Thursday 13 April 2023

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসের ঘটনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

১৩ই এপ্রিল ২০২৩

ঘটনাটা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও একধাপ কমতে সহায়তা করবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি আদর্শিক দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে থাকতো, তাহলে এরূপ ঘটনা খুব একটা ক্ষতিকর হতো না। ক্ষতি কতটা হয়েছে, সেটাও মার্কিনীরা পুরোপুরি বুঝতে পারছে কিনা, সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা ‘ভয়েস অব আমেরিকা’র মতো। তাদের এক প্রতিবেদনে তারা এই ডকুমেন্টগুলির ছবি ঝাপসা করে দিয়ে প্রকাশ করেছে। যখন এটা পত্রিকার হেডলাইন হয়ে গিয়েছে এবং পুরো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে গেছে, তখন এহেন প্রচেষ্টা হাস্যকরই বটে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের কিছু গোপন দলিল অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ওয়াশিংটনসহ বিশ্বব্যাপী আলোচনারা ঝড় উঠেছে। যে ব্যাপারটা প্রায় অবাক করার মতো তা হলো, প্রায় মাসখানেক ধরেই এই দলিলাদি অনলাইনে ঘোড়াফেরা করলেও ৬ই এপ্রিল ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এই দলিল প্রকাশ করার পরেই এটা জনসন্মুখে আসে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, প্রায় শ’খানেক গোপন দলিল প্রকাশ হয়ে গেছে। এগুলি মূলতঃ ছিল মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি’ বা ‘এনএসএ’, ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি’ বা ‘সিআইএ’, ‘ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি’ বা ‘ডিআইএ’, ‘ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন’ বা ‘ডিইএ’, এবং ‘ন্যাশনাল নেকনাইস্যান্স অফিস’ বা ‘এনআরও’এর সংগ্রহ করা এবং বিশ্লেষিত বিভিন্ন তথ্য। ডকুমেন্টগুলির উপর লেখা দেখে বোঝা যায় যে, এগুলি হয়তো সর্বোচ্চ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জয়েন্ট চিফ অব স্টাফএর চেয়ারম্যান জেনারেল মাইক মিলিএর জন্যে তৈরি করা হয়েছিল। তবে ‘নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন’ বলছে যে, যেকোন কর্মকর্তা, যার যথেষ্ট উচ্চ পর্যায়ের অনুমতি রয়েছে, তার পক্ষে এগুলি দেখা সম্ভব। ফাঁস হওয়া তথ্য মূলতঃ প্রিন্ট করা বিভিন্ন ডকুমেন্ট এবং স্লাইডের ছবি। বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, এগুলি কেউ একজন পকেটে পুড়েছিল; এরপর অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে সুযোগ বুঝে সেগুলির ছবি তুলে নিয়েছে। এগুলির কিছুর উপরে লেখা রয়েছে যে, এগুলি মার্কিন বন্ধু দেশগুলির সাথে শেয়ার করার জন্যে। আর অন্যগুলির উপরে লেখা রয়েছে যে, সেগুলি শুধুমাত্র মার্কিনীদের জন্যে। এর থেকে যে ব্যাপারটা বোঝা যায় তা হলো, ডকুমেন্টগুলি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই বের হয়েছে; অন্য কারুর কাছ থেকে নয়। ‘ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ডকুমেন্টের ছবিগুলির পাশে বিভিন্ন বস্তুও দেখা যাচ্ছে, যেগুলি থেকে হয়তো কে এই কাজটা করেছে, তাকে বের করা যেতে পারে। কিছু ডকুমেন্টে আবার কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে সেটা খুব সম্ভবতঃ ডকুমেন্টগুলি ফাঁস করার পরে করা হয়েছে। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো এবং ইউক্রেনের হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে পরে কেউ করেছে।

