে ‘আনাদোলু এজেন্সি’ বলছে যে, ২০১৯ সালে বেলারুশ রাশিয়াকে গ্যাসের জন্যে ১’শ ২৭ ডলার দিয়েছে, যা কিনা পুরো ইউরেশিয়ার মাঝে সর্বনিম্ন। তদুপরি এবছরের এপ্রিলে রুশ কোম্পানি ‘নেফতেগ্যাজ’ বলে যে, বেলারুশের জ্বালানি মন্ত্রী ভিক্টর কারানকেভিচ বিশ্ব বাজারের সাথে সমন্বয় করে রুশ গ্যাসের মূল্য কমাতে অনুরোধ করেছেন।

রুশ অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ থেকেই তাদের সোভিয়েত আমলের দু’টা রিফাইনারি দিয়ে বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম পণ্য তৈরি করে তা ইউরোপে বিক্রি করে নিজেদের অর্থনীতিকে সচল রাখছে বেলারুশ। আবার রাশিয়া থেকে তেল গ্যাসের পাইপলাইন ইউরোপ পর্যন্ত যাবার পথে তা বেলারুশের উপর দিয়ে যাবার কারণে বেলারুশ সেই পাইপলাইনের উপর ট্রানজিট ফি পায়। রুশ তেল গ্যাসের উপর বেলারুশের নির্ভরশীলতা শুধু অর্থনৈতিক কারণেই নয়; রাজনৈতিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া বেলারুশকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বদাই অর্থনৈতিক চাপকে ব্যবহার করেছে। রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের বিরোধের মাঝেই বেলারুশের সাথেও বিরোধ চলছিল। রাশিয়া বহুবার বেলারুশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে; কিন্তু ইউক্রেন যেভাবে ফুঁসে উঠেছে রুশ নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে, বেলারুশ তা কখনোই করেনি। তাই বেলারুশকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রাশিয়াকে অপেক্ষাকৃত কম বেগ পেতে হয়েছে। 


রাশিয়া এবং বেলারুশের ভৌগোলিক বাস্তবতা

ইউক্রেন এবং বেলারুশকে বাইপাস করে বিকল্প পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে রুশ তেল গ্যাস রপ্তানির ব্যবস্থা করা হলেও বেলারুশ এবং ইউক্রেনের গুরুত্ব কমে যায়নি। ভৌগোলিক কারণেই এই দুই দেশ রাশিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ; সেখানে তেল গ্যাসের ইস্যু থাকুক আর না থাকুক। রাশিয়া এই দুই দেশকে নিজের এবং ইউরোপের মাঝে বাফার রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। এই দেশগুলিতে ইউরোপিয় প্রভাব মানেই রাশিয়ার কাছে তা ভূরাজনৈতিক হুমকি। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরপরই ইউক্রেনের সাথে ন্যাটো সম্পর্কোন্নয়ন করে। তবে ২০১০ সালে ইউক্রেনে রুশ সমর্থিত ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেবার সম্ভাবনা উড়ে যায়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনে গণভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তীতে সেখানে পশ্চিমা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্র হবার জন্যে জোর প্রচেষ্টা শুরু করে। সেবছরই রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেবার পর থেকে ইউক্রেনের জনগণের মাঝে ন্যাটোর সদস্যপদ নেয়ার পক্ষে যুক্তি তৈরি হয়েছে। ‘রয়টার্স’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ২০১২ সালে যেখানে মাত্র ২৮ শতাংশ ইউক্রেনিয়ান ন্যাটোর সদস্যপদের পক্ষে ছিল, ২০১৭ সালের জুনে তা বেড়ে গিয়ে ৬৯ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাসে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে ইউক্রেন সরকারের যুদ্ধ শুরু হলে ন্যাটো ইউক্রেনের পক্ষ নেয়। রাশিয়া সরাসরিই জানিয়ে দেয় যে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেয়াটা রাশিয়ার জন্যে গ্রহণযোগ্য নয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বরাত দিয়ে ‘বিবিসি’ বলছে যে, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে রাশিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ইউক্রেনের দিকেও তাক করবে।

মার্কিন ভূরাজনৈতিক চিন্তাবিদ জর্জ ফ্রীডম্যান‘ বিজনেস ইনসাইডার’এর সাথে কথা বলতে গিয়ে রাশিয়ার ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জের ব্যাখ্যা দেন। গত কয়েক শতাব্দী ধরেই রাশিয়া তার নিরাপত্তার জন্যে বল্টিক রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া এবং বেলারুস ও ইউক্রেনের উপর নির্ভরশীল। এই বাফার রাষ্ট্রগুলি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণেই ১৮১২ সালে নেপোলিয়ন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির হামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে রাশিয়া। এই বাফার অঞ্চলগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুদ্ধ হতে হতেই আক্রমণকারীরা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই এই রাষ্ট্রগুলির নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে রাশিয়া। বল্টিক রাষ্ট্রগুলি এবং ইউক্রেন ইতোমধ্যে পশ্চিমাদের নিরাপত্তা বলয়ের মাঝে চলে গিয়েছে।বেলারুশের অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলছেন যে, সোভিয়েত সময়ে রুশ শহর স্মোলেনস্ক ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক অভ্যন্তরের একটা শহর। কিন্তু বর্তমানে তা হয়ে গিয়েছে বেলারুশের সাথে রাশিয়ার একটা সীমান্ত শহর।

