Thursday 18 June 2020

ককেশাসে বাড়ছে ভূরাজনৈতিক তাপমাত্রা

১৮ই জুন ২০২০

২০১৭ সালে তুরস্ক এবং আজেরবাইজানের সেনাবাহিনীর মাঝে যৌথ মহড়া। ২০১০ সালে দুই দেশের মাঝে কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার অধীনে এক দেশ বাইরের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে অপর দেশ তাকে সকল ধরনের সহায়তা দেবে। নিয়মিত বিরতিতে দুই দেশের মাঝে চলছে সামরিক মহড়া। এই মহড়াগুলি আজেরবাইজানকে নাগোর্নো কারাবাখে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করছে।


গত ২রা মে আজেরবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে একটা ভিডিওতে দেখানো হয় যে, আজেরবাইজানের নাখচিভান ছিটমহলে বেশকিছু অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করা হয়েছে। তুর্কি থিংকট্যাঙ্ক ‘ইডিএএম’এর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক জান কাসাপোগলু বলছেন যে, এই ভিডিওতে তুরস্কে নির্মিত ‘টিআরজি-৩০০ কাপলান’ ৩০০ মিঃমিঃ রকেট আর্টিলারি বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। এর নির্মাতা কোম্পানি ‘রকেটসান’ বলছে যে, এই রকেটের পাল্লা ১’শ ২০ কিঃমিঃ এবং এর সক্ষমতা রয়েছে এর ১’শ ৫ কেজি ওয়ারহেডকে টার্গেটের ১০ মিটারের মাঝে ফেলার। এই রকেটগুলি সৈন্যদের ব্যারাক, কমান্ড সেন্টার, রাডার, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ধ্বংসে বিশেষভাবে কার্যকর। কাসাপোগলু মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, গত ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার ইদলিবের যুদ্ধে তুর্কি সেনাবাহিনী এই রকেটগুলিকে ব্যবহার করেছিল। নাখচিভান ছিটমহলে এই রকেট মোতায়েন করার ফলে অত্র অঞ্চলের সামরিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এসেছে। আজেরবাইজানের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র আর্মেনিয়ার সাথে বিরোধপূর্ণ নাগোর্নো কারাবাখ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে তুমুল বিরোধ রয়েছে। ১৯৯০এর দশক থেকে চলা একরকম যুদ্ধাবস্থাতে বর্তমানে অস্ত্রবিরতি থাকলেও এই স্থিতাবস্থা কতদিন এভাবে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। কাসাপোগলু বলছেন যে, নাখচিভান ছিটমহলে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আজেরবাইজান এখন নাগোর্নো কারাবাখে আর্মেনিয় সেনাদের সাপ্লাই লাইনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারবে।

সাম্প্রতিক সময়ে আজেরবাইজান সামরিক খাতে ব্যাপক ব্যয় করেছে। একইসাথে তুরস্কের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের মাঝে দুই দেশ যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে; যার মাধ্যমে আজেরবাইজানের যুদ্ধ করার সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তুর্কি মিডিয়া ‘ইয়েনি সাফাক’ গত বছর মে মাসে আজেরবাইজানের রাজধানী বাকুর কাছকাছি ‘মুস্তফা কেমাল আতাতুর্ক ২০১৯’ নামের এক সামরিক মহড়ার খবর দেয়। এই মহড়ায় ট্যাঙ্ক, আর্মার্ড ভেহিকল এবং আর্টিলারির সমন্বয়ে গঠিত আজেরবাইজানের সেনাবাহিনীর মেকানাইজড ফর্মেশনগুলি বড় আকারের আক্রমণাত্মক কৌশলের মহড়ার দেয়। এই মহড়াগুলি আজেরবাইজানকে নাগোর্নো কারাবাখে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করছে।

আজেরবাইজান এবং আর্মেনিয়ার উদ্ভট বাউন্ডারি। সোভিয়েতরাই বর্তমান ককেশাসের বাউন্ডারিগুলি এঁকেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় থেকেই এই সীমানা নিয়ে আর্মেনিয় এবং আজেরিদের মাঝে শুরু হয় জাতিগত সংঘাত। আর্মেনিয়ার নেতৃত্বের সাথে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের সম্পর্ক খুবই গভীর। তৃতীয় শতাব্দী থেকেই আর্মেনিয়া একটা ইস্টার্ন অর্থোডক্স খ্রিষ্টান রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। তাই ধর্মীয় বিষয়গুলি কখনোই আর্মেনিয়ার রাজনীতির বাইরে ছিল না।




আজেরবাইজান ও আর্মেনিয়ার সংঘাতের ঐতিহাসিক পটভূমি

আর্মেনিয়া ককেশাসের অংশ। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে আর্মেনিয়ার মানুষ খ্রিষ্ঠান হওয়া শুরু করে। সেই সময় থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বাইজ্যান্টাইন সাম্রাজ্য এবং পারসিক সাম্র্যাজ্যের মাঝে আর্মেনিয়া নামে একটা খ্রিষ্ঠান রাজ্য তার উপস্থিতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তবে ৮ম শতাব্দীর মাঝামাঝি আর্মেনিয়াসহ পুরো ককেশাস ইসলামের অধীনে চলে যায়। ত্রয়োদশ শতকে মোঙ্গল আক্রমণের পর থেকে এই অঞ্চলের ধরণ পাল্টে যায়। তুর্কিরা এখানকার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি ইস্তাম্বুলে উসমানি খিলাফতের আবির্ভাবের পর থেকে ককেশাস অঞ্চল পারস্য এবং উসমানিদের মাঝে প্রতিযোগিতার বস্তু হয়ে যায়। এরপর অষ্টাদশ শতকে রুশদের আবির্ভাবের পর অত্র অঞ্চলে ত্রিমুখী প্রভাবের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। তবে বিংশ শতকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তৈরির পর ককেশাস অঞ্চল পুরোটাই সোভিয়েত শক্তির পদানত হয়। সোভিয়েতরাই বর্তমান ককেশাসের বাউন্ডারিগুলি এঁকেছিল। সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্টালিন আর্মেনিয়া এবং আজেরবাইজানের সীমানা এঁকে দেন; যেখানে নাগোর্নো কারাবাখ অঞ্চলকে আজেরবাইজানের মাঝে রাখা হয়। আর্মেনিয়রা এটা পছন্দ করেনি; তারা চেয়েছিল যে, খ্রিষ্টান অধ্যুষিত নাগোর্নো কারাবাখ আর্মেনিয়ার অধীন হোক; মুসলিম অধ্যুষিত আজেরবাইজানের অধীন নয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় থেকেই এই সীমানা নিয়ে আর্মেনিয় এবং আজেরিদের মাঝে শুরু হয় জাতিগত সংঘাত। আর ১৯৯০এর শুরুতে তা রূপ নেয় পুরোপুরি যুদ্ধে। সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকার কারণে আর্মেনিয়রা বেশ শক্তিশালী একটা সেনাবাহিনী গঠন করতে পারে; যা কিনা আজেরিরা পারেনি। তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও আর্মেনিয়া তার সামরিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নাগোর্নো কারাবাখকে আজেরিদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হবার পর থেকে এখানে থেকে থেকে সংঘাত চলছে। আর্মেনিয়ার নেতৃত্বের সাথে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের সম্পর্ক খুবই গভীর। তৃতীয় শতাব্দী থেকেই আর্মেনিয়া একটা ইস্টার্ন অর্থোডক্স খ্রিষ্টান রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। তাই ধর্মীয় বিষয়গুলি কখনোই আর্মেনিয়ার রাজনীতির বাইরে ছিল না।