কিভাবে, কে বা কারা এগুলি করতে পারে

মার্কিন ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ‘বেলিংক্যাট’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, মার্চের প্রথম দুই দিনে অনলাইনে ‘ডিসকর্ড’ নামের একটা গেমিং বিষয়ক চ্যাটরুমে কেউ একজন প্রায় ৩০টার মতো ডকুমেন্ট পোস্ট করে। এরপর কিছুদিনের মাঝে সেগুলি অন্যান্য সাইটেও চলে আসে। এরপর মাসখানেক পরে এগুলি ‘টেলিগ্রাম’, ‘ফোরচ্যান’ মেসেজ বোর্ড এবং ‘টুইটার’এ ছড়িয়ে পড়লে তা অনেকের সামনেই চলে আসে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষেও সম্ভবতঃ ‘ডিসকর্ড’এ কিছু ডকুমেন্ট প্রকাশ করা হয়। ‘বেলিংক্যাট’এর সাথে কথা বলতে গিয়ে ‘ডিসকর্ড’এর কিছু ব্যাবহারকারী বলছেন যে, খুব সম্ভবতঃ গত ১৭ই জানুয়ারি আরেকটা সার্ভারে এগুলি শেয়ার করা হয়েছিল। ৭ই এপ্রিল এই ডকুমেন্টগুলির বেশ অনেকগুলি সোশাল মিডিয়াতে আসা শুরু হয়। ডকুমেন্টগুলি খুব সম্ভবতঃ সবচাইতে দেরিতে হলে মার্চ মাসে তৈরি করা হয়েছিল। তবে যে ব্যাপারটা নিশ্চিত নয় তা হলো, এগুলি কি শুধুমাত্র একবারের ঘটনা নাকি ধারাবাহিক ঘটনার অংশ? অথবা যে ফাঁস করেছে, তার কাছে এগুলির বাইরেও কি আরও ডকুমেন্ট রয়েছে কিনা।

কে এই কাজটা করেছে এবং কেন, সেটা এখনও কেউ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও এর পেছনে যে রাশিয়ার হাত নেই, সেব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিত। লন্ডনের ‘ব্রুনেল ইউনিভার্সিটি’র শিক্ষক ড্যান লোমাস ‘ফিনানশিয়াল টাইমস’কে বলছেন যে, ডকুমেন্টগুলি একদিকে যেমন তথ্য সংগ্রহে মার্কিন ইন্টেলিজেন্সের দক্ষতাকে তুলে ধরে, তেমনি তা রুশ ইন্টেলিজেন্স ‘এফএসবি’, ‘জিআরইউ’ এবং ‘এসভিআর’এর ভেতরে মার্কিনীদের ঢুকে পড়াকে তুলে ধরে। এমনিতেই ইউক্রেনে তাদের যুদ্ধটা ভালো যাচ্ছে না। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই কেউ এই কাজটা করেছে বলেই মনে হচ্ছে। নিজেদের ভেতরের শত্রুই প্রকৃতপক্ষে বড় শত্রু।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে দক্ষিণ কোরিয় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ুল। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধু হিসেবে পরিচিত মিশর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইস্রাইলের মতো দেশগুলি হয়তো তাদের রাষ্ট্রের তথ্য নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করতে চাইবে; যাতে করে এহেন ঘটনায় তাদের দেশের নাম আবারও না আসে। তবে এই দেশগুলি যেহেতু নিরাপত্তা এবং অস্ত্রের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উপর যথেষ্টই নির্ভরশীল, সেকারণে এই দেশগুলির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সহসাই হুমকির মাঝে পড়বে, সেটা আশা করা যায় না। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমেজ কিছুটা হলেও খর্ব হবে, তা নিশ্চিত।


