Saturday 9 May 2020

করোনাভাইরাস চীন-মার্কিন দ্বন্দ্বকে আরও উস্কে দিয়েছে

১০ই মে ২০২০
চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার সাথেসাথে চীনা সরকার অভ্যন্তরীন ভোগ বাড়াবার তাগিদ দিয়েছিল। করোনার প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চীনাদের এই প্রচেষ্টা আরও বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ চীন ক্রমেই নিজের অর্থনীতিকে পশ্চিমা দেশগুলিতে রপ্তানির নির্ভরশীলতা থেকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করবে। পশ্চিমাদের সাথে চীনের এই পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নির্ভরশীলতা এতদিন সরাসরি কোন সংঘাতকে দূরে রেখেছিল। কিন্তু করোনা দুর্যোগের পটভূমিতে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার বাধ্যবাধকতা কমে আসায় তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে অনিশ্চয়তা এবং সংঘাতের অধিকতর সম্ভাবনা। 


৮ই মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন যে, তিনি চীনের সাথে স্বাক্ষরিত প্রথম দফা বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করে দেবেন কিনা, সেব্যাপারে দোটানায় রয়েছেন। তিনি বলছেন যে, চীন যদি চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির টার্গেট মেটাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তিনি চুক্তি বাতিল করে দিতে পারেন। উভয় দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা কথা বলে ঠিক করেছেন যে, দু’দেশই চুক্তি অনুযায়ী তাদের বাধ্যবাধকতাগুলি সময়মতো পূরণ করবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে যে, দুই দেশ চুক্তি বাস্তবায়নের পরিবেশ উন্নয়নের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ‘রয়টার্স’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, চুক্তি অনুযায়ী চীনের ধাধ্যবাধকতা রয়েছে দুই বছরের মাঝে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি ২’শ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি করার। এর মাঝে কৃষিজ দ্রব্য, তৈরি পণ্য, জ্বালানি এবং সার্ভিস রয়েছে। এই চুক্তির ফলে দুই দেশের মাঝে বাণিজ্য যুদ্ধে কিছুটা হলেও বিরতি আসে।

বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে করোনা যুদ্ধ

মার্কিন মিডিয়া ‘সিএনএন’এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারির মাঝে চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। উভয় দেশ এই সংকট মোকাবিলায় কাছাকাছি না এসে বরং উগ্র জাতীয়বাদের আগুন জ্বালিয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীনের চেষ্টাকে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা করা হলেও চীন জোর গলায় এই সমালোচনার জবাব দিয়েছে। তারা বলছে তারা মার্কিনীদের মিথ্যা অপবাদের জবাব দিচ্ছে মাত্র। মার্চ মাসে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সংবাদ সন্মেলনে বলেন যে, মার্কিন সেনাবাহিনীর হাত হয়েই চীনে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে। এর কিছুদিন পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে ডাকতে থাকেন, যাতে ভাইরাসের উতপত্তিস্থলের জন্যে দায় চীনের উপর বর্তায়। এরপর ট্রাম্প চীনে মৃতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সংক্রমণের শুরুর দিকে চীনের ভূমিকার সমালোচনা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও কোন প্রমাণ দেখানো ছাড়াই দাবি করতে থাকেন যে, ভাইরাসের উতপত্তিস্থল ছিল উহানের গবেষণাগার। এর জবাবে চীনারা বলে যে, এই কথাগুলি ট্রাম্পের নির্বাচনী কৌশলের অংশ। অপরিকে চীনা সরকারি মিডিয়াতে মাইক পম্পেওকে ‘শয়তান’, ‘উন্মাদ’ এবং ‘মানবজাতির শত্রু’ বলে আখ্যা দেয়া হয়। তবে ‘সিএনএন’ বলছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবতঃ করোনা ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছেন। এই ব্যবস্থার মাঝে অবরোধ, ঋণ ফেরত না দেয়া এবং বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনার কথা থাকতে পারে। চীনের উপর চাপ সৃষ্টি করার কাজে সমর্থন আদায়ে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশগুলির সাথে কথা বলছে।

