Wednesday 24 June 2020

তিউনিসিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফ্রান্স ও তুরস্কের মাঝে চলছে প্রতিযোগিতা

২৪শে জুন ২০২০

ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর সাথে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ। দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা এমন সময়ে এলো, যখন তিউনিসিয়ার প্রতিবেশী দেশ লিবিয়ার যুদ্ধে তুরস্কের হস্তক্ষেপের পর যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেছে। লিবিয়াতে কোণঠাসা হয়ে যাবার পর ফ্রান্স লিবিয়ার প্রতিবেশী তিউনিসিয়াতে তার দুর্বল হয়ে যাওয়া অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে চাইছে।


ফ্রান্স লিবিয়ার যুদ্ধে তিউনিসিয়ার সমর্থন চাইছে

গত ২২শে জুন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তিউনিসিয়ার জন্যে সাড়ে ৩’শ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার ঘোষণা দেন। ইলাইসি প্যালেসে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ম্যাক্রঁ বলেন যে, তিউনিসিয়ার স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, সেদেশে হাসপাতাল তৈরি এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরায় শুরু করার লক্ষ্যে সহায়তা দেবে ফ্রান্স। তিনি আরও বলেন যে, এই অর্থ ২০২২ সাল পর্যন্ত তিউনিসার স্বাস্থ্যখাত এবং যুব উন্নয়নের জন্যে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দের অংশ। দুই দেশ আঞ্চলিক ইস্যু নিয়েও কথা বলেছে। ম্যাক্রঁ বলেন যে, ফ্রান্স এবং তিউনিসিয়া একত্রে দাবি করছে যে, লিবিয়াতে যুদ্ধরত পক্ষগুলি যেন আলোচনার টেবিলে বসে সকলের জন্যে নিরাপত্তা এবং লিবিয়ার সংস্থাগুলির পুনএকত্রীকরণ নিশ্চিত করে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট লিবিয়াতে বিদেশী হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানান। একইসাথে ম্যাক্রঁ লিবিয়াতে তুরস্কের ভূমিকাকে ‘বিপজ্জনক খেলা’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন যে, এটা ঐ অঞ্চল এবং ইউরোপের জন্যে সরাসরি হুমকিস্বরূপ। তিনি বলেন যে, একই কথাগুলি ঐদিনই তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করে বলেছেন। অপরদিকে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ বলেন যে, তার দেশ ফ্রান্সের সাথে অতীতের ক্ষতচিহ্ন ভুলে গিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাইছে। তিনি তিউনিসিয়ার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত একটা রেলওয়ে লাইন তৈরির চিন্তায় ফ্রান্সের সহায়তা দেয়াকে স্বাগত জানান। দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা এমন সময়ে এলো, যখন তিউনিসিয়ার প্রতিবেশী দেশ লিবিয়ার যুদ্ধে তুরস্কের হস্তক্ষেপের পর যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ার সাথে ফ্রান্সের সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টার ব্যাপক ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘আল এরাব উইকলি’র এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, লিবিয়াতে কোণঠাসা হয়ে যাবার পর ফ্রান্স লিবিয়ার প্রতিবেশী তিউনিসিয়াতে তার দুর্বল হয়ে যাওয়া অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে চাইছে। কিছুদিন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেন যে, লিবিয়াতে আরেকটা সিরিয়া তৈরি হতে চলেছে; যা খুবই দুশ্চিন্তার ব্যাপার। ২৬শে মে তিউনিসিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইমেদ হাজগুই ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লির সাথে ফোনে লিবিয়া নিয়ে কথা বলেন। তারা লিবিয়ায় বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন এবং লিবিয়ার সমস্যা লিবিয়ার মানুষদের মাঝেই সমাধান হওয়া উচিৎ বলে বলেন। দুই দেশের মাঝে সামরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানো যায় কিভাবে, তা নিয়েও তারা আলোচনা করেন।

২০১৮ সালের নভেম্বরে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনীর ৪র্থ অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল ‘সফোনিসবে’ ডেলিভারি দেয়া হয়। এই জাহাজগুলি তিউনিসিয়াকে ভূমধ্যসাগরে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তিউনিসিয়ার সামরিক বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র গড়ে দিলেও ২০১৬ সাল থেকে তিউনিসিয়া নিজস্ব নৌবাহিনী গঠন করা শুরু করে। তিউনিসিয়ার জনগণের সাথে সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক বেশ মধুর। সামরিক বাহিনীর শক্তিশালী হওয়ার পিছনে জনগণের সমর্থন রয়েছে; কিন্তু রাজনীতিবিদদের মাঝে এব্যাপারে রয়েছে বিরোধ।


তিউনিসিয়ার সামরিক বাহিনী গড়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক

ঐতিহাসিকভাবে তিউনিসিয়ার সাথে ফ্রান্সের সম্পর্ক বেশি গভীর থাকলেও সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’ তিউনিসিয়া নিয়ে বেশ কয়েকটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারা বলছে যে, একনায়ক বেন আলি তিউনিসিয়ার সামরিক বাহিনীকে ছোট করে রেখেছিলেন, যাতে সামরিক বাহিনী দেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। তিউনিসিয়ার নিয়ন্ত্রণ ছিল মূলতঃ ন্যাশনাল গার্ডের হাতে, যা কিনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালের অধীন, এবং যার মূল কাজ ছিল দেশের উপর শাসকের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। ব্যাপারটা পরিবর্তন হয়ে যায় ২০১১ সালে বেন আলির পতনের পর। যুক্তরাষ্ট্র তিউনিসিয়া নিয়ে চিন্তিত ছিল যে, ছোট হলেও তিউনিসিয়া থেকেই সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ইরাক ও সিরিয়াতে বিভিন্ন জিহাদি গ্রুপে যোগ দিয়েছে। এছাড়াও তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভেদ এবং অস্থিরতা মানুষকে গণতন্ত্রবিমুখ করে ফেলেছে। উদাহরণস্বরূপ, তিউনিসিয়ার বর্তমান সরকারে ৬টা রাজনৈতিক দল থেকে ১৫ জন এমপি এবং আরও ১৭ জন স্বতন্ত্র এমপি মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন। কোন দলই প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা রাখেনি; তাই কোন দলই বেশি সংখ্যক আসন পাচ্ছে না। ২০১৪ সালে ‘পিউ রিসার্চ’এর এক জরিপ বলছে যে, মাত্র ৪৮ শতাংশ তিউনিসিয়ান গণতন্ত্রকে সমর্থন করছে। ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করছে যে গণতান্ত্রিক সময়ের চাইতে একনায়কের সময়েই দেশের অবস্থা ভালো ছিল। মুসলিম ব্রাদারহুডপন্থী ‘এননাহদা পার্টি’র সমর্থন দুই বছরের মাঝে ৬৫ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশে নেমে আসে। ৮৩ শতাংশ তিউনিসিয়ান মনে করে যে, দেশের রাজনীতিতে ইসলামের আদর্শগুলি বাস্তবায়িত থাকা উচিৎ; যাদের মাঝে ৩০ শতাংশ মনে করে যে, ইসলামকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা উচিৎ। কিন্তু সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সামরিক বাহিনীর ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। ৯৫ শতাংশ মানুষ সামরিক বাহিনীর প্রশংসা করে; যেখানে মিডিয়ার পক্ষে বলে ৬২ শতাংশ মানুষ; আদালতের পক্ষে ৪৪ শতাংশ; আর ধর্মীয় নেতাদের পক্ষে মাত্র ৩৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যাপারগুলিকে পুঁজি করেই তিউনিসিয়ার সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয়া শুরু করে এবং তাদের সাথে মহড়া এবং অপারেশনে অংশ নিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে থাকে।