এর ফলাফল কি হতে পারে

‘দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট’ বলছে যে, তথ্য ফাঁসের পর থেকে পেন্টাগনে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং মার্কিন ইন্টেলিজেন্সের ডকুমেন্ট দেখার উপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ‘পলিটিকো’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, অনেকেই মনে করছেন যে, ঘটনাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে খুবই খারাপ হয়েছে; এমনকি হয়তো দশ বছর আগে এডওয়ার্ড স্নোডেনএর ফাঁস করা তথ্যের চাইতেও এগুলি আরও খারাপ ফলাফল বয়ে আনতে পারে। এর কারণ হলো, ডকুমেন্টগুলিতে একেবারে সর্বশেষ তথ্য রয়েছে। এর মাধ্যমে মার্কিনীরা কি পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করে অথবা কোন উৎস থেকে তারা তথ্য পেয়ে থাকে, সেগুলিও ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া এবং চীন সেক্ষেত্রে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। ডকুমেন্টগুলিতে ইউক্রেনের কিছু সামরিক দুর্বলতার কথা উল্লেখিত হয়েছে; যা মস্কোর কাছে অজানা থাকলে হয়তো রুশদের ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। তবে ডকুমেন্টগুলির আরও একটা সংবেদনশীল দিক হলো এগুলিতে মার্কিন সিগনালস ইন্টেলিজেন্সের বিভিন্ন তথ্য রয়েছে; যেগুলি যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু এবং বন্ধু উভয় ধরণের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নজরদারির মাধ্যমে সংগৃহীত। এর ফলে অনেক দেশই হয়তো নিজেদের তথ্যের ব্যাপারে আরও সাবধানতা অবলম্বন করবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশগুলির সাথে কূটনৈতিক দিক থেকে কিছু সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ‘পলিটিকো’র বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, এরূপ গোপনীয় তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তথ্যের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে যে, গোপনীয়তা রক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের মাঝেই তথ্য শেয়ার করার সক্ষমতা রয়েছে কিনা।

কি ধরণের তথ্য ফাঁস হয়েছে

কেউই ডকুমেন্টগুলির সত্যতা সম্পর্কে পুরোপুরি স্বীকার না করলেও পেন্টাগন একপ্রকার স্বীকারই করে নিয়েছে যে, ঘটনাটা আসলেই ঘটেছে। আর সকল বিশ্লেষকেরাই বলছেন যে, এগুলি যে সত্যি, তার কোন সন্দেহ নেই। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, গোপন দলিলাদির মাঝে বিশ্বের বিভিন্ন নেতার রুদ্ধদ্বার বৈঠকের উল্লেখ রয়েছে। এর মাধ্যমে অনেকেই ধারণা করে ফেলতে পারে যে, মার্কিনীরা কিভাবে বা কোথায় বা কার মাধ্যমে এই তথ্য জানতে পেরেছে। আবার রুশ ভাড়াটে সামরিক সংস্থা ইউক্রেনে যুদ্ধে করার জন্যে কোন একসময় ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্ক থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে চেয়েছিল। এর মাধ্যমেও তথ্যের উৎস বের করে ফেলা সম্ভব হতে পারে। এছাড়াও এমন কিছু তথ্য এখানে এসেছে, যেগুলি এর আগে অপ্রকাশিত মার্কিন গোয়েন্দা স্যাটেলাইটের দ্বারা সংগৃহীত। এগুলির সক্ষমতা, এমনকি এগুলি যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে, তা এর আগে কখনোই প্রকাশ করা হয়নি। এখন রুশরা জানতে পারছে যে, কি ধরণের স্যাটেলাইট মার্কিনীরা রুশদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।

১। রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তৎপরতা

‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ বলছে যে, ডকুমেন্টগুলি দেখিয়ে দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে এবং সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাঝে নিজেদের তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করে নিয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ কথোপকথনের উপরে যেমন যুক্তরাষ্ট্র নজরদারি করতে পারছে, তেমনি রুশ ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ‘জিআরইউ’এর অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনাও মার্কিনীরা জানতে পারছে। এছাড়াও ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা এবং পরিকল্পনার ব্যাপারে কাজে লাগানোর মতো ইন্টেলিজেন্স পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র; যার অনেকটাই মার্কিনীরা খুব সম্ভবতঃ ইউক্রেনিয়দেরকে সরবরাহ করেছে।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসিএর সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি গোপনে রাশিয়াতে সরবরাহ করার জন্যে ৪০ হাজার আর্টিলারি রকেট প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডকুমেন্টে বলা হয় যে, এল-সিসি বলে দিয়েছেন যাতে করে এই পরিকল্পনা পশ্চিমারা জানতে না পারে।


২। যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধু দেশগুলির নেতৃত্বের উপর গোয়েন্দাবৃত্তি করছে

‘সিএনএন’এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, একটা ডকুমেন্টে দেখা যাচ্ছে যে, মার্কিনীরা সিগনালস ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকির মন্তব্য জানতে পেরেছে; যেখানে জেলেন্সকি বলছেন যে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে রস্টোভে ড্রোন বিমানের মাধ্যমে রুশ লজিস্টিকস টার্গেটে হামলা করা যেতে পারে। কারণ ইউক্রেনের হাতে অত দূরে আঘাত করার মতো অস্ত্র নেই। যদিও এটা অবাক করা ব্যপার নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নেতৃত্বের উপরে নজরদারি করছে, তথাপি ইউক্রেনিয়রা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে যে, মার্কিনীদের তথ্য ফাঁসের কারণে ইউক্রেনিয়দের বসন্তকালীন আক্রমণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে।

ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টে যা এসেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা চিন্তিত ছিলেন যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে যে আর্টিলারি শেল সরবরাহ করছেন, তা হয়তো ইউক্রেনের হাতেই যাবে। এটা প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ুলএর জন্যে খুবই সমস্যাজনক; কারণ এটা হবে কোরিয়ার দীর্ঘমেয়াদী নীতির বরখেলাপ। এই নীতি অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়া কোন যুদ্ধেক্ষেত্রে দুই পক্ষের কোন পক্ষকেই অস্ত্র সরবরাহ করে না। আর বেশিরভাগ ভোটারই এই নীতির পক্ষে। গত বছরের জুনে ‘গ্যালাপ কোরিয়া’র এক জরিপে বলা হয় যে, দেশটার ৭২ শতাংশ জনগণ ইউক্রেনকে শুধুমাত্র মেডিক্যাল, খাদ্য এবং অন্যান্য বেসামরিক সহায়তা দেয়ার পক্ষপাতি। অপরদিকে মাত্র ১৫ শতাংশ জনগণ সামরিক সহায়তা দেয়ার পক্ষপাতি। কোরিয়ার ‘ইয়োনহাপ’ সংবাদ সংস্থাকে দেশটার কর্মকর্তারা বলছেন যে, প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে, খুব কমই সম্ভাবনা রয়েছে যে, মার্কিনীরা কোরিয়ার শীর্ষ নেতাদের কথোপকথন শুনতে পাবে। তারা বলছেন যে, এই তথ্য অসত্য এবং বিকৃত।

‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টের বিশ্লেষণে বলছে যে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি গোপনে রাশিয়াতে সরবরাহ করার জন্যে ৪০ হাজার আর্টিলারি রকেট প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডকুমেন্টে বলা হয় যে, এল-সিসি বলে দিয়েছেন যাতে করে এই পরিকল্পনা পশ্চিমারা জানতে না পারে। মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমেদ আবু জেইদ বলছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধে মিশরের নিরপেক্ষ থাকার নীতি পরিবর্তিত হয়নি। আর পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলছেন যে, এধরনের কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোন লক্ষণ তারা দেখেননি। এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধু দেশ মিশরের সাথে এই ঘটনার কারণে কোন কূটনৈতিক সমস্যা হবে কিনা।

৩। ইউক্রেনের যুদ্ধ সক্ষমতা নিয়ে মার্কিনীদের সন্দেহ রয়েছে

‘ওয়াশিংটন পোস্ট’এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, ফাঁস হওয়া ডকুমেন্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ইউক্রেনিয়দের বসন্তকালীন আক্রমণের পরিকল্পনার সফলতার ব্যাপারে মার্কিনীদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জাম, গোলাবারুদ এবং সৈন্যের স্বল্পতার কারণে আক্রমণে খুব বেশি একটা জায়গা রুশদের হাত থেকে পুনর্দখল করার সম্ভাবনা নেই। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনিয়দের প্রশিক্ষণ এবং গোলাবারুদের স্বল্পতা আক্রমণে তাদের ক্ষয়ক্ষতিকে অনেক বাড়িয়ে দেবে। 