আজেরবাইজানের বাকুর তেলখনিগুলি থেকে কয়েকটা তেলের পাইপলাইন বের হলেও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো তুরস্কের মাঝ দিয়ে ভূমধ্যসাগরের চেইহান বন্দর পর্যন্ত যাওয়া পাইপলাইন। এই পাইলাইনের মাধ্যমে তেল বিক্রির অর্থ ব্যবহার করেই আজেরিরা তাদের সামরিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে থাকে। রাশিয়া আর আর্মেনিয়াকে বাইপাস করে জর্জিয়ার মাঝ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই পাইপলাইন। ২০০৮ সালে জর্জিয়াতে রুশ সামরিক হস্তক্ষেপের পর এই পাইপলাইন করিডোর হুমকির মাঝে পড়েছে।



বাকুর তেলের ভূরাজনীতি

ঊনিশ শতকের শেষের দিকে আজেরবাইজানের বাকু তেলখনি থেকে তেল উত্তোলন শুরু করে রুশরা। বিংশ শতকের শুরুতে সারা বিশ্বের মোট তেল বাণিজ্যের অর্ধেক আসতো বাকু থেকে। ১৯১৮ সালে উসমানি খিলাফত ধ্বংসের কাছাকাছি সময়ে উসমানি সেনারা আজেরিদেরকে সাথে নিয়ে বাকুর নিয়ন্ত্রণ নেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানি খিলাফত ধ্বংস করে ব্রিটিশরা এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। কিন্তু ১৯২০ সালের এপ্রিলে সোভিয়েত সৈন্যরা বাকুর দখল নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাকুর তেলখনিগুলি জার্মানদের বিরুদ্ধে সোভিয়েত বিজয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বাকুর তেল পশ্চিমা দেশগুলিতে রপ্তানি করার পিছনে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ শুরু হয়। ১৯৯৭ সালে রুশ বিনিয়োগে বাকু থেকে রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরের বন্দর নভোরোসিস্ক পর্যন্ত তেলের পাইপলাইন চালু হয়। ১ লক্ষ ব্যারেল সক্ষমতার এই পাইপলাইনের চাইতে আরও বেশি সক্ষমতার আরেকটা পাইপলাইন তৈরি করা হয় রাশিয়াকে বাইপাস করে বাকু থেকে জর্জিয়ার সুপসা বন্দর পর্যন্ত। ১৯৯৯ সালে চালু হওয়া এই পাইপলাইনের সক্ষমতা হলো ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ব্যারেল। তবে এই দুই পাইপলাইনের চাইতে আরও অনেক বড় এক প্রকল্প গ্রহণ করা হয় আরও আগেই। ১৯৯৩ সালে রাশিয়াকে বাইপাস করে আজেরবাইজানের বাকু তেলখনি থেকে তেল তুরস্কের ভূমধ্যসাগরের চেইহান বন্দরে খালাস করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। রাশিয়া এবং আর্মেনিয়াকে এক্ষেত্রে বাইপাস করে জর্জিয়াকে বেছে নেয়া হয়। তবে ২০০৩ সালের আগে এই পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়নি। ২০০৬ সালের মে মাসে ১২ লক্ষ ব্যারেল সক্ষমতার এই পাইপলাইন পুরোপুরি চালু হয়। মার্কিন ‘এনার্জি ইনফর্মেশন এডমিনিস্ট্রেশন’র হিসেবে ২০০৪ সালে যেখানে আজেরবাইজানের তেলের উৎপাদন ছিল দৈনিক প্রায় ৩ লক্ষ ব্যারেল, তা ২০০৭ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ৭ লক্ষ ব্যারেলের বেশি। এই পাইপলাইন চালুর মাধ্যমে বাকুর তেলখনিগুলির উপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমে যায়। তেল বিক্রির অর্থের উপর ভর করে আজেরবাইজানের জিডিপি বিশ্বব্যাঙ্কের হিসেবে ২০০৪ সালে ৯ বিলিয়ন ডলার থেকে লাফ দিয়ে ২০১৪ সালে ৭৫ বিলিয়ন ডলার হয়ে যায়। অর্থাৎ মাত্র দশ বছরে জিডিপি ৮ গুণ বেড়ে যায়! তবে তেলের বাজারে ব্যাপক দরপতনের পর দেশটার জিডিপি ৪৮ বিলিয়নে নেমে আসে। তেল বিক্রির এই অর্থ আজেরবাইজানের সামরিক সক্ষমতাকে পুরোপুরি পাল্টে দেয়। জর্জিয়ার অর্থনীতিও একই সময়ে ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার হয়ে যায়। আর আর্মেনিয়ার অর্থনীতি সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে হয়ে যায় ১২ বিলিয়ন ডলার।

