Saturday 20 June 2020

জন্মের পর থেকে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জে ভারত

২০শে জুন ২০২০

লাদাখের সীমান্ত বিরোধ ভারতকে এমন এক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার মাঝে ফেলেছে, যেখানে বহুদূরের মার্কিন সহায়তা পেলেও নিজস্ব স্থলসীমানায় অবস্থিত চারটা দেশ চীন, পাকিস্তান, নেপাল এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে নিশ্চিত নয় ভারত, যা কিনা দেশটার জন্মের পর থেকে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ।


১৬ থেকে ১৮ই জুনের মাঝে তিন দফা আলোচনার পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ জানাচ্ছে যে, আটককৃত দু’জন অফিসারসহ ১০ জন ভারতীয় সেনাকে ফেরত দিয়েছে চীনারা। ১৫ই জুন ভারতীয়রা জানায় যে, চীনাদের সাথে লাদাখ সীমান্তে গালওয়ান উপত্যকায় উভয় পক্ষের প্রায় ৫’শ সেনার ব্যাপক সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে, যাদের মাঝে একজন কর্ণেলও রয়েছেন। দুই দেশের মাঝে চার দশকে এটা সবচাইতে মারাত্মক সীমান্ত সংঘর্ষ। ১৮ তারিখ পর্যন্ত ভারতীয়রা বলে আসছিলো যে, চীনাদের হাতে কোন ভারতীয় সেনা আটক নেই। উত্তেজনা প্রশমণে উভয় পক্ষ মে মাসের শুরু থেকে সাত বার আলোচনায় বসেছে। ২০শে জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অফিস থেকে এক বার্তায় বলা হয় যে, ভারতীয় সেনাদের বীরত্বের কারণেই চীনারা ভারতের সীমানার অভ্যন্তরে ঢুকতে পারেনি। আর মোদির সরকার চীনাদেরকে ইচ্ছেমতো দুই দেশের বিরোধপূর্ণ সীমানা পরিবর্তন করতে দেবে না। যদিও এর আগে ১৭ই জুন নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন যে, তার সরকার চীনাদের উচিৎ জবাব দেবে, তথাপি গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনাদেরকে বীরের মতো সীমানা রক্ষা করার বার্তা দিয়ে মোদি তার কঠোর হুমকি থেকে বেশ খানিকটা সরেই এসেছেন। আঞ্চলিক বাস্তবতা যে ভারতের যথেষ্টই বিপক্ষে যাচ্ছে, তা প্রতিবেশী নেপাল এবং বাংলাদেশের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে।

গত ৯ই জুন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নেপাল ও চীনের সীমান্তে লিপুলেখ গিরিপথ পর্যন্ত একটা রাস্তা উদ্ভোধন করেন। নেপাল এই অঞ্চলকে তার নিজের সীমানার অভ্যন্তরে বলে মনে করে। ১৯৫০এর দশক থেকেই নেপাল চাইছে উভয় দেশ আলোচনায় বসে যাতে বাউন্ডারির সমস্যাগুলির সুরাহা করে। কিন্তু ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেপালকে আলোচনায় বসার সময় দেয়নি। ১৯৬২ সালে চীনের সাথে যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনারা এই অঞ্চল দখল করে নেয়। ১১ই মে নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গিয়াওয়ালি নিজে কাঠমুন্ডুতে ভারতের রাষ্ট্রদূত ভিনায় মোহন কোয়াত্রাকে ডেকে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে যে, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কেবল তারা নেপালের সাথে আলোচনায় বসবে। অপরদিকে নেপাল বলছে যে, করোনাভাইরসের সমস্যা শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে পারবে না। ১৩ই জুন নেপালের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থনে দেশটার নতুন মানচিত্রকে সংবিধানের অংশ করে প্রস্তাব পাস হয়; এই মানচিত্রে কালাপানি, লিপুলেখ গিরিপথ এবং লিম্পিয়াধুরা এলাকাগুলি নেপালের অংশ দেখানো হয়। ১৯শে জুন নেপালের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে এই প্রস্তাব পাশ হলে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র বিষ্ণু রিজাল ঘোষণা দেন যে, নেপাল কালাপানিতে একটা সেনা ক্যাম্প তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৭ই মে নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল পুর্ন চন্ত্র থাপা কালাপানি সীমান্ত এলাকা সফর করেন। নেপালের সাথে ভারতের সীমান্ত উত্তেজনা যখন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যাস্ত চীন।

