Wednesday 23 June 2021

বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব বাড়ছে কেন?

২৪শে জুন ২০২১
ছবিঃ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর গণহত্যা চালাবার ফলে ১১ লক্ষ মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের কাছে এই শরণার্থীদের ফেরত যাওয়া সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ; দেশটাতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা নয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমাদের নিষ্ক্রিয় অবস্থান মিয়ানমারকে শক্তিশালী করছে। তবে শুধু মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের ভোটাভুটিই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বেশকিছু ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে আলোচনায় এসেছে।


গত ১৮ই জুন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার নিয়ে ভোটাভুটি হয়ে গেল। পরিষদ ভোটাভুটির মাধ্যমে মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন মেনে নিতে বলে এবং রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে আহ্বান জানায়। ১’শ ১৯টা ভোট পড়ে পরিষদের রেজোলিউশনের পক্ষে; বিপক্ষে ভোট দেয় শুধুমাত্র বেলারুশ। তবে আরও ৩৬টা দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকে। বিরত থাকা দেশগুলির মাঝে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে রয়েছে চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, আলজেরিয়া। ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের বরাত দিয়ে ‘ইকনমিক টাইমস’ জানাচ্ছে যে, ভারত সরকার মনে করছে যে, মিয়ানমারের প্রতিবেশীদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা উচিৎ। রেজোলিউশনে সেটা উঠে না আসার কারণেই ভারত ভোটদানে বিরত থাকে। ভারত এবং চীন ছাড়াও মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, নেপাল এবং ভুটানও ভোটদানে বিরত থাকে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয় যে, রেজোলিউশনে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যার বিষয়টা সঠিকভাবে প্রতিফলিত না হওয়ায় তারা ভোট দেয়নি। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, যদিও সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন মানার কোন বাধ্যবাধকতা নেই, এবং সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটির তুলনায় ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা বেশি, তথাপি নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া এবং চীনের ভেটো দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে বিধায় সেখান থেকে মিয়ানমার ইস্যুতে কোন রেজোলিউশন পাস করানো কঠিন। ভোটাভুটিতে গণতন্ত্র রক্ষার মতো আদর্শিক ইস্যু মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলির বাস্তবতার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর গণহত্যা চালাবার ফলে ১১ লক্ষ মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের কাছে এই শরণার্থীদের ফেরত যাওয়া সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ; দেশটাতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা নয়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, রেজোলিউশনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কোন সুপারিশ বা কর্মকান্ডই ছিল না। এমনকি শরণার্থীদের নিরাপদে প্রত্যাবাসনের জন্যে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার বিষয়েও কোন কথাই সেখানে বলা হয়নি। জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন যে, রেজোলিউশনে বাংলাদেশ অসন্তুষ্ট এবং এর মাধ্যমে একটা ভুল বার্তা দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনকিছু না বলায় তা মিয়ানমারকে শক্তিশালী করছে। শুধু মিয়ানমার বিষয়ে ভোটাভুটিই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বেশকিছু ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে আলোচনায় এসেছে।

মে মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সাথে ২’শ মিলিয়ন ডলারের মুদ্রা বিনিময়ের চুক্তি করে। এই চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমপরিমাণ শ্রীলঙ্কার মুদ্রা নিজেদের কাছে রাখবে; বিনিময়ে শ্রীলঙ্কাকে ডলার দেবে। শ্রীলঙ্কা সরকারের ব্যাপক ডলার ঘাটতির এই সময়ে এটা প্রকৃতপক্ষে একটা বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ। ভারতীয় পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ বাংলাদেশের এই কর্মকান্ডকে দেশটার উঠতি অর্থনীতির ফলাফল হিসেবে উল্লেখ করে একটা প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি দুই দশক ধরে ৬ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে এবং এখন দেশটার মাথাপিছু আয় ভারতের চাইতে বেশি। মাথাপিছু আয় ভারতের যখন ১৯’শ ৪৭ ডলার, তখন বাংলাদেশের তা ২২’শ ২৭ ডলার। পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় আরও কম; ১৫’শ ৪৩ ডলার। ‘দ্যা হিন্দু’ পত্রিকা বলছে যে, করোনা মহামারির কারণে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার আয় এবং রিজার্ভ একেবারেই কমে গেছে। ফলশ্রুতিতে দেশটা তার বৈদেশিক ঋণ ফেরত দিতে হিমসিম খাচ্ছে। এবছরের এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারে; যা এবছরের বৈদেশিক ঋণ শোধ করতেই চলে যাবার কথা। ২০২০ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ভারতের কাছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের মুদ্রা বিনিময়ের অনুরোধ করেছিলেন; ভারত এক বছরেও সেটা নিশ্চিত করেনি। অপরপক্ষে বাংলাদেশ মাত্র দুই মাসের মাঝে এই অর্থের সংকুলানের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০১০ সালে ৯ বিলিয়ন থেকে ২০২১ সাল নাগাদ ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