নাগোর্নো কারাবাখকে ঘিরে আর্মেনিয়ার সাথে আজেরবাইজানের যুদ্ধের কারণে বাকু থেকে তেলের পাইপলাইনগুলি খোলা সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছানোটা হয়ে গিয়েছিল কঠিন। এক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগের কাজ করে জর্জিয়া। ২০০৩ সালে জর্জিয়াতে পশ্চিমাদের সমর্থিত ‘রোজ রেভোলিউশন’এর মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট মিখাইল শালিকাশভিলি পশ্চিমাদের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। তবে একইসাথে রাশিয়ার সাথে জর্জিয়ার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। জর্জিয়ার মাঝ দিয়ে যাবার কারণে বাকু থেকে আসা পাইপলাইনগুলিকে নাগোর্নো কারাবাখের সংঘাত স্পর্শ করতে পারেনি। তবে এই প্রকল্পগুলিকে রাশিয়া নিজ অঞ্চলে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখেছে। ২০০৮ সালের অগাস্টে মাত্র ৩৭ লক্ষ জনসংখ্যার জর্জিয়া রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যায়। জর্জিয়ার ভেতরে আবখাজিয়া এবং সাউথ অসেটিয়া অঞ্চলকে রাশিয়া সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে জর্জিয়া থেকে আলাদা করে ফেলে এবং এদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেসময় আজেরবাইজানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলে যে, তারা জর্জিয়ার অখন্ডতায় বিশ্বাসী। ২০০৮ সালে রাশিয়ার জর্জিয়া অভিযান নাগোর্নো কারাবাখ নিয়ে আজেরবাইজানের নিরাপত্তাহীনতাকে জাগিয়ে তুলে। ২০১০ সালের অগাস্টে আজেরবাইজান তুরস্কের সাথে দশ বছর মেয়াদী ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ এন্ড মিউচুয়াল সাপোর্ট’ নামের এক চুক্তি করে; যার অধীনে এক দেশ বাইরের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে অপর দেশ তাকে সকল ধরনের সহায়তা দেবে। ২০২০ সালের অগাস্টে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবার কথা রয়েছে।

২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে চার দিনের যুদ্ধের মাঝে নাগোর্নো কারাবাখের আকাশে ইস্রাইল নির্মিত ‘হারোপ’ লোইটারিং সুইসাইড ড্রোন। এই যুদ্ধ তুরস্ক এবং ইস্রাইলকে ককেশাসে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। আজেরবাইজানের জন্যে এই দুই দেশের সমর্থন অত্র এলাকার সামরিক ব্যালান্সকে যে পরিবর্তন করে দিয়েছে, তা এই যুদ্ধের মাঝেই বোঝা গিয়েছে। ভবিষ্যতের যেকোন সংঘাতেও এই দুই দেশের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে, তা নিশ্চিত।



২০১৬ সালের এপ্রিলের ‘চার দিনের যুদ্ধ’

২০১৬ সালের এপ্রিলে নাগোর্নো কারাবাখের সীমান্তে আজেরিদের সাথে আর্মেনিয়দের ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। মোটামুটি ৪ দিনের জন্যে দুই দেশের মাঝে যুদ্ধাবস্তা বিরাজ করে। উভয় পক্ষেই হতাহতের পরষ্পবিরোধী দাবি তোলা হয়। ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’এর এক বিশ্লেষণে বলা হয় যে, আজেরবাইজান এই যুদ্ধে ক্ষুদ্র, কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকা দখল করে নেয়। ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘চ্যাটহ্যাম হাউজ’এর ফেলো জাউর শিরিইয়েভ বলেন যে, এই যুদ্ধের মাধ্যমে আজেরবাইজান এতদিনের স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে তা বাকি বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে। এই যুদ্ধের সময় তুরস্ক আজেরবাইজানের সাথে থাকার ঘোষণা দিলে রাশিয়া তুরস্ককে সতর্ক করে বলে যে, তুরস্কের উচিৎ এই সংঘর্ষে শুধু একপক্ষকে সমর্থন না করা। একইসাথে রুশরা বলে যে, তুরস্কের উচিৎ তার আশেপাশের দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন না দেয়া। এখানে উল্লেখ্য যে, রাশিয়া সিরিয়াতে বাশার আল-আসাদের সরকারের বিরোধী গ্রুপগুলিকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। ঐতিহ্যগতভাবেই রুশরা ককেশাস অঞ্চলকে তাদের প্রভাবের এলাকা হিসেবেই দেখে থাকে। ২০১৬ সালের এপ্রিলের যুদ্ধ তুরস্ক এবং ইস্রাইলকে ককেশাসে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। আজেরবাইজানের জন্যে এই দুই দেশের সমর্থন অত্র এলাকার সামরিক ব্যালান্সকে যে পরিবর্তন করে দিয়েছে, তা এই যুদ্ধের মাঝেই বোঝা গিয়েছে। ভবিষ্যতের যেকোন সংঘাতেও এই দুই দেশের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে, তা নিশ্চিত। ‘ফরেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট’এর ক্রিস্টিন ফিলিপ ব্লুমায়ের মতামত দেন যে, ২০১৬ সালের যুদ্ধের সময় রুশ কর্মকর্তাদের কথাবর্তা বলে দিয়েছিল যে, রুশরা আর্মেনিয়ার পক্ষে যুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না। তবে ব্লুমায়েরের সেই মন্তব্যের পর আরও চার বছর পেরিয়ে গেছে। আর ভূরাজনৈতিকভাবে রাশিয়া এবং তুরস্কের সম্পর্কেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আবারও যদি আজেরবাইজানের সাথে আর্মেনিয়ার সংঘাত শুরু হয়, তবে সেখানে রাশিয়া চুপচাপ বসে থাকবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। আর যদি আর্মেনিয়রা যুদ্ধে হেরে যাবার অবস্থায় চলে যায়, তাহলেও কি রুশরা বসে থাকবে কিনা?

রুশ নেতৃত্বে ‘কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন’ বা ‘সিএসটিও’এর অধীনে থাকা ৬টা দেশের সাথে রাশিয়ার নিরাপত্তা সম্পর্ক অনেক গভীর। ১৯৯৪ সালে ৯টা দেশ এর মাঝে থাকলেও ১৯৯৯ সালে আজেরবাইজান এবং জর্জিয়া এই সংগঠন থেকে বের হয়ে যায়। ২০০৬ সালে ইউক্রেনও বের হয়ে যায় এখান থেকে। বর্তমানে রাশিয়া ছাড়াও আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তান এর সদস্য। আর্মেনিয়ার মিডিয়া ‘আজাতুতইয়ুন’ বলছে যে, ‘সিএসটিও’এর সদস্য হবার কারণে আর্মেনিয়া নামমাত্র মূল্যে বা বিনা পয়সায় রুশ অস্ত্র পায়।

২০১৬ সালে আর্মেনিয়ার সামরিক প্যারেডে রুশ নির্মিত ‘ইস্কান্দার’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আর্মেনিয়রা আজেরবাইজানের তেলের স্থাপনাগুলির উপর হামলা করতে সক্ষম হবে।



আর্মেনিয়ার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি কি যথেষ্ট?