লিবিয়া থেকে আসা জিহাদী গ্রুপগুলির সাথে তিউনিসিয়ার সেনাদের ব্যাপক সংঘর্ষে নিয়মিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে থাকে। মার্কিন সেনারাও সেখানে সরাসরি জড়িত থাকলেও তা পত্রিকার খবরে আসতে দেয়া হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসন হোয়াইট হাউজে আসার পর থেকে তিউনিসিয়ার জন্যে সামরিক সহায়তা কমে গেলেও তিউনিসিয়া নিজের নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে থাকে। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মার্কিনীরা তিউনিসিয়াকে সরবরাহ করেছে। এর মাঝে রয়েছে ৮০টারও বেশি হেলিকপ্টার; যার মাঝে ২৪টা ‘ওএইচ-৫৮ডি কিওওয়া ওয়ারিয়র’, ৮টা ‘ইউএইচ-৬০এম ব্ল্যাক হক’, ৩৬টা ‘ইউএইচ-১’ রয়েছে। এছাড়াও ৯টা ‘সি-১৩০’ পরিবহণ বিমান দেয়া হয় তিউনিসিয়াকে; যার মাঝে ২০১৪ সালে দেয়া হয় সর্বশেষ মডেলের ‘সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস’। এবছরের এপ্রিল মাসে একটা ‘সি-১৩০জে’ বিমান করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ২২ হাজার কিঃমিঃ উড়ে চীন থেকে মেডিক্যাল সাপ্লাই নিয়ে আসে। এই ফ্লাইটের মাঝে বিমানটা দু’বার কাজাখস্তানে রিফুয়েলিং করে। নিরাপত্তা বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ওয়ার অন দ্যা রকস’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তিউনিসিয়ার রাস্তায় সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়; যা কিনা দেশের মানুষ ভালোভাবে দেখেছে। অন্যদিকে মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’ বলছে যে, তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্যে প্রতিযোগিতা করছে। একদিকে ‘নিদা তিউনেস’ এবং ‘এননাহদা পার্টি’ সামরিক বাহিনীর উপর তাদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে; অন্যদিকে বিরোধীরা চাইছে এতে বাধা দিতে।

মার্কিনীরা তিউনিসিয়ার উপকূল সন্ত্রাসীমুক্ত রাখতে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনীকে কমপক্ষে ২২টা ছোট বোট দেয়। তবে ২০১৬ সাল থেকে তিউনিসিয়া নিজস্ব নৌবাহিনী গঠন করা শুরু করে। প্রথমবারের মতো নেদারল্যান্ডসের ‘ডামেন’ শিপইয়ার্ড থেকে অত্যাধুনিক চারটা অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল অর্ডার করে তারা। ৭২ মিটার লম্বা এবং প্রায় ১৩’শ টনের হেলিকপ্টার ও ড্রোন বহনে সক্ষম এই জাহাজগুলি তিউনিসিয়াকে ভূমধ্যসাগরে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ২০১৮ সালের মাঝেই ‘ডামেন’ চারটা জাহাজই ডেলিভারি দিয়ে দেয়। এর আগ পর্যন্ত তিউনিসিয়ার ফরাসী ও জার্মান নির্মিত পুরোনো ফাস্ট এটাক ক্রাফটগুলি শুধুমাত্র তিউনিসিয়ার উপকূলের কাছাকাছি অঞ্চল পাহাড়া দিতে সক্ষম ছিল। শুধু তাই নয়, তিউনিসিয়া নিজেরাই ৩টা ছোট আকৃতির ২৬ মিটার লম্বা প্যাট্রোল বোট তৈরি করে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা জানান দেয়।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্ক তিউনিসিয়ার সাথে সামরিক সম্পর্ক গভীর করেছে। ২০১৪ সালে তিউনিসিয়ার সেনাবাহিনী তুরস্ক থেকে ১’শটা ‘কিরপি’ আর্মার্ড ভেহিকল অর্ডার করে। ২০১৬ সাল থেকে এর ডেলিভারি শুরু হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের তিউনিসিয়া সফরের সময়ে দুই দেশের মাঝে কয়েকটা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাঝে আগের ৩’শ মিলিয়ন ডলার সহায়তার সাথে আরও ৩’শ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়। তুরস্ক তিউনিসিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সালের মাঝে তুরস্ক তিউনিসিয়াকে ২’শ মিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা দেয়।

গত মার্চেই ‘ডিফেন্স নিউজ’ জানায় যে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানি ‘টিএআই’ তিউনিসিয়ার কাছে ২’শ ৪০ মিলিয়ন ডলারে ৬টা ‘আনকা-এস’ সার্ভেইল্যান্স ড্রোন এবং তিনটা কন্ট্রোল স্টেশন বিক্রির ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করেছে। তুর্কি কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা এই ক্রয়াদেশের জন্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছিলেন। আর তারা তিউনিসিয়ার কাছে অস্ত্র বহণকারী ড্রোন বিক্রি করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘আনকা-এস’ ড্রোনের বৈশিষ্ট্য হলো এটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়; যার ফলশ্রুতিতে এই ড্রোন নিয়ন্ত্রক স্টেশন থেকে বেশ দূরে গিয়েও কাজ করতে সক্ষম। অর্থাৎ এই ড্রোনগুলি তিউনিসিয়ার উপকূলের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলির উপর নজরদারি করতে সক্ষম হবে।

তিউনিসিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুডপন্থী ‘এননাহদা পার্ট’র প্রধান রাচেদ ঘানুচির সাথে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। আঙ্কারার সাথে ‘এননাহদা পার্টি’র সম্পর্ক যে বাস্তবতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তা জুন মাসে পার্লামেন্টে ফ্রান্সের কাছ থেকে ঔপনিবেশিক সময়ের অপরাধের ক্ষমা চাওয়ার বিলে ‘এননাহদা’র সমর্থন না দেয়াই প্রমাণ করে।



লিবিয়ার যুদ্ধে তুরস্কের আবির্ভাব তিউনিসিয়ার রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে

লিবিয়াতে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের ঠিক আগেআগে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়িপ এরদোগান হঠাত করেই তিউনিসিয়ার রাজধানীতে আবির্ভূত হন। এরদোগানের সাথে বৈঠকের পর তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ সাংবাদিকদের বলেন যে, লিবিয়ার সাথে তুরস্কের সমুদ্রসীমা নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তা ঐ দুই দেশের ব্যাপার এবং তাতে তিউসিয়ার কিছু বলার নেই। অপরদিকে এরদোগান বলেন যে, লিবিয়ার ব্যাপারে আলোচনায় আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া এবং কাতারকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ ছিল, কারণ এই দেশগুলি লিবিয়া সমাজ এবং রাজনৈতিক কাঠামোকে ভালোভাবে বোঝে। এরদোগানের এই সফরের পর তুরস্ক শুধু কথায় নয়, কার্যত তিউনিসিয়াকে লিবিয়ার ব্যাপারে জড়িত হতে বাধ্য করেছে। ‘রয়টার্স’ খবর দিচ্ছে যে, গত ৮ই মে তুরস্কের একটা পরিবহণ বিমান ত্রিপোলির বিমানন্দর অনিরাপদ বলে তিউনিসিয়ার দক্ষিণে লিবিয়ার সীমানার কাছাকাছি জিয়েরবা বিমানবন্দরে অবতরণ করার অনুমতি চায়। তিউনিসিয়া বিমানটাকে নামতে দেয়। এই বিমানে লিবিয়ার জন্যে মেডিক্যাল সামগ্রী ছিল বলে বলা হয়; এবং এই সামগ্রীগুলি লিবিয়া পর্যন্ত পৌঁছে দেবার জন্যে তিউনিসিয়াকে অনুরোধ করা হয়। তিউনিসিয়ার বিরোধী দল ‘ফ্রি দেস্তুরিয়ান পার্টি’র নেতারা অভিযোগ করেন যে, তুরস্ক তিউনিসিয়াকে লিবিয়ার যুদ্ধের লজিস্টিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আরেক পত্রিকা ‘আল মনিটর’ বলছে যে, লিবিয়ার যুদ্ধ তিউনিসিয়ার রাজনীতিকে ঘোলাটে করে ফেলেছে। কারণ তিউনিসিয়াতে সকলেই লিবিয়ার যুদ্ধে কোন না কোন পক্ষ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে। তিউনিসিয়ার পার্লামেন্টে বর্তমানে সবচাইতে বেশি আসন দখন করে আছে ‘এননাহদা পার্ট’, যারা মুসলিম ব্রাদারহুডের চিন্তার সাথে একমত পোষণ করে। ‘এননাহদা’ লিবিয়ার যুদ্ধে ত্রিপোলির ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল একর্ড’ বা ‘জিএনএ’ সরকারকে সমর্থন করছে। একইসাথে তুরস্কের ক্ষমতাসীন ‘একে পার্ট’র সাথেও তাদের বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অপরদিকে তিউনিসিয়ায় ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এবং ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন একনায়ক জিনে এল আবিদিন বেন আলির সমর্থকদের থেকে গঠন করা ‘ফ্রি দেস্তুরিয়ান পার্টি’ বা ‘পিডিএল’ লিবিয়ার জেনারেল হাফতারের পক্ষ সমর্থন করছে। তিউনিসের ‘কলাম্বিয়া গ্লোবাল সেন্টার্স’এর প্রধান ইউসেফ শেরিফ বলছেন যে, সকলেই আসলে তিউনিসিয়াকে লিবিয়াতে যাবার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখে। লিবিয়া থেকে সন্ত্রাসীরা যাতে তিউনিসিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে, এই অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র তিউনিসিয়ার সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করেছে। তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেইফ এদ্দিন ত্রাবেলসির মতে, লিবিয়াতে ‘জিএনএ’এর সাম্প্রতিক সফলতা তিউনিসিয়ার নিরাপত্তাকে আরও সুসংহত করবে। তিনি বলেন যে, তিউনিসিয়া আর লিবিয়া একই সূত্রে গাঁথা। লিবিয়াতে যা কিছুই ঘটবে, সেটাই তিউনিসিয়াকে প্রভাবিত করবে। লিবিয়ার ঘটনার ব্যাপারে তিউনিসিয়ার জনগণ চিন্তিত থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। হাফতারের বিরুদ্ধে লিবিয়াতে ‘জিএনএ’র বড় বিজয়ের পরপরই ‘এননাহদা পার্টি’র প্রধান এবং পার্লামেন্টের স্পিকার রাচেদ ঘানুচি ত্রিপোলি সরকারের প্রধান ফায়েজ আল-সারাজকে ফোন করে অভিনন্দন জানান। কিন্তু এই ব্যাপারটা তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদ একেবারেই পছন্দ করেননি। তিউনিসিয়ার সংবিধান অনুযায়ী পররাষ্ট্রনীতি প্রেসিডেন্টের হাতে। সাইয়েদ ঈদ উল-ফিতরের এক বার্তায় জোর গলায় বলেন যে, সকলেরই জানা উচিৎ যে তিউনিসিয়া একটাই এবং এর একজনই প্রেসিডেন্ট।

তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী এলিয়েস ফাখফাখ। দেশের এলিট ক্লাসের বেশিরভাগ ব্যক্তিরই কোন না কোনভাবে ফ্রান্সের সাথে যোগসূত্র রয়েছে। ফাখফাখ ফ্রান্সের লিয়ঁ এবং প্যারিস থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ব্যবসায় বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভেদ এবং অস্থিরতা মানুষকে গণতন্ত্রবিমুখ করে ফেলেছে। মাত্র ৪৮ শতাংশ তিউনিসিয়ান গণতন্ত্রকে সমর্থন করছে; অপরদিকে ৮৩ শতাংশ মনে করে দেশের রাজনীতিতে ইসলামের আদর্শগুলি বাস্তবায়িত থাকা উচিৎ। রাজনীতিবিদেরা জনগণের আস্থায় না থাকলেও সামরিক বাহিনীর উপর আস্থা ৯৫ শতাংশ মানুষের; যা তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বিরাট পরিবর্তন এনেছে।



তিউনিসিয়ায় ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্সের প্রভাব

তিউনিসিয়ার প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি হওয়ায় সেখানকার রাজনীতিতে ফ্রান্সের প্রভাব ব্যাপক। দেশের এলিট ক্লাসের বেশিরভাগ ব্যক্তিরই কোন না কোনভাবে ফ্রান্সের সাথে যোগসূত্র রয়েছে। ‘পিডিএল’এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বেন আলি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হামেদ কারুয়ি ফ্রান্সে মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এলিয়েস ফাখফাখ ফ্রান্সের লিয়ঁ এবং প্যারিস থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ব্যবসায় বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইমেদ হাজগুই ফ্রান্সে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ক্ষমতাসীন কোয়ালিশনের মাঝের দল ‘তাহিয়া তিউনেস’এর নেতা এবং গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইউসেফ চাহেদ ফ্রান্সে কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। বিলিয়নায়ার ব্যবসায়ী, মিডিয়া টাইকুন এবং ২০১৯ সালের প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে প্রার্থী নাবিল কারুয়ি ফ্রান্সের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকুরি করে ক্যারিয়ার শুরু করেন।