সকলেই বাংলাদেশকে পাশে চাইছে

অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘লোয়ি ইন্সটিটিউট’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ একটা অতি দরিদ্র দেশ থেকে আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশে পরিণত হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, নিজেদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আঞ্চলিকভাবে বাংলাদেশকে কি ধরনের ভূমিকায় অবতীর্ণ করাবে, তা এখন আলোচ্য বিষয়। শক্তিশালী দেশগুলি বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘কোয়াড’এ যোগ দেয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের জের ধরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিবাদকে তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বাংলাদেশ আদৌ কখনোই ‘কোয়াড’এ যোগ দেবে বলে যেমন মনে হচ্ছে না, তেমনি চীনের হুমকির সামনেও বাংলাদেশ নত হবার সম্ভাবনা নেই; যদিও চীন বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী। শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়ার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এখনও পরিষ্কার নয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তবে সেখানে ধারণা করা হয় যে, এর সাথে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সরকারের সাথে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাবার একটা প্রচেষ্টা থাকতে পারে।

‘লোয়ি ইন্সটিটিউট’ একইসাথে বলছে যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির আরেকটা ফলফল হলো দেশটার সামরিক শক্তির বৃদ্ধি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ চীনের বাইরেও পশ্চিমা দেশ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে। তুরস্কের কাছ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে আর্মার্ড ভেহিকল এবং রকেট লঞ্চার কিনেছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলি বাংলাদেশের কাছে উন্নত প্রযুক্তির ফাইটার বিমান বিক্রির জন্যে লবিং করছে। তবে চীন থেকে কেনা সাবমেরিনের পর ম্যারিটাইম অঙ্গনে আর কি ধরনের সক্ষমতা যুক্ত হতে পারে, সেব্যাপারটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার সরকারকে ভারত মহাসাগরে শুধুমাত্র পুরাতন সহযোগীদের উপর নির্ভর না করে বাংলাদেশের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করা ব্যাপারে সচেষ্ট হতে বলা হয়।
ছবিঃ ঢাকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। বাংলাদেশ এখন এমন একটা অবস্থানে পৌঁছেছে যে, চীন ছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলি দেশটার সাথে সম্পর্কোন্নয়নে তৎপর হচ্ছে। শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক নয়, বাংলাদেশের সাথে কৌশলগত এবং সামরিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্রতী হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলি।


অর্থনৈতিক সম্পর্ক থেকে কৌশলগত সম্পর্কের দিকে

শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়। অনেক দেশের চিন্তাবিদেরাই বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে তাদের সাথে রাখার জন্যে আলোচনা শুরু করেছেন। কানাডার থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘জিওপলিটিক্যাল মনিটর’এর এক লেখায় বলা হয় যে, বাংলাদেশ এখন এমন একটা অবস্থানে পৌঁছেছে যে, চীন ছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলি দেশটার সাথে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে তৎপর হচ্ছে। ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের জন্যে মার্কিন নেতৃত্বে ‘ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ বা ‘আইপিএস’এ যোগ দেয়া কঠিন হবে; কারণ তাতে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সমস্যায় পড়তে পারে। সেখানে আরও বলা হয় যে, বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা নির্ভরশীলতা থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের দূরে থাকাটা সম্ভব নয়। তবে সামনের দিনগুলিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মাঝে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ কোন পথে যেতে পারে, সেব্যাপারে ‘ওআরএফ’ প্রতিবেদনে পুরোপুরি অজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। ‘ইউনিভার্সিট অব টেক্সাস, অস্টিন’এর নিরাপত্তা ম্যাগাজিন ‘ওয়ার অন দ্যা রক্স’এর এক লেখায় অনুমান করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের পরবর্তী ৫০ বছরের ইতিহাস নির্ধারিত হবে বাংলাদেশ কিভাবে ভারত এবং চীনের সাথে সম্পর্ককে ব্যালান্স করে, সেটার উপর।