তবে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বন্দ্ব করোনাভাইরাসের কারণে শুরু হয়নি। গত দুই বছর ধরেই দুই দেশের মাঝে চলছে তুমুল বাণিজ্য যুদ্ধ। তবে এবারের এই দ্বন্দ্ব আগের চাইতে আলাদা বলে মনে করছেন ‘হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনলজি’র প্রফেসর ডেভিড জোয়াইগ। তিনি বলছেন যে, ২০১৬ সালে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর আগে মূল ইস্যু ছিল মানুষের কর্মসংস্থান; ২০২০ সালে আলোচ্য বিষয়বস্তু হলো মানুষের জীবন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের মাঝে এই রোগের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে এবং এত ফলে মৃত্যুবরণ করেছেন কমপক্ষে ২ লক্ষ ৭৬ হাজার মানুষ। মার্কিন লেবার ডিপার্টমেন্ট বলছে যে, এপ্রিল মাসে ২ কোটির বেশি মার্কিন নাগরিক বেকারত্বের মাঝে পতিত হয়েছে। চীনের ‘রেনমিন ইউনিভার্সিটি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর শি ইয়িনহংএর মতে চীন-মার্কিন সম্পর্ক ১৯৭২ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। দুই দেশের মাঝে প্রতিযোগিতা এখন বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং রাজনীতির মাঝে ছড়িয়েছে। আর লকডাউনের কারণে ফ্লাইট বন্ধ হওয়া এবং চীনের কারখানাগুলির উপর নির্ভরশীলতা কমে যাওয়ার কারণে দুই দেশের মাঝে দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন ‘ফক্স নিউজ চ্যানেল’এর সাথে এক সাক্ষাতে বলেন যে, জানুয়ারি মাসে চীনের সাথে বাণিজ্যচুক্তির ব্যাপারে তিনি খুবই আশাবাদী থাকলেও এখন অতটা আশাবাদী নন তিনি। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, চুক্তি অনুযায়ী প্রথম বছরে চীনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ৭৭ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্য আমদানি করার। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে মাত্র উঠে এসেই চীন এই টার্গেট বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।

অপরদিকে দুই দেশের দ্বন্দ্বের নতুন সেক্টর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মিডিয়া। ৮ই মে মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানায় যে, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত চীনা সাংবাদিকরা যারা কোন মার্কিন মিডিয়ার জন্যের কাজ করে না, তাদের ভিসার সর্বোচ্চ মেয়াদ ৯০ দিন পর্যন্ত করে দেয়া হয়েছে। এর আগে মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকতো না। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ বলছে যে, মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রায় মাসখানেক ধরে দুই দেশের মাঝে মিডিয়া নিয়ে চলা দ্বন্দ্বের ফলাফল। চীনা এবং মার্কিন সাংবাদিকদের একে অপরের দেশে চালানো কর্মকান্ডকে টার্গেট করেই এই দ্বন্দ্ব চলছিল। মার্কিন সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন যে, চীনে মিডিয়ার যে স্বাধীনতা নেই, সেটাকে ব্যালান্স করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত মার্চে মার্কিন সরকার ঘোষণা দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা সরকারি পাঁচটা সংবাদ মিডিয়ার জন্যে কাজ করা চীনা সাংবাদিকদের সংখ্যা ১’শর বেশি হতে পারবে না; যা ঐ সময় ছিল ১’শ ৬০। এর জবাবে চীনা সরকার ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এবং ‘ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল’এর জন্যে কাজ করা সকল মার্কিন সাংবাদিককে দেশ থেকে বের করে দেয়। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, সংবাদ মাধ্যম নিয়ে দুই দেশের এই দ্বন্দ্ব তাদের মাঝে অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রযুক্তিগত এবং সর্বোপরি ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশ বই অন্য কিছু নয়।

মার্কিন জনমতে পরিবর্তন

৬ই মে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন যে, করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের উপর ‘ইতিহাসের সবচাইতে বড় হামলা’, যার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পার্ল হারবারে জাপানিদের হামলা বা ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার চাইতেও বেশি ক্ষতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তিনি বলেন যে, এই মহামারি হবারই কথা ছিল না। যেখানে এর সূত্রপাত হয়েছিল, সেখানেই সেটা থামিয়ে দেয়া উচিৎ ছিল; কিন্তু সেটা করা হয়নি। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ এখন মহামারির সাথে; চীনের সাথে নয়।

শুধু প্রেসিডেন্টই নয়; মার্কিন জনমতও সাম্প্রতিক সময়ে চীনের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। ‘পিউ রিসার্চ’এর এপ্রিল মাসের এক জরিপ বলছে যে, ৬৬ শতাংশ মার্কিন জনগণ চীনের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত খারাপ ধারণ পোষণ করছে; যা ২০০৫ সাল থেকে এই জরিপ শুরু হবার পর থেকে সর্বোচ্চ। মাত্র চার ভাগের এক ভাগ মার্কিনী চীনের ব্যাপারে ভালো কথা বলছেন। অপরদিকে চীনারা মনে করছে যে, ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীনের উহানের জনগণ এতটা কষ্ট সহ্য করার পর এখন ভাইরাস ঠেকাতে যথেষ্ট চেষ্টা না করার অপবাদ নিতে হচ্ছে তাদের। ডেভিড জোয়াইগ বলছেন যে, ব্যাপারটা পরিষ্কার যে, যখন বাইরে থেকে চীনের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করা হয়, তখন চীনের জনগণ জাতীয়তাবাদী হয়ে ওঠে। তারা মনে করতে থাকে যে, চীনা হবার কারণেই তাদেরকে আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। আর চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায়। অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে চীনা সরকার জাতীয়তাবাদকে উস্কে দিচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা ‘গ্লোবাল টাইমস’এর প্রধান সম্পাদক হু শিজিন বলছেন যে, উহানে প্রথমদিকে কিছু ভুল হলেও চীনা জনগণ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের ভূমিকায় যথেষ্ট খুশি। আর চীনের সফলতার আয়নার মাঝেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে দেখছে। পুরো ব্যাপারটাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে সরকারি মিডিয়া ‘সিসিটিভি’ মন্তব্য করছে যে, চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থাই চীনের সফলতা মূল কারণ। দেশটার কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের কারণেই ভাইরাস মোকাবিলা করা গিয়েছে।