১৬ই জুন বেইজিং সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্য, বা ৫ হাজার ১’শ ৬১টা পণ্যের জন্যে চীনের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেবে। ব্যাপারটা ভারতীয়দেরকে বিচলিত করেছে। ‘দ্যা টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ঠিক যেসময় লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত এবং চীনের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে, তখনই চীন হয়তো বাংলাদেশকে তার পক্ষে টানতে চাইছে। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের সাথে গড়ে তোলা সুসম্পর্ক এখন হুমকির মুখে পড়ছে বলে প্রতিবেদনে আশংকা করা হয়। এই সম্পর্ক গত বছরই চাপের মাঝে পড়েছে, যখন ভারতে ‘এনআরসি’ এবং এর পরবর্তীতে ‘সিএএ’ আইন নিয়ে ঢাকায় অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গত ১৯শে মে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশকে ‘সিসটার সিটি’ নামের এক কনসেপ্টে যুক্ত হবার জন্যে আহ্বান করা হয়। এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের সমস্যা দূরীকরণে চীনা শহরগুলির উদাহরণকে ব্যবহার করার জন্যে প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে দুই দেশের জনগণের মাঝে সম্পর্কোন্নয়ন হবে বলে আশা করা হয়। এই ব্যাপারটাও ভারতীয়রা সহজভাবে নিতে পারেনি। ভারতের শীর্ষস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’এর এক লেখায় এব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একইসাথে বাংলাদেশের সাথে চীনের বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি কেন দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে না, সেব্যাপারেও হতাশা প্রকাশ করা হয়।

গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ভারতীয় সেনাদের প্রাণহানির পর মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও এক টুইটার বার্তায় মার্কিন সরকারের সমবেদনা জ্ঞাপণ করেন। ‘আল জাজিরা’ বলছে যে, গত দুই দশকে ভারত ওয়াশিংটনের সাথে নিবিড় রাজনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে; যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতের সবচাইতে বড় অস্ত্র সরবরাহকারীদের একটা। ভারতীয় চিন্তাবিদদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করার পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা রাও ‘দ্যা হিন্দু’ পত্রিকার সাথে সাক্ষাতে বলেন যে, এসময় ভারতের উচিৎ কৌশলগত সহযোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারস্পরিক স্বার্থের জোরালো সমন্বয় করা। একইসাথে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আসিয়ানের সাথেও সম্পর্ক গভীর করা। কিন্তু ভারতের প্রতিবেশীদের ব্যাপারে তিনি কোন কথাই বলেননি। অর্থনৈতিক দৈন্যতা, সামাজিক অস্থিরতা, জাতিগত ও ধর্মীয় অসন্তোষের মাঝে করোনা দুর্যোগে ভারত যখন নাকাল, তখনই শুরু হলো এই সীমান্ত সংঘাত। ভারতের জন্যে ভৌগোলিক সীমানাগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭এ জন্মের পর থেকেই নিজস্ব ভৌগোলিক অখন্ডতা ভারতকে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগাচ্ছে। একারণেই স্থলসীমানাবেষ্টিত ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সাথে সম্পর্কের স্থিতাবস্থা ভারতের জন্যে এতটা গুরুত্বপূর্ণ। লাদাখের সীমান্ত বিরোধ ভারতকে এমন এক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার মাঝে ফেলেছে, যেখানে বহুদূরের মার্কিন সহায়তা পেলেও নিজস্ব স্থলসীমানায় অবস্থিত চারটা দেশ চীন, পাকিস্তান, নেপাল এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে নিশ্চিত নয় ভারত, যা কিনা দেশটার জন্মের পর থেকে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ।

29 comments:

