১৩ই জুন ২০১৮
পারস্য উপসাগরে মার্কিন ‘মোবাইল সী-বেইস’
১৯৮৭ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন সরকার পারস্য উপসাগরে তেলের জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করার ছুতোয় সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে। Operation Earnest Will and Operation Prime Chance নামের দু’টা অপারেশনের মাধ্যমে এই সামরিক অবস্থানের কাজ চলে। পারস্য উপসাগরের পানিতে ইরানের ভাসিয়ে দেয়া মাইন থেকে জাহাজগুলিকে রক্ষা করতে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল জর্জ ক্রিস্ট এক নতুন ধরনের পরিকল্পনা দেন। মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ দিয়ে তেলের জাহাজ রক্ষা করা ছাড়াও তিনি আলাদাভাবে পারস্য উপসাগরে হেলিকপ্টার, ছোট বোট এবং স্পেশাল ফোর্সের সেনাদের মোতায়েন করেন। ইরানের ছোট ছোট বোট থেকে জাহাজগুলিকে রক্ষা করতে বড় যুদ্ধজাহাজের চাইতে এই ছোট ফোর্সগুলিই বেশি কার্যকর হবে বলে তিনি মনে করেছিলেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় সৌদি আরব এবং কুয়েত উভয় দেশেই মার্কিন সৈন্যদের না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে এই ছোট ফোর্স কোথায় থাকবে? এই সুযোগখানা করে দেয় মার্কিন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি Brown & Root (বর্তমানে Kellogg Brown & Root)। ১৯৬২ সালে Haliburton নামের আরেক কোম্পানি Brown & Root-কে কিনে ফেলে এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি Haliburton নামেই সকলের কাছে পরিচিত ছিল। ২০০৭ সালে কোম্পানি দু’টি আলাদা হয়ে যায়। যাইহোক, এই কোম্পানিটি মার্কিন সরকারকে যুদ্ধের সহায়তা হিসেবে পারস্য উপসাগরে তাদের ব্যবহার করা দু’টা কন্সট্রাকশন বার্জ লিজ দিয়ে দেয়। Hercules এবং Wimbrown VII নামের বার্জ দু’টিকে মার্কিনীরা সমুদ্রের মাঝখানে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। বার্জদু’টিতে লম্বা সময়ের জন্যে মানুষ বসবাসের সুবিধা ছিল। একই সাথে সেখানে হেলিকপ্টার ডেক ছিল এবং যন্ত্রপাতি মেরামতের যথেষ্ট সুবিধা ছিল। Hercules-এর আকৃতি (৪০০ ফুট লম্বা এবং ১৪০ফুট প্রস্থ) ছিল সামরিক ব্যবহারের জন্যে বেশ উপযোগী। Wimbrown VII ছিল একটু ছোট (২৫০ ফুট লম্বা এবং ৭০ ফুট প্রশস্ত)। Wimbrown VII-কে কার্যকর করে তুলতে অবশ্য বেশকিছু কনভার্সন কাজ করতে হয়েছিল। দু’টি বার্জে যথাক্রমে ১৭৭ জন এবং ১৩২ জন সেনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দু’টা বার্জ মিলে মোটামুটি ১৬০ কিঃমিঃ ব্যাসের একটা এলাকা টহল দেবার পরিকল্পনা করা হয়; একেকটা ৮০ কিঃমিঃ করে পাহাড়া দেবে। বার্জগুলি থেকে মোটামুটি ৮০ কিঃমিঃ ব্যাসার্থের মাঝে কাজ করবে হেলিকপ্টার এবং ছোট বোটগুলি। যেহেতু রাত দিন ২৪ ঘন্টাই টহল দিতে হবে, তাই বার্জগুলিকে সমুদ্র পরিবহণের রুটের উপরে রাখা হলো – যাতে দরকার হলে অত্যন্ত তাড়াতাড়ি হস্তক্ষেপ করা যায়। আর রাতের বেলায় টহল দেবার ব্যবস্থাও করতে হলো। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে ব্যবহৃত রিভারাইন প্যাট্রোল বোট (PBR) নিয়ে আসা হলো এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের AH-6 ছোট এটাক হেলিকপ্টার বসানো হলো এতে। নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স Navy SEALS-এর সাথে ম্যারিন ফোর্সের একটা প্লাটুনও মোতায়েন করা হলো। বার্জগুলিকে ইরানি হামলা থেকে রক্ষা করতে মেটাল প্লেট এবং বালুর বস্তা দিয়ে পরিখার মতো দেয়াল তৈরি করা হলো। Hercules-এর উপরে ব্যবহার করা হয়েছিল ২০ হাজার বালুর বস্তা। এগুলির ভারে নিচু হয়ে যাওয়া বার্জের ডেকের উপরে সমুদ্রের ঢেউএর ঝাপটা লাগতে থাকে। বার্জের ডেকের উপরে সৈন্যদের হাতে দেয়া হলো ১২.৭ মিঃমিঃ মেশিন গান, ৪০মিঃমিঃ MK-19 গ্রেনেড লঞ্চার, TOW ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মিসাইল, ৮১ মিঃমিঃ মর্টার এবং বিমান বিধ্বংসী Stinger মিসাইল। ২৫মিঃমিঃ চেইন গান এবং ২০মিঃমিঃ বিমান-বিধ্বংসী কামানও বসানো হয়েছিল বার্জগুলিতে। জাহাজ-ধ্বংসী মিসাইল থেকে বাঁচতে এন্টি-মিসাইল রাডার রিফ্লেক্টরও স্থাপন করা হয়েছিল। Explosive Ordnance Disposal (EOD) Team-এর কিছু সদস্য ছাড়াও ম্যারিন কোরের একটা কমিউনিকেশন ডিটাচমেন্ট ছিল বার্জগুলিতে, যাদের কাজ ছিল ঐ এলাকায় সকল পক্ষের যোগাযোগের উপর নজরদারি করা।