‘পিডিএল’এর নেতা আবির মুসি ৩রা জুন লিবিয়াতে বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে বিল উত্থাপন করেন। বিলটা শেষ পর্যন্ত পাস না হলেও তর্ক বিতর্কের সময় আবির মুসি ‘এননাহদা’র নেতা রাচেদ ঘানুচিকে তুরস্ক এবং কাতারের অনুগত বলে অভিযোগ করেন। এরপর এই বিলের পাল্টা জবাব হিসেবে পার্লামেন্টে ১৯ আসনের অধিকারী দল ‘কোয়ালিশন আল কারামা’ আরেকটা বিল উত্থাপন করে, যা পাস হলে প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্সের কাছ থেকে ঔপনিবেশিক সময়ের অপরাধের জন্যে ক্ষমা চাইবার দাবি জানানো হবে। ১৪ ঘন্টা তুমুল বাকযুদ্ধের পর সাংসদরা এই বিল রুখে দেয়। ৭৭ জন সাংসদ এই বিলের পক্ষে ভোট দেয়; মাত্র ৫ জন ভোট দেয় বিপক্ষে। কিন্তু ৪৬ জন ভোটদানে বিরত থাকার কারণে বিল পাসের জন্যে দরকার ১’শ ৯ ভোট পাওয়া যায়নি। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল যে, মুসলিম ব্রাদারহুডপন্থী ‘এননাহদা’ এই বিল পাসের বিপক্ষে কথা বলে। তারা বলে যে, এই বিল পাস হলে তা তিউনিসিয়ার অর্থনীতিকে আঘাত করবে এবং দেশটার গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপিয় বন্ধুদের দূরে ঠেলে দেবে। ১৮৮১ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ফ্রান্স তিউনিসিয়ার ঔপনিবেশিক শাসক ছিল। এই বিল পাস না হওয়ায় এখনও তিউনিসিয়ার উপর ফ্রান্সের প্রভাব টের পাওয়া যায়।

তিউনিসিয়াতে ফ্রান্সের কি স্বার্থ রয়েছে?

তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুস্তফা আব্দেলকাবির ‘দ্যা এরাব উইকলি’র সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন যে, তিউনিসিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান ফ্রান্সের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে দেশটার কৌশলগত অবস্থান লিবিয়াতে যুদ্ধরত সকল পক্ষের জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন যে, লিবিয়াতে তুরস্কের স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের ব্যাপারে কিছু রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়াতে তুরস্কের অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেয়ায় তা পশ্চিম লিবিয়া নিয়ে ফ্রান্সের পরিকল্পনাকে হুমকির মাঝে ফেলে দিয়েছে। লিবিয়ার সাথে তুরস্কের সমুদ্রসীমার চুক্তি ফ্রান্সের জন্যে সরাসরি হুমকি তৈরি না করার পরেও ফরাসীরা গ্রীস এবং গ্রীক সাইপ্রাসের সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করে তুরস্কের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন লিবিয়ার সমুদ্রসীমায় অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিত করতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ‘অপারেশন ইরিনি’ নামে এক মিশন শুরুর ঘোষণা দেয়। আমিরাতের ‘দ্যা ন্যাশনাল’ পত্রিকা বলছে যে, ইইউ সদস্য দেশগুলির মাঝে অনৈক্যের কারণে এই মিশন শুরু করাটা খুবই কঠিন হয়েছে। ‘ইরিনি’র অধীনে নৌ মিশনের নেতৃত্বে থাকা ইতালি এখনও ঠিক করতে পারেনি যে, তারা এই মিশনে কিভাবে অংশ নেবে। মে মাসে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি ডি মাইও পার্লামেন্টে বলেন যে, ‘ইরিনি’র জন্যে পরিকল্পিত একটা নৌজাহাজ, ৩টা বিমান এবং ৫’শ সামরিক সদস্য মোতায়েনের ব্যাপারটা ইতালি সরকার খতিয়ে দেখছে। আর এই প্রস্তাব পার্লামেন্টের হাউজগুলিতেও অনুমোদন পেতে হবে। বর্তমানে শুধুমাত্র ফ্রান্স এবং গ্রীসই অপারেশন ‘ইরিনি’র অধীনে লিবিয়ার উপকূলে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। উভয় দেশই লিবিয়াতে তুরস্কের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে এবং লিবিয়ার সাথে তুরস্কের সমুদ্রসীমা বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরের বিরোধিতা করেছে।

গত ১৯শে জুন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু ইতালি ভ্রমণকালে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ‘অপারেশন ইরিনি’র ব্যাপক সমালোচনা করেন। তিনি বলেন যে, এই মিশনের মাধ্যমে সিরিয়া থেকে লিবিয়ায় যুদ্ধবিমান উড়িয়ে আনাকে বাধা দেয়া হয়নি। আবুধাবি থেকে আকাশপথে অস্ত্র আসার ব্যাপারটাও এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন যে, ‘ইরিনি’ লিবিয়ার সমস্যার কোন সমাধান দেয় না এবং লিবিয়ার উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও নিশ্চিত করেনা। ‘দ্যা এরাব উইকলি’ বলছে যে, ফরাসী এবং গ্রীকদের অবস্থানের কারণেই ন্যাটোকে এই মিশনের অংশ করার মার্কিন এবং তুর্কি চেষ্টা সফল হচ্ছে না। লিবিয়ার জেনারেল হাফতারের অধীন ‘লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ বা ‘এলএনএ’কে ফ্রান্স সমর্থন দিয়ে চলেছে বলেই ইইউএর মাঝ থেকে হাফতারের বাহিনীর বিরোধিতা করার চেষ্টাকে ফ্রান্স বারংবার বাধাগ্রস্ত করেছে। আব্দেলকাবির বলছেন যে, ২০১১ সালে লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির সরকারকে অপসারণের পিছনে ফ্রান্সের সমর্থনই ছিল সবচাইতে জোরালো। তারা মনে করেছিল যে, গাদ্দাফিকে সরানোর পর লিবিয়াতে ফ্রান্সের একটা শক্ত ভিত প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু লিবিয়ার যুদ্ধে অনেকগুলি রাষ্ট্র যুক্ত হওয়ায় ফ্রান্স তার কাংক্ষিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ডের অপারেশনস ডিরেক্টর ব্র্যাডফোর্ড গেরিং বলছে যে, লিবিয়াতে রুশ সামরিক অবস্থান শক্তিশালী হবার সাথেসাথে তা ইউরোপের দক্ষিণ সীমানার জন্যে হুমকি সৃষ্টি করছে। তথাপি তুরস্কের জন্যে মার্কিন সমর্থন পরিষ্কার হতে থাকায় ফ্রান্স হয়তো লিবিয়াতে রুশ সামরিক অবস্থানের বিপক্ষে কথা নাও বলতে পারে।

তিউনিসিয়ার কৌশলগত অবস্থান ফ্রান্সের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ। তিউনিসিয়ার উত্তর উপকূল থেকে ইতালির দক্ষিণের সিসিলি দ্বীপের উপকূলের দূরত্ব মাত্র ১’শ ৬০ কিঃমিঃ। সিসিলি প্রণালী নামে পরিচিত এই সরু নৌপথের মাঝ দিয়েই ফ্রান্সের সাথে সুয়েজ খাল, তথা ভারত মহাসাগর এবং পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ। একারণেই ফ্রান্স তিউনিসিয়াকে কাছে রাখতে চাইছে। লিবিয়ার যুদ্ধে তুর্কি সমর্থনে ‘জিএনএ’এর সাম্প্রতিক বিজয়ের পর কৌশলগত এই নৌপথের নিয়ন্ত্রণ তুরস্কের কাছে হারাবার ভয় পেয়ে বসেছে ফ্রান্সকে।