যদিও এটা অবাক করা ব্যপার নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নেতৃত্বের উপরে নজরদারি করছে, তথাপি ইউক্রেনিয়রা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে যে, মার্কিনীদের তথ্য ফাঁসের কারণে ইউক্রেনিয়দের বসন্তকালীন আক্রমণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে। যদি ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন কিছু দেখাতে না পারে, তাহলে সেটা এই তথ্য ফাঁসের ঘটনার কারণে হবে না। আর এই মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে বড় কোন বন্ধু ইউক্রেনের নেই; কাজেই তথ্য ফাঁসের ঘটনার পরেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের উপদেশ শুনতেই বাধ্য হবে।

৪। রুশ ‘ওয়াগনার গ্রুপ’ তুরস্কের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে চেষ্টা করছে

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে রুশ ভাড়াটে সামরিক সংস্থা ‘ওয়াগনার গ্রুপ’ আফ্রিকার দেশ মালির মাধ্যমে তুরস্কের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে চেয়েছে বলে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে। মালির অন্তর্বর্তীকালীন নেতৃত্ব এব্যাপারে রাজিও হয়েছে যে, তারা তুরস্কের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে তা ‘ওয়াগনার গ্রুপ’কে সরবরাহ করবে, যাতে তারা সেগুলি ইউক্রেনে ব্যবহার করতে পারে। যদি ব্যাপারটা সত্যি হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, তুরস্ক গোপনে ইউক্রেন যুদ্ধের উভয় পক্ষেই অস্ত্র সরবরাহ করছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এব্যাপারে মন্তব্য করতে চায়নি।

৫। ব্রিটেন ও কানাডার ব্যাপারে মার্কিন তথ্য

গত বছর অক্টোবরে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস পার্লামেন্ট সদস্যদেরকে বলেছিলেন যে, ইউক্রেনের কাছাকাছি কৃষ্ণ সাগরের আকাশে একটা রুশ যুদ্ধবিমান একটা ব্রিটিশ ‘আরসি-১৩৫’ সামরিক গোয়েন্দা বিমানের প্রায় ১৫ ফুটের মাঝে চলে আসে। আর আরেকটা যুদ্ধবিমান থেকে একটা ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছিল, যা রুশরা যান্ত্রিক ত্রুটি বলে আখ্যা দিয়েছিল। ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টে দেখা যাচ্ছে যে, মার্কিনীরা ধারণা করছিল যে, রুশরা প্রায় ব্রিটিশ বিমানটাকে ভূপাতিত করে ফেলছিল। ব্রিটিশরা অবশ্য ব্যাপারটাকে এভাবে দেখতে চাইছে না।

‘দ্যা গার্ডিয়ান’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, একটা ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টে দেখা যাচ্ছে যে, ইউক্রেনে ন্যাটো দেশগুলির মোট ৯৭ জন স্পেশাল ফোর্সের সদস্য কাজ করছে; যাদের মাঝে ৫০ জনই ব্রিটিশ। এর তুলনায় মার্কিনী রয়েছে মাত্র ১৪ জন এবং ফরাসি মাত্র ১৫ জন। ব্রিটিশ সরকার এই তথ্য নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি; বরং ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেছে। আর ফরাসি সরকার অস্বীকার করেছে যে, তাদের কোন সেনা ইউক্রেনের মাটিতে রয়েছে।

আরেকটা ডকুমেন্টে দেখা যাচ্ছে যে, এবছরের শুরুতে রুশ অনলাইন হ্যাকিং গ্রুপ ‘জারইয়া’ কানাডার একটা গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস পাইপলাইন কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হ্যাকিং করে অবস্থান নিয়েছে। এই তথ্য হ্যাকাররা রুশ ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ‘এফএসবি’র সাথে শেয়ার করেছে এবং ‘এফএসবি’র পক্ষ থেকে হ্যাকারদেরকে চুপচাপ থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়। কানাডিয়রা এই ব্যাপারটাকে অস্বীকার করেছে। ‘গ্লোব এন্ড মেইল’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, এখন পর্যন্ত এমন কোন ঘটনার খবর তারা নিশ্চিত করতে পারেনি।