মাত্র ৩০ লক্ষ জনসংখ্যার আর্মেনিয়ার জিডিপি ১৩ বিলিয়ন ডলার। বাইরের সহায়তা ছাড়া নিজের শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা আর্মেনিয়ার জন্যে যথেষ্টই কষ্টকর। আর্মেনিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী আজেরবাইজানের জনসংখ্যা ১ কোটি এবং এর জিডিপি প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার; যা আর্মেনিয়ার তিন গুণেরও বেশি। দুই দেশের জনসংখ্যা এবং অর্থনীতির আকারের এই পার্থক্য সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করাকে যথেষ্টই প্রভাবিত করেছে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’এর হিসেবে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীতে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার সেনা। ইউনিটগুলি বেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে; ১৬টা রাইফেল রেজিমেন্ট, ১টা আর্টিলারি ব্রিগেড, ১টা বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্রিগেড, ২টা বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রেজিমেন্ট, ১টা আর্টিলারি রেজিমেন্ট, ১টা এন্টি ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট, ৩টা ট্যাঙ্ক ব্যাটালিয়ন, ৪টা আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন, এবং আরও বেশকিছু ইউনিট। আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর সাথে একত্রে যুদ্ধ করছে নাগোর্নো কারাবাখে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া ‘আর্তসাখ রিপাবলিক’এর সেনাবাহিনী। এই বাহিনীতে রয়েছে আরও প্রায় ২৫ হাজার সেনা এবং প্রায় ৩০ হাজার রিজার্ভিস্ট। নিশ্চিত করা না গেলেও আর্তসাখের বাহিনীতে প্রায় ৩’শ ট্যাঙ্ক, ২’শ আর্মার্ড ভেহিকল এবং ৩’শ আর্টিলারি রয়েছে বলে দাবি করে আর্মেনিয়রা।

রাশিয়া নাগোর্নো কারাবাখের সংঘাতে উভয় পক্ষকেই অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ বা ‘সিপরি’র হিসেবে ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সালের মাঝে আর্মেনিয়া বেশকিছু অস্ত্র কিনেছে; যার মাঝে রাশিয়াই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী। এই অস্ত্রগুলির মাঝে রয়েছে,

১) ২০১৬ সালে রাশিয়ার সরবরাহকৃত ৪টা ‘ইস্কান্দার’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের লঞ্চার এবং ২৫টা ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা প্রায় ৪’শ থেকে ৫’শ কিঃমিঃ পর্যন্ত। বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, ‘ইস্কান্দার’ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আর্মেনিয়রা আজেরবাইজানের তেলের স্থাপনাগুলির উপর হামলা করতে সক্ষম হবে।

২) ২০১৭ সালের মাঝে রাশিয়ার সরবরাহকৃত ৬টা ‘বিএম-৯ এ৫২ স্মার্চ’ ৩০০মিঃমিঃ রকেট লঞ্চার। এগুলির পাল্লা প্রায় ৯০ কিঃমিঃ পর্যন্ত। ২০০৭ সালে বেলারুশ সরবরাহ করে ১০টা ১২২ মিঃমিঃএর ‘ডি-৩০’ কামান। ২০১০ সালে মন্টিনেগ্রো থেকেও একই মডেলের ১৬টা কামান আসে। ১৯৯৯ সালে চীন থেকে আসে ৪টা ‘ডব্লিউএম-৮০’ ২৭৩ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড রকেট লঞ্চার।

৩) ২০১০ সালের মাঝে সরবরাহকৃত ২টা ‘এস ৩০০’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ‘সিপরি’ বলছে যে, আর্মেনিয়ার কাছে সরবরাহকৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ‘৫ভি৫৫ইউ’ ভার্সনের, যেগুলির পাল্লা দেড়’শ কিঃমিঃ। এর সাথে কমপক্ষে ১’শ ৪৪টা ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে রাশিয়া। ২০১৭ সালের মাঝে রাশিয়ার সরবরাহকৃত ‘৯কে৩৩৩ ভার্বা’ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। কাঁধ থেকে ছোঁড়া স্বল্পপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা সাড়ে ৬ কিঃমিঃ। ২’শটা ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হয়। ২০১৩ সালের মাঝে রাশিয়া সরবরাহ করে ৫ কিঃমিঃ পাল্লার ২’শ ‘ইগলা এস’ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। ২০১৬ সালে আরও ২’শ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হয়। ২০১৯ সালে রুশরা সরবরাহ করে কমপক্ষে ২টা ‘টর এম১’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা এবং এর সাথে ৫০টা ‘৯এম৩৩৮’ ক্ষেপণাস্ত্র। ১২ কিঃমিঃ পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ট্যাঙ্ক চ্যাসিসের উপর বসানো। তবে আর্মেনিয়ার মিডিয়া ‘আজাতুতইয়ুন’ বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী নিকল পাশিনিয়ান তার ফেইসবুক পেইজে ২০১৭ সালের মে মাসেই এই ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ঘোষণা দেন।

৪) ২০১৭ সালে রাশিয়া সরবরাহ করে সাড়ে ৫ কিঃমিঃ পাল্লার ১’শটা ‘৯এম১৩৩ করনেট-ই’ ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। ‘করনেট’ রুশদের ডেভেলপ করা ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মাঝে সবচাইতে সক্ষমগুলির একটা।

৫) ২০১৯ সালে রুশরা সরবরাহ করা শুরু করে ‘সুখোই এসইউ-৩০এসএম’ ফাইটার বিমান। এই বিমানগুলি আর্মেনিয়ার বিমান বাহিনীকে আজেরবাইজানের বিমান বাহিনী থেকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেল।

৬) ২০০৪ সালে স্লোভাকিয়ার কাছ থেকে আর্মেনিয়া ১০টা রুশ নির্মিত ‘সুখোই এসইউ-২৫’ গ্রাউন্ড এটাক বিমান কেনে।

