রো-রো জাহাজের পেট থেকে বের হয়ে আসছে ট্যাংক। পোর্ট সুদান, সুদান; ডিসেম্বর ২০১৭। |
২৫শে ডিসেম্বর ২০১৭
২০১৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর। লোহিত সাগরের উপকূলে সুদানের পোর্ট সুদান বন্দরে ভিড়লো সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা একটা জাহাজ। জাহাজটা হলো রো-রো ফেরি ‘জাবাল আলী-৫’। বন্দরের জেটিতে ভিড়তেই এর পেছনের ভেহিকল র্যাম্প বেয়ে নেমে এলো সামরিক ট্যাঙ্ক এবং আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার।
জাহাজটা 'বেসামরিক'; 'জাবাল আলী-৫'। কিন্তু এর কার্গো সামরিক। |
আসল ব্যাপারটা হলো, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সৈন্যরা এসেছে সুদানে সামরিক মহড়া “কোস্ট হিরোজ-১”-এ অংশগ্রহণ করার জন্যে। দু’দেশের মাঝে এটা ছিল প্রথম যৌথ সামরিক মহড়া। এতে দেশদু’টার কূটনৈতিক সম্পর্কের মাঝেও উন্নতি হবে হয়তো। তবে তাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সংস্থাগুলির মাঝে যোগাযোগ এবং সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে, তা নিশ্চিত। যদিও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ মূলত পশ্চিমা সামরিক অফিসাররাই করে থাকে, তথাপি এরকম সামরিক মহড়ার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের সামরিক বাহিনীগুলির পরস্পরের সাথে কাজ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
এই সামরিক মহড়া একদিকে যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাব বিস্তারকে সামনে আনে, তেমনিভাবে মুসলিম বিশ্বের সামরিক বাহিনীগুলির মাঝে সহযোগিতা বৃদ্ধির কিছু পদ্ধতিও দেখিয়ে দেয়। যে জাহাজটাতে করে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পোর্ট সুদানে এসেছিল, সেটাকে যেকেউ বর্তমান বিশ্বের সংজ্ঞায় বেসামরিক জাহাজই বলবে। দুবাই-এর নাইফ ম্যারিন সার্ভিসেস নামের জাহাজ কোম্পানির জাহাজ রয়েছে চারটা। তার মাঝে একটা জাহাজ হচ্ছে ‘জাবাল আলী-৫’, যেটাতে চড়ে আমিরাতের ট্যাঙ্ক এবং আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ারগুলি সুদানে এসে অবতরণ করেছে। (সেনারা এসেছে মূলত বিমানে চড়ে) ১৯৭৯ সালে জাপানে তৈরি ৮ হাজার টনের এই জাহাজ কনটেইনার বহণ করতে পারে, আবার জাহাজের খোলের মাঝে গাড়িও বহণ করতে পারে। আমিরাতিরা ইয়েমেন যুদ্ধের সময়েও এরকম জাহাজ ব্যবহার করেছে সেনা এবং রসদ আনা-নেয়ার কাজে। ইরিত্রিয়ার আসাব বন্দরে আমিরাত সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে, যেখানে এরকম বড় জাহাজগুলি মালামাল নিয়ে আসে; আর ল্যান্ডিং ক্রাফটের মাধ্যমে ইরিত্রিয়া থেকে কাছাকাছি ইয়েমেনের যেকোন স্থানে পাঠায়। ল্যান্ডিং ক্রাফটে করে পাঠালে ভালো কোন বন্দর লাগে না; তাই বেশ সুবিধা। এক্ষেত্রে আমিরাতিরা দূরবর্তী স্থানে রসদ পাঠাতে ব্যবহার করেছে বড় বড় বেসামরিক জাহাজ; আর কাছাকাছি পরিবহণে ব্যবহার করেছে ল্যান্ডিং ক্রাফট। এরকম ল্যান্ডিং ক্রাফট কিছুদিন আগেই বাংলাদেশও তৈরি করেছে আরব আমিরাতের জন্যে।
নাইফ ম্যারিটাইম সার্ভিসেস-এর জাহাজ 'জাবাল আলী-৫'-এর আগের ছবি। জাহাজটা বেসকারি মালিকানায় হলেও সামরিক রসদপাতি বহণ করে জানান দিল যে এগুলির রাষ্ট্রের অংশ। |
মুসলিম বিশ্বের সামরিক বাহিনীগুলির মাঝে যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একমাত্র বাধা হচ্ছে দেশগুলির পশ্চিমা রাজনৈতিক ধ্যানধারণা; যা ডিভাইড এন্ড রুল-এর প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ। যে সুযোগে জেরুজালেম যেমন ইস্রাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হলো, তেমনি মিয়ানমারের মুসলিমরা, কাশ্মিরের মুসলিমরা, আফগানিস্তান, উইঘুর, ইরাক, সিরিয়ার মুসলিমরা নিধনের শিকার হয়েছে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে সৈন্য পাঠানো আসলে কতটা সহজ, সেটা অন্ততঃ এই উদাহরণগুলিতেই চলে আসে। এটা সহজ হয়ে যায় যদি সৈন্যদের দেশ আর অবতরণের দেশের মাঝে রাজনৈতিক ধ্যানধারণায় পার্থক্য না থাকে। ঠিক যেমনটা ছিল ১৯৯০ সালে ইরাকের কুয়েত আক্রমণের সময়ে। সৌদি সরকার মার্কিন সেনাদের ডেকে নিয়ে এসেছিল। তাই মার্কিন সেনারাও বন্ধুর বেশে আরবের মাটিতে অবতরণ করেছিল। মার্কিন সেনারা হরহামেশা মুসলিম দেশে অবতরণ করেছে; অথচ এরকম অবতরণের পদ্ধতি মুসলিম দেশগুলির নিজেদের মাঝে দেখা যায় না। মার্কিন সেনাদের অধীনে মুসলিম সেনারা জীবন দিয়েছে; কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না থাকায় মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষায় তারা কিছুই করতে পারেনি। মুসলিম সেনারা একক নেতৃত্বের অধীনে থাকলে মুসলিমদের গায়ে হাত দেয়ার সাহস কেউ দেখাতো না।
আরও পড়ুনঃ
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ওভারসীজ ট্রেনিং কমান্ড গড়ার সময় এসেছে
আপনার অনেক লেখা পড়েছি কৌশল-এ, সাম্প্রতিক দেশকাল -এ, অসাধারন লাগে।
ReplyDeleteবিশেষ করে আদর্শিক আর ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কিত।
তবে অনেক দিন ধরেই কৌশল -এ লেখা পাইনি। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি লিখবেন।
অনেক ধন্যবাদ ভাই। সময়ের স্বল্পতায় লেখা কমে গেছে। তবে চেষ্টায় আছি আবারও বাড়ানোর।
Deleteঅসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। অপেক্ষায় আছি।
ReplyDeletewhoah this blog is fantastic i really like reading your posts.
ReplyDeleteKeep up the great work! You recognize, many individuals are looking around for
this info, you can help them greatly.
Thank you very much for the appreciations.
DeleteIf the writings help people to start discussing the things that are not being discussed, that would be start of things. Ultimately, conceptual development of people through a higher level of understanding would benefit the society more than anything else. This blog is a small effort in that direction.