২০২০এর মার্চে ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি বাংলাদেশ সফর করেন। একই বছরের সেপ্টেম্বরে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপার ফোন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলেন। পরের মাসে, অক্টোবরে মার্কিন উপপররাষ্ট্র সচিব স্টিফেন বাইগান ঢাকা সফর করে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘আইপিএস’এর অংশ হবার আমন্ত্রণ দিয়ে যান। এরপর এবছরের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত হিসেবে প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব জন কেরি ঢাকা সফর করেন। একই মাসে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহি ঢাকা সফর করেন। প্রায় একইসাথে বাংলাদেশ চীনের নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ার জন্যে ‘ইমারজেন্সি ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি’তে যোগ দেয়। গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশ তুরস্কের ‘ষষ্ঠ ডিফেন্স পোর্ট টারকি’ নামের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিরক্ষা মেলায় যোগ দেয়। এর মাধ্যমে তুরস্ক বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চাহিদা বোঝার চেষ্টা করে। শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক নয়, বাংলাদেশের সাথে কৌশলগত এবং সামরিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্রতী হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলি। বাংলাদেশ তার বেশিরভাগ অস্ত্র চীন এবং রাশিয়া থেকেই কিনে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা অস্ত্রের দিকে ঝোঁকার একটা প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। এক্ষেত্রে উন্নততর প্রযুক্তি যোগাড় এবং নতুন ধরনের সক্ষমতা যোগ করার দিকে আগ্রহী বাংলাদেশ। বেশিরভাগ অস্ত্রের সাথেই প্রযুক্তি কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাশিয়া থেকে কেনা বহুসংখ্যক ‘এমআই ১৭১’ হেলিকপ্টারের মেইনটেন্যান্সের জন্যে ওভারহলিং কারখানা তৈরি করা হয় ইউক্রেনের সহযোগিতায়। চীনের কাছ থেকে কেনা ‘এফ ৭’ ফাইটার বিমান এবং ‘পিটি ৬’ প্রশিক্ষণ বিমানের ওভারহলিং কারখানাও স্থাপন করা হয়েছে।
ছবিঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্যে কেনা তুরস্কের তৈরি ‘টি ৩০০ টাইগার’ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশকে অন্ততঃ এটা বুঝিয়েছে যে, তার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহিঃশক্তির হাত থেকে নিরাপদ নয়। এই সমস্যাই বাংলাদেশকে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে অনুপ্রাণিত করেছে।


বাংলাদেশে পশ্চিমাদের অস্ত্র বাণিজ্য

এমনই এক পরিস্থিতিতে তুরস্ক যখন দক্ষিণ এশিয়াতে তার প্রভাব বৃদ্ধিতে ব্যস্ত, তখন বাংলাদেশের সাথে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক দ্রুতই এগুচ্ছে। ২০শে জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্ক থেকে কেনা ‘টি৩০০ টাইগার’ মাল্টিপল রকেট লঞ্চারের ’৫১তম এমএলআরএস রেজিমেন্ট’এ অন্তর্ভুক্তির উদ্ভোধন করেন। তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শতাধিক ‘অতোকার কোবরা’ আর্মার্ড ভেহিকল ক্রয় করেছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জার্মান কোম্পানি ‘রেইনমেটাল’ থেকে অত্যাধুনিক ‘উরলিকন জিডিএফ০০৯ স্কাইগার্ড’ অটোম্যাটিক এয়ার ডিফেন্স কামান কিনে ’৪৮ এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি রেজিমেন্ট’এ অন্তর্ভুক্ত করে। একই বছর সেনাবাহিনী অস্ট্রিয়া থেকে ৪টা ‘ডায়ামন্ড ডিএ ৪০এনজি’ প্রশিক্ষণ বিমানের ডেলিভারি পায়। এর আগে ইউরোপের এয়ারবাস থেকে সেনাবাহিনী ‘সি ২৯৫ডব্লিউ’ পরিবহণ বিমান কেনে। সার্বিয়া থেকে সেনাবাহিনী ৩৬টা ‘নোরা বি৫২’ ১৫৫মিঃমিঃ সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলারি এবং ৮টা ‘বিওভি এম১১’ আর্মার্ড ভেহিকল কেনে।