৬। ইস্রাইলের গোয়ান্দা সংস্থার উপরে যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি


ইস্রাইলের পত্রিকা ‘হারেতস’এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, একটা ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টে দেখা যাচ্ছে যে, পহেলা মার্চের ‘সিআইএ’এর এক ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষণে সিগনালস ইন্টেলিজেন্সের বরাত দিয়ে বলা হয় যে, ইস্রাইলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’এর নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভকে সমর্থন দিয়েছে। এর মাঝে কিছু ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রীর বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। ইস্রাইলি কর্মকর্তারা ফাঁস হওয়া মার্কিন ডকুমেন্টকে পুরোপুরিভাবে অস্বীকার করেছে। কোন কোন ইস্রাইলিরা বলছেন যে, মার্কিনীরা হয়তো প্রাক্তন মোসাদ নেতাদের খোলাচিঠিকেই গুরুত্ব দিয়ে তাদের বিশ্লেষণে ব্যবহার করেছে।

৭। মধ্য আমেরিকাতে চীনারা সমুদ্রবন্দর চাইছে


‘মায়ামি হেরাল্ড’এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, একটা ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টে দেখা যাচ্ছে যে, চীনারা মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার ‘ব্লুফিল্ডস’এ একটা গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি করতে চাইছে। মার্কিন বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, নিকারাগুয়া সরকার হয়তো অর্থনৈতিক বিনিয়োগের বিনিময়ে চীনা নৌবাহিনীকে বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারে।

৮। সার্বিয়া ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ায় সম্মত

‘রয়টার্স’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, ফাঁস হওয়া একটা ডকুমেন্টে সার্বিয়া ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে রাজি হয়েছে অথবা ইতোমধ্যেই অস্ত্র সরবরাহ করেছে। ইউরোপের মাঝে সার্বিয়াকে রাশিয়ার কাছিকাছি বলেই মনে করা হয়। আর সার্বিয়া রাশিয়ার উপরে অবরোধ দিতে অস্বীকার করেছে। ডকুমেন্টে দেখা যায় যে, ২রা মার্চের একটা স্লাইডে দেখানো হচ্ছে যে, সার্বিয়া অস্ত্র দিতে রাজি বা ইতোমধ্যেই দিয়েছে। তবে তারা ইউক্রেনিয়দেরকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি নয়। সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্যাপারটা অস্বীকার করে বলেন যে, তার সরকার অবশ্যই ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে না; কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কোন পক্ষকেই তার দেশ অস্ত্র দেবে না।

অপরদিকে ব্রিটেন, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলি, যারা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘ফাইভ আইজ’ ইন্টেলিজেন্স জোটের অংশ, তারা স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের ঘর সামলাতে উপদেশ দেবে; যা কিনা ওয়াশিংটনের জন্যে অপমানজনক। বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী রাষ্ট্র নিজেদের তথ্য গোপন রাখতে পারছে না, এটা সত্যিই অবাক করার মতো। এডওয়ার্ড স্নোডেনের মতো আরও লোক যুক্তরাষ্ট্রের অতি গোপনীয় কাগজপত্র উন্মুক্ত করে দিতে চাইছে - এটা ছোট কোন বিষয় নয়; বরং তা রাষ্ট্রীয় দুর্বলতার লক্ষণ।


যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরা এটাকে কিভাবে দেখছে?