অন্যদিকে ব্রিটিশ মিডিয়া ‘বিবিসি’ বলছে যে, বহু মার্কিনী চীনের বিরুদ্ধে বৈরী চিন্তা ধারণ করলেও এটাও ঠিক যে ৬৫ শতাংশ মার্কিনী মনে করছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন যথেষ্ট দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ‘বিবিসি’ এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এবছরের শেষের দিকে ট্রাম্পের জন্যে একটা কঠিন নির্বাচন অপেক্ষা করছে। মন্দার অর্থনীতির মাঝে তিনি আবারও নির্বাচনে জিততে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তবে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনও চীনের বিরুদ্ধে জনমতকে নিজের নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে চাইছেন।

তদুপরি মার্কিনীদের মাঝেই অনেকেই চীনকে আরও সুযোগ দিতে উচ্ছুক। তারা চীন-মার্কিন দ্বন্দ্বের ফলাফলের ব্যাপারে ভীত। ‘ইউএস-চায়না বিজনেস কাউন্সিল’ বা ‘ইউএসসিবিসি’র প্রেসিডেন্ট ক্রেইগ এলেন বলছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি চীনাদেরকে বাণিজ্য চুক্তি মোতাবেক শর্তপূরণের সময় না দিয়ে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান, তাহলে সেটা ভীষণ অস্থিরতার জন্ম দেবে। চুক্তিটা চালু হয়েছে মাত্র ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে, যখন বিশ্বব্যাপী মহামারি শুরু হয়েছে। চীন তার নিজের বাধ্যবাধকতা মেনে চলছে কিনা, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। হোয়াইট হাউজের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ল্যারি কুড্রো ‘ব্লুমবার্গ টেলিভিশন’এর সাথে এক সাক্ষাতে বলছেন যে, চীনের ইচ্ছে রয়েছে তাদের বাধ্যবাধকতাগুলি মেনে চলার।

এই বিভেদ অত সহজে কমার সম্ভাবনা নেই

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংএর অধীনে চীনাদের জাতীয়তাবাদী চিন্তাগুলিকে আরও এগিয়ে নেয়া হয়েছে। ‘চীনা স্বপ্ন’ এবং ‘জাতীয় পুনরুজ্জীবন’এর চিন্তাগুলি বাস্তবায়নের পথে চীনারা বিশ্বব্যাপী তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করছে এবং জাতীয় স্বার্থকে শক্ত হাতে তুলে ধরতে চাইছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে চীনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। ইউরোপ থেকে বলা হচ্ছে যে, চীনারা করোনাভাইরাসের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। পশ্চিমা কিছু দেশ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে চীনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করছে। এমনকি চীন বিভিন্ন দেশকে মেডিক্যাল সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করার পরও অনেকে বেইজিংএর ‘মাস্ক কূটনীতি’র সমালোচনা করেছেন। প্রফেসর শি ইয়িনহংএর মতে, করোনাভাইরাসের মহামারি চলে যাবার পরেও এই প্রতিযোগিতা থেকে যাবে। মহামারির কঠিন স্মৃতি মানুষের হৃদয়ে গভীর দাগ কেটেছে, যা কয়েক প্রজন্ম ধারণ করবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথেসাথে বিশ্বব্যাপী চীনের প্রভাব বিস্তারের আকাংক্ষা মার্কিন প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করেছে। বৈশ্বিকভাবে মার্কিন নেতৃত্ব যখন হুমকির মাঝে, তখন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে কোন বিষয়েই ছাড় দিতে রাজি নয়। মার্কিন সরকার চীনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে সব চেষ্টাই করবে, তা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ব্যাপারে মার্কিন-চীন পাল্টাপাল্টি অভিযোগই বলে দিচ্ছে; চীনারা এক্ষেত্রে নিজেদের ভূরাজনৈতিক আকাংক্ষাকে ধরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে চীনা অর্থনীতি এখনও পশ্চিমা দেশগুলিতে রপ্তানির উপরই নির্ভরশীল। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার সাথেসাথে চীনা সরকার অভ্যন্তরীন ভোগ বাড়াবার তাগিদ দিয়েছিল। করোনার প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চীনাদের এই প্রচেষ্টা আরও বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ চীন ক্রমেই নিজের অর্থনীতিকে পশ্চিমা দেশগুলিতে রপ্তানির নির্ভরশীলতা থেকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করবে। পশ্চিমাদের সাথে চীনের এই পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নির্ভরশীলতা এতদিন সরাসরি কোন সংঘাতকে দূরে রেখেছিল। কিন্তু করোনা দুর্যোগের পটভূমিতে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার বাধ্যবাধকতা কমে আসায় তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে অনিশ্চয়তা এবং সংঘাতের অধিকতর সম্ভাবনা।




No comments:

Post a Comment