এছাড়াও ১০ই জুন বিদায়ী বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মশিহুজ্জামান সারনিয়াবাত এক বিদায়ী ভাষণে ঘোষণা দেন যে, বাংলাদেশ জার্মানির ‘গ্রোব এয়ারক্রাফট’ কোম্পানির কাছ থেকে প্রযুক্তি সহ ২৪টা ‘জি ১২০টিপি’ কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালে তৈরি প্রশিক্ষণ বিমান ক্রয় করার চুক্তি করেছে। তিনি একইসাথে সামনের দিনগুলিতে বিমান বাহিনীতে পশ্চিমা প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তির আভাস দেন। জার্মান বিমানগুলি চীনে তৈরি ‘পিটি ৬’ বিমানকে প্রতিস্থাপন করবে। বাংলাদেশ ব্রিটেনের রয়াল এয়ার ফোর্সের কাছ থেকে ৫টা ‘সি ১৩০জে সুপার হারকিউলিস’ পরিবহণ বিমান ক্রয় করেছে; যেগুলির ডেলিভারি এখনও চলছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ বরিশালে বিমান বাহিনীর জন্যে ইতালির ‘লিওনার্ডো’ কোম্পানির তৈরি অত্যাধুনিক ‘ক্রনোজ’ ‘মাল্টি ফাংশন ৩ডি’ রাডার ইউনিট উদ্ভোধন করেন। এর আগে একই কোম্পানি থেকে একটা ‘আরএটি ৩১ডিএল’ দূরপাল্লার রাডারও কেনা হয়। অথচ ২০১৫ সালেই কক্সবাজারে বিমান ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার সময় সেখানে চীনে তৈরি ‘ওয়াইএলসি ৬’ রাডার স্থাপন করা হয়েছিল। ‘লিওনার্ডো’ কোম্পানি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীকে ‘এডব্লিউ ১৩৯’, ‘এডব্লিউ ১১৯’ এবং ‘এডব্লিউ ১০৯’ হেলিকপ্টার সরবরাহ করেছে। বহুকাল ধরে রাশিয়া ছিল বাংলাদেশের মূল হেলিকপ্টার সরবরাহকারী। কয়েক বছর আগে চেক রিপাবলিক থেকে বিমান বাহিনী ৩টা ‘এল ৪১০ টারবোলেট’ স্বল্পপাল্লার পরিবহণ বিমান কেনে।

২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার সহযোগিতায় নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ডে কম্পোজিট স্পিডবোট তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তির মূল সরবরাহকারী হলো সুইডিশ কোম্পানি ‘নর্থ সী বোটস’এর ইন্দোনেশিয়ান সাবসিডিয়ারি ‘পিটি লুনডিন’। নৌবাহিনীর জন্যে ‘ডর্নিয়ার ২২৮এনজি’ ম্যারিটাইম প্যাট্রোল বিমান কেনা হয় জার্মানির ‘রুওয়াগ এভিয়েশন’এর কাছ থেকে। প্রথম দু’টা কেনার পর আরও দু’টা আর্ডার করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্যে ৬টা ফ্রিগেট তৈরির প্রকল্প নেয়া হয়েছে; যার জন্যে প্রযুক্তি সহযোগী এখনও নির্ধারিত হয়নি। হল্যান্ড, তুরস্ক, চীনসহ অনেক দেশই এই প্রকল্পে প্রযুক্তি সহযোগী হতে চাইছে। নৌবাহিনীর বর্তমান ফ্রিগেটগুলির বেশিরভাগই চীনে নির্মিত। বিমান বাহিনীর জন্যে অত্যাধুনিক মাল্টিরোল ফাইটার বিমান সরবরাহ করতে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেশ প্রতিযোগিতা চলেছে। এর বাইরেও সেনাবাহিনীর জন্যে ১৫৫মিঃমিঃ হাউইটজার, এটাক হেলিকপ্টার, বিমান বাহিনীর জন্যে মধ্যম পাল্লার এয়ার ডিফেন্স ক্ষেপণাস্ত্র, মনুষ্যবিহীন ড্রোন, নৌবাহিনীর এন্টি সাবমেরিন হেলিকপ্টার, লজিস্টিক জাহাজ, হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার, ইত্যাদি অনেক কিছুরই সরবরাহকারী হতে চাইছে পশ্চিমারা। তারা মূলতঃ চীন এবং রাশিয়ার অস্ত্রকেই প্রতিস্থাপিত করতে চাইছে। এখানে কৌশলগত উদ্দেশ্য ছাড়াও বিপুল অংকের অস্ত্র বাণিজ্যও জড়িত।

কি চাইছে বাংলাদেশ?