কিছুদিন পরপরই বার্জগুলির স্থান পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ৮০কিঃমিঃ ব্যাসার্ধের এলাকায় হেলিকপ্টারগুলি আক্রমণ চালাবে। Mark III প্যাট্রোল বোটগুলি কাজ করবে এই ব্যাসার্ধের মাঝে। আর ৮ কিঃমিঃ ব্যাসার্ধের এলাকায় টহল দেবে Seafox এবং PBR ছোটবোটগুলি। ১৯৮৭ সালের অগাস্টের মাঝেই এই যুদ্ধের কনসেপ্ট দাঁড় করিয়ে ফেলা হয় এবং ওয়াশিংটনে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরা হয়। এবং এগুলির নামকরণ করা হয় Mobile Sea Base (MSB)। বেশিরভাগ কর্মকর্তাই এই কনসেপ্টকে নিতে পারেননি। তারা যুক্তি দিলেন যে, এই ঘাঁটিগুলি ইরানি নৌ এবং বিমানবাহিনীর টার্গেটে পরিণত হবে এবং এর উপরে থাকা বিভিন্ন বাহিনীর সেনাদের মাঝে একত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় বিশৃংখলার সৃষ্টি হবে। তবে এদের অনেকেই হিসেব করেননি যে, ইরানের বিমান এবং সেনাবাহিনীর বেশিরভাগই সেসময় ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় রয়েছে, এবং এদেরকে এই বার্জগুলির বিরুদ্ধে মোতায়েন সম্ভব হবে না। আর সেসময় ইরানের কাছে জাহাজ-ধ্বংসী মিসাইল তেমন একটা ছিল না। জেনারেল ক্রিস্টের হিসেব ছিল যে, ইরানিরা এই বার্জগুলির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে চলবে। আর এই বার্জের পক্ষে সবচাইতে বড় যুক্তি ছিল টাকার অংকটা। দু’টা বার্জ হারানো অবশ্যই বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধজাহাজ হারানোর মতো হবে না। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ অফিসার চেয়ারম্যান জয়েন্ট চীফ আব-স্টাফ এডমিরাল উইলিয়াম ক্রো এই প্রকল্পে সমর্থন দেয়াতে এটা এগিয়ে যায়। এলুমিনিয়ামের তৈরি স্পেশাল ওয়ারফেয়ারের ৬৫ফুট Mark III প্যাট্রোল বোটগুলির ড্রাফট ছিল মাত্র সাড়ে ৫ ফুট; যেকারণে সমুদ্রে অপারেট করতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছিল। কিন্তু মার্কিনীদের কিছু করার ছিল না। কারণ এর কোন বিকল্পও তখন তাদের কাছে ছিল না। এই বোটগুলিকে ৪০মিঃমিঃ কামান, ১২.৭মিঃমিঃ মেশিন গান এবং ৪০মিঃমিঃ গ্রেনেড লঞ্চারে সজ্জিত করার পর ইরানি বোটগুলির বিরুদ্ধে অত্যন্ত শক্তিশালী একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড়িয়ে যায়। যদিও গতি কমিয়ে ২৫ নটিক্যাল মাইলে আনতে হয়েছিল, তথাপি অস্ত্রের শক্তি বেশি থাকায় সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল তারা। মার্কিন সেনাবাহিনীর ১৬০তম স্পেশাল অপারেশনস এভিয়েশন রেজিমেন্টকে দায়িত্ব দেয়া হয় বার্জগুলিতে হেলিকপ্টার দেবার। রাতের বেলায় অপারেট করার জন্যে হেলিকপ্টারগুলিকে নাইট ভিশন গগলস এবং ফরওয়ার্ড লুকিং ইনফ্রারেড দ্বারা সজ্জিত করা হয়। একেকটা বার্জে ৩টা করে হেলিকপ্টার রাখার ব্যবস্থা করা হয়। মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ প্রায় ৩৫ কিঃমিঃ দক্ষিণে অবস্থান নিয়ে বার্জগুলির নিরাপত্তায় সহায়তা করে।
AH-6 এটাক হেলিকপ্টার-এর স্থলে পরবর্তীতে মার্কিন সেনাবাহিনীর OH-58 হেলিকপ্টার আনা হয়েছিল। এই হেলিকপ্টারগুলি আরও বড় এবং রাতে চলার জন্যে আরও ভালো ইলেকট্রনিক্স ছিল এতে; অস্ত্রের দিক থেকেও ছিল আরও শক্তিশালী। Hellfire এন্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল বহন করতো এগুলি। এছাড়াও মার্কিন নৌবাহিনীর ফ্রিগেটগুলি থেকে ওড়া Sea Hawk হেলিকপ্টারগুলির রাডার খুব ভালো থাকায় এগুলি হেলিকপ্টার এবং বোট অপারেশনে বেশ সাহায্য করেছিল। মার্কিন বাহিনীর হাতে ইরানের নৌশক্তির একটা অংশব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধের অবসানের পর থেকে সহিংসতা কমতে থাকে, এবং বার্জগুলি ১৯৮৮-এর ডিসেম্বর এবং ১৯৮৯-এর জুলাই-এ Brown & Root –এর কাছে ফেরত দেয়া হয়। এই অপারেশনে নতুন কিছু ব্যাপার নিয়ে আসা হয়; যেমন-
১) Mobile Sea Base (MSB) নামের প্ল্যাটফর্মের কনসেপ্ট নতুন ছিল। মার্কিনীরা ‘ব্রাউন ওয়াটার নেভি’এর কনসেপ্ট-এ অভ্যস্ত হয় ভিয়েতনামে, যেখানে তারা ব্যাপকভাবে ছোট বোট, হেলিকপ্টার এবং মোবাইল বেইজ ব্যবহার করেছিল। সে হিসেবে এই প্ল্যাটফর্ম নতুন কিছু নয়। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যবহার করা মোবাইল বেইজগুলি তৈরি হয়েছিল নৌবাহিনীর ল্যান্ডিং শিপ-কে কনভার্ট করে। আর এবারে প্রাইভেট কোম্পানির বার্জ ব্যবহার করা হয় মার্কিন সরকারি কাজে।
২) নৌবাহিনীর প্ল্যাটফর্মে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারও অপারেট করেনি কখনও। অন্যাদিকে ম্যারিন কোরের হ্যারিয়ার বিমান এবং হেলিকপ্টার সর্বদাই ব্যবহার করা হয় নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে।
৩) সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার হলেও সেগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল পুরোপুরি ম্যারিটাইম কাজে। মেশিন গান, কামান, রকেট এবং হেলফায়ার মিসাইল ব্যবহার করা হয় শত্রুপক্ষের নৌবাহিনীকে আক্রমণ করতে।