  1. Enter your comment...দুূদান্ত বলেছেন সময় এসেছে পালা বদলের। আব্রাহাম লিংকনের কথা মনে করে দিচ্ছে যে মানুষকে সারা জীবন বোকা বানিয়ে রাখা য়ায় না

    ReplyDelete
  2. বাংলাদেশেেের জন্য শুল্ক ছাড় কতটা সুূদূরপ্রসাসি হবে

    ReplyDelete
    Replies
    1. চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্যে শুল্ক ছাড় একটা মূলার মতো। তারা মনে করছে যে এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের সমর্থন কিনে ফেলবে। আপাততঃ বাংলাদেশের সাথে চীনের কাছাকাছি সম্পর্ক দেখে চীন মনে করতেই পারে যে তাদের কৌশল কাজ করেছে। কিন্তু তারা হয়তো বুঝে উঠতে পারছে না যে, বাংলাদেশের জন্যে এটা যতটা না অর্থনৈতিক, তার চাইতে বেশি কূটনৈতিক ব্যাপার।

      ভারত বাংলাদেশের জন্যে একটা ভৌগোলিক বাস্তবতা। বাংলাদেশ চাইলেই ভারত থেকে দূরে চলে যেতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে একটা ভৌগোলিক স্থলভাগ ভেঙ্গেই ভারত এবং বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছিল ব্রিটিশরা। এই বাস্তবতায় হয় বাংলাদেশকে ভারত নিজের প্রভাবে রাখতে চাইবে; নতুন বাংলাদেশ চাইবে ভারতের গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা বাংলাদেশের প্রভাব বলয়ে থাকুক (যা কিনা ব্রিটিশ সময়ের আগে ছিল)। চীনের সাথে বাণিজ্য বা অন্যান্য চুক্তিগুলি মূলতঃ বাণিজ্য; ভারত এখানে বাধা দেয়ার কেউ নয়। ম্যাটেরিয়াল আদানপ্রদানে বাংলাদেশের চীনকে দরকার। অন্যদিকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটা রাজনৈতিক; যা সবসময়ই প্রথমতঃ ছিল রাজনৈতিক। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য ধরনের সম্পর্কগুলি রাজনৈতিক সম্পর্কেরই বহিঃপ্রকাশ। একারণেই বাংলাদেশ চীনের সাথে অর্থনৈতিক চুক্তি করলেও ভারত এটাকে রাজনীতির অংশ হিসেবে দেখেছে। বাংলাদেশও এটাকে রাজনীতির অংশ হিসেবেই দেখেছে।

      ভারতে বাংলাদেশের স্বার্থ বহুমুখী; চীন এটা বুঝবে না; বুঝতে চাইবে না। তারা মনে করতে চাইবে যে বাংলাদেশকে চীনের প্রভাব বলয়ে থাকাটা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশ আর ভারতের রাজনৈতিক সম্পর্কের মাঝে চীনের অবস্থান কোন অবস্থাতেই চীনের রাজনৈতিক আকাংক্ষার অংশ যে হবে না, সেটা বুঝতে পারাটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ।

      Delete
    2. আপনি লিখেছেন 'ভারতে বাংলাদেশের স্বার্থ বহুমুখী' একটু ব্যাখ্যা করে বলুন যাতে বুঝতে পারি।ধন্যবাদ

      Delete
    3. পাশাপাশি দু'টা দেশের মাঝে বেশ জটিল সম্পর্ক থাকে। উদাহরণস্বরূপ, চীন এবং উত্তর কোরিয়ার মাঝে সম্পর্ক, নেপাল ও ভূটানের সাথে ভারতের সম্পর্ক, তুরস্কের সাথে ইরানের সম্পর্ক, আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক, চীনের সাথে মিয়ানমারের সম্পর্ক, ইথিওপিয়ার সাথে সুদানের সম্পর্ক, ইত্যাদি। এই সম্পর্কগুলির মাঝে কোনটাই যুদ্ধের সম্পর্ক নয়, তবে যথেষ্ট দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।