তিউনিসিয়ার ভূকৌশলগত অবস্থান ফ্রান্স ও তুরস্ককে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে


উসমানি খিলাফতের সময় ষোড়শ শতক থেকেই তিউনিসিয়ার সাথে ইস্তাম্বুলের গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। তুরস্ক সেই সম্পর্ককেই আবার জাগিয়ে তুলতে চাইছে। তবে আঙ্কারার সাথে তিউনিসিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুডপন্থী ‘এননাহদা পার্টি’র সম্পর্ক যে বাস্তবতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তা জুন মাসে পার্লামেন্টে ফ্রান্সের কাছ থেকে ঔপনিবেশিক সময়ের অপরাধের ক্ষমা চাওয়ার বিলে ‘এননাহদা’র সমর্থন না দেয়াই প্রমাণ করে। তথাপি এই বিল তিউনিসিয়ার জনগণের ঔপনিবেশিক সময়ের প্রতি ঘৃণা এবং ঔপনিবেশিক সময় থেকে টেনে আনা সম্পর্কের ইতি টানার ইচ্ছেরই বহিঃপ্রকাশ; যা কিনা ফ্রান্সকে বিচলিত করেছে। তিউনিসিয়ার সামরিক বাহিনীর দ্রুত উন্নয়ন, জনগণের মাঝে তাদের জনপ্রিয়তা এবং তাদের সাথে তুরস্কের সম্পর্কের ব্যাপারটাও ফ্রান্সকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। কারণ এতে লিবিয়ায় তুরস্কের সামরিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

তিউনিসিয়ার কৌশলগত অবস্থান ফ্রান্সের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ। তিউনিসিয়ার উত্তর উপকূল থেকে ইতালির দক্ষিণের সিসিলি দ্বীপের উপকূলের দূরত্ব মাত্র ১’শ ৬০ কিঃমিঃ। সিসিলি প্রণালী নামে পরিচিত এই সরু নৌপথ ভূমধ্যসাগরের পূর্ব এবং পশ্চিম ভাগকে যুক্ত করেছে। আর এর মাঝ দিয়েই ফ্রান্সের সাথে সুয়েজ খাল, তথা ভারত মহাসাগর এবং পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ। একারণেই ফ্রান্স তিউনিসিয়াকে কাছে রাখতে চাইছে। লিবিয়ার যুদ্ধে তুর্কি সমর্থনে ‘জিএনএ’এর সাম্প্রতিক বিজয়ের পর কৌশলগত এই নৌপথের নিয়ন্ত্রণ তুরস্কের কাছে হারাবার ভয় পেয়ে বসেছে ফ্রান্সকে। আর একইসাথে ইতালিকে পাশে না পাওয়ায় ফ্রান্সের হতাশা চরমে পৌঁছেছে। তুরস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র গ্রীসকে সাথে করেই ফ্রান্স লিবিয়ার উপকূল পাহাড়া দেবার যে মিশনে মনোনিবেশ করেছে, তা ইতোমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যখন গত ১০ই জুন লিবিয়ার উপকূলে ফরাসী এবং তুর্কি যুদ্ধজাহাজের মাঝে অসৌজন্যমূলক পরিস্থিতির সূচনা হয়। তুরস্ক যদি লিবিয়াতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনে মনোযোগী হয়, আর ফ্রান্স ও গ্রীস যদি তুরস্ককে একাজে বাধা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে, তাহলে সামনের দিনগুলিতে দুই পক্ষের মাঝে সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়তে থাকবে।



79 comments:

  1. Enter your comment...ফান্স ও যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু রাষ্ট্র কিন্তু আপনার এই লেখা দ্বারা যুক্তরাষ্টের ফান্স বিরোধী নীতির কথা বলছেন। এতে যুক্তরাষ্টের লাভ কি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ফরাসীদের সাথে এংলো-স্যাক্সনদের একটা বিভেদ রয়েছে অনেক আগ থেকেই। ১৯৫০-৬০এর দশকে আফ্রিকায় ফরাসীরা উপনিবেশগুলিকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। ফ্রান্স এর পিছনে ব্রিটেন আর আমেরিকার হাত ছিল বলে মনে করতো (যার যথেষ্ট কারনও ছিল)।

      যুক্তরাষ্ট্র কিছু ক্ষেত্রে তুরস্কের সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছে। এর একটা হলো লিবিয়া। এই সমঝোতা না করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় যথেষ্ট শক্তি মোতায়েন করতে পারবে না, এবং পিছিয়ে পড়বে।

      Delete
  2. Enter your comment...তুরস্ক আসলে কতটা শক্তিশালী?

    ReplyDelete
    Replies
    1. তুরস্ক কতটা শক্তিশালী, সেটা নির্ভর করবে সুপারপাওয়ার তুরস্ককে কোথায় দেখতে চায় এবং সুপারপাওয়ারের নিজের অবস্থান কতটা শক্তিশালী সেটার উপর। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাকে ধরে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা বিশ্বব্যবস্থাকেও দুর্বল করছে। আর বিশ্বব্যবস্থা দুর্বল হলে তুরস্ক আগে যা করতে পারতো না, সেটা হয়তো করতে পারবে। উদাহরণ - যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানের পর সিরিয়ার উত্তর অংশ দখল করে নেয়া। তুরস্ক তার উসমানি সময়ের ইতিহাসকেই কাজে লাগাবে তার প্রভাব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে।

      Delete
  3. Enter your comment...ভারতকে কোন কারনে আমেরিকা পরমাণু বোমা বানাতে দিয়েছে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. কমিউনিস্ট চীনকে ব্যালান্স করতে। ১৯৭০এর দশকের চিন্তা এটা।

      Delete
  4. Enter your comment...বাংলাদেশের পত্রিকা গুলোকে চীনের ঋন নিয়ে লেখা হয় ও চীনকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলে প্রচার করা হয় কেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. যারা এটা বলে, তাদের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা ভারতকে দিয়ে চীনকে ব্যালান্স করার নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু এক হাতিকে ব্যালান্স করার জন্যে অন্য হাতিকে ব্যবহার করতে চাইলে দুই হাতির চাপে পিষে যাবার সম্ভাবনা বেশি। দুই হাতিকে আলাদাভাবে ব্যালান্স করাটা গুরুত্বপূর্ণ; যাতে একটা হেলে পড়লে অন্যটার উপর না পড়ে।

      Delete
  5. Enter your comment... ভারত কি আসলেও কোনো দিন ভাঙ্গবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভারত যদি সৃষ্টিকর্তার তৈরি করা হতো, তাহলে অন্যভাবে চিন্তা করতে হতো। ব্রিটেন যে সৃষ্টিকর্তা নয়, সেব্যাপারে তো একমত হওয়া যায়, তাই না?