অর্থনৈতিক লক্ষ্যই যে একটা রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হতে পারে না, তা আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনাতে পরিষ্কার। কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন শক্তিশালী দেশগুলিকে প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী করবে মাত্র। বাংলাদেশ তার রাজনৈতিক লক্ষ্যকে পরিষ্কারভাবে না বলার কারণে প্রতিটা শক্তিশালী দেশই চাইছে ঢাকায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে। আর যেহেতু প্রতিটা দেশের কৌশলগত চিন্তায় ইন্দোপ্যাসিফিক এখন শীর্ষে রয়েছে, তাই বাংলাদেশ কোন পক্ষে থাকবে, তা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার হয়ে দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ আপাত দৃষ্টিতে কোন পক্ষকেই সরাসরি সমর্থন দিতে চাইছে না। কিন্তু সমস্যা হলো, ভূরাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু নেই। নিরপেক্ষ অর্থ হলো কোন একটা পক্ষে না যাওয়া; এর ফলে যে পক্ষের সহায়তা দরকার বেশি সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আর অপর পক্ষ হয় লাভবান। কাজেই এক পক্ষ বাংলাদেশকে পাশে চাইবে; অপর পক্ষ চাইবে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ থাকুক। এই মুহুর্তে ভারত মহাসাগরে চীনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশকে নিজের পাশে না পাওয়াটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে একটা বড় ক্ষতি এবং সুপারপাওয়ারের বৈশ্বিক নেতৃত্ব ধরে রাখার প্রতি চ্যালেঞ্জ।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ, বিশেষ করে পশ্চিমাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা বাংলাদেশকে হতাশ করেছে। সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গিয়ে বাংলাদেশ বড় পশ্চিমা শক্তির, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির অধীনে যেতে চাইছে না। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশকে অন্ততঃ এটা বুঝিয়েছে যে, তার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বহিঃশক্তির হাত থেকে নিরাপদ নয়। এই সমস্যাই বাংলাদেশকে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু পশ্চিমাদের শর্তযুক্ত সামরিক সরঞ্জামের ফাঁদেও পড়তে চাইছে না বাংলাদেশ। ইন্দোপ্যাসিফিকের অতি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকার সুবিধা বাংলাদেশ কতটুকু নিতে পারবে, তা নির্ভর করবে না যে বাংলাদেশ কতটা সফলতার সাথে চীন এবং ভারতের মাঝে বা চীন এবং পশ্চিমাদের মাঝে ব্যালান্স করতে পারে; বরং পশ্চিমা আদর্শিক শক্তিগুলিকে একে অপরের সাথে ব্যালান্সে রাখতে পারবে। কাজটা অসম্ভব না হলেও আদর্শিক কোন অবস্থানে আসীন হওয়া ছাড়া তা অর্জন সম্ভব নয়।

6 comments:

  1. বাংলাদেশকে অভিনন্দন! অর্থনৈতিক এবং সামরিক ভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।

    বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল! এটা বোঝাই যায়। যদিও অনেক সমস্যা রয়েছে যেমন দুর্নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন - বিশ্বউষ্ণায়ন প্রভৃতি। এগুলো হল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বহিঃশক্তির শত্রুতা-কুনজর তো আছেই।

    যাই হোক দেশের রাজনৈতিক শক্তি, বিভিন্ন বিষয়কে ব্যালেন্স করে দেশকে অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে।
    ভারত-চিনের প্রভাবকে ব্যালেন্স করছে।

    এইভাবে বাংলাদেশ তার নিজের ইচ্ছা কতটা স্বাধীন রাখতে পারবে? এটা বিশেষ করে রাজনৈতিক শক্তির সুচিন্তার উপর নির্ভর করবে।
    বাংলাদেশের ইচ্ছা বা কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের ইচ্ছা, একটি "আদর্শ"ই ডিফাইন করতে পারে!

    এই দেশের তথা রাজনৈতিক শক্তির আদর্শিক অবস্থান। (যেটা আপনি যথার্থই ইঙ্গিত করেছেন)

    বাংলাদেশ এর আদর্শ কি? এর রাজনৈতিক এলিটদের আদর্শ বা-ই কি/কী?

    হেরে যাওয়া দলের খেলোয়াড় হওয়া!? নাকি বিকল্প আদর্শকে আঁকড়ে ধরে, সেই আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।!