মালয়েশিয়ার ‘সীবেইস’
মালয়েশিয়া সরকার কিছুটা একইরকম কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করছে কয়েক বছর ধরে। ২০১৫-এর জুলাই মাসে Tun Sharifah Rodziah নামের একটা অয়েল রিগ প্ল্যাটফর্মকে নৌবাহিনীর বেইজ হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। বাতিল হয়ে যাওয়া এই প্ল্যাটফর্মটি ছিল মালয়েশিয়ার তেল কোম্পানি পেট্রোনাস-এর। এর আগে একই বছরের মে মাসে Tun Azizan নামের একটি জাহাজকে কনভার্ট করে ফরওয়ার্ড বেইজ হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। পেট্রোনাস মালয়েশিয়ার আশেপাশের সমুদ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কর্মকান্ডগুলির অর্থায়ন করে। মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাতুক সেরি হিসামুদ্দিন হুসেইন ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশের পূর্বে সুলু সাগরে জঙ্গী তৎপরতার পর এই ‘সী বেইজিং’এর প্রস্তাব করেন। Tun Azizan নামের জাহাজটি ছিল মালয়েশিয়ার শিপিং কোম্পানি Malaysia International Shipping Corporation Berhad (MISC)-এর একটি কার্গো জাহাজ। পেট্রোনাসের অর্থায়নে জাহাজটি Malaysia Marine and Heavy Engineering (MMHE)-এর সহায়তায় কনভার্ট করা হয়। ১০২ মিটার লম্বা জাহাজটিতে ৯৯ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসাথে পানি, তেল, গোলাবারুদ এবং অনান্য সাপ্লাই-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে একটা হেলিকপ্টার ডেক এবং হ্যাঙ্গারও রয়েছে; কমান্ড এবং কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতিও রয়েছে। যেসব জাহাজে হেলিকপ্টার নেই, সেগুলি এই জাহাজ থেকে হেলিকপ্টার সাপোর্ট পায়। আবার ফ্লাইট ডেক থাকা ৯১ মিটার লম্বা Kedah-class ওপিভি-গুলি এই জাহাজের হেলিকপ্টারের সাথে কাজ করে হেলিকপ্টারের সক্ষমতা বাড়ায়। ছোট প্যাট্রোলবোটগুলি একে কেন্দ্র করে অপারেট করতে পারে। এই ছোট বোটগুলি Tun Azizan থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট পায় সমুদ্রে বেশি সময় থাকার জন্যে। এগুলির কমান্ড ও হয় বড় জাহাজটি থেকে। এই জাহাজটি থেকে কিছুটা আলাদা হলো Bunga Mas Lima(BM5) এবং Bunga Mas Enam (BM6)। ১৩৩ মিটারের ৯ হাজার টনের এই দু’টি জাহাজকে ২০০৯ সালে ডেভেলপ করা হয় মালয়েশিয়ার উপকূল থেকে দূরে গভীর সমুদ্রে অপারেট করার জন্য। ৭০০ কন্টেইনার বহন ক্ষমতার এই শিপগুলিকে কনভার্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যখন ২০০৮ সালে সোমালিয়ার উপকূলে মালয়েশিয়ার জাহাজ হাইজ্যাক হবার পর সমুদ্রেপথের নিরাপত্তা দিতে মালয়েশিয়ার নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠানো শুরু হয়। জাহাজগুলিতে অতিরিক্ত সেনা বহনের ব্যবস্থা করা ছাড়াও rigid hull inflatable boat এবং হেলিকপ্টার অপারেট করার ব্যবস্থা করা হয়। জাহাজগুলি বেসামরিক লোকেরা চালান; তবে এর মূল শক্তি হলো মালয়েশিয়ান স্পেশাল ফোর্স এবং এর হেলিকপ্টার। সোমালিয়ার উপকূলে KD Sri Inderasakti, KD Mahawangsa এবং KD Sri Inderapura জাহাজগুলি পাঠানো হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। ১৯৮৩ সালে জার্মানি থেকে কেনা KD Sri Inderasakti, KD Mahawangsa জাহজদু’টি ১০০ মিটার লম্বা ৪,৩০০ টনের লজিস্টিক সাপোর্ট জাহাজ, যেগুলি সর্বোচ্চ ৬০০ সৈন্য নিতে পারে, ১০টা কন্টেইনার নিতে পারে এবং বেশকিছু গাড়িও বহন করতে পারে। আর KD Sri Inderapura জাহাজটি মার্কিন নৌবাহিনীর উভচর Newport-class LST জাহাজ ছিল, যা ২০০৯ সালে আগুনে পুরে বাতিল হয়ে যায়। মেইনটেন্যান্স এবং অনান্য মিশনের চাপে জাহাজ সংকটে Bunga Mas Lima (BM5) এবং Bunga Mas Enam (BM6) জাহাজকে কনভার্ট করা হয়।তাছাড়া উপরে তিনটি জাহাজের একটাতেও হেলিকপ্টার হ্যাঙ্গার নেই, যা ছাড়া বাজে আবহাওয়ায় হেলিকপ্টার মেইন্টেন্যান্স সম্ভব নয়। তাই নতুন কনভার্ট করা জাহাজগুলিতে হ্যাঙ্গার স্থাপন করা হয়। বর্তমানে মালয়েশিয়ার নৌবাহিনীতে লজিস্টিক সাপোর্ট দেবার মতো পাঁচটা জাহাজ আছে, যেগুলির প্রত্যেকটিরই যুদ্ধ করার সক্ষমতা রয়েছে - KD Sri Inderasakti, KD Mahawangsa, Bunga Mas Lima (BM5), Bunga Mas Enam (BM6) এবং Tun Azizan ।এই প্রত্যেকটা জাহাজই হেলিকপ্টার সাপোর্ট করতে পারে।প্রত্যেকটা জাহাজেই কমান্ড-কন্ট্রোলের ফ্যাসিলিটি রয়েছে এবং এগুলিকে কেন্দ্র করে অনান্য যুদ্ধজাহাজ অপারেট করতে পারে। এগুলি মোবাইল সী-বেইস হিসেবে কাজ করছে।
