Monday 16 May 2022

‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার কেন স্পেন এবং মরক্কোর মাঝে সম্পর্ককে উত্তপ্ত করছে?

১৬ই মে ২০২২

 
‘পেগাসাস’এর ব্যবহার স্পেন এবং মরক্কোর সম্পর্কের মাঝে একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়; যা এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ইস্রাইলের অবস্থান জানান দিচ্ছে। এর মাধ্যমে ইস্রাইল তার নিজের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কৌশলগত দরকষাকষি বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমতে থাকার সাথেসাথে ইস্রাইল এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত; যা কিনা নতুন নতুন আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার জন্ম দিচ্ছে।


গত ২রা মে স্পেনের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ফেলিক্স বোলানিয়স তড়িঘড়ি করে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে বলেন যে, সেদেশের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারগারিতা রোবলসএর ফোন ইস্রাইলের ডেভেলপ করা ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। ২০২১ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর ফোন দু’বার এবং জুন মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ফোন একবার আক্রান্ত হয়। এই কর্মকান্ডের মাধ্যমে দুই মন্ত্রীর ফোন থেকে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য চুরি করা হয়। তিনি বলেন যে, এই কাজটা স্পেনের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে থেকে করা হয়েছে। বোলানিয়স বলেননি যে, কে এই স্পাইওয়্যারের পিছনে থাকতে পারে। তবে তিনি বলেন যে, স্পেনের আইনবিভাগ এবং পার্লামেন্ট এব্যাপারে তদন্ত করছে। এই ঘটনার জের ধরে ১০ই মে স্পেন সরকার ঘোষণা দেয় যে, দেশটার ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ‘সিএনআই’এর প্রধান পাজ এস্তেবানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যদিও এই বরখাস্তকে সরকার ‘প্রতিস্থাপন’ বলে আখ্যা দিয়েছে, তথাপি সরকার দেশটার ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ‘সিএনআই’এর কর্মকান্ডের ব্যার্থতাকে তুলে ধরেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ফোনের উপর যে গোয়েন্দাবৃত্তি হয়েছে, সেটা বুঝতে কেন এক বছর সময় লেগেছে, সেব্যাপারে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা প্রশ্ন করছেন।

‘এসোসিয়েটেড প্রেস’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ২০২১এর মাঝামাঝি সময়ে স্পেনের সাথে মরক্কোর সম্পর্ক খুবই খারাপ পর্যায়ে ছিল। একইসাথে স্পেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী কাতালোনিয়া অঞ্চলের আটককৃত নেতাদের ছেড়ে দেয়া নিয়ে সেসময় অভ্যন্তরীণভাবেও উত্তাল ছিল স্পেন। স্পেন এবং মরক্কোর দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে ছিল মরক্কোর নিয়ন্ত্রণে থাকা পশ্চিম সাহারা অঞ্চলের স্বাধীনতাকামীদের নেতাকে স্পেনে চিকিৎসার জন্যে ঢুকতে দেয়া এবং এরপর মরক্কোর মূল ভুখন্ডে স্প্যানিশ ছিটমহল সেউতাতে সীমান্ত অতিক্রম করে ৮ হাজার উদ্বাস্তুর আগমণ। মরক্কো সরকার অস্বীকার করেছিল যে, তারা উদ্বাস্তুদেরকে স্পেনের ছিটমহলে ঢুকতে কোনপ্রকার সহায়তা দিয়েছিল।