      বাংলাদেশের সাথে ভারতের বহুমুখী সম্পর্ক ঠিক সেরকমই; যুদ্ধ নেই, তবে দ্বন্দ্ব আছে যথেষ্ট। বাংলাদেশের সবগুলি নদীর উতপত্তি ভারতে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যও যথেষ্ট। নেপাল ও ভূটানের সাথে বাণিজ্যের জন্যে ভারতের ট্রানজিট দরকার। বাংলাদেশের বহু মুসলিমদের সাথে ভারতের মুসলিমদের এবং বাংলাদেশের বহু সনাতন ধর্মীদের ভারতের বহু সনাতন ধর্মীদের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে, যা ১৯৪৭এর কৃত্রিম বাউন্ডারি মুছে ফেলতে পারেনি। বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ ধর্মীয়, স্বাস্থ্যগত এবং পর্যটনের কারণে ভারত ভ্রমণ করে। এবং ভারতেও অনেকেই এদের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ সর্বদাই খেয়াল রাখে যে, ভারতে কোন দাঙ্গা-কোলাহল হয় কিনা; কারণে সেটা সীমানা পার করে এদিকে চলে আসার ভয় থাকে। ঠিক একারণেই বাংলাদেশ সর্বদাই ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দিকে খেয়াল রাখে। এরূপ সম্পর্ক জটিল এবং বহুমুখী। পাকিস্তান এবং ভারত এরূপ সম্পর্ককে ছাপিয়ে গেছে যুদ্ধের মাধ্যমে। ফলশ্রুতিতে উভয় দেশই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ডেভেলপ করেছে।

      Delete
  3. নেদারল্যান্ডসে মহাত্মা গান্ধীর মূতি সরানো দ্বারা কি বোঝা যাচ্ছেন

    ReplyDelete
    Replies
    1. আগে প্রশ্ন করুন নেদারল্যান্ডসে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি কি করছিলো

      Delete
  4. আমি অতটা জানি না। জর্জ ফয়েড মৃত্যুর পরে যে আন্দোলন হয় এ নিয়ে পত্রিকায় আসে যে মহাত্মাগান্ধী চার্চিল ইত্যাদি নেতার মূর্তি ভেঙে বা সরিয়ে ফেলতে বলা হয়।আমি দুঃখিত ঠিক মতো প্রশ্ন না করতে পারার কারনে। আমার প্রশ্ন হলো মহাত্মা গান্ধীকে আমরা ভালো মানুষ হিসেবে জানি। তাহলে তার মূতিই কেন। উপমহাদেশের বাস্তবতায় জানতে চাই

    ReplyDelete
    Replies
    1. মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি নেদারল্যান্ডসে রাখা হয়েছিল গান্ধী ভারতীয় বলে নয়; বরং তার এমন কিছু চিন্তার জন্যে, যা নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলিতে সমাদৃত ছিল। ১৯৪৭ সালে সেকুলার ভারতের জন্মের সাথে গান্ধীর সেকুলার চিন্তার একাত্মতা রয়েছে। আর গান্ধীর সেকুলার চিন্তাটা পশ্চিমা সেকুলার চিন্তার সাথে একাত্ম থাকার কারণেই পশ্চিমারা গান্ধীকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বলে দেখেছে; মুভি তৈরি করে অস্কারও দিয়েছে; এবং তার মূর্তি তৈরি করে ডিস্প্লেতে রেখেছে।

      ভারতের জন্ম হবার পরপরই গান্ধীকে হত্যা করা হয়। আর কংগ্রেসের মাঝেই ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, যিনি গান্ধীর খুনে সহায়তা দিয়েছিলেন। এধরণের উগ্রপন্থীরাও সেকুলার কংগ্রেসের মাঝে ছিল। আর এদের উত্তরসুরীরাই এখন ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সরকার গঠন করেছে। এরা ভারতেও গান্ধীর মূর্তি ভেঙ্গেছে; আর নতুন করে তৈরি করেছে বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি।