      Delete
  6. Enter your comment...জার্মানরা তাদের ২য় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়কে কিভাবে দেখে? তারা বিশ্ব ভূরাজনৈতিতে কোন ভূমিকা নিতে চায়?

    ReplyDelete
    Replies
    1. বিশ্ব রাজনীতিতে জার্মানির ভূমিকা সীমিত। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানিকে ধ্বংস করে নতুন জার্মানির জন্ম দেয়া হয়েছে, যার আগের জার্মানির সাথে কোন মিল নেই।

      জার্মানি নিয়ে এই লেখাগুলি পড়ুন -

      http://koushol.blogspot.com/2016/06/germany-unification-bangladesh-map-reality.html

      http://koushol.blogspot.com/2017/06/germany-bengal-geopolitics-of-division.html

      Delete
  7. Enter your comment...ভারতের কৃত্রিম বান্ডারী বলতে কি বোঝায়?

    ReplyDelete
    Replies
    1. রাজনৈতিকভাবে তৈরি বাউন্ডারি, যার কোন স্থায়ী ভিত নেই। যেমন হিমালয় পর্বত এবং ভারত মহাসাগর হিন্দুস্তানের জন্যে স্থায়ী বাউন্ডারি। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মাঝে তৈরি করা বাউন্ডারির কোন স্থায়ী ভিত নেই; তাই সেটাও কৃত্রিম বাউন্ডারি। কৃত্রিমভাবে তৈরি বাউন্ডারি ততদিনই থাকবে, যতদিন যারা এটা তৈরি করেছে, তারা চাইবে এটা থাকুক; অথবা যারা পরবর্তীতে আসবে, তারা চাইবে আগের বাউন্ডারিই থাকুক। যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশদের তৈরি করা ভারতের বাউন্ডারিকে স্থিতাবস্থায় রেখেছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বাউন্ডারি পরিবর্তন করতে চেয়েছে কুর্দি রাষ্ট্র তৈরির প্ররোচনা দিয়ে।

      Delete
  8. Enter your comment...আপনি লিখে ছেন যে ৭০ ৮০ দশকের সেনাবাহিনী একটা বাস্তব আকার নেয়? তাহলে সেনা শাসন কি বাংলাদেশের জন্য কি সুফল বয়ে এনেছে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হয়তো আপনি বুঝতে পারেননি কথাগুলি। এখানে পুনরায় কথাগুলি উল্লেখ করা হলো - "১৯৭০এর দশকে এবং ১৯৮০এর দশকের শুরুতে দ্রুত বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এমন একটা আকার ধারণ করলো যে, তা একবারে গিলে ফেলাটা ভারতের জন্যে অবাস্তব হয়ে গেলো।"

      Delete
    2. ভূরাজনীতিতে সামরিক শাসন বা বেসামরিক শাসন গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সেই দেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব এবং এর পররাষ্ট্রনীতি গুরুত্বপূর্ণ। উদারহণস্বরূপ বলা যায় যে, বিশ্বের অনেক সামরিক সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু ছিল। আবার অনেক সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সরকার আখ্যা দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।

      Delete
  9. তাহলে পাকিস্তানকে কেন পারমানবিক বোমা বানাতে দিল?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা কোন স্বেচ্ছার প্রজেক্ট ছিল না; এটা ছিল এমন একটা ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, যার উত্তর আরও অনেকদিন খুঁজতে হবে মানুষকে।

      পাকিস্তানের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙ্গেছিল। এই বাস্তবতাকে এড়ানো পশ্চিমাদের জন্যে কঠিন ছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তানকে ভেঙ্গে ফেলতে আফগানিস্তানে মিশনে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা আবার যুক্তরাষ্ট্রকে সেটাও বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। উল্টো আফগান যুদ্ধের ফলে মার্কিন অর্থনীতি ধ্বসে গেছে।

      Delete
  10. গ্লোবাল পাওয়ার ইনডেক্র সামরিক শক্তির তালিকা দেয় তা কতটা যোক্তিক?

    ReplyDelete
    Replies
    1. কোন যৌক্তিকতা নেই। এর মাধ্যমে শুধু জাতীয়তাবাদী জনগণকে ব্যস্ত রাখা।

      Delete
  11. ইউরোপের অর্থনীতিতে জার্মানদের এতো প্রভাব কেন? এক পত্রিকা দেখেছি জার্মান প্রভাবের কারনে বিট্রেনের মতো দেশ ইইউ ছাড়ছে

    ReplyDelete
    Replies
    1. কারণ জার্মানদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সক্ষমতা বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন সহায়তায় জার্মানিকে দাঁড় করানো হয়েছে। জার্মানি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবেই থাকবে; রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে যাতে আর কোনদিনও দাঁড়াতে না পারে, সেব্যাপারে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন একমত ছিল। সেই হিসেবেই তারা জার্মানিকে ভাগ করেছিল। আগের জার্মানি ধ্বংস হয়ে গেছে। জার্মানির বিভাজন নিয়ে নিচের লেখাটা পড়ুন -
      https://koushol.blogspot.com/2017/06/germany-bengal-geopolitics-of-division.html

      আর ব্রিটেন ইইউ ছেড়েছে 'গ্লোবাল ব্রিটেন' প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে; জার্মানির এখানে কোন ভূমিকাই নেই।

      গ্লোবাল ব্রিটেন নিয়ে আমার তৃতীয় বই 'যুক্তরাষ্ট্রের পর...'এ কিছু ধারণা পাবেন।

      আর ২০২০এর ঘটনাগুলি নিয়ে পড়ুন -

      https://koushol.blogspot.com/2020/02/future-of-post-brexit-global-britain.html

      https://koushol.blogspot.com/2020/04/coronavirus-global-britain-spreads-influence.html

      https://koushol.blogspot.com/2020/05/australian-shipyards-busy-during-corona-pandemic.html

      https://koushol.blogspot.com/2020/06/what-is-canada-interest-in-caribbean.html

      Delete
  12. ভারতের ধনী ব্যক্তি বিশ্বের নবম ধনী।আর আপনি বলছেন েেে ভারত পরাশক্তি নির্ভর রাষ্ট।

    ReplyDelete
    Replies
    1. লেবাননেরও অনেক ধনী ব্যক্তি রয়েছে।

      Delete
  13. আমেরিকা কেন ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য বানাতে চায় নাকি তা লোক দেখানো?