দক্ষিণ কোরিয়ার উপ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কিম তায়ে-হিও সাংবাদিকদের বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র হলো এমন একটা দেশ, যাদের রয়েছে বিশ্বের সবচাইতে ভালো গোয়েন্দা সক্ষমতা। আর কোরিয়রা সর্বদাই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সকল প্রকারের ইন্টেলিজেন্স শেয়ার করে থাকে। তিনি অস্বীকার করেন যে, এধরণের তথ্য ফাঁসের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে কোন প্রকারের ভাটা পড়তে পারে। মিশর এবং ইস্রাইলের পক্ষ থেকেও ফাঁস হওয়া তথ্যকে গুরুত্বহীন বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে এবং ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করা হয়েছে। কোরিয়া, মিশর বা ইস্রাইল ব্যাপারটাকে কম গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করলেও কেউ কেউ ব্যাপারটাকে অনেক বড় বলেই চিন্তা করছেন। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল এনগাস ক্যাম্পবেল থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘লোয়ি ইন্সটিটিউট’এর এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন যে, এপ্রকারের তথ্য ফাঁসের ঘটনা বন্ধুদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতায় আঘাত করতে পারে। এই তথ্য কিভাবে পত্রিকার প্রথম পাতায় চলে আসছে, সেই প্রশ্ন তুলে জেনারেল ক্যাম্পবেল বলছেন যে, এই প্রকারের তথ্য গোপন রাখার একটা জাতীয় নিরাপত্তার বাধ্যবাধকতা ছিল।

তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ইউক্রেন যুদ্ধে বড় কোন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। কারণ ঘটনা ঘটার আগে থেকেই উভয় পক্ষই যুদ্ধক্ষেত্রে বড় কোন আক্রমণে যাবার মতো অবস্থায় ছিল না। যদি ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন কিছু দেখাতে না পারে, তাহলে সেটা এই তথ্য ফাঁসের ঘটনার কারণে হবে না। আর এই মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে বড় কোন বন্ধু ইউক্রেনের নেই; কাজেই তথ্য ফাঁসের ঘটনার পরেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের উপদেশ শুনতেই বাধ্য হবে। অপরদিকে রাশিয়া তার ইন্টেলিজেন্সের বিশাল ফুঁটোগুলো কিছুটা হলেও মেরামতের সুযোগ পাবে। তবে সেই সুযোগও অসীম নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধু হিসেবে পরিচিত মিশর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইস্রাইলের মতো দেশগুলি হয়তো তাদের রাষ্ট্রের তথ্য নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করতে চাইবে; যাতে করে এহেন ঘটনায় তাদের দেশের নাম আবারও না আসে। তবে এই দেশগুলি যেহেতু নিরাপত্তা এবং অস্ত্রের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উপর যথেষ্টই নির্ভরশীল, সেকারণে এই দেশগুলির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সহসাই হুমকির মাঝে পড়বে, সেটা আশা করা যায় না। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমেজ কিছুটা হলেও খর্ব হবে, তা নিশ্চিত।

অপরদিকে ব্রিটেন, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলি, যারা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘ফাইভ আইজ’ ইন্টেলিজেন্স জোটের অংশ, তারা স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের ঘর সামলাতে উপদেশ দেবে; যা কিনা ওয়াশিংটনের জন্যে অপমানজনক। বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী রাষ্ট্র নিজেদের তথ্য গোপন রাখতে পারছে না, এটা সত্যিই অবাক করার মতো। এডওয়ার্ড স্নোডেনের মতো আরও লোক যুক্তরাষ্ট্রের অতি গোপনীয় কাগজপত্র উন্মুক্ত করে দিতে চাইছে - এটা ছোট কোন বিষয় নয়; বরং তা রাষ্ট্রীয় দুর্বলতার লক্ষণ। যে ব্যাপারটা সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তা হলো, ঘটনাটা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও একধাপ কমতে সহায়তা করবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি আদর্শিক দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে থাকতো, তাহলে এরূপ ঘটনা খুব একটা ক্ষতিকর হতো না। ক্ষতি কতটা হয়েছে, সেটাও মার্কিনীরা পুরোপুরি বুঝতে পারছে কিনা, সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা ‘ভয়েস অব আমেরিকা’র মতো। তাদের এক প্রতিবেদনে তারা এই ডকুমেন্টগুলির ছবি ঝাপসা করে দিয়ে প্রকাশ করেছে। যখন এটা পত্রিকার হেডলাইন হয়ে গিয়েছে এবং পুরো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে গেছে, তখন এহেন প্রচেষ্টা হাস্যকরই বটে।

No comments:

Post a Comment