‘এনপিআর’এর সাথে এক সাক্ষাতে মাদ্রিদের সাংবাদিক হোজে বাউতিস্তা বলছেন যে, ২০২১ সালে প্যারিসভিত্তিক তদন্তমুখী সংবাদ সংস্থা ‘ফরবিডেন স্টোরিজ’ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে; যেখানে বলা হয় যে, মরক্কো ইস্রাইলি ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে ১০ হাজারের বেশি মানুষের উপর গোয়েন্দাবৃত্তি করছে। এগুলির মাঝে ২’শ মোবাইল ফোন নম্বরের মালিক হলেন স্প্যানিশ নাগরিকেরা; যাদের মাঝে রয়েছেন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মী। গত বছর মে এবং জুন মাসে স্পেনের সাথে মরক্কোর কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে; যার মূল কারণ ছিল মরক্কোর নিয়ন্ত্রণে থাকা পশ্চিম সাহারা অঞ্চল; যা কিনা একসময় স্প্যানিশ উপনিবেশ ছিল। ২০২০এর ডিসেম্বরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পশ্চিম সাহারার উপর মরক্কোর সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। এর বিনিময়ে মরক্কো ইস্রাইলকে স্বীকৃতি দেয়। এতে মরক্কো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থানকে অনেক শক্তিশালী মনে করতে শুরু করে। অনেকেই মনে করেছিলেন যে, জো বাইডেন হোয়াইট হাউজে আসার পর ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন; কিন্তু বাইডেন সেটা করেননি। অপরদিকে স্পেন পশ্চিম সাহারার ইস্যু থেকে দূরে থাকতে পারছে না; কারণ তারা ঔপনিবেশিক সময় থেকেই পশ্চিম সাহারার সাহরাউই জনগণের সাথে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরি করেছে। পশ্চিম সাহারা ইস্যুতে স্পেন সর্বদাই নিরপেক্ষ একটা অবস্থানে থাকার চেষ্টা করেছে; যদিও সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিম সাহারাকে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন দেয়ার মরক্কো সরকারের সিদ্ধান্তকেই মেনে নেয়ার কথা বলছে স্প্যানিশরা। বাউতিস্তা মনে করছেন যে, ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যারের এই ইস্যু পশ্চিম সাহারার ক্ষেত্রে স্প্যানিশ সরকারের অবস্থানকে পরিবর্তন করতে পারে। তবে সেটা নির্ভর করছে স্প্যানিশরা ‘পেগাসাস’এর উৎসটা ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারে কিনা; যা খুব একটা সহজ কাজ হবে না।

 
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজের সোশালিস্ট সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের নেতৃত্বে থাকা বামপন্থী দল ‘ইআরসি’র নেতা পেরে আরাগোনেসএর সমর্থনের উপর যথেষ্ট নির্ভরশীল। তবে ‘ইআরসি’ দল বেশ বাস্তববাদী। তারা হয়তো ইন্টেলিজেন্স প্রধানকে বরখাস্তের ব্যাপারটাকে ভালোভাবেই নেবে। তারা ভালো করেই জানে যে, বর্তমানে ক্ষমতাসীন বামপন্থী দলের উপর ‘ইআরসি’র যতটা প্রভাব রয়েছে, ডানপন্থীরা ক্ষমতায় আসলে সেটা থাকবে না।

স্পেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী কাতালোনিয়াতে ‘পেগাসাস’এর ভূমিকা

গত ১৮ই এপ্রিল কানাডার ‘ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো’র সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ‘দ্যা সিটিজেন ল্যাব’ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে; যেখানে বলা হয় যে, স্পেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল কাতালোনিয়ার কমপক্ষে ৬৫ জন ব্যক্তির মোবাইল ফোনে ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার পাওয়া গিয়েছে। এই ব্যক্তিদের মাঝে রয়েছে কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট পেরে আরাগোনেস এবং বেশ ক’জন আইনজীবি, সাংবাদিক এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিক। ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’ বলছে যে, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মাঝে ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করে কাতালান নেতাদের উপর গোয়ান্দাগিরির ব্যাপারটা নিয়ে স্পেনের সোশালিস্ট সরকার বেশ চাপের মাঝে ছিল। বরখাস্তের পাঁচ দিন আগে গত ৫ই মে স্পেনের ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ‘সিএনআই’এর প্রধান পাজ এস্তেবান পার্লামেন্টের তদন্ত কমিটির সামনে বলেন যে, আইন বিভাগের অনুমতি নিয়ে ১৮ জন কাতালান নেতার উপর গোয়েন্দাবৃত্তি করা হয়েছিল।