৭) ইউক্রেনের কাছ থেকে ২০০৪ সালে ২টা ‘এল-৩৯সি আলবাট্রস’ ট্রেনিং জেট বিমান কেনে। ২০১১ সালের মাঝে আরও ৪টা বিমান পায় আর্মেনিয়া।

৮) ২০১৯ সালে আর্মেনিয়া ১৫ কিঃমিঃ পাল্লার ৪টা ‘অসা’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনে। এর সাথে ছিল ১’শ ২০টা ‘৯এম৩৩’ ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলির উৎস নিশ্চিত হওয়া না গেলেও রাশিয়া থেকেই এগুলি এসেছে বলে বলছে ‘সিপরি’।

খেয়াল করলে বোঝা যাবে যে, আর্মেনিয়া তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাঝে বিমান প্রতিরক্ষাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ‘সুখোই-৩০’ বিমান এবং দূরপাল্লার ‘এস-৩০০’ বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে আর্মেনিয়া আকাশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। একইসাথে ২০১৬ সাল থেকে বিপুল সংখ্যক স্বল্প পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করে তারা। এছাড়াও দূরপাল্লার আর্টিলারি এবং এন্টি ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে ক্রয়কৃত আস্ত্রের মাঝে। এগুলি ছাড়াও আর্মেনিয়া রাশিয়া থেকে ‘ইনফাউনা’ ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার যন্ত্র কিনেছে, যা কিনা তারা ২০১৬ সালের জাতীয় দিবস প্যারেডে দেখায়। এই যন্ত্রের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের রেডিও যোগাযোগ জ্যামিং করা সম্ভব। এর বাইরেও আর্মেনিয়রা নিজেরাই ‘থান্ডার’ নামে একটা রেডিও জ্যামার তৈরি করে ২০১৮ সালে ইয়েরেভানে একটা প্রতিরক্ষা মেলায় ডিসপ্লে করে। আর্মেনিয়ার সামরিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‘আরমেন প্রেস’ বলছে যে, এই জ্যামার ২০ কিঃমিঃ দূরত্বে শত্রুর রেডিও জ্যামিং করতে পারবে। সিনিয়র লেফটেন্যান্ট হোভানেস খেলাঘাতিয়ান বলেন যে, ২০১৬ সালে আজেরবাইজানের সাথে সীমান্ত যুদ্ধে এই জ্যামার নাগোর্নো কারাবাখে মোতায়েন করা হয় এবং তা ব্যাপক সফলতাও পায়। ২০১১ সালে আর্মেনিয়া সামরিক প্যারেডে নিজস্ব ডিজাইনের ‘ক্রুংক’ সার্ভেইল্যান্স ড্রোন ডিসপ্লে করে। প্রায় ৫ ঘন্টা আকাশে ওড়ার সক্ষমতা রয়েছে এটির। আর্তসাখ সেনাবাহিনীকেও এই ড্রোন সরবরাহ করা হয়েছে।

২০১৮ সালে আজেরবাইজানের রাস্তায় প্যারেডে তুর্কি ‘এসওএম বি-১’ আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্রুজ মিসাইল। এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ব্যবহার করে আজেরবাইজানের বিমানগুলি শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে দূরত্ব রেখেই আড়াই’শ কিঃমিঃ দূরের অতি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা অর্জন করলো।



আজেরবাইজানে অস্ত্র কেনার হিড়িক

অন্যদিকে ‘সিপরি’র হিসেবে ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সালের মাঝে আজেরবাইজান বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কিনেছে। সরবরাহকারীদের মাঝে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাশিয়া, ইস্রাইল, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, বেলারুশ এবং ইউক্রেন।

আজেরবাইজান যা কিনেছে, তার মাঝে রয়েছে -

১) ট্যাঙ্ক কেনা হয় ৩’শ ৬০টা...

রাশিয়া - ২০০৭ সালে কেনা ৬২টা ‘টি-৭২এম১’ ট্যাঙ্ক; ২০১৫ সালের মাঝে কেনা ১’শটা ‘টি-৯০এস’ ট্যাঙ্ক;

ইউক্রেন - ২০০৬ সালে কেনা ৪৫টা ‘টি-৭২এম১’ ট্যাঙ্ক;

বেলারুশ - ২০০৬ সালে কেনা ৬০টা ‘টি-৭২এম১’ ট্যাঙ্ক; ২০১৩ সালের মাঝে কেনা হয় আরও ৯৩টা;

২) আর্টিলারি কেনা হয় ৬’শ ৯২টা...

বেলারুশ থেকে ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে ১২টা ‘২এস৭ পিয়ন’ ২০৩ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড কামান কেনা হয়; ২০১৯ সালের মাঝে ১০টা ‘বি২০০বিএম পলোনেজ’ ৩০০ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড রকেট; ২০১৭ সালে ২৬টা ‘২এ৩৬’ ১৫২ মিঃমিঃ কামান; ২০১০ সালে ৩০টা ‘ডি-৩০’ ১২২ মিঃমিঃ কামান কেনা হয়।

বুলগেরিয়া থেকে ২০০২ সালে ৩৬টা ১৩০ মিঃমিঃ ‘এম-৪৬’ কামান কেনা হয়।

চেক রিপাবলিক থেকে ২০১৮ সালের মাঝে ৩০টা ১২২ মিঃমিঃ ‘আরএম-৭০’ সেলফ প্রপেল্ড রকেট কেনা হয়।

স্লোভাকিয়া থেকে ২০১৮ সালের মাঝে কেনা হয় ৩৬টা ১৫২ মিঃমিঃ ‘ডানা’ সেলফ প্রপেল্ড কামান।

ইস্রাইল থেকে ২০০৬ সালে ৬টা ‘লিংক্স’ সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলারি রকেট লঞ্চার কেনা হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে ৫০টা ‘এক্সট্রা’ গাইডেড রকেটও কেনা হয়। ২০১০ সালে কেনা হয় ৫টা ১৫৫ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলারি কামান ‘এটমোস ২০০০’। ২০১১ সালের মাঝে কেনা হয় ১০টা ১২০ মিঃমিঃ ‘কারডম’ সেলফ প্রপেল্ড মর্টার। ২০১৮ সালের মাঝে কেনা হয় ৪টা ‘লোরা’ সেলফ প্রপেল্ড রকেট লঞ্চার; সাথে কেনা হয় ৫০টা রকেট। একই বছর কেনা হয় ১০টা ‘স্যান্ডক্যাট স্পিয়ার’ ১২০ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড মর্টার।

