০৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
অনেকেরই
একটা ধারণা রয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটা শক্তিশালী নৌবহরের মালিক বলেই
উমুক-তমুক কাজ করে বেড়াতে সক্ষম; অন্যরা পারে না। কিন্তু যেটা তারা বুঝতে পারেন না
তা হলো, মার্কিনীদের বিশ্বরাজনীতিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যে একটা শক্তিশালী
নৌবহরের দরকার হয় বলেই তারা শক্তিশালী নৌবহরের মালিক। অর্থাৎ এখানে তাদের রাজনৈতিক
উদ্দেশ্য না বুঝতে পারলে তাদের সামরিক শক্তির পাঠোদ্ধার সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের
নৌশক্তি তাদের বিরূদ্ধাচরণ করা জনগোষ্ঠীর জন্যে যেমন ভয়ঙ্কর, তাদের এই বাহিনীর
সরমশক্তির বিশ্লেষণও তেমনই রোমাঞ্চকর। তারা বর্তমানে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের সংজ্ঞা
পরিবর্তন করছে প্রতিদিন। তাই যারা স্ট্র্যাটেজিক বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন,
তাদের জন্যে মার্কিন সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ একপ্রকার ফরয কাজই হয়ে গেছে। পৃথিবীতে
সবচেয়ে বেশি সামরিক শক্তিধর দেশই শুধু নয়, সামরিক দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত
থাকছে মার্কিন বাহিনী। তাই তাদের সমরশক্তির ব্যবহার সমরবিদদের জন্যে পথপ্রদর্শক
হিসেবে কাজ করছে প্রতিনিয়ত।
সমুদ্র থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং সেখান থেকেই স্থলভাগে হামলা চালানো "সী-বেইসিং" কনসেপ্টের মূল |
“সী-বেইসিং” কি?
স্নায়ূযুদ্ধের
সময়ে মার্কিন স্ট্র্যাটেজি যা ছিল, তা এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে সেটা বোঝার
জন্যে কিছু সামরিক চিন্তাধারা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে “সী-বেইসিং” (Seabasing), যার অর্থ হচ্ছে –
সমুদ্র থেকে যুদ্ধ চালনা। এখানে সমুদ্রই হবে তাদের জন্যে ঘাঁটি। বহুযুগ ধরে
মার্কিনীরা সমুদ্রের উপরে নির্ভর করে ভূরাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত
করেছে। স্থলভাগে যেমন কিছুদূর পরপরেই একেক দেশের সীমানা থাকে, যা কিনা গতিরোধ করে
বসে, সমুদ্রপথে কিন্তু তা নেই। পৃথিবীর বেশিরভাগ ‘গোলযোগপূর্ণ’ স্থানেই কিন্তু সমুদ্র থেকে পৌঁছানো সম্ভব। আর রাজনৈতিক যোগসাজসে সমুদ্র
থেকে অনেক দূরে থাকা দেশেও সমুদ্র থেকে পৌঁছানো সম্ভব –
উদাহরণ, আফগানিস্তান। চারিদিকে স্থলসীমানা-বেষ্টিত হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের
সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে আরব সাগর থেকে আফগানিস্তানে পৌঁছেছিল (অন্য দিক
দিয়েও বিমানপথে পৌঁছেছিল); মানে সমুদ্রকে একটা ঘাঁটি বা বেইস হিসেবে ব্যবহার
করেছিল। স্নায়ূযুদ্ধের সময়ে এই “সী-বেইসিং” ছিল বড়সড় স্থলযুদ্ধের একটা ‘সাইড-শো’। অর্থাৎ সর্বদাই
প্রধান যুদ্ধের পরিকল্পনা ছিল স্থলভাগের
একেবারে অভ্যন্তরে। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের জার্মানী আর স্নায়ূযুদ্ধের সোভিয়েত স্থলশক্তিকে প্রতিহত করার জন্যে
স্ট্র্যাটেজি ছিল স্থলমূখী। এই স্ট্র্যাটেজির একটা প্রধান দিক ছিল সারা বিশ্বে বড়
বড় সামরিক স্থাপনা। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলির সহায়তায় পৃথিবীর অনেক
দেশে তৈরি হয়েছিল এইসব ঘাঁটি। যেকোন যুদ্ধের সময়ে এই ঘাঁটিগুলি ব্যবহার করে তারা
সৈন্য সমাবেশ করেছিল, অথবা করার পরিকল্পনা করেছিল। মানে আসল যুদ্ধটা তারা চিন্তা
করেছিল ঘাঁটিতে সৈন্য সমাবেশ করার পরে। ১৯৯০-৯১ সালের প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে
যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে ব্যবহার করেছিল ঘাঁটি হিসেবে। সেক্ষেত্রে পারস্য উপসাগরে
থাকা মার্কিন নৌশক্তির গুরুত্ব কম না হলেও সৌদি আরবে জমায়েত করা স্থলশক্তির চাইতে
বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। স্থলভাগে ঘাঁটির উপরে এই নির্ভরতায় আজ অনেক পরিবর্তন
এসেছে, তাই মার্কিন স্ট্র্যাটেজিতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। ‘সাইড-শো’-তে থাকা “সী-বেইসিং” এখন প্রধান ভূমিকায় চলে এসেছে।
USNS Spearhead (JHSV-1) নতুন কনসেপ্টের নতুন ডিজাইনের জাহাজ। সমুদ্রের উপর দিয়ে দ্রুত সৈন্য আনানেওয়াতে এক্সপার্ট। সামনের দিনগুলিতে যুদ্ধের প্রকৃতির ধারণা দিচ্ছে এই ধরনের জাহাজগুলি। |
নতুন
নতুন ডিজাইন
তাহলে
“সী-বেইসিং”-এর এই গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া কি খুব নতুন
কিছু? না, সেটা নয়। গুরুত্ব বাড়ছে স্নায়ূযুদ্ধ শেষ হবার পর থেকেই। কারণ তখন থেকেই
ঘাঁটির সংখ্যা কমছে। কিন্তু তারপরেও মার্কিন নৌবাহিনী এমন কিছু জাহাজের ডিজাইন
করেছে, বা জাহাজের ডিজাইন টেস্ট করেছে, যেগুলি স্থলভাগের ঘাঁটির উপরে নির্ভরশীল। “হাই-স্পীড ভেসেল” (HSV) নাম দিয়ে এক ধরনের জাহাজ তারা অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়ে আসলো টেস্ট করার
জন্যে। ক্যাটামারান (দুইটা খোল) ধরনের এই জাহাজের মূল দিক ছিল গতি। অত্যন্ত দ্রুত
অল্প সংখ্যক সৈন্য মোতায়েনের উদ্দেশ্যে এই জাহাজ টেস্ট করা শুরু হলো। কিন্তু এই
জাহাজগুলি মার্কিন নৌবাহিনীর উভচর জাহাজের (এম্ফিবিয়াস জাহাজ) মতো পানিতে
ল্যান্ডিং ক্রাফট বা হোভারক্রাফট ছাড়তে পারে না। উভচর জাহাজগুলি যেমন কোন বন্দর
ছাড়াই শত্রুপক্ষের সমুদ্রতটে সৈন্য নামাতে পারে, এই নতুন ধরনের ক্যাটামারান
জাহাজগুলি কিন্তু সেটা পারে না। হেলিকপ্টারের
মাধ্যমে কিছু সংখ্যক সৈন্য তারা উপকূলে অবতরণ করাতে পারলেও, তাদের ভারী যুদ্ধসরঞ্জামগুলি
কিন্তু জাহাজেই রয়ে যাবে। সেগুলি মাটিতে নামাতে তাদের খুব কম করে হলেও একটা
শক্তসমর্থ জেটি দরকার হবে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা HSV নামের এই জাহাজগুলি মার্কিন নৌবাহিনী ফেরত দিয়ে দিয়েছে। তবে নিজেদের জন্যে
বেশ কয়েকটি বানাচ্ছে তারা। এগুলির নাম এখন পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে JHSV, মানে জয়েন্ট-HSV, যা কিনা ম্যারিন, আর্মি, নেভি সকলের
দ্বারা পরিচালিত হবে। এই জাহাজগুলি তৈরি করার আপাত
অর্থ দাঁড়াচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র এখনো তাদের সী-বেইসিং স্ট্র্যাটেজির জন্যে স্থলভাগে
কিছু বন্দর বা ঘাঁটির উপরে নির্ভরশীল থাকবে। কিন্তু এই অবস্থানের বিরাট পরিবর্তন
হয়েছে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই – আরেকটি জাহাজের ডিজাইনের
মাধ্যমে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যত নতুন ধরনের যুদ্ধজাহাজের ডিজাইন করা হয়েছে, তার মধ্যে এই "মোবাইল ল্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ম" বা এমএলপি (MLP) একেবারে সন্মুখে থাকবে। এগুলি সমুদ্রে মাঝে একেকটা ঘাঁটি। |
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যত নতুন ধরনের জাহাজের ডিজাইন করা হয়েছে, তার মধ্যে উপরের
দিকে থাকবে “মোবাইল ল্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ম” (MLP)। এই জাহাজগুলি সমুদ্রের মাঝে
একটা বন্দর। মানে স্থলভাগের সেই ঘাঁটিটি যেখানে নেই, সেখানেও সী-বেইসিং
স্ট্র্যাটেজি এপ্লাই করা সম্ভব হবে। কিন্তু সম্ভব হবে বলেই কি এই জাহাজ বানানো?