তবে Tun Sharifah Rodziah নামের প্ল্যাটফর্মটা সত্যিই আলাদা। পারস্য উপসাগরে মার্কিন অপারেশনের সাথে এই প্ল্যাটফর্মের কিছু মিল রয়েছে। এটাকে তার স্থান থেকে সরানো যায় ঠিকই, তবে এর নিজের চলার ক্ষমতা নেই। একে মোটামুটিভাবে অস্থায়ী বেইস হিসবে ব্যবহার করা যায়; যা উপকূল থেকে দূরে গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট বা স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে। এতে সেনাদের থাকার ব্যবস্থা ছাড়াও কমান্ড-কন্ট্রোল, কমিউনিকেন্স, সার্ভেইল্যান্স এবং লজিস্টিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা রয়েছে। মালয়েশিয়ার সেনাবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ম্যারিন পুলিশ-সহ বিভিন্ন এজেন্সি এই ঘাঁটি ব্যবহার করে। ২৪ ঘন্টা সার্ভেইল্যান্সের মাধ্যমে সমুদ্রে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। কিছু ইন্টারসেপ্টর বোট এই বেইস-এ থাকে, যেগুলি যেকোন সময় দরকারমতো পাঠানো হয়। গভীর সমুদ্রে এরকম বেইস ছাড়া এই ছোট বোটগুলি মোতায়েন করা কঠিন। মালয়েশিয়ান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল দাতুক সেরি আহমাদ কামরুলজামান আহমাদ বদরুদ্দিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে গিয়েই সুযোগ হাজির হয়েছে, যা তারা কাজে লাগিয়েছেন। সুলু সাগরে জঙ্গি সংগঠনের আবির্ভাব না হলে মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী হয়তো এমন প্ল্যাটফর্মের দিকে যেতো না। তবে এখন সমুদ্র অনেক নিরাপদ করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ তার সমুদ্র সম্পদকে রক্ষায় যা করতে পারে…
পারস্য উপসাগরে মার্কিন অভিজ্ঞতা এবং মালয়েশিয়ার সুলু সাগরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্যে চমৎকার উদাহরণ হতে পারে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে সী-বেইস-এর অবতারণা করতে পারে। এর সপক্ষে কিছু শক্তিশালী দিক রয়েছে।
প্রথমতঃ বঙ্গোপসাগরে নতুন নতুন দ্বীপের আবির্ভাব হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই দ্বীপগুলির নিরাপত্তা খুব শিগগিরই ব্যবস্থা করা জরুরি। নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের প্যাট্রোল বোটগুলিকে সমুদ্রে বেশি সময়ের জন্য অপারেট করার একটা পদ্ধতি হতে পারে এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলি।
দ্বিতীয়তঃ বঙ্গোপসাগরে অতি গুরুত্বপূর্ণ কুতুবদিয়া আউটার এঙ্করেজ ছাড়াও নতুন নতুন অনেক স্ট্র্যাটেজিক স্থাপনা বসানো হচ্ছে, যেমন – মাতারবাড়ি ডীপ সী পোর্ট, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল, এলএনজি টার্মিনাল, ইত্যাদি। এর বাইরেও বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস আহরণের জন্যে চেষ্টা চলছে, যেগুলির সাথে বিভিন্ন স্থায়ী স্থাপনা লাগবে। সী-বেইসের মাধ্যমে মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের এই স্থাপনাগুলির ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা দেয়া সহজ হবে।
তৃতীয়তঃ বাংলাদেশের বাণিজ্যের ৯০%-এর বেশি সমুদ্রপথে হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার ভেতরে সী-বেইস স্থাপনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র রুটের ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হতে পারে।
চতুর্থতঃ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নিরাপত্তা প্রদানে সক্ষমতা বাড়াতে সী-বেইস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। বিপদে পড়া মাছ ধরার ট্রলারগুলিকেও সহায়তা দেয়া সহজ হতে পারে।
বাংলাদেশের কাছে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হবে; কারণ এই মুহুর্তে মালয়েশিয়া বিভিন্ন প্রকারের সী-বেইস অপারেট করছে। তারা কার্গো শিপ থেকে কনভার্ট করা লজিস্টিক জাহাজ যেমন অপারেট করছে, তেমনি অয়েল রিগ থেকে কনভার্ট করা প্ল্যাটফর্মও অপারেট করছে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার কাছে প্রস্তাব রাখতে পারে, যাতে এই জাহাজ এবং প্ল্যাটফর্মের সাথে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর কিছু এলিমেন্টকে এটাচ করা যায়। এই এলিমেন্ট হতে পারে একজন অফিসার, একটা নাবিকের গ্রুপ, একটা ছোট যুদ্ধজাহাজ, অথবা একাধিক যুদ্ধজাহাজ। শেষোক্ত (যুদ্ধজাহাজ) ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার পূর্বের সুলু সাগরে নিরাপত্তা দেবার জন্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এসেট অফার করতে পারে। এতে সুলু সাগরের নিরাপত্তা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অভিজ্ঞতার নতুন দুয়ার খুলে যাবে। একইসাথে মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা নতুন এক মাত্রা পাবে।
আরও পড়ুনঃ
"সী-বেইসিং" - সমুদ্রেই ঘাঁটি!