ব্রিটেনের ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ পত্রিকা মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, তারাই ২০২০এর জুনে স্পেনের পত্রিকা ‘এল পায়িস’এর সাথে যুক্ত হয়ে প্রকাশ করেছিল যে, স্পেনের স্বাধীনতাকামী কাতালোনিয়া অঞ্চলের শীর্ষ নেতাদের উপর নজরদারি করার জন্যে ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছিলো। ‘পেগাসাস’ হলো ইস্রাইলি কোম্পানি ‘এনএসও’র ডেভেলপ করা গোয়েন্দাবৃত্তির একটা সফটওয়্যার; যা কারো মোবাইল ফোনে ঢোকানো গেলে সেই মোবাইল ফোন থেকে ই-মেইল পড়া ছাড়াও, মোবাইলে রাখা ছবি এবং মেসেজও ডাউনলোড করা সম্ভব। এছাড়াও ‘পেগাসাস’ সেই ফোনের অডিও রেকর্ডার এবং ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেই ফোনকে একটা গোয়েন্দাবৃত্তির বস্তুতে পরিণত করতে পারে। কোম্পানিটা বলছে যে, এই স্পাইওয়্যার তারা কোন রাষ্ট্রের সরকার ছাড়া কারুর কাছে বিক্রি করে না। কাতালান নেতাদের উপর গোয়েন্দাবৃত্তির কাজটা খুব সম্ভবতঃ ২০১৯এর এপ্রিল এবং মে মাসে করা হয়েছিল। এর প্রায় দু’বছর আগে কাতালানরা স্পেন থেকে আলাদা হবার জন্যে একটা গণভোট আয়োজন করেছিল। কাতালানদের উপর গোয়েন্দাবৃত্তির ব্যাপারটা হয়তো স্প্যানিশ ইন্টেলিজেন্সই করেছে। কিন্তু স্প্যানিশ মন্ত্রীদের উপর গোয়েন্দাবৃত্তির ব্যাপারটা পুরোপুরি আলাদা। সরকার বলছে যে, রাষ্ট্রের কাঠামোর বাইরে থেকে কেউ এটা করেছে; যার অর্থ হলো অন্য কোন রাষ্ট্র এটা করেছে। এখানে মরক্কোর নাম আসলেও মরক্কো সরকার বলছে যে, সাংবাদিকরা এখন পর্যন্ত মরক্কোর সাথে ‘পেগাসাস’এর নির্মাতা ‘এনএসও’র কোন সম্পর্ক দেখাতে পারেনি। আর মরক্কো সরকার অন্য কোন রাষ্ট্রের নেতৃত্বের উপর নজরদারি করে না বলেও বলছেন তারা।

‘দ্যা গার্ডিয়ান’ বলছে যে, স্পেনের সোশালিস্ট সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের নেতৃত্বে থাকা বামপন্থী দল ‘ইআরসি’র নেতা পেরে আরাগোনেসএর সমর্থনের উপর যথেষ্ট নির্ভরশীল। যেকারণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সানচেজ আগের কনজারভেটিভ প্রশাসনের চাইতে কাতালোনিয়ার ব্যাপারে অনেকটাই ছাড় দেয়ার নীতিতে এগিয়েছেন। যদিও তিনি কাতালোনিয়ায় গণভোট হবার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন, তথাপি তিনি তাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। ২০২১ সালে কাতালোনিয়ার ৯ জন শীর্ষ নেতাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে গিয়ে সানচেজের সরকারকে বিরোধীদের চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। এখন এই গোয়েন্দাবৃত্তির খবরগুলি স্পেনের সোশালিস্ট সরকারের উপর ‘ইআরসি’র বিশ্বাসকে ভেঙ্গে দেবে। তবে কাতালোনিয়ার ‘ইআরসি’ দল বেশ বাস্তববাদী। তারা হয়তো ইন্টেলিজেন্স প্রধানকে বরখাস্তের ব্যাপারটাকে ভালোভাবেই নেবে। তারা ভালো করেই জানে যে, বর্তমানে ক্ষমতাসীন বামপন্থী দলের উপর ‘ইআরসি’র যতটা প্রভাব রয়েছে, ডানপন্থীরা ক্ষমতায় আসলে সেটা থাকবে না। স্পেনের কনজারভেটিভ বিরোধী দল বলছে যে, ইন্টেলিজেন্স প্রধান এস্তেবানের ‘মস্তক’ কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের হাতে তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সানচেজ তার রাজনৈতিক অবস্থানকে বাঁচাচ্ছেন।