      সেকুলার চিন্তার অধীনে যে ধর্মীয়, জাতিগত এবং বিশ্বাসগত স্বাধীনতার কথা বলা হয়, এই মূর্তি ভাঙ্গাভাঙ্গির ঘটনাগুলি এই স্বাধীনতারই ফলাফল। মানুষের উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা করতে কোন বাধা সেকুলার ব্যাবস্থায় নেই। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারীরাও ফেইসবুকে উগ্রপন্থী কথাবার্তা বলার পরেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। অন্যদিকে দাস ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরকে বিখ্যাত করা হয়েছে। শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে থিওরি দেওয়া ডারউইনকে মানুষের জন্মদাতা বানিয়ে দেয়া হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের দুর্ভিক্ষের সময়ে চুপ করে থাকতে বলা অর্থনীতিবিদদের লেখা বইই সারা দুনিয়ায় পড়ানো হয়েছে। চীনে আফিম বিক্রির অধিকার নিয়ে যুদ্ধ করা ব্রিটিশদেরকে দেয়া হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেষ্ঠত্ব। উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। আরও অনেক মূর্তি রয়ে গেছে। সেকুলার দুনিয়া ভেঙ্গে পড়ার সাথে সাথে সেই দুনিয়ার মূর্তিগুলিও একে একে ভেঙ্গে পড়বে। একে অপরের তৈরি করা মূর্তি ভেঙ্গে ফেলবে।

      Delete
    2. ধন্যবাদ। একজন ছাত্রের কৌশল মেটানোর জন্য

      Delete
  5. গোয়া ও হায়দারাবাদ ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাই। ভারত কোন বাস্তবতায় তা দখল করেছিল। উপমহাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব। বাস্তবসম্মত কোনো ইতিহাস পাইনি

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভারত জন্মের পর থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে। এই নিরাপত্তাহীনতা এসেছে তার কৃত্রিম বাউন্ডারির ব্যাপারে অনিশ্চয়তা থেকে। একারণেই ভারত জন্মের পর থেকেই আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সে সর্বদাই মনে করেছে যে, তার প্রতিবেশী দেশগুলিকে সুযোগ দিলে তারা হয়তো তার কৃত্রিম বাউন্ডারির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত ভৌগোলিক অখন্ডতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। হায়দ্রাবাদ ছিল ভারতের পেটের ভিতর; বাংলাদেশ এবং গোয়ার ব্যাপারও তা-ই। তার পেটের ভিতর ভিন্ন একটা রাষ্ট্রকে সে সবসময়ই 'রোগ-জীবাণু' হিসেবে দেখেছে; তাই সেগুলিকে সে ঝামেলা হবার আগেই মেরে ফেলতে চেয়েছে। হায়দ্রাবাদ আর গোয়ার ক্ষেত্রে সফল হলেও এটা সে বুঝতে প্রেছে যে, বাংলাদেশকে খেয়ে ফেলার বাস্তবতা বিশ্বভূরাজনীতির বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুপারপাওয়াররা ভারতকে গোয়া এবং হায়দ্রাবাদ খেয়ে ফেলার অনুমোদন দিলেও বাংলাদেশের উপর শুধু প্রভাব বিস্তারের অনুমোদন দিলেছে; গিলে ফেলার অনুমোদন দেয়নি। ফলাফল - ১৯৭০এর দশকে এবং ১৯৮০এর দশকের শুরুতে দ্রুত বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এমন একটা আকার ধারণ করলো যে, তা একবারে গিলে ফেলাটা ভারতের জন্যে অবাস্তব হয়ে গেলো।

      এর পরবর্তী ইতিহাস আরও পরিবর্তন হয়েছে বিশ্বভূরাজনীতির সাথেসাথে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আকার এমন এক অবস্থানে পৌঁছেছে, যা তার নিজস্ব সামরিক ও কূটনৈতিক সক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইন্ধন যুগিয়েছে। আর এর সর্বশেষ ফলাফল এখন দেখা যাচ্ছে, যা কিনা ভারতীয় চিন্তাবিদদের পথে বসিয়ে দেবার উপক্রম করেছে। এই সবকিছুই বিশ্বভূরাজনীতির বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত। বিশ্বভূরাজনীতি অনুমোদন না দিকে বাংলাদেশ কিছুই করতে পারতো না; আর বিশ্বভূরাজনীতি অনুমোদন দেয়নি বলেই ভারত এখন এমন দৈন্যদশা পার করছে।