পারস্য উপসাগরে মার্কিন ‘মোবাইল সী-বেইস’
১৯৮৭ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন সরকার পারস্য উপসাগরে তেলের জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করার ছুতোয় সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে। Operation Earnest Will and Operation Prime Chance নামের দু’টা অপারেশনের মাধ্যমে এই সামরিক অবস্থানের কাজ চলে। পারস্য উপসাগরের পানিতে ইরানের ভাসিয়ে দেয়া মাইন থেকে জাহাজগুলিকে রক্ষা করতে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল জর্জ ক্রিস্ট এক নতুন ধরনের পরিকল্পনা দেন। মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ দিয়ে তেলের জাহাজ রক্ষা করা ছাড়াও তিনি আলাদাভাবে পারস্য উপসাগরে হেলিকপ্টার, ছোট বোট এবং স্পেশাল ফোর্সের সেনাদের মোতায়েন করেন। ইরানের ছোট ছোট বোট থেকে জাহাজগুলিকে রক্ষা করতে বড় যুদ্ধজাহাজের চাইতে এই ছোট ফোর্সগুলিই বেশি কার্যকর হবে বলে তিনি মনে করেছিলেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় সৌদি আরব এবং কুয়েত উভয় দেশেই মার্কিন সৈন্যদের না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে এই ছোট ফোর্স কোথায় থাকবে? এই সুযোগখানা করে দেয় মার্কিন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি Brown & Root (বর্তমানে Kellogg Brown & Root)। ১৯৬২ সালে Haliburton নামের আরেক কোম্পানি Brown & Root-কে কিনে ফেলে এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি Haliburton নামেই সকলের কাছে পরিচিত ছিল। ২০০৭ সালে কোম্পানি দু’টি আলাদা হয়ে যায়। যাইহোক, এই কোম্পানিটি মার্কিন সরকারকে যুদ্ধের সহায়তা হিসেবে পারস্য উপসাগরে তাদের ব্যবহার করা দু’টা কন্সট্রাকশন বার্জ লিজ দিয়ে দেয়। Hercules এবং Wimbrown VII নামের বার্জ দু’টিকে মার্কিনীরা সমুদ্রের মাঝখানে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। বার্জদু’টিতে লম্বা সময়ের জন্যে মানুষ বসবাসের সুবিধা ছিল। একই সাথে সেখানে হেলিকপ্টার ডেক ছিল এবং যন্ত্রপাতি মেরামতের যথেষ্ট সুবিধা ছিল। Hercules-এর আকৃতি (৪০০ ফুট লম্বা এবং ১৪০ফুট প্রস্থ) ছিল সামরিক ব্যবহারের জন্যে বেশ উপযোগী। Wimbrown VII ছিল একটু ছোট (২৫০ ফুট লম্বা এবং ৭০ ফুট প্রশস্ত)। Wimbrown VII-কে কার্যকর করে তুলতে অবশ্য বেশকিছু কনভার্সন কাজ করতে হয়েছিল। দু’টি বার্জে যথাক্রমে ১৭৭ জন এবং ১৩২ জন সেনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দু’টা বার্জ মিলে মোটামুটি ১৬০ কিঃমিঃ ব্যাসের একটা এলাকা টহল দেবার পরিকল্পনা করা হয়; একেকটা ৮০ কিঃমিঃ করে পাহাড়া দেবে। বার্জগুলি থেকে মোটামুটি ৮০ কিঃমিঃ ব্যাসার্থের মাঝে কাজ করবে হেলিকপ্টার এবং ছোট বোটগুলি। যেহেতু রাত দিন ২৪ ঘন্টাই টহল দিতে হবে, তাই বার্জগুলিকে সমুদ্র পরিবহণের রুটের উপরে রাখা হলো – যাতে দরকার হলে অত্যন্ত তাড়াতাড়ি হস্তক্ষেপ করা যায়। আর রাতের বেলায় টহল দেবার ব্যবস্থাও করতে হলো। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে ব্যবহৃত রিভারাইন প্যাট্রোল বোট (PBR) নিয়ে আসা হলো এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের AH-6 ছোট এটাক হেলিকপ্টার বসানো হলো এতে। নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স Navy SEALS-এর সাথে ম্যারিন ফোর্সের একটা প্লাটুনও মোতায়েন করা হলো। বার্জগুলিকে ইরানি হামলা থেকে রক্ষা করতে মেটাল প্লেট এবং বালুর বস্তা দিয়ে পরিখার মতো দেয়াল তৈরি করা হলো। Hercules-এর উপরে ব্যবহার করা হয়েছিল ২০ হাজার বালুর বস্তা। এগুলির ভারে নিচু হয়ে যাওয়া বার্জের ডেকের উপরে সমুদ্রের ঢেউএর ঝাপটা লাগতে থাকে। বার্জের ডেকের উপরে সৈন্যদের হাতে দেয়া হলো ১২.৭ মিঃমিঃ মেশিন গান, ৪০মিঃমিঃ MK-19 গ্রেনেড লঞ্চার, TOW ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মিসাইল, ৮১ মিঃমিঃ মর্টার এবং বিমান বিধ্বংসী Stinger মিসাইল। ২৫মিঃমিঃ চেইন গান এবং ২০মিঃমিঃ বিমান-বিধ্বংসী কামানও বসানো হয়েছিল বার্জগুলিতে। জাহাজ-ধ্বংসী মিসাইল থেকে বাঁচতে এন্টি-মিসাইল রাডার রিফ্লেক্টরও স্থাপন করা হয়েছিল। Explosive Ordnance Disposal (EOD) Team-এর কিছু সদস্য ছাড়াও ম্যারিন কোরের একটা কমিউনিকেশন ডিটাচমেন্ট ছিল বার্জগুলিতে, যাদের কাজ ছিল ঐ এলাকায় সকল পক্ষের যোগাযোগের উপর নজরদারি করা।