    দীর্ঘ কমেন্টটি পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ!

    ReplyDelete
    Replies
    1. এখানে আদর্শ কি জিনিস, তা বুঝতে পারাটা জরুরি। আদর্শ কোন হাল্কা ব্যাপার নয়; এটা দিয়ে দুনিয়া শাসন করা হয়।

      আদর্শ সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পেতে নিচের লিঙ্কে গিয়ে কমেন্ট সেকশনে দেখতে পারেন। সেখানে আদর্শ নিয়ে একটা লম্বাটে আলোচনা রয়েছে।

      https://koushol.blogspot.com/2021/06/why-germany-formulating-own-geopolitical-strategy.html

      Delete
  2. আপনার এই ^লেখাটি পড়েছি। বোঝার চেষ্টা করেছি।

    কিন্তু এখানে, আমার প্রশ্নটি হল, বাংলাদেশ ইউএস- তার সাঙ্গপাঙ্গ এবং চিনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই এর পরিপ্রেক্ষিতে, কোন বিশেষ সুত্রে এগিয়ে যাবে? নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করবে?
    ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আশা করি আপনি কমেন্টগুলিও পড়েছেন; কারণ সেই কমেন্টগুলিই মূলতঃ আদর্শিক রাষ্ট্রের ব্যাপারে একটা আলোচনা।

      যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন আদর্শিক রাষ্ট্র; চীন নয়। অন্যান্য রাষ্ট্রের মতোই চীন একটা জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র। একসময়কার কমিউনিস্ট আদর্শকে চীন জ্বলাঞ্জলি দিয়েছে অনেক আগেই।

      আদর্শিক রাষ্ট্র ঘটনা ঘটায়; জাতীয়তাবাদীরা তাদেরকে অনুসরণ করে। কাজেই আদর্শিক রাষ্ট্র জানে যে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র এর পর কি করতে যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমা ক্যাপিটালিজমই দুনিয়ার একমাত্র আদর্শ হিসেবে বাস্তবায়িত রয়েছে। আর এর নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন। এদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে আরেকটা আদর্শিক রাষ্ট্র। জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র কিছু সময়ের জন্যে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে; সমস্যাটা অনেক বড় সমস্যাও হতে পারে। যেমন দুইটা বিশ্বযুদ্ধ। কিন্তু জাতীয়তাবাদী চিন্তার কারণে তারা শেষ পর্যন্ত আদর্শিক রাষ্ট্রের কাছে পরাজিত হয়।

      Delete
  3. Couple of things missing regarding the military strategies when it comes to balancing west and east (China)

    From the west:
    1) Bangladesh Army has purchased counter measure equipment from France
    2) Bangladesh Air force will purchase anti drone equipment from UK
    3) Bangladesh Air force has purchased drones from Italy
    4) Damen Shipyard from Netherlands will introduce a shipyard at the bank of Bay of Bengal
    5) Apache Helicopter been down selected (Possibility 0.99%)
    6) Small equipment for the military and para military forces.

    From the east
    1) China is developing a submarine base at Pekua, which is indeed a sophisticated matter.
    Though we could see major diversion of policy makers from east to west, will it still be possible for Bangladesh to arrange a major cut out from the east as it still engaged with lots of projects related to both military and economic matters?
    To my little knowledge, it is evident to me that China has vital role in creating unrest at Rakhaine because they might be anxious with the decision of Bangladesh regarding the construction of Sonadia port and as a result China now erecting that strategical point in Rakhaine, thus kicked those Rohygias out of the area with the help of Myanmar Government.

    ReplyDelete
    Replies
    1. India, China and the adjacent regions had been the population centers of the Earth for thousands of years... Bangladesh is fortunate not just to be a part of it, but being right in the middle of it provides the country with extraordinary opportunity to prosper..... Bengal, China, Gujarat, the Middle-East and East Africa had been part of one huge economic system for eight centuries until the arrival of European colonialists changed the whole thing into a Europe-centric system.... Bangladesh cannot be separated from this ancient huge economic system, which has again come alive due to outsourcing from the Western World.... Bangladesh's future is integrated with this huge economic system....

      The military aspect of Bangladesh's strategic thinking inevitably envelops this big economic system.... West will keep leadership as long as their Capitalist ideology survives (which is already facing steep decline).... Bangladesh can't possibly forget its geographic advantage in trying to get technology from the West....

      Delete