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিজের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে শক্তি বৃদ্ধি করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র এটা চেষ্টা করেছে। অবশ্য এখন ট্রাম্প সরকার জাতিসংঘকেই বিশ্বাস করছে না। কাজেই ভারতকে নিয়ে ভাবার আগে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে নিয়ে কি ভাবছে, সেটা দেখতে হবে।

      Delete
  14. রাশিয়া কতটা শক্তিশালী?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা পড়ুন এবং এর নিচে কমেন্ট পড়ূন -

      https://koushol.blogspot.com/2020/06/coronavirus-russia-geopolitical-ambition.html

      Delete
    2. আপনি ফেইসবুকে এই পেইজটা ফলো করলে সর্বশেষ ঘটনাগুলি সম্পর্কে আপডেটেড থাকতে পারবেন আশা রাখি। এই ব্লগের এবং পত্রিকার লেখাগুলিও ওখানে পোস্ট করা হয়।

      https://www.facebook.com/k360bd/

      Delete
  15. যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণার এক রিপোর্টে বলছে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের তালিকার যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া চীনের পরে জার্মানিকে রেখেছে। এ দ্বারা তারা কি বোঝাতে চাচ্ছে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এর অর্থন হলো, ইউরোপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জার্মানির গুরুত্ব কতটুকু।

      Delete
  16. ইরানের সাথে করা পারমানবিক চুক্তিতে কেন জার্মানিকে রাখা হলেও জাপানকে কেনো রাখা হয় নি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ চায়নি।

      Delete
  17. আমেরিকা জাপান জার্মানির অর্থনীতিকে কেন বিট্রেনের ও ফান্সের অর্থনীতির ২ গুন বানিয়ে রেখেছে। এর দ্বারা কি যুক্তরাষ্ট্র কি এই নীতি ধরে রাখছে না যে বিশ্ব রাজনীতিতে কেউ কারো বন্ধু নয়। মূলত আমার প্রশ্ন মূলত যুক্তরাষ্ট্র কাউকে সত্যিকার বন্ধু ভাবে না

    ReplyDelete
    Replies
    1. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানি আর জাপান যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্ছে বাস্তবায়িত করেছে। এখনও অনেকটাই করছে।

      Delete
  18. ভারত বিরোধি ভারতের সব প্রতিবেশী। ভারত কি তার মীরাক্কেল হারাবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হারাতে বসেছে ইতোমধ্যেই। তবে আরও কিছু খেলা বাকি রয়েছে।

      Delete
  19. পাকিস্তান কিভাবে সোভিয়েত ভাঙলো। বাস্তব সম্মত কোনো ইতিহাস পাইনি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আফগানিস্তানের যুদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গার পিছনে শেষ কোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর আফগান যুদ্ধ চালনা করেছেন পাকিস্তানে সিআইএ-এর একজন প্রতিনিধি। আসলে সিআইএ পুরো যুদ্ধটা চালনা করেছে পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে।

      Delete
  20. যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ কি ভাবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনগুলইকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং ডব্লিউএইচও থেকে নিজেকে উঠিয়ে নেবার কথাও বলেছে। ইরাক আক্রমণের ক্ষেত্রেও জাতিসংঘকে এড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।

      Delete
  21. Enter your comment...বাকি খেলা কি হতে চলেছে আমি জানতে আগ্রহী।

    ReplyDelete
    Replies
    1. সবাই তা-ই চায়। আমাদের মৃত্যু কবে হবে, সেটাও তো আমরা আগেভাগে জেনে ফেলতে চাই।

      Delete
  22. Enter your comment...যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে ধ্বংস করেছে ভারতকে করবে না এর কোনো গারান্টি আছে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. না; নেই। তবে পাকিস্তানকে ধ্বংস করাটাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে সম্ভব হয়নি।

      Delete
  23. Enter your comment...জাতিসংঘ আসলে কার?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই মুহুর্তে কারুরই না। তবে ব্রিটেন এর নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করছে।

      এটা পড়ুন; কিছুটা ধারণা পাবেন -

      https://koushol.blogspot.com/2020/04/who-us-british-friction-new-geopolitical-conflict-indication.html

      Delete
  24. Enter your comment...ভারতকে আপনারা হাতির সাথে কতটা যোক্তিক?

    ReplyDelete
    Replies
    1. কারণ সে বাঘ-সিংহের মতো নয়। আকৃতিতে বড়; কিন্তু শুধু নিজের এলাকা পাহাড়া দেয়। চীনও একইরকম। এদেরকে নিজের এলাকা থেকে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে; যা কিনা পৃথিবীর জন্যে ভালো নয়। কারণ দুই হাতি যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ হলো আশেপাশের সকলকে পিষে মারবে। যাদের পিষে মরার সম্ভাবনা নেই, তারাই এধরনের চিন্তা করবে।

      Delete
  25. আপনি বলেছেন বিট্রেন বেক্সিট পরবতীতে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নেে আগ্রহী।তা কি ভূরাজনীতির কোনো সমীকরণ বদলে দেবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. পুরো সমীকরণই বদলে দেবে। তবে এটা মনে করা ঠিক নয় যে, ব্রিটেনের উদ্দেশ্য শুধু চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করা। ব্রিটেনের উদ্দেশ্য চীনকে নিয়ন্ত্রণ করা। নিয়ন্ত্রণ করার অর্থ হলো চীনের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপকে ব্রিটেনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সাথে সমন্বয় সাধন করা। এটা ব্রিটেন করতে চাইবে রাজনৈতিকভাবে। ঔপনিবেশিক সময়েও ব্রিটেন সেটাই করেছিল। ব্রিটেন তখন জনসংখ্যার দিক থেকে আরও ছোট ছিল। কিন্তু সে চীন এবং ভারতের মাঝে বাণিজ্য পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ব্রিটেন দুনিয়া শাসনের জন্যে সম্পদ যোগাড় করেছে।

      Delete
  26. হাতির মাঝে পীষা পড়লে কি হতে পারে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে ধ্বংস।

      Delete
  27. বিট্রেন এই মূহুর্তে কতটা শক্তিশা?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার তৃতীয় বই 'যুক্তরাষ্ট্রের পর...' পড়ুন; কিছুটা ধারণা পাবেন।

      Delete
  28. ভারতকে এক রাখার মাধ্যমে পরাশক্তির কি ভাবে লাভবান হয়। এখন তো আর ওপোনিবেশ নেই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার দ্বিতীয় বই 'বঙ্গোপসাগর আসলে কার?' বইটা পড়ুন।

      Delete
  29. বাঘ সিংহ শক্তিশালী না হাতি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. কোন ফলটা ভালো - আম না কমলা?

      দু'টা দুই জিনিস। তুলনীয় নয়। দু'টার কাজ আলাদা। একটা গাছ-পাতা খায়; আরেকটা অন্য প্রাণী শিকার করে খায়।

      Delete
  30. ভারতের সাথে পাকিস্তানের তুলনা করে পাকিস্তানকে এত দূর্বল বানানো হয় তা কতটা যোক্তি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার দ্বিতীয় বই 'বঙ্গোপসাগর আসলে কার?' বইটা পড়ুন।

      Delete
  31. কাদের পিষে মরার সম্ভাবনা নেই?

    ReplyDelete
    Replies
    1. যারা সমুদ্রের ওপাড়ে; অর্থাৎ হাতির সাথে স্থলসীমানা নেই; অথবা হাতির কাছাকাছি অবস্থিত নয়।

      Delete
  32. ফান্স বনাম এংলো সাক্সোন বিরোধ সম্পর্কে জানতে চা?

    ReplyDelete
    Replies
    1. অপেক্ষা করুন। যখন সময় হবে, তখন লেখা দেখবেন।

      Delete
  33. ইউরোপ নিয়ন্ত্রণে জার্মানির গুরুত্ব কতখা?