কিছুদিন পরপরই বার্জগুলির স্থান পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ৮০কিঃমিঃ ব্যাসার্ধের এলাকায় হেলিকপ্টারগুলি আক্রমণ চালাবে। Mark III প্যাট্রোল বোটগুলি কাজ করবে এই ব্যাসার্ধের মাঝে। আর ৮ কিঃমিঃ ব্যাসার্ধের এলাকায় টহল দেবে Seafox এবং PBR ছোটবোটগুলি। ১৯৮৭ সালের অগাস্টের মাঝেই এই যুদ্ধের কনসেপ্ট দাঁড় করিয়ে ফেলা হয় এবং ওয়াশিংটনে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরা হয়। এবং এগুলির নামকরণ করা হয় Mobile Sea Base (MSB)। বেশিরভাগ কর্মকর্তাই এই কনসেপ্টকে নিতে পারেননি। তারা যুক্তি দিলেন যে, এই ঘাঁটিগুলি ইরানি নৌ এবং বিমানবাহিনীর টার্গেটে পরিণত হবে এবং এর উপরে থাকা বিভিন্ন বাহিনীর সেনাদের মাঝে একত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় বিশৃংখলার সৃষ্টি হবে। তবে এদের অনেকেই হিসেব করেননি যে, ইরানের বিমান এবং সেনাবাহিনীর বেশিরভাগই সেসময় ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় রয়েছে, এবং এদেরকে এই বার্জগুলির বিরুদ্ধে মোতায়েন সম্ভব হবে না। আর সেসময় ইরানের কাছে জাহাজ-ধ্বংসী মিসাইল তেমন একটা ছিল না। জেনারেল ক্রিস্টের হিসেব ছিল যে, ইরানিরা এই বার্জগুলির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে চলবে। আর এই বার্জের পক্ষে সবচাইতে বড় যুক্তি ছিল টাকার অংকটা। দু’টা বার্জ হারানো অবশ্যই বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধজাহাজ হারানোর মতো হবে না। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ অফিসার চেয়ারম্যান জয়েন্ট চীফ আব-স্টাফ এডমিরাল উইলিয়াম ক্রো এই প্রকল্পে সমর্থন দেয়াতে এটা এগিয়ে যায়। এলুমিনিয়ামের তৈরি স্পেশাল ওয়ারফেয়ারের ৬৫ফুট Mark III প্যাট্রোল বোটগুলির ড্রাফট ছিল মাত্র সাড়ে ৫ ফুট; যেকারণে সমুদ্রে অপারেট করতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছিল। কিন্তু মার্কিনীদের কিছু করার ছিল না। কারণ এর কোন বিকল্পও তখন তাদের কাছে ছিল না। এই বোটগুলিকে ৪০মিঃমিঃ কামান, ১২.৭মিঃমিঃ মেশিন গান এবং ৪০মিঃমিঃ গ্রেনেড লঞ্চারে সজ্জিত করার পর ইরানি বোটগুলির বিরুদ্ধে অত্যন্ত শক্তিশালী একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড়িয়ে যায়। যদিও গতি কমিয়ে ২৫ নটিক্যাল মাইলে আনতে হয়েছিল, তথাপি অস্ত্রের শক্তি বেশি থাকায় সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল তারা। মার্কিন সেনাবাহিনীর ১৬০তম স্পেশাল অপারেশনস এভিয়েশন রেজিমেন্টকে দায়িত্ব দেয়া হয় বার্জগুলিতে হেলিকপ্টার দেবার। রাতের বেলায় অপারেট করার জন্যে হেলিকপ্টারগুলিকে নাইট ভিশন গগলস এবং ফরওয়ার্ড লুকিং ইনফ্রারেড দ্বারা সজ্জিত করা হয়। একেকটা বার্জে ৩টা করে হেলিকপ্টার রাখার ব্যবস্থা করা হয়। মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ প্রায় ৩৫ কিঃমিঃ দক্ষিণে অবস্থান নিয়ে বার্জগুলির নিরাপত্তায় সহায়তা করে।
পারস্য উপসাগরের মাঝে মোবাইল সী-বেইসে মার্কিন সেনাবাহিনীর OH-58 এটাক হেলিকপ্টার। এন্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল সজ্জিত এই হেলিকপ্টারগুলি ছিল সী-বেইসের প্রধানতম অস্ত্র। |
AH-6 এটাক হেলিকপ্টার-এর স্থলে পরবর্তীতে মার্কিন সেনাবাহিনীর OH-58 হেলিকপ্টার আনা হয়েছিল। এই হেলিকপ্টারগুলি আরও বড় এবং রাতে চলার জন্যে আরও ভালো ইলেকট্রনিক্স ছিল এতে; অস্ত্রের দিক থেকেও ছিল আরও শক্তিশালী। Hellfire এন্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল বহন করতো এগুলি। এছাড়াও মার্কিন নৌবাহিনীর ফ্রিগেটগুলি থেকে ওড়া Sea Hawk হেলিকপ্টারগুলির রাডার খুব ভালো থাকায় এগুলি হেলিকপ্টার এবং বোট অপারেশনে বেশ সাহায্য করেছিল। মার্কিন বাহিনীর হাতে ইরানের নৌশক্তির একটা অংশব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধের অবসানের পর থেকে সহিংসতা কমতে থাকে, এবং বার্জগুলি ১৯৮৮-এর ডিসেম্বর এবং ১৯৮৯-এর জুলাই-এ Brown & Root –এর কাছে ফেরত দেয়া হয়। এই অপারেশনে নতুন কিছু ব্যাপার নিয়ে আসা হয়; যেমন-
১) Mobile Sea Base (MSB) নামের প্ল্যাটফর্মের কনসেপ্ট নতুন ছিল। মার্কিনীরা ‘ব্রাউন ওয়াটার নেভি’এর কনসেপ্ট-এ অভ্যস্ত হয় ভিয়েতনামে, যেখানে তারা ব্যাপকভাবে ছোট বোট, হেলিকপ্টার এবং মোবাইল বেইজ ব্যবহার করেছিল। সে হিসেবে এই প্ল্যাটফর্ম নতুন কিছু নয়। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যবহার করা মোবাইল বেইজগুলি তৈরি হয়েছিল নৌবাহিনীর ল্যান্ডিং শিপ-কে কনভার্ট করে। আর এবারে প্রাইভেট কোম্পানির বার্জ ব্যবহার করা হয় মার্কিন সরকারি কাজে।
২) নৌবাহিনীর প্ল্যাটফর্মে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারও অপারেট করেনি কখনও। অন্যাদিকে ম্যারিন কোরের হ্যারিয়ার বিমান এবং হেলিকপ্টার সর্বদাই ব্যবহার করা হয় নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে।
৩) সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার হলেও সেগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল পুরোপুরি ম্যারিটাইম কাজে। মেশিন গান, কামান, রকেট এবং হেলফায়ার মিসাইল ব্যবহার করা হয় শত্রুপক্ষের নৌবাহিনীকে আক্রমণ করতে।