রাশিয়া থেকে ২০১৪ সালের মাঝে কেনা হয় ১৮টা ‘২এস১৯ এমএসটিএ-এস’ ১৫২ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড কামান; ১৮টা ‘২এস৩১ ভেনা’ ১২০ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড কামান; ১৮টা বিএম৯ এ৫২ স্মার্চ’ ৩০০ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড রকেট লঞ্চার। ২০১৭এর মাঝে কেনা হয় ৩৬টা ‘টিওএস-১’ ২২০ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড রকেট লঞ্চার।

তুরস্ক থেকে ২০১৩ সালের মাঝে কেনা হয় ৩০টা ১০৭ মিঃমিঃ রকেট লঞ্চার ‘টি-১০৭’; ২০১৪ সালের মাঝে কেনা হয় ৪০টা ‘টি-১২২’ রকেট লঞ্চার; ২০১৬ সালের মাঝে কেনা হয় ৩০০ মিঃমিঃএর ২০টা ‘টি-৩০০’ রকেট লঞ্চার; এর সাথে সরবরাহ করা ১’শ ৮টা ৩০০ মিঃমিঃ ‘টিআরজি-৩০০’ গাইডেড রকেট। এগুলির পিছনে খরচ হয় প্রায় ২’শ ৪৪ মিলিয়ন ডলার।

ইউক্রেন থেকে ২০০২ সালের মাঝে কেনা হয় ৭২টা ‘টি-১২ ২এ১৯’ ১০০ মিঃমিঃ কামান। ২০০৫ সালে কেনা হয় ১২টা ‘বিএম৯ এ৫২ স্মার্চ’ সেলফ প্রপেল্ড রকেট; ২০০৬ সালে কেনা হয় ৮৫টা ‘এম-৪৩’ ১২০ মিঃমিঃ মর্টার; ২০০৭ সালে কেনা হয় ৫৫টা ‘ডি-৩০’ ১২২ মিঃমিঃ কামান; ২০০৮ সালের মাঝে কেনা হয় ৩টা ‘২এস৭ পিওন’ ২০৩ মিঃমিঃ কামান; ২০১০ সালের মাঝে কেনা হয় ৫৪টা ‘২এস১’ ১২২ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড কামান; একই বছরে কেনা হয় ১৬টা ‘২এস৩’ ১৫২ মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড কামান।

৩) আর্মার্ড ভেহিকল কেনা হয় ৬’শ ৪৯টা...

২০১০ সালের মাঝে রাশিয়া থেকে কেনা হয় ৭০টা ‘বিটিআর-৮০এ’ এপিসি; ২০১৫ সালের মাঝে কেনা হয় ১’শ ১৮টা ‘বিএমপি-৩’ ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল; ২০১৮ সালের মাঝে কেনা হয় ৭৬টা ‘বিটিআর-৮২এ’ ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল।

২০১১ থেকে ২০১৫এর মাঝে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কেনা হয় ৮৫টা ‘ম্যারডার’ এবং ৬০টা ‘ম্যাটাডোর’ এপিসি।

২০১১ সালে তুরস্ক থেকে কেনা হয় ৩৫টা ‘কোবরা’ এবং ৩৭টা ‘শোরল্যান্ড’ এপিসি।

ইউক্রেন থেকে ২০০৭ সালে কেনা হয় ১৮টা ‘বিটিআর-৮০’ এপিসি; ২০১০ সালের মাঝে কেনা হয় ১শ ৫০টা ‘বিটিআর-৭০’ এপিসি।

৪) বিমান প্রতিরক্ষা

ইস্রাইলের কাছ থেকে ২০১৬ সালে একটা ‘বারাক এলআর’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা হয়। এর সাথে ছিল ১’শ কিঃমিঃ পাল্লার ৪০টা ‘বারাক-৮’ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১৫০ কিঃমিঃ পাল্লার ৪০টা ‘বারাক-৮ ইআর’ ক্ষেপণাস্ত্র; ২টা ‘ইএলএম ২২৮৮’ এয়ার সার্চ রাডার। স্পেন থেকেও কেনা হয় ‘লানজা এলটিআর-২৫’ এয়ার সার্চ রাডার। ইউক্রেন থেকে ২০০৮ সালে কেনা হয় ১৮টা ‘স্ট্রেলা-৩’ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। ২০১৩ সালে কেনা হয় ’৮০কে৬এম’ এয়ার সার্চ রাডার।

রাশিয়া থেকে ২০১১ সালে ৩’শ মিলিয়ন ডলার খরচে কেনা হয় ২টা ‘এস-৩০০পিএমইউ-২’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং তাতে ব্যবহারের জন্যে কেনা হয় ২’শ ‘৪৮এন৬’ ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা দেড়’শ কিঃমিঃএর বেশি। ২০১৩ সালের মাঝে কেনা হয় স্বল্প পাল্লার ২’শ ‘ইগলা-এস’ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের লঞ্চার এবং ১ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র। ২০১৪ সালের মাঝে কেনা হয় ২টা ‘৯কে৩৭ বুক-১এম’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর সাথে কেনা হয় ৪৫ কিঃমিঃ পাল্লার ১’শটা ‘৯এম৩১৭’ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৪২ কিঃমিঃ পাল্লার ১’শটা ‘৯এম৩৮’ ক্ষেপণাস্ত্র।

২০১৬ সালে আজেরবাইজানের ‘আজাদ সিস্টেমস কোম্পানি’তে ইস্রাইলি প্রযুক্তি সহায়তায় ‘জারবা’ লোইটারিং সুইসাইড ড্রোন তৈরির উদ্ভোধন করেন আজেরবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিইয়েভ। ড্রোনের ব্যবহার আজেরবাইজানের সামরিক সক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।



৫) আকাশ সক্ষমতা

২০০৬ সালে ইউক্রেন থেকে ১২টা ‘এল-৩৯সি’ প্রশিক্ষণ বিমান কেনা হয়। ২০০৬ থেকে ২০১১ সালের মাঝে ইউক্রেন থেকে কেনা হয় ১৬টা ‘মিগ-২৯’ ফাইটার বিমান। ২০০৭ সালে মিগগুলিতে ব্যবহারের জন্যে কেনা হয় ৪৩টা ‘আর-২৭’ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। ২০১০ সালের মাঝে ইউক্রেন থেকে ১২টা ‘এমআই-৩৫পি’ এটাক হেলিকপ্টার কেনা হয়। এই হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়ার জন্যে ৪’শ ‘স্কিফ’ এবং ‘ব্যারিয়ার’ এন্টি ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্রও কেনা হয়। বেলারুশ থেকে ২০১২ সালের মাঝে কেনা হয় ১১টা ‘সুখোই এসইউ-২৫’ গ্রাউন্ড এটাক বিমান।