বেলারুশের সীমান্ত থেকে মস্কোর দূরত্ব মাত্র সাড়ে ৪’শ কিঃমিঃ। আর ইউক্রেনের সীমানা থেকে মস্কোর দূরত্ব মাত্র ৫’শ ৩৩ কিঃমিঃ। অথচ বেলারুশ যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, তখন পোল্যান্ডের সীমানা থেকে মস্কোর দূরত্ব ছিল ১ হাজার কিঃমিঃ। আবার সোভিয়েত আমলে যখন পোল্যান্ড সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন পূর্ব জার্মানির সীমানা থেকে মস্কোর দূরত্ব ছিল ২ হাজার কিঃমিঃ। এর অর্থ হলো, সোভিয়েত আমলে যেখানে পশ্চিম ইউরোপের প্রভাবে থাকা অঞ্চল মস্কো থেকে ২ হাজার কিঃমিঃ দূরে ছিল, এখন পূর্ব জার্মানি এবং পোল্যান্ডের পর ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ পশ্চিম ইউরোপের কাছে চলে যাওয়ায় তা মাত্র ৪’শ থেকে ৫’শ কিঃমিঃ দূরে। এটা রাশিয়ার জন্যে বিরাট একটা ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলা করতে রাশিয়া এখন অনেক কিছুই করবে। বিশেষ করে ইউক্রেন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে যাওয়ায় রাশিয়া এখন বেলারুশ নিয়ে চিন্তিত।

বেলারুশ রাশিয়ারই থাকবে

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রধান ইয়ান ব্রেমার মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, বেলারুশ হলো সেই দেশ যা কিনা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া থেকে আলাদা হয়ে যাবার জন্যে খুব বেশি আগ্রহী ছিল না। জাতিগত, ভাষাগত বা সংস্কৃতিগতভাবে বেলারুশের সাথে রাশিয়ার পার্থক্য খুব কম। তাই রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতাকে বেলারুশের জনগণ খুব বেশি সমস্যা বলে মনে করেনি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে তারা রাস্তায় নামেনি; বরং বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর কুশাসনের কারণেই বেলারুশিয়ানরা রাস্তায় নেমেছে। একারণেই মস্কো খুব সম্ভবতঃ লুকাশেঙ্কোর পক্ষে শক্তি খরচ না-ও করতে পারে। ব্রেমার আর্মেনিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন যে, আর্মেনিয়াতেও সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাশিয়া কোন হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেনি। কারণ আর্মেনিয়ার জনগণ রাশিয়াকে বরাবরই আর্মেনিয়ার বন্ধু মনে করে।

পাইপলাইনকে কেন্দ্র করে বেলারুশের সাথে রাশিয়ার বিভিন্ন সময়ের বিরোধ ইউরোপকে আরও নিরাপদ তেল গ্যাসের উৎস খুঁজতে অনুপ্রাণিত করেছে। তবে রাশিয়া চায়নি সেই সরবরাহ নেটওয়ার্ক থেকে বাদ পড়ে যেতে; কারণ রাশিয়ার অর্থনীতি ইউরোপের দেশগুলিতে তেল গ্যাস রপ্তানির উপর যথেষ্টই নির্ভরশীল। তাই রাশিয়াও উদ্যোগী হয়েছে ইউক্রেন এবং বেলারুশকে বাইপাস করে ইউরোপে তেল গ্যাস সরবরাহ করতে; ইউরোপও এতে সহায়তা দিয়েছে। ইউরোপ এবং রাশিয়ার এহেন পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিপক্ষে গিয়েছে বলেই যুক্তরাষ্ট্র বল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ গ্যাস পাইপলাইনের বিরোধিতা করছে। ইউরোপে নিজের প্রভাব ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই ইউরোপ এবং রাশিয়ার মাঝে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে নিজেকে দেখতে চায়।

তেল গ্যাসের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতির কারণেই বেলারুশ রাশিয়ার সাথে অর্থনৈতিকভাবে আবদ্ধ থাকবে; রাশিয়া এবং ইউরোপের মাঝে তেল গ্যাস রপ্তানির পাইপলাইনের কারণে নয়। বেলারুশের ভবিষ্যৎ কোন সরকার দেশটার অর্থনীতিকে রাশিয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। কারণ বেলারুশের জনগণের মাঝে রাশিয়া বিরোধী ভাবধারা গত তিন দশকে তৈরি হয়নি; আর খুব তাড়াতাড়িই এটা পরিবর্তিত নাও হতে পারে। ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র চাইবে বেলারুশের সাথে রাশিয়ার দূরত্ব বৃদ্ধি করতে। আপাততঃ বেলারুশে একটা পশ্চিমা ধাঁচের সরকার থাকাটা ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে একটা আদর্শিক জয়।

3 comments:

  1. লুকাশেঙ্কো সৌখিন মানুষ বটে, কিঞ্চিত কিম জং উনের চরিত্র বিদ্যমান। বেলারুশ ইউরোপ বলয়ের দেশ, তা না হলে ইহাও আরেকটি উত্তর কোরিয়া হয়ে যেত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ব্যাপারটা শুধু ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ রাখলে ঘটনার গভীরে যাওয়া হলোনা। ব্যক্তি হার্ট এটাক করলে তো সকল বিশ্লেষণ থেমে যাবে আরেক ব্যক্তি আসার আগ পর্যন্ত। উপরে যতগুলি বিষয় আলোচিত হয়েছে, তার বেশিরভাগই একজন ব্যক্তির পক্ষে মেনে নেয়া ছাড়া গতি নেই। ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু ভূরাজনীতিতে ব্যক্তি কখনোই মূল নয়।

      Delete
    2. কমেন্টের দ্বিতীয় লাইন আপনার মতামতের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত...

      Delete