      Delete
  6. সেকুলার দুনিয়া কি আসলেই ভাঙ্গবে

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা এখন আর কোন থিওরি নয়। একটা জীবন ব্যবস্থা যখন মানুষের মৌলিক চাহিতা পূরণে অক্ষমতা দেখাতে থাকে, এবং মানুষের সকল সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিতে থাকে, তখন মানুষ সেই ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাতে থাকে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং অন্যান্য অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা এই অনাস্থারই ফসল। মানুষ বিশ্বব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত জিনিসগুলিকে ভেঙ্গে ফেলতে থাকবে - এই কথাগুলি মাত্র কয়েক বছর আগেও কেউ চিন্তা করতে পারেনি; কিন্তু আজকে মানুষ সেগুলি টেলিভিশনে দেখতে পাচ্ছে।

      Delete
  7. Enter your comment...নেপালের ভারতের বিপক্ষে যাওয়া তাদের কতটা ভালো হবে। পাকিস্তান কি ভূমিকা নেবে। চীন ভারত উওেজোনার শেষ পরিনতি কি হবে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। যুদ্ধ হইতো হবে। ভারতের পারমানবিক অস্ত্র তাকে কি সুবিধা দেয়। কেনইবা জাপান জার্মানির মতো রাষ্ট্র তা বানাতে পারলো না। কিন্তু আমেরিকা ভারত পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রকে তা বানাতে দিলো

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রশ্ন নির্দিষ্ট করে করলে উত্তর দেয়াটা সহজ হয়।

      Delete
  8. Enter your comment...
    গনতান্ত্রিক অবস্থা কি সবচেয়ে সঠিক?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভারতে হিন্দুত্ববাদী সরকার; যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত দাঙ্গা; ইউরোপে জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন বৃদ্ধি; বিশ্বব্যাপী উগ্রবাদী শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা বৃদ্ধি...... গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই তো এগুলি হয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন ইরাক এবং আফগানিস্তানকে ধ্বংস করেছে।

      Delete
  9. Enter your comment... ৭০ ও ৮০ দশকে কি ভাবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আবাস্তব আকার ধারন করল

    ReplyDelete
    Replies
    1. ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সকল জনগণের সমর্থন থাকার পরেও ভারত দেড় লাখের বেশি সেনা এখানে মোতায়েন করেছিল। ১৯৭০এর দশকের শেষে এবং ১৯৮০এর দশকের শুরুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কয়েকটা ডিভিশন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এর ফলে বাংলাদেশে ভারতের যেকোন সামরিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ লক্ষ সেনা মোতায়েন বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। কিন্তু ভারতের বাস্তবতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে অন্য সকল সীমানা ঠান্ডা রেখে ৩ থেকে ৪ লক্ষ সেনা বাংলাদেশে মোতায়েন করা সম্ভব নয়। তার উপর এই সেনারা বাংলাদেশ দখলে নেবার পর জনগণ যে তাদের সাথে বৈরি আচরণ করবে, তা নিশ্চিত। অর্থাৎ তাদেরকে লক্ষ লক্ষ গেরিলার হামলার শিকার হতে হবে।

      ফলাফল - বাংলাদেশকে সরাসরি সামরিক নিয়ন্ত্রণে আনার চিন্তাটা ভারতের জন্যে অবাস্তব হয়ে গেলো।

      Delete
  10. Enter your comment...রাশিয়ার ভূমিকার কারনে যে ভারত চীন সমঝোতা হতে চলেছে কিছু পত্রিকার এমন দাবী কতটা বাস্তব। সত্যি হলেও ভূরাজনীতিতে এর ভূৃমিকা কত?