২০১৮ সালে সামরিক প্যারেডে আজেরিরা তুরস্কের তৈরি ‘এসওএম বি-১’ আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ডিসপ্লে করে। ২’শ ৩০ কেজি ওয়ারহেডের এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে খুব সম্ভবতঃ আজেরবাইজানি ‘মিগ-২৯’ এবং ‘সুখোই-২৫’ যুদ্ধবিমান থেকে ছোঁড়ার জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের মাঝে ১০টা ক্ষেপণাস্ত্র ডেলিভারি করা হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ব্যবহার করে আজেরবাইজানের বিমানগুলি শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে দূরত্ব রেখেই আড়াই’শ কিঃমিঃ দূরের অতি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা অর্জন করলো।

রাশিয়া থেকে ২০১৪ সালের মাঝে ৩’শ ৬০ মিলিয়ন ডলারে কেনা হয় ২৪টা ‘এমআই-২৪/৩৫এম’ এটাক হেলিকপ্টার। ২০১৫ সালের মাঝে কেনা হয় ৬৬টা ‘এমআই-১৭’ এসল্ট হেলিকপ্টার। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ‘ভেক্টর’ টারেট ক্রয় করে সেগুলিকে ইউক্রেনের সহায়তায় ‘এমআই-২৪’ এটাক হেলিকপ্টারগুলিকে আপগ্রেড করা হয়।

ইস্রাইলের কাছ থেকে ২০০৮ সালে ৩০ মিলিয়ন ডলারে কেনা হয় ১২ ঘন্টা ওড়ার সক্ষমতার ৪টা ‘এরোস্টার’ সার্ভেইল্যান্স ড্রোন; ২০১৩ সালের মাঝে কেনা হয় ৫২ ঘন্টা ওড়ার সক্ষমতার ৫টা হেরন সার্ভেইল্যান্স ড্রোন; ২০ ঘন্টা ওড়ার সক্ষমতার ১০টা ‘হার্মিস-৪৫০’ ছোট সার্ভেইল্যান্স ড্রোন; এবং ১৮ ঘন্টা ওড়ার সক্ষমতার ৫টা ‘সার্চার’ ছোট সার্ভেইল্যান্স ড্রোন। ২০১৬ সালের মাঝে ডেলিভারি দেয়া হয় ৫০টা ‘হারপ’ লোইটারিং সুইসাইড ড্রোন। ২০১৭ সালের মাঝে কেনা হয় ৭ ঘন্টা ওড়ার সক্ষমতার ১০টা ছোট ‘অরবিটার-৩’ সার্ভেইল্যান্স ড্রোন। ২০১৮ সালের মাঝে কেনা হয় ১’শটা ‘স্কাই স্ট্রাইকার’ লোইটারিং সুইসাইড ড্রোন। ৩৬ ঘন্টা ওড়ার সক্ষমতার ২টা ‘হার্মিস-৯০০’ সার্ভেইল্যান্স ড্রোনও কেনা হয়। ২০১৯ সালের মাঝে কেনা হয় ১’শ ‘অরবিটার-১কে’ লোইটারিং সুইসাইড ড্রোন। ‘জেরবা’ নামে এই সুইসাইড ড্রোনগুলি ২০১৯ সাল থেকে আজেরবাইজানের ‘আজাদ সিস্টেমস কোম্পানি’র ফ্যাক্টরিতে তৈরি হচ্ছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আজেরবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিইয়েভ নাখচিভান ছিটমহলে সামরিক সরঞ্জাম পরিদর্শন করছেন। আজেরবাইজানের সাম্প্রতিক সামরিক কর্মকান্ড দেশটা নেতৃত্বকে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে। এই আন্মবিশ্বাস নাগোর্নো কারাবাখের যুদ্ধক্ষেত্রকে আবারও ফুঁস তুলতে পারে। তবে এই যুদ্ধের সম্ভাবনা ওঠানামা করবে তুরস্ক এবং রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার উপর।



আজেরবাইজানের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি

প্রায় সাড়ে ৩’শ ট্যাঙ্ক, প্রায় ৭’শ আর্টিলারি এবং প্রায় সাড়ে ৬’শ আর্মার্ড ভেহিকল কেনার মাধ্যমে আজেরবাইজান তার সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’এর প্রকাশ করা ‘দ্যা মিলিটারি ব্যালান্স ২০০৩-২০০৪’এর হিসেব অনুযায়ী আজেরবাইজানের সেনাবাহিনীতে সদস্যসংখ্যা ছিল ৫৬ হাজার। মোট ২৩টা মোটর রাইফেল ব্রিগেডের মাঝে এই সেনাদেরকে অর্গানাইজ করা হয়েছিল। ২০০৭ সালের হিসেবে সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৫৭ হাজার। ২০১৭ সালের মিলিটারি ব্যালান্সেও সদস্যসংখ্যা প্রায় একইরকম ছিল। কিন্তু ইউনিটগুলিতে বেশকিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৪টা ব্রিগেডকে মেকানাইজড ব্রিগেডে পরিবর্তন করা হয়েছে; আর্টিলারি ব্রিগেডের সংখ্যা ১টা থেকে ২টাতে উন্নীত করা হয়েছে। সাড়ে ৬’শ ট্যাঙ্কের সাথে প্রায় ৪’শ সেলফ প্রপেল্ড কামান কেনা হয়। বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলির মাঝেও অনেকগুলিই ছিল মেকানাইজড ইউনিটের সাথে ব্যবহারের জন্যে মোবাইল ইউনিট। এই মেকানাইজড ব্রিগেডগুলি আজেরবাইজানের সেনাবাহিনীর আক্রমণে যাবার সক্ষমতাকে অনেকগুণে বাড়িয়েছে।