    ReplyDelete
    Replies
    1. জার্মিনি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। ইউরোপের দেশগুলিকে জার্মানি তার বাজার হিসেবে দেখে এবং তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে জার্মানির মতামত পেরিয়ে কেউ এগুতে পারে না। যেমন গ্রীসের অর্থনৈতিক সমস্যায় জার্মানি সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে। ইতালির অর্থনৈতিক সমস্যায় হস্তক্ষেপ করার কারণে ইতালিতে ডানপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। জার্মানির কর্মকান্ড ইউরোপের অর্থনৈতিক সমস্যার বড় কারণ। ইউরোপের কেউ জার্মানির পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না।

      Delete
  34. আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি আমার দেশপ্রেমকে জার্গোতো করেছেন। দেশের জন্য হয়তো কিছু করতে পারবো না। তবে আমি আজ সমাজের কোনো বিষয়ে আর খারাপ নজরে লেখবো না। আমি আর বিভান্ত নই। আপনাকে great বলে ছোট করবো না। আপনার মতো কিছু ছেলে জন্ম দিলে বাংলাদেশ সোনার বাংলা হবে

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকেও ধন্যবাদ।

      সৃষ্টিকর্তা দুনিয়াটা আমাদের জন্যে অনেক বড় করে দিয়েছেন। আমরা নিজেরাই নিজেদের চিন্তার গন্ডিকে সীমাবদ্ধ করে রাখি। আমার জন্ম বিশ্বের অন্য যেকোন স্থানেই হতে পারতো। আমি যদি শুধু সেই স্থান নিয়েই চিন্তাকে সীমাবদ্ধ রাখতাম, তাহলে নিজেই নিজেকে ছোট করে রাখতাম। একইসাথে নিজের দায়িত্ববোধকেও ছোট করে ফেলতাম।

      Delete
  35. জার্মানি এই নীতি ফান্সকে বিব্রত করে না

    ReplyDelete
    Replies
    1. বিব্রত করে।

      কিন্তু ফ্রান্সের কিছু করার নেই। জার্মানি জন্ম হয়েছিল প্যারিস দখল করা মাধ্যমে। আর এরপর আরও দু'বার জার্মানি ফ্রান্সের উপর সামরিক হামলা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে যেভাবে ভেঙ্গেছে, তাতে ফ্রান্স অনেকটা আস্বস্ত হয়েছে। আপাততঃ সে জার্মানিকে আগ্রাসী মনে করে না। তবে জার্মানির অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে সে পছন্দ না করলেও মেনে নেয়; কারণ সেটা অন্ততঃ সামরিক আগ্রাসনের চাইতে ভালো।

      জার্মানিকে ফ্রান্স এখন এংলো-স্যাক্সনদের (ইংরেজি ভাষাভাষি) মতো অবিশ্বাস করে না। জার্মানি ঔপনিবেশিক শক্তি নয়। ফ্রান্স ঔপনিবেশিক শক্তি। ফ্রান্স তার উপনিবেশগুলি ধরে রাখতে জার্মানিকে বন্ধু হিসেবে পাশে চায়।

      Delete
  36. ভারত চীন দ্বন্দ্বেে বাংলাদেশের কি কোনো লাভ হবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. অন্যরা কিছু করবে; আপনি বসে থাকবেন। লাভ হবে আপনার?

      ভূরাজনীতিতে এমন ফ্রি লাঞ্চ নেই। আপনি আগে থেকে বুঝবেন; সেই বুঝে আগে থেকেই কাজ করবেন; তাহলে আপনার কিছু পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর না হলে এমনও হতে পারে যে, আপনি নিজেই অন্যদের লভ্যাংশ ভাগাভাগির অংশ হয়ে যেতে পারেন। অন্যরা প্ল্যান করলে আপনাকে জানিয়ে করবে না।

      Delete
  37. আপ্নার (লেখক) এবং প্রশ্নকারীর প্রশ্নত্তোর পর্ব থেকে অনেক কিছু শিখলাম।
    এবং অবশ্যই লেখাটা দারুন। অনেক কিছু জান্তে এবং শিখতে পারলাম। এজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ।
    আমার প্রশ্ন টা হল ঃ এই বিশ্বে কি সত্যি কারের ইসলাম এর উপর ভিত্তি করে, একটা state গড়ে ওঠা সম্ভব। মানে খোলাফায়ে রাশিদুন বা পরের সুলাতানাত এর মত?
    সমস্ত কিছু আল্লাহর হাতে, তিনি চাইলে অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু এখনকার ভু-রাজনৈতিক বাস্তবতা বা বিশ্বের সুপারপাওয়ার বা প্রচলিত world order কি এরকম আদর্শভিত্তিক state or country গঠন করতে দেবে?
    আপ্নি কি মনে করেন?
    ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একইভাবে প্রশ্ন করা যায় যে, কেন মনে হচ্ছে যে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে আরেকটা ব্যবস্থা আসবে না? এমনকি যখন বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা সকল ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতা দেখিয়ে দিচ্ছে, তখনও?

      এখনে যে ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, পরিবর্তনের কনসেপ্টকে পরিবর্তন করা। বর্তমান বিশ্বে পরিবর্তনের যে কনসেপ্ট দাঁড় করানো হয়েছে, তার ভিত্তি হলো - পরিপূর্ণ পরিবর্তন সম্ভব নয়। কাজেই পরিবর্তন হতে হবে বর্তমান ব্যবস্থার ছায়ার অধীনে। "বাস্তবতা পরিবর্তন সম্ভব নয়" - এটাই হলো বর্তমান ব্যবস্থার রক্ষাকবচ।

      বাস্তবতা পরিবর্তিত হতে কতটা কম সময় লাগতে পারে, তা জার্মানির জন্মের ইতিহাস থেকেই পাওয়া যায়। আরও অনেক উদাহরণ এখানে দেয়া যেতো, কিন্তু কারণ রয়েছে বলেই জার্মানির উদাহরণ দেয়া হয়েছে -

      https://koushol.blogspot.com/2016/06/germany-unification-bangladesh-map-reality.html

      Delete
  38. ধন্যবাদ। আমার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য।

    আমি আরেক্টা প্রশ্ন করতে চাই, করোনা পরবর্তী world এ বিশ্বের অর্থনীতি খুব খারাপ অবস্থার মধ্য যাবে, আমার মনে হয় ২০০৮ সালের রিসেশন এর থেকেও খারাপ অবস্থা হবে।
    এই রকম অবস্থা কি জানান দেয় যে, প্রচলিত capitalist system খুব তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে পড়বে? সঙ্গে কি প্রচলিত world order ও?
    আপ্নার কি মনে হয়?

    নসিবর

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই ব্লগে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে অনেকগুলি লেখা রয়েছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যবস্থা কিভাবে হুমকির মাঝে পড়েছে, সেব্যাপারে ২০২০এর লেখাগুলি পড়তে পারেন।

      Delete
    2. আপনার লেখা গুলি প্রায় গত ২ বছর ধরে পড়ছি। প্রচুর জান্তে ও শিখতে পেরেছি।
      ধন্যবাদ

      Delete