 

মরক্কো এবং জিব্রালটারের নিয়ন্ত্রণ

কৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ জিব্রালটার প্রণালির দক্ষিণ প্রান্তের মালিক মরক্কো অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। ১৭০৪ সাল থেকে ব্রিটেন জিব্রালটারে সামরিক ঘাঁটি রেখে চলেছে। আর এই প্রণালির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে ব্রিটেন সকল কিছুই করেছে। ১৮৮৪ সালে বার্লিন কনফারেন্সে ব্রিটিশদের সমর্থনে স্পেন মরক্কোর দক্ষিণের পশ্চিম সাহারা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পায়। ১৯০৫ সালে জার্মানি মরক্কোর নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করলে ব্রিটেনের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। ১৯১১ সালে জার্মানি আবারও মরক্কোতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলে ব্রিটেন আবারও হুমকি দেয়। ১৯৭৫ সালে স্প্যানিশরা পশ্চিম সাহারা ছেড়ে দেয়ার পর থেকে সেখানে দ্বন্দ্ব চলছে। এবং সেসময় থেকেই পশ্চিম সাহারার দ্বন্দ্বে স্পেন একটা ভূমিকা রেখে চলছে। বর্তমানে মরক্কোর নিয়ন্ত্রণে থাকা পশ্চিম সাহারার স্বাধীনতাকামী ‘পলিসারিও ফ্রন্ট’এর ব্যাপারে সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি স্পেন যেমন সর্বদাই জড়াচ্ছে, ঠিক তেমনি এখন স্পেনের রাজনীতিতেও মরক্কোর নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে মরক্কো স্পেনের ছিটমহল সেউতাতে হাজারো শরণার্থীকে ঠেলে দিয়ে স্পেনকে চাপের মাঝে ফেলেছে। হয়তো সেকারণেই স্পেন সরকার পশ্চিম সাহারার ব্যাপারে মরক্কো সরকারের নীতির সাথে সমান্তরালে থাকার চেষ্টা করেছে। ১৯৭০এর দশকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ব্রিটেনের প্রস্থানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বৃদ্ধির সাথেসাথে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মরক্কোর গুরুত্ব বাড়তে থাকে। কারণ সেসময় থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগরে মার্কিন উপস্থিতি রাখার জন্যে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমানগুলির জন্যে মরক্কো একটা ‘দরজা’র ভূমিকা পালন করে আসছে। পশ্চিম সাহারায় স্বাধীনতাকামী বামপন্থী ‘পলিসারিও ফ্রন্ট’এর সাথে যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র মরক্কোকে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দেয়। এখনও মরক্কোর প্রধান সামরিক সরঞ্জামগুলি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি।

একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্র মরক্কোকে পশ্চিম সাহারার প্রকৃত মালিক বলে ঘোষণা দিচ্ছে, ঠিক তার প্রতিদানে ইস্রাইলের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে মরক্কোর পররাষ্ট্রনীতিতে ইস্রাইলের তৈরি ‘পেগাসাস’ স্পাইওয়্যারের নাম আসতে শুরু করেছে। পশ্চিম সাহারা ইস্যুতে স্পেনের সাথে ইউরোপিয় ইউনিয়ন থাকলেও মরক্কোর পক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং সর্বশেষে সেখানে যুক্ত হয়েছে ইস্রাইল। তবে কৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ জিব্রালটার প্রণালির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এখন পরিষ্কার। মরক্কো এবং স্পেনের মাঝে পশ্চিম সাহারা, শরণার্থী এবং এখন ‘পেগাসাস’ ইস্যুতে উত্তেজনায় এ ব্যাপারটা প্রকাশ পাচ্ছে। ‘পেগাসাস’এর ব্যবহার স্পেন এবং মরক্কোর সম্পর্কের মাঝে একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়; যা এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ইস্রাইলের অবস্থান জানান দিচ্ছে। এর মাধ্যমে ইস্রাইল তার নিজের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কৌশলগত দরকষাকষি বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমতে থাকার সাথেসাথে ইস্রাইল এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত; যা কিনা নতুন নতুন আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার জন্ম দিচ্ছে।

No comments:

Post a Comment