ইস্রাইলের ‘বারাক-৮’ এবং রাশিয়ার ‘এস-৩০০’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলি আজেরবাইজানের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলিকে রক্ষার জন্যে মোতায়েন করা হতে পারে। অপরদিকে মধ্যম ও স্বল্প পাল্লার ‘বুক’ ও ‘ইগলা এস’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি শত্রুপক্ষের ড্রোনগুলির বিরুদ্ধে মোতায়েন করা হতে পারে।

বিরাট পরিবর্তন এসেছে আজেরবাইজানের আকাশ সক্ষমতায়। ইস্রাইলের তৈরি সার্ভেইল্যান্স ড্রোনগুলির সাথে সুইসাইড ড্রোনগুলি যুক্ত হওয়ায় তা আজেরবাইজানকে আকাশ নিয়ন্ত্রণের এক ধরণের সক্ষমতা দিয়েছে। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০১৬ সালের এপ্রিলের যুদ্ধে ইস্রাইলের তৈরি ‘হারোপ’ সুইসাইড ড্রোন ব্যবহার করে একটা আর্মেনিয় বাস ধ্বংস করা হয়, যেখানে ৭ জন নিহতের মাঝে ছিল কয়েকজন মধ্যম সাড়ির অফিসার। টার্গেট করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্যে ড্রোন ব্যবহৃত হওয়ায় ড্রোন ঠেকাবার জন্যে আজেরবাইজান এবং আর্মেনিয়া উভয়েই উঠেপড়ে লেগেছে। ‘ফ্লাইট গ্লোবাল’ বলছে যে, ২০১৬ সালের যুদ্ধে উভয় পক্ষই খুব সম্ভবতঃ এন্টি ড্রোন ইলেকট্রনিক জ্যামিং সিস্টেম ব্যবহার করেছে। আজেরবাইজান তুরস্ক থেকে ‘এসওএম বি-১’ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ফলে দেশটার পুরোনো মিগ এবং সুখোই বিমানগুলি নতুন ভূমিকা পেয়েছে। আর্মেনিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলি এখন এই ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালের মাঝে।

আজেরবাইজানের সাম্প্রতিক সামরিক কর্মকান্ড দেশটার নেতৃত্বকে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে। আজেরবাইজানের ‘রিপোর্ট নিউজ এজেন্সি’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, সক্ষমতার দিক থেকে আজেরবাইজানের সামরিক বাহিনী বর্তমানে বিশ্বের সেরা সামরিক বাহিনীগুলির একটা। রুশ সমর বিশ্লেষক আন্দ্রেই ফ্রোলভের কথায়, ১৫ বছরের আগের আজেরি সেনাবাহিনীর তুলনায় বর্তমানের সেনাবাহিনী বলতে গেলে আলাদা একটা বাহিনী।

আর্মেনিয় ইস্টার্ন অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের সাথে আজেরি মুসলিমদের দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। তবে সোভিয়েতদের রেখে যাওয়া উদ্ভট বাউন্ডারিগুলিই নাগোর্নো কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজেরবাইজানের বর্তমান দ্বন্দ্বের সূচনা করেছে। আর্মেনিয়ার নেতৃত্বের মাঝে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের প্রভাব যথেষ্ট থাকায় এই দ্বন্দ্বকে ধর্মীয় রঙে দেখেছে অনেকেই। সোভিয়েত সামরিক বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কারণেই ১৯৯০এর দশকে আর্মেনিয়া সামরিক দিক থেকে আজেরিদের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে তুরস্কের মাঝ দিয়ে তেলের পাইপলাইন চালু হবার পর তেল বিক্রির অর্থের উপর নির্ভর করে আজেরবাইজান তার সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে থাকে। আজেরবাইজানের এই তেল মূলতঃ যায় ইউরোপে। মার্কিন ‘এনার্জি ইনফরমেশন এডমিনিস্ট্রেশন’এর হিসেবে ২০১৭ সালে আজেরবাইজানের রপ্তানি করা ৭৩ শতাংশ তেলই যায় ইউরোপে। অন্যদিকে ২০০৮ সালে জর্জিয়াতে রুশ হামলার পর আজেরিরা তুরস্ককে কৌশলগত বন্ধুর হিসেবে দেখতে থাকে। আজেরিরা তাদের নতুন কেনা অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলিকে তুর্কিদের সাথে মহড়া দিয়ে কার্যক্ষম একটা সামরিক বাহিনী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৬ সালের চার দিনের যুদ্ধে আজেরিরা তাদের নতুন প্রযুক্তি, বিশেষ করে ড্রোন ব্যবহারে বেশ দক্ষতা দেখায়। এখন তুরস্কও সিরিয়ার ইদলিবের অভিজ্ঞতা এবং সেখানে সফলতা পাওয়া প্রযুক্তিগুলি আজেরবাইজানকে সরবরাহ করছে। এতে ককেশাসে সামরিক ব্যালান্সে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। আজেরবাইজান যদি সম্ভাব্য যুদ্ধে জয় পাবার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে যায়, তাহলে নাগোর্নো কারাবাখের যুদ্ধক্ষেত্র আবারও ফুঁসে উঠতে পারে। তবে এই যুদ্ধের সম্ভাবনা ওঠানামা করবে তুরস্ক এবং রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার উপর।

2 comments:

  1. If that's the case then why and how peaceful consistency still remains in Indian subcontinent though more harsh boundaries been drawn by the British where political agenda superseded religious matters during the partition.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Political borders are institutions, which are part of the Westphalian System of border recognition.... these institutions are as strong as their creator.... Nagorno Karabakh borders were created by the Soviet Union, which has dissolved already.... the West has not decided (at least, not yet) to change the border of Caucasus..... but take a look at the border of the Middle East.... the British drew it in 1916, and its still there in theory, at least.... the US tried to change that through introduction of ISIS and Kurdish independence movement, but that hasn't really worked out.... yet, the Turks are trying to change that border institution as we talk.....

      Hindustan had never had this boundary that was created by the British along religious lines.... yet, creating a secular country in India just to keep it geographically intact was the key, even though the country was created along religious lines.... now, with the rise of Hindu nationalism, this secular institution has come under challenge.... this shows that the 1947 boundary was basically along secular lines with a religious rationale, not along religious lines with a religious rationale....

      the 1947 boundary of Hindustan is an artificial creation, which is bound to change, as geopolitical power bases shift.... the Radcliffe boundary institution is showing its age already, and it's a matter of time before it collapses altogether.... but we may not see that change before the creation of a new arrangement....

      Delete