    ReplyDelete
    Replies
    1. শি জিনপিং কি ভ্লাদিমির পুতিনকে তার নিজের আদর্শিক গুরু হিসেবে মেনে নিয়েছেন? যারা রাশিয়ার কারণে এটা হয়েছে বলছেন, তারা হয়তো এটাই বোঝাতে চাইছেন।

      Delete
  11. Enter your comment...আনন্দ বাজার পত্রিকা লিখেছে যে চীন ভারতের মাঝে আমেরিকা কে আনা বিপদজনক? এ কথা দ্বারে কি বোঝা যাচ্ছে

    ReplyDelete
    Replies
    1. এর অর্থ হচ্ছে, ভারতের যুক্তরাষ্ট্র-ঘেঁষা নীতি ভারতে সকলে সমর্থন করছে না। বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল দিল্লীর পররাষ্ট্রনীতিকে সমর্থন করছে না। অথচ ভারতের সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতি দিল্লীর নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা; রাজ্যগুলির পররাষ্ট্র বিষয়ে নিজস্ব মত থাকার কথা নয়। সীমান্ত ইস্যুতে ভারতের পরাজয়ের পর ভারতের রাজ্যগুলি এখন দিল্লীর পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কথা বলা শুরু করলে বুঝতে হবে যে, রাজ্যগুলি এখন ভারতের ফেডারেল রাষ্ট্রের কনসেপ্টের উপর আস্থা হারাচ্ছে। এটা ভারতের ভৌগোলিক অখন্ডতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

      Delete
  12. শেষের মন্তব্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ,তবে যেটা মনে হচ্ছে চীন একটু এগিয়ে এসে তার বেল্ট রুটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে,যার কাশ্মিরের পুরু কন্ট্রোল প্রতিষ্টা হলে আর পাস গুলোতে ইন্ডিয়ার কতৃত্ব প্রতিষ্টা হলে চায়নার বেল্ট রুট হুমকিতে পরবে। আমেরিকার প্রক্সি হিসেবে ইন্ডিয়ার এডভান্সমমেন্ট,চায়না তার এই ব্লক কখনো সরাবেনা মনে হচ্ছে!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. you probably missed this writing.... https://koushol.blogspot.com/2020/06/Future-india-china-border-tension.html

      Delete
  13. নেপালের কি হতে পারে ??? নেপাল তো দুর্বল

    ReplyDelete
  14. আসসালামু আলাইকুম।FE policy পলিসি আমেরিকা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া,ফিলিপাইন, অস্ট্রেলীয়া,জাপানকে ব্যাবহার করছে আমেরিকা। চায়না নিজের কোহরট থেকে বের হয়ে আসছে কোন আদর্শিক দৃষ্টিকোণ ছাড়া।ব্রিটেন এতদিন চুপ থাকলেও সে এখন আন্তর্জাতিক ইসুতে সরাসরি অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছে।স্পেসিফিক ইন্টারনেশনাল জিও পলিটিক্সএর ভর কেন্দ্র হয়ে উঠছে,সাউথ-পুর্ব এশিয়া।এই বিষয় নিয়ে একটা বিস্তারিত আরটিকেল আশা করছি ভাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওয়াআলাইকুমসালাম!

      এক লেখায় এতগুলি ঘটনা তুলে ধরতে গেলে সেটা হয় অনেক বড় হয়ে যাবে, অথবা অনেক বেশি ছোট হয়ে যাবে। আমার তৃতীয় বই 'যুক্তরাষ্ট্রের পর...' এই ব্যাপারটাকে নিয়েই। পুরো এক বছরের ভূরাজনীতি বিষয়ক লেখার সমন্বয় সেটা। সুতরাং, একটা ধারণা নিশ্চয়ই করতে পারছেন যে, ব্যাপারটা কতটা ব্যপ্তির। আর এরকম একটা বিষয় ধরতে গেলে পুরো বিশ্বের ভূরাজনীতিই আলোচনা করতে হবে।

      এবছরের লেখা নিয়ে আরেকটা পাবলিকেশন সম্ভব কিনা, তা এই মুহুর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আপাততঃ একটু কষ্ট করে ২০২০ সালের লেখাগুলি এই ব্লগ থেকে পড়লে একটা ধারণা পাবেন। আগের বছরগুলিতে অনেক লেখাই এই ব্লগে পাবলিশ করা হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ের অনেক লেখাই এখানে পাবেন।

      ধন্যবাদ।

      Delete