মালয়েশিয়ার ‘সীবেইস’
মালয়েশিয়া সরকার কিছুটা একইরকম কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করছে কয়েক বছর ধরে। ২০১৫-এর জুলাই মাসে Tun Sharifah Rodziah নামের একটা অয়েল রিগ প্ল্যাটফর্মকে নৌবাহিনীর বেইজ হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। বাতিল হয়ে যাওয়া এই প্ল্যাটফর্মটি ছিল মালয়েশিয়ার তেল কোম্পানি পেট্রোনাস-এর। এর আগে একই বছরের মে মাসে Tun Azizan নামের একটি জাহাজকে কনভার্ট করে ফরওয়ার্ড বেইজ হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। পেট্রোনাস মালয়েশিয়ার আশেপাশের সমুদ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কর্মকান্ডগুলির অর্থায়ন করে। মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাতুক সেরি হিসামুদ্দিন হুসেইন ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশের পূর্বে সুলু সাগরে জঙ্গী তৎপরতার পর এই ‘সী বেইজিং’এর প্রস্তাব করেন। Tun Azizan নামের জাহাজটি ছিল মালয়েশিয়ার শিপিং কোম্পানি Malaysia International Shipping Corporation Berhad (MISC)-এর একটি কার্গো জাহাজ। পেট্রোনাসের অর্থায়নে জাহাজটি Malaysia Marine and Heavy Engineering (MMHE)-এর সহায়তায় কনভার্ট করা হয়। ১০২ মিটার লম্বা জাহাজটিতে ৯৯ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসাথে পানি, তেল, গোলাবারুদ এবং অনান্য সাপ্লাই-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে একটা হেলিকপ্টার ডেক এবং হ্যাঙ্গারও রয়েছে; কমান্ড এবং কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতিও রয়েছে। যেসব জাহাজে হেলিকপ্টার নেই, সেগুলি এই জাহাজ থেকে হেলিকপ্টার সাপোর্ট পায়। আবার ফ্লাইট ডেক থাকা ৯১ মিটার লম্বা Kedah-class ওপিভি-গুলি এই জাহাজের হেলিকপ্টারের সাথে কাজ করে হেলিকপ্টারের সক্ষমতা বাড়ায়। ছোট প্যাট্রোলবোটগুলি একে কেন্দ্র করে অপারেট করতে পারে। এই ছোট বোটগুলি Tun Azizan থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট পায় সমুদ্রে বেশি সময় থাকার জন্যে। এগুলির কমান্ড ও হয় বড় জাহাজটি থেকে। এই জাহাজটি থেকে কিছুটা আলাদা হলো Bunga Mas Lima(BM5) এবং Bunga Mas Enam (BM6)। ১৩৩ মিটারের ৯ হাজার টনের এই দু’টি জাহাজকে ২০০৯ সালে ডেভেলপ করা হয় মালয়েশিয়ার উপকূল থেকে দূরে গভীর সমুদ্রে অপারেট করার জন্য। ৭০০ কন্টেইনার বহন ক্ষমতার এই শিপগুলিকে কনভার্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যখন ২০০৮ সালে সোমালিয়ার উপকূলে মালয়েশিয়ার জাহাজ হাইজ্যাক হবার পর সমুদ্রেপথের নিরাপত্তা দিতে মালয়েশিয়ার নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠানো শুরু হয়। জাহাজগুলিতে অতিরিক্ত সেনা বহনের ব্যবস্থা করা ছাড়াও rigid hull inflatable boat এবং হেলিকপ্টার অপারেট করার ব্যবস্থা করা হয়। জাহাজগুলি বেসামরিক লোকেরা চালান; তবে এর মূল শক্তি হলো মালয়েশিয়ান স্পেশাল ফোর্স এবং এর হেলিকপ্টার। সোমালিয়ার উপকূলে KD Sri Inderasakti, KD Mahawangsa এবং KD Sri Inderapura জাহাজগুলি পাঠানো হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। ১৯৮৩ সালে জার্মানি থেকে কেনা KD Sri Inderasakti, KD Mahawangsa জাহজদু’টি ১০০ মিটার লম্বা ৪,৩০০ টনের লজিস্টিক সাপোর্ট জাহাজ, যেগুলি সর্বোচ্চ ৬০০ সৈন্য নিতে পারে, ১০টা কন্টেইনার নিতে পারে এবং বেশকিছু গাড়িও বহন করতে পারে। আর KD Sri Inderapura জাহাজটি মার্কিন নৌবাহিনীর উভচর Newport-class LST জাহাজ ছিল, যা ২০০৯ সালে আগুনে পুরে বাতিল হয়ে যায়। মেইনটেন্যান্স এবং অনান্য মিশনের চাপে জাহাজ সংকটে Bunga Mas Lima (BM5) এবং Bunga Mas Enam (BM6) জাহাজকে কনভার্ট করা হয়।তাছাড়া উপরে তিনটি জাহাজের একটাতেও হেলিকপ্টার হ্যাঙ্গার নেই, যা ছাড়া বাজে আবহাওয়ায় হেলিকপ্টার মেইন্টেন্যান্স সম্ভব নয়। তাই নতুন কনভার্ট করা জাহাজগুলিতে হ্যাঙ্গার স্থাপন করা হয়। বর্তমানে মালয়েশিয়ার নৌবাহিনীতে লজিস্টিক সাপোর্ট দেবার মতো পাঁচটা জাহাজ আছে, যেগুলির প্রত্যেকটিরই যুদ্ধ করার সক্ষমতা রয়েছে - KD Sri Inderasakti, KD Mahawangsa, Bunga Mas Lima (BM5), Bunga Mas Enam (BM6) এবং Tun Azizan ।এই প্রত্যেকটা জাহাজই হেলিকপ্টার সাপোর্ট করতে পারে।প্রত্যেকটা জাহাজেই কমান্ড-কন্ট্রোলের ফ্যাসিলিটি রয়েছে এবং এগুলিকে কেন্দ্র করে অনান্য যুদ্ধজাহাজ অপারেট করতে পারে। এগুলি মোবাইল সী-বেইস হিসেবে কাজ করছে।