না! ওই যে প্রথমেই বলেছি – তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই
তাদেরকে বলে দিচ্ছে যে কি ধরনের নৌবহর লাগবে। তারা বুঝতে পারছে যে কিছুদিন আগ
পর্যন্তও স্থলভাগে যে রাজনৈতিক সহায়তা তারা পেয়েছে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্যে,
সেই সহায়তায় সামনের দিনগুলিতে খরা আসছে। আর সামনের দিনগুলি যখন বলবো, তখন কমপক্ষে
২০ থেকে ৩০ বছরের কথা বলছি। কারণ একটা জাহাজ তৈরি করা হয় খুব কম করে হলেও ওই সময়
বিবেচনায়, যদি না সেটা কোন বিশ্বযুদ্ধের কথা বিবেচনায় রেখে করা হয় (দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল ছয় বছর; এই ছয় বছরেই হাজার হাজার নৌজাহাজের নবীন অবস্থায় সলীল
সমাধি হয়েছিল)। এমএলপি নামের এই জাহাজগুলি তৈরি করা হয়েছে অয়েল ট্যাঙ্কারের
ডিজানের উপরে। জাহাজের মাঝখানে বিরাট একটা খালি জায়গা রেখে দেয়া হয়েছে পাশে নোঙ্গর
করা ট্র্যান্সপোর্ট জাহাজ থেকে সৈন্য ও রসদ নামানোর জন্যে। র্যাম্পের মাধ্যমে
পাশের জাহাজ থেকে গাড়ি, ট্যাঙ্ক, কামান, রসদ নামানো যায়, যেই জাহাজ কিনা আনলোড
করার জন্যে একটা বন্দরের উপরে নির্ভরশীল ছিল। কাজেই একটু আগেই যে জেএইএসভি নামের
ক্যাটামারান জাহাজের কথা বলেছিলাম, সেটি কিন্তু এখন ঘাঁটি ছাড়াই সৈন্য নামাতে
পারছে। এই এমএলপি জাহাজের ডিজাইন এমনভাবে করা যে তার এক পাশে অন্য জাহাজ থেকে
রসদপাতি নামবে, আর অন্য পাশ থেকে হোভারক্রাফট বা অন্য কোন কানেক্টরের (ল্যান্ডিং
ক্রাফট, এম্ফিবিয়াস গাড়ি, ইত্যাদি) সাহায্যে রসদপাতি দ্রুত পৌঁছে যাবে উপকূলে। এখন
প্রশ্ন হলো, মার্কিন নৌবাহিনীর এম্ফিবিয়াস জাহাজগুলি তো এই কাজটা করতেই পারতো।
তাহলে এরকম উদ্ভট পদ্ধতির দরকার কেন হচ্ছে? কারণ এম্ফিবিয়াস জাহাজগুলি অনেক বেশি
দামী; একই সাথে সেগুলি এই কাজে অনেক বেশি এক্সপার্টও বটে। যেখানে বেশি শক্তিশালী শত্রু
থাকবে, সেখানে দামী এম্ফিবিয়াস জাহাজগুলি যাবে; আর যেখানে প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত
দুর্বল, সেখানে এই এমএলপি-জেএইচএসভি এবং অনান্য ট্রান্সপোর্ট জাহাজের কম্বিনেশন
কাজ করবে।
সামনের
দিনগুলি
যুক্তরাষ্ট্রের
স্ট্র্যাটেজিক এসেসমেন্ট বলছে যে সামনের দিনগুলিতে তাদেরকে সমুদ্রের উপরে নির্ভর
করে অনেক বেশি সামরিক মিশনে অংশগ্রহণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদের বর্তমান
শক্তিশালী এম্ফিবিয়াস ফোর্সও টানা-হ্যাঁচড়ার মাঝে পড়ে যাবে। এই সমস্যা মোকাবিলায়
তারা তাদের বর্তমান কিছু ট্র্যান্সপোর্ট জাহাজ ব্যবহার করতে চাইছে যেগুলি
এম্ফিবিয়াস ফোর্সের সাপোর্টে ব্যবহৃত হয়। “ম্যারিটাইম