তবে Tun Sharifah Rodziah নামের প্ল্যাটফর্মটা সত্যিই আলাদা। পারস্য উপসাগরে মার্কিন অপারেশনের সাথে এই প্ল্যাটফর্মের কিছু মিল রয়েছে। এটাকে তার স্থান থেকে সরানো যায় ঠিকই, তবে এর নিজের চলার ক্ষমতা নেই। একে মোটামুটিভাবে অস্থায়ী বেইস হিসবে ব্যবহার করা যায়; যা উপকূল থেকে দূরে গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট বা স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে। এতে সেনাদের থাকার ব্যবস্থা ছাড়াও কমান্ড-কন্ট্রোল, কমিউনিকেন্স, সার্ভেইল্যান্স এবং লজিস্টিক্যাল সাপোর্টের ব্যবস্থা রয়েছে। মালয়েশিয়ার সেনাবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ম্যারিন পুলিশ-সহ বিভিন্ন এজেন্সি এই ঘাঁটি ব্যবহার করে। ২৪ ঘন্টা সার্ভেইল্যান্সের মাধ্যমে সমুদ্রে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। কিছু ইন্টারসেপ্টর বোট এই বেইস-এ থাকে, যেগুলি যেকোন সময় দরকারমতো পাঠানো হয়। গভীর সমুদ্রে এরকম বেইস ছাড়া এই ছোট বোটগুলি মোতায়েন করা কঠিন। মালয়েশিয়ান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল দাতুক সেরি আহমাদ কামরুলজামান আহমাদ বদরুদ্দিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে গিয়েই সুযোগ হাজির হয়েছে, যা তারা কাজে লাগিয়েছেন। সুলু সাগরে জঙ্গি সংগঠনের আবির্ভাব না হলে মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী হয়তো এমন প্ল্যাটফর্মের দিকে যেতো না। তবে এখন সমুদ্র অনেক নিরাপদ করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ তার সমুদ্র সম্পদকে রক্ষায় যা করতে পারে…
পারস্য উপসাগরে মার্কিন অভিজ্ঞতা এবং মালয়েশিয়ার সুলু সাগরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্যে চমৎকার উদাহরণ হতে পারে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে সী-বেইস-এর অবতারণা করতে পারে। এর সপক্ষে কিছু শক্তিশালী দিক রয়েছে।
প্রথমতঃ বঙ্গোপসাগরে নতুন নতুন দ্বীপের আবির্ভাব হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই দ্বীপগুলির নিরাপত্তা খুব শিগগিরই ব্যবস্থা করা জরুরি। নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের প্যাট্রোল বোটগুলিকে সমুদ্রে বেশি সময়ের জন্য অপারেট করার একটা পদ্ধতি হতে পারে এ ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলি।
দ্বিতীয়তঃ বঙ্গোপসাগরে অতি গুরুত্বপূর্ণ কুতুবদিয়া আউটার এঙ্করেজ ছাড়াও নতুন নতুন অনেক স্ট্র্যাটেজিক স্থাপনা বসানো হচ্ছে, যেমন – মাতারবাড়ি ডীপ সী পোর্ট, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল, এলএনজি টার্মিনাল, ইত্যাদি। এর বাইরেও বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস আহরণের জন্যে চেষ্টা চলছে, যেগুলির সাথে বিভিন্ন স্থায়ী স্থাপনা লাগবে। সী-বেইসের মাধ্যমে মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের এই স্থাপনাগুলির ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা দেয়া সহজ হবে।
তৃতীয়তঃ বাংলাদেশের বাণিজ্যের ৯০%-এর বেশি সমুদ্রপথে হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার ভেতরে সী-বেইস স্থাপনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র রুটের ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হতে পারে।
চতুর্থতঃ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নিরাপত্তা প্রদানে সক্ষমতা বাড়াতে সী-বেইস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। বিপদে পড়া মাছ ধরার ট্রলারগুলিকেও সহায়তা দেয়া সহজ হতে পারে।
বাংলাদেশের কাছে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হবে; কারণ এই মুহুর্তে মালয়েশিয়া বিভিন্ন প্রকারের সী-বেইস অপারেট করছে। তারা কার্গো শিপ থেকে কনভার্ট করা লজিস্টিক জাহাজ যেমন অপারেট করছে, তেমনি অয়েল রিগ থেকে কনভার্ট করা প্ল্যাটফর্মও অপারেট করছে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার কাছে প্রস্তাব রাখতে পারে, যাতে এই জাহাজ এবং প্ল্যাটফর্মের সাথে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর কিছু এলিমেন্টকে এটাচ করা যায়। এই এলিমেন্ট হতে পারে একজন অফিসার, একটা নাবিকের গ্রুপ, একটা ছোট যুদ্ধজাহাজ, অথবা একাধিক যুদ্ধজাহাজ। শেষোক্ত (যুদ্ধজাহাজ) ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার পূর্বের সুলু সাগরে নিরাপত্তা দেবার জন্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এসেট অফার করতে পারে। এতে সুলু সাগরের নিরাপত্তা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অভিজ্ঞতার নতুন দুয়ার খুলে যাবে। একইসাথে মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা নতুন এক মাত্রা পাবে।
আরও পড়ুনঃ
"সী-বেইসিং" - সমুদ্রেই ঘাঁটি!
ধন্যবাদ।
ReplyDelete