প্রিপোজিশনিং ফোর্স” (MPF) নামে পরিচিত এই জাহাজগুলি পৃথিবীর হাতে গোণা কয়েকটা স্থানে বসে থাকে। যখনই
কোন যুদ্ধ আসন্ন হয়, তখন এই জাহাজগুলি সেই অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়। এই জাহাজগুলি
সারা বছর নির্দিষ্ট কিছু সামরিক সরঞ্জাম এবং রসদ নিয়ে বসে থাকে। “প্রি-পোজিশনিং”, মানে আগে থেকেই “পজিশনিং” বা প্রস্তুত করে রাখার এই কনসেপ্টকেই আরও কিছুটা টেনে নিয়ে এমএলপি-জেএইচএসভি
এবং অন্যান্য জাহাজের সাথে যুক্ত করে আলাদা ধরনের একটা এম্ফিবিয়াস ফোর্স তৈরি করা
হচ্ছে। এতে মার্কিন নৌবাহিনী উভচর অপারেশনের দিক থেকে বর্তমানের চাইতে সামনের
দিনগুলিতে প্রায় ৫০% বেশি সৈন্য ও রসদ শত্রুর উপকূলে নামাতে পারবে। আর এটা তারা
করতে পারছে এম্ফিবিয়াস জাহাজের সংখ্যা ৫০% না বাড়িয়েই। এখানে তাদের এই সক্ষমতা
কিন্তু ৫০% বাড়ছে বললেও কমই বলা হবে। কারণ এমএলপি-এর মতো একটা প্ল্যাটফর্মের
মাধ্যমে তারা যেকোন বেসামরিক ট্র্যান্সপোর্ট জাহাজকেও বন্দর ছাড়া আনলোড করতে
পারবে। আর অনেকেই হয়তো জানেন না যে মার্কিনীরা বহুকাল ধরেই তাদের রিটায়ার করা বহু
সামরিক এবং বেসামরিক জাহাজ রিজার্ভে রেখে দেয় বছরের পর বছর। “নেভি রিজার্ভ ফ্লীট”-এ থাকে সামরিক জাহাজ, আর “ন্যাশনাল
ডিফেন্স রিজার্ভ ফোর্স” (NDRF)-এ থাকে বেসামরিক ট্র্যান্সপোর্ট জাহাজ। ন্যাশনাল
ইমার্জেন্সির সময়ে এই জাহাজগুলি ব্যবহার করা হয়। সাধারণ সময়ে রিকুইজিশন করে
বেসামরিক জাহাজ ব্যবহার করা হলেও কিছু ক্ষেত্রে সেটা করা সমীচিন হয় না। আর তাই
যুক্তরাষ্ট্র কিছু কিছু জাহাজ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রিজার্ভে রেখে দিয়েছে – কোন একদিন ব্যবহার হতে পারে বলে। রিজার্ভে থাকা শতশত এইসব জাহাজ এমএলপি
জাহাজের পাশে নোঙ্গর করতে পারবে তাদের রসদ নিয়ে। “সী-বেইসিং” কনসেপ্টের পুরোপুরি সদ্যবহার আমরা সামনের দিনগুলিতে দেখতে যাচ্ছি। যদিও
যুক্তরাষ্ট্র তাদের রিজার্ভে রাখা জাহাজের সংখ্যা স্নায়ূযুদ্ধের সময়ের চাইতে অনেক
কমিয়ে দিয়েছে, তারপরেও এই ধরনের সক্ষমতা থাকাটা ন্যাশনাল ইমার্জেন্সির সময়ে অনেক
বড় ব্যাপার হবে।
USS Independence (LCS-2)... "লিটোরাল কমব্যাট শিপ"... এই ধরনের জাহাজগুলি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ফ্রিগেটগুলিকে সরিয়ে দিচ্ছে। আর আমরা এখনো ফ্রিগেট/কর্ভেট/ডেস্ট্রয়ারের ক্লাসিফিকেশন নিয়ে ব্যাস্ত |
USS Zumwalt (DDG-1000)... "সী-বেইসিং" কনসেপ্ট-এর সবচাইতে শক্তিশালী অংশগুলির মধ্যে একটি হবে এটি। নিজেদের জাহাজের নিরাপত্তা দেবার চাইতে শত্রুর উপকূল ধ্বংসস্তূপে পরিণত করাই এর প্রধান দায়িত্ব! |
ক্যাটেগরির
যুদ্ধ!
এমএলপি-এর
পরের দিকের জাহাজগুলির উপরে আবার হেলিকপ্টার ডেকও দেওয়া হয়েছে। কমান্ড এন্ড
কন্ট্রোলের জন্যে কিছু ফ্যাসিলিটিও দেওয়া হয়েছে। এখন এই জাহাজগুলি সমুদ্রে ঘাঁটি
হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এই ভাসমান ঘাঁটিগুলি শত্রুর উপকূল থেকে খুব একটা দূরে থাকবে না।
কাজেই এই জাহাজগুলিকে উপকূল থেকে আক্রমণ করা বিমান, জাহাজ এবং মিসাইল থেকে
বাঁচানোর প্রশ্ন আসবে। এয়ার ডিফেন্সের কাজ বিমানবাহী জাহাজ, ডেস্ট্রয়ার এবং
এম্ফিবিয়াস এসল্ট শিপ করবে। তবে স্বল্প গভীরতার পানিতে শত্রুর দ্রুতগামী
জাহজগুলিকে মোকাবিলার জন্যে তৈরি হচ্ছে “লিটোরাল কমব্যাট শিপ” (LCS)। এই জাহাজগুলি তৈরি করাই
হয়েছে অল্প গভীরতার পানিতে ছোট সাইজের জাহাজের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে।
জুমওয়াল্ট-ক্লাসের “ডেস্ট্রয়ার”গুলি
তৈরি করা হয়েছে সমুদ্রে দাঁড়িয়ে থেকেই স্থলভাগ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার জন্যে।
স্নায়ূযুদ্ধের ডীপ-সী ফাইটিং স্ট্র্যাটেজি এখন আর নেই।
যারা
যুদ্ধজাহাজের ক্যাটেগরি নিয়ে মারামারি করছেন, তারা কতটা ছেলেখেলায় মেতেছেন, এই
আলোচনার পরে আশা করি বুঝতে পারবেন। MLP, JHSV, LCS এরকম আরও কত্ত কতো ব্র্যান্ড নিউ ক্যাটেগরি তারা এখন তৈরি করছে। বাংলাদেশ
নৌবাহিনীর জন্যে যখন দুর্জয়-ক্লাস জাহাজগুলি তৈরি করা হচ্ছিলো, তখন অনেকে অনেকভাবে
এই জাহাজগুলিকে কোন একটা ক্যাটেগরিতে ফেলতে চাচ্ছিলেন, যেই ক্যাটেগরিগুলি আমেরিকান
এবং ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল। ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কর্ভেট, স্লুপ,
ফ্রিগেট এবং আরও অনেক ধরনের জাহাজ তৈরি করেছিল ট্র্যান্সপোর্ট কনভয়গুলিকে এসকর্ট
করার জন্যে। আমেরিকানরা প্রথম তৈরি করেছিল ল্যান্ডিং শিপ, যেটা তৈরি করতে মার্কিন
নৌবাহিনীর সংবিধান পরিবর্তন করতে হয়েছিল (জাহাজ মাটিতে উঠালে কোর্ট মার্শাল হবার
কথা; কিন্তু ল্যান্ডিং শিপ তো বানানোই হয়েছিল মাটিতে উঠানো জন্যে)। কিন্তু যখন এই
বৃহত শক্তিরা নিজেরাই এই ক্যাটেগরিগুলি ফেলে দিয়ে নতুন ক্যাটেগরি বানাচ্ছে, তখন
আমাদের কি বোঝা উচিত নয় যে – নিজেদের দরকারে আসলে অন্যের
ক্যাটেগরি দিয়ে কাজ হয় না? নিজের ক্যাটেগরি নিজেরা তৈরি করার মাঝেই নিজেদের
স্বাধীন চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।
No